চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর গ্রাম। নদী ভিত্তিক গ্রাম হওয়ায় সবসময় এখানে ধরা পরে দেশী প্রজাতির মাছ। আর এই মাছ দিয়েই গ্রামটিতে উৎপাদন হয় শুঁটকি। নদীর তীরবর্তী স্থানে আট-দশ ফুট উঁচু বাঁশের মাচা বানিয়ে চলে এই শুঁটকির ব্যবসা। প্রতিবছর এখানে আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়ে থাকে। তবে এই মৌসুমে নদীতে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিক্রি কমার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর সহজশর্তে ঋণ পেলে শুঁটকি ব্যবসা আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, আশুগঞ্জের লালপুর গ্রামের এই মেঘনা পাড়ের শুঁটকি ব্যবসা শত বছরে ঐতিহ্য। এই শুঁটকি পল্লিতে বর্তমানে ২৬টি মাচা রয়েছে, যেটাকে স্থানীয় লোকজন বলেন ডাঙ্গি। তাদের দাবি, গোটা গ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭০ থেকে ৮০টি ডাঙ্গি রয়েছে। এসব ডাঙ্গিতে সময়ভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন। ২০ আড়তদারসহ প্রায় ১৫০ জন এখানে শুঁটকির ব্যবসা করেন। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদনের কাজ চলে। লবণযুক্ত ও লবণ ছাড়া মানভেদে কয়েক ধরনের শুঁটকি উৎপাদন হয় এই পল্লিতে।
যে-সব মাছের শুঁটকি করা হয়- পুঁটি, শোল, গজার, বোয়াল, ঘইন্না, টেংরা, চাপিলা, লাসু, পাঙাশ, রুই, গজার, শোল, পাবদা, কাইক্কা, পুঠা মাছ। গুণে মানে ভালো ও সুস্বাদু হওয়ায় লালপুরের শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ও ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী থেকে মাছ ধরে জেলেরা এনে যার যার ডাঙ্গির নিচে রাখে। তারপর সেখানকার মহিলারা বসে পরে মাছ কুটা-কুটিতে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা নয়, শিশু-কিশোরেরাও এসে তাদের অভিভাবককে সহযোগিতা করে। তারপর এগুলো কেটে সেই বাঁশের তৈরি মাচার ওপর দেওয়া হয় শুকাতে। পরে সেই মাছগুলো কয়েকদিন ধরে শুকিয়ে তৈরি হয় শুঁটকি। তারপর এগুলো সংরক্ষণ করে বাজারজাত করা হয়।
শুঁটকি ব্যবসায়ী সুকমল দাস জানান, তিন কেজি মাছ থেকে এক কেজি লবণযুক্ত ও পৌনে চার কেজি মাছ থেকে এক কেজি লবণ ছাড়া শুঁটকি হয়। প্রতি কেজি লবণযুক্ত পুঁটি শুঁটকির পাইকারি দাম ৬০০ টাকা ও লবণ ছাড়া প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে পুঁটি শুঁটকি প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা বিক্রি হয়। তাছাড়া শোল ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, বাইম ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা, গনিয়া ৮০০ টাকা, মাঝারি গনিয়া ৬০০ টাকা ও ছোট গনিয়া শুঁটকি ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়।
তবে চাহিদা অনুযায়ী নদীতে মাছ না পাওয়ায় উর্ধ্বমুখী মাছের দাম। তাই মানভেদে শুটকির দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়বে বলে জানিয়েছে সুকমল দাস।
ব্যবসায়ী তপন দাস বলেন, এ মৌসুমে মাছের দাম চড়া। তাই ব্যবসার লাভের জন্য শুটকির দামও বাড়াতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ না পাওয়ায় বিভিন্ন সমিতি ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। ফলে লাভের বড় অংশ তুলে দিতে হচ্ছে সমিতি ও এনজিওর হাতে।
ব্যবসায়ী লিটন চন্দ্র দাস জানান, গত ৫ বছর ধরে তিনি শুঁটকি উৎপাদন ও বিক্রি করছেন। তার ডাঙ্গিতে পুঁটি, বাইম ও চাপিলা শুকটি চাষ করেন তিনি। তবে মাছ সংকট ও অতিরিক্ত দামের কারণে উৎপাদন কমে এসেছে। আর যতটুকুই উৎপাদন হবে তা আগের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়াতে হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাজী আব্দুল কাইয়ূম খাদেম জানান, শুঁটকি পল্লির ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা রয়েছে। তারা জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা নিতে পারবে।
এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নদী ও খালবিলে পানি কম থাকায় এবার মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদন ও সংরক্ষণে শ্রমিক-ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জের বিভিন্ন ড্রায়ার মিলের কালো ধোঁয়া, ছাই ও রাইস ব্রানে (চালের উপরের স্বচ্চ পাতলা আবরণ) মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। অযোগ্য হয়ে পড়ছে ঘরবাড়িতে বসবাস, ব্যহত হচ্ছে মানুষের দৈনদিন চলাফেরা।
প্রতিনিয়ত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর-সর্দি-কাশিসহ শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ চোখের রোগে। বার বার এসব বিষয়ে মিল মালিকদের অবগত করা হলেও কোনো তোয়াক্কা করছেন না তারা। পরিবেশ নষ্ট হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে অধিকাংশ মিলের। এসব বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না এলাকার সাধারণ লোকজন। তাই আশুগঞ্জের কয়েকটি এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, এভাবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকলে পরিবেশের পাশাপাশি জনজীবন হুমকিতে পড়বে। চোখ হারাবে এই পথে চলাচলকারীরা। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বার বার বলা হলেও কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না মিল মালিকরা। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন বলছেন এই বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের উৎপাদিত ধান বেচাকেনা হয় আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর তীরে বিওসি ঘাটে অবস্থিত ধানের হাটে। এই হাট থেকে ধান সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে চাল রুপান্তর করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গড়ে ওঠে অসংখ্য চাতালকল। এখানে উৎপাদিত চাল ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন অন্তত লক্ষাধিক মণ চাল সরবরাহ করে থাকে। এতে এলাকার অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকলেও গত ৪-৫ বছরে উপজেলা বেশ কয়েকটি এলাকায় গড়ে উঠেছে ৪৫টি ড্রায়ার মিল। এদের মধ্যে আশুগঞ্জের সোনারামপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠে খান অটো-১ ও ২, আওলাদ এগ্রোফুড, শাহজালাল অটো, একতা অটো, কামরুল অটো, উন্দা মিয়া অটো, আলমনগর এলাকায় মেসার্স হাইটেক এগ্রো ফুড ইন্ড্রাস্টিজ,ভাই ভাই অটো রাইস মিল, ফারহান অটো রাইস মিল, সরকার অটো রাইস মিলসহ অধিকাংশ ড্রায়ার মিল থেকেই কালো ধোঁয়া, ধুলা ও ছাইয়ে এলাকাবাসীর জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এলাকাবাসীর জন্য গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ড্রায়ার মিলগুলো। ঘরবাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও মুক্তি মিলছে না। ছাই ও কালো ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে ঘরবাড়ি। রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন চোখে-মুখে পড়ছে এসব ছাই ধুলা। লোকজন বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর-সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও এলার্জিজনিত নানা রোগে।
ডায়ারগুলিতে বর্জ্য শোধনাগার না থাকা, কম উচ্চতায় চিমনি ব্যবহার, চিমনিতে ধুলা নিরোধক নিরাপত্তা জাল ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করা, তুষের বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার এবং পরিবেশ সুরক্ষা আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এমনটি হচ্ছে জানান তারা। ড্রায়ার মালিকদের বার বার মৌখিকভাবে এসব অভিযোগ জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। প্রতিটি বাড়িঘরের ছাদ-চালা-উঠান ছাই আর ধুলার স্তূপ পড়ে গেছে। একটু দাঁড়ালে গায়ে উড়ে পড়ছে ছাই ও ধুলার কনা। রাস্তা দিয়ে চলাচল করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চোখ খোলা রেখে চললেই চোখে পড়ছে রাইস ব্রান। যা খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু চোখে পড়লেই বিপদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার আলমনগর যাত্রাপুর মোড়ের একজন বাসিন্দা বলেন, ভাই ভাই অটো রাইস মিল, ফারহান অটো রাইস মিল ও সরকার অটো রাইস মিলের কারণে এখানে বসবাস করার কোনো পরিবেশ আর নাই। তাদের বললেও কোনো কাজ হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা পরিবেশের ওপর এই অত্যাচার চালাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আলমনগর এলাকায় আরো বেশ কয়েকটি ড্রায়ার মিল স্থাপনের কাজ চলমান। এর মধ্যে মেসার্স হাইটেক এগ্রো ফুড ইন্ড্রাস্টিজ এর চিমনি দিয়ে দেদারসে বের হচ্ছে কাল ধোঁয়া।
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের ৫ মালিকের মধ্যে একজন সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.শফিকুল ইসলাম। কথা হয় আরেকজন মালিক মো.আবু বকর সিদ্দিক এর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের সকল আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। মাঝে মাঝে কালো ধোঁয়া বের হলেও সেটা যেনো না বের হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আল মদিনা অটো রাইস মিলের ম্যানেজার বজলু মিয়া বলেন, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে আমাদের মিল থেকে কোনো ধুলা, কালো ধোঁয়া ও রাইসব্রান বের হয় না। আমাদের ময়লাগুলো নিজস্ব পুকুরেই যাচ্ছে। যার কারণে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
জেলা চালকল ও ড্রায়ার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি জিয়াউল করিম খান সাজু বলেন, আমরা ধুলা ও ছাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই গ্রহণ করে অনেকগুলো ড্রায়ারে স্থাপন করা হয়েছে।
আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নূপুর সাহা বলেন, বিভিন্ন সময়ে চোখে রাইস ব্রান নিয়ে অনেকেই আমাদের কাছে আসে। তাদের আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। বিভিন্ন চোখের ড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দেই। তবে এই সমস্যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এবং চোখে এই রাইসব্রান পড়তে থাকলে একসময়ে চোখ হারাতে হতে পারে। এছাড়াও ডায়রিয়া ও এলার্জিজনিত সমস্যা নিয়েও আমাদের এখানে লোকজন আসেন। এসবের মূল কারন হল ড্রায়ারের কাল ধোয়া ও রাইস ব্রান। দ্রুত এসব বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিমল চক্রবর্তী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সচল ১৫৫টি মিলের বিপরীতে মাত্র ৮৫টি মিলের পরিবেশের ছাড়পত্র আছে। বাকিগুলোও নজরদারির মধ্যে আছে। রাইস ব্রানসহ ধোঁয়া ছাইয়ের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ড্রায়ার মিলগুলির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জে ৪০ কেজি গাঁজাসহ তিন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় মাদকদ্রব্য বহনকারী একটি প্রাইভেটকারও আটক করা হয়।
আজ ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজার সামনে থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, পাবনা জেলার চাটমহর উপজেলার চাটমহর গ্রামের খন্দকার ইসতিয়ার আহমেদ রিয়াদ (২৫), শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর গ্রামের মোঃ তাফসির (২৪) ও একই এলাকার মোঃ তামিম (২২)।
বিকেলে জেলা পুলিশের মিডিয়া উইংস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল–আশুগঞ্জ) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন জামাতা ও শ্বশুর। তবে এ আসনে ভোটারদের মধ্যে আলোচনায় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঞা ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিনের নাম বেশি চাউর হচ্ছে।
এ আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ফলে এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নেই। তবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ সাতজন প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে জাপার প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঞা ও তাঁর শ্বশুর স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার (ঈগল) নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি নজর কাড়ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাঁরা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
এখানকার প্রার্থীরা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন (কলার ছড়ি), জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলটির অতিরিক্ত মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঞা, তাঁর শ্বশুর জাপার দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির (রওশন) সহসভাপতি জিয়াউল হক মৃধা (ঈগল প্রