অনলাইন ডেস্ক :
চট্টগ্রামে শিশুকে অপহরণ করে বিক্রির অভিযোগে মামা-মামিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার নগরের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে নরসিংদী থেকে ওই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেফতার তিনজন হলেন–ভোলার মনপুরা উপজেলার ভাসানখালী গ্রামের মুজিবুর রহমান মজিদ, তাঁর স্ত্রী আরজু বেগম এবং নরসিংদী সদর উপজেলার বগারগোত এলাকার আবুল কালাম।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার দুপুরে কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোড থেকে আপন বোনের শিশুপুত্রকে অপহরণ করেন মজিদ। সন্তান না পেয়ে সোমবার কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন মা নূপুর আক্তার। পুলিশ ওই দিন রাতেই কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকা থেকে মজিদ ও আরজুকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবুল কালামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁর তথ্য অনুযায়ী নরসিংদী সদর উপজেলার বগারগোত এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির জানান, শিশুটিকে অপহরণের পর আবুল কালামের মাধ্যমে এক লাখ টাকায় নরসিংদীর এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মজিদ দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শিশুটিকে মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্রেনের ধাক্কায় তিতাস কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিনসহ একটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।
আজ ৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর থেকে রাজধানীর সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, তিতাস কমিউটার ট্রেন তেজগাঁও স্টেশন ছেড়ে আসার পরপরই দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্রেনের আঘাতে ওই ট্রেনের ইঞ্জিনসহ একটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে গেছে। উদ্ধার অভিযান চলছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সারাদেশের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ এখন বন্ধ আছে।
অনলাইন ডেস্ক :
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ৪২ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল ৮টা ৪২ মিনিট) প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সূত্র : বাসস
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুল মুহিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট রোববার রাত ৯টা ৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) লন্ডনে পৌঁছায়। লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে চার ঘণ্টা যাত্রাবিরতির পর প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
রোববার সকাল ১০টার পর রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায় প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট। সে সময় বিমানবন্দরে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও বিশ্বনেতারা ৭৮তম ইউএনজিএ অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্কে জমায়েত হবেন। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে এবারের প্রতিপাদ্য ‘বিশ্বাস পুনর্গঠন ও বিশ্ব সংহতির পুনরুদ্ধার : ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে ত্বরান্বিত পদক্ষেপ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং সবার জন্য স্থায়িত্বের দিকে’।
এ সফরে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্কে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের প্রথম দিনের বিতর্কে যোগ দেবেন। ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে ভাষণ দেবেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, সাধারণ বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন-অগ্রগতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু ও ন্যায়বিচারের মতো বিষয় তুলে ধরবেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের পাশাপাশি এই সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও অর্থসহ বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় ও সৌজন্যমূলক বৈঠকে অংশ নেবেন।
এরমধ্যে সোমবার নিউইয়র্কের রকফেলার সেন্টারে ইউএনআইডিও ও ডেলয়েট আয়োজিত ‘খাদ্যের জন্য চিন্তা– খাদ্য সরবরাহ চেইন উদ্ভাবনের জন্য এসডিজিকে ত্বরান্বিত করার জন্য সহযোগিতা’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মূল বক্তব্য দেবেন। প্রধানমন্ত্রী আগামী ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
দাফন সম্পন্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের লক্ষীমুড়া গ্রামের নিহত হারুন মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় মনিপুর বন্দরবাজার বালুর মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় স্থানীয় হারুন মিয়ার আত্মীয় স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করে। এর আগে শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে হারুন মিয়া নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরদিন দুপুরে ময়নাতদন্তের পর হারুন মিয়ার মরদেহে এসে পৌঁছায় তার নিজ এলাকায়। মরদেহ পৌঁছার পর থেকেই স্থানীদের ভিড় বাড়ে তার বাড়িতে। এরপর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজু আহমেদ, পত্তন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, আওয়ামীলীগ নেতা হৃদয় আহমেদ জালাল, সাবেক মেম্বার সেলিম মিয়া, হোসেন মিয়া, মাওলানা সিরাজ আকরামসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা। নিহত হারুন মিয়ার ভাতিজা সোহেল বলেন, দুধ মিয়া সরাসরি করিম মিয়ার পক্ষে নিয়েছে। যার কারণে আমার চাচা হারুন মিয়া হত্যার শিকার হয়েছে। আমার চাচার হত্যার সাথে দুধ মিয়া জড়িত। দুধ মিয়াসহ যারা আমার চাচাকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসির দাবি জানাই।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ জানান, শান্তিপূর্ণ ভাবে হারুন মিয়ার জানাযা সম্পন্ন হয়েছে। এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অভিযুক্ত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে তিনি জানান।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১৭ মার্চ, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন।
সেদিন ছিল মঙ্গলবার। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। রাত ৮ টার দিকে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা বাঙালি জাতির মুক্তির দূত হয়ে পৃথিবীতে আসেন একটি শিশু।
সেদিনের সেই শিশুই আজ অবিসংবাদিত নেতা বাঙালি ও বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ সেই মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী। শুভ জন্মদিন জাতির পিতা। আজ বাঙালি জাতির আনন্দে পুলকিত হওয়ার দিন। দিনটি পরবর্তীতে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির এ জন্মদিনে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা, সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
খোকা থেকে জাতির পিতা : পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে আসা শেখ মুজিবুর রহমান চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়।
বাবা-মায়ের আদরের খোকা নামের ছোট্ট শেখ মুজিব ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন শুরু করেন। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন।
পরবর্তীকালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
একই বছরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে এই কলেজ থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করেন।
বিয়ে করেন শেখ ফজিলাতুননেছাকে (রেনু)। তারা দুই কন্যা- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের জনক-জননী ছিলেন।
