ভূস্বর্গ কাশ্মীরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশে’র সন্ধানে

আন্তর্জাতিক, 18 December 2023, 930 Views,

ডেস্ক রিপোর্ট :

banner

বেশ কয়েক বছর আগে এই তথ্যটা আমাকে প্রথম দিয়েছিলেন আজমত হোসেইন, যে কাশ্মীরি যুবক ছিলেন হুরিয়ত কনফারেন্সের প্রয়াত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির সর্বক্ষণের সঙ্গী আর ঘনিষ্ঠ অনুচর। বাংলাদেশ নিয়ে খবরাখবর করি শুনে তিনি বলেছিলেন, “জানেন কি, আমাদের কাশ্মীরেও আছে বাংলাদেশ নামে আস্ত একটা গ্রাম?”

শুধু তা-ই নয়, আরো জেনেছিলাম এই ‘বাংলাদেশ’ নামে গ্রামটা নাকি গিলানি সাহেবের জন্মস্থান জুরিমাঞ্জ-এর ঠিক পাশেই! পরে গুগল ম্যাপেও খুঁজে বের করি সেই বাংলাদেশ, তবে বিশদে খোঁজ নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও নানা ব্যস্ততায় সে কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।

মাসকয়েক আগে কাশ্মীরেরই একটা খবরের কাগজে চোখে পড়ে, সেই ‘বাংলাদেশ’ গ্রামের লোকেশনে উলার লেকের ধারেই শুরু হয়েছে বিগ বাজেট একটি দক্ষিণী ছবির শ্যুটিং। এমন কী, বলিউড ছবিরও সেট পড়েছে ‘বাংলাদেশে’ – এমনটাও জানানো হয়েছিল।

বুঝতে পারি, কাশ্মীরের ‘বাংলাদেশ’ ইদানীং ধীরে ধীরে পরিচিতি পাচ্ছে, ওই এলাকার অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও আসতে শুরু করেছেন দলে দলে।

তখনই স্থির করে ফেলি, কীভাবে এই ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ হল, সেটা জানতে একবার যেতেই হবে ওই গ্রামে। অবশেষে দীর্ঘদিনের লালিত সেই স্বপ্নটা পূর্ণ হল এ মাসের গোড়ায়।

শ্রীনগর শহর থেকে এমনিতে ওই জায়গাটার দূরত্ব আশি কিলোমিটার। তবে নানা কারণে সোপোর-বান্দিপোরা রোড হামেশাই বন্ধ থাকে বলে প্রায়শই পুরো উলার লেক পরিক্রমা করে পৌঁছতে হয় সেই গ্রামে – রাজধানী থেকে পাড়ি দিতে হয় অন্তত সোয়াশো কিলোমিটার রাস্তা।

তবে বিস্তর মেহনত করে একবার ‘বাংলাদেশে’ পৌঁছলে বোঝা যায়, কেন গ্রামটি বাইরের দুনিয়ার কাছে এভাবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

গ্রীষ্মের পিক সিজনে তো বটেই, ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডাতেও সেখানে এখন পর্যটকদের ঢল ও ট্রেকারদের তাঁবু।

প্রচলিত আছে, মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরই না কি কাশ্মীর নিয়ে একদা বলেছিলেন :
আগর ফিরদৌস বার রু-য়ে জমিন অস্ত
হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত!
বাংলায় এই অমর পংক্তির অনুবাদ করা যেতে পারে, ‘এই পৃথিবীর বুকে কোথাও যদি স্বর্গ থেকে থাকে তাহলে তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানেই!’
এখন এই লাইনগুলো আসলে কবি আমীর খসরুর লেখা, না কি অন্য কারও – তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।
কিন্তু এই ‘জন্নত-ই-জাহান’ বা ‘ভূস্বর্গ’ খেতাবের সবচেয়ে বড় দাবিদার যে কাশ্মীর – তা নিয়ে বোধহয় বিন্দুমাত্র বিতর্ক নেই!
আর সেই ভূস্বর্গের বুকে আজ বাহান্ন বছর ধরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশ’ও যে বহাল তবিয়তে টিঁকে আছে এবং ক্রমশ বিখ্যাত হচ্ছে, এ খবরও রীতিমতো রোমাঞ্চ জাগায় বই কী!
যেভাবে এই নামকরণ
ডিসেম্বরের এক হিমেল সকালে যখন বান্দিপোরা জেলার এই বাংলাদেশ গ্রামে পৌঁছলাম, তখন মুষলধার বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে জনপদ। উলার লেক থেকে আসা ঠান্ডা হওয়ায় হাত-পা অবশ হওয়ার উপক্রম।
উলারের অন্য পারে মাউন্ট হরমুখের তুষারধবল চূড়া কুয়াশাতে আবছায়া। আর লেকের বুকে রাজহাঁসের ঝাঁক আর সাইবেরিয়া থেকে আসা পরিযায়ী পাখিদের উদ্দাম দাপাদাপি।
বাংলাদেশ গ্রামের কূলে কয়েকটা নৌকা ওই তুমুল বৃষ্টিতেও মাছ ধরতে ব্যস্ত। আর পর্যটকদের জন্য চালু হওয়া শিকারাগুলো লেকের জলে ভেসে বেড়াচ্ছে ইতিউতি।
গ্রামবাসীদের দেখা মিলল দুপুরের ঠিক আগে আগে, যখন জোহরের নামাজের ঠিক আগে লোকজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্থানীয় মসজিদের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন।
কীভাবে তাদের গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ হল, সেই প্রশ্নের জবাবে নবীন যুবক নিসার আহমেদ দার কিংবা প্রবীণ পঞ্চায়েত সদস্য গুলাম আহমাদের কাছে মোটামুটি একই রকম বিবরণ পেলাম।
আসলে পাশের জুরিমাঞ্জ গ্রামে (যেটা আবার সৈয়দ আলি শাহ গিলানির জন্মস্থান, তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলে খাল খনন বিভাগের একজন ভূমিহীন শ্রমিক) ’৭১ সালের শীতে এক ভয়ঙ্কর অগ্নিকান্ড হয়েছিল।
সেই আগুনে প্রায় পুরো গ্রামটাই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গ্রামের এক পাশে উলার লেকের কোল ঘেঁষে অনেকটা ফাঁকা জমি ছিল, তখন সেখানেই সর্বস্ব-হারানো পরিবারগুলোকে নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয় সরকার।
এরপর প্রশ্ন ওঠে, নতুন এই জনপদটা তো জুরিমাঞ্জ থেকে বেশ খানিকটা দূরে – তো এই গ্রামের নাম কী দেওয়া হবে?
তখন একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, সারা পৃথিবীর সঙ্গে জুরিমাঞ্জও সে খবর রেডিওতে শুনেছে।
সেই নবীন রাষ্ট্রকে সম্মান জানাতে নতুন গ্রামটির নামও দেওয়া হবে ‘বাংলাদেশ’ – এমনটাই সেদিন স্থির করেছিলেন ওই জনপদের বাসিন্দারা।
বাংলাদেশের নামে গ্রামটির নামকরণের মূল আইডিয়াটা কার, এটা নিয়ে অবশ্য দুরকম ব্যাখ্যা পাওয়া গেল।
নিসার আহমেদ দার জানালেন, তিনি বাপ-চাচাদের কাছে শুনেছেন তখন কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই না কি পরামর্শ দিয়েছিলেন নতুন গ্রামটির নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখা হোক, আর গ্রামবাসীরা সানন্দে সেটা মেনেও নিয়েছিলেন।
তুলনায় প্রবীণ গুলাম আহমাদ বা গুলাম নবি বাট অবশ্য বললেন বাইরের কারও পরামর্শে নয় – গ্রামের তখনকার মুরুব্বিরা মিলেই না কি স্থির করেছিলেন নতুন জনপদের নাম দেবেন তারা বাংলাদেশ, সদ্য স্বাধীন দেশটিকে স্বীকৃতি জানাবেন।
দুটোর যে কোনও ব্যাখ্যাই সত্যি হতে পারে, তবে ‘বাংলাদেশ’ নামটা নিয়ে ওই গ্রামের যে আলাদা একরকম গর্ব আছে তা টের পেতে কোনও অসুবিধা হয় না।
প্রথম দিকে নামটা মুখে মুখে চালু থাকলেও ২০১০ সালে বান্দিপোরা জেলার ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার অফিসও বাংলাদেশ নামটিকে নথিভুক্ত করেছে, এখন প্রায় ৭০টি পরিবারের সাড়ে তিনশো লোকের বসবাস সেখানে।
গ্রামের আশি বছরের প্রবীণা আজাইব বিবি বিকেলের দিকে খুব যত্ন করে নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসিয়ে কাশ্মীরের বিখ্যাত ‘কাহওয়া চা’ খাইয়ে আপ্যায়ন করছিলেন।
তাঁর সন্তানদের মধ্যে দু’জন মূক ও বধির, কোনও ক্রমে হাঁস ও মুরগী প্রতিপালন করে তিনি নিজের বিরাট সংসার চালান।
এত কষ্টের মধ্যেও আজাইব বিবি হাসিমুখে বলছিলেন, “আমাদের গ্রামের নামটা কিন্তু একেবারে অন্য রকম! গোটা কাশ্মীরে এরকম নাম আপনি আর কোথাও পাবেন না!”
গ্রামের সব লোকজন মাথা নেড়ে তাঁর কথায় সায় দেন, জানাতে ভোলেন না এই যে অন্য একটি দেশের নামে তাদের গ্রামের নাম – বিষয়টা তাদের অন্য রকম একটা ভালো লাগা দেয়!
বেড়াতে বা কাজে কাশ্মীরের অন্যত্র গেলেও তারা প্রথমেই বলেন, “আমরা বাংলাদেশ গ্রাম থেকে এসেছি!” আগে লোকজন শুনে একটু অবাক হত, কিন্তু এখন আস্তে আস্তে সবাই চিনে গেছে এই অভিনব নামের গ্রামটিকে।
‘বাংলাদেশে’র পুনর্জন্ম
তবে প্রায় বাহান্ন বছর আগে এই নামকরণ হলেও পরবর্তী প্রায় চার দশক ‘বাংলাদেশ’ একটি অখ্যাত জনপদ হিসেবেই রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হালে সেই ছবিটা খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।
আর এর পেছনে খুব বড় ভূমিকা রয়েছে উলার লেককে ঘিরে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পর্যটন প্রসারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার।
উলার লেক হল সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে বৃহত্তম মিঠা পানির লেক, কাশ্মীরের সুপরিচিত ডাল লেকের অন্তত সাড়ে আট গুণ এর আয়তন।
কিন্তু শ্রীনগরের ডাল লেক পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হলেও তুলনায় উলারে ‘ট্যুরিস্ট ফুটফল’ অনেক কম, যদিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উলারের আকর্ষণ বোধহয় বেশি ছাড়া কম নয়।
সম্প্রতি সেই ছবিটাই বদলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ‘উলার কনজার্ভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’, সরকারি অর্থায়ন আর বেসরকারি সহযোগীদের নিয়ে তারা নতুন করে আঁকছেন উলার লেকের চালচিত্র।
“আমাদের এই প্রকল্পে একটা খুব বড় জায়গা নিয়ে আছে বাংলাদেশ গ্রাম, কারণ ওই এলাকাটার পর্যটন সম্ভাবনা অপরিসীম”, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মুদাসির মেহমুদ।
গত দু-তিন বছরের মধ্যে ‘বাংলাদেশে’র সৌন্দর্যায়নে তারা বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছেন।
জুরিমাঞ্জ-বাংলাদেশ-ওয়াতলাব গ্রামগুলোকে ঘিরে উলারের তীর ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে একটি আধুনিক বুলেভার্ড।
ইতিমধ্যেই লেকের বুক চিরে তৈরি হয়েছে প্রায় দুশো মিটার লম্বা একটি বোর্ডওয়াক, যেটির ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়া যায় একদম উলারের বুকে। পদ্মের বনের ওপর দিয়ে ডানা ঝাপটাতে দেখা যায় নানা প্রজাতির মাইগ্রেটরি বার্ডদের।
‘বাংলাদেশ’ গ্রামের বাসিন্দারা এই বোর্ডওয়াকেরই নাম দিয়েছেন ‘ভিউপয়েন্ট’।
নিসার আহমেদ বলছিলেন, “বছরতিনেক আগে এই ভিউপয়েন্ট খোলার পর থেকেই হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে ট্যুরিস্টদের আনাগোনা খুব বেড়ে গেছে।”
“ভারতের নানা প্রান্ত থেকে তো বটেই, অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া-ইউরোপ থেকেও আজকাল দলে দলে পর্যটকরা আসছেন।”
গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গুলাম আহমাদ জানাছেন, ২০২২ আর ২০২৩র গ্রীষ্মে এমন কী বাংলাদেশ থেকেও জনাকয়েক পর্যটক তাদের গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। মানে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরের বাংলাদেশ দেখতে!
এমনিতে বাংলাদেশ গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা অনেকটাই উলার লেক-নির্ভর।
তারা কেউ লেকে মাছ ধরেন, কেউ আবার লেকের তীরে হাঁসের চাষ করেন।
অনেকে আবার নৌকায় লেকের বুক থেকে তুলে আনেন ওয়াটার চেস্টনাট, জলের যে কাঁটাওলা ফসল অনেকটা বাংলার ‘পানিফলে’র মতো দেখতে। কাশ্মীরিরা স্থানীয় ভাষায় বলেন ‘সিংগারা’।
উলার লেকের বুকে পদ্মবন থেকে পদ্মের কন্দ বা ‘নদরু’ তুলে আনাটাও বাংলাদেশে অনেকেরই পেশা। এই নদরু দিয়ে তৈরি ‘ইয়াখনি’ নামে একটি পদ কাশ্মীরে খুবই জনপ্রিয়, আর বাংলাদেশের ‘নদরু’ এখন পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি-মুম্বাই-ব্যাঙ্গালোরের বাজারেও।
সব মিলিয়ে উলার লেকের তীরে একদা অপরিচিত ‘বাংলাদেশ’ যেন সম্প্রতি নতুন জীবন পেয়েছে, প্রতিবেশী দেশের নামে নামাঙ্কিত গ্রামটির নামডাক ছড়িয়ে পড়ছে দূর-দূরান্তে।
“রাস্তাটা যদি আর একটু ভাল করা হয় আর উলার লেকে নিয়মিত ড্রেজিং-টা চালু রাখা যায় তাহলে দেখবেন আমাদের বাংলাদেশ ট্যুরিস্টদের সামলাতে কূল পাবে না”, একগাল হেসে বলেন প্রবীণ গ্রামবাসী গুলাম নবি বাট।
‘হামলা আওয়ার খবরদার!’
বাংলাদেশ গ্রাম থেকে সন্ধ্যার দিকে যখন শ্রীনগরে ফিরছি, তখনও কিন্তু একটা খটকা রয়েই গিয়েছিল।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ‘ইন্ডিয়া’র বিরোধিতা এবং পাকিস্তানের প্রতি প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি নিয়ে এত কথা শোনা যায়, সেই কাশ্মীর কীভাবে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন হওয়া একটি দেশের জন্মকে ‘সেলিব্রেট’ করেছিল সে প্রশ্নটার জবাব কিন্তু সেদিন বাংলাদেশ গ্রামে পাইনি।
পরে কাশ্মীরি গবেষক ও ‘কে ফাইল’ গ্রন্থের লেখক বশির আসাদ এর একটা চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিলেন।
তিনি জানাচ্ছেন, “সাতচল্লিশে ভারত ভাগ থেকে পরবর্তী তিরিশ বছর কিন্তু সাধারণ কাশ্মীরিদের সমর্থন পুরোপুরি ভারতের দিকেই ঢলে ছিল। ছবিটা তখন মোটেই আজকের মতো ছিল না, বরং কাশ্মীরিরা তখন সবাই পাকিস্তানি দখলদারির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন।”
“এমন কী সাতচল্লিশ সালের শেষ দিকেই যখন পাকিস্তানি হানাদাররা কাশ্মীরে হামলা চালায়, তখন শ্রীনগর-সহ গোটা ভ্যালিতে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছিল ‘হামলা আওয়ার খবরদার, হাম কাশ্মীরি হ্যায় তৈয়ার’! মানে তারা তখন পাকিস্তানিদের উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত ছিলেন!”
ফলে একাত্তরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের দু-টুকরো হওয়াকে কাশ্মীরের একটি জনপদ যে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের মধ্যে দিয়ে উদযাপন করেছিল, তাতে বশির আসাদ এতটুকুও বিস্মিত নন।
“এমন কী সাতাত্তর সালের আগে জামাত-ই-ইসলামীও কিন্তু কাশ্মীরে সেভাবে পায়ের তলায় জমি পায়নি। ফলে একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে জামাতের নির্যাতন-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়”, বলছিলেন তিনি।
বশির আসাদ আরও মনে করেন, ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে উগ্রপন্থা আর জঙ্গীবাদের রমরমা শুরু হওয়ার আগে কাশ্মীর ছিল সম্ভবত সমগ্র উপমহাদেশেই সবচেয়ে উদার ও সহিষ্ণু একটি সমাজ – কাজেই সেখানে অবাধ গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে চেতনাও ছিল খুব শক্তিশালী।
এছাড়া ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের আর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও হয়তো আছে – যার আভাস নিহিত ছিল “কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই এই পরামর্শ দিয়েছিলেন”, নিসার আহমেদ দারের এই কথাতে।
সে সময় জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ মীর কাশিম।
কংগ্রেসের এই সিনিয়র নেতা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কাশ্মীরে কংগ্রেসের সংগঠন গড়ে তোলার কৃতিত্ব অনেকে তাঁকেই দিয়ে থাকেন।
একাত্তরের যুদ্ধ ছিল ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
ফলে তাঁকে সম্মান জানাতে মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ মীর কাশিম বা তাঁর কংগ্রেসি মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য নতুন একটি গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছিলেন, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সত্যিটা ঠিক কী ছিল, আজ হয়তো তা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়।
কিন্তু সুদূর উত্তর কাশ্মীরের এক প্রান্তে, সুবিস্তীর্ণ উলার লেকের এক তীরে বাংলাদেশ নামে একটি ছোট্ট গ্রাম যে অর্ধশতাব্দীরও বেশি পুরনো ইতিহাসকে নিজের বুকে আজও ধরে রেখেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
শুভজ্যোতি ঘোষ
জড়ষব,বিবিসি নিউজ বাংলা, বান্দিপোরা

Leave a Reply

ইটালি প্রবাসী দিদারের মা আনোয়ারা বেগমের…

শফিকুল ইসলাম বাদল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর Read more

কসবায় মায়ের অভিযোগে ছেলের কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে Read more
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : পুকুরের পানিতে ডুবে ইসরাত জাহান নোভা (৯) Read more

ইরান কখনও আপোস করবে না: আয়াতুল্লাহ…

অনলাইন ডেস্ক : জায়নবাদীদের সাথে ইরান কখনও আপোস করবে না Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পাঁচ দিনের…

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানার পৃথক Read more
ফাইল ছবি

প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে…

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহতদের কল্যাণ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক…

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর Read more

কারাগারে হাজতির মৃত্যু

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে জুনায়েদ মিয়া (৩২) নামে Read more

আখাউড়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

চলারপথে রিপোর্ট : কৃষকদের সেচ দক্ষতা বাড়াতে পানি ব্যবহারকারী গ্রুপের Read more

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ১১তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য: রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের Read more

স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে…

অনলাইন ডেস্ক : স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে অনশন Read more

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো ২১…

অনলাইন ডেস্ক : ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিশরসহ ২১টি Read more

মেশিনে আটকা পড়ে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক, 6 May 2023, 1428 Views,

মেশিনে আটকা পড়ে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু
অনলাইন ডেস্ক :
মালয়েশিয়ার জালান কেমুনিংয়ে একটি কারখানায় কাজের সময় মেশিনে আটকে সুরুজ আলী (২১) নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

banner

আজ ৬ মে শনিবার সকাল ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দ্যা স্ট্রেইট টাইমস।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশটির সেলাঙ্গর ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ ডিপার্টমেন্ট অপারেশন সেন্টারের প্রধান জুলফিকার জাফর।

তিনি বলেন, সকাল ৭টা ৬ মিনিটে আমাদের কাছে একটি দুর্ঘটনার খবর আসে। এরপরই ঘটনাস্থলে ১০ জন দমকলকর্মী এবং কর্মকর্তাদের একটি দল পাঠানো হয়।

প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিস জানায়, কাজের সময় ফাইবার টানানোর মেশিনে আটকে পড়েছিল ওই শ্রমিক। জখম গুরুতর হওয়ায় ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। নিহত বাংলাদেশিকে ওই মেশিন থেকে বের করতে প্রায় ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে।

এক বিবৃতিতে দেশটির প্রশাসন জানিয়েছে, বাংলাদেশি ওই শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি মেডিকেল টিম। পরবর্তীতে ওই ব্যক্তির দেহাবশেষ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মতিউল্লাহ ওয়েসাকে মুক্তির দিতে তালেবানের প্রতি আহ্বান অ্যামনেস্টির

আন্তর্জাতিক, 1 July 2023, 1056 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
আফগানিস্তানে গ্রেফতার দেশটির প্রখ্যাত নারী শিক্ষা অধিকারকর্মী মতিউল্লাহ ওয়েসাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আ‌হ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

banner

সম্প্রতি এক টুইটে অ্যামনেস্টি বলেছে, ওয়েসার আটক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ওয়েসা দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানে মোবাইল স্কুল পরিচালনা করে আসছিলেন। সেই সঙ্গে মোবাইল লাইব্রেরি সেবাও দিয়েছিলেন তিনি। তাকে গত ২৭ মার্চ গ্রেফতার করা হয়।

ওয়েসার পরিবার জানিয়েছে, তার স্বাস্থ্যের অবস্থা উদ্বেগজনক এবং গ্রেফতারের পর থেকে তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না।

গত মে মাসের শুরুতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তালেবান কর্তৃপক্ষকে মতিউল্লাহ ওয়েসা ও আরও কয়েকজন মানবাধিকার কর্মীকে মুক্তি দিতে বলেছিল। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই করা হয়নি বলে জানিয়েছে খামা প্রেস।

বরযাত্রীদের নিয়ে ফেরার পথে নৌকাডুবিতে ১০৩ জনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক, 14 June 2023, 1165 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
নাইজেরিয়ায় বিয়ের যাত্রীবাহী একটি নৌকা ডুবিতে অন্তত ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিয়ে শেষে বরযাত্রীদের নিয়ে ফেরার পথে নৌকাটি নদীতে ডুবে যায়।

banner

উত্তর-মধ্যাঞ্চলের কাওয়ারা বিভাগে ১৩ জুন মঙ্গলবার এ মর্মান্তিক নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। কিভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটল সেটি এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে নাইজেরিয়ায় অতিরিক্ত যাত্রী, নিরাপত্তার ঘাটতি এবং বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায়ই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় রাজ্য পুলিশ ও গভর্নরের অফিস জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া নৌকাটি কাওয়ারার পাশের রাজ্য নাইজার থেকে বিয়ের যাত্রীদের নিয়ে নদী পার হচ্ছিলো। তখনই এটি ডুবে যায়।

কাওয়ারা রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র ওকসানমি আজাই বার্তাসংস্থা এএফপিকে টেলিফোনে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনা আছে।’

গত মাসে উত্তরপূর্ব সোকোতো রাজ্যে জ্বালানির কাঠ আনতে গিয়ে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নৌকা ডুবে ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া এ ঘটনায় আরও ২৫ জন নিখোঁজ হন। সূত্র: এএফপি

পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ২৬

আন্তর্জাতিক, 7 May 2025, 108 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামলায় অন্তত আট জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। এর জবাবে ভারতেও পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান। এ ঘটনায় পরমাণু শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

banner

ভারত সরকার জানায়, তারা নয়টি স্থানে ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে সুনির্দিষ্ট হামলা’ চালিয়েছে। এ হামলাগুলো পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। কয়েকদিন আগে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করেছিল নয়াদিল্লি।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন পাকিস্তানি নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এদিকে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

এর আগে, পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, মধ্যরাতের পর কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাঘ এবং মুজাফফরাবাদে ভারতের ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তিনজন পাকিস্তানি শহীদ এবং ১২ জন আহত হয়েছেন। এর জবাবে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে

তিনি এ হামলাকে ‘জঘন্য উস্কানি’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘আমরা সুবিধামত সময়ে প্রতিশোধ নেব।’

ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, নয়াদিল্লির এই হামলার পরপরই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভারতের হামলাগুলো ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেছেন, ইসলামাবাদ ভারতীয় হামলার জবাব দিচ্ছে, তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী জানান, পাকিস্তানে পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। হাসপাতালসহ ও জরুরি পরিষেবাব্যবস্থা উচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের একজন সামরিক মুখপাত্র জিও ব্রডকাস্টারকে বলেন, ভারতের হামলায় দুটি মসজিদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ গণমাধ্যমটিকে বলেন, ভারত সব বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে, সেখানে কোনো জঙ্গি শিবির ছিল না। তিনি বলেন, ভারত তাদের নিজেদের আকাশসীমা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং ‘সন্ত্রাসীদের শিবির’ লক্ষ্যবস্তু করার ভারতীয় দাবি মিথ্যা।

পরে তিনি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় জেট বিমান ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরে বলা হয় যে তারা তিনটি রাফাল, একটি এসইউ-৩০ এবং একটি মিগ-২৯ বিমান ভূপাতিত করেছে। তারা জানায়, পাকিস্তানে হামলা চালানোর পরেই কেবল বিমানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের পর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবে এএফপির সাংবাদিকরা বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন।

ভারত সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কিছুক্ষণ আগে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী “অপারেশন সিঁদুর” শুরু করে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসী অবস্থানগুলোতে আঘাত হেনেছে।’

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, ‘ভারতীয় বাহিনী জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈয়বার সদর দফতরে হামলা চালিয়েছে।’

ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে বলেছে, ‘ন্যায়বিচার করা হয়েছে।’ নয়াদিল্লির তরফে আরও বলা হয়, তারা পাকিস্তানের কোনো সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেনি।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন : ট্রাম্পের উপদেষ্টা থাকার সময় নিয়মিত মাদক নিয়েছেন ইলন মাস্ক

আন্তর্জাতিক, 1 June 2025, 101 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ২৯ মে হঠাৎ করেই ট্রাম্প প্রশাসনে দায়িত্ব পালনের ইতি টানেন মাস্ক। বিদায় বেলায় তাকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইলন মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসনে থাকা অবস্থায় নিয়মিতভাবে কেটামিন, এক্সট্যাসি এবং সাইকেডেলিক মাশরুম সেবন করতেন।

banner

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মাস্কের মাদক গ্রহণের মাত্রা এতোটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, সেটি তার মূত্রথলির সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

জানা যায়, তিনি প্রায় প্রতিদিনই কেটামিন সেবন করতেন এবং প্রায় ২০টি ওষুধের একটি বাক্স সব সময় সাথে রাখতেন। ওই বাক্সে অ্যাডেরলের মতো উত্তেজক ওষুধের অস্তিত্বও ছিল।

একটি ছবিতে দেখা যায়, ওষুধের বাক্সটিতে অ্যাডেরল চিহ্নিত বড়ি ছিল। মাস্ক অবশ্য দাবি করেন, তার কেটামিন সেবন চিকিৎসকের পরামর্শে হতাশা দূর করার জন্য এবং সেটি তিনি প্রতি দুই সপ্তাহে একবার গ্রহণ করতেন।

২০২৩ সালের বসন্ত নাগাদ তার কেটামিন সেবনের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। মাস্ক তখন ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নেতৃত্ব দেন এবং প্রচারণায় ২৭৫ মিলিয়ন ডলার দান করেন। একই সময় তিনি ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্ণমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ)’ নামে একটি বিশেষ প্রশাসনিক ইউনিট পরিচালনার দায়িত্ব পান।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, সরকারি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মাস্ক হোয়াইট হাউসে নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন। বাজেট ও আমলাতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্বিন্যাসে তার ভূমিকা ছিল। তবে হোয়াইট হাউস তার মাদক সেবনের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি কিংবা তাকে ড্রাগ টেস্টে অংশ নিতে বলেছে কি না, তাও জানা যায়নি।

মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্স যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় সরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সেখানে কর্মীদের জন্য মাদকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। কর্মীদের ওপর ড্রাগ টেস্ট চালালেও মাস্ক আগেভাগেই সে বিষয়ে সতর্কবার্তা পেয়ে যেতেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে মাস্কের ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েনও উঠে এসেছে। বলা হয়, তিনি একাধিক নারী সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক এবং সন্তানদের নিয়ে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়েছেন। তার প্রাক্তন সঙ্গিনী গায়িকা গ্রাইমস তাদের সন্তানকে নিয়ে মাস্কের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, শিশুটিকে জনসমক্ষে নিয়ে যাওয়া তাদের চুক্তিভিত্তিক গোপনীয়তা ভঙ্গ করেছে এবং শিশুটির স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এতে ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

এক নারী লেখক অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ারও দাবি করেছেন, মাস্কের সাথে গোপন সম্পর্কে তার একটি সন্তান হয়েছে এবং মাস্ক চাইছিলেন বিষয়টি গোপন রাখতে। পরে মাস্ক তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলা বন্ধ করতে আদালতে গ্যাগ অর্ডার চেয়ে আবেদন করেন।

মাস্কের আচরণ নিয়ে দীর্ঘদিনের কিছু বন্ধু উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিউরোসায়েন্টিস্ট এবং এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফিলিপ লো বলেন, ইলন তার খারাপ আচরণের সীমা ক্রমাগত অতিক্রম করে চলেছে। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস