জাতিসংঘের ত্রুটিপূর্ণ বিবৃতির প্রতিবাদ জানাল বাংলাদেশ

জাতীয়, 2 November 2023, 865 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের ত্রুটিপূর্ণ বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়ে সরকার ওই প্রতিবাদ জানায়।

banner

বার্তায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জানায়, ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের এক দফা অসাংবিধানিক দাবির নামে বিএনপি সহিংসতা ও জনবিচ্ছিন্নতার অভূতপূর্ব প্রদর্শনী করছে। বাংলাদেশ সরকার তাতে গভীরভাবে মর্মাহত।

বিএনপির অনুরোধ অনুসারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কিছু নির্দিষ্ট শর্তে ২৮ অক্টোবর তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। তবে বিএনপিকর্মীরা রাস্তায় সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, ব্যক্তি ও সম্পত্তির ওপর হামলার আশ্রয় নেয়। এ ধরনের ব্যাপক সহিংসতার প্রধান শিকার হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নিরপরাধ নাগরিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সম্পত্তি।’

জাতিসংঘকে পাঠানো ‘নোট ভারবাল’-এ (কূটনৈতিক চিঠি) বলা হয়েছে, ‘ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পুলিশের একজন সদস্যকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

আইন প্রয়োগকারী সদস্যরা আক্রান্ত ও আহত হয়েছেন। বাস, ফায়ার সার্ভিসের ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের অন্য বিচারকদের বাসভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ হাসপাতাল চত্বর ও অ্যাম্বুল্যান্সে আগুন দেওয়া হয়েছে।

বেশ কয়েকটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বিএনপির এমন ক্রমাগত নৃশংসতার মুখেও বাংলাদেশ সরকার এবং এর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত সংযম ও ধৈর্য প্রদর্শন করেছে। তারা জনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সর্বনিম্ন পর্যায়ের বলপ্রয়োগ করেছে।’

বাংলাদেশ বলেছে, মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের বিবৃতিতে মোটরসাইকেলে চড়ে হামলা করা ‘মুখোশধারী ব্যক্তিদের’ ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের বলে যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

এর আগে গত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, জাতিসংঘের বিবৃতি ত্রুটিপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকার ত্রুটিপূর্ণ এই বিবৃতির প্রতিবাদ জানাবে। গত রাতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার আশা করছে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর তাদের আগের বিবৃতি সংশোধন করে সঠিক তথ্য তুলে ধরবে। না হলে প্রতিষ্ঠানটি গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক গত সোমবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাতে ৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র লিজ থ্রসেল পরদিন গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ সংখ্যা ১১ বলে উল্লেখ করেন।

বস্তুত ঢাকায় গত শনিবারের সংঘাতের সময় পুলিশের এক সদস্য ও যুবদলের এক স্থানীয় নেতার মৃত্যু হয়। পরদিন রবিবার হরতালে ১৩ জেলায় সহিংসতায় চারজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে দুইজন পৃথক ঘটনায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। গত মঙ্গলবার বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধের প্রথম দিন আরো চারজন নিহত হন।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের মুখপাত্রের দেওয়া বিবৃতিতে হামলাকারীদের পরিচয় সম্পর্কে বিএনপির অভিযোগ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সহিংসতায় সরকার সমর্থিত ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততারও ইঙ্গিত করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের বিবৃতির বর্ণনা বেশ ত্রুটিপূর্ণ, বাস্তবতাবিবর্জিত। আমরা এর একটা প্রতিবাদ পাঠাব। আমরা মনে করি, তাঁরা যথাযথভাবে অবহিত নন।’

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের তথ্যে ঘাটতি আছে। এ রকম প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে ঘাটতি থাকা খুবই দুঃখজনক।’

Leave a Reply

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির…

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান Read more

বাঞ্ছারামপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য Read more

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল Read more

রাইস কুকারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-মেয়ের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক : মাগুরার সদর উপজেলার টিলা গ্রামে রাইস কুকারে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

চলারপথে রিপোর্ট : সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় Read more

নাসিরনগরে মৎস্য আড়তে অভিযান, নিষিদ্ধ পিরানহা…

চলারপথে রিপোর্ট : বিক্রির জন্য রাখা নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন চাঁদাবাজ গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা (বিশ্বরোড) গোলচত্বর নামক এলাকায় চাঁদাবাজির Read more