১৯৪৩ বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের (অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের শাখা) কাউন্সিলর নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের পাশাপাশি তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বতন্ত্র, স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন।
যদিও এই উদ্যোগ বাতিল হয় কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটিই একজন জাতির পিতার স্বপ্নের রাষ্ট্র গড়ার ভিত্তি হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থাতেই তাকে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
১৯৫২ সালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ আরও অনেকেই। জেল থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব শহিদদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানান।
একই বছর তিনি শান্তি সম্মেলন উপলক্ষ্যে চীন সফর করেন। শান্তি সম্মেলনে তিনি বাংলায় বক্তৃতা দেন, ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে যান বৈশ্বিক অঙ্গনে।
১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং একজন বাঙালি নেতা হিসেবে তার উত্থান হয়। ১৯৫৪ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে।
আওয়ামী লীগ একাই পায় ১৪৩টি। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন এবং ১৫ মে নতুন প্রাদেশিক সরকারের সমবায় ও কৃষিমন্ত্রী হন।
৩০ মে ভারত স্বাধীনতা আইন-১৯৪৭, প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। ১৯৫৬ সালে খান আতাউর রহমানের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকারে তিনি মন্ত্রী হন।
মাত্র নয় মাস তিনি মন্ত্রী পদের দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বাঙালির অধিকার আদায় আন্দোলনকে বেগবান করা এবং সংগঠনকে আরও সুসংহত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৫৭ সালের ১৩-১৪ জুন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিতিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে এক বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
এই অধিবেশনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে আলাদা হয়ে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়।
১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।
এই ছয় দফা মুক্তিকামী বাঙালি জাতির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বীজ বুনে দেয়। ১৮-২০ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি সারা বাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন। এ সময় তাকে আটবার গ্রেফতার করা হয় এবং সর্বশেষ ৮ মে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। প্রায় তিন বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন।
১৯৬৮ সালে ৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার মোট ৩৫ জন বাঙালির (রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সরকারি অফিসার) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
জেলে বন্দি থাকা অবস্থাতেই ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবের ওপর পুনরায় গ্রেফতার আদেশ জারি হয়। ভারতের সহায়তায় পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা দায়ের করা হয়।
বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং তার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র গণআন্দোলন শুরু হয়। টানা গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বিশাল ছাত্র সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এক জনসভায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ’।
১৯৭০ বঙ্গবন্ধু ছয় দফার আলোকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বা?ন জানান। আওয়ামী লীগের জন্য তিনি নৌকা প্রতীক বেছে নেন।
১২ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় উপকূল এলাকায় লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রেখে ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত অঞ্চলে ছুটে যান।
৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়। ১৯৭১ সালে ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।
এই ঘোষণার ফলে সর্বস্তরের বাঙালি জনতা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন মোড় নেয়। ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু কার্যত ছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধান।
একদিকে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশ যেত, অপরদিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে যেত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ। বাংলার মানুষ মেনে চলতেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ।
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এই ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
২৫ মার্চ রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক হানাদার বাহিনী শতাব্দীর অন্যতম ঘৃণ্য গণহত্যা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এরপরই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় এবং গণপরিষদ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসেন।
সেদিন বাঙালি জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা জানায়। লাখো মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্নাত হয়ে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে আসেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
১২ জানুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে নতুন বাংলাদেশকে শক্ত ভিত্তির ওপর স্থাপন করেন।
অনলাইন ডেস্ক :
দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পালা শেষ হলো। অবশেষে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে প্রথম বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হলো শুক্রবার। এর মাধ্যমে দেশের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হলো পর্যটনশহর কক্সবাজার। এখন থেকে ট্রেনে চড়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতের স্বপ্নপূরণ করতে পারবেন কক্সবাজারবাসী।
আজ ১ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে আইকনিক রেলস্টেশন থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০ জন যাত্রী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’। এর আগে, গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজার-দোহাজারি রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী বলেন, এক সপ্তাহ আগে থেকে অনলাইন ও অফলাইনে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এখন শুধু ৯ ডিসেম্বরের পরের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কক্সবাজার এক্সপ্রেসে ২০ বগিতে আসন সংখ্যা ৭৮০টি। প্রায় ১ হাজার যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা করবে। চাহিদা বাড়লে বগিও বাড়ানো হবে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৯টি স্টেশন রয়েছে। সবখানে জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ননস্টপ যাত্রা করবে। শুধু চট্টগ্রাম ও ঢাকায় যাত্রা বিরতি করবে। কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে নামলে যাত্রীরা পাবেন তারকা মানের হোটেল, অত্যাধুনিক শপিংমলে কেনাকাটাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা।
এদিকে, প্রথম ট্রেনের টিকিট পেয়ে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা। ঢাকার টিকিট করা যাত্রী জহির উদ্দিন বলেন, কক্সবাজার থেকে প্রথম এই যাত্রা ইতিহাস হয়ে থাকবে। তাই আগে থেকে টিকিট বুকিং করে রাখছি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ চট্টগ্রামে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌঁছবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। পর্যটন শহর থেকে রাজধানী ঢাকা যেতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট। কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা।