চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জের বিভিন্ন ড্রায়ার মিলের কালো ধোঁয়া, ছাই ও রাইস ব্রানে (চালের উপরের স্বচ্চ পাতলা আবরণ) মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। অযোগ্য হয়ে পড়ছে ঘরবাড়িতে বসবাস, ব্যহত হচ্ছে মানুষের দৈনদিন চলাফেরা।
প্রতিনিয়ত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর-সর্দি-কাশিসহ শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ চোখের রোগে। বার বার এসব বিষয়ে মিল মালিকদের অবগত করা হলেও কোনো তোয়াক্কা করছেন না তারা। পরিবেশ নষ্ট হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে অধিকাংশ মিলের। এসব বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না এলাকার সাধারণ লোকজন। তাই আশুগঞ্জের কয়েকটি এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, এভাবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকলে পরিবেশের পাশাপাশি জনজীবন হুমকিতে পড়বে। চোখ হারাবে এই পথে চলাচলকারীরা। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বার বার বলা হলেও কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না মিল মালিকরা। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন বলছেন এই বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের উৎপাদিত ধান বেচাকেনা হয় আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর তীরে বিওসি ঘাটে অবস্থিত ধানের হাটে। এই হাট থেকে ধান সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে চাল রুপান্তর করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গড়ে ওঠে অসংখ্য চাতালকল। এখানে উৎপাদিত চাল ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন অন্তত লক্ষাধিক মণ চাল সরবরাহ করে থাকে। এতে এলাকার অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকলেও গত ৪-৫ বছরে উপজেলা বেশ কয়েকটি এলাকায় গড়ে উঠেছে ৪৫টি ড্রায়ার মিল। এদের মধ্যে আশুগঞ্জের সোনারামপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠে খান অটো-১ ও ২, আওলাদ এগ্রোফুড, শাহজালাল অটো, একতা অটো, কামরুল অটো, উন্দা মিয়া অটো, আলমনগর এলাকায় মেসার্স হাইটেক এগ্রো ফুড ইন্ড্রাস্টিজ,ভাই ভাই অটো রাইস মিল, ফারহান অটো রাইস মিল, সরকার অটো রাইস মিলসহ অধিকাংশ ড্রায়ার মিল থেকেই কালো ধোঁয়া, ধুলা ও ছাইয়ে এলাকাবাসীর জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এলাকাবাসীর জন্য গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ড্রায়ার মিলগুলো। ঘরবাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও মুক্তি মিলছে না। ছাই ও কালো ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে ঘরবাড়ি। রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন চোখে-মুখে পড়ছে এসব ছাই ধুলা। লোকজন বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর-সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও এলার্জিজনিত নানা রোগে।
ডায়ারগুলিতে বর্জ্য শোধনাগার না থাকা, কম উচ্চতায় চিমনি ব্যবহার, চিমনিতে ধুলা নিরোধক নিরাপত্তা জাল ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করা, তুষের বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার এবং পরিবেশ সুরক্ষা আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এমনটি হচ্ছে জানান তারা। ড্রায়ার মালিকদের বার বার মৌখিকভাবে এসব অভিযোগ জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। প্রতিটি বাড়িঘরের ছাদ-চালা-উঠান ছাই আর ধুলার স্তূপ পড়ে গেছে। একটু দাঁড়ালে গায়ে উড়ে পড়ছে ছাই ও ধুলার কনা। রাস্তা দিয়ে চলাচল করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চোখ খোলা রেখে চললেই চোখে পড়ছে রাইস ব্রান। যা খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু চোখে পড়লেই বিপদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার আলমনগর যাত্রাপুর মোড়ের একজন বাসিন্দা বলেন, ভাই ভাই অটো রাইস মিল, ফারহান অটো রাইস মিল ও সরকার অটো রাইস মিলের কারণে এখানে বসবাস করার কোনো পরিবেশ আর নাই। তাদের বললেও কোনো কাজ হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা পরিবেশের ওপর এই অত্যাচার চালাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আলমনগর এলাকায় আরো বেশ কয়েকটি ড্রায়ার মিল স্থাপনের কাজ চলমান। এর মধ্যে মেসার্স হাইটেক এগ্রো ফুড ইন্ড্রাস্টিজ এর চিমনি দিয়ে দেদারসে বের হচ্ছে কাল ধোঁয়া।
