চলারপথে রিপোর্ট :
দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৬টি আসনে ৫৪ জন প্রার্থী মনোয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-(নাসিরনগর) ৯ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য বি.এম. ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম।
বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রোমা আক্তার ও বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ.টি.এম মনিরুজ্জামান সরকার।
জাতীয় পার্টি থেকে শাহানুল করিম, সদ্য বহিস্কৃত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা (স্বতন্ত্র প্রার্থী) সৈয়দ এ.কে এমরামুজ্জামান, জাকের পার্টির জাকির হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ইসলাম উদ্দিন, ওয়ার্কার্স পার্টির মোহাম্মদ বকুল হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) ১০ প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থীরা হলেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম সাজু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈনউদ্দিন মঈন (বিদ্রোহী স্বতন্ত্র), অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ (জাতীয় পার্টি), অ্যাড. জিয়াউল হক মৃধা (স্বতন্ত্র), ছৈয়দ জাফরুল কদ্দুস (বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন), মাইনুল হাসান, (তৃণমূল বিএনপি), রাজ্জাক হোসেন (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), আবুল হাসনাত (ইসলামী ঐক্যজোট), জহিরুল ইসলাম জুয়েল (জাকের পার্টি), কাজী মাসুদ আহম্মেদ (বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩-(সদর-বিজয়নগর) আসন:এই আসনে মোট ১২ জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ফিরোজুর রহমান ওলিও (বিদ্রোহী স্বতন্ত্র), রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া (জাতীয় পার্টি), সেলিম কবির (জাকের পার্টি), সৈয়দ নূরে আজম ( ইসলামী ফ্রন্ট), আব্দুর রহমান খান ওমর (জাসদ), মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদি (বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন), জহিরুল হক চৌধুরী (স্বতন্ত্র), কাজী জাহাঙ্গীর (স্বতন্ত্র), সৈয়দ মাহমুদুল হক আক্কাস (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), সোহেল মোল্লা (বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি), জামাল রানা (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪-(কসবা-আখাউড়া) ৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুইবারের সংসদ সদস্য ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তারেক এ.আদেল (জাতীয় পার্টি), জাহাঙ্গীর আলম (জাকের পার্টি), শাহীন খান (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), বজলুর রহমান মিলন (বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টি), সৈয়দ জাফরুল কদ্দুস (বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর): ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ফয়জুর রহমান বাদল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী) হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম মমিনুল হক সাঈদ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার নজরুল ইসলাম ভূইয়া মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া অন্য প্রার্থীরা হলেন, মোবারক হোসেন দুলু (জাতীয় পার্টি), অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আক্তার হোসেন সাঈদ (জাসদ), মেহেদী হাসান (ইসলামী ঐক্যজোট) মো. জামাল সরকার (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি), মো. মোস্তাক (স্বতন্ত্র), মো.জামসেদ মিয়া (জাকের পার্টি) ও ছৈয়দ জাফরুল কদ্দুস বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, মুফতী হাবিবুর রহমান (তৃণমূল বিএনপি)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬-(বাঞ্ছারামপুর) এ আসনে মোট ৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ.বি তাজুল ইসলাম। অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন (জাতীয় পার্টি), আব্দুর আজিজ (জাকের পার্টি), সফিকুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), কবির মিয়া (বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি), সফিকুল ইসলাম (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি)।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সরকার ঘোষিত দেশব্যাপী শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ। আজ ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিলো অবস্থান, কালো ব্যাজ ধারণ ও দোয়া। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে জমায়েত হতে থাকেন। এরপর কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। দুপুরে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন ওলামা সমন্বয় পরিষদ নেতা মাও. আবদুল্লাহ। এসময় জেলা আওয়ামী লীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি মো.হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সহ-সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন খান খোকন,যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এড. মাহবুবুল আলম খোকন, এড. তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত,সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মো.মহসিন,তানজিন আহমেদ,দপ্তর সম্পাদক মো.মনির হোসেন,ত্রাণ সম্পাদক আবদুল খালেক বাবুল,বন পরিবেশ সম্পাদক শাহআলম আলম,সাংস্কৃতিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম,বিজ্ঞান প্রযুক্তি সম্পাদক অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল,ধর্ম সম্পাদক মাও.আবুল কালাম,যুব ক্রীড়া সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ,উপদপ্তর সম্পাদক সুজন দত্ত,কার্যকরী সদস্য জায়েদুল হক,জাহাঙ্গীর আলম,মাহমুদুর রহমান জগলু,সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এমএএইচ মাহবুব আলম,জেলা যুবলীগ সভাপতি এড.শাহানুর ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক এড.সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস,জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি এড.লোকমান হোসেন,সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান আরিফ,জেলা কৃষকলীগ যুগ্ম-আহবায়ক সেলিম ভূঞা,জেলা শ্রমিকলীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফ খান আশা,জেলা তাতী লীগ সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দুলাল,জেলা মৎস্যজীবী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহপরান।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি
অনলাইন ডেস্ক :
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমার দলের নেতাকর্মীদের সবসময় বলি, ক্ষমতায় থাকলে বিনয়ী হতে হয়, মাথা নিচু করে চলতে হয়, বিনয় মানুষকে মহান করে।’
আজ ১৫ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে চট্টগ্রামের ষোলশহরে এলজিইডি ভবনের কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী মিলনায়তনে রাঙ্গুনিয়া সমিতি আয়োজিত সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি সবসময় এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। সরকারের মন্ত্রী ও দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমি প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রামে ও রাঙ্গুনিয়ায় যাই।’
কেউ স্বীকার করুক বা না করুক গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে ভুলত্রুটি থাকবে, ভুলত্রুটি মানুষেরই হয়। পৃথিবীর কোনো সরকার শতভাগ নির্ভুল কিছু করতে পারে না। পাঁচশ’ বছর অতীতের সরকারেও ভুল ছিল, আগামী পাঁচশ’ বছর পরের সরকারেরও ভুল থাকবে। তবে দেখতে হবে সরকার দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে কিনা।’
আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য সবার সহযোগিতা চেয়ে তথ্যমন্ত্রী নিজ নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সুধীজনের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি সব দল ও মতের মানুষের এমপি হওয়ার চেষ্টা করেছি। গত সাড়ে ১৪ বছর সবার জন্য আমার দুয়ার খোলা ছিল। ভবিষ্যতেও যদি কোন নিবেদন নিয়ে আপনাদের দুয়ারে আসি দয়া করে আপনাদের দুয়ারটাও দলমত নির্বিশেষে খোলা রাখবেন, সেটিই আপনাদের কাছে প্রত্যাশা।’
রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়ন নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে এমন কোনো স্কুল, কলেজ ও আলিয়া মাদ্রাসা নেই নতুন ভবন হয়নি। এমন কোনো বেসরকারি মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডা নেই বরাদ্দ পায়নি। নতুনভাবে ২৮টি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। কালিন্দীরাণী সড়ক ও মরিয়মনগর ডিসি সড়ক প্রশস্তকরণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কৃষিপ্রধান জনপদ রাঙ্গুনিয়ায় চাষাবাদে সুবিধার জন্য তিনটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। কোনো জমি অনাবাদী রাখা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আগেও অনেকে রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত এমপি ও মন্ত্রী ছিল, তারা কতটুকু করতে পেরেছেন আপনারা জানেন। আমি চেষ্টা করেছি রাঙ্গুনিয়ার মানুষের কল্যাণে কাজ করার। কয়েক হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি হয়েছে। আমার এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
রাঙ্গুনিয়া সমিতির আহ্বায়ক খালেদ মাহমুদের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চুয়েট ভিসি ড. রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী, এলজিইডির তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী তফাজ্জল হোসেন, পরিবেশ অদিপ্তরের পরিচালক হিন্দোল দাশ, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, জেলা পরিষদ সদস্য আবুল কাশেম চিশতি, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আলহাজ্ব জহির আহমদ চৌধুরী, সিডিএ’র বোর্ড সদস্য মুহাম্মদ আলী শাহ, জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার আসলাম খান, আবুধাবী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল প্রমুখ।
অনলাইন ডেস্ক :
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল ২৪ অক্টোবর বুধবার রাতে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিল শেখ হাসিনার পতনের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর পরদিনই নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এ সিদ্ধান্তে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অজ্ঞাত স্থান থেকে গতকাল রাতেই বিবৃতিতে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান নিষিদ্ধকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়েছেন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে সংগঠনটির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শক্তি ছিল ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠন। তবে স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের অনেকের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর এই ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্ব, মারামারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক বাণিজ্য, বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচিতে হামলা, দমনপীড়ন, অস্ত্রবাজির মতো অপরাধের শত শত অভিযোগ ওঠে।
এই সময়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অন্তত অর্ধশত প্রাণহানি ঘটেছে। ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাস এবং ২০১৯ সালে আবরার হত্যায় সংগঠনটি ধিকৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘গেস্ট রুম’ নামে নিপীড়নের কুখ্যাতিও রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ ছিল দমনকারীর ভূমিকায়। গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান শুরুর পর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মারমুখী ছিল। গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের নজিরবিহীন মারধর করে, যা থেকে সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিনেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর অভ্যুত্থান দমনে অস্ত্র হাতে রাজপথে দেখা যায়। অভ্যুত্থানের সময় এবং শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র পাওয়া যায়। মধ্য জুলাই থেকেই অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগকে বের করে দিয়েছে অভ্যুত্থানকারীরা। ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
প্রজ্ঞাপনেও ছাত্রলীগকে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে হত্যা, নির্যাতন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল ছাত্রলীগ। এসবের প্রমাণ দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীর অপরাধ আদালতেও প্রমাণ হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও জনগণের ওপর আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী; অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক, উস্কানিমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। সরকারের কাছে এসব কর্মকাণ্ডের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন নামাঙ্কিত রাজনৈতিক শাখা-২-এর জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮-এর উপধারা (১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।
আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী, নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদনে ৩০ দিন সময় পাবে ছাত্রলীগ। আবেদন করলে সরকার তা ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপিলের সুযোগ পাবে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ২০ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার কার্যালয় বন্ধ করবে সরকার। ব্যাংক হিসাব বা অন্য সম্পদ জব্দ হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা দেশ ত্যাগ করতে পারবে না। সংগঠনের পক্ষে বা সমর্থনে বিবৃতি, বিজ্ঞপ্তি, প্রকাশনা, প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন বা জনসমক্ষে বক্তৃতা নিষিদ্ধ হবে।
গত ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার একই আইনে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। তাদের আবেদনে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৮ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধে বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিলের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নুসরাত তাবাসসুম বলেন, জীবনের অন্যতম আনন্দের দিন আজ। ছাত্রলীগ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ ছিল না। এই ছাত্রলীগ ১৫ জুলাই আমাদের ওপর হামলা করেছে। সারাদেশে তারা অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে শহীদ করেছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায়। আর কোনো ছাত্র সংগঠন যেন এমন সন্ত্রাসী না হয়।
সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, যারা কথায় কথায় আন্দোলনে জঙ্গিবাদ খুঁজত, তাদেরকেই জঙ্গি ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের গর্ত থেকে বের করে ধোলাই দিতে হবে।
আশরিফা খাতুন বলেন, আবু সাঈদের মৃত্যুর পর ছাত্রলীগ রাজাকার দমন হয়েছে বলে উল্লাস করেছিল। যখনই কোনো ন্যায্য দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে দাঁড়িয়েছি, ছাত্রলীগ মেরেছে। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য গেলে, সেখানেও মারত। কোনোভাবেই ছাত্রলীগ যেন ফিরতে না পারে।
অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে না বললেও উচ্ছ্বাস দেখায়নি। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ছাত্রলীগ খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি, গণহত্যাসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। সব জঙ্গি সংগঠন মিলে যত মানুষ খুন করেছে; ছাত্রলীগ এককভাবে বেশি করেছে। ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছে এবং শহীদ হয়েছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে ছাত্র রাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। সুস্থ রাজনীতিচর্চার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধই সমাধান নয়। সংগঠনটির যারা সন্ত্রাস করেছে, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক ডা. সাদেক আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করেছে ছাত্রলীগ। সন্ত্রাস, নিপীড়ন, নির্যাতনের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে চায় না। ছাত্রলীগের অপরাধীদের বিচার চায়।
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ড বলেন, ছাত্রলীগের নিষিদ্ধকে সাধুবাদ জানাই। নিষিদ্ধ হলেই অপতৎপরতা বন্ধ হবে না। অপরাপর সংগঠনের সঙ্গে আলাপে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। ছাত্রলীগের তৎপরতা বন্ধে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বোস বলেন, নির্বাহী আদেশে কয়েক দিন আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ক্ষমতার পরিবর্তনে তা বদলেও গেছে। একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা কতখানি ফলপ্রসূ হবে, জানি না। নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে কতটুকু নিঃশেষ করা যাবে, জানি না। ছাত্রলীগকে মোকাবিলা করতে হবে আদর্শের জায়গায় এবং মাঠের রাজনীতিতে। রাজনৈতিকভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
গ্রীষ্মকালীন টমেটোর ভালো হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় চাষীদের মুখেও তৃপ্তির হাসি। এ বছর জেলায় প্রায় ৫১ কোটি টাকার গ্রীষ্মকালীন টমেটো বিক্রি করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ১২৮ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৫ হেক্টর, সরাইল উপজেলায় ৫ হেক্টর, কসবা উপজেলায় ২ হেক্টর, নবীনগর উপজেলায় ১ হেক্টর, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ১ হেক্টর, আখাউড়া উপজেলায় ৩ হেক্টর, আশুগঞ্জ উপজেলায় ১ হেক্টর, বিজয়নগর উপজেলায় ৮ হেক্টর ও নাসিরনগর উপজেলায় ৫২ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করা হয়েছে।
তবে জেলার হাওর বেষ্টিত উপজেলা নাসিরনগরে ৫২ হেক্টর জমিতে (৭.৫ বিঘায় ১ হেক্টর) এ বছর গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করা হয়েছে। চাষীরা তাদের জমিতে বারি-৮ ও মঙ্গলরাজা জাতের টমেটোর চাষ করেছেন। চলতি বছর শুধু নাসিরনগর উপজেলাতেই প্রায় ২০ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওর বেষ্টিত নাসিরনগর উপজেলায় চলতি বছর প্রায় ২২ হেক্টর (৪০০ বিঘা) জমিতে টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। টমেটোর বাগানগুলো বেশীর ভাগই করা হয়েছে বাড়ির আঙিনা ও উঁচু জায়গায়। ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। বাগান থেকেই আকার ও মান ভেদে প্রতি কেজি টমেটো পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে।
উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের কৃষক হাসিম মিয়া জানান, সারা বছরই তার এই জমি পতিত থাকতো। গত প্রায় তিন মাস আগে কৃষি অফিসের লোকজন তার বাড়িতে এসে বলেন, তিনি যদি তার পতিত জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করে তাহলে তিনি লাভবান হবেন। তাদের পরামর্শে তিনি তার ৪০ শতাংশ জমিতে টমেটোর চারা রোপন করেছেন। তাতে তার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যেই তিনি টমেটো বিক্রি শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি দুই লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন।
উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমি ৬০ শতাংশ জায়গা বর্গা নিয়ে ৫৫ হাজার টাকা খরচ করে গ্রীষ্মকালীর টমেটোর চাষ করেছি। এ পর্যন্ত আমি তিন লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। একই ইউনিয়নের কৃষক রফিক মিয়া বলেছেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি বাড়ির আঙ্গিনার ২৫ শতাংশ পতিত জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করেছেন। টমেটোর ফলন ও ভালো হয়েছে। তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন।
বিভিন্ন চাষীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে খরচ কম, লাভ বেশী। তাই তারা টমেটোর চাষ করেছেন। আগামীতে উপজেলায় টমেটোর চাষ আরো বাড়বে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় চলতি বছর ১২৮ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করা হয়েছে। আমারা জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের উদ্যোক্তা তৈরি করছি। টমেটোর ফলনও এ বছর ভালো হয়েছে। আশা করি এ বছর জেলায় প্রায় ৫১ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি করা হবে। ফলন বাড়াতে আমরা চাষীদেরকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।