চলারপথে রিপোর্ট :
চুয়াডাঙ্গায় ইজিবাইকের ধাক্কায় অ্যাডভোকেট মঞ্জুর হোসেন (৫৮) মারা গেছেন।
আজ ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভোরে চুয়াডাঙ্গার দৌলায়তদিয়াড় গ্রামে ইজিবাইকের ধাক্কায় তিনি গুরুতর আহত হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন জানান, আইনজীবী মঞ্জুর হোসেন সদর উপজেলার দৌলাতদিয়াড় গ্রামের মাহতাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি বৃহস্পতিবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য সদর উপজেলার দৌলাতদিয়াড় গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে বের হন। রাস্তা পার হয়ে মসজিদের দিকে যাওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি ইজিবাইক তাঁকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। তিনি রাস্তার উপর পড়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গুরুতর আহত হন। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। আহত আইনজীবী মঞ্জুর হোসেনকে রাজশাহী নেওয়ার পথে শহরের ঘোড়ামারা ব্রিজের কাছে পৌছালে তিনি মারা যান। আইনজীবী মঞ্জুর হোসেনের মৃত্যুজনিত কারণে বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা আদালতের কার্যক্রম সীমিত করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি সাগর জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড় গ্রামের কবরস্থানে নিহতের নামাজে জানাজা ও দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
সংস্কারের নামে নির্বাচন পেছানোর কোনো মানে হয় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওদের (ভারত) কথায় চিন্তা করার দরকার নেই, দেশের মানুষের কথা ভাবুন। ওবায়দুল কাদের গণঅভ্যুত্থানের তিন মাস পর কীভাবে দেশ থেকে পালায় সেটা নাকি উপদেষ্টারা জানেন না, তাহলে জানে কে?
আজ ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে চালক দলের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সংস্কারের নামে নির্বাচনের পেছানোর কোনও মানে হয় না। সামনে রোজা আসছে, তাই আওয়ামী লীগের কোনও লোকজন যাতে সিন্ডিকেট না করতে পারে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখুন। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নষ্ট করতে আবারও ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন ঝামেলা সৃষ্টি করে বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। দেশে অন্য ধর্মের মানুষ ভালো আছে। হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে- এসব বলে কোনো লাভ নেই।
জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, ভারত সমান্তরালের নামে আমাদের দেশের সম্পদ লুট করে নিয়ে যাবেন, আমার দেশের গণতন্ত্রকেও হত্যা করবেন। এই দেশের বিরোধীদলকে জোর করে নির্বাচনে আনবেন। তার বিরোধিতা বিএনপি অবশ্যই করবে। ২০১৪ সালে হাসপাতালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের করুন অবস্থা আমরা দেখেছি। ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানে ওসমানী কেন আসল না এমন প্রশ্নে রেখে বিএনপির সাবেক এই চিফ হুইপ বলেন, তাকে কি আসলে আসতে দেওয়া হয়নি? হেলিকপ্টারে আসলে কী খারাপ ছিল? নাকি পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করার পর আধুনিক সব অস্ত্র ভারতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। আপনার সহযোগিতা করেছেন তাই আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু পাকিস্তানের ৫০০ টাকার নোটগুলো আপনারা নিয়ে গেছেন। তখন ইন্ডিয়ার এক টাকার পাকিস্তানের এক টাকা কত ছিল? এ সময় ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারি জানিয়ে জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, আপনারা (ভারত) দয়া করে সোজা হয়ে যান। বিজয় দিবস নিয়ে মমতা কী বলল, মোদি কী বললো তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। বিএনপি তিন সংগঠন আগরতলার উদ্দেশে লংমার্চ করেছে। ভারতের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়াই যথেষ্ট। বাংলাদেশের মানুষ অনেক সচেতন। গরিব হতে পারে কিন্তু মনটা বড়। ভারতে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরামে কফি খাচ্ছেন, পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এ শীর্ষ নেতা। শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাকে বাংলাদেশে আসতেই হবে, বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। একদিনের জন্য হলেও আয়না ঘরে যেতে হবে। আপনি যদি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে জেলখানায় পাঠাতে পারেন তাহলে আপনাকেও কাশিমপুর কারাগারে যেতে হবে। জাতীয়তাবাদী চালক দলের সভাপতি জসীম উদ্দিন কবিরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের রহমাতুল্লাহ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক আমীর হোসেন আমু, চালক দলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খন্দকার প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
বৃষ্টির পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে বজ্রপাতে রশিদুল ইসলাম বাবু নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। রশিদুল ইসলাম বাবু (৩৫) চিরিরবন্দর উপজেলার পুনট্টি ইউনিয়নের আমতলীর সাহাপুর গ্রামের ঝাড়পুকুর পাড়ার মোখলেছার রহমানের ছেলে।
আজ ২৪ সেপ্টেম্বর রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চিরিরবন্দর উপজেলার পুনট্টি ইউনিয়নের আমতলীর সাহাপুর গ্রামের ঝাড়পুকুর নামক স্থানে এ বজ্রপাতের ঘটনাটি ঘটেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রবিবার সকাল ৯টার দিকে রশিদুল ইসলাম বাবু বাড়ির পাশে বৃষ্টির পানিতে মাছ ধরতে যায়। ওইসময় বৃষ্টিসহ বজ্রপাত হলে বজ্রাপাতে ঘটনাস্থলেই রশিদুল ইসলাম বাবু নিহত হন।
চিরিরবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বজলুর রশিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ কে এম শরীফুল হক বজ্রপাতে নিহত রশিদুল ইসলাম বাবুর পরিবারকে এককালীন ১০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
তিতাস নদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা ওয়াই সেতুর কোটি টাকার জমি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। আরো দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় সেতুর জায়গা দখলমুক্ত করতে ইউএনওর কাছে আবেদন করেছেন হোমনা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আহসান উল্লাহ নামে এক ব্যবসায়ী। গত ১৫ মার্চ আবেদন করলেও রহস্যজনক কারণে বন্ধ হচ্ছে না দোকান নির্মাণের কাজ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর ও কুমিল্লার হোমনা উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ রক্ষা করতে নির্মাণ করা হয় শেখ হাসিনা ওয়াই সেতু। এই সেতুর নিচের এলজিইডির জায়গায় দোকানঘর তুলে দখল করে নিয়েছেন কয়েকজন ব্যক্তি। কয়েকজন ব্যক্তি দোকানঘর নির্মাণ করে দখল কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাধা দিতে গেলে উল্টো হুমকি-ধমকি ও মিথ্যা মামলার ভয় দেখানোর ঘটনা ঘটছে। সেতুর পিলার ঘেঁষে দোকানপাট নির্মাণ করার কারণে বহু বছরের পুরোনো রামকৃষ্ণপুর বাজারে যাওয়ার রাস্তা বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন কি, মানুষের চলাচলের রাস্তাও বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুর নিচে সরকারি জমি দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করছে ১২-১৫ জন। পিলার ঘেঁষে এসব দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, দোকান নির্মাণে ভূমি অফিস থেকে বাধা দেওয়া হলেও মানছে না কেউ।
অভিযোগদাতা আহসান উল্লাহ বলেন, ‘রামকৃষ্ণপুর গ্রামের শাহ আলম এলজিইডির জায়গা দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করছেন। এতে আমার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, হাঁস-মুরগি ও গরুবাজারের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আমি বাদী হয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেছি। ভূমি অফিস থেকে বাধা দিলেও মানছেন না শাহ আলম গংরা।’
জানা গেছে, ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের একমাত্র ওয়াই আকৃতির শেখ হাসিনা তিতাস সেতুটি ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয়। আগে সেতুটি দেখার জন্য আসতেন দর্শনার্থীরা। কিন্তু সেতুর জায়গা দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করায় সৌন্দর্য ফিকে হয়ে গেছে। দখলদারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবারের ঈদের সময় সেতু এলাকায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।
স্থানীয়দের জোর দাবি, ভূমিখেকোদের কবল থেকে জমি উদ্ধার করে রামকৃষ্ণপুর বাজার রক্ষা ও সেতুর সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
রামকৃষ্ণপুর বাজারের ইজারাদার সফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, সেতুটি নির্মাণের পরে বাঞ্ছারামপুর, হোমনা ও মুরাদনগরে যাতায়াতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টিকে পুঁজি করে সেতুর জায়গা দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করছেন রামকৃষ্ণপুর গ্রামের শাহ আলম। এ কারণে আমি ইজারা নিয়েও গরুবাজার বসাতে জায়গা পারছি না। অবৈধ দখল বন্ধ না হলে সেতুর দুই পাশের আরও জায়গা বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে শাহ আলম বলেন, ‘শুধু আমি না, অনেকেই দোকানঘর নির্মাণ করে দখল করছেন। তাদের দেখে আমিও দোকানঘর নির্মাণ করেছি। সরকারের প্রয়োজন হলে জায়গা ছেড়ে দেব।’
চান্দেরচর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) আমান উল্লাহ জানান, উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নির্দেশে সরকারি জমি দখলকারী শাহ আলমকে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু বাধা অমান্য করে দোকানঘর নির্মাণ করছে।
হোমনা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, সেতুর জায়গা অধিগ্রহণ করেছে এলজিইডি বিভাগ। জমির মূল্যও পরিশোধ করা হয়েছে। এ জমি দখল করতে দেওয়া হবে না।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইউসুফ হাসান জানান, অভিযোগ পেয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে নিষেধ করা হয়েছে। সমস্ত স্থাপনার তালিকা করে উচ্ছেদ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমার দাবি, অভিযোগ পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জমিটি এলজিইডি বিভাগের হওয়ায় সরাসরি ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব হচ্ছে। দখল বন্ধ না হলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, ওয়াই সেতুর নিচের বাঞ্ছারামপুর অংশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। হোমনা অংশে অবৈধ দখলদার থাকলে তা দ্রুত অপসারণ করার জন্য হোমনা উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
জাতীয় ভোটার দিবস আজ ২ মার্চ শনিবার উদযাপন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে নানা আয়োজনের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
ইসির জনসংযোগ শাখা সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। তিনি বলেন, সঠিক তথ্যে ভোটার হবো, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব- স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের দিবসটি পালন করা হবে।
এদিন বিকেল তিনটায় নির্বাচন ভবনের আয়োজন করা হবে আলোচনা সভা। ভোটার দিবসে প্রকাশ করা হবে হালনাগাদ করা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।
খসড়া তালিকা অনুযায়ী দেশের ভোটার এখন ১২ কোটি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছয় ভোটার কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার ১৩৭, নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৯৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৯ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯২৪ জন।
অনলাইন ডেস্ক :
ট্রেনের টিকিট কাটার ক্ষেত্রে নানা কড়াকড়ি ও তদারকির পরও থেমে নেই কালোবাজারি। এই কালোবাজারির কারণে সাধারণ ক্রেতারা সহজে টিকিট পান না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
আদতে টিকিট কাটার পুরো প্রক্রিয়া রক্ষণাবেক্ষণে যারা দায়িত্বরত, তারাই জড়িত এই কালোবাজারির সিন্ডিকেটে।
এই চক্রটি বিভিন্ন কারসাজি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে স্বাভাবিক সময়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে থাকে। আর ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে টিকিটপ্রতি দাম বেড়ে যায় ৩-৪ গুণ পর্যন্ত।
বাড়তি এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ পায় সরাসরি সিন্ডিকেটে জড়িত সদস্যরা। আর বাকি ৫০ শতাংশ চলে যায় কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের হাতে। যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় শুধু দুটি সিন্ডিকেটের হাতেই প্রতিদিন চলে যাচ্ছে প্রায় ৫০০ টিকিট।
দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের ১৪ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব। আজ ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে এক হাজার ২৪৪টি আসনের টিকিট, ১৪টি মোবাইল ফোন এবং টিকিট বিক্রির নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সেলিম (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম (৬২), অবনী সরকার সুমন (৩৫), হারুন মিয়া (৬০), মান্নান (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে ডাবলু (৫০), ফারুক (৬২), শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), জুয়েল (২৩), আব্দুর রহিম (৩২), উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), মোর্শিদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২) ও জোবায়ের (২৫)।
এদের মধ্যে সেলিম ও উত্তম চন্দ্র দাস ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির দুই হোতা, যাদের নিজেদের নামে ‘সেলিম সিন্ডিকেট’ ও ‘উত্তম সিন্ডিকেট’ পরিচিত।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে সেলিম এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনে উত্তমের নেতৃত্বে এই চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে মহানগর প্রভাতী, তূর্ণা নিশিথা, চট্টলা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল।
সেলিম ও উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা উপযুক্ত সময় বুঝে সংগ্রহকৃত টিকিট নিয়ে রেলস্টেশনের ভেতরে অবস্থান করতেন। রেলস্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া সাধারণ যাত্রীদের কাছে তারা টিকিট বিক্রির জন্য ঘোরাঘুরি করতেন এবং অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রি করতেন।
এছাড়া ট্রেন ছাড়ার সময় যতো ঘনিয়ে আসতো তাদের মজুদকৃত কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বাড়তো। সুযোগ বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকিটের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দিতেন তারা।
ঈদসহ বিভিন্ন উপলক্ষে ছুটিকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তাররা প্রতিটি টিকিট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করতেন। সাধারণত প্রতিটি টিকিট তারা দেড় গুণ থেকে দুই গুণ বেশি দামে বিক্রি করতেন। এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ গ্রেপ্তাররা নিতেন এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হতো।
গ্রেফতার উত্তম ও সেলিম সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
যেভাবে টিকিট যেতো সিন্ডিকেটের হাতে
র্যাব জানায়, গ্রেফতার সেলিম এবং উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা প্রথমত ট্রেনের কাউন্টারে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ যাত্রী, রেলস্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশেপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাচালক ও দিনমজুরদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতেন। যেহেতু প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে চারটি টিকিট দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে চারটি করে টিকিট সংগ্রহ করার বিনিময়ে ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো।
এছাড়া, কাউন্টারে থাকা কিছু অসাধু টিকিট বুকিং কর্মচারীর যোগসাজশে তারা বিভিন্ন সাধারণ যাত্রীর টিকিট কাটার সময় দেওয়া এনআইডি সংগ্রহ করে রাখতেন। পরে সেগুলো ব্যবহার করে সংরক্ষণকৃত প্রতিটি এনআইডি দিয়ে চারটি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতেন। এভাবে তারা প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক টিকিট সংগ্রহ করতেন।
অনেক ক্ষেত্রে টিকিট কাউন্টারে নিজেরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতেন চক্রের সদস্যরা। আবার অনেক সময় কৌশলে লাইনে অপেক্ষমাণ টিকিটপ্রত্যাশী সাধারণ যাত্রীদের এনআইডি ব্যবহার করে চারটি টিকিট ক্রয় করিয়ে তিনটি টিকিট নিজেরা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নিতেন।
এছাড়া, ঈদ, পুজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে গ্রেফতারকৃতরা রেলস্টেশনে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারী এবং অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভার রুম বা আইটির সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের কাছে সংরক্ষিত জনসাধারণের এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে তারা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতেন।
পাশাপাশি চক্রটি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকিট কেটে সেগুলো তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতো। এমনকি স্টেশনে থাকা তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিটও সংগ্রহ করতো। সেসব টিকিটের মূল্য কাউন্টারের বুকিং কর্মচারীদের সঙ্গে তারা ভাগ করে নিতো।
এভাবে গ্রেফতারকৃতরা অবৈধভাবে বিভিন্ন পন্থায় বিপুল সংখ্যক ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতেন। যার ফলে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি রেলওয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
র্যাব বলছে, গ্রেফতার সেলিম দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় টিকিট কালোবাজারির দায়ে ৭টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন। তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত হন।
গ্রেফতার আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম প্রায় ১৫ বছর ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তিনি সেলিমের অন্যতম প্রধান সহযোগী। মূলত তার দায়িত্ব ছিল কাউন্টার থেকে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা।
গ্রেফতার উত্তম প্রায় ১৫ বছর ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তার সহযোগী গ্রেফতার আলী ও ফারুকসহ রাজধানীর আশকোনা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং এই বিষয়টি কাজে লাগিয়ে রেলস্টেশন এলাকায় সব সময় অবস্থান করে টিকিট কালোবাজারি চক্র গড়ে তোলেন।
গ্রেফতার বাকিরা দেশের বিভিন্ন রুট সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন, যার ফলে তারা সেসব রুটের যাত্রীদের ম্যানেজ করে টিকিট বিক্রি করতেন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা এই কালোবাজারির বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি, যারা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত এমন কিছু নামও পেয়েছি। তাদের বিষয়ে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবো। প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাউন্টারম্যান, সহজ ডটকমের কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। এমনকি স্টেশনে যারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এমন কয়েকজনেরও এই সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।