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের ৫ মালিকের মধ্যে একজন সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.শফিকুল ইসলাম। কথা হয় আরেকজন মালিক মো.আবু বকর সিদ্দিক এর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের সকল আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। মাঝে মাঝে কালো ধোঁয়া বের হলেও সেটা যেনো না বের হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আল মদিনা অটো রাইস মিলের ম্যানেজার বজলু মিয়া বলেন, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে আমাদের মিল থেকে কোনো ধুলা, কালো ধোঁয়া ও রাইসব্রান বের হয় না। আমাদের ময়লাগুলো নিজস্ব পুকুরেই যাচ্ছে। যার কারণে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
জেলা চালকল ও ড্রায়ার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি জিয়াউল করিম খান সাজু বলেন, আমরা ধুলা ও ছাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই গ্রহণ করে অনেকগুলো ড্রায়ারে স্থাপন করা হয়েছে।
আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নূপুর সাহা বলেন, বিভিন্ন সময়ে চোখে রাইস ব্রান নিয়ে অনেকেই আমাদের কাছে আসে। তাদের আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। বিভিন্ন চোখের ড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দেই। তবে এই সমস্যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এবং চোখে এই রাইসব্রান পড়তে থাকলে একসময়ে চোখ হারাতে হতে পারে। এছাড়াও ডায়রিয়া ও এলার্জিজনিত সমস্যা নিয়েও আমাদের এখানে লোকজন আসেন। এসবের মূল কারন হল ড্রায়ারের কাল ধোয়া ও রাইস ব্রান। দ্রুত এসব বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিমল চক্রবর্তী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সচল ১৫৫টি মিলের বিপরীতে মাত্র ৮৫টি মিলের পরিবেশের ছাড়পত্র আছে। বাকিগুলোও নজরদারির মধ্যে আছে। রাইস ব্রানসহ ধোঁয়া ছাইয়ের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ড্রায়ার মিলগুলির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আশুগঞ্জ প্রতিনিধি :
তিনদিন পর ফের আশুগঞ্জে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, দোকানপাট-বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। আজ ১৮ জানুয়ারি বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার দুর্গাপুরে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। খবর পেয়ে প্রথমে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ ও পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাপক লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১৫ জনকে আটক করে। এখনো পুলিশের অভিযান চলছে। এদিকে ফায়ার সর্ভিসের দুটি দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিভানোর কাজ করে। দুর্গাপুর গ্রামের জারুর গোষ্ঠি (রাসেল চেয়ারম্যানের গোষ্ঠি গং) এবং বারঘরিয়া (মিজান মেম্বারের গোষ্ঠি গং) গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত শুক্রবার ও শনিবারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১১১ জনের নাম উল্লেখসহ ৩০০- ৪০০ জনের নামে মামলা দায়ের করে। গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরই মধ্যে বুধবার সাড়ে ৭টার দিকে একদল দাঙ্গাবাজ অর্তকিতে দুর্গাপুর বাজারে হামলা চালিয়ে অন্তত ৩০টি দোকান, ৩-৪টি বাড়িঘর ও ২০টির বেশি খড়ের ডিবিতে অগ্নিসংযোগ করে। বেশ কয়েকটি দোকানও ভাংচুর করে। মূহুর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়লে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করলে সংঘর্ষকারীরা সেখানেও বাধা দেয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে গোটা গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষকারীরা বিভিন্ন স্থানে খড়ের ডিবিতে আগুন লাগিয়ে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। পুলিশ একদিকে গেলে অন্য দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে অতিরিক্তি পুলিশ এলে বিভিন্ন দিক থেকে টিয়ারশেল, শর্টগানের গুলি ছুড়া শুরু ও ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে। এরপর সংঘর্ষকারীরা পিছু হটে এবং বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ আরো জানায়, সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন পুলিশসহ কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বাহার নামে একজনসহ কয়েকজনের বল্লমের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গায়ে সিএনজির ধাক্কা লাগা নিয়ে উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের জারুর গোষ্ঠি (রাসেল চেয়ারম্যানের গোষ্ঠি গং) এবং বারঘরিয়া (মিজান মেম্বারের গোষ্ঠি গং) গোষ্ঠির লোকজনের মধ্যে গত শুক্রবার ও শনিবার দুদফা সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেমকে (৭৩) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পারিবারিক সূত্র জানায়, আবুল হাশেম দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। গত শনিবার রাতে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। গতকাল রোববার দুপুরে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের মাঠে তাকে নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীনের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. ইসমত আলী, সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের মেঘনা নদীতে শহীদ আবদুল হালিম রেলসেতুতে আবারও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে ভৈরব বিদুৎ বিতরণ বিভাগের সহায়তায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয় ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের রিভার ইউনিট।
আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সূত্র জানায়, আশুগঞ্জ থেকে ভৈরবে বিদ্যুৎ সরবরাহের ৩৩ কেভি’র ৩টি লাইন শহীদ আব্দুল হালিম রেলসেতু (প্রথম রেল সেতু) দিয়ে নেয়া হয়। এ ৩টি লাইনের মধ্যে ১টি নতুন ও ২টি পুরাতন। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বিকট শব্দে একটি বিদ্যুৎ লাইনের কেবল ফেটে গিয়ে আগুন ধরে যায়। বিদুৎ বিভাগ থেকে তাৎক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হলেও সেতুতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
খবর পেয়ে আশুগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে। কিন্তু সেতুর যে স্থানে আগুন তা নদীর মাঝামাঝি দিকে হওয়ায় তারা ফায়ার সার্ভিসের ভৈরব রিভার ইউনিটকে ঘটনাস্থলে আসতে অনুরোধ করে। ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের রিভার ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে পানি দেয় এবং পাশাপাশি ভৈরব বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ অগ্নিনিরোধক গ্যাস নিক্ষেপ করে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। আগুনে বড় ধরনের কোন ক্ষতি না হলেও এ লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান ও ভৈরব রিভার স্টেশনের লিডার মো. জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের রিভার ইউটিটের সহায়তায় ২৫ মিনিটে আগুন নেভানো হয়।
ভৈরব বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন তালুকদার বলেন, সেতুতে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের একটি ক্যাবল বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের সুত্রপাত। ঘটনার পরপরই বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে অগ্নিনিরোধক দ্রব্য (কার্বন ডাই অক্সাইড ও এবিসি ফোম) নিক্ষেপ করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়। শনিবার এ লাইন মেরামত করা হবে। এতে ভয় বা আতংকের কারণ নেই। কেননা ভালভাবে আর্থিং করা থাকায় সেতু বিদ্যুতায়িত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতেও সেতুতে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। এসময় সতর্ক বার্তা না পাঠানোয় আগুন জ্বলা অবস্থায় সেতু দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী তিতাস ট্রেন সেতু অতিক্রম করেছিল। ওই ঘটনার পরেও আরো একবার ছোটখাট অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
এদিকে বারবার রেল সেতুতে অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে ঝুঁকিপুর্ণ মনে করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। তারা মনে করেন, কখনো সেতুতে ট্রেন থাকা অবস্থায় এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা রয়েছে। তাই গত বছর অগ্নিকান্ডের পর সেতুতে থাকা বিদ্যুৎ লাইন সরিয়ে নিতে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনা নদীতে টাওয়ার নির্মাণ করা না হলে আপাতত সেতু থেকে বিদ্যুতের লাইন সরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে রেলওয়ের সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হাসান বলেন, বারবার সেতুতে আগুনের ঘটনা উদ্বেগজনক। সেতু থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের তার সরিয়ে নিতে বা এ ধরনের ঘটনা আর যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জ উপজেলায় একই দিনে একই মাঠে একই সময়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সভা আহবানকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে সভাস্থলের পিছন থেকে অবিস্ফোরিত অবস্থায় তিনটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। এতে উভয় গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়। আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুরে উপজেলার আড়াইসিধা কাদির ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দুই গ্রুপ সভা আহবান করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ৩১ দফা বাস্তবায়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে উপজেলার আড়াইসিধা কাদির ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি সভা করার অনুমতি চেয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রাসেল বিপ্লব। আবেদনের অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও আড়াইসিধা কাদির ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দেয়া হয়। এই সভায় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা প্রধান অতিথি থাকার কথা রয়েছে। অন্যদিকে একই স্থানে একই সময়ে ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সভা করার অনুমতি চেয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে আরেকটি আবেদন করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ গ্রুপের নেতা ও আড়াইসিধা ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাদল মিয়া। তার আবেদনের অনুলিপিও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও আড়াইসিধা কাদির ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দেয়া হয়।
এদিকে ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানার সভার জন্য গত তিনদিন ধরে মাঠে প্যান্ডেল ও মঞ্চ করার কাজ শুরু করে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা। গতকাল বুধবার রাতে ইউনিয়ন বিএনপির নেতা-কর্মীরা এতে বাঁধা প্রদান করে। এতে করে উভয় গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকালে মাঠের নির্মাণাধীন মঞ্চের পিছন থেকে তিনটি অবিস্ফোরিত তাজা ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। এনিয়ে পুরো উপজেলায় বিএনপির দুগ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ মোস্তাকিম পাটোয়ারি বলেন, তিনটি ককটেল পড়ে থাকার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সেগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। ইতোমধ্যে সেনা সদস্যদের খবর দেয়া হয়েছে। তারা আসলে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্যামল চন্দ্র বসাক গণমাধ্যমকে বলেন, এখন বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিএনপির কোন গ্রুপকেই সভা করার অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি সভাস্থল থেকে তিনটি অবিষ্ফোরিত ককটেল উদ্ধার হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে ককটেলগুলো থানায় নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য যা যা করার তাই করা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
প্রতিষ্ঠার ৬ বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথমবারের মতো সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে।
আজ ৯ জুলাই মঙ্গলবার উপজেলার চাতাল শ্রমিক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী চম্পা বেগম (২২) নামে এক মা সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এটি এ চাতাল শ্রমিক দম্পতির প্রথম সন্তান। এতে দারুন খুশি তারা। বর্তমানে মা ও নবজাতক উভয়েই সুস্থ রয়েছে।
সিজারিয়ান অপারেশনে দায়িত্ব পালন করেন গাইনি কনসালট্যান্ট ডাক্তার কামরুন্নাহার, অ্যানেস্থেশিয়া কনসালট্যান্ট ডাক্তার অর্পা দাস, সহযোগিতা করেন মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার নুর-ই জান্নাত ও ডাক্তার মুন্নী প্রমুখ। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নূপুর সাহা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নূপুর সাহা বলেন, আমরা প্রথম সিজারে আমরা সফল হয়েছি। এ সফলতায় হাসপাতালের সব ডাক্তার ও নার্সরা সহযোগিতা করেছেন।
তিনি বলেন, প্রসুতি মাতা চম্পা বেগম ও তার স্বামী আশুগঞ্জের চাতাল কলের শ্রমিক। সোমবার রাতে প্রসব ব্যথা নিয়ে চম্পা বেগম হাসপাতালে আসে। আমরা প্রথম নরমাল ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করি। কিন্তু নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না হওয়ায় পরে সিজারের সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। আমরা সম্পূর্ণ বিনা খরচ এ সেবা দিচ্ছি। প্রয়োজনীয় ঔষধপত্রও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই সরবরাহ করছে। বর্তমানে মা ও নবজাতক উভয়েই সুস্থ রয়েছে। দুদিনের মধ্যেই রিলিজ দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
তিনি জানান, বর্তমানে হাসপাতালটিতে সার্জারি, চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া, মেডিসিন, ডেন্টাল, অর্থোপেডিক, চর্ম ও যৌন বিভাগ এবং নার্সসহ পূর্ণ জনবল রয়েছে। ওটি চালু হবার আগে আমরা নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়িয়েছি। অপারেশন থিয়েটারটি চালু হওয়ায় আমরা এ ক্ষেত্রেও সফল হয়েছি।
উল্লেখ্য, বিগত ২০০০ সালে আশুগঞ্জ উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও ২০১৮ সালে এখানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিত হয়।