সড়ক মেরামতের সপ্তাহ না পেরোতেই উঠে…

চলারপথে রিপোর্ট : সড়ক মেরামতের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ইতিমধ্যে Read more

কসবায় গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ২৪ জুন মঙ্গলবার সকালে এস আই Read more

শাস্তি পেলেন ঋষভ পন্ত

অনলাইন ডেস্ক : আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট Read more

বাংলাদেশে গুগল পে এর উদ্বোধনী

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুর Read more

যে কাজে নেক আমল নষ্ট হয়

ইসলাম ডেস্ক : মানুষের জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক হলো Read more

অটোরিক্সাচাপায় গেল শিশুর প্রাণ

জাতীয়, 16 October 2023, 890 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বেপরোয়া গতিতে আসা যাত্রীবাহী অটোরিক্সার চাপায় তমা নামে সাত বছর বয়সী এক শিশু নিহত হয়েছে। এসময় শিশুটিকে দ্রুত নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

banner

আজ ১৬ অক্টোবর সোমবার ভোর ৫টায় ফতুল্লার কাশিপুর ভোলাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তমা (৭) গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার হরিরাম ইউনিয়নের আমপুরা গ্রামের তছলিম মিয়ার মেয়ে। তারা স্বপরিবারে ফতুল্লার কাশিপুর ভোলাইল মিষ্টির দোকান এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই সজিব মাহমুদ জানান, তমা ঘুম থেকে উঠে বাসার সামনে গেইটের কাছে দাঁড়াতেই বেপরোয়া গতিতে আসা ইজিবাইক ( ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা) তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। তখন আশপাশের লোকজন তমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশটি ময়না তদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। ঘাতক ইজিবাইক চালকের নাম পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। এঘটনায় মামলা হবে।

অব্যবহৃত মোবাইল ডাটার মেয়াদ কি বাড়বে, যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

জাতীয়, 26 July 2024, 525 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
হঠাৎ করে মোবাইল ইন্টারনেট শাটডাউন হয়ে যায় ১৮ জুলাই সন্ধ্যায়। যদিও এর আগে গত ১৬ জুলাই থেকে গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ আছে মোবাইল ইন্টারনেট। এতে বিপাকে পড়েছেন মাসব্যাপী মেয়াদে কেনা মোবাইল ডাটা গ্রাহকরা। তাদের দাবি, ক্রয় করা ডাটার মেয়াদ বৃদ্ধির।

banner

দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সচল হলে অব্যবহৃত এই ডাটা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন কি না, তা জানতে উদগ্রীব গ্রাহকরা।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক ১৩ কোটি। এসব গ্রাহকদের বেশির ভাগেরই ডাটা প্যাকেজ কেনা ছিল। কারো বেশি, কারো কম। ফলে সবাই কমবেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এ বিষয়ে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গ্রাহকের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কতটা; কীভাবে পূরণ করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে কথা চলছে আমাদের। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এদিকে, অব্যবহৃত ডাটা নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের স্বার্থের বিষয়টি সবার আগে গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। অপারেটরগুলোকে একসঙ্গে ডেকে বৈঠকও করা হবে বলে জানান তিনি।

গত বুধবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, আগামী রবিবার ও সোমবার (২৮ বা ২৯ জুলাই) মোবাইল ইন্টারনেট চালু হতে পারে। সে বিষয়ে এখনো পরীক্ষা চলছে। তবে বিটিআরসির নির্দেশনা পেলেই তারা গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে টেলিকম কোম্পানিগুলো।

হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া বাসায় ফিরলেন

জাতীয়, 3 May 2024, 632 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ২ মে বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান-২ এ নিজের বাসভবন ফিরোজায় পৌঁছান তিনি।

banner

খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার চিকিৎসায় গঠিত বোর্ডের পরামর্শে বুধবার সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বাসার উদ্দেশে রওনা হন। পরে তিনি রাত ৮টা ৫৪ মিনিটে বাসায় পৌঁছান বলে জানান তার প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হৃদ্‌রোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। সবশেষ ৩০ মার্চ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। তিন দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন।

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি।

২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছিল। সেই থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।

শীতের দাপটে গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় বেড়েছে

জাতীয়, 13 January 2024, 848 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
দেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছে । কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু সারা দেশের মানুষ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমেই নিচের দিকে নামছে পারদের কাঁটা। ফলশ্রুতিতে অধিকাংশ এলাকায়ই সূর্যের দেখা নেই কদিন থেকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে রাজধানীতেও।

banner

কলকারখানা-গাড়ির ধোঁয়া, মানুষের কর্মচাঞ্চল্য, কোলাহল সবকিছুকে পেছনে ফেলে সকাল-সন্ধ্যা কুয়াশায় চাদরে ঢাকা পড়ছে ঢাকা শহর। তবে সুসংবাদ নেই। চলমান এই শৈত্যপ্রবাহ আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে শীত বাড়াতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এমন অবস্থায় শীত নিবারণে রাজধানীজুড়ে চাহিদা বেড়েছে গরম কাপড়ের। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিপণী বিতান, শপিং মল থেকে শুরু করে ফুটপাতে বেচাকেনা হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের শীতের কাপড়।

আজ ১৩ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর রোডের গোল্ডেন গেট শপিং সেন্টার, খান প্লাজা, কাদের অর্কেড, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, বাইতুল মামুর জামে মসজিদ মার্কেট, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, নেহার ভবন, নুরজাহান সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নূর ম্যানশন সুপার মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেটসহ সবগুলো মার্কেটেই শীতের কাপড়ের ব্যাপক সমাহার। ব্যবসায়ী ও দোকানিরা ক্রেতাদের চাহিদা আর রুচির কথা মাথায় রেখে পসরা সাজিয়েছেন এসব পোশাকের। এরমধ্যে জ্যাকেট, সোয়েটার, হুডি, ফুল স্লিভ টি-শার্ট, ব্লেজার, স্লিভলেস কোট, কটি, জিন্সের মোটা শার্ট-জ্যাকেট, ডেনিম শার্ট, উইন্টার কোট, উলের তৈরি শাল, খাদির শাল, মাফলার, কানটুপি, হাত-পায়ের মোজা অন্যতম।

ব্যবসায়ীরা জানান, শীতের অধিকাংশ ক্রেতাই তরুণ-তরুণী। সেজন্য তাদের পছন্দের কথা চিন্তা করে দোকানে ক্যাজুয়াল ফ্যাশনের কালেকশনই বেশি রাখা হয়েছে। এরমধ্যে এবার জ্যাকেটের চাহিদা বেড়েছে। এরমধ্যে জেন্টস লেদার জ্যাকেট, জেন্টস ফুল স্লিভ জ্যাকেট, লেডিস ফিট ফুল স্লিভ জ্যাকেট, জেনস কটন জ্যাকেট, ফুল স্লিভ জেন্টস ক্যাজুয়াল জ্যাকেট, জেন্টস হুডি জ্যাকেট অন্যতম। নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের কথা মাথায় রেখে এসব জ্যাকেটের প্যাটার্নেও এখন আনা হয়েছে বেশ নতুনত্ব। সিনথেটিক এবং মিক্সড লেদারের জ্যাকেটও রয়েছে দোকানগুলোতে। এছাড়াও ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন প্যাটার্ন স্টাইল এবং গুণগত মানের কাপড় দেখা গেছে দোকানগুলোতে।

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী বাপ্পি হাওলাদার বলেন, নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার অধিকাংশ ব্যবসায়ীরাই মৌসুমভিত্তিক কাপড়ের ব্যবসা করেন। সে অনুযায়ী এখন অধিকাংশ দোকানেই শীতের পোশাক। তবে এক্ষেত্রে আমরা তরুণ-তরুণীদের পছন্দকে প্রাধান্য দেই। কারণ বয়স্ক মানুষজন একটি শীতের কাপড়ের একাধিক বছর চালালেও তরুণ-তরুণীদের প্রতি বছর নতুন কাপড় কেনার প্রবণতা বেশি। সেজন্য আমরা তাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখেই শীতের পোশাক সংগ্রহ করে থাকি। এবছর বিক্রি খুবই ভালো হচ্ছে। সম্প্রতি শীত বাড়ার কারণে দোকানে ক্রেতার পরিমাণও বেড়েছে। সবমিলিয়ে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার শীতের পোশাকের বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্টির কথাও জানান তিনি।

রবিউল হুসাইন নামের আরেক বিক্রেতা শীতের পোশাকের দাম সম্পর্কে বলেন, গুণগত মান এবং ব্র্যান্ডের উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারিত হচ্ছে। দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি ভালো কোয়ালিটির জ্যাকেট ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আবার এক্সপোর্ট কোয়ালিটি কিংবা চায়না জ্যাকেট দেড় থেকে আড়াইহাজার টাকায় বিক্রি করছি। লেদার জ্যাকেটের দাম নির্ধারিত হচ্ছে গুণগত মানের উপর। সোয়েটার এবং হুডি ৮শ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করছি। মূলত, এবছর টেক্সটাইল এবং সব ধরনের গার্মেন্টস পণ্যের উপাদানের দাম বাড়ার কারণে এর প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েছে। তবে বেশি বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছে স্বল্প লাভেই বিক্রি করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট ফুটপাতের বিক্রেতারাও। মেয়েদের ওলের ওড়না, জ্যাকেট, চাদর থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন শীতের পোশাকের পসরা নিউমার্কেটের ফুটপাতজুড়ে। দামেও কিছুটা কমের কারণে সেসব দোকান ঘিরে ভিড় করছেন মানুষজন। অনেক দোকানে আবার চাদর, হুডি, হাতাওয়ালা টিশার্ট তাল মিলিয়ে ‘বাইচ্ছা লন, তিনশ’, ‘দেইখা লন, তিনশ’ এভাবে ডেকে বিক্রি করতে দেখা যায়।

আব্দুল ওয়াহাব নামের ফুটপাতের এক বিক্রেতা বলেন, বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। কমদামে ভালো কাপড় দিচ্ছি। আমাদের তো দোকান ভাড়া দিতে হয়না। কর্মচারী বিল নাই। সেজন্য অল্প লাভেই মানুষের কাছে বিক্রি করতে পারছি। আজকে ছুটির দিন হওয়ার কারণে সকাল থেকেই ক্রেতা সমাগম বেশি।

আবার নিউমার্কেটের ভেতরে দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, মানুষজন বেশি কেনাকাটা করছেন তাদের এলাকায় থাকা আত্মীয় স্বজনদের কাছে পাঠানোর জন্য। বাড়ির ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্কদের জন্য শাল, মাফলার, হাত-পায়ের মোজার ক্রেতার পরিমাণ বেশি। ভেতরের দোকানগুলোতে শাল চাদর মানভেদে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, মাফলার ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে তিনশো টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার বাচ্চাদের পোশাকও গুণগত মান ও বয়সভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।

কেনাকাটা করতে আসা তাসলিমা বেগম বলেন, আমার বাড়ি গাইবান্ধা। সেখানে প্রচুর শীত পড়েছে। বাবা-মায়ের জন্য শীতের পোশাক আগেই পাঠিয়েছি। তারপরও এখন আবার মোটা খাদি কাপড়ের শাল চাদর, মাফলার এবং হাত পায়ের মোজা বেশি করে কিনে বাড়িতে পাঠাচ্ছি। দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশিই। তারপরও প্রয়োজনের তাগিদে কেনাকাটা তো করতেই হচ্ছে।

ইউসুফ মিয়া নামের আরেকটা ক্রেতা বলেন, শীত একটু বেশি পড়েছে। সেজন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে কেনাকাটা করছে। ক্রেতা যেহেতু বেশি তাই দোকানিরা দাম একটু বেশি চাইছে। তবে নিউমার্কেটের ফুটপাতে সাশ্রয়ী মূল্যে শীতের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। আর মার্কেটগুলোতে দাম কিছুটা বেশি। দেখেশুনে কেনাকাটা করতে হচ্ছে।

কম্বল-লেপের বিকল্প হিসেবে চাহিদা বেড়েছে কম্ফোর্টারের

শীতে আরামদায়ক ঘুমের জন্য উঞ্চতা বৃদ্ধিতে বর্তমানে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছে কম্ফোর্টার। লেপ কিংবা কম্বলের তুলনায় দ্রুত উষ্ণতা পেতে এর জুড়ি নেই। তাইতো কম্বল ও লেপের তুলনায় এখন চাহিদা বেড়েছে কম্ফোর্টারের। আবার বিদেশি কম্ফোর্টারের পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কম্ফোর্টার তৈরি করে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করার কারণে দামও হাতের নাগালে রয়েছে। কম্ফোর্টার তৈরিতে এগিয়ে এসেছে বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানিও। তাই স্বল্প দামে ভালো মানের কম্ফোর্টারের দিকে ঝুঁকেছেন মানুষজন।

বিক্রেতারা জানান, অনলাইনে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার কারণে মানুষ এখন দোকানে এসেই কম্ফোর্টার খুঁজেন। স্থানীয়ভাবে তৈরি ফাইবারের এসব কম্ফোর্টার সিঙ্গেল, সেমি ডাবল ও ডাবল হিসেবে দাম ঠিক করা হয়। আবার কম্ফোর্টারের পুরুত্বের ওপরও নির্ভর করে গুণগত মান।

নীলক্ষেত সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের বেডশিট ব্যবসায়ী ইলিয়াস খান বলেন, কম্বল ও লেপের তুলনায় কম্ফোর্টারের ওজন একেবারেই হালকা। তবে এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো দ্রুততম সময়ে উষ্ণতা পাওয়া যায়। আমাদের দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেমন কমফি, বেক্সি ফেব্রিকসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কম্ফোর্টার তৈরি করছে। এসব কম্ফোর্টার আকারভেদে এগারোশ টাকা থেকে আড়াইহাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও কোরিয়ান, চায়নাসহ অন্যান্য বিদেশি কম্ফোর্টার সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে কম্বলের বেচাকেনা আহামরি না হলেও অন্যান্য বছরের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।

চলতি মাসেই দেওয়া হবে সাড়ে ২৪ লাখ স্মার্টকার্ড

জাতীয়, 17 January 2024, 766 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
চলতি (জানুয়ারি) মাসেই দেশের ১৫টি উপজেলার সাড়ে ২৪ লাখ নাগরিকের মাঝে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড বিতরণে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীতে আরো ১০ উপজেলায় এই কার্ড বিতরণে যাবে সংস্থাটি। এছাড়া বন্ধ থাকা বিতরণ কার্যক্রমও ফের চালু করা হবে।

banner

ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। এতে বরিশালের বাকেরগঞ্জ, কুমিল্লার সেনা নিবাস, দিনাজপুরের বিরামপুর ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ২৩ থেকে ২৫ জানুয়ারি; চট্টগ্রামের লোহাগড়া, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, নাটোরের লালপুর, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া ও বাগেরহাটের চিতলমারীতে ২৬ থেকে ২৮ জানুয়ারি; ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা, পাবনার ভাঙ্গুড়া, সিলেটের বিয়ানীবাজার ও শরিয়তপুরের ডামুড্যায় ২৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি এবং খুলনার ফুলতলা ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৪ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি স্মার্টকার্ড বিতরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। এই ১৫ উপজেলায় ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪০০ জনকে দেওয়া হবে উন্নতমানে এই নাগরিক পরিচয়পত্র।

এদিকে সংসদ নির্বাচনের কারণে স্থগিত স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রমও চালু করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাঠিয়েছে ইসি। সংস্থাটির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) ফয়সল কাদেরের পাঠানো ওই নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে চলমান স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম ৩০ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া যে সব উপজেলা, থানা পর্যায়ে স্মার্টকার্ড মুদ্রণপূর্বক প্রেরণ করা হয়েছিল কিন্তু বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়নি তাদেরকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ওই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এই অবস্থায় যে সকল উপজেলা, থানায় স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল সে সকল উপজেলাথানায় আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১১ সালে হাতে নেওয়া স্মার্টকার্ড প্রকল্পটির মেয়াদ শেষে সরকারি তহবিল থেকে নেওয়া এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি প্রথম হাতে নেওয়ার সময়কার নয় কোটি ভোটারকে উন্নত মানে এনআইডি দেওয়াই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। অথচ ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ওই নয় কোটি ভোটারের স্মার্টকার্ড বিতরণ সম্পন্ন করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

প্রথমে ফরাসি প্রযুক্তি পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অবার্থার টেকনোলজির কাছ থেকে এই কার্ড করে নিলেও, চুক্তি ভঙ্গ করায় প্রতিষ্ঠানটিকে আর কাজ দেয়নি ইসি।

বর্তমানে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে স্মার্টকার্ড তৈরি করে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।