ভিসা ছাড়া চীন ভ্রমণের সুযোগ পাবেন ৬ দেশের নাগরিকরা

আন্তর্জাতিক, 24 November 2023, 473 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
মহামারি পরবর্তী পর্যটনকে উৎসাহিত করতে ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন এবং মালয়েশিয়ার নাগরিকদের বিনা ভিসায় ভ্রমণের সুযোগ দিচ্ছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় একথা জানিয়েছে।

এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এসব দেশের সাধারণ পাসপোর্টধারীরা সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত দেশটিতে ভিসা ছাড়াই ব্যবসা বা ভ্রমণ করতে পারবেন।খবর বিবিসির।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং শুক্রবার বলেন, চীনের উন্নয়নকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেরই চীনে প্রবেশ করতে ভিসার প্রয়োজন হয়। তবে সিঙ্গাপুর ও ব্রুনাইয়ের নাগরিকদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম শিথিল করে দিয়েছে চীন সরকার। এসব দেশের নাগরিকরা ১৫ দিনের বেশি সময় ভিসা ছাড়া চীনে ব্যবসা ও ভ্রমণ করতে পারেন।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালের মার্চে কঠোর ভ্রমণ বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল চীন। তিন বছর পর এ বছর মার্চে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়।

মহামারীর আগে প্রতি বছর লাখো আন্তর্জাতিক দর্শনার্থী চীনে ভ্রমণ করতো।

Leave a Reply

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের ৩৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে Read more

ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই পাচারকারী গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ১হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গোপাল রায় Read more

আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু

আখাউড়া, আন্তর্জাতিক, 26 August 2024, 205 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়া বন্যা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় আজ ২৬ আগস্ট সোমবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পুরোদমে যাত্রী পারাপার শুরু হয়েছে। এর আগে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাদেরকে গতকাল রবিবার বিকেলে বিশেষ ব্যবস্থায় যাওয়া-আসা করতে দেওয়া হয়। এতে যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। সকালে বন্দর দিয়ে একটি মিনি ট্রাকে করে মাছ রপ্তানি হয়। তবে আর কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতে দেখা যায়নি। আখাউড়া উপজেলার গাজীর বাজার এলাকায় বেইলি সেতু ধসে যাওয়ায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু হতে কিছু সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা।

এদিকে যাত্রী পারাপার শুরু হতে পারে-এমন খবরে সকাল থেকেই লোকজন বন্দর এলাকায় এসে জড়ো হয়। বেলা ১১টার দিকে বিজিবি’র ব্যারিয়ারের সামনে ৩০-৪০জন যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এর আগে যাত্রীরা কাস্টমসের কাজ সারেন। বেলা সোয়া ১২টায় তাদেরকে ইমিগ্রেশন এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়। এ সময় দু’দেশ থেকে যাত্রী যাওয়া-আসা করতে দেখা যায়।

যাত্রী পারাপার শুরুর পর অনেককে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে যারা ওপারে যাচ্ছেন তাদেরকে হয়রানি করতে দেখা যায়। কর্মরত স্থানের অনাপতিপত্র, টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অনেককে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হয়। আবার কিছু সময় পর তাদেরকে ছেড়ে দিতেও দেখা যায়। এসব বিষয় নিয়ে যাত্রীরা বার বারই ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জের কক্ষে ভিড় করছিলেন। মূলত ওনার নির্দেশনাতেই সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল।

ভারত থেকে ফিরে আসা নরসিংদীতে চাকরিরত শরীয়তপুর জেলার বাসিন্দা মো. স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, গত কয়েকদিন অনেক কষ্ট করেছি। যে টাকা নিয়ে গেছি সেটা শেষ হয়ে গেছিলো। কোনো রকমে ওখানে দিন পার করছি।

আশুগঞ্জের বাবুল মিয়া, সিলেটের সুুধাংশু নামে আরো দুই ব্যক্তি বন্যার কারণে আটকে থাকায় তাদের কষ্টের কথা বর্ণনা দেন। আগরতলাতেও বেশ বন্যা হয়েছে। যে কারণে সব মিলিয়ে তাদেরকে সেখানে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

আখাউড়া স্থল বন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ (ওসি) মো. খায়রুল আলম বলেন, বন্যার পানি আরো আগে নেমে গেলে যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক করতে সময় লেগে যায়। প্রকৌশলী এসে সবকিছু ঠিক করার ৫দিন পর বেলা সোয়া ১২টা থেকে যাত্রী পারাপার শুরু হয়। তবে উপরের নির্দেশনা থাকায় অনেক যাত্রীর বিষয়ে খোঁজ নিতে হচ্ছে। তাদেও যাচাই-বাছাই শেষে যেতে দেওয়া হচ্ছে।

সামাজিক ন্যায়বিচারকে গুরুত্ব দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

আন্তর্জাতিক, জাতীয়, 14 June 2023, 1513 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বিশ্বব্যাপী শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলার প্রয়াসে সামাজিক ন্যায়বিচারে বিনিয়োগ করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একমাত্র সামাজিক ন্যায়বিচারই স্থায়ী শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি রচনা করতে পারে। বিশ্বব্যাপী শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের প্রয়াসে সামাজিক ন্যায়বিচারকে আমাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।’

আজ ১৪ জুন বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্যালেস ডি নেশনস-এ ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট-২০২৩’ এর পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে একটি বৈশ্বিক জোট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসহ সকল আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্ডার কেন্দ্রে সামাজিক ন্যায়বিচারকে স্থান দেওয়ার একটি সুযোগ করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে পাঁচটি পরামর্শ দেন।

শেখ হাসিনা তার প্রথম পরামর্শে বলেন, এই জোটটিকে একটি মান-নির্ধারক বা দরকষাকষির ফোরামের পরিবর্তে একটি পরামর্শমূলক বা অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয় হবে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক ন্যায়বিচারকে এক আন্তর্জাতিক মহল কর্তৃক অন্য মহলের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে এই জোটকে সতর্ক থাকতে হবে। তৃতীয়ত, এই জোটকে একটি নিয়মতান্ত্রিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার আওতায় সামাজিক ন্যায়বিচারকে একটি সংরক্ষণবাদী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে, বরং এর ব্যাপক প্রসারে ভূমিকা রাখার বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। চতুর্থত, শোভনকর্ম এবং উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার জন্য এ জোটের বিষয়ে আইএলও’র নিজস্ব অংশীজনদের থেকে ব্যাপক সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। পরিশেষে, আমাদের তরুণ সমাজকে সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রবক্তা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ জোটকে মনোযোগী হতে হবে।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান শতাব্দীর বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বের জন্য আমাদের একটি নতুন সামাজিক চুক্তি তৈরি করতে হবে। এই সামাজিক চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হবে- টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।’

উল্লেখ্য যে, শ্রম অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ আইএলও’র দশটি মৌলিক সনদের মধ্যে আটটিতে অনুস্বাক্ষর করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ক দুটি নতুন মৌলিক আইএলও সনদ অনুস্বাক্ষরের বিষয়টিও আমরা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, শ্রম অধিকার নিয়ে সোচ্চার কয়েকটি উন্নত দেশ এখন পর্যন্ত নিজেরা অধিকাংশ মৌলিক আইএলও সনদ অনুস্বাক্ষর করেনি। যেমন, একটি বড়ো শিল্পোন্নত দেশ মাত্র দুটি মৌলিক সনদ অনুস্বাক্ষর করেছে।’

শিশুশ্রমের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণে বাংলাদেশ সম্প্রতি আইএলও সনদ ১৩৮ অনুস্বাক্ষর করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার আটটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতকে শিশু শ্রমমুক্ত ঘোষণা করেছে। এছাড়া, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত এক লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক ও কারিগরি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলছে।

তিনি বলেন, ‘আমি একটি সুস্থ ও নিরাপদ আগামী প্রজন্মের স্বার্থে শিশু শ্রমের অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএলও’র সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৩ ও ২০১৮ সালে দুইবার বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধন করেছে। অধিকন্তু, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫-এ সংশোধন করা হয়েছে। এ বছর নাগাদ শ্রম আইন, ২০০৬-এ আরও সংশোধনী আনার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ প্রয়োগর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ও সাতটি শ্রম আদালতের সঙ্গে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আরও ছয়টি শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করেছে। এ ছাড়া, সামাজিক অংশীদারদের অংশগ্রহণে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জোরদার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, দেশের কারখানাগুলোর জন্য একটি ‘শিল্প পুলিশ’ ইউনিট গঠন করা হয়েছে।
সূত্র : বাসস

আখাউড়ায় অবৈধ পথে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা দায়ে আটক ৩

আখাউড়া, আন্তর্জাতিক, 20 September 2024, 130 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারতে যাওয়ার সময় ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দুই নারী ও এক শিশুকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটককৃতদের মধ্যে মা ও তার শিশু সন্তান রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছে বিজিবি। মামলায় তাদের সহযোগিতাকারীকেও আসামি করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার হিজুলিয়া গ্রামের রহমান ভূঁইয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৩২) ও তার ছেলে মো. ফারহান (০৩) এবং নোয়াদিয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী জেসমিন আক্তার (২৫)।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের মোতালেব মিয়ার ছেলে দালাল মো. মাসুদ মিয়া অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার জন্য ওই তিনজনকে সহযোগিতা করেন। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে মানব পাচারকারী দালাল মাসুদ পালিয়ে যায়।

২৫ বিজিবি সরাইল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল ফারাহ্ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ফকিরমোড়া বিওপির একটি টহল দল আখাউড়া উপজেলার আব্দুল্লাহপুর সীমান্ত এলাকা থেকে ওই তিনজনকে আটক করে। পরে তাদের আখাউড়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে ফরিদা সন্তানসহ চিকিৎসার জন্য ও জেসমিন আক্তার জুতা কারখানায় কাজ করতে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা তিতাস সংগঠন ইন গ্রীসের কমিটি গঠিত

আন্তর্জাতিক, 21 January 2023, 1102 Views,

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা তিতাস সংগঠন ইন গ্রীসের নবনির্বাচিত কার্যকরি পরিষদ ২০২৩ গঠিত হয়েছে। এতে কসবা উপজেলার কৃতি সন্তান মোঃ সামছুল আলমকে সভাপতি এবং বিজয়নগর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের কৃতি সন্তান মোঃ সিরাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। সিনিয়র সহ-সভাপতি সায়েম হোসেন, সহ-সভাপতি মোঃ আবুল হোসেন, সহ-সভাপতি মোঃ হামদু ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি মোঃ জাহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মোঃ আদেল মিয়া (আলী হোসেন), সহ-সভাপতি মোঃ ডিপটী হাজারী, সহ-সভাপতি মোঃ আলমগীর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ ভূঞা, সহ-সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান টিটু, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজাহান খোকন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ শিপন ভূঁইয়া, সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাসুম, সহ সাধারণ সম্পাদক সামির হাজারী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নাজমুল হাসান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মামুন মিয়া, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মারুফ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক নিরব আহমেদ রুমন, কোষাধ্যক্ষ মোঃ হাবিবুল্লাহ, সহ-কোষাধ্যক্ষ মোঃ মুছা মিয়া, প্রচার সম্পাদক মোঃ স্বপন, প্রচার সম্পাদক মোঃ আঃ জব্বার, দপ্তর সম্পাদক মোঃ শাহীন, সহ-দপ্তর সম্পাদক জামাল সরকার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুর আলম, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোঃ নুর আলম বিজয়, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোঃ সবুজ মিয়া, সহ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোঃ আশরাফ আলী, ক্রীড়া সম্পাদক তানবীর আহমেদ সাগর, সহ ক্রীড়া সম্পাদক সাগর, আইন বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উল্লা মুন্সী, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক মোঃ একরাম, মহিলা সম্পাদীকা মোসাঃ রিনা আক্তার, শিক্ষা ও তথ্য সম্পাদক মোঃ নবী, ধর্ম সম্পাদক মোঃ খোকন, আপ্যায়ন সম্পাদক মোঃ বাবুল মিয়া।

ভূস্বর্গ কাশ্মীরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশে’র সন্ধানে

আন্তর্জাতিক, 18 December 2023, 542 Views,

ডেস্ক রিপোর্ট :

বেশ কয়েক বছর আগে এই তথ্যটা আমাকে প্রথম দিয়েছিলেন আজমত হোসেইন, যে কাশ্মীরি যুবক ছিলেন হুরিয়ত কনফারেন্সের প্রয়াত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির সর্বক্ষণের সঙ্গী আর ঘনিষ্ঠ অনুচর। বাংলাদেশ নিয়ে খবরাখবর করি শুনে তিনি বলেছিলেন, “জানেন কি, আমাদের কাশ্মীরেও আছে বাংলাদেশ নামে আস্ত একটা গ্রাম?”

শুধু তা-ই নয়, আরো জেনেছিলাম এই ‘বাংলাদেশ’ নামে গ্রামটা নাকি গিলানি সাহেবের জন্মস্থান জুরিমাঞ্জ-এর ঠিক পাশেই! পরে গুগল ম্যাপেও খুঁজে বের করি সেই বাংলাদেশ, তবে বিশদে খোঁজ নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও নানা ব্যস্ততায় সে কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।

মাসকয়েক আগে কাশ্মীরেরই একটা খবরের কাগজে চোখে পড়ে, সেই ‘বাংলাদেশ’ গ্রামের লোকেশনে উলার লেকের ধারেই শুরু হয়েছে বিগ বাজেট একটি দক্ষিণী ছবির শ্যুটিং। এমন কী, বলিউড ছবিরও সেট পড়েছে ‘বাংলাদেশে’ – এমনটাও জানানো হয়েছিল।

বুঝতে পারি, কাশ্মীরের ‘বাংলাদেশ’ ইদানীং ধীরে ধীরে পরিচিতি পাচ্ছে, ওই এলাকার অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও আসতে শুরু করেছেন দলে দলে।

তখনই স্থির করে ফেলি, কীভাবে এই ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ হল, সেটা জানতে একবার যেতেই হবে ওই গ্রামে। অবশেষে দীর্ঘদিনের লালিত সেই স্বপ্নটা পূর্ণ হল এ মাসের গোড়ায়।

শ্রীনগর শহর থেকে এমনিতে ওই জায়গাটার দূরত্ব আশি কিলোমিটার। তবে নানা কারণে সোপোর-বান্দিপোরা রোড হামেশাই বন্ধ থাকে বলে প্রায়শই পুরো উলার লেক পরিক্রমা করে পৌঁছতে হয় সেই গ্রামে – রাজধানী থেকে পাড়ি দিতে হয় অন্তত সোয়াশো কিলোমিটার রাস্তা।

তবে বিস্তর মেহনত করে একবার ‘বাংলাদেশে’ পৌঁছলে বোঝা যায়, কেন গ্রামটি বাইরের দুনিয়ার কাছে এভাবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

গ্রীষ্মের পিক সিজনে তো বটেই, ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডাতেও সেখানে এখন পর্যটকদের ঢল ও ট্রেকারদের তাঁবু।

প্রচলিত আছে, মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরই না কি কাশ্মীর নিয়ে একদা বলেছিলেন :
আগর ফিরদৌস বার রু-য়ে জমিন অস্ত
হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত!
বাংলায় এই অমর পংক্তির অনুবাদ করা যেতে পারে, ‘এই পৃথিবীর বুকে কোথাও যদি স্বর্গ থেকে থাকে তাহলে তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানেই!’
এখন এই লাইনগুলো আসলে কবি আমীর খসরুর লেখা, না কি অন্য কারও – তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।
কিন্তু এই ‘জন্নত-ই-জাহান’ বা ‘ভূস্বর্গ’ খেতাবের সবচেয়ে বড় দাবিদার যে কাশ্মীর – তা নিয়ে বোধহয় বিন্দুমাত্র বিতর্ক নেই!
আর সেই ভূস্বর্গের বুকে আজ বাহান্ন বছর ধরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশ’ও যে বহাল তবিয়তে টিঁকে আছে এবং ক্রমশ বিখ্যাত হচ্ছে, এ খবরও রীতিমতো রোমাঞ্চ জাগায় বই কী!
যেভাবে এই নামকরণ
ডিসেম্বরের এক হিমেল সকালে যখন বান্দিপোরা জেলার এই বাংলাদেশ গ্রামে পৌঁছলাম, তখন মুষলধার বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে জনপদ। উলার লেক থেকে আসা ঠান্ডা হওয়ায় হাত-পা অবশ হওয়ার উপক্রম।
উলারের অন্য পারে মাউন্ট হরমুখের তুষারধবল চূড়া কুয়াশাতে আবছায়া। আর লেকের বুকে রাজহাঁসের ঝাঁক আর সাইবেরিয়া থেকে আসা পরিযায়ী পাখিদের উদ্দাম দাপাদাপি।
বাংলাদেশ গ্রামের কূলে কয়েকটা নৌকা ওই তুমুল বৃষ্টিতেও মাছ ধরতে ব্যস্ত। আর পর্যটকদের জন্য চালু হওয়া শিকারাগুলো লেকের জলে ভেসে বেড়াচ্ছে ইতিউতি।
গ্রামবাসীদের দেখা মিলল দুপুরের ঠিক আগে আগে, যখন জোহরের নামাজের ঠিক আগে লোকজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্থানীয় মসজিদের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন।
কীভাবে তাদের গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ হল, সেই প্রশ্নের জবাবে নবীন যুবক নিসার আহমেদ দার কিংবা প্রবীণ পঞ্চায়েত সদস্য গুলাম আহমাদের কাছে মোটামুটি একই রকম বিবরণ পেলাম।
আসলে পাশের জুরিমাঞ্জ গ্রামে (যেটা আবার সৈয়দ আলি শাহ গিলানির জন্মস্থান, তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলে খাল খনন বিভাগের একজন ভূমিহীন শ্রমিক) ’৭১ সালের শীতে এক ভয়ঙ্কর অগ্নিকান্ড হয়েছিল।
সেই আগুনে প্রায় পুরো গ্রামটাই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গ্রামের এক পাশে উলার লেকের কোল ঘেঁষে অনেকটা ফাঁকা জমি ছিল, তখন সেখানেই সর্বস্ব-হারানো পরিবারগুলোকে নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয় সরকার।
এরপর প্রশ্ন ওঠে, নতুন এই জনপদটা তো জুরিমাঞ্জ থেকে বেশ খানিকটা দূরে – তো এই গ্রামের নাম কী দেওয়া হবে?
তখন একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, সারা পৃথিবীর সঙ্গে জুরিমাঞ্জও সে খবর রেডিওতে শুনেছে।
সেই নবীন রাষ্ট্রকে সম্মান জানাতে নতুন গ্রামটির নামও দেওয়া হবে ‘বাংলাদেশ’ – এমনটাই সেদিন স্থির করেছিলেন ওই জনপদের বাসিন্দারা।
বাংলাদেশের নামে গ্রামটির নামকরণের মূল আইডিয়াটা কার, এটা নিয়ে অবশ্য দুরকম ব্যাখ্যা পাওয়া গেল।
নিসার আহমেদ দার জানালেন, তিনি বাপ-চাচাদের কাছে শুনেছেন তখন কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই না কি পরামর্শ দিয়েছিলেন নতুন গ্রামটির নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখা হোক, আর গ্রামবাসীরা সানন্দে সেটা মেনেও নিয়েছিলেন।
তুলনায় প্রবীণ গুলাম আহমাদ বা গুলাম নবি বাট অবশ্য বললেন বাইরের কারও পরামর্শে নয় – গ্রামের তখনকার মুরুব্বিরা মিলেই না কি স্থির করেছিলেন নতুন জনপদের নাম দেবেন তারা বাংলাদেশ, সদ্য স্বাধীন দেশটিকে স্বীকৃতি জানাবেন।
দুটোর যে কোনও ব্যাখ্যাই সত্যি হতে পারে, তবে ‘বাংলাদেশ’ নামটা নিয়ে ওই গ্রামের যে আলাদা একরকম গর্ব আছে তা টের পেতে কোনও অসুবিধা হয় না।
প্রথম দিকে নামটা মুখে মুখে চালু থাকলেও ২০১০ সালে বান্দিপোরা জেলার ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার অফিসও বাংলাদেশ নামটিকে নথিভুক্ত করেছে, এখন প্রায় ৭০টি পরিবারের সাড়ে তিনশো লোকের বসবাস সেখানে।
গ্রামের আশি বছরের প্রবীণা আজাইব বিবি বিকেলের দিকে খুব যত্ন করে নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসিয়ে কাশ্মীরের বিখ্যাত ‘কাহওয়া চা’ খাইয়ে আপ্যায়ন করছিলেন।
তাঁর সন্তানদের মধ্যে দু’জন মূক ও বধির, কোনও ক্রমে হাঁস ও মুরগী প্রতিপালন করে তিনি নিজের বিরাট সংসার চালান।
এত কষ্টের মধ্যেও আজাইব বিবি হাসিমুখে বলছিলেন, “আমাদের গ্রামের নামটা কিন্তু একেবারে অন্য রকম! গোটা কাশ্মীরে এরকম নাম আপনি আর কোথাও পাবেন না!”
গ্রামের সব লোকজন মাথা নেড়ে তাঁর কথায় সায় দেন, জানাতে ভোলেন না এই যে অন্য একটি দেশের নামে তাদের গ্রামের নাম – বিষয়টা তাদের অন্য রকম একটা ভালো লাগা দেয়!
বেড়াতে বা কাজে কাশ্মীরের অন্যত্র গেলেও তারা প্রথমেই বলেন, “আমরা বাংলাদেশ গ্রাম থেকে এসেছি!” আগে লোকজন শুনে একটু অবাক হত, কিন্তু এখন আস্তে আস্তে সবাই চিনে গেছে এই অভিনব নামের গ্রামটিকে।
‘বাংলাদেশে’র পুনর্জন্ম
তবে প্রায় বাহান্ন বছর আগে এই নামকরণ হলেও পরবর্তী প্রায় চার দশক ‘বাংলাদেশ’ একটি অখ্যাত জনপদ হিসেবেই রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হালে সেই ছবিটা খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।
আর এর পেছনে খুব বড় ভূমিকা রয়েছে উলার লেককে ঘিরে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পর্যটন প্রসারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার।
উলার লেক হল সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে বৃহত্তম মিঠা পানির লেক, কাশ্মীরের সুপরিচিত ডাল লেকের অন্তত সাড়ে আট গুণ এর আয়তন।
কিন্তু শ্রীনগরের ডাল লেক পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হলেও তুলনায় উলারে ‘ট্যুরিস্ট ফুটফল’ অনেক কম, যদিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উলারের আকর্ষণ বোধহয় বেশি ছাড়া কম নয়।
সম্প্রতি সেই ছবিটাই বদলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ‘উলার কনজার্ভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’, সরকারি অর্থায়ন আর বেসরকারি সহযোগীদের নিয়ে তারা নতুন করে আঁকছেন উলার লেকের চালচিত্র।
“আমাদের এই প্রকল্পে একটা খুব বড় জায়গা নিয়ে আছে বাংলাদেশ গ্রাম, কারণ ওই এলাকাটার পর্যটন সম্ভাবনা অপরিসীম”, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মুদাসির মেহমুদ।
গত দু-তিন বছরের মধ্যে ‘বাংলাদেশে’র সৌন্দর্যায়নে তারা বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছেন।
জুরিমাঞ্জ-বাংলাদেশ-ওয়াতলাব গ্রামগুলোকে ঘিরে উলারের তীর ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে একটি আধুনিক বুলেভার্ড।
ইতিমধ্যেই লেকের বুক চিরে তৈরি হয়েছে প্রায় দুশো মিটার লম্বা একটি বোর্ডওয়াক, যেটির ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়া যায় একদম উলারের বুকে। পদ্মের বনের ওপর দিয়ে ডানা ঝাপটাতে দেখা যায় নানা প্রজাতির মাইগ্রেটরি বার্ডদের।
‘বাংলাদেশ’ গ্রামের বাসিন্দারা এই বোর্ডওয়াকেরই নাম দিয়েছেন ‘ভিউপয়েন্ট’।
নিসার আহমেদ বলছিলেন, “বছরতিনেক আগে এই ভিউপয়েন্ট খোলার পর থেকেই হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে ট্যুরিস্টদের আনাগোনা খুব বেড়ে গেছে।”
“ভারতের নানা প্রান্ত থেকে তো বটেই, অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া-ইউরোপ থেকেও আজকাল দলে দলে পর্যটকরা আসছেন।”
গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গুলাম আহমাদ জানাছেন, ২০২২ আর ২০২৩র গ্রীষ্মে এমন কী বাংলাদেশ থেকেও জনাকয়েক পর্যটক তাদের গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। মানে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরের বাংলাদেশ দেখতে!
এমনিতে বাংলাদেশ গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা অনেকটাই উলার লেক-নির্ভর।
তারা কেউ লেকে মাছ ধরেন, কেউ আবার লেকের তীরে হাঁসের চাষ করেন।
অনেকে আবার নৌকায় লেকের বুক থেকে তুলে আনেন ওয়াটার চেস্টনাট, জলের যে কাঁটাওলা ফসল অনেকটা বাংলার ‘পানিফলে’র মতো দেখতে। কাশ্মীরিরা স্থানীয় ভাষায় বলেন ‘সিংগারা’।
উলার লেকের বুকে পদ্মবন থেকে পদ্মের কন্দ বা ‘নদরু’ তুলে আনাটাও বাংলাদেশে অনেকেরই পেশা। এই নদরু দিয়ে তৈরি ‘ইয়াখনি’ নামে একটি পদ কাশ্মীরে খুবই জনপ্রিয়, আর বাংলাদেশের ‘নদরু’ এখন পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি-মুম্বাই-ব্যাঙ্গালোরের বাজারেও।
সব মিলিয়ে উলার লেকের তীরে একদা অপরিচিত ‘বাংলাদেশ’ যেন সম্প্রতি নতুন জীবন পেয়েছে, প্রতিবেশী দেশের নামে নামাঙ্কিত গ্রামটির নামডাক ছড়িয়ে পড়ছে দূর-দূরান্তে।
“রাস্তাটা যদি আর একটু ভাল করা হয় আর উলার লেকে নিয়মিত ড্রেজিং-টা চালু রাখা যায় তাহলে দেখবেন আমাদের বাংলাদেশ ট্যুরিস্টদের সামলাতে কূল পাবে না”, একগাল হেসে বলেন প্রবীণ গ্রামবাসী গুলাম নবি বাট।
‘হামলা আওয়ার খবরদার!’
বাংলাদেশ গ্রাম থেকে সন্ধ্যার দিকে যখন শ্রীনগরে ফিরছি, তখনও কিন্তু একটা খটকা রয়েই গিয়েছিল।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ‘ইন্ডিয়া’র বিরোধিতা এবং পাকিস্তানের প্রতি প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি নিয়ে এত কথা শোনা যায়, সেই কাশ্মীর কীভাবে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন হওয়া একটি দেশের জন্মকে ‘সেলিব্রেট’ করেছিল সে প্রশ্নটার জবাব কিন্তু সেদিন বাংলাদেশ গ্রামে পাইনি।
পরে কাশ্মীরি গবেষক ও ‘কে ফাইল’ গ্রন্থের লেখক বশির আসাদ এর একটা চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিলেন।
তিনি জানাচ্ছেন, “সাতচল্লিশে ভারত ভাগ থেকে পরবর্তী তিরিশ বছর কিন্তু সাধারণ কাশ্মীরিদের সমর্থন পুরোপুরি ভারতের দিকেই ঢলে ছিল। ছবিটা তখন মোটেই আজকের মতো ছিল না, বরং কাশ্মীরিরা তখন সবাই পাকিস্তানি দখলদারির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন।”
“এমন কী সাতচল্লিশ সালের শেষ দিকেই যখন পাকিস্তানি হানাদাররা কাশ্মীরে হামলা চালায়, তখন শ্রীনগর-সহ গোটা ভ্যালিতে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছিল ‘হামলা আওয়ার খবরদার, হাম কাশ্মীরি হ্যায় তৈয়ার’! মানে তারা তখন পাকিস্তানিদের উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত ছিলেন!”
ফলে একাত্তরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের দু-টুকরো হওয়াকে কাশ্মীরের একটি জনপদ যে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের মধ্যে দিয়ে উদযাপন করেছিল, তাতে বশির আসাদ এতটুকুও বিস্মিত নন।
“এমন কী সাতাত্তর সালের আগে জামাত-ই-ইসলামীও কিন্তু কাশ্মীরে সেভাবে পায়ের তলায় জমি পায়নি। ফলে একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে জামাতের নির্যাতন-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়”, বলছিলেন তিনি।
বশির আসাদ আরও মনে করেন, ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে উগ্রপন্থা আর জঙ্গীবাদের রমরমা শুরু হওয়ার আগে কাশ্মীর ছিল সম্ভবত সমগ্র উপমহাদেশেই সবচেয়ে উদার ও সহিষ্ণু একটি সমাজ – কাজেই সেখানে অবাধ গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে চেতনাও ছিল খুব শক্তিশালী।
এছাড়া ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের আর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও হয়তো আছে – যার আভাস নিহিত ছিল “কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই এই পরামর্শ দিয়েছিলেন”, নিসার আহমেদ দারের এই কথাতে।
সে সময় জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ মীর কাশিম।
কংগ্রেসের এই সিনিয়র নেতা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কাশ্মীরে কংগ্রেসের সংগঠন গড়ে তোলার কৃতিত্ব অনেকে তাঁকেই দিয়ে থাকেন।
একাত্তরের যুদ্ধ ছিল ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
ফলে তাঁকে সম্মান জানাতে মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ মীর কাশিম বা তাঁর কংগ্রেসি মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য নতুন একটি গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছিলেন, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সত্যিটা ঠিক কী ছিল, আজ হয়তো তা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়।
কিন্তু সুদূর উত্তর কাশ্মীরের এক প্রান্তে, সুবিস্তীর্ণ উলার লেকের এক তীরে বাংলাদেশ নামে একটি ছোট্ট গ্রাম যে অর্ধশতাব্দীরও বেশি পুরনো ইতিহাসকে নিজের বুকে আজও ধরে রেখেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
শুভজ্যোতি ঘোষ
জড়ষব,বিবিসি নিউজ বাংলা, বান্দিপোরা