চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে পুকুর থেকে শিশু হাজেরার মরদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টায় রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। শিশুটির মা রুমা বেগম নিজেই তার সন্তানকে মধ্যরাতে পুকুরে ফেলে দেন। পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
আজ ২২ অক্টোবর রবিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পরই পারিপার্শ্বিক অবস্থায় নিহত শিশুর মা রুমা বেগমকে সন্দেহ হচ্ছিল। তাই আমরা তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রুমা তার সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
সিরাজুল ইসলাম আরো বলেন, শিশু হাজেরার মরদেহ উদ্ধারের পর রুমা জানান শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ২টায় ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে যান রুমা। ঘরে ফিরে আবারো ঘুমিয়ে যান। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখেন ঘরের দরজা খোলা, পাশে হাজেরা নেই। কীভাবে পুকুরে গেলো জানেন না রুমা। কিন্তু তার এ বক্তব্য ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, তবে জিজ্ঞাসাবাদে রুমা জানান তার স্বামী দেড়বছর আগে আরব আমিরাতের দুবাই গিয়েছেন। তাদের দুটি মেয়ে আছে। বড় মেয়ের বয়স ছয় বছর ও আরেকটির চার মাস বয়স। একান্নবর্তী পরিবারের সব কাজ করতে হয় রুমাকে একাই। এ নিয়ে শাশুড়ি ও নন্দের অনেক কথাও শুনতে হয়। তাই সন্তান হাজেরার সঠিকভাবে যত্নও নিতে পারছিলেন না। এসব নিয়ে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তাই শুক্রবার মধ্যরাতে সন্তান হাজেরাকে বাড়ির কাছাকাছি একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে আসেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, রুমা বেগমকে রবিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। এর পেছনে যদি অন্য কিছু থেকে থাকে আশা করছি তদন্তে তা বের হয়ে আসবে।
নবীনগর প্রতিনিধি :
নবীনগরে টমেটোর বাম্পার ফল হয়েছে। বীরগাঁও ইউনিয়নের শোভারামপুর ও নজরদৌলত গ্রামের ইনজামামুল হক ও রফিকুল ইসলাম- আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করে মাত্র ৩০ হাজার ৫ শত টাকা খরচ করে ৩৩ শতাংশ জমিতে গত বছর প্রায় ১ লক্ষ টাকা আয় করেন। এবারও চলতি মৌসুমে ইনজামামুল ঐ জমিসহ ২০০ শতক জমিতে রাজা জাতের টমেটোর চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। ইনজামামুল ও রফিকের টমেটো চাষের সাফল্যের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার লোকজন প্রতিদিন তাদের জমি দেখার জন্য ভিড় করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন তাদের টমেটো চাষের সাফল্যের কারণ সঠিক ভাবে জমি প্রস্তুুত, উন্নত বীজ, পর্যাপ্ত সার ও সেচ এবং প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার। এতে তাঁদের ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। তাঁর এই সাফল্যে এলাকার যুব সম্প্রদায় ও চাষীদের মাঝে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে, ইনজামামুলের মতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে ২০০ শতক জমিতে প্রায় ৬ লক্ষ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারব। সারা বিশ্বে আলুর পরই টমেটো উৎপন্ন হয়, অধিকাংশ দেশেই টমেটো অন্যতম প্রধান সবজি। টমেটো কাঁচা-পাকা এবং রান্না করে খাওয়া হয়। প্রতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ টমেটো সস, কেচাপ, চাটনি, জুস ইত্যাদি তৈরিতে ব্যহৃত হয়,এর রং, রূপ ও স্বাদ অনন্য। টমেটোর পুষ্টির পাশাপাশি ভেষজ মূল্যও আছে,এর শাঁস ও জুস হজম কারক এবং ক্ষুধা বর্ধক, রক্ত শোধক হিসেবে ও কাজ করে।
টমেটো একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি প্রতি ১০০ গ্রামে যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হল – পানি ৯৩.১ গ্রাম, প্রোটিন ১.৯ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, খনিজ ০.৬ গ্রাম, আঁশ ০.৭ গ্রাম, সোডিয়াম ৪৫.৮ মি.গ্রাম, পটাশিয়াম ১.১৪ মি.গ্রাম, কপার ০.১৯ মি.গ্রাম, সালফার ২৪ মি.গ্রাম, ক্লোরিন ০.৩৮ গ্রাম, ভিটামিন-এ ৩২০ মি.গ্রাম, থায়ামিন ০.০৭ মি.গ্রাম, রিবোফ্লাবিন ০.০১ মি.গ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ০.৪ মি.গ্রাম, ভিটামিন-সি ৩১ মি.গ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১৫ মি.গ্রাম, ফসফরাস ৩৬ মি.গ্রাম এবং লৌহ আছে ১.৮ মি.গ্রাম।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত উল্লেখযোগ্য জাত গুলো হল বারি টমেটো- ৩, বারি টমেটো- ৪, বারি টমেটো- ৫, বারি টমেটো-৬, বারি টমেটো- ৭, বারি টমেটো- ৯,মানিক, রতন, ইত্যাদি। এ বছর নবীনগর উপজেলায় ৮০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ করা হয়। চাষকৃত উল্লেখযোগ্য ইউনিয়ন গুলো হল- বীরগাঁও, বড়াইল, কৃষ্ণনগর, শ্যামগ্রাম, বড়িকান্দি ও সলিমগঞ্জ।
চলারপথে রিপোর্ট :
জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত মেধাবী ছাত্র সাজন সাহা। তিন মাস পর পর শরীরে দিতে হয় রক্ত।
তারপর জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে অসুস্থতা নিয়েও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
সাজন সাহা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং পালপাড়া গ্রামের সঞ্জিত সাহা ও স্মৃতি রাণী সাহার ছেলে।
জানা গেছে, সঞ্জিত সাহা কাজ কারেন খাবার হোটেলে। একদিকে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত অন্যদিকে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সাজন সাহার শরীরে ধরা পড়ে জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া। গত ২ বছর আগে একমাত্র ছোট বোনটিও মারা যায় শারীরিক অসুস্থতায়। সব মিলিয়ে তার জীবনযুদ্ধ যেন হার মানায় সবকিছুকেই।
কথা হয় জীবন যুদ্ধে লড়াকু সৈনিক সাজন সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, শরীরে যখন রক্ত কমে আসে তখন শরীরজুড়ে জ্বর আসে, মাথা ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল হয়ে ভেঙে আসে। তবু হার মানিনি। রক্ত দিয়ে আবারও নেমে পড়ি ভালো কিছু করার উদ্দেশ্যে। আমার মা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেন ভাল কিছু করার জন্য। তবে শারীরিক দুর্বলতা আমাকে হার মানাতে না পারলেও দরিদ্রতা আমার এগিয়ে যাওয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বাবার সামান্য আয় দিয়ে আমার চিকিৎসা আর সংসার চালাতে হিমশিম খায়। আমার ইচ্ছে ছিল আইনজীবী হওয়ার। যেন দরিদ্র মানুষের ন্যায় বিচারে কাজ করে যেতে পারি। তারপরও আমি হতাশ হচ্ছি না। সৃষ্টিকর্তা যখন এইটুকু এগিয়ে নিয়ে এসেছেন, হয়ত তার ইচ্ছাতেই সবাই আমার পাশে থাকবেন। আমার এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করবে।
তিনি আরো বলেন, আমার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ। স্বেচ্ছাসেবী ব্লাড ফাউন্ডেশন আমার জন্য তিন মাস পর পর রক্তের ব্যবস্থা করে থাকেন। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
সাজনের সহপাঠীরা বলেন, সে একজন মেধাবী ছাত্র। নিয়মিত কলেজ করত। সে অসুস্থ হলেও দৃঢ়তার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সাজনে সবার জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।
সাজনের মা স্মৃতি রাণী জানান, আমার ছেলে প্রায় ১০ বছর ধরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। আমার ছেলেকে নিয়ে আমি অনেক বড় স্বপ্ন দেখি তবে সাদ আর সাধ্যের ফারাক যে নির্মম বাস্তবতা। অর্থহীন সংসারে এগিয়ে যাওয়া অনেক কষ্ট। আমার ছোট মেয়েটিও দুই বছর আগে মারা গেছে। এখন সাজনই আমার একমাত্র সম্বল। যেহেতু আমার ছেলে অসুস্থ তাই আমি চাই সে একটা ভাল সরকারি চাকরি করুক।
নবীনগর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ এ কে এম রেজাউল করিম জানান, সাজনের কৃতিত্বে আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত। সে কলেজের একজন নিয়মিত ছাত্র। আমরা আশা করি তার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে। আর আমরা নিজস্ব উদ্যোগে তার সহযোগিতায় পাশে থাকব।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রয়োজনে তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরে প্রথমবারের মতো সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সহযোগিতায়, বাংলা একাডেমির সমন্বয়ে উপজেলা সাহিত্য মেলা-২০২৩ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার এ সাহিত্য মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ফিতা কাটার মাধ্যমে উপজেলা সাহিত্য মেলার শুভ সূচনা হয়। এরপর মনোমুগ্ধকর বাউল সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
আজ ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার নবীনগর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী সাহিত্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নবীনগর পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শিব শংকর দাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল ছিদ্দিক। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন নবীনগর শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহা।
উপজেলার সাংবাদিক, শিক্ষকসহ কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন উপস্থিত অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা জাহান, নবীনগর সরকারি কলেজের প্রভাষক রাশেদুল হক (রাশেদ), কুমিল্লা নজরুল ইনস্টিটিউটে পরিচালক আল আমিন, জেলা কালচার একাডেমির পরিচালক মনিরুজ্জামান মনির, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকাররম হোসেন, নবীনগর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু মুসা, সহকারী প্রধান শিক্ষক কাজী ওয়াজেদ উল্লাহ, স্বজনের প্রধান উপদেষ্টা আবু কামাল খন্দকার, গুঞ্জন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা দিনমজুর স্বপন মিয়া প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ উপজেলার কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে রয়েছে প্রবন্ধ পাঠ, আলোচনা সভা, লেখক কর্মশালা, স্থানীয় লেখকদের স্বরচিত কবিতা পাঠ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দলের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আজ ২৭ জুন বৃহস্পতিবার নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে দলের সভাপতি ফয়জুর রহমান বাদল এমপি’র নেতৃত্ব একটি বিশাল র্যালি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে সভাপতিত্ব করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন চৌধুরী শাহান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ফয়জুর রহমান বাদল এমপি বলেন, ত্যাগী নেতা কর্মীদের মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে দ্রুত একটি শক্তিশালী উপজেলা আওয়ামীলীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে এবং সাংগঠনিক কাঠামোকে গতিশীল করতে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটিগুলিকে নতুন করে সাজানো হবে। বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, মেয়র অ্যাড. শিব সংকর দাস, বোরহান উদ্দিন আহমেদ, অ্যাড. সুজিত কুমার দেব, ইয়াবের হাসান জামিল, চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন আহমেদ, শফিকুল ইসলাম, নুরুন্নাহার বেগম, আবদুর রউফ, পিন্টু ভদ্র, মাহাবুব আলম লিটন, গৌরাঙ্গ দেব নাথ, জহির রায়হান, মাহমুদা আক্তার শিউলি, প্রবীর ভট্টাচার্য, চেয়ারম্যান মাসুম আনোয়ার হোসেন, হাবিবুর রহমান, সঞ্জয় সাহা, শামস আলম, সালাউদ্দিন বাবু, খলিলুর রহমান, শামীম, আব্দুল্লাহ আল রোমান, আব্দুল্লা আল মামুন প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
দীর্ঘ ৫৭ বছর ধরে কাকডাকা ভোরে, ঝড়-বৃষ্টি-তুফান উপেক্ষা করে যথা সময়ে নবীনগরের পাঠকদের হাতে সংবাদপত্র তুলে দেওয়া সেই লোকমান হেকিম চৌধুরী (৭২) জীবনের শেষ দিনও দুপুর পর্যন্ত পাঠকের হাতে পত্রিকা তুলে দিয়ে রাতেই চিরতরে পাঠকদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পরপারে চলে গেলেন।
২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে নবীনগর উপজেলার কনিকাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না … রাজিউন)।
জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার নবীনগর উপজেলার একমাত্র সংবাদপত্র এজেন্ট ছিলেন তিনি। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও মারা যাওয়ার দিনও বিক্রি করেছেন পত্রিকা। মুত্যুকালে স্ত্রী, চার মেয়ে ও এক ছেলে রেখে যান।
আজ শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর কনিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযা নামাজ শেষে চৌধুরী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার পরিবার।
জানা যায়, লোকমান হেকিম চৌধুরী নবীনগর লঞ্চ ঘাটে বসে দীর্ঘ প্রায় ৫৭ বছর যাবৎ নবীনগরবাসীকে সংবাদপত্র পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, সংবাদপত্র ক্রয় করার জন্য লঞ্চ ঘাটে ছুটে আসতো নানা শ্রেনীর সংবাদ পাঠক। ঝড়-বৃষ্টি-তুফান উপেক্ষা করে যথা সময় মানুষের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। যাকে নবীনগর প্রশাসনেরসহ সর্বস্তরের মানুষ কাছে চৌধুরী নামে পরিচিত ছিলেন। উনার একমাত্র ছেলে খান জাহান আলী চৌধুরী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সাংবাদিকতার পাশাপাশি বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করেন। মারা যাওয়ার দিনও পত্রিকা বিক্রি করেছেন লোকমান হেকিম চৌধুরী। বিকেলে ঘুরে ফিরে দেখেছেন নিজের জমি জমা। রাতে একমাত্র ছেলে খান জাহান আলীকে সাথে নিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঔষধ খেয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে যায়। এর পর আর জেগে উঠেননি তিনি। নবীনগরের লঞ্চ ঘাটের সামনে উনার সংবাদপত্র এজেন্টের দোকানে সব সময় মানুষের একটা আড্ডা থাকতো। সদা রসিক এবং আড্ডা প্রিয় মানুষ ছিলন। তিনি পত্রিকার একজন সুনামধারী এজেন্ট হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। উনার কাজের সন্তুষ্টির কারনে উপজেলা প্রশাসন, প্রেসক্লাব, বিভিন্ন সাংবাদিক এবং সামাজিক সংগঠন ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ প্রত্যেক বছরই নানারকম পুরস্কারে ভূষিত করেছেন।
লোকমান হেকিম চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদে নবীনগরে শোকে ছায়া নেমে আসে। শোক প্রকাশ করেছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম, নবীনগর থানার ওসি মাহবুব আলম, নবীনগর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন আহমেদ, নবীনগর প্রেসক্লাবসহ স্থানীয় সংবাদকর্মী, সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।