চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী নিবাসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ম্যুরাল উদ্বোধন করা হয়েছে।
আজ ২০ অক্টোবর শুক্রবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম.পি ম্যুরালের উদ্বোধন করেন।
এ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর খান রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ হামজা মাহমুদ ও কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এ জেড এম আরিফ হোসেন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ রবিউল হোসেন রুবেল ও সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ খান শ্রাবন।
এছাড়া সভায় জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
ম্যুরালটি নির্মাণ ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় রাসেল মিয়া (৪৩) নামে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আজ ৭ আগস্ট সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ বেগম শারমিন নিগার এ রায় দেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের পুলিশ পরিদর্শক কাজি দিদারুল আলম।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত রাসেল জেলার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুরের আবু তাহেরের ছেলে। হত্যাকান্ডের পর থেকে তিনি পলাতক আছেন।
আদালতে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন ও নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালে রাসেল মিয়ার সঙ্গে সুমা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় অটোরিক্সাসহ প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মালামাল ও ১ ভড়ি ওজনের সোনার চেইন দেওয়া হয়। এরপরও রাসেল বিভিন্ন সময় সুমাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। এ নিয়ে সংসারে ঝগড়া লেগেই থাকত। ২০১৫ সালের ৩১ মে রাসেলকে ডিভোর্স দেয় সুমা। এরপর থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল রাসেল। ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে বাবার বাড়িতে থাকার সময় রাসেল সুমাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সুমাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পরদিন সুমার বাবা বাদি হয়ে কসবা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন দুই মাসের মধ্যে একই বছর ডিসেম্বরে রাসেলকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সকল সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে, সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার রাসেলকে মৃত্যুদন্ডের রায় দেন। তবে হত্যাকান্ডের পর থেকে রাসেল পলাতক থাকায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছাড়া আসামি পক্ষের কোনো আইনজীবী ছিল না।
চলারপথে রিপোর্ট :
জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি।
গত মঙ্গলবার পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টিকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। একই দিনে এর সঙ্গে আরো দুটি পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অন্য দুটি পণ্য হলো মধুপুরের আনারস ও ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টিকে গত ৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ ও ৩০ নম্বর শ্রেণিতে পণ্যটি জিআই-৭৫ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি জিআই সনদপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে পণ্যটির স্বীকৃতি মিলেছে।
এই স্বীকৃতির ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি আন্তর্জাতিকভাবে ভাবমূর্তি বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এতে গুণগত পরিবর্তন ও বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রও তৈরি হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
ভোলার দুই শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের কাঁচা দইকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ভোলার জেলা প্রশাসক পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ নম্বর শ্রেণিতে পণ্যটি জিআই-৫৫ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মহিষের দুধের কাঁচা দই জিআই সনদপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে পণ্যটির স্বীকৃতি মিলেছে।
সাগর আর নদীবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার মানুষের জীবনমানে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। খাবারেও রয়েছে নিজস্বতা। এরই অংশ হিসেবে এ জেলা দীর্ঘকাল ধরে পরিচিতি পেয়েছে মহিষের দুধের কাঁচা টক দই, যা স্থানীয়ভাবে ‘মইষা দই’ নামে পরিচিত। ভোলা জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী জানান, বিষয়টি ভোলাবাসীর জন্য আনন্দের।
এ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ভোলায় মহিষ পালনকারী ও দই উৎপাদনকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ‘ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দইয়ের যে স্বীকৃতি সেটি অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই ভোলার ঐতিহ্য। এটি অন্য জেলার হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয়রা অনেক চেষ্টা করে এটি ফিরে পেয়েছে।
জিআই-৫৫ নম্বরে এটি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। ভোলাবাসী এটি নিয়ে গর্বিত। এর মাধ্যমে এটির বৈশ্বিক স্বীকৃতি মিলেছে। জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় প্রথমত এই পণ্যটি ভোলার বলে চিহ্নিত হলো। দ্বিতীয়ত, এই স্বীকৃতির মাধ্যমে পণ্যটির বাণিজ্যিকীকরণের সুবিধা বাড়ল। এই দধি এখন দেশের বাইরেও রপ্তানি করা যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে দধি উৎপাদনে মানের উন্নতি হবে। কেননা জিআই স্বীকৃতি পণ্যের মান নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে।’
পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দধিসহ তিনটি পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর অধিদপ্তর থেকে এসংক্রান্ত তিনটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি, বাকি দুটি পণ্য হলো মধুপুরের আনারস ও ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই। আরো বেশ কয়েকটি পণ্যকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও তারা এখনো সার্টিফিকের ফি জমা না দেওয়ায় তাদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়নি। সেগুলো খুব দ্রুত হয়ে যাবে।’
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান বলেছেন, মানুষ ভোট দেওয়া ভুলে গেছে। ভোট দিতে চায় না কারণ মনের মতো মানুষ পায় না। এটা আমাদের জন্য কলঙ্ক হয়ে গেছে। আমি যদি না থাকতাম তাহলে নির্বাচনের গন্ধই থাকত না।
২ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে নির্বাচন নিয়ে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমবেত জনতাকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের লোক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে পাওয়া একটি ভিডিওতে ফিরোজুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ ধৈর্য ধরেন। প্রশাসন থেকেও বলেছে একটু ধৈর্য্য রাখেন।
তারাও মনে করে যে আপনাদের জয় হবেই। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে হবে। নির্বাচন খারাপ হলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। যারা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন তাদের সঙ্গে জনগণ নেই।
কেউ গালি দিলে ধন্যবাদ দেবেন। আঘাত করতে এলে নাম ঠিকানা দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি আমার নির্বাচন করতে এলে কেউ আহত হলে সেই দায়িত্ব আমার। আমার জন্য করতে গিয়ে কেউ আহত হলে আমি চলে যাব আমি এমন মানুষ না।’
অভিযোগের সুরে ফিরোজুর রহমান বলেন, ‘আমাকে নিয়ে অনেকে মন্তব্য করে।
আমি একাডেমিকেলি দুর্বল। কিন্তু আমি লায়ন্স-এর গভর্ণর। আমি এখানে একে একে আসছি। ইউনিয়ন, উপজেলা ও সংসদ। তিলে তিলে ব্যবসা করতে করতে এখানে এসেছি। আমি পারব না দুর্নীতি করতে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে। আমরা তো আওয়ামী লীগেরই।’
তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম কাজ হবে আপনাদেরকে সম্মান দেওয়া। মানুষের মূল্য একটাই তার আচার ব্যবহার। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে শান্তিমতো কাজ করতে পারিনি। অনেক বাধা-বিপত্তি আসছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার বাড়িতে আসাটাও বন্ধ রাখছে কেউ কেউ। আমাদের গ্যাস আমরা সবাই পাই না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলে না কেউ। আমি সংসদের যেতে পারলে এসব বলব।’
সুষ্ঠু ভোটের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে সমবেত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে ভোট কেন্দ্রে থাকতে হবে। যদি পাহারাদার ঠিক থাকে তাহলে চোর চুরি করতে পারবে না। আপনারা না গেলে চুরি করে নিয়ে যাবে।’
ফিরোজুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বাতিল করলে আপিলে তিনি তা ফিরে পান।
চলারপথে রিপোর্ট :
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চালু থাকা বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। গত ৩ জুন থেকে চিকিৎসকরা বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে একদিকে দুর্ভোগে পড়েছে জেলার সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় রোগীরা, অন্যদিকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৩ জুন থেকে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করেন হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রয়াত ডাঃ মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নির্ধারিত ফির মাধ্যমে অসহায় রোগীদের সেবাদান শুরু করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রোগীদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা থেকেও অনেক রোগী এই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতেন।
বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় মেডিকেল কর্মকর্তার সরকারি ফি ২০০ টাকা, জুনিয়ার কনসালটেন্ট ও আবাসিক সার্জনের ফি ৩০০ টাকা এবং সিনিয়র কনসালটেন্টের ফি ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা চালু করায় সাধারণ রোগীরা অনেক খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত ৩ জুন থেকে এই স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীরা এখন অনেক অসন্তুষ্ট। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।
হাসপাতালের হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবায় বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চালু থাকা প্যাথলজি বিভাগের বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে সরকারি কোষাগারে অনেক টাকা জমা দিতে পেরেছেন। গত বছরের জুন মাসে শুধু পরীক্ষা-নীরিক্ষা থেকে প্রাপ্ত ২১ হাজার ৫৩৫ টাকা, জুলাই মাসে ৮৬ হাজার ৭০ টাকা, আগস্ট মাসে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৬০ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫ টাকা, অক্টোবর মাসে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৩০ টাকা, নভেম্বর মাসে ১ লাখ ৮ হাজার ৪০০ টাকা ও ডিসেম্বর মাসে ৯০ হাজার ৮১৫ টাকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেন।
আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৯১ হাজার ৩৫৫ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৮৬ হাজার ৯৩০ টাকা, মার্চ মাসে ৬৪ হাজার ৭৮০ টাকা এবং এপ্রিল মাসে ৫৪ হাজার ৩৫০ টাকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিকেল তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালুর প্রথম মাসে গত বছরের জুন মাসে চিকিৎসকরা ২৫১ জন রোগী, দ্বিতীয় মাস জুলাই মাসে ১ হাজার ২২৬ জন, আগস্ট মাসে ১ হাজার ৪৫৭ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৫২৩ জন, অক্টোবর মাসে ১ হাজার ২১১ জন, নভেম্বর মাসে ১ হাজার ১৪০ জন ও ডিসেম্বর মাসে ৮৯২ জন রোগী দেখেছেন চিকিৎসকরা। চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসে ৯০৫ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১ হাজার ১১৮ জন, মার্চ মাসে ৬৩১ জন ও এপ্রিল মাসে ৮৫৭ জন রোগী দেখেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা ১১ হাজার ৩৬০ জন রোগী দেখেছেন, যেখান থেকে আয় হয়েছে ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ টাকা।
গত বছরের জুন মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আট মাস এসব রোগী দেখার টাকা থেকে নিজেদের প্রাপ্ত সম্মানী ভাগাভাগি করে নিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিভাগের এক সভায় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগী দেখা থেকে প্রাপ্ত টাকা চিকিৎসকদের না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের এক পরিচালক। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় নিযুক্ত চিকিৎসকদের সম্মানী বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকেই হাসপাতালে বিকেলে রোগী দেখায় আগ্রহ হারাতে শুরু করেন চিকিৎসকরা।
চলতি বছরের ৩ জুন থেকে কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগী দেখা বন্ধ করেন চিকিৎসকরা। তবে প্যাথলজি বিভাগ চালু রয়েছে।
হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন জানান, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতালে রোগী দেখার চেয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখায় স্বাচ্ছন্দবোধ করেন চিকিৎসকরা। কারণ এতে চিকিৎসকদের আয়-রোজগার বেশি হয়। হাসপাতালের এক সভায় চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের এক পরিচালক জানান, বাংলাদেশে যেসব সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে, সেখানকার কোনো হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের সম্মানি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা সম্মানি উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৩ জুন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান। তাঁর যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালে যথাসময়ে চিকিৎসকের উপস্থিত হওয়াসহ সকল বিভাগেই স্বাস্থ্যসেবার বিরাট পরিবর্তন হয়েছিল। পাশাপাশি তার সময়ে হাসপাতাল থেকে সরকারি কোষাগারে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব জমা হয়েছে। তার একান্ত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে একমাত্র হাসপাতাল হিসেবে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সকালের পর দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্যাথলজি বিভাগ চালু হয়। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের সকল হাসপাতালের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবার বিবেচনায় প্রথম হয়েছিল জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কর্মস্থলেই অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। চলতি বছরের ৩ জুন থেকে হাসপাতালের বৈকালিক সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, একটু প্রশাসনিক জটিলতা চলছে। বৈকালিক সেবায় নিযুক্ত চিকিৎসকদের সম্মানী বন্ধ রয়েছে। তাই বৈকালিক সেবার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আগে বৈকালিক সেবার সবগুলো বিভাগ খোলা থাকত। কিন্তু এখন বিষয়টি রিশিডিউলিং করা হচ্ছে। এখন প্রতিটা বিভাগ হয়তো চালু থাকবেনা । কাস্টমাইজড করা করে কিছু বিভাগ কমিয়ে আবার চালু করা হবে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে বৈকালিক সেবা চালু হবে।
এ ব্যাপারে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রতন কুমার ঢালী বলেন, কিছু জটিলতার কারণে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ আছে। আমরা সীমিত পরিসরে সেবাটা আবার চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
চলারপথে রিপোর্ট :
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিন্ন চাকুরিবিধি প্রণয়ন ও সকল চুক্তিভিত্তিক / অনিয়মিত কর্মচারীদের চাকুরী নিয়মিকরণের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম প্রকৌশলী মোঃ আমজাদ হোসেন, ডিজিএম (কারিগরী) আবু সাইম, এজিএম আব্দুল হাকিম, এজিএম মোঃ সালাহউদ্দিন, বিলিং সহকারী রিয়া পাল, বিলিং সহকারী সাধন আহমেদ প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক নিন্মমানের বৈদ্যুতিক মালামাল ক্রয় ও সরবরাহ করায় গ্রাহক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছেনা। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মালামাল ও জনবলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে গ্রাহক পর্যায়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
এ সময় তারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দ্বৈতনীতি পরিহারপূর্বক অভিন্ন চাকরিবিধি প্রণয়ন ও সকল চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের চাকুরী নিয়মিকরণের দাবি জানান। এমতাবস্থায় ১ অক্টোবর থেকে বাপবিবোর্ডের সাথে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-সকল ধরণের যোগাযোগ, তথ্য সরবরাহ থেকে বিরত থাকার জন্য পর বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
মানববন্ধন কর্মসূচি পালনশেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মানববন্ধনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৫ শতাধিক সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।