চলারপথে রিপোর্ট :
ভারত থেকে আমদানি করা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এক কোটি চার লাখ টাকার কাঁচামালসহ দুই কাভার্ডভ্যান নিয়ে পালিয়েছেন চালক। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।
৩ নভেম্বর শুক্রবার কোম্পানির লিগ্যাল অফিসার জুলফিকার হোসেন খান বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেন।
মামলার বিবাদীরা হলেন, মাগুরা সদরের বুজরুক শ্রীকুন্ডি গ্রামের ওয়াহিদুল মোল্লার ছেলে কাভার্ডভ্যান চালক ইয়াছিন হোসেন (৩৩), একই এলাকার আবছার মোল্লার ছেলে হেলপার জিসান হোসেন (২৫), আনছার বিশ্বাসের ছেলে মিরাজ মিয়া (৩৯), অহিদুল মোল্লার ছেলে হেলপার মো. হৃদয় (১৯) এবং একই জেলার মহম্মদপুর থানার বিনোদপুর গ্রামের আবুল মোল্লার ছেলে কাভার্ডভ্যান চালক মো. তুহিন (৩৫)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ অক্টোবর ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির বৈদ্যুতিক মালামাল তৈরির কাঁচামাল (অ্যালুমিনিয়াম ইনগট) আমদানি করা হয়। মালামাল নিয়ে ৩০ অক্টোবর রাতে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কারখানায় পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে কোম্পানির নিজস্ব দুটি কাভার্ডভ্যান। পরদিন মালামাল নিয়ে হবিগঞ্জে পৌঁছানোর কথা থাকলেও কাভার্ডভ্যান দুটি যায়নি। এ অবস্থায় ১ নভেম্বর বুধবার রাতে কোম্পানির নিজস্ব কাভার্ডভ্যানগুলোতে সংযোজন থাকা জিপিএস ট্র্যাক করে দেখা যায়, কাভার্ডভ্যান দুটি মেঘনা নদীর সেতু অতিক্রম করে আশুগঞ্জের দিকে যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার ট্র্যাকিং করলে কাভার্ডভ্যান দুটি আশুগঞ্জে অবস্থান দেখায়।
২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে পুনরায় ট্র্যাকিং করলে কাভার্ডভ্যানের জিপিএস এবং চালক-হেলপারের ফোন বন্ধ দেখায়। এ অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও এক কোটি চার লাখ টাকার আমদানি করা কাঁচামালসহ কাভার্ডভ্যান দুটির সন্ধান মেলেনি।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাহিদ আহমদ বলেন, মামলার পরপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মালামালসহ কাভার্ডভ্যান দুটি উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জে অটোমেটিক ডায়ার রাইস মিলের কারণে জনজীবনে নেমে আসা দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের খড়িয়ালা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আবু তাহের মার্কেট প্রাঙ্গণে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দূর্গাপুর ইউনিয়নের খড়িয়ালা ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ওবায়দুল হক। তিনি বলেন, আশুগঞ্জের দূর্গাপুর ইউনিয়নের খড়িয়ালা গ্রামে প্রকৃতি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে স্থানীয় দুটি অটোমেটিক ডায়ার রাইস মিল তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। কোনো রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ফসলি জমির পাশে ও জনবহুল এলাকাতে মিলগুলো পরিচালিত হওয়ায় স্থানীয়রা মারাত্মক দুর্ভোগের মুখে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, মিলগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া, উড়ন্ত ছাই ও ধুলাবালির কারণে স্থানীয়রা শ্বাসকষ্ট ও চোখের রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেইসঙ্গে মিলের গরম পানি মিশ্রিত ছাই পার্শ্ববর্তী খালে ফেলায় পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। এসব বিষাক্ত পানি ফসলি জমিতে গিয়ে পড়ায় উর্বরতাসহ ফসল নষ্ট হচ্ছে। খালটির বেশিরভাগ অংশ ছাই মিশ্রিত পানিতে ভরাট হয়ে পড়ায় প্রভাব পড়েছে জীব-বৈচিত্র্যের ওপর। গ্রামবাসী বিষয়টি মিল মালিকদের বার বার জানালেও তারা তাতে কোনো কর্ণপাত করেনি। বরং উল্টো গ্রামবাসীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বে-আইনিভাবে মিলের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ ঘটনায় স্থানীয়রা জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরকে লিখিত অভিযোগ দিলেও এর কোনো প্রতিকার হয়নি। পরবর্তীতে গ্রামবাসী পরিত্রাণ পেতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। বক্তারা, জনস্বার্থ রক্ষায় অবিলম্বে দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে স্থানীয় প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ইউপি সদস্য মো. ছাদির, সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবরু মিয়া, স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহজাহান, মো. হানিফ মিয়া, মো. আব্দুল হাইসহ গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহাসড়কের যানবাহনে তল্লাসী করে বিপুল পরিমান মাদক আটক করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় ৬জন মাদক পাচারকারী ও বিদেশী অস্ত্রসহ ১জনকে আটক করা হয়।
৯ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা চলে।
আটককৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে গাজাঁ ও ফেনসিডিল। এরমধ্যে সাড়ে ১০ কেজি গাঁজা ও ২২ বোতল ফেনসিডিলসহ একটি বিদেশী পিস্তল আটক করে শিক্ষার্থীরা। আটককৃতরা হলেন রাজধানী ঢাকার শনি আখড়ার আকবর আলীর ছেলে মালেক, নারায়নগঞ্জের রফিক উদ্দিনের ছেলে পলাশ, নেত্রকোনার শামছু মিয়া ছেলে জুয়েল, গোপালগঞ্জের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে রাসেল মিয়া, নরসিংদীর শাহানাজ মিয়ার ছেলে খলিল মিয়া, সিলেটের মদিনা মার্কেটের মতিলাল তালুকদারের ছেলে সৈকত তালুকদার। পরে আটককৃতদের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন শিক্ষার্থীরা।
কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক সুফিয়ান আজাদ জানান, মহাকসড়কের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না থাকায় সেই সুযোগে মাদক কারবারীরা বিপুল পরিমান মাদক বিভিন্ন পরিবহনে করে মাদক পাচার করছে। তাই মাদক পাচার রোধে শিক্ষার্থীদের এই কার্যক্রম চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
আটককৃত মাদক ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা এ সব মাদক ক্রয় করে ঢাকা, নেত্রকোনা, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিতে তারা মাদক বহন করে পাচার করছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে পুকুরে গোসল করতে নেমে সূর্য (৯) ও সবুজ (৭) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেলে উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সূর্য আশুগঞ্জ উপজেলার যাত্রাপুর বোটবাড়ি এলাকার রুবেল মিয়ার ছেলে ও সবুজ একই এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই। তাদের কেউই সাঁতার জানত না।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বিকেলে সবুজ ও সূর্য সবার অগোচরে বাড়ির পাশের হারুন চেয়ারম্যানের পুকুরে গোসল করতে যায়। গোসলের সময় তারা পুকুরের পানিতে তলিয়ে যায়। পরে সবুজের মরদেহ পুকুরে ভাসতে দেখে স্থানীয়রা।
একই সময়ে পানির নিচ থেকে সূর্যকে উদ্ধার করা হয়। এরপর আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
আশুগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুল হাসান জানান, ওই দুই শিশু একসঙ্গে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে ডুবে যায়। পরিবারের অভিযোগ না থাকায় মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জে মেয়াদোর্ত্তীর্ণ ওষুধ সেবনে আয়েশা মনি (০৪) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আয়েশা উপজেলার দূর্গাপুরের চাতাল শ্রমিক মোঃ খোকন মিয়ার মেয়ে। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হলে আজ ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে আশুগঞ্জ পূর্ব বাজারের আল আমিন মেডিক্যাল সেন্টারের স্বত্বাধিকারী পল্লী চিকিৎসক মো. মোস্তাকিম বিল্লাহকে (২৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি সরাইল উপজেলার টিঘর গ্রামের মোতাসিম বিল্লাহর ছেলে।
এরআগে সোমবার রাতে নিহত শিশু আয়েশার পিতা খোকন মিয়া বাদী হয়ে আল আমিন মেডিক্যাল সেন্টারের স্বত্বাধিকারী পল্লী চিকিৎসক মোঃ মোস্তাকিম বিল্লাহকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত সোমবার রাতে তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি তাকে আশুগঞ্জ পূর্ব বাজারে অবস্থিত আল আমিন মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যান। এসময় ফার্মেসীর স্বত্বাধিকারী পল্লী চিকিৎসক মোঃ মোস্তাকিম বিল্লাহ শিশুটির শরীর দুর্বল এবং পেটে কৃমি হয়েছে জানিয়ে তাকে একটি ১শ মিলি ভিনসিনা সিরাপ (১ চামচ করে দিনে ৩ বার), একটি ১শ মিলি আপেলিন সিরাপ (১ চামচ করে দিনে ২ বার) ও একটি ১০ মিলি বেন-এ সিরাপ (১ চামচ ৭ দিন পরপর) খাওয়ার জন্য ঔষধের প্যাকেটের গায়ে নির্দেশনা লিখে দেন।
উক্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী শিশু আয়েশাকে ওষুধ খাওয়ানোর পর সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ফার্মেসী থেকে নেয়া ওষুধগুলো দেখে ১শ মিলি আপেলিন সিরাপটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে বলে শিশুটির পরিবারকে জানান।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ বিল্লাল হোসেন জানান, নিহত শিশুর পিতা থানায় অভিযোগ দাখিল করলে প্যানেল কোড ১৮৬০ এর ৩০৪ ধারায় মামলা রুজু করা হয়। পরে নিহত শিশুর লাশ ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক মোঃ মোস্তাকিম বিল্লাহকে গ্রেফতার করা করা হয়।
তবে আশুগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নুপুর সাহা বলেন, নিহত শিশুকে সেবন করানো ১শ মিলি আপেলিন সিরাপটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও মৃত্যুর অন্য কারণও থাকতে পারে। শিশুটিকে সেবন করানো ওষুধগুলো জব্দ করে পরীক্ষার জন্য ঔষধ প্রশাসনের নিকট পাঠাতে পুলিশকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট ও ওষুধগুলোর পরীক্ষার রিপোর্ট এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার এক নারী বিয়ের দেড় বছরের মাথায় শ্বশুরবাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরায় মুক্তা বেগম (২০) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ভোররাতে মুক্তার লাশ শ্বশুরবাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থেকে বাবার বাড়িতে এনে দেওয়া হয়।
সকালে আশুগঞ্জ থানার পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রেরণ করেছে। এর আগে ভোর চারটার দিকে নিহতের লাশ এক আত্মীয়ের মাধ্যমে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নিহতের স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ওই আত্মীয়কে লাশের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। নিহত মুক্তা বেগম আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর (কুড়ের পাড়) গ্রামের গোলাম মিয়ার মেয়ে। তার ৭ মাস বয়সী এক ছেলে রয়েছে। এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানা পুলিশ নিহতের শ্বশুর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মুজিবুর রহমান ও শাশুড়ি খোশনাহার বেগমকে আটক করেছে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী খোশনাহার বেগম মুক্তাকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, রাত ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত মুক্তা ও তার স্বামী আব্দুল্লাহর মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হয়। রাত ২টার দিকে স্বামী আব্দুল্লাহ মুক্তাকে মুখে হাত চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ঘটনা আড়াল করতে মুক্তার লাশ তার পরিবারের কাছে অসুস্থতার খবর দিয়ে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার মুক্তাকে মৃত ঘোষণা করলে খায়েশ মিয়া নামে আত্মীয়কে দিয়ে সিএনজিতে লাশটি মুক্তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। মুক্তার বুকের ব্যথার কথা বলে তারা ওই আত্মীয়কে সহযোগিতা করতে সঙ্গে নিয়েছিল।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিগত দেড় বছর আগে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহর সঙ্গে মুক্তার বিয়ে হয়। আব্দুল্লাহ মিষ্টির দোকানের কারিগর। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই আব্দুল্লাহ ও তার পরিবারের লোকজন মিষ্টির দোকান দেয়ার জন্য মুক্তার বাবার কাছে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করতে থাকে। এ নিয়ে স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুরীসহ অন্যান্যরা প্রতিনিয়ত মুক্তাকে মানসিক নির্যাতনসহ মারধর করত। এ নিয়ে দুই পরিবারের মাঝে বিগত এক বছরে বেশ কয়েকটি সালিশ হয়েছে। মুক্তার বাবা গোলাপ মিয়া মেয়ের শান্তির কথা চিন্তা করে যৌতুকের টাকা দেয়ার আশ্বাস দিলেও অক্ষমতার জন্য ব্যবস্থা করতে না পারায় দিতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে মুক্তার একটি ছেলে শিশুর জন্ম হয়। যার বয়স বর্তমানে ৭ মাস। গোলাপ মিয়া মেয়ের জামাইকে মিষ্টির দোকান দিতে টাকা দিতে না পারলেও তার মেয়ের ও নাতির চিকিৎসা, সিজারিয়ান অপারেশনের খরচ প্রদানসহ নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছিলেন।
গতকাল ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মুক্তার শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে তারা বাবা গোলাপ মিয়াকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে গোলাপ মিয়া জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছার আগেই তার লাশ নিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে তিনি বাড়িতে এসে তার মেয়ের লাশ দেখতে পান। এদিকে সকালে নিহতের শ্বশুর ও শাশুড়ি মুক্তার লাশ দেখতে এলে পুলিশ তাদের আটক করে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সজল কান্তি দাস বলেন, নিহতের লাশের সুরতহাল করে ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রেরণ করা হয়েছে। তার গলা ও শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের শ্বশুর শাশুড়িকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মুক্তাকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। যেহেতু ঘটনাস্থল নরসিংদী উপজেলার রায়পুরায় তাই নিহতের স্বজনদের রায়পুরা থানায় এজাহার দিতে বলা হয়েছে।