চলারপথে রিপোর্ট :
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ছিনতাই করা মালামালসহ দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। ২৪ নভেম্বর শুক্রবার রাত ৮টার দিকে অভিযানটি চালায় র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের একটি দল।
র্যাব সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের দলটি ভৈরব উপজেলার জগন্নাথপুর মধ্যপাড়ায় অভিযান চালায়। এ সময় দুজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন ভৈরবের কমলপুর এলাকার জলিল মিয়ার ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৭) ও জগন্নাথপুর এলাকার মৃত বুলবুল মিয়ার ছেলে রাসের মিয়া (২৫)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোনসেট ও নগদ ৭৫০০ টাকা।
র্যাবের স্কোয়াড কমান্ডার মুহা. জাহিদ হাসান গ্রেফতার দুই জনকে ছিনতাইকারীচক্রের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে জানান, তারা দীর্ঘদিন যাবত ছিনতাই করে আসছেন এবং উদ্ধার করা মালামালগুলোও ছিনতাই করে আনা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।
পরে তাদেরকে ভৈরব থানায় হস্তান্তর করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। আজ শুক্রবার পহেলা বৈশাখ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৯ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হবে নতুন বছর ১৪৩০। আজ সকালে সোনালি সূর্য রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে, বাঙালি জাতি আজ এক কাতারে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন এটি। আবহমানকাল বাংলার গ্রামীণ জনপদে উদযাপিত হওয়া নববর্ষের আয়োজন এখন ছুঁয়েছে নগর জীবনে এবং নতুন মাত্রায়। সর্বত্র উদযাপিত হচ্ছে বাংলার উৎসব, উচ্চারিত হচ্ছে বাঙালিয়ানার জয়গান। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় জীবনে পরম আনন্দের দিন। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন আজ। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় বের হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নববর্ষকে আবাহন জানিয়েছিলেন এভাবেই। নববর্ষ বিদায়ী বছরের গস্নানি মুছে দিয়ে বাঙালি জীবনে ওড়ায় নতুনের কেতন, চেতনায় বাজায়
মহামিলনের সুর। সব ভেদাভেদ ভুলে সব বাঙালিকে দাঁড় করায় এক সম্প্রীতির মোহনায়। নববর্ষের আগমনী ধ্বনি শুনলেই সমগ্রজাতি নতুনের আহ্বানে জেগে ওঠে। গ্রামের জীর্ণ-কুটির হতে বিলাসবহুল ভবন কিংবা দূর প্রবাসের মেগাসিটি-সর্বত্রই প্রবাহিত হয় আনন্দের ফলগুধারা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন এখন বাংলাদেশের গন্ডি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। প্রতিটি বাঙালি দিনটিকে উদযাপন করে উৎসবের আমেজে। বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্র করার আর কুসংস্কার ও কূপমন্ডূকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা পায়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদেরকে উদার হতে শিক্ষা দেয় এবং জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বমানবের সঙ্গে মিশে যাওয়ার শক্তি জোগায়। এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শ এবং রাষ্ট্রভাষা চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘এই শুভ নববর্ষের প্রাক্কালে আমাদের প্রার্থনা এই যে, আমরা যেন সমস্ত অন্ধকার ও বাধা-বিপত্তি দূর করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারি।’
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। নতুন পোশাক পরে সবাই মিলিত হন সাংস্কৃতিক আয়োজনে। ছায়ানট রমনার বটমূলে বর্ষবরণের যে প্রভাতী অনুষ্ঠান শুরু করেছিল তা আজ বিশ্ব জুড়ে বর্ষবরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। শহরে বৈশাখ যে ব্যাপক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে আসে গ্রামীণ জীবনে তার আমেজ ভিন্ন। নগরজীবনে এই দিন যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুন কাপড় পরার আয়োজনও। গ্রামবাংলায় সকালবেলা দই-চিড়া দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করার রেওয়াজ আছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতার আনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানান।
কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে চৈত্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় বিজু উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সব মানুষ, সব বাঙালি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সমগ্র জাতি একই হৃদয়াবেগে একটি মোহনায় মিলিত হয়ে পালন করে এই সর্বজনীন উৎসব। চিরায়ত বাঙালিত্বের অহংকার আর সংস্কৃতির উদার আহ্বানে জাগরুক হয়ে নাচে-গানে, গল্পে-আড্ডায়, আহারে-বিহারে চলে নতুন বছরকে বরণ করার পালা। বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এর মাধ্যমে জাতি তার স্বকীয়তা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার শক্তি সঞ্চয় করে, সচেষ্ট হয় আত্মপরিচয় ও শিকড়ের সন্ধানে। নববর্ষই বাঙালি জাতিকে ইস্পাত-কঠিন ঐক্যে আবদ্ধ করেছিল, শক্তি ও সাহসের সঞ্চার করে স্বাধিকার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জুগিয়েছিল।
১৪২৯-এর আনন্দ বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। ১৪৩০ সনকে বরণ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে ঘরোয়া পরিবেশে মেতে ওঠা বাঙালি গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। আবহমান বাংলার চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনার মূলে রয়েছে এক অসাধারণ অনুষঙ্গ; সেটি হলো বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠানমালা আমাদের সেই ঐতিহাসিক চেতনাকে প্রোজ্জ্বল করে। স্বদেশ মানস রচনায় বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য সর্বোপরি ইতিহাসের আলোকে রক্ষণশীল ও পশ্চাৎপদ চিন্তা-চেতনাকে পরিহার করে আধুনিক ও প্রাগ্রসর অভিধায় জাতিসত্তাকে যথাযথ প্রতিবাদ করার সম্মিলিত প্রতিশ্রম্নতি বাংলা নববর্ষকে দান করেছে অনবদ্য মাঙ্গলিক যাত্রাপথ।
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য হলো বাংলা বর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। আর বাঙালিদের কাছে বাংলা নববর্ষ বরণ হলো একটি প্রাণের উৎসব। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো মঙ্গলশোভাযাত্রা। ইউনেস্কো বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বাস সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করে নববর্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সাংস্কৃতিক সৌধের ভিত আরও সুদৃঢ় করুক, নববর্ষের উদার আলোয় ও মঙ্গলবার্তায় জাতির ভাগ্যাকাশের সব অন্ধকার দূরীভূত হোক, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটুক, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, এটাই হোক নতুন বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ এর প্রত্যাশা।
নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার ও সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। বাংলা বর্ষবরণ বাংলাদেশের একটি সার্বজনীন উৎসব। নতুন বছরের প্রথম দিন সবাই যার যার সাধ্যমতো উৎযাপনের মাধ্যমে দিনটি পালন করেন। বর্ষবরণ যে কয়টি জিনিস এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পান্তা ইলিশ বা ইলিশ মাছ খাওয়া। বাঙালির বর্ষবরণ ইলিশ ছাড়া হয় না। এ ছাড়া কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোনো খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানা রকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওযার ব্যবস্থা থাকে। ইলিশ মাছের সঙ্গে পান্তা ভাত ও শুঁটকি মাছ, আচার, ডাল, কাঁচা লঙ্কা, এবং পিঁয়াজ কুঁচির সংমিশ্রণের এই খাদ্যটি পয়লা বৈশাখের জনপ্রিয় খাদ্য। এই দিনের একটি পুরানো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এর মধ্যে থাকে নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা ও কুস্তি। হাল আমলে ক্রিকেট ও ফুটবল যুক্ত হচ্ছে।
দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সঙ্গে পালিত হয় সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সব প্রান্তের সব বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেন, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সব দুঃখ-গস্নানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেন। এদিনে তারা হালখাতা করে থাকেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরি সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরি সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। পহেলা বৈশাখ ভোর থেকে শুরু হয়। ভারতবর্ষে মোঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো।
হালখাতা বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সব স্থানেই পুরানো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন লাল রংঙের হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকেন। এই প্রথাটি এখনো অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানে। ১৯৬০-১৯৭০ দশকে পুরান ঢাকায় হিন্দু ব্যবসায়ী বিশেষ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হালখাতা প্রথা অনুসরণের প্রবণতা ছিল। এমনকি বেশ ভাবগাম্ভীযের্র সঙ্গেই পালিত হতো অসাম্প্রদায়িক এই আচার-অনুষ্ঠানটি। হালনাগাদের খাতাটি ছিল লাল রঙের লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো। দুই-তিন ভাঁজ করে তার উপর ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখে হাত বিনিময় হতো। এই খাতাটিই ছিল বিগত বছরের যাবতীয় হিসাবের বিবরণী নথি।
আবহমান বাংলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন যশোরে সর্বপ্রথম নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ নানা শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো শোভাযাত্রাটি দেশ জুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। অতঃপর এর আদলেই ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত হয় আরও একটি শোভাযাত্রা। তখন প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৮০’র দশকের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এক হওয়া এবং শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনা। সেই আনন্দ শোভাযাত্রাটি সকল স্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। সেদিন থেকে প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই আনন্দ শোভাযাত্রা অব্যাহত রাখে। বিশালাকার পুতুল, বিভিন্ন পশুপাখির বিচিত্র মুখোশ ও সাজসজ্জার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের মাধ্যমে জাকজমক করে তোলা হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। প্রথম দিকে চারুকলার এই শোভাযাত্রাটির নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল থেকে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অশুভ মানুষের কথা ভেবে মুখোশ করা হয় শোভাযাত্রায়।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার পহেলা বৈশাখকে জাতীয় পার্বণ হিসেবে ঘোষণা করেন। স্বাধিকার আন্দোলনের সময় ছায়ানটের গানে গানে যে প্রতিবাদের ধারা সৃষ্টি করেছিল তা মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণার পথে বড় শক্তি যুগিয়েছে। ২০০১ সালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের পরে যেমন মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছায়ানট যেন মানবতার পক্ষে লড়াইয়ে তাদের প্রত্যয়ের কথাই ব্যক্ত করছে বারবার। আজ সেই আলোড়ন পরিণত হয়েছে প্রতিটি বাঙালির প্রাণের উৎসবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
কক্সবাজারের পেকুয়ায় নিখোঁজের এক দিন পর মাছের ঘেরের পানি থেকে তিন শিশুর লাশ উদ্ধার করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। আজ ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ফেরাসিঙ্গাপাড়া এলাকায় লাশগুলো পাওয়া যায়। এ সময় তারা একে অপরের হাত ধরে ছিল।
মারা যাওয়া তিন শিশু হলো উজানটিয়া ইউনিয়নের ফেরাসিঙ্গাপাড়া এলাকার নুরুল আলমের মেয়ে তৌহিদা বেগম (১০) ও ছেলে আমির হোসেন (৫) এবং ছাবের আহমদের মেয়ে হুমায়রা বেগম (৮)। হুমায়রা সম্পর্কে তৌহিদা ও আমিরের ফুফাতো বোন। তারা গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে নিখোঁজ ছিল।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গতকাল বিকেলে তৌহিদা, আমির হোসেন ও হুমায়রা টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার পানিতে মাছ ধরতে যায়। সন্ধ্যা ছয়টায় তারা হুমায়রার বাড়ি আসে। এরপর আবারও তারা একসঙ্গে ঘর থেকে বের হয়ে তৌহিদাদের বাড়িতে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সাতটা বাজলেও তারা বাড়ি না পৌঁছানোয় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। পরে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টায় একটি মাছের ঘেরের পানিতে তাদের মরদেহ দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। পরে বিলের পানি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর হায়দার বলেন, নিখোঁজ তিন শিশুর লাশ বিলের পানি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের জন্য তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় তিতাস নদীর জায়গা দখল করে বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এই বাঁধের কারণে নদী সংকুচিত হয়ে নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রামকৃষ্ণপুর এলাকায় এই বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিতাস নদী হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্বীর মেঘনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গিয়ে শেষ হয়েছে। এই নদী দিয়ে বাঞ্ছারামপুর, হোমনা, মুরাদনগর উপজেলার ব্যবসায়ীরা নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়া করেন। তিতাস নদীর অংশটি দুই বছর আগে নৌচলাচলের সুবিধার জন্য খনন করে বিআইডব্লিউটিএ। এই নদী দিয়ে প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট ও নারায়ণগঞ্জে কয়েকটি লঞ্চ ও শতাধিক ট্রলার চলাচল করে।
সরেজমিন দেখা গেছে, চান্দেরচর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর আড়ালিয়াকান্দি গ্রামের রামকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে তিতাস নদীতে একটি পাকা ঘাটলা রয়েছে। এই ঘাটলায় প্রতিদিন শত শত মানুষ গোসল করে। ঘাটলাটি থেকে আরো ৩০-৪০ ফুট উত্তরে নদীর মধ্যে মাটি দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধটি রক্ষার জন্য নদীর মধ্যে মুলির (বাঁশ) বেড়া ও বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে।
নৌকার মাঝি সোলেমান জানান, প্রতিদিন এই নদী দিয়ে শত শত নৌকা চলাচল করে। এই বাঁধের কারণে নৌকা চলাচল সমস্যা হবে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাঁধ নির্মাণকারীদের একজন মাসুদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘যে জায়গায় বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেটি আমাদের বাড়ির অনেকের জমি। আমারও ৩০ শতক জমি আছে বাঁধের মধ্যে। মাছ চাষ করতে এই বাঁধ দেওয়া হয়েছে।’
চান্দেরচর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আমান উল্লাহ জানান, তিতাস নদীতে বাঁধ দেওয়ার খবর পেয়ে তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তাঁর সঙ্গে আলাপ করে জায়গাটি পরিমাপ করা হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইউসুফ হাসান জানান, নদীতে কোনো রকম বাঁধ দেওয়ার সুযোগ নেই। বিশেষ করে নৌচলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। জমির মালিকরা বলছে এটা তাদের জায়গা, কিন্তু নদীর প্রবাহ ব্যাহত হয় এমন কাজ করা যাবে না। বাঁধ অপসারণ করতে বলা হয়েছে। তা না করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
হাওর এলাকায় বিনাচাষে মাসকলাই উৎপাদন বিষয়ে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৩ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা হাওরে মাঠ দিবসের আয়োজন করে কিশোরগঞ্জ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) এর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ড. দেবাশীষ সরকার। গাজীপুর বারির চীফ সাইন্টিফিক অফিসার (সিএসও) ড. মো. মাজহারুল আনোয়ার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অতিরিক্ত উপ পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আহমেদ উল্লাহ, গাজীপুর বারির উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. অপূর্ব কুমার চাকী ও ড. তাসলিমা জাহান।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন কিশোরগঞ্জ বারি সরেজমিন গবেষণা বিভাগের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন। মাঠ দিবসে স্থানীয় ৮০ জন কৃষক অংশগ্রহণ করেন।
কিশোরগঞ্জ বারি সরেজমিন গবেষণা বিভাগের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন জানান, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল ইফাদের অর্থায়নে সার্ক কৃষি কেন্দ্রের সমন্বয়ে কনসর্টিয়াম ফর স্কেলিং আপ ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার ইন সাউথ এশিয়া (C-SUCSeS) প্রকল্পের মাধ্যমে এ বছরই প্রথম কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা হাওরে দশ একর জমিতে এ জাত আবাদ করা হয়। স্থানীয় কৃষক মো. কুতুব উদ্দিন ও আবুল হাসেম মুন্সির নেতৃত্বে ২৫ জন কৃষকের মাঠে গত বছরের ৩০ অক্টোবর এ জাতটি আবাদ করা হয়।
বারির মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ড. দেবাশীষ সরকার জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৯৬ সালে বারি মাস-৩ নামে মাসকলাইয়ের একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করে। স্থানীয় জাতের চেয়ে এই বীজের আকার বড় হয়। জীবনকাল ৮০-৮৫ দিন। এতে আমিষের পরিমান ২১-২৪ শতাংশ। ফলন হেক্টর প্রতি ১৫০০-১৬০০ কেজি। এ জাত হলদে মোজাইক রোগ প্রতিরোধী । এ জাতের শুটিতে ঘন শুং আছে। হাওর এলাকার যে সমস্ত জমি থেকে অক্টোবরের শেষে পানি নেমে যায়, সে সকল জমিতে এটি চাষ করলে সহজেই বোরো ধান আবাদ করা যায়। ছিটিয়ে বপন করলে হেক্টর প্রতি ৩৫-৪০ কেজি বীজ লাগে। বিঘা প্রতি ইউরিয়া সার লাগে ৫-৬ কেজি, টিএসপি ১০-১৩ কেজি, এমওপি ৫-৬ কেজি, জিপসাম ৭-৮ কেজি, বোরন ১-১.৫ কেজি। সকল সার জমিতে বীজ বপনের আগে প্রয়োগ করতে হয়।
বালিখলা হাওরে বিনাচাষে নতুন এ জাতের মাসকলাইরে জমি পরিদর্শন করে মহাপরিচালক বলেন, এ জাতটি কৃষকদের মাঝে বিপুল উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। এর ফলনও আশানুরূপ হয়েছে।
কৃষক কুতুব উদ্দিন জানান, নতুন মাসকলাইয়ের জাতটি সম্পূর্ণ বিনাচাষে আবাদ করা হয়েছে। এর আগে কৃষি গবেষণা বিভাগ কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ এবং বিনামূল্যে বীজ দিয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই ফসলের কর্তন শুরু হবে। ফলন ভালো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এটি দেখে স্থানীয় আরও অনেক কৃষক এই মাসকলাই চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
অনলাইন ডেস্ক :
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বার্তা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য কিছু জাতীয়ভিত্তিক সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্রে রেখে ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে ৬টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব কমিশন আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে।
আজ ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে এবং হাজারো মানুষের আত্মদানের বিনিময়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের বার্তা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য একটি অভূতপূর্ব সময় ও সুযোগ আমরা অর্জন করেছি। এর বাস্তবায়ন তথা বাংলাদেশে ফ্যাসিজম বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রোধ এবং জনমালিকানা ভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে কিছু জাতীয়ভিত্তিক সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। উক্ত সংস্কার ভাবনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি বলেন, আমরা যেহেতু জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের মালিকানায় বিশ্বাস করি, সেহেতু নির্বাচনব্যবস্থার উন্নয়নে আমাদের সংস্কার ভাবনায় গুরুত্ব পেয়েছে। আমরা মনে করি নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বা পরিবার বা কোনো গোষ্ঠীর কাছে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আশঙ্কা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশন সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা আমরা ভাবছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন- এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জনমালিকানা ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এর পাশাপাশি করে সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন আমরা অনুভব করছি।
এসব বিষয়ে সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে কমিশনগুলো পরিচালিনার দায়িত্ব দিয়েছি। এরপর আরও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রাখবো।
প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সরফরাজ চৌধুরী, বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।
‘এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শসভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র-শ্রমিক-জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।’
ড. ইউনূস বলেন, পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি এবং এটি পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আমরা ধারণা করছি। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পরামর্শসভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।
‘এই আয়োজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তা বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্র পুনঃনির্মাণ তাগিদের ঐক্যবন্ধনে গোটা জাতিকে শক্তিশালী ও আশাবাদী করে তুলবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’