অনলাইন ডেস্ক :
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে কারাবন্দি নেতা ইমরান খানকে তার নিজের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের নেতাদের সঙ্গে নির্বাচনী বৈঠক করার অনুমতি দিয়েছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি)। আজ ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি মিয়াগুল হাসান আওরঙ্গজেব এক রায়ে এই ঘোষণা দিয়েছেন।
দেশটির নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে দেশটিতে। ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পিটিআইও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে আলোচিত তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় তিন বছরের কারাবাস এবং পাঁচ বছরের নির্বাচন নিষেধাজ্ঞার দণ্ডপ্রাপ্ত ইমরান খান নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না তা এখনো অনিশ্চিত। তার আইনজীবীরা অবশ্য নিম্ন আদালতের এই রায় স্থগিতের আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন। তবে সেই আপিলের ওপর এখনো শুনানি শুরু হয়নি সর্বোচ্চ আদালতে। বর্তমানে আদিয়ালা কারাগারে রয়েছেন ইমরান খান।
এদিকে, সম্প্রতি ইসলামাবাদ হাইকোর্টে একটি পিটিশন জমা দেন পিটিআইয়ের শীর্ষ নেতারা। সেই পিটিশনে তারা বলেন, আসন্ন নির্বাচনে দলের নীতি নির্ধারণ ও কৌশল ঠিক করতে ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠক করতে চান তারা। শুক্রবার আইএইচসির এজলাসে শুনানির জন্য পিটিআইয়ের পিটিশনটি ওঠে। এ সময় পিটিআইয়ের আইনজীবী দল, আদিয়ালা কারাগারের সুপারিন্টেডেন্ট এবং পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে দুই পক্ষের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর রায় ঘোষণার সময় আদালত বলে, পিটিআইয়ের শীর্ষ নেতারা যদি মনে করেন যে, নির্বাচনে রণকৌশল ঠিক করার জন্য দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে তারা আলোচনা করতে চান, তাহলে তা তারা করতে পারেন এবং সেজন্য পিটিআইয়ের প্রতিনিধি দল আদিয়ালা কারাগারেও যেতে পারেন। এক্ষেত্রে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই। তবে দলের বর্তমান চেয়ারম্যান গওহর খানের নেতৃত্বে দলের শীর্ষ নেতারাই কেবল এই বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন। সংবাদসূত্র : ডন
চলারপথে ডেস্ক :
তেল বিক্রি করে রেকর্ড মুনাফা করেছে সৌদি আরবের কোম্পানি আরামকো। ২০২২ সালে তারা মুনাফা করেছে ১৬১ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১৬ হাজার ১১০ কোটি ডলার।
বিবিসির খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানিটি ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি মুনাফা করেছে। শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এটি এক বছরে তাদের সর্বোচ্চ আয়।
শুধু আরামকো নয়, আমেরিকার এক্সনমবিল, ব্রিটেনের শেভরনও গত বছর বিপুল আয় করেছে। এক্সনমবিল মুনাফা করেছে ৫ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার। আর শেভরনের মুনাফার পরিমাণ ৩ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার।
২০২২ সালের মাঝের চার মাসে রেকর্ড ৪২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করার কথা জানিয়েছিল আরামকো। ওই সময়ই বিশ্বব্যাপী তেলের দাম সবচেয়ে বেশি ছিল। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বেঞ্চমার্ক অপরিশোধিত প্রতি ব্যারল তেল ৮২ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। তবে গত বছরের জুনে তা ১২০ ডলার ছুঁয়েছিল।
ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা শুরু করার পর বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের দাম অনেকটা বেড়েছে। সাত বছর পর ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
গত বছর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, বৈশ্বিক সংকট কাজে লাগিয়ে অনেক তেল-গ্যাস কোম্পানি অনৈতিকভাবে মুনাফার রেকর্ড করেছে। তিনি এসব কোম্পানির ওপর বেশি হারে করারোপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে করের অর্থ চরম অভাবগ্রস্তদের সহায়তায় ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
তবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই বিশ্ববাজারের জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করেছিল। টানা দেড় বছর কোভিডজনিত নানা বিধিনিষেধ থাকার পর উন্নত দেশগুলো তখন কোভিডজনিত সব ধরনের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে তেলের দাম আরো বেড়ে যায়।
অনলাইন ডেস্ক :
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৮৩৩ জন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ৪২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬৩ জন।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৯৩ জন নিহত হন। আহত হন আট হাজার ৭৩০ জন। হামাস ইসরায়েলের প্রায় আড়াইজনকে জিম্মি করে।
ইসরায়েল পরে গাজায় হামলা শুরু করে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে।
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অধিকৃত পশ্চিম তীরে ৪৬৮ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত চার হাজার ৮০০জন।
জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা বলছে, যুদ্ধে নিহতদের এক তৃতীয়াংশই নারী। অন্তত ১০ হাজার নারী এ যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। সূত্র : আল জাজিরা
অনলাইন ডেস্ক :
ইসরাইলের চলমান নৃশংস হামলায় গাজা উপত্যকায় আরো প্রায় ৫৬জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু উত্তর গাজায় মধ্যরাতের পর থেকে ইসরাইলি বাহিনীর ব্যাপক বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০ জন। দক্ষিণ গাজার ইউরোপীয় ও নাসের হাসপাতালের ওপর চালানো পৃথক হামলায় নিহত হয়েছেন আরো ৩০ জন।
আলজাজিরার খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসপাতালগুলোতে হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই উত্তর গাজায় শুরু হয় এই নতুন দফার হামলা।
আলজাজিরা আরো জানায়, দক্ষিণ গাজার দুটি হাসপাতাল—ইউরোপীয় ও নাসের—লক্ষ করে চালানো বোমা হামলায় অন্তত ৩০ জন প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিকও ছিলেন, যিনি চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন।
স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া হামলায় কেবল উত্তর গাজায় ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫২ হাজার ৯০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও এক লাখ ১৯ হাজার ৭২১ জন।
প্রায় ১৫ মাস ধরে চলা সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ইসরাইল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এরপর প্রায় দুই মাস অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকলেও, হামাসের সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আবারও গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই নতুন দফার হামলায় এখন পর্যন্ত আরও ২ হাজার ৭৮০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ৭ হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছেন। এই হামলার মাধ্যমে ইসরাইল চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেঙেছে।
জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলি আগ্রাসনের ফলে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুহারা হয়েছেন। পাশাপাশি, অবরুদ্ধ এই উপত্যকার অধিকাংশ অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে :
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউনের অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতে ঝটিকা অভিযান শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। নতুন প্রশাসনের নির্দেশে ২৬ জানুয়ারি রোববার থেকে শুরু হয় এ তৎপরতা। প্রথম দিনের অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৫৬ জনকে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়েছে ২ হাজার ৬৮১ জনকে। সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন গ্রেফতার করা হচ্ছে এক হাজার জন। শিকাগোয় ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে শহরটির অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এ তথ্য জানিয়েছে। রবিবার শুরু হওয়া এই অভিযানে আইসিইর পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন এফবিআই ও ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (ডিইএ) বিচার বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। এই অভিযান এক সপ্তাহ ধরে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের ইশারায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছেন টম হোম্যান। তিনি আইসিইর সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক। সিএনএনের সাথে সাক্ষাৎকারে হোম্যান ঝটিকা অভিযান শুরুর দিনকে ‘একটি ভালো দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই অভিযান ‘মোড় বদলে’ দেওয়ার মতো একটি ঘটনা।
ওই সাক্ষাৎকারের সময় ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে ছিলেন টম হোম্যান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে (অবৈধ অভিবাসন) পুরো প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছেন। শিকাগোর জননিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিগুলোর ওপর নজর রাখতে আজ আমরা সরকারের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে মাঠে নামিয়েছি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আইসিই লিখেছে, রবিবার দেশজুড়ে ৯৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে শিকাগোয় এই ‘বাড়তি অভিযান’ ছাড়াও আটলান্টা, পুয়ের্তো রিকো, কলোরাডো, লস অ্যাঞ্জেলেস, অস্টিন ও টেক্সাস শহরে অভিবাসনসংক্রান্ত কর্মকর্তাদের তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, আইসিইর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতিদিন ৭৫ জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতিদিন গড় গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়বে। গত অর্থবছরে আইসিইর অভিযানে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে প্রতিদিনি গ্রেপ্তারের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার তথ্য অস্বীকার করেছেন টম হোম্যান।
অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক : প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে বহু অভিবাসী প্রবেশ করেছিলেন। তাঁদের বড় অংশের ঠিকানা হয়েছিল টেক্সাস। তখন টেক্সাসের গভর্ণর গ্রেগ অ্যাবট এই অভিবাসীদের বাইডেনের দল ডেমোক্রেটিক পার্টি শাসিত শহরগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে শিকাগোর স্থানীয় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের নানা তৎপরতার মুখে আতঙ্কে রয়েছেন শহরটির অনেক অধিবাসী। তাঁদের অনেকে স্কুল বা কাজে যাচ্ছেন না। যেমন শহরটির উপকণ্ঠে বসবাস করা দুই বোন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্কুলে যাচ্ছে না। তাদের মা–বাবাও কাজে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত তাঁদের অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান চলছে।
ইউএস কমিটি ফর রিফিউজিস অ্যান্ড ইমিগ্র্যান্টস নামের আরেকটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এনা মারিয়া বেনা বলেন, ‘শিশুরা স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। তারা ভয় পাচ্ছে। তারা মা–বাবার কাছ থেকে এসব বিষয়ে শুনছে।
সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে শুনছে। আমার মনে হয়, যখন শিক্ষার্থীরা ভয়ের কারণে স্কুলে যেতে চায় না, তখন ওই সম্প্রদায়ের মনের অবস্থা কী, তা অনেকটাই বোঝা যায়?’
এদিকে শিকাগোতে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে শহরটির অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো। আদালতে দাখিল করা নথিপত্রে বলা হয়েছে, শিকাগোয় অভিবাসীদের জন্য ছাড় থাকার কারণে শহরটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযানের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এটা সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে যে বাক্স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেটি খর্ব করে। একই সঙ্গে চতুর্থ সংশোধনীতে অযৌক্তিক তল্লাশি ও আটকের বিরুদ্ধে যে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা লঙ্ঘন করে।
দেশজুড়ে অভিযানÑধরপাকড় : জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরের উপকণ্ঠ থেকে ওয়াল্টার ভালাদারেস নামের ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন আইসিইর সদস্যরা। তিনি হন্ডুরাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তবে তাঁর বৈধ কোনো নথিপত্র নেই। সিএনএনকে ওয়াল্টারের পরিবারের সদস্যরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ওয়াল্টারের ভাই এডউইন ভালদারেস বলেন, ওয়াল্টার নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আটলান্টার উপকণ্ঠে লিলবার্ন এলাকায় চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। ওয়াল্টারের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ নেই। একবার শুধু লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সে ঘটনায় জরিমানাও পরিশোধ করেছিলেন তিনি।
আটলান্টার উপকণ্ঠে টাকার এলাকা থেকে নথিপত্রহীন আরেক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি একটি গির্জায় ছিলেন। ওই গির্জার যাজক লুইস ওরতিজ সিএনএনকে বলেন, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা চলাকালে তিনি দেখতে পান গির্জার কয়েকজন সদস্য ওই ব্যক্তিকে বাইরে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। বাইরে যাওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করেন আইসিই সদস্যরা।
রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত তাঁদের অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান চলছে। এই দ্বীপপুঞ্জের হনুলুলু শহরের অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করেছেন ডিইএ ও আইসিই সদস্যরা। ডিইএ জানিয়েছে, রোববার সকালে কলোরাডোয় মাদক চোরাচালানিদের এবং ভেনেজুয়েলার অপরাধী চক্রগুলো লক্ষ্য করে চালানো অভিযানে প্রায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।
টার্গেটে স্টুডেন্ট ভিসাধারীরা : অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের পরই নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার অভিযানে স্টুডেন্ট ভিসায় আগতরাও টার্গেট হয়েছেন। ৩ বাংলাদেশি ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে। তারা ভার্সিটিতে না গিয়ে নিয়মিত কাজ করছিলেন।
এদিকে পিএইচডি কোর্স করতে ঢাকা থেকে জেএফকে অবতরণকারী আরেক স্টুডেন্টকে জেএফকে থেকেই ফেরৎ পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ইমিগ্রেশন বিভাগের অফিসার জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই স্টুডেন্টের কাছে থেকে সদুত্তর না পাওয়ায় তার ভিসা বাতিল করে ফিরতি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেয়া হয়।
আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক (সরকার বিষয়ক) এবং আমেরিকা সুপ্রিম কোর্টের লাইসেন্সপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী। ডেমক্র্যাটিক পার্টির লিডার এটর্নী মঈন চৌধুরী আরো জানান, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে ভিসা গ্রহণের সময় উল্লেখিত তথ্যের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন জেএফকে এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস অফিসার। সঠিক জবাব পাননি। অপরদিকে, স্টুডেন্ট ভিসা লংঘন করে নিয়মিতভাবে কাজ করার তথ্য উদঘাটিত হয় সংশ্লিষ্টদের সেলফোন ট্র্যাকিংয়ে। ভার্সিটি অথবা কলেজের পরিবর্তে ভিন্ন একটি স্থানে প্রতিদিনই দীর্ঘ সময় অবস্থানের তথ্য খতিয়ে দেখার সময় উদঘাটিত হয় ভিসা বাতিলের অপকর্ম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসায় আগত অনেক এশিয়ানই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, সুপার মার্কেট কিংবা ট্র্যাভেল এজেন্সি অথবা চিকিৎসকের প্রাইভেট ক্লিনিকে রিসিপশনিষ্টের কাজ করছেন। কেউ কেউ অনলাইনে ক্লাস করছেন। অবৈধ অভিবাসীদের ধর-পাকড়ের অভিযানে এহেন অপকর্মে লিপ্ত ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট’রাও ধরা পড়ছেন বলে নিউজার্সি, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসাচুসেট্্স, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, মিশিগান, আরিজোনা থেকে জানা গেছে।
এদিকে, আইসের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) উদ্ধৃতি দিয়ে ফক্স নিউজের এক বুলেটিন বলা হয়েছে, সোমবার টেক্সাসের বিভিন্ন স্থান থেকে ৮৪ জনসহ সারা আমেরিকা থেকে এক হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম ৭ দিনে গ্রেফতারস হলো ৩৩ অবৈধ অভিবাসী। এরা সকলেই নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল এবং সামাজিক শান্তি বিনষ্টের হুমকি বলেই অবৈধদের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিটে হেকসেথ জানান, সোমবার আরো ৪ শতাধিক সৈনিক টেক্সাসের সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে। এরফলে আগের সপ্তাহের তুলনায় বেআইনীভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারির সংখ্যা ৯০% কমেছে বলেও দাবি করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
আইসের গ্রেফতার-অভিযানে সন্ত্রস্ত গোটা কম্যুনিটি। জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ওজোনপার্ক, ব্রুকলীনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত পরিভ্রমণকারে সোমবার অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেট, গ্রোসারি স্টোরে গ্রহকের মত বিক্রেতার সংখ্যাও একেবারেই নগন্য মনে হয়েছে। একধরনের ভীতি তৈরী হয়েছে ইমিগ্র্যান্ট কম্যুনিটিতে। টাইমস স্কোয়ার, ডাউন টাউন, মিডটাউন, আপটাউনের ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জানা গেছে, নিউইয়র্কে নূন্যতম মজুরি হচ্ছে ঘন্টায় ১৭ ডলারের মত। অবৈধদের দিয়ে সে সব কাজ করিয়ে ঘন্টায় ৫/৬ ডলার করে দিতে পারায় ব্যবসায় মুনাফা বেশী বলে ব্যবসায়ীরা জানান। যদিও করোনা মহামারির পর অন্যসকল পন্যের মত খাদ্য-বস্ত্র-বিনোদনের সকল পন্যের দামও দ্বিগুণ করা হয়েছে। অর্থাৎ অবৈধদের দিয়ে ব্যবসা চালাতে না পারলে লাভের অংক অনেক কমবে বলে ব্যবসায়ীরা ট্রাম্পের ওপর নাখোশ।
উল্লেখ্য, গ্রেফতারের পরই নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার জন্যে সেনাবাহিনীর বিমান ব্যবহার করছে ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে ডিটেনশন সেন্টারের ৪১ হাজার বেডই পূরণ হয়ে আছে আগে থেতেই। এজন্য গ্রেফতারের পরই অবৈধ অভিবাসীদেরকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার এই কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আরো উল্লেখ্য, ১৭ লাখের অধিক অভিবাসীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারের আদেশ জারি রয়েছে অনেক আগে থেকেই। এর সাথে যোগ হয়েছে গত চার বছর বাইডেন-কমলার আমলে বেআইনীভাবে সীমানা অতিক্রমকারিরা। এ সংখ্যা ২০ লাখের বেশী বলে বিভিন্নভাবে জানা গেছে। এদের সকলকে গ্রেফতার এবং দ্রুত বহিষ্কার করা সম্ভব না হলে বিপুল অর্থ লাগবে থাকা-খাওয়া বাবদ। সে ইস্যুতেও দুশ্চিন্তায় রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেদিকে লক্ষ্য রেখে যারা সীমানা অতিক্রমের পর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করবেন-তাদেরকেও সরাসরি মেক্সিকো-তে পাঠিয়ে দেয়া হবে আবেদনের চ’ড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত। সবকিছু মিলিয়ে সারা আমেরিকায় অভিবাসী-সমাজে টেনশন আর অস্থিরতা বিরাজ করছে।
অনলাইন ডেস্ক :
দখলদার ইসরাইলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর ভিডিও প্রকাশ করেছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। তারা জানিয়েছে, সম্প্রতি একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এ হামলা চালানো হয়েছে। আর হামলায় যে ক্ষেপণাস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিতে একটি ক্যামেরা লাগানো ছিল। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
হিজবুল্লাহ আরো জানিয়েছে, যেখানে হামলা চালানো হয়েছে, সেখানে ইসরাইলিদের গোয়েন্দা নজরদারির সরঞ্জামাদি ছিল। এছাড়া ওই স্থান থেকে তারা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ত।
ইসরাইলের সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালাতে যে ক্ষেপণাস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি একটি ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্রটিতে লাগানো ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে, এটি ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ছোড়া হচ্ছে। যে ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহ এর আগেও একাধিকবার হামলা চালিয়েছে।
নতুন করে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরাইলের ওই ঘাঁটির ভেতর সরাসরি আঘাত হানতে দেখা যায়। এবারই প্রথম হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে চালানো হামলার এমন ভিডিও প্রকাশ করল।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। এর পরের দিন থেকে ইসরাইলের বিভিন্ন অবৈধ বসতিতে বিক্ষিপ্ত হামলা চালানো শুরু করে হিজবুল্লাহ। যা এখন পর্যন্ত চলছে।
লড়াইয়ের শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে পূর্ণ যুদ্ধে জড়াবে। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে ইসরাইলি সেনাদের ব্যস্ত রাখতে প্রতিদিনই বিক্ষিপ্ত হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা।