সেলফি পরিবহনের ধাক্কায় নারী পুলিশ সদস্য নিহত

জাতীয়, 23 November 2023, 483 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
সাভারে বেপরোয়া সেলফি পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় আফসানা আক্তার (২২) নামের এক নারী পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।

আজ ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত আফসানা বরিশালের আব্দুল করিমের মেয়ে। তিনি মিরপুর-১৪ নম্বরের ১১ ব্যাটলিয়ানের এপিবিএনর কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ জানায়, আফসানা আক্তার তার স্বামীর মোটরসাইকেলে করে আরিচার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে হেমায়েতপুর এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে বেপরোয়া সেলফি পরিবহনের একটি বাস তাদের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে দুইজনেই সড়কে ছিটকে পড়েন ও ঘটনাস্থলেই আফসানা নিহত হন। আহতাবস্থায় নিহতের স্বামীকে উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সাভার হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বাবুল আক্তার বলেন, নিহতের মরদেহ থানায় আনা হয়েছে। তিনি এপিবিএন সদস্য। এ ঘটনায় সেলফি পরিবহনের বাসটিকে আটক করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছেন। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা আজ Read more

সরাইলে জামায়াতে ইসলামীর মিছিল

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে শুভেচ্ছা মিছিল করেছেন জামায়াতে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করলো জেলা…

চলারপথে রিপোর্ট : আগামীকাল ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসছেন বাংলাদেশ Read more

বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন

চলারপথে রিপোর্ট : বাংলাদেশ কৃষকদলের কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক Read more

দীর্ঘ ২০ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে…

দীর্ঘ ২০ বছর পরে দেশে ফিরে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ Read more

দেশীয় অস্ত্রসহ তিন সন্ত্রাসী গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : কসবা উপজেলায় দেশীয় অস্ত্রসহ তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার Read more

১৫ বছর পর প্রকাশ্যে জামায়াতে ইসলামীর…

চলারপথে রিপোর্ট : দীর্ঘ ১৫ বছর পর আখাউড়া উপজেলায় প্রকাশ্যে Read more

আন্দোলনে নিহত মাওলানাকে করা হলো হত্যা…

চলারপথে রিপোর্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাওলানা মাহমুদুল হাসান রাজধানীতে Read more

ডাক্তারকে হাত পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগে…

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে মুক্তি প্রাইভেট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: Read more

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা : গণঅভ্যুত্থানে অংশ…

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যেসব ছাত্র-জনতা অংশ নিয়েছেন, তাদের Read more

মন্দিরে মুকুট চুরির ঘটনায় গ্রেফতার ৪…

অনলাইন ডেস্ক : সাতক্ষীরার শ্যামনগরে শ্রীশ্রী যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে কালী Read more

জামায়াতে ইসলামীর সোনারামপুর ইউনিয়ন শাখা অফিসের…

চলারপথে রিপোর্ট : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন Read more

রমজানের আগেই মজুদদারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ভোক্তা অধিকারের মহা পরিচালক

জাতীয়, 29 January 2024, 396 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
মোঃ নজরুল ইসলাম ঝালকাঠিঃ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহা পরিচালক এইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, রমজানের আগেই মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রমজানে বেশকিছু পণ্যেরই চাহিদা কয়েকগুন বেড়ে যায়। এ সুযোগে মধ্যসত্বভূগীরা সরবরাহ ব্যবস্থায় বিগ্ন সৃষ্টি করে ও মজুদদাররা পন্য মৌজুদ করে মূল্যবৃদ্ধি করে। ভোক্তা অধিকার মজুদদারদের বিরুদ্ধে এবার কঠোর ব্যবস্থা নিবে। ভোক্তাদের কাছে পরামর্শ হচ্ছে, একসাথে পণ্য না কিনে ধাপে ধাপে কিনলে বাজারটা অস্থির হবে না।

আজ ২৯ জানুয়ারি সোমবার বিকালে ঝালকাঠির বিভিন্ন বাজারে খোলা তেল বিক্রিয় বিরোধী সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। বাজার মনিটরিং শেষে চেম্বার অব কমার্স কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিমিয় করেন ভোক্তা অধিকারের মহা পারচালক। পরে তিনি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।

এসময় তাঁর সাথে ছিলেন ভোক্তা অধিকারের পরিচালক ফকির মোহাম্মদ মুনাওয়ার, বিভাগীয় উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী, ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম ও ঝালকাঠি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাফিয়া সুলতানা।

নলছিটির খাদ্য গুদামে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে দুদক

জাতীয়, 3 August 2023, 667 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
খাদ্য গুদামে ১৬০ মেট্রিক টন পুরাতন আমন চালকে নতুন সংগ্রহ করা বোরো চাল দেখিয়ে ২নং গুদামের ৪টি সংরক্ষণের মাধ্যমে গুদাম কর্তৃপক্ষ ২২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার আত্মসাতের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ ৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেলে পর্যন্ত ২য় দিনের মতো ঝালকাঠির নলছিটি গুদামে অভিযান চালিয়ে প্রমাণ পায় দুদক। এর আগে বুধবার অভিযান চালিয়ে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে চূড়ান্ত তদন্তের জন্য গুদামটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ গোলাম মাওলা, নলছিটি সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমাপ্তি রায়, নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আতাউর রহমানের উপস্থিতিতে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন।

দুদকের উপপরিচালক শেখ গোলাম মাওলা বলেন, আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আমরা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি। এ বিষয়ে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শুরু হলো ভাষার মাস

জাতীয়, 1 February 2024, 399 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১ ফেব্রুয়ারি। শুরু হলো রক্তে রাঙানো সেই ফেব্রুয়ারি মাস-ভাষা আন্দোলনের মাস। বাঙালি জাঁতি পুরো মাসজুড়ে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাবে ভাষার জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছিলেন তাদের। সবাই গেয়ে উঠবেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’।

ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাঁতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরে নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বস্তুত ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল দিক। কারণ, এ মাসে পৃথিবীতে একমাত্র জাঁতি হিসেবে বাঙালিরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন। আজ ১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের সবচেয়ে বড় কর্মযঞ্জ মাসব্যাপী বইমেলা শুরু হচ্ছে। বাংলা একাডেমিতে বিকেল ৩টায় এই মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি চত্বরে জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু হবে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে ১৯৮৭ সালে শুরু হয় এ উৎসবের। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে।

ইতিহাস গড়ে সিরিজ জয় করলো বাংলাদেশ

জাতীয়, বিনোদন, 23 March 2023, 1807 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ২৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে আয়ারল্যান্ডকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ২৮ ওভার ১ বল খেলে সব উইকেট হারিয়ে ১০১ রান করে আইরিশরা। জবাব দিতে নেমে ২২১ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। একইসঙ্গে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেটে জয়ের কীর্তি গড়ে স্বাগতিকরা।

প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছিল, দ্বিতীয়টি বৃষ্টিতে হয় পরিত্যক্ত; সিরিজের ট্রফি তাই থাকছে স্বাগতিকদের কাছে। ১০২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ খেলেছে নিজেদের মতো করেই। একটি রেকর্ড অবশ্য ছোঁয়া হয়নি। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়েকে ৪৪ রানে অলআউট করেছিল বাংলাদেশ, সেদিন জয় এসেছিল ২২৯ বল হাতে রেখে। ওই রেকর্ড ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি এদিন। কেননা জেতার সময় ২২১ বল হাতে ছিল বাংলাদেশের।

ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়া অধিনায়ক তামিম ইকবাল ৫ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ৪১ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়ে অপরাজিত থাকেন লিটন দাস। এতে আয়ারল্যান্ডকে একটি তেঁতো হারের স্বাদ দেয় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ১০ উইকেটে হারে আইরিশরা।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরুর দিকে দেখেশুনেই খেলে আয়ারল্যান্ড। বৃষ্টিতে ঢেকে থাকা পিচে সুইং ছিল স্বাভাবিকভাবেই। বাংলাদেশ প্রথম সাফল্য পায় পঞ্চম ওভারে এসে। ২১ বলে কেবল ৮ রান করা স্টেফেন দোহানি উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন হাসান মাহমুদের বলে। পরের দুটি উইকেটও হাসানের।

নবম ওভারের প্রথম বলে এই পেসার ফেরান পল স্টার্লিংকে। এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে আইরিশ উদ্বোধনী ব্যাটার ১২ বলে ৭ রান করে সাজঘরে ফেরত যান। ওই ওভারেই হাসান ফেরান হ্যারি টেক্টরকে। ৩ বল খেলে কোনো রান না করা এই ব্যাটারও হন এলবিডব্লিউ।

পরের ওভারেই আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নিকে আউট করেন তাসকিন আহমেদ। ১ চারে ১৮ বলে ৬ রান করে তিনি ক্যাচ দেন প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে। ২৬ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলা আয়ারল্যান্ডকে কক্ষপথে ফেরানো ছিল কঠিন এক কাজ।

ওই চেষ্টা করেন কার্টিস ক্যামফার ও লরকান টাকার। দুজন মিলে গড়ে তোলেন ৪২ রানের জুটি। কিন্তু এবারও আইরিশদের জন্য ধাক্কা হয়ে আসেন এক পেসারই। এবাদত হোসেন এলবিডব্লিউ করে ফেরান টাকারকে। সাজঘরে ফেরার আগে ৪ চারে ৩১ বলে ২৮ রান করেন তিনি।

এরপর অনেকটা সময় একাই লড়াই করেন কার্টিস ক্যামফার। নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হন তিনি। হাসান মাহমুদের চতুর্থ শিকার হওয়ার আগে ৪ চারে ৪৮ বলে ৩৬ রান করেন ক্যামফার। ইনিংসের ২৭তম ওভারে এসে যখন আইরিশরা দলীয় সংগ্রহে তিন অঙ্ক স্পর্শ করে, ততক্ষণে ৯ উইকেট নেই তাদের।

শতরান ছাড়িয়ে যাওয়ার একটু পরই সফরকারীদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকিয়ে দেন হাসান। ১৯ বলে ৩ রান করা গ্রাহামকে ফেরান এলবিডব্লিউ করে। এতে একটি রেকর্ডেও নাম লেখায় ম্যাচটি। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন সংস্করণ মিলিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পেসাররা নিলেন প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট।

৮ ওভার ১ বল হাত ঘুরিয়ে ১ মেডেনসহ হাসান মাহমুদ ৩২ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট পান। এর বাইরে তাসকিন ১০ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট ও এবাদত হোসেন ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে নিয়েছেন দুই উইকেট। স্পিনারদের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজ ১ ওভারে ৩ ও নাসুম ৩ ওভারে ১১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। বোলিং করেননি সাকিব আল হাসান।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল সংসদে পাস

জাতীয়, 24 January 2023, 1149 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে ডেস্ক :
সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে দেশের সব প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিককে পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আনতে জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস করা হয়েছে। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের পৃথক গেজেট জারি করে এই পেনশন ব্যবস্থায় আনার সুযোগ বিলে রাখা হয়েছে। আজ ২৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে বিলটি উত্থাপণ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। পরে এটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।

বিলটির বেশকিছু অসঙ্গতি তুলে ধরে বিরোধী দলীয় সদস্যরা সমালোচনা করেন। তারা বলেন, এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসব বিষয়ে তারা সংশোধণের প্রস্তাব করলেও তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরও পেনশন স্কিমের আওতায় রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে মাসিক পেনশন-সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদাদাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। ১০ বছর চাদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন।

এই চাঁদার হার কত হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আইন হওয়ার পর সংশিতষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি নির্ধারণ করবে। মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়া যাবে এবং অগ্রিম ও কিস্তিতেও চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঁঞ্জিভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। একজন পেনশনার আজীবন পেনশনুসুবিধা পাবেন। সরকার গেজেট জারি করে বাধ্যতামূলক না করা পর্যন্ত এই পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ হবে ঐচ্ছিক।

বিলে বলা হয়েছে, পেনশনে থাকাকালীন কোনো ব্যক্তি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন। যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে।

বিলে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে। বিলে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা এই পেনশনুব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন।

বিলে একটি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। এঁদের নিয়োগ করবে সরকার।

বিলে ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এর চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, উইমেন চেম্বাস অব কমার্সের সভাপতি এর সদস্য হবেন। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।

বিলে বলা হয়েছে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত এক বা একাধিক তপসিলি ব্যাংক জাতীয় পেনশন তহবিলের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করবে।

বিরোধী দলীয় সদস্যদের সমালোচনা

বিল পাসের আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘উদ্যোগটি চমৎকার হলেও এই পেনশন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়া যাবে না। কারণ সরকারি চাকুরিজীবীরা যেভাবে পেনশন পান তার সঙ্গে অনেক কিছুই সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানুষ রিটার্ন কিভাবে পাবে তা পরিস্কার নয়। এটি অনেকটা ব্যাংকিং প্যাকেজের মত। এই বিলটি পাসের আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া উচিত।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, “এই বিলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার৷’ মানুষের কাছ থেকে চাদা নিয়ে সরকার আবার ফেরত দেবে। এই বিল পাস করার কোনো সুযোগ নেই।”

জাপার আরেক সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘এই পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ কী? সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এটা ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মত। গুঞ্জন আছে, সরকারের টাকার অভাব হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কী সরকার চলবে?’ টাকা পাচার, বিদেশে বাংলাদেশীদের বাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে মুজিবুল হক বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী কথা কম বলেন। বোবার শত্রু কম। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কানে কথা পৌঁছে কি না জানা নেই। তাঁর কোনো ফিডব্যাক, উদ্যোগ দেখা যায় না।’

জাপার আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে আইনটি ভাল। কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে প্রভিডেন্ট করে এটি তার বাইরে কিছু বলে মনে হয় না। সরকার কী মুনাফা দেবে তা পরিস্কার নয়।’ তিনিও দাবি করেন, এই আইনটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাপার আরেক সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা রাখার মত। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবে আর ব্যাংক দেদারছে টাকা বিদেশে পাচার করবে। ব্যাংকগুলো মানুষের আস্থা হারিয়েছে। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। ব্যাংকগুলো বারো ভুঁইয়াদের কাছে চলে গেছে। সব সুবিধা পাচ্ছেন ঋণখেলাপিরা।’ এসময় বিদেশে টাকা পাচার নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেখার কেউ নেই। যারা টাকা পাচার করছে তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।’

বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এই বিলটি আনার আগে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। যাঁরা লিখিত মতামত দিয়েছিলেন তাদের মতামত আমলে নেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতেও বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিলটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে বিবেচনায় এটি সংসদে আনা হয়েছে।’

এমপিদের আজীবন পেনশনের দাবি

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু সাবেক সংসদ সদস্যদের আজীবন পেনশন স্কিম চালু করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অফিসের পিয়ন, গার্ডরা পেনশন পেয়ে থাকে। এমপিদের জন্য এমন ভাতার দাবিতে সংসদে আগেও আলোচনা হয়েছে। যারা একবার সংসদ সদস্য হিসেবে পদ পাবে, তারা যেন আজীবন একটা পেনশন স্কিম পায়।’

বিলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাঁর একজন শিক্ষক ৩৬ বছর চাকরি করার পরেও এখনও পেনশনের টাকা তুলতে পারেননি। জনগণ পেনশনের টাকা জমা দিবে কিন্তু তারা তো অফিসের বারান্দাই চেনে না। এই টাকার নিরাপত্তা কী? নতুন বিলে সেই নিশ্চয়তা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।