দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায়, ৩৮ জন কারাগারে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 14 November 2023, 535 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :

এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধের জের ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিসীমা পশ্চিম পাড়ায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহআলমের অনুসারী ও একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ বাবুল মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে গতকাল সোমবার সকালে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৩৮জনকে গ্রেফতার করেছে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। সোমবার রাতে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর মধ্যে ১৫জন নারী ও ২৩জন পুরুষ।

এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলা দায়ের করেন সদর মডেল থানার এস.আই শওকত এবং একটি মামলা দায়ের করেন জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ বাবুল মিয়ার অনুসারী মোঃ খায়রুল।

পুলিশের পক্ষে ১৫১ ধারা ফৌজধারী কার্যবিধি নিবারন মূলক মামলায় ৩৮ জনের বিরুদ্ধে এবং পুলিশ এ্যাসল্ট মামলায় ৭৩জনকে আসামী করা হয়। অপর দিকে খায়রুলের মামলায় ১২৩জনকে আসামী করা হয়।

১৫১ ধারা ফৌজধারী কার্যবিধি নিবারন মূলক মামলায় ৩৮ জন আসামী হলেন, নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহ আলম, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল কাইয়ুম, সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আরজু মিয়া, সাবেক মেম্বার মোঃ কামাল খাঁ, সাবেক মেম্বার আবদুল কুদ্দুস, ইউনিয়নের বাসিন্দা মনির হোসেন, মজিবুর রহমান, বেদন মিয়া, সফিকুল ইসলাম, হোসেন মিয়া, নূরুল ইসলাম, ইব্রাহিম মিয়া, বাদল মিয়া, মহিউদ্দিন মিয়া, বাছির মিয়া, মনিরুল ইসলাম, তাজু মিয়া, ইদন মিয়া, সিরাজ মিয়া, খায়ের আলী, মোঃ শামীম, আম্বিয়া খাতুন, আসমা বেগম, ববি বেগম, শিখা বেগম, লাভলী বেগম, রেখা আক্তার, রীমা বেগম, পারুল বেগম, পারভীন বেগম, নাদিয়া আক্তার, সাফিয়া খাতুন, নাহিয়া ইসলাম অন্তু, সেলিনা বেগম, রেবেকা সুলতানা ও রিমা বেগম।

স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধের জের ধরে নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহআলমের অনুসারী ও একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ বাবুল মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো।

ইউপি চেয়ারম্যান শাহআলমের গ্রুপে আছেন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ হোসেন ও ইউপি সদস্য মোঃ আরজু মিয়ার অনুসারীরা।

অপরদিকে জেলা পরিষদের সদস্য বাবুল মিয়ার গ্রুপে রয়েছেন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল কাইয়ূমের অনুসারীরা।

গত কয়েকদিন আগে মোঃ শাহআলম গ্রুপের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক শওকতের ছেলে মিল্লাতকে মারধোর করে বাবুল মিয়ার অনুসারীরা। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার চেষ্টা করা হয়। গত রবিবার রাতে পুনরায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক শওকত এবং তার ছেলে মিল্লাতকে আবারো মারধোর করে বাবুলের অনুসারীরা।

এ ঘটনায় গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি মিমাংসার জন্য সোমবার সকালে উভয়পক্ষকে সদর থানায় ডাকা হয়।

এরমধ্যেই বেলা সাড়ে ১১টার সময় দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে দাঙ্গাবাজরা ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও উভয়পক্ষের ২০টি বাড়ি ভাংচুর করে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাঠিপেটা, ১ রাউন্ড টিয়ারশেল এবং ৩৭ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসলাম হোসাইন বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান, সাবেক দুইজন চেয়ারম্যান, বর্তমান একজন ইউপি সদস্য, সাবেক ইউপি সদস্যসহ ৩৮জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছি। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

সাংবাদিক হিসেবে কারো বিরুদ্ধে মামলা হোক…

চলারপথে রিপোর্ট : কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ Read more

প্রধান উপদেষ্টার ড. ইউনূসের সাথে সংলাপে…

অনলাইন ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের Read more

পলিথিন শপিংব্যাগ উৎপাদন বন্ধে ১ নভেম্বর…

অনলাইন ডেস্ক : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব Read more

নাসিরনগরে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর আধুনিক হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের Read more

প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজমীনের বদলির আদেশ…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা Read more

এক কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

আখাউড়ায় প্রায় এক কোটি টাকার ভারতীয় পণ্যসামগ্রী ও মদ জব্দ Read more

হত্যা চেষ্টা ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার…

চলারপথে রিপোর্ট : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতা Read more

বাঞ্ছারামপুরে মাদকসহ আটক ৩

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে Read more

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশটাকে খাদেফেলে দিয়ে…

চলারপথে রিপোর্ট : স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশটাকে খাদে ফেলে দিয়ে Read more

নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে…

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে Read more

সরাইলে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে র‌্যালি…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশ্ব Read more

আশুগঞ্জে বাদীর অনাপত্তিতে আসামি ছেড়ে দিলো…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের Read more

কাজীপাড়ায় ঘরোয়া লীগ ফুটবল খেলা উদ্বোধন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 18 August 2023, 704 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করি, মাদকমুক্ত সমাজ গড়ি এই স্লোগানকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাজীপাড়া দরগা মহল্লা (পশ্চিমপাড়া) ঘরোয়া লীগ ফুটবল খেলা উদ্বোধন করা হয়েছে।

আজ ১৮ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে ১ যুগ পুর্তি উপলক্ষে জেলা ঈদগাহ মাঠে খেলাটি আয়োজন করেন কাজীপাড়া শৈশব গ্রুপ।

এতে কাজীপাড়া পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোঃ কিতাব আলী সরদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও কাজীপাড়া ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাংবাদিক মীর মোঃ শাহীন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন কাজীপাড়া বিশিষ্ট সরদার শেখ জামাল, সরদার আফরোজ শাহ প্রমুখ।

খেলাটি সঞ্চালনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, মোঃ মোস্তাক মিয়া। উদ্বোধনীয় খেলায় শৈশব সাদা দল বনাম শৈশব নীল দল অংশগ্রহণ করেন।

মুরগীর আড়তে চুরির ঘটনায় গ্রেফতার ১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 4 December 2023, 460 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “মায়ের দোয়া মোরগ সেন্টার” নামে একটি মোরগের দোকানে চুরি হয়েছে। চোরেরা দোকান থেকে নগদ ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩২০ টাকা ও একশত মুরগী চুরি করে নিয়ে যায়। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় শহরের কাউতলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আজ ৪ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে দোকানের মালিক বশির মিয়া বাদি হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৫জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বশির মিয়া কাউতলী গ্রামের আবু সামা মিয়ার ছেলে।

আসামীরা হলেন, পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামের মরহুম আসমত আলীর ছেলে আনসর আলী (৬৫), আনসর আলীর ছেলে নুরুল আমিন (৩৬), কাউতলী গ্রামের মৃত ফুল মিয়ার ছেলে শাহজাহান (৫০), একই গ্রামের সুন্দর আলীর ছেলে হানিফ মিয়া (৫০) ও সদর উপজেলার দারমা গ্রামের রতন (৩০)। পুলিশ এ ঘটনায় আনসর আলী নামে এক আসামীকে গ্রেফতার করে।

মামলার এজাহারে বাদি বশির মিয়া বলেন, তিনি কাউতলী বাজারে “মায়ের দোয়া মোরগ সেন্টার” নামক একটি মুরগীর দোকান দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন।

রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার সময় তিনি দোকান বন্ধ করে খাওয়ার জন্য বাড়িতে চলে যান। এই সুযোগে চোরেরা দোকানের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে দোকানের ক্যাশ থেকে নগদ ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩২০ টাকা ও দোকানে থাকা ১০০ মুরগী চুরি করে নিয়ে যায়।

খবর পেয়ে তিনি বাজারে গিয়ে ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে। পরে পুলিশ পাশের দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আসামীদের সনাক্ত করেন।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, মুরগীর আড়তে চুরির ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আমরা মামলার প্রধান আসামী আনসর আলীকে সোমবার সকালে গ্রেফতার করে দুপুরে আদালতে সোপর্দ করেছি। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

নিখোঁজের চারদিন পর বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 27 April 2024, 254 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিখোঁজের চারদিন পর মো. তারু মিয়া (৬০) নামে এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আজ ২৭ এপ্রিল শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের বুধল উত্তর পাড়ায় বাড়ির পার্শ্ববর্তী ডোবা থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সে বুধল উত্তর পাড়ার তিনু মিয়ার ছেলে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন জানান, বৃদ্ধ তারু মিয়া গত ২৪ এপ্রিল রাতে বুধল বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি। পরে ২৬ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার পরিবারের সদস্যরা। আজ দুপুরে বাড়ির পাশের ডোবায় একটি মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে পাঠায়। ঘটনাটির তদন্ত চলছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কন্টেইনার ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনায় তদন্ত কমিটি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 19 November 2023, 549 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মালবাহী কন্টেইনার ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ঢাকাস্থ রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মো. সাজিদুল ইসলামকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়।

আজ ১৯ নভেম্বর রবিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসেন।

ঘটনাস্থলে তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মো. সাজিদুল ইসলাম বলেন, সবেমাত্র ঘটনাস্থলে আসলাম। আমরা দেখবো কী ত্রুটি রয়েছে এবং তা বোঝার চেষ্টা করবো। বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করবো এবং সেগুলোর রিডিং নেব। এগুলো নেওয়ার পরে মূলত জানা যাবে কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে।

অজ্ঞাত মরদেহের শেষ ভরসাস্থল ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 16 May 2023, 1083 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নদীতে ভেসে উঠেছে পচাগলা মরদেহ৷ পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ময়নাতদন্তের পর মরদেহটি দাফনের জন্য খবর দেওয়া হয় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’ সংগঠনকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিচয়বিহীন মরদেহ উদ্ধার হলেই দাফন কাফনের জন্য ডাক পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের। সংগঠনটি গত দুই বছরে ১০১টি পরিচয়বিহীন মরদেহ দাফন করেছে। ১১ মে শহরের মেড্ডায় তিতাস নদীর পাড়ে কবরস্থানে ১০১তম পরিচয়বিহীন মরদেহটি সংগঠনের সদস্যরা দাফন করেন।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আজহার উদ্দিন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর সংগঠনটি মূলত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ব্লাড ডোনেশনের জন্য৷ এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০০ ব্যাগ রক্ত দান করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। কিন্তু মহামারি করোনার সময় প্রথম দিকে কেউ আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে মরদেহের কাছে আসতে অনেকেই ভয় পেতেন। সে সময় নিজ সন্তানও মা-বাবার মরদেহের কাছে আসেননি। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা মরদেহ দাফনে অপারগতা জানালে আমরা করোনা আক্রান্ত মরদেহ দাফনের কাজ শুরু করি। ওই সময় ৮টি করোনা আক্রান্ত মরদেহ দাফন করেছি।

আজহার উদ্দিন জানান, একদিন কবরস্থানে দেখলাম অজ্ঞাত পরিচয়বিহীন মরদেহ কোনো প্রকার কাফন এবং জানাজা ছাড়া মাটি খুঁড়ে চাপা দেওয়া হচ্ছে। একটা মরদেহ সম্মানের সঙ্গে দাফন না করায় খারাপ লেগেছিল। এরপর বন্ধু-বান্ধব সহকর্মীদের নিয়ে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলো অজ্ঞাত পরিচয়ের মরদেহ গোসল, কাফন ও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফনের। কাফন ও দাফনের আনুষঙ্গিক ব্যয় আমাদের সদস্যদের ব্যক্তিগত চাঁদায় হয়ে থাকে।

এছাড়া মাঝে মাঝে বাইরে থেকেও স্বেচ্ছায় কেউ দিয়ে থাকেন। এখন জেলার কোনো জায়গায় অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার হলেই হাসপাতাল মর্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের ডাক পড়ে। ধীরে ধীরে সেই অজ্ঞাত মরদেহের দাফনের সংখ্যা শতাধিকে দাঁড়িয়েছে।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’ যে কাজটি করছি তা খুবই মানবিক। তাদের কাজের অবশ্যই প্রশংসা করতে হয়। অজ্ঞাত মরদেহগুলো দাফনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অভিনন্দন জানাই। সমাজের সবার উচিত তাদের এসব কাজে পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেওয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অজ্ঞাত মরদেহ দাফনের একমাত্র সামাজিক সংগঠন ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’। পুলিশ যখনই অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করে, তাদের খবর দেওয়া হয় দাফন কাফন করতে। তাদের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি যেকোনো সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।