অনলাইন ডেস্ক :
অবশেষে নির্বাচনি মাঠ থেকে সরে দাঁড়ালেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ফটিকছড়ি আসনের ফুলেরমালা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
৪ জানুয়ারী নিজ বাসভবনে আয়োজীত এক বিশেষ প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যে এ ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করে বলেন, ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী অসাম্প্রদায়িক ধর্মীয় মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিকতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (বিটিএফ)’র পক্ষ হতে আমি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি সহ সর্বমোট ৪২ জন প্রার্থী আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছি।
সংবিধান রক্ষার এই নির্বাচনে আমিসহ বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (বিটিএফ)’র অন্যান্য প্রার্থীগণ ব্যাপক প্রচার প্রচারণা ও গনসংযোগ পথসভা চালিয়ে যাচ্ছি। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী আমেজে আমরা আমাদের কার্যক্রম ব্যাপক ভাবে চালিয়ে আসছি।
আপনারা জানেন যে, আমার নির্বাচনী এলাকা ২৭৯, চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়িতে বিগত ১৮ জানুয়ারী হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত আমাদের দলীয় প্রতীক “ফুলের মালা” মার্কার সমর্থনে ব্যাপক গনসংযোগ ও পথসভা হয়েছে। ফটিকছড়িবাসীর অকুন্ঠ ভালবাসায় বাগানবাজার হতে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ১৮টি ইউনিয়ন ও ০২ টি পৌরসভার জনসাধারণের ভালবাসা ও সমর্থনে আমি আবেগে আপ্লুত হয়েছি।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১৪ দলীয় জোট নেত্রী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান জানিয়ে ও ফটিকছড়ির সার্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার নিমিত্তে আমি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সরকারের কোন অসুবিধা হতে পারে এমন কিছু করতে চাইনা।নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফটিকছড়ি আসন থেকে সরে দাড়ালাম, দেশের অন্য আসনগুলোতে আমাদের প্রার্থী থাকবে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সবাই আমাকে ভালবাসে, ফটিকছড়িবাসীও আমাকে ভালবাসে।
আমি ফটিকছড়িবাসীর সাথে সবসময় সুখে দুঃখে পাশে ছিলাম, আছি ও থাকবো।
এতে উপস্থিত ছিলেন, তরিকত ফেডারেশনের নেতা সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভাণ্ডারী, মোহাম্মদ শাহজালাল, আলমগীর আলম, মওলানা কাজী নিজাম মোরশেদ প্রমুখ।
সরাইল প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তারের পক্ষে বেশ কদিন ধরে নির্বাচনী প্রচার কাজে অংশ নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই সংসদ সদস্য। নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে আজ ২৯ জানুয়ারি রবিবারও জনসভায় অংশ নেন তারা। ওই দুই সংসদ সদস্য হলেন র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও উম্মে সালমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ।
বিকেলে সরাইল উপজেলার অরুয়াইলে উকিল আবদুস সাত্তারের জনসভায় অংশ নেন তারা। আবদুস সাত্তার সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে স্থানীয় কলেজ মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় সভাপতিত্ব করেন অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবু তালেব।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমানের পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। নির্বাচনী সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
সদর আসনের সাংসদ মোকতাদির চৌধুরী তার বক্তব্যে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তারকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাত্তার সাহেব চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। তাই নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হবে। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে এবং আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে সমর্থন করি। তাই আপনাদের পাশের উপজেলার বাসিন্দা হিসেবে আপনাদের কাছে দাবি নিয়ে এসেছি, আবদুস সাত্তারকে উপনির্বাচনে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, বিএনপি উকিল আবদুস সাত্তারকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। তারেক জিয়া তার সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। তার সঙ্গে এখন আর বিএনপি নাই। প্রধানমন্ত্রী তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমর তারা পাশে আছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে সাত্তার সাহেবের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের নামার জন্য। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে এসেছি। তাই ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে আবদুস সাত্তারকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে সাত্তার সাহেবের অপমানের এবং তারেক জিয়ার বেয়াদবির জবাব দিতে হবে।
তিনি সভাস্থলের পাশের তিতাস নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ দেখিয়ে বলেন, এ ব্রিজ কে করেছেন? শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনের আরও এক বছর বাকি। তাই সাত্তার সাহেবকে বিজয়ী করলে এলাকার আরো উন্নয়ন হবে।
এভাবে উপনির্বাচনে জনসভায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি আচরণবিধি লঙ্ঘন কিনা- এমন প্রশ্নে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম বলেন, এ ব্যাপারে প্রার্থীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ নাই। তাছাড়া নির্বাচনের সবকিছুই শান্তিপূর্ণভাবেই চলছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াসহ অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার, স্থানীয় নারী সংসদ সদস্য উম্মে সালমা ফাতেমা বেগম শিউলী আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন, সাবেক ছাত্রনেতা ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান আনসারী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মুজিবুর রহমান বাবুল, সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন প্রমুখ।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন গঠিত। দুই উপজেলায় রয়েছে ১৭টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় রয়েছে ৯টি ইউনিয়ন ও আশুগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ৮টি ইউনিয়ন।
উপনির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯ এবং আশুগঞ্জ উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার। উপনির্বাচনে মোট কেন্দ্র ১৩২টি। এরমধ্যে সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৮৪টি ও আশুগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৪৮টি ভোট কেন্দ্র করা হয়েছে।
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপনির্বাচন করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। নির্বাচনে সংসদীয় আসনে অফিসারসহ এক হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার কথা রয়েছে। এছাড়াও থাকবে ৪ প্লাটুন বিজিবির সদস্য, র?্যাবের ৯টি টিম, পুলিশের ৯টি মোবাইল টিম ও ৪টি স্ট্রাইকিং টিম। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে ৩ জন পুলিশ, অস্ত্রধারী ২ জন আনসার, লাঠিধারী ১০ জন আনসার ও ২ জন গ্রাম পুলিশ। উপনির্বাচনে ১৭টি ইউনিয়নে ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
দুলাল মিয়া :
আজ ২৩ আগস্ট শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ট্যাঙ্কেরপাড় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির উদ্যোগে সদস্য নবায়ন ও সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
কেন্দ্ৰীয় বিএনপি’র অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিলা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া।
বিশেষ অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া।
অনুষ্ঠানে সকলের স্ববান্ধব উপস্থিতি কামনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. সিরাজুল ইসলাম (সিরাজ)।
অনলাইন ডেস্ক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কয়েকটা দিন আছে, এখন কিন্তু মাসও নেই। বুকের মধ্যে সমস্ত সাহস নিয়ে এগোতে হবে। এই ১৫ বছরে হাজারো নেতাকর্মী মেরে ফেলেছে। গুম করেছে। আমাদের ৫০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সরকারি হিসাবে গতকালও ৭৭ জনকে গ্রেফতার করেছে।
আজ ২০ অক্টোবর শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সেমিনারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আর কোনো কথা নয়, কথা নয়। আসুন আজকে আমরাই সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আজকে একটা জিনিস কিন্তু আশা, সাহস জোগাবে, আজকে দেশের সব মানুষ এক হয়েছে। সমস্থ রাজনৈতিক দলগুলো এক হয়েছে। বাম-ডান সবাই একটা কথাই বলছে, এই সরকারের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। হতে পারে না।
বিএনপি সন্ত্রাসী দল প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন নতুন সুর শুরু করেছেন বিএনপি সন্ত্রাসী দল। গতকালও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। বিএনপি সন্ত্রাসী দল হলে আপনারা কি? আপনারা তো সন্ত্রাসের বাবা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রকেই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছে, সেমিনারে এমন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরি সন্ত্রাসের রাজত্ব বানিয়ে দিয়ে আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন একেবারে মৃত্যবরণ করার মতো অবস্থা হয়ে গেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দ্র্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি নজিরবিহীন। সব দেশেই কিছু কিছু দাম বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে যেটা বেড়েছে এটা অবিশ্বাস্য, নজিরবিহীন দাম বেড়েছে। এর পেছনে কারণ অনেকগুলো। মূল কারণ জবাবদিহিহীন সরকার। তাকে কোথাও কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই করতে পারছে। তাদের দুশাসন দুর্নীতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এখন একেবারে মৃত্যবরণ করার মতো অবস্থা হয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রজেক্ট অনেক করা হচ্ছে। প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য চুরি করা। এমন চুরি যেটা এক কোটি টাকায় হবে সেটা তিন কোটি টাকা। যেটা ১০ কোটি টাকায় হবে সেটা ২০ কোটি টাকা।
সরকারি কর্মকর্তা যারা আছেন বেশিরভাগই অসুখি নন বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। এর পেছনে কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সবাই (সরকরি কর্মকর্তা) কম না কম প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত। প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত থাকলে পয়সা আসে। অবস্থা এখন এমন সাধারণ মানুষ ডিম কিনতে পারছে না। ডাল কিনতে পারছে না, শাক কিনতে পারছে না কিন্তু নির্বাচনে ঘুস দেওয়ার জন্য ইউএনও এবং ডিসিদের জন্য ৩৬৫ কোটি টাকা দিয়ে নতুন গাড়ি কেনা হচ্ছে। তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে আলাদা করে। শোনা যাচ্ছে ইতোমধ্যে যারা ডিসি, এসপি যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন তাদের কাছে টাকা পৌঁছে গেছে।
গত ১৫ বছরে এই দেশকে লুটের রাজ্য বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, এটা বর্ণনা করার ভাষা নেই যে কি হারে এরা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) লুট করেছে। যে লুটের পরিণতি মানুষের ওপর পড়ছে। প্রতিটি পয়সা আমাদের পকেট থেকে নিয়ে নিচ্ছে।ঋণ করেছে। তার ভারও আমাদের ওপর এসে পড়বে।
এই পরিস্থিতির উত্তরণে বর্তমান সরকারকে সরানো ছাড়া বিকল্প কিছু নেই বলেও মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। জনগণের নূন্যতম অধিকার ফেরত পেতে চাই। তিনি অভিযোগ করেন, দুর্নীতি লুটপাট মগের মুল্লুক এই প্রক্রিয়ায় সবাই জড়িত হয়ে গেছে। সেই মগের মুল্লুক থেকে তো এরা সহজে বের হতে চায় না।
আমাদের কাছে বন্দুক নেই, সবাইক বেরিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে, গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমাদের তো উপায় নেই, আমরা খালি হাতে আছি। আমাদের হাতে তো বন্দুক পিস্তল নেই যে আপনাকে ভয় দেখাবো, গ্রেফতান করে নিয়ে আসবো। আপনাকে আমি ডিবিতে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার, নির্যাতন করবো। সেই ক্ষমতা তো আমার নেই।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমার একটাই ক্ষমতা আছে। মানুষকে সংগঠিত করা, মানুষকে বলা এই অবস্থা থেকে বেরোতে চাইলে মুক্তি পেতে চাইলে কোনো উপায় নেই রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে। এই রাস্তায় বেরিয়ে আসাই তো বড় কথা। আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় কি করছে। তার পরে যা হোক। আপনাকেও রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে। সবাইবে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, খাদ্যদ্রব্য বলেন, মানুষের জীবনের মূল্য বলেন সব কিছু নির্ভর করছে এই সরকারকে সরাতে না পারলে আপনার কোনো কিছুর অস্থিত্ব থাকবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে তো ইচ্ছে করে একেবারে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। তাকে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা বানিয়েছে। এটার তো কোনো কিছু ঠিক নেই। তারা বলছে যদি পরিবেশ অনুকূলে হয়… তাহলে পরিবেশ অনুকূলে নয়! এখনো পরিবেশ অনুকূলে হয়নি। দরকার কি বাবা, পদত্যাগ করো না, আসো আমাদের সঙ্গে। আমাদের সঙ্গে আসো।
বিএনপির মহাসচিব শেষবারের মতো সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, শেষ বারের মতো সরকারকে বলতে চাই দয়া করে পদত্যাগ করুন। মানে মানে শান্তিতে আপনারা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারে হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যান। দেশের মানুষকে বাঁচতে দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুঃশাসন করছে। লুটপাট আর অর্থপাচার করছে।একজন এমপি ৬৮২ কোটি টাকা ডিল করেছেন। এ নিয়ে দুদক বা কেউ কিছু ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটিয়েছে। এর পরিবর্তন চাই। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরে যাক। সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাজমেরি এস এ ইসলাম ও আব্দুস সালাম প্রমুখ।
‘কৃষি উপকরণ ও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি: সরকারের অব্যবস্থাপনা-কৃষক এবং জনগণের নাভিশ্বাস’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে সোনালী দল, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সোনালী দলের সভাপতি অধ্যাপক গোলম হাফিজ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।
অনলাইন ডেস্ক :
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে বিএনপি ও তার সঙ্গীরা ছাড়া প্রায় ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এরই মধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ, জমা দেওয়া ও বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। সারা দেশের ৩২টি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী ছাড়া তেমন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। নামমাত্র কয়েকটি দল অংশ নেওয়ায় নৌকার প্রার্থীরা ‘টেনশনহীন’ ভাবেই সময় পার করছেন।
৩২ আসনের প্রতিযোগিতামূলক স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। সেখানে নামমাত্র ভোটে বিজয় নিশ্চিত হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে দলীয় কোনো বিষয় নেই, এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। কমিশন আচরণবিধি অনুযায়ী চলছে। প্রার্থীরা আদালত পর্যন্ত যেতে পারে। সেখানে আলটিমেটলি যে সিদ্ধান্তে আসবে সেটার ওপর আমাদের কোনো হাত নেই। এ ব্যাপারে বাধাগ্রস্ত করার কোনো প্রক্রিয়াতে আমরা নেই।
জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বিভিন্ন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও দলের প্রভাবশালী নেতার আসনে দলীয় কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেননি। তার মধ্যে ৩২টি আসন রয়েছে। এসব আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।
সেগুলো হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪. কুমিল্লা-৯ ও কুমিল্লা-১০, নোয়াখালী-৫, চট্টগ্রাম-৭, ৯ ও ১৩, কক্সবাজার-২, পঞ্চগড়-২, মাগুরা-১, বাগেরহাট-১, পটুয়াখালী-১, শরীয়তপুর-৩, সিলেট-৪ ও ৬, কিশোরগঞ্জ-৪, মানিকগঞ্জ-৩, ঢাকা-১, ঢাকা-৯, ঢাকা ১৫, নারায়ণগঞ্জ-৫, মাদারীপুর-১ ও ২, টাঙ্গাইল-১, টাঙ্গাইল ৮, ময়মনসিংহ-৯, ভোলা-২, বরিশাল-১, ঝালকাঠি-২, বগুড়া-৫ সিরাজগঞ্জ-২ এবং পাবনা-৫ আসন।
এসব আসনের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য আমির হোসেন আমু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শেখ হেলাল উদ্দিন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ক ম রুহুল হক, সাবের হোসেন চৌধুরী, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের আসন। এছাড়া আরো বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রার্থীরা আদালতে গেছেন। আদালতের রায় কী হয় সেটা তো আমরা বলতে পারি না। আগামী ১৭ তারিখের আগে এ ব্যাপারে মন্তব্য না করাই ভালো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিবিহীন ভোটে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন আওয়ামী লীগ, তাদের জোট ও সমমনা দলের প্রার্থীরা। এবার বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় জয়ী হওয়া ঠেকাতে ‘ডামি’ প্রার্থী রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপ প্রয়োগ না করতে দলীয় প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু দলীয় প্রধানের এমন নির্দেশনার পরও প্রভাবশালী নেতারা নামমাত্র ‘ডামি’ প্রার্থী দিয়েছেন। যাকে কেউ চিনেও না। যার নাম কেউ কখনো শুনেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দলটির সভাপতি। সেখানে নির্বাচনকে উৎসব ও প্রতিযোগিতামূলক করতে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্যান্য দলের কেউ প্রার্থী হলে সহযোগিতা ও উৎসাহ দেওয়ার জন্য দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসারও নির্দেশ দেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা-১৫ আসনের এক নেতা বলেন, এই আসনে বর্তমান এমপি কী যোগ্য? আর কেউ নেই। অবশ্যই আছে। অনেকেই নৌকার সঙ্গে লড়তে চান। কিন্তু কাউকেই করতে দেওয়া হচ্ছে না। নিজেদের মধ্যে বিজয় রাখতেই এই কৌশল নিয়েছেন দলীয় প্রার্থীরা। আর নেত্রী তো ‘ডামি’ প্রার্থীর কথা বলেছেন, ঢাকার অধিকাংশ আসনে অচেনা মুখকেই ‘ডামি’ প্রার্থী করা হয়েছে। নেত্রী যে উদ্দেশ্যে বলেছেন, নেতারা তার উল্টো করেছেন।
চলারপথে ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য জন্য তার দলের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে কেউ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে।
একইসঙ্গে তিনি উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’য় দেশবাসীর ভোট প্রত্যাশা করেন।
তিনি বলেন, “আপনারা আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এমনভাবে কাজ করবেন যাতে নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে।”
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আজ নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া এক ভার্চুয়াল ভাষণে একথা বলেন।
তিনি আজ বিকেলে আওয়ামী লীগের তেঁজগাও কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই নির্বাচনী জনসভায় যুক্ত হন। যার সাথে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নাটোর, পাবনা ও খাগড়াছড়ি সহ ৫টি জেলা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল। পরে এসব জেলার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি তাঁর দলের নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বলেছেন যাতে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন।
তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে জনগণ ও ভোটারদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। কোন দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বা নিচ্ছে না, তাতে কিছু যায় আসে না।”
তিনি বলেন, ভোট কারচুপির কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি আর বিএনপির কাজটা কি? জ্বালাও পোড়াও অগ্নি সন্ত্রাস, এটাই তারা ভালো বোঝে এটাই তারা করে।
তিনি বলেন, এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। কেননা সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিবাদি সংগঠন হচ্ছে বিএনপি।
শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চুরির অপরাধে দুই দুবার এদেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল সেটা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল। আর মার্চে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ঠিক একইভাবে তারা আবার ভোট চুরি করার চেষ্টা করেছিল ২০০৬ সালে। এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট করে সে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। পারে নাই। কাজেই দু’ দুবার যারা ভোট চুরির অপরাধে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত তাদের মুখে এখন গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়,ভোটের কথাও শুনতে হয় -এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য।
তিনি বলেন, ভোটের অধিকার জনগণকে আওয়ামী লীগই দিয়েছে এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। এবারে নির্বাচনে আপনাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এ ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ করে কোন মানুষের ক্ষতি যেন কেউ না করতে পারে। সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন এবং সে নির্বাচনে জনগণ অবাধে ভোট দেবে। ভোটের মালিক জনগণ তাদের সাংবিধানিক অধিকার।
“হ্যাঁ আমরা এটা উন্মুক্ত করেছি আমাদের নৌকার প্রার্থীও আছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছে এবং অন্যান্য দলের প্রার্থীও রয়েছে,” বলেন তিনি।
তিনি দলের প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা জনগণের কাছে যাবেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনি নির্বাচিত হবেন। কেউ কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না। এখানে কিন্তু কোন রকমের সংঘাত বা মারামারি, কোন কিছুই আমি দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, কোন সংঘাত হলে সংঘাত যদি আমার দলেরও কেউ করে তাদের কিন্তু রেহাই নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। সেটা মনে রাখবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার নির্বিঘেœ প্রয়োগ করবেন। যাকে খুশি বা যাকে পছন্দ তাকে ভোট দেবেন এবং সে জয়ী হয়ে আসবে। কেননা গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় করতে হবে। এর যেন কোন ব্যতয় না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহবান জানিয়ে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্যও এটা জরুরী বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ওপর নির্মিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান তেজগাঁও দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ, প্রার্থী, স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীবৃন্দ সংযুক্ত পাঁচ জেলার ভেন্যুতে উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ:) ও শাহ পরাণ (রহ:) এর মাজার জিয়ারত করে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এরপর দুপুর ২টায় নগরীর চৌহাট্টা এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন তিনি।
তিনি ২৯ ডিসেম্বর বরিশাল সফর করবেন এবং ওই দিন বিকেল ৩টায় জেলা শহরে একটি নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এরপর ৩০ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ সফর করবেন এবং গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া) আসনের জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। একই দিন মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি, এখন লক্ষ্য হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে স্মার্ট বাংলাদেশে প্রত্যেকটি ছেলে-মেয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। আজকে আমাদের ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ছয় লাখের অধিক। যারা ঘরে বসে আয় উপার্জন করতে পারে। তারা কোভিড- ১৯ এর সময়ও এটা করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নটা ‘সাসটেইনেবল’ হবে অর্থাৎ যে উন্নয়নটা স্থায়ী হবে এবং যার মাধ্যমে জনগণ সুযোগ পাবে নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর। উন্নয়নবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করব।
তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের অনেক মেধা আছে। যে মেধা অন্বেষণ করে তাকে কাজে লাগিয়ে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং তাদেরকে প্রযুক্তি জ্ঞান দিয়ে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো। আমাদের অর্থনীতিও উন্নত হবে, স্মার্ট হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন আমরা করে যাচ্ছি সেটা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য আমরা উন্নত, উদার, অগ্রসরমান, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। যেখানে উন্নয়নটা হবে সুষম। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই যেন সুন্দরভাবে সেখানে বাঁচতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা দুর্নীতি মুক্ত এবং সুষম উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কারণ এই দুর্নীতি সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিছু লোক হঠাৎ আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়। আর সৎভাবে যারা জীবনযাপন করে তাদের জীবনটা দুর্বিসহ হয়। সেজন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ আমরা ঘোষণা দেবো। ন্যায় ও সমতা ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা এবং অর্থনীতিকে সমতা ভিত্তিক করা এবং মানুষের জীবনমান উন্নত করাটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, “আমরা সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই,” শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই স্মার্ট বাংলাদেশ শুধু একটি শব্দ নয়। এর অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নটাকে স্থায়ী বন্দোবস্ত করা যাতে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এর সুফলটা ভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা। সেজন্য তাঁর সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছে। যেমন ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে তার রূপরেখা এখনই প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, শতবর্ষ পরে বাংলাদেশের অবস্থান কিরকম হবে? তা বিবেচনা করে ‘ডেলটা মহাপরিকল্পনা – ২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছি। জলবায়ুর অভিঘাত থেকে বাংলাদেশ কিভাবে মুক্ত থাকবে, তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পাঁচ জেলার উন্নয়নের বিভিন্ন খতিয়ান, এগুলোকে আরো সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে গড়ে তোলার নানা পরিকল্পনা তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁর সরকারের গৃহীত ১০ কোটির বেশি উপকারভোগীর সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচি, দেশের সকল গৃহহীণকে ঘর নির্মান ও তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা, ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আরো জ¦ালা, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি-উপবৃত্তি, মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে নতুন বই প্রদান এবং চিকিৎসা সেবাকে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য সারাদেশে গড়ে তোলা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসহ ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদানের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।
তিনি বর্গা চাষীদের জন্য বিনা জামানতে কৃষিঋণ এবং উদ্যোক্তা তৈরি হবার জন্য ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ প্রদানের পাশাপাশি কৃষকদের দোরগোড়ায় সার পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন। বিএনপি এই সারের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর গুলি চালিয়ে কৃষক হত্যা করেছিল সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিভাবে সে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন ছিল না। সেই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ৩০টি আসন পেয়েছিল। আর সেখানে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩ টি আসনে বিজয়ী হয়। এটা সকলকে মনে রাখতে হবে। এখন বড় বড় কথা বলে, তারা ভোটের কথা বলে।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী, সংবিধান লঙ্ঘনকারী, সেনা আইন লঙ্ঘনকারী এক জেনারেলের পকেট থেকে যাদের জন্ম সেই বিএনপি ভোটের কি বোঝে, সে প্রশ্নও তিনি তোলেন। ক্ষমতায় বসে থেকে একদিকে সেনাপ্রধান এবং অপরদিকে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটের আয়োজন এর মাধ্যমে তার সময়ে বিভিন্ন প্রহসনের নির্বাচনের প্রসঙ্গও তিনি তুলে ধরেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে যাদের জন্ম তাদের সকল কাজই অবৈধ, কারণ তারা মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে না।
তিনি সাম্প্রতিক রেলে অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, কিভাবে রেলে আগুন দিয়ে তারা মানুষ পোড়ালো। মাতা শিশু সন্তানকে বাঁচানোর জন্য বুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে সে অবস্থায় জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছে। হেলপার ঘুমিয়ে আছে আগুন দিয়েছে, হেলপার পুড়ে শেষ। ২০১৩ ও ১৪ সালে একই ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ছেলেকে ট্রাকে বসিয়ে রেখে বাবা গেছে মনে হয় পানি আনতে, সেই ট্রাকে আগুন দিয়েছে, ছেলে পুড়ে শেষ। সন্তান আগুনে ঝলসে যাচ্ছে বাবা কিছুই করতে পারছে না। এভাবেই সারা বাংলাদেশে তারা তান্ডব করেছে। সেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে ৫৮২টি স্কুল, ৭০টি সরকারি অফিস, ছয়টি ভূমি অফিস এবং ৩২৫২টি গাড়ি, ২৯টি রেল, নয়টি লঞ্চ তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছিল। এমনকি জজের এজলাসেও তারা আগুন দেয়। ঝালকাঠিতে বোমা মেরে জজ হত্যা করল। গাজীপুরে আইনজীবীদের উপর বোমা হামলা চালালো, সেখানো আইনজীবীদেরকে তারা আহত করল। এটাই বিএনপির চরিত্র, আর এখন আবার শুরু করেছে অগ্নি সন্ত্রাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বাসে আগুন দিচ্ছে, গাড়িতে আগুন দিচ্ছে, রেলে আগুন দিচ্ছে। মানুষ যেন শান্তিতে চলাচল করতে পারে এজন্য সরকার নতুন রেলের কোচ ক্রয় করেছে, সেখানে আগুন দিচ্ছে। কারণ মানুষের শান্তি দেখলে ওদের মনে অশান্তি জাগে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘কুলাঙ্গার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এই কুলাঙ্গার ২০০১ সালে হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া শুরু করেছিল। তাকে খাওয়া না দিয়ে কেউ ব্যবসা পেতো না। তার খাওয়ার কোন শেষ ছিল না। খেতে খেতে সে সবই খেয়ে ফেলেছে। মানি লন্ডারিং, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পলাতক আসামি এই তারেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আর রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। আর সেখানে বসে এখন নির্বাচন বানচাল করা সহ মানুষ হত্যার হুকুম দিচ্ছে।
তিনি বলেন, তারা বলে তারা নাকি গণতন্ত্র দেবে যাদের জন্মই গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি তারা কিভাবে গণতন্ত্র দিতে পারে সে প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশে দারিদ্রের হার আমরা ৪১ ভাগ থেকে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৮ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি, প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছি এমনকি কোভিড-১৯ এর সময় যখন বিশে^র অনেক উন্নত দেশের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়েছিল তখনও আমরা ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। দেশের মানুষের উন্নয়নে দিন-রাত পরিশ্রম করেই আমরা একাজগুলো করে যাচ্ছি। রাস্তা-ঘাট, পুল, ব্রীজ সহ দেশের যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নটা আমরা করেছি সেটা জনগণের মাথায় রাখতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে হবে এবং জনগণের তথা ভোটারের অংশগ্রহণ থাকতে হবে।
তিনি বলেন,“আর উন্নয়নের ধারাটাকে যদি অব্যাহত রাখতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগকেই সরকার গঠন করে জনগণের কল্যাণ সাধন করতে হবে।” বাসস