অনলাইন ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত লাইসেন্সধারী ব্যক্তিদের সব আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ ২২ ডিসেম্বর শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইসরাত জাহানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঘোষিত তপশিল অনুসরণে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারীগণের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়, এ আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ‘দ্য আর্মস অ্যাক্ট ১৮৭৮’এর সংশ্লিষ্ট ধারার বিধান মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে দুর্ঘটনাকবলিত ‘সাগর নন্দিনী-২’ নামের তেলবাহী জাহাজ থেকে তেল অপসারণের সময় ফের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণের পরপর জাহাজে আগুন লেগে গেছে। এতে ৯ পুলিশ সদস্যসহ ১১ জন দগ্ধ হয়েছেন।
আজ ৩ জুলাই সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝালকাঠি পৌরসভার খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় নদীতে এ ঘটনা ঘটে। সেখানে সাগর নন্দিনী-৪ নামে আরেকটি জাহাজ নোঙ্গর করা রয়েছে। সেটিতেও আগুন ছড়িয়ে যেতে পারে।
ঝালকাঠি সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ঝালকাঠি শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুনের মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটার দূরেও আকাশে কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১১ জন দগ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বরাবরের মতো স্থানীয় ট্রলার চালক ও সাধারণ লোকজন বিভিন্নভাবে আহতদের উদ্ধারে সহায়তা করছেন।
ওসি মো. নাসির উদ্দীন বলেন, বাকি তেল অপসারণ করার সময় জাহাজটিতে পুনরায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯ পুলিশ সদস্যসহ ১১ জন দগ্ধ হয়েছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে গত ১ জুলাই শনিবার দুপুরে বিকট শব্দে সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে বিস্ফোরণ ঘটে। পরে পুরো জাহাজে আগুন লেগে যায়। এতে চারজন শ্রমিক দগ্ধ হন এবং চারজন শ্রমিক নিখোঁজ হন। পরে দুই দিন অভিযান চালিয়ে নিখোঁজ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
লোকামানপুর এলাকায় ট্রেনের সাথে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছেন। লোকমানপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন দোডাঙ্গি রেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় রাজশাহীগামী ট্রেনের ইঞ্জিনের সাথে মোটর সাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রী নিহত হন। এরা হলেন বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত তছলিমের ছেলে মফিজুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (৫০)। নিহতরা মাড়িয়া গ্রাম থেকে মোটরসাইকেলে করে জামনগর যাচ্ছিলেন।
নাটোরের বাগাতিপাড়া বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি সফিউল আযম খান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আজ দুপুর আড়াইটার দিকে মফিজুর রহমান শ্বশুরালয় মাড়িয়া গ্রাম থেকে তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে সঙ্গে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে নিজ বাড়ি বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর পশ্চিমপাড়া গ্রামে ফিরছিলেন। পথে লোকমানপুর রেল স্টেশন এলাকার অদুরে দোডাঙ্গি রেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় রাজশাহীগামী ট্রেনের ইঞ্জিনে সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। ট্রেনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল ছিটকে পরে দুমরে মুচরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। বিষয়টি ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানাকে অবহিত করার পর তারা ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল হবিগঞ্জ জেলা শহর। ১৯৭১ সালের একইদিনে মুক্ত হয়েছিল নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, বাহুবল, মাধবপুর, বানিয়াচং ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাও। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌর প্রসাদ রায় ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সফিকুর রহমান।
হবিগঞ্জ : ১৯৭১ সালের এইদিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে হবিগঞ্জ শহরসহ তার আশপাশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ৩ নম্বর সেক্টরে দায়িত্বরত তৎকালীন মেজর শফিউল্লাহর নেতৃত্বে হবিগঞ্জের সীমান্ত এলাকার দুর্গম অঞ্চলগুলোতে পাকিস্তানিদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ডিসেম্বরের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধারা জেলা শহরের কাছাকাছি এসে পৌঁছায় এবং শহরে প্রবেশের তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণ করেন। ৫ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা হবিগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে এবং ৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাকিস্তানি সেনাসহ রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে।
চুনারুঘাট: ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে চুনারুঘাটের সীমান্ত এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তোরাব আলী খন্দকার, শামছুল হুদা, আব্দুল গফফারের নেতৃত্বে কয়েক শ মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা শহরে পাকিস্তানি ক্যাম্পে আক্রমণ করে। ৬ ডিসেম্বর ভোরে পাকিস্তানিদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে আস্তানা গুঁটিয়ে নেয় এবং পাকসেনারা শ্রীমঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বর সকালে তৎকালীন সিও অফিসের সামনে স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়।
নবীগঞ্জ : একাত্তরের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নবীগঞ্জ উপজেলাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করেছিল। ৪ ডিসেম্বর ভোরে অর্ধশতাধিক সহযোদ্ধা রাজনগরসংলগ্ন নবীগঞ্জ-বানিয়াচঙ্গ সড়কের পাশে অবস্থান নেয়। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ধ্রুব নামে এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। ফটিক মিয়া, আব্দুল আহাদ ও ছাবু মিয়া নামে তিন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর রসদ ও গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে তারা ৬ ডিসেম্বর ভোরে পালিয়ে যায়। ওইদিন দুপুরে জনতা থানা প্রাঙ্গণে জড়িত হয়। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সাবসেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদী পতাকা উত্তোলন করে নবীগঞ্জকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।
শায়েস্তাগঞ্জ: ১৯৭১ এর ৬ ডিসেম্বর সিলেটের সর্বত্র যুদ্ধে হেরে পাকবাহিনী সড়ক ও রেলপথে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালাতে থাকে। একই সঙ্গে শায়েস্তাগঞ্জ থেকেও ছটকে পড়ে কুখ্যাত হায়েনার দল। দীর্ঘ নয় মাস পর এলাকার সর্বস্তরের মানুষ বিজয় পতাকা হাতে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। গগণ বিদারী শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শায়েস্তাগঞ্জ শহর।
বাহুবল: ৫ ডিসেম্বর বাহুবলের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবুল হাসেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে ২৪জন ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করেন।
ওই দুইজনের নেতৃত্বে প্রথমে হবিগঞ্জ সদর ও বাহুবলের সীমান্তবর্তী কটিয়াদী বাজারে অভিযান চালানো হয়। পরে অভিযান হয় বাহুবলের ধনিয়াখালীতে। সর্বশেষ ৬ ডিসেম্বর তারা বাহুবল থানায় আক্রমণ করেন। এতে ৪ রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। সবাই মিলে থানায় বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। উদ্ধার হয় অস্ত্র ও গোলারারুদ। পরে এসব গোলা ও অস্ত্র ভারতের অমপিনগর ক্যাম্পে জামা দেওয়া হয়।
একইভাবে ৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় মাধবপুর ও বানিয়াচং উপজেলা শহর। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় পতাকা উড়িয়ে উল্লাস করেন।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ জেলার অসংখ্য মানুষ হানাদারদের নিষ্ঠুরতার শিকার হন। অনেকই শহীদ হয়েছেন। শহীদদের স্মৃতিরক্ষায় জন্য হবিগঞ্জ শহরে মুক্তিযোদ্ধা অফিসের কাছে, মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে, বাহুবলের ফয়জাবাদ, লাখাইর কৃষ্ণপুর, চুনারুঘাটের নলুয়া চা-বাগান, বানিয়াচঙ্গের বদলপুর, মাকালকান্দির বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত রয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, অতি শিগগির নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে দেশে ব্যবহৃত অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট।
নতুন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশনার পর এ ঘোষণা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আজ ২১ জানুয়ারি রবিবার বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের পরিচালক ড. মো. সোহেল রানার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিটিআরসি জাতীয় পরিচিতি ও নিবন্ধিত সিম কার্ডের সঙ্গে ট্যাগিং করে প্রতিটি মোবাইল ফোন নিবন্ধনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি সেবাগ্রহণ বা প্রদান নিশ্চিত করা, অবৈধভাবে উৎপাদিত বা আমদানিকৃত মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ করার উদ্দেশে এনইআইআরের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের চুরি ও অবৈধ ব্যবহার রোধ হবে।
এনইআইআরের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করতে শিগগির অবৈধ মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক হতে বিচ্ছিন্ন করা হবে। এ পরিস্থিতিতে সবাইকে মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার আগে বৈধতা যাচাই করে নিতে হবে।
মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার আগে মেসেজ অপশন থেকে KYD<space>15 ডিজিটের IMEI নম্বর লিখে (উদাহরণ স্বরূপ: KYD 123456789012345) ১৬০০২ নম্বরে পাঠালে হ্যান্ডসেটের বৈধতা যাচাই করা যাবে।
গত ১৬ জানুয়ারি বিটিআরসিতে এক সভায় নতুন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক দেশে অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
সময় থমকে গিয়েছিল এ বাংলার বুকে। তার পাতায় পড়েছিল কালিমার ছাপ। আর পৃথিবী নীরব চোখে দেখেছিল এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।
মেশিনগানের গুলিতে মারা হয়েছিল নিরস্ত্র বাঙালিদের। বাদ যায়নি বৃদ্ধ-বয়স্ক-জোয়ান-কিশোর-শিশু কেউ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘরবাড়ি। আজ সেই বিভীষকার ২৫ মার্চের কালরাত।
পাকিস্তানি সামরিক জান্তার আগ্রাসনে বাংলার বুকে নেমে এসেছিল মৃত্যুর কালো আঁধার। স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হিংস্র হায়েনার মতো হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ১৯৭১ সালের এদিন রাত ১০টা অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে দেশব্যাপী পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল এ হত্যা-অভিযান। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়েছিলেন। অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবায় মৃত্যুর নগরীতে পরিণত করেছিলেন ঢাকা শহরকে।
বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের কাজ চলছে।
১৯৭১ সালের এ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশলাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ এবং অগ্নিসংযোগ। এ রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি দেশকে শুত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। এ রাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রণোদনা জোগায়।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের এদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি এয়ারপোর্ট চলে যান। নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে রাত পৌনে ৮টায় তিনি গোপনে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ রাতে শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে।
রাত ১টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টারে ১৮ জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পালটা আক্রমণের সুযোগ পাননি। পিলখানা আক্রমণের পাশাপাশি রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারি বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতেই শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকাতে যথেচ্ছ হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে বর্বর হানাদার বাহিনী।
মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে ট্যাংক ও সেনা বোঝাই লরি। ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলে মধ্যযুগীয় কায়দায় চলে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা। শহিদ হন কয়েকশ ছাত্রছাত্রী। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। হানাদারর চলার পথে রাস্তার দুপাশে গুলি ছুড়ে মারে অসংখ্য নিরীহ, গরিব মানুষকে। মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাসে গোলার পর গোলা ছুড়ে হত্যা করা হয় অজস্র মানুষকে। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই।
ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুরো সদর দপ্তর।
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গোপন ওয়্যারলেস বার্তায় তিনি বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি, আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এ হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।
এর আগে সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভুট্টো-ইয়াহিয়া এবং ইয়াহিয়া ও পিপলস পার্টির উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছেছিল। রাত ৯টার পর বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখন্ড পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এ বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দপ্তরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশি জাহাজও এ বার্তা গ্রহণ করে। চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন।
রাত ১টায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অদূরে শুক্রাবাদে ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। এখানে প্রতিরোধ ব্যূহ ভেঙে হানাদাররা রাত দেড়টায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে। তারা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এলাপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধুকে রাত দেড়টায় বন্দি করে শেরেবাংলা নগরের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয় সেনানিবাসে। সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে তাকে আটক রাখা হয়।
২৫ মার্চের পরদিন সকালে লুকিয়ে জগন্নাথ হলের হত্যাযজ্ঞের কিছু আলোকচিত্র ও ভিডিও ধারণ করেছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. নূরুল উলা। ১৯৭২ সালে বাংলার বাণী পত্রিকার এক বিশেষ সংখ্যায় ‘জগন্নাথ হলের মাঠে’ শীর্ষক লেখায় তিনি লিখেন, ‘২৬ মার্চ সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যবর্তী সময়ে ক্যামেরা চালু করি। জানালা দিয়ে লক্ষ্য করলাম, জগন্নাথ হলের সামনেই মাঠে কিছু ছেলেকে ধরে বাইরে আনা হচ্ছে এবং তাদের লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে। তখনই আমার সন্দেহ হয় এবং আমি ক্যামেরা অন করি। দেখলাম একজন বুড়ো দাড়িওয়ালা লোক রয়েছে। সে বসে পড়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছে। তার দাড়ি দেখিয়ে বোঝাতে চেয়েছিল যে সে মুসলমান। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী তার কোনো কথাই শুনতে চায়নি। তাকে গুলি করে মারা হলো। মাঠের পূর্ব পাশে পাকিস্তানি বাহিনী একটা তাঁবু বানিয়ে ছাউনি করেছিল। সেখানে দেখছিলাম, ওরা চেয়ারে বসে বেশ কয়েকজন চা খাচ্ছে আর হাসি-তামাশা ও আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ছে। যাদের আমার চোখের সামনে মারা হয়েছে ও যাদের মারার ছবি আমার ক্যামেরায় রয়েছে, তাদের দিয়ে প্রথমে হলের ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করে আনা হচ্ছিল। মৃতদেহগুলো এনে সব এক জায়গায় জমা করা হচ্ছিল এবং ওদের দিয়ে লেবারের কাজ করানোর পর আবার ওদেরই লাইনে দাঁড় করিয়ে এক সারিতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার মনে হয়, প্রায় ৭০-৮০ জনের মৃতদেহ এক জায়গায় জমা করা হয়েছিল।
শহিদ জননী জাহানার ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে কালরাত নিয়ে ২৬ মার্চের লেখার এক জায়গায় লিখেছেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রচন্ড যুদ্ধের পর বাঙালি পুলিশরা বেশিরভাগ প্রাণ দিয়েছে। অল্প কয়েকজন পালাতে পেরেছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন পাকসেনার গুলিতে ঝাঁজরা। পাক আর্মি ‘দ্য পিপল’ অফিস পুড়িয়েছে, পুড়িয়েছে ইত্তেফাক অফিস। ঢাকায় যত বাজার আছে, বস্তি আছে, সব জায়গা আগুনে পুড়ে ছাই-ছাই হয়েছে রায়েরবাজার, ঠাটারি বাজার, নয়াবাজার, শাঁখারি পট্টি।’