চলারপথে রিপোর্ট :
সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের নাম ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতেন। এরপর যাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তাদেরকে টার্গেট করতেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিতেন। দাবি করতেন টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়া (৩৯) নামে এসব অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ও বিভিন্ন ভিডিও ও এডিট করা ছবি উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায়।
হানিফ মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কারও কাছে ৫০ কোটি, কারও কাছে ১০০ কোটি, কারও কাছে ৩০০ কোটি টাকা দাবি করতেন। আর তাদের কারও সঙ্গে দামি গাড়িতে করে দামি হোটেলে সাক্ষাৎ করতেন। ইতোমধ্যে মনোনয়ন পেতে ১০ থেকে ১১ জন তার সঙ্গে যোগাযোগও করেছে।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন বা পদোন্নতির আশ্বাস দিয়ে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে বিপুল অংকের অর্থ দাবি করা হতো। ৩০ জনের অধিক ব্যক্তিকে চাকরি পাইয়ে দেওয়াসহ প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অধিক অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
আজ ১৮ অক্টোবর বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, আবু হানিফ দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় হিসেবে মিথ্যা পরিচয় ও সুসম্পর্কের কথা বলে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করে আসছিলেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে মনোনয়ন প্রাপ্তির মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করেন। চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। প্রতারণা করার জন্য বিভিন্ন সময় নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতেন হানিফ।
তিনি আরো বলেন, পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপস থেকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য সেজে নিজ চক্রের সদস্যদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতেন। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজের ছবি এডিট করে বসাতেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, আবু হানিফ এইচএসসি পাশ, কিন্তু একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন বলে মিথ্যা পরিচয় দিতেন। ২০০৮ সালে মটরপার্টসের ব্যবসার সঙ্গে জড়ান। তুষার এন্টারপ্রাইজ পরিবহন নামে তার বেশ কয়েকটি বাস ও নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রাইভেট কার রয়েছে।
র্যাব জানায়, ২০১৪ সালের পর থেকে একজন সুপরিচিত রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণার কার্যক্রম শুরু তার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌশলে রাজনৈতিবিদ, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নিজের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে পরিচিত হতেন। পরে সুসম্পর্ক তৈরি করে ছবি তুলতেন এবং প্রতারণার কাজে এই ছবিগুলো ব্যবহার করতেন। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের একাধিক মামলাও রয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মন্ত্রিসভায় আরও ৭ জন প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হলেন। আজ ১ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।
আগামী ৩ মার্চ রবিবার রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দেশের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় অনুষ্ঠানটি ছোট পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।
শপথ নেওয়া নতুন প্রতিমন্ত্রীরা হলেন- নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকার, রাজশাহী-৫ আসনের আবদুল ওয়াদুদ, চট্টগ্রাম-১৪ আসনের নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং সংরক্ষিত নারী আসনের চার সংসদ সদস্য রোকেয়া সুলতানা, শামসুন নাহার, ওয়াশিকা আয়শা খান এবং নাহিদ ইজহার খান।
এর আগে আজই ৭ জন প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাদের টেলিফোনে বিষয়টি অবগত করা হয়। সরকারি পরিবহন পুল থেকে নতুন গাড়িও তাদের নিজ নিজ বাসায় পাঠানো হয়। নতুনদের নিয়ে মন্ত্রিসভার আকার গলো ৪৪ সদস্যের।
গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর গত ১১ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওইদিন প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন।
অনলাইন ডেস্ক :
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
আজ ২৯ নভেম্বর বুধবার তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে পদায়ন করা হয়েছে।
ফরিদ উদ্দিন আহমদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।
সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় এর আগে এ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেনকে অবসর দিয়ে গত ২৬ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কামাল হোসেন আগামী ৩০ নভেম্বর অবসর উত্তর ছুটিতে যাবেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। আজ শুক্রবার পহেলা বৈশাখ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৯ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হবে নতুন বছর ১৪৩০। আজ সকালে সোনালি সূর্য রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে, বাঙালি জাতি আজ এক কাতারে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন এটি। আবহমানকাল বাংলার গ্রামীণ জনপদে উদযাপিত হওয়া নববর্ষের আয়োজন এখন ছুঁয়েছে নগর জীবনে এবং নতুন মাত্রায়। সর্বত্র উদযাপিত হচ্ছে বাংলার উৎসব, উচ্চারিত হচ্ছে বাঙালিয়ানার জয়গান। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় জীবনে পরম আনন্দের দিন। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন আজ। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় বের হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নববর্ষকে আবাহন জানিয়েছিলেন এভাবেই। নববর্ষ বিদায়ী বছরের গস্নানি মুছে দিয়ে বাঙালি জীবনে ওড়ায় নতুনের কেতন, চেতনায় বাজায়
মহামিলনের সুর। সব ভেদাভেদ ভুলে সব বাঙালিকে দাঁড় করায় এক সম্প্রীতির মোহনায়। নববর্ষের আগমনী ধ্বনি শুনলেই সমগ্রজাতি নতুনের আহ্বানে জেগে ওঠে। গ্রামের জীর্ণ-কুটির হতে বিলাসবহুল ভবন কিংবা দূর প্রবাসের মেগাসিটি-সর্বত্রই প্রবাহিত হয় আনন্দের ফলগুধারা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন এখন বাংলাদেশের গন্ডি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। প্রতিটি বাঙালি দিনটিকে উদযাপন করে উৎসবের আমেজে। বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্র করার আর কুসংস্কার ও কূপমন্ডূকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা পায়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদেরকে উদার হতে শিক্ষা দেয় এবং জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বমানবের সঙ্গে মিশে যাওয়ার শক্তি জোগায়। এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শ এবং রাষ্ট্রভাষা চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘এই শুভ নববর্ষের প্রাক্কালে আমাদের প্রার্থনা এই যে, আমরা যেন সমস্ত অন্ধকার ও বাধা-বিপত্তি দূর করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারি।’
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। নতুন পোশাক পরে সবাই মিলিত হন সাংস্কৃতিক আয়োজনে। ছায়ানট রমনার বটমূলে বর্ষবরণের যে প্রভাতী অনুষ্ঠান শুরু করেছিল তা আজ বিশ্ব জুড়ে বর্ষবরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। শহরে বৈশাখ যে ব্যাপক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে আসে গ্রামীণ জীবনে তার আমেজ ভিন্ন। নগরজীবনে এই দিন যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুন কাপড় পরার আয়োজনও। গ্রামবাংলায় সকালবেলা দই-চিড়া দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করার রেওয়াজ আছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতার আনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানান।
কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে চৈত্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় বিজু উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সব মানুষ, সব বাঙালি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সমগ্র জাতি একই হৃদয়াবেগে একটি মোহনায় মিলিত হয়ে পালন করে এই সর্বজনীন উৎসব। চিরায়ত বাঙালিত্বের অহংকার আর সংস্কৃতির উদার আহ্বানে জাগরুক হয়ে নাচে-গানে, গল্পে-আড্ডায়, আহারে-বিহারে চলে নতুন বছরকে বরণ করার পালা। বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এর মাধ্যমে জাতি তার স্বকীয়তা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার শক্তি সঞ্চয় করে, সচেষ্ট হয় আত্মপরিচয় ও শিকড়ের সন্ধানে। নববর্ষই বাঙালি জাতিকে ইস্পাত-কঠিন ঐক্যে আবদ্ধ করেছিল, শক্তি ও সাহসের সঞ্চার করে স্বাধিকার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জুগিয়েছিল।
১৪২৯-এর আনন্দ বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। ১৪৩০ সনকে বরণ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে ঘরোয়া পরিবেশে মেতে ওঠা বাঙালি গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। আবহমান বাংলার চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনার মূলে রয়েছে এক অসাধারণ অনুষঙ্গ; সেটি হলো বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠানমালা আমাদের সেই ঐতিহাসিক চেতনাকে প্রোজ্জ্বল করে। স্বদেশ মানস রচনায় বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য সর্বোপরি ইতিহাসের আলোকে রক্ষণশীল ও পশ্চাৎপদ চিন্তা-চেতনাকে পরিহার করে আধুনিক ও প্রাগ্রসর অভিধায় জাতিসত্তাকে যথাযথ প্রতিবাদ করার সম্মিলিত প্রতিশ্রম্নতি বাংলা নববর্ষকে দান করেছে অনবদ্য মাঙ্গলিক যাত্রাপথ।
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য হলো বাংলা বর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। আর বাঙালিদের কাছে বাংলা নববর্ষ বরণ হলো একটি প্রাণের উৎসব। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো মঙ্গলশোভাযাত্রা। ইউনেস্কো বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বাস সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করে নববর্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সাংস্কৃতিক সৌধের ভিত আরও সুদৃঢ় করুক, নববর্ষের উদার আলোয় ও মঙ্গলবার্তায় জাতির ভাগ্যাকাশের সব অন্ধকার দূরীভূত হোক, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটুক, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, এটাই হোক নতুন বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ এর প্রত্যাশা।
নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার ও সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। বাংলা বর্ষবরণ বাংলাদেশের একটি সার্বজনীন উৎসব। নতুন বছরের প্রথম দিন সবাই যার যার সাধ্যমতো উৎযাপনের মাধ্যমে দিনটি পালন করেন। বর্ষবরণ যে কয়টি জিনিস এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পান্তা ইলিশ বা ইলিশ মাছ খাওয়া। বাঙালির বর্ষবরণ ইলিশ ছাড়া হয় না। এ ছাড়া কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোনো খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানা রকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওযার ব্যবস্থা থাকে। ইলিশ মাছের সঙ্গে পান্তা ভাত ও শুঁটকি মাছ, আচার, ডাল, কাঁচা লঙ্কা, এবং পিঁয়াজ কুঁচির সংমিশ্রণের এই খাদ্যটি পয়লা বৈশাখের জনপ্রিয় খাদ্য। এই দিনের একটি পুরানো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এর মধ্যে থাকে নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা ও কুস্তি। হাল আমলে ক্রিকেট ও ফুটবল যুক্ত হচ্ছে।
দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সঙ্গে পালিত হয় সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সব প্রান্তের সব বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেন, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সব দুঃখ-গস্নানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেন। এদিনে তারা হালখাতা করে থাকেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরি সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরি সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। পহেলা বৈশাখ ভোর থেকে শুরু হয়। ভারতবর্ষে মোঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো।
হালখাতা বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সব স্থানেই পুরানো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন লাল রংঙের হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকেন। এই প্রথাটি এখনো অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানে। ১৯৬০-১৯৭০ দশকে পুরান ঢাকায় হিন্দু ব্যবসায়ী বিশেষ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হালখাতা প্রথা অনুসরণের প্রবণতা ছিল। এমনকি বেশ ভাবগাম্ভীযের্র সঙ্গেই পালিত হতো অসাম্প্রদায়িক এই আচার-অনুষ্ঠানটি। হালনাগাদের খাতাটি ছিল লাল রঙের লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো। দুই-তিন ভাঁজ করে তার উপর ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখে হাত বিনিময় হতো। এই খাতাটিই ছিল বিগত বছরের যাবতীয় হিসাবের বিবরণী নথি।
আবহমান বাংলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন যশোরে সর্বপ্রথম নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ নানা শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো শোভাযাত্রাটি দেশ জুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। অতঃপর এর আদলেই ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত হয় আরও একটি শোভাযাত্রা। তখন প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৮০’র দশকের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এক হওয়া এবং শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনা। সেই আনন্দ শোভাযাত্রাটি সকল স্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। সেদিন থেকে প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই আনন্দ শোভাযাত্রা অব্যাহত রাখে। বিশালাকার পুতুল, বিভিন্ন পশুপাখির বিচিত্র মুখোশ ও সাজসজ্জার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের মাধ্যমে জাকজমক করে তোলা হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। প্রথম দিকে চারুকলার এই শোভাযাত্রাটির নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল থেকে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অশুভ মানুষের কথা ভেবে মুখোশ করা হয় শোভাযাত্রায়।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার পহেলা বৈশাখকে জাতীয় পার্বণ হিসেবে ঘোষণা করেন। স্বাধিকার আন্দোলনের সময় ছায়ানটের গানে গানে যে প্রতিবাদের ধারা সৃষ্টি করেছিল তা মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণার পথে বড় শক্তি যুগিয়েছে। ২০০১ সালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের পরে যেমন মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছায়ানট যেন মানবতার পক্ষে লড়াইয়ে তাদের প্রত্যয়ের কথাই ব্যক্ত করছে বারবার। আজ সেই আলোড়ন পরিণত হয়েছে প্রতিটি বাঙালির প্রাণের উৎসবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আধুনিকতার স্পর্শ আর সভ্যতার ক্রমবিকাশে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রযুক্তির দাপটে অস্তিত্ব হারিয়েছে অধিকাংশ খেলা। একটা সময় গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত শিশু ও যুবকরা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধুলায় অভ্যস্থ ছিল। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা অবসরে দলবেঁধে খেলতো নানা প্রকারের খেলা। এসব খেলা বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে রাস্তার আনাচে-কানাচে, খোলা মাঠে কম পরিসরেই খেলা যেত।
কিন্তু বর্তমান সময়ে মাঠ, বিল-ঝিল হারিয়ে যাওয়া, আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও প্রযুক্তির বিকাশে মহাকালের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে জনপ্রিয় এসব গ্রামীণ খেলাধুলা। এখানকার দিনে শহরের শিশুরা ঘরের কোণে বসে বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ে পড়ে থাকে। যার কারণে তাদের মেধার বিকাশও সঠিকভাবে হয় না।
গ্রামবাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে ছিল: হা-ডু-ডু, কাবাডি, ঘুড়ি খেলা, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুলি, গোল্লাছুট, কুস্তি, গোশত চুরি, কুতকুত, চোর-পুলিশ, হাড়িভাঙা, ইচিং বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, কড়ি খেলা, সাপ খেলা, কানামাছি, লাঠি খেলা, ষাড়ের লড়াই, বউ-ছি, বলী খেলা, টোপাভাতি, নোনতা খেলা, নৌকা বাইচ, লুডু খেলা, রুমাল চুড়ি, পুতুল বৌ, ফুল টোক্কা, বাঘ ছাগল, বরফ পানি, মার্বেল, মোরগ লড়াই, লাটিম, লুডু, ষোল গুটি, এক্কা দোক্কা, সাত পাতা, বটি বটি, দাপ্পা, রস-কস, চারগুটি, চেয়ার সিটিংসহ আরো হাজারো প্রকার খেলা। বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশের জনপ্রিয় এসব গ্রামীণ খেলাধুলা আজ প্রায় বিলুপ্ত।
গ্রামীণ এসব খেলাধুলা হলো বিনোদনমূলক, স্বাস্থ্য সচেতনমূলক ও প্রতিভা বিকাশের অন্যতম। যা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি। এসব খেলাধুলা এক সময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করতো। বর্তমানে গ্রামীণ খেলাগুলো বিলুপ্ত হতে হতে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমান প্রযুক্তির সুবিধা ও এর ব্যবহারে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। তখন কেন পিছিয়ে থাকবে আমাদের প্রাণের খেলাগুলো? আমাদের সবার একটু চেষ্টাই পারে নতুন প্রজন্মকে এসব খেলার সঙ্গে পরিচিত করাতে। যা আমাদের ইতিহাস আর শিকড়কে টিকিয়ে রাখতে শক্তিশালী একটা মাধ্যম। সরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে এসব খেলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায়। স্কুলে শিশুদের এসব খেলার সঙ্গে পরিচয় করানোর সুযোগ আছে। চাইলেই বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানো যায় এসব খেলাধুলায় যুক্ত করে।
অতীতের সময়ে প্রতিবছর সব স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাগুলোতে নানা ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হতো। বর্তমানে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো খেলার মাঠও নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশ ঘটছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়ত অচিরেই গ্রামীণ খেলাধুলা আমাদের সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাবে। পরিণত হবে রূপকথার গল্পে।
এখন, মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে প্রজন্মকে রক্ষা ও গ্রামীণ খেলাকে বাঁচাতে এদেশের সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে এসে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। এরসঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধির মাধ্যমেই কেবল অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
চলারপথে ডেস্ক :
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় গড়াই নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ ১৩ মে শনিবার সকালে চাপড়া ইউনিয়নের জয়নাবাদ মৌজা থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় পাঁচটি ড্রাম ট্রাক ও দুইটি সেলোইঞ্জিন চালিত লাটাহাম্বা গাড়ি জব্দ করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. বিল্লাল হোসেন (৪০), মো. শাকিব খান (৩০), মো.সাজ্জাদ হোসেন (২০), রাসেল হোসেন (২৮), মো. মেহেদী ইসলাম (২৮), সোহাগ হোসেন (২৩), মো. সাগর বিশ্বাস (৩১), মো. কালাম আলী (১৯), ফিরোজ ইসলাম (২২), শামীম হোসেন (২৭), রাজু আহমেদ (৩০), ইসমাইল হোসেন (৩২), মো. কাজল হোসেন (২৩) ও সবুজ বিশ্বাস (২০)।
কুমারখালী থানার ওসি মো. মোহসীন হোসাইন বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গড়াই নদের জয়নাদ মৌজায় অবৈধ বালু উত্তোলন প্রতিরোধে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে পাঁচটি ড্রাম ট্রাক ও দুইটি লাটাহাম্বাসহ ১৪ জনকে আটক করা হয়। পরে বালু মহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। উক্ত মামলায় আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জয়নাবাদ মৌজার বালু মহলের ইজারাদার মো. মাসুদ রানা বলেন, তিনি জেলা প্রশাসনের নিকট থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা দিয়ে ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করছিলেন। কিন্তু পুলিশ কেন তার লোকজনকে ধরে চালান দিয়েছে তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত বলেন, ১৪ এপ্রিল ইজারা দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু ২৭ এপ্রিল উচ্চ আদালত জয়নাবাদসহ চারটি মৌজায় বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করে রিট পিটিশন জারি করেছেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য আলাপ আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান।