চলারপথে রিপোর্ট :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রিজার্ভ নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই। আমার গোলায় যতক্ষণ খাবার আছে, ততক্ষণ আমরা চিন্তা করি না। দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফসল ফলাব, নিজের খাবার নিজেরা খাব, কেনাকাটা বা খরচ না হয় আমরা একটু কমই করব। কিন্তু নিজের দেশের মর্যাদা নিয়ে আমাদের চলতে হবে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে কোনো প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করার মানসিকতা রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, অনেক রকম প্রতিবন্ধকতা আসবে। কারণ আমাদের শত্রু বাইরে থেকে আসতে হয় না, দেশের ভেতরেও আছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী বা ’৭৫-এর খুনি বা তাদের সন্তান-সন্ততিরা যারা রয়েছে, এরা কখনও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না বা বাধাদেবে। শত বাধা অতিক্রম করেই আমরাএগিয়ে যাচ্ছি। কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি। কিছু সমস্যায় আমরা আছি। রিজার্ভ নিয়ে অনেকে কথা বলে, আমি বলছি– অত চিন্তার কিছু নেই। নবীন বিসিএস কর্মকর্তাদের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল সৈনিক’ আখ্যায়িত করে দেশের অব্যাহত ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আপনাদের সজাগ থাকতে হবে, যাতে দেশের প্রতিটি উন্নয়ন অব্যাহত ও টেকসই হয়, এর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, দিনরাত পরিশ্রম করে আজকে বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছি, তা থেকে বাংলাদেশ যেন কিছুতেই পিছিয়ে না যায়। ’৪১-এর স্মার্ট বাংলাদেশের মূল কারিগর এবং সৈনিক হবেন আজকের কর্মকর্তারা। তখন তো আর আমরা থাকব না। কিন্তু দেশটা যেন এগিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। জিয়াই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথকে রুদ্ধ করেছিল। আর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃতও করেছিল। সেদিন আমরা আপনজন হারিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছিল তাদের ভবিষ্যৎ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ।’
তিনি অনুষ্ঠান থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন পাঁচটি প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় নির্মিত ভবন এবং ‘গভর্নমেন্ট এমপ্লয়মেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-জিইএমএস’ সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে কোর্স সম্পন্নকারী ১৯টি ক্যাডার সার্ভিসের ৬০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন কৃতী শিক্ষার্থীর হাতে ‘মেধা সনদ’ তুলে দেন এবং তিনজনের মাঝে ‘মর্যাদা পদক’ বিতরণ করেন। ছয় মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে তাহসিন বিনতে আনিস শীর্ষ স্থান অর্জন করে রেক্টরস পদক লাভ করেন।
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীও বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারিদের পক্ষে চারজন শিক্ষার্থী বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) রেক্টর মো. আশরাফ উদ্দিন ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন এবং শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান।
অনুষ্ঠানে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স এবং প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর দুটি পৃথক ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রকল্পগুলো হচ্ছে– সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (গভর্নমেন্ট এমপ্লয়মেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-জিইএমএস), ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, নবনির্মিত টাঙ্গাইল সার্কিট হাউস, নবনির্মিত কুমিল্লা সার্কিট হাউস এবং বিপিএটিসির ১৫ তলা আধুনিক ডরমিটরি ভবন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ময়মনসিংহের ত্রিশালের মাদ্রাসাতুল ইদকান নামক মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের ছাত্র দশ বছর বয়সী এক শিশু মাদ্রাসা থেকে পালাতে গিয়ে ভবনের পাঁচতলার ছাদের কার্নিশে আটকে পড়ে। এমন তথ্য জানিয়ে আজ ২৫ অক্টোবর বুধবার ইসহাক নামে একজন কলার ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে জরুরি উদ্ধার সহায়তার অনুরোধ জানান।
কলটি রিসিভ করেছিলেন ৯৯৯ কলটেকার কনস্টেবল এএসএম ফয়সাল। কনস্টেবল ফয়সাল তাৎক্ষণিকভাবে ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ঘটনাটি দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানায়। পরবর্তীতে ৯৯৯ ফায়ার ডেসপাচার ফায়ার ফাইটার মো. হানজালাল উদ্ধার সংশ্লিষ্ট সবার সাথে যোগাযোগ করে উদ্ধার তৎপরতার আপডেট নিতে থাকেন।
সংবাদ পেয়ে ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেয়।
ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উদ্ধারকারী দলের নেতৃত্ব দেয়া স্টেশন অফিসার সাদেকুর রহমান ৯৯৯ কে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন।
অনলাইন ডেস্ক :
আজ ৪ ডিসেম্বর সোমবার ঝিনাইগাতী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মিত্র বাহিনীর সহযোগীতায় মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী অঞ্চলকে শত্রু মুক্ত করে।
দিনটি উপলক্ষে আজ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমিটি ও ঝিনাইগাতী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড শ্রদ্ধাভারে শস্মরণ করবে বলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানায়।
পাক-হানাদার বাহিনী ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ কালো রাতে যখন ঢাকার বুকে হত্যাযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই রাতেই ৩-৪৫ মিনিটে প্রেরীত স্বাধীনতার ঘোষনার টেলিগ্রাম ম্যাসেজ ঝিনাইগাতী ভি এইচ এফ ওয়্যারলেস অফিসে এসে পৌঁছে।
ম্যাসেজ পেয়েই ওয়্যারলেস মাস্টার জামান সাহেব তার অফিসের পিয়ন পাঠিয়ে শেষ রাতের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা ফকির আ: মান্নানের বাসায় সংবাদ দেন।স্বাধীনতার ঘোষনার সংবাদ পেয়ে পরদিন ভোরেই অর্থাৎ ২৬ শে মার্চ সকালে ছাত্র নেতা ফকির আ: মান্নান, হারুনুর রশিদ মাষ্টার, বাবু অনন্ত কুমার রায়, সেকান্দর আলী ফকির সহ অনেকেই ওয়্যারলেস অফিসে এসে পৌছান।
ইংরেজীতে লেখা টেলিগ্রাম ম্যাসেজটি পেয়েই নেতৃবৃন্দ তৎক্ষনাৎ তা শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের কাছে প্রেরন করেন। ২৬ মার্চ সকাল থেকেই বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো ঢাকার সর্বশেষ সংবাদ কি তা জানার জন্যে শেরপুর শহরে মানুষ সমবেত হতে থাকে।
ঝিনাইগাতী ওয়্যারলেসে পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ হাতে পেয়েই তা বাংলায় অনুবাদ করে শেরপুর নিউ মার্কেট মোড়ে জনতার স্বতঃস্ফুর্ত সমাবেশে পাঠ করে শুনানো হয়।
বঙ্গবন্ধুর পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষনার শ্রবণ করে সমবেত জনতা মুর্হুমুর্হু শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে শেরপুরের আকাশ বাতাস। ২৭ মার্চ সকালে শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ সর্বজনাব এডভোকেট আব্দুল হালিম সাবেক এমপি, মুহসিন আলী মাস্টার ও ছাত্র নেতা আমজাদ আলী ঝিনাইগাতী এসে পৌছেন।
ঝিনাইগাতীর নেতৃবৃন্দ তাদের অভ্যর্থনা জানান। ছাত্রনেতা ফকির আব্দুল মান্নানকে সঙ্গে নিয়ে তারা নকশি ইপিআর ক্যাম্পে যান। নকশি ক্যাম্পের সুবেদার হাকিম নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে বসেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
দেশকে শত্রু মুক্ত করা সহ পাক হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে শুরু হলো প্রতিরোধ সংগ্রাম। যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে রাংটিয়া পাতার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়। ট্রেনিং শেষে এসব স্বেচ্ছাসেবক সহ মুজিব বাহিনী ও ইপিআর সৈনিকদের নিয়ে সুবেদার হাকিম মধুপুরে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
পরে তা পিছু হটে পুরাতন ব্র্হ্মপুত্র নদের চরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৬ এপ্রিল সুবেদার হাকিম এর খোলা জীপ এসে দাঁড়ায় ঝিনাইগাতী আমতলায়। সুবেদার হাকিম জনতাকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে অনুরোধ জানিয়ে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঝিনাইগাতী শত্রু মুক্ত ছিল। ২৭ এপ্রিল পাক বাহিনীরা বহর নিয়ে গোলা বর্ষন করতে করতে পৌছায় ঝিনাইগাতী বাজারে।
ঝিনাইগাতী প্রবেশ করেই আওয়ামী লীগ অফিস আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়ী বহর নিয়ে রাংটিয়া পাহাড় পর্যন্ত গিয়ে আবার পিছনে ফিরে এসে ঐদিন বিকালেই কোয়ারীরোডে পাক বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। পরে ঝিনাইগাতীর এক মাইল দক্ষিণে আহম্মদ নগর হাই স্কুলে তাদের সেক্টর হেড কোর্য়াটার স্থাপন করে। যা মুক্তিযোদ্ধাদের ১১নং সেক্টরের বিপরীতে পাক বাহিনীর ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরে একমাত্র সেক্টর হেড কোর্য়াটার যার দায়িত্বে ছিলেন মেজর রিয়াজ।
এছাড়া পাক বাহিনী শালচূড়া, নকশি, হলদীগ্রাম, তাওয়াকোচা, মোল্লাপাড়ায় ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৬ বৈশাখ জগৎপুর গ্রামে হানা দিয়ে গ্রামটি পুড়িয়ে দেয় এবং পাক বাহিনী ৪১ জন গ্রাম বাসীকে গুলি করে হত্যা করে। ৫ জুলাই কাটাখালি ব্রীজ ধ্বংস করে মুক্তিযোদ্ধারা রাংঙ্গামাটি গ্রামে আশ্রয় নেয়। দালালদের খবরে পাক বাহিনী রাংঙ্গামাটি গ্রামে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। শুধু রাংঙ্গামাটি বিলের দিক খোলা ছিল।
সম্মুখ যুদ্ধে কমান্ডার নাজমুল আহসান শহীদ হন। তাঁর লাশ আনতে গিয়ে আলী হুসেন ও মোফাজ্জল শহীদ হন। পরদিন রাঙ্গামাটি গ্রামে হানা দিয়ে পাক বাহিনী ৯জন গ্রাম বাসীকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ২৩ আগষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাওয়াকুচা ক্যাম্প দখল করে এবং মুক্ত তাওয়াকুচায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলণ করে। তাওয়াকুচা যুদ্ধে ৪ জন পাক সৈন্য ও ৭ জন রাজাকার নিহত হলে পাক বাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে দিয়ে পিছু হটে আসে। ৩ আগষ্ট নকশি ক্যাম্প আক্রমন করে মুক্তিযোদ্ধারা।
আগের দিন ২ আগষ্ট বিকেলে মেজর জিয়া নকশি ক্যাম্প আক্রমনের জন্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ারের অবস্থান গুলো পরিদর্শন করেন। ওই দিনের যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও নিখোজ হন। যুদ্ধে পাক বাহিনীর ৩৫ জন সৈন্য নিহত হয়।
২৭ নভেম্বর কমান্ডার জাফর ইকবালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী বাজারের রাজাকার ক্যাম্প দখল করে ৮টি রাইফেল সহ ৮ জন রাজাকারকে ধরে নিয়ে যায়।
২৮ নভেম্বর পাক বাহিনী ঝিনাইগাতী হানা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবিএম সিদ্দিকের ছোট ভাই ওমর (১১) ও মুক্তিযোদ্ধা মকবুলের পুত্র খালেক (১০), পাক বাহিনীর দালালদের খবরে ৮ জনকে আহম্মদ নগর ক্যাম্পের বধ্যভূমিতে ধরে নিয়ে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাদের এক গর্তে মাটি চাপা দিয়ে পুতে রাখে।
৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক দেড়টায় শালচূড়া ক্যাম্পের পাক বাহিনী কামালপুর দুর্গের পতনের আগাম সংবাদ পেয়ে পিছু হটে এবং আহম্মদ নগর হেড কোর্য়ারটারের সৈনিকদের সাথে নিয়ে রাতেই মোল্লাপাড়া ক্যাম্প গুটিয়ে শেরপুরে আশ্রয় নেয়।
এভাবে রাতের আঁধারে বিনা যুদ্ধে ঝিনাইগাতী শত্রু মুক্ত হয়। ৪ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতীতে স্বাধীন বাংলার অহংকারের পতাকা উড়ায় এবং মুক্তদিবস ঘোষণা করা হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখন আইনের কোনো পরিবর্তন আনতে হলে, আগে শর্তযুক্ত মুক্তি বাতিল করতে হবে। তাকে বিদেশ পাঠানোর ব্যাপারে বর্তমানে আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নাই।
আজ ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ সব কথা বলেন তিনি।
এর আগে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিকাশ ও সুরক্ষা বিষয়ক বিশেষ র্যাপোটিয়ার আইরিন খান।
আনিসুল হক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) এর ক্ষমতাবলে শর্ত যুক্তভাবে সাজা স্থগিত রেখে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং সেটা প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায়। এখন আইনের যে পরিস্থিতি তাতে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয় সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে আগে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছে সেটাকে বাতিল করতে হবে। তার পরে অন্য বিবেচনা করা যাবে।
তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম, উনাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে যাওয়ার আবেদনটা প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হয়। সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ওপরই নির্ভর করে এই ব্যাপারটা। কারণ হচ্ছে এটা আইনের ব্যাপার।
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, আইনের যে অবস্থান এখন, সেই অবস্থানে ইট ইজ অ্যা পাস্ট ট্রানজেকশন। আমার মনে হয়, আইনের সেই অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, আমাদের (স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের) মধ্যে কোনো ঠেলাঠেলি নেই। আমি পরিষ্কারভাবে আবারও বলছি, যদি কোনো আবেদন আসে; সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে আইনের শাসন আছে। আমরা আদালতের রায়কে শ্রদ্ধা করি। খালেদা জিয়াকে আদালত শাস্তি দিয়েছেন। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, ৪০১ ধারায় উনাকে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা সরকারের নির্বাহী আদেশে দেওয়া হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়। যা তিনি মেনেছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা। নওগাঁর মান্দা উপজেলার বড়পই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তখন পর্যন্ত কেউ আসেননি। শ্রেণি কক্ষ খোলা না থাকায় রোকেয়া ভবনের বারান্দার গ্রিল ধরে একাই দাঁড়িয়ে ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনমুন (৭)। অপেক্ষা করছিল শিক্ষক ও সহপাঠীদের জন্য। এর কিছু পরে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক আমিনা পারভীন।
এ সময় বিদ্যালয় মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিবেশী জাহানারা বেগম নামে এক নারী এগিয়ে আসেন। কুশল বিনিময় করেন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে। পরে তারা দুজনেই শিক্ষক রুমের তালা খুলে ভেতরে যান। ওই নারীর সহায়তায় ঘর ঝাড়ু দিয়ে শিক্ষকদের কক্ষে থাকা বিদ্যুতের মেইন সুইস অন করেন প্রধান শিক্ষক আমিনা পারভীন। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে রোকেয়া ভবনের বারান্দার গ্রিল থেকে অন্তত ৬-৭ ফিট দূরে ছিটকে যায় শিক্ষার্থী মুনমুন।
শিশুটির চিৎকার শুনে প্রধান শিক্ষক ও প্রতিবেশী ওই নারী ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা দেখেন জ্ঞান হারিয়ে শিশুটি মাটিতে পড়ে আছে। সেখান থেকে উদ্ধার করে শিক্ষকদের রুমে নিয়ে শিশুটির জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। জ্ঞান ফিরলে শিশু মুনমুনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনা পারভীন বলেন, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন থেকে খোলা তার দিয়ে রোকেয়া ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া আছে। সেই তার কেটে ওই ভবনের দরজার গ্রিলে সেটি জড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। বিদ্যুতের মেইন সুইস অন করার সঙ্গে সঙ্গে ওই ভবনের পুরো বারান্দা বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থী মুনমুন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, বিদ্যুতের মেইন সুইস বন্ধ ও শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম থাকায় বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। এটি পরিকল্পিত বলেও দাবি করে তিনি।
অভিভাবক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি করছি।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার শাসমুজ্জামান বলেন, বিষয়টি জানার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে তিনি সভা করবেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বরিশালের বাবুগঞ্জে হাত-মুখ ধুতে গিয়ে পা পিছলে খালের পানিতে পড়ে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আজ ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে ওই উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাকুদিয়া নতুনহাট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
মৃত তামান্না তামিদার (১৫) দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকুদিয়া গ্রামের আব্দুল বারেক তামিদারের মেয়ে এবং স্থানীয় জামেনা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিল।
বাবুগঞ্জ থানার ওসি তুষার কুমার মন্ডল জানান, তামান্না সকালে বাড়ির পাশের খালে হাতমুখ ধুতে যায়। অসাবধানতাবশত পা পিছলে পানিতে পরে যায় সে। সাঁতার না জানায় সে খালের গভীরে পানিতে ডুবে যায়। তামান্নাকে দেখতে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করেন। প্রতিবেশীরা প্রায় ২ ঘণ্টা খালে জাল দিয়ে তল্লাশি করে তামান্নার নিথর দেহ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিবারের কারো অভিযোগ না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়া তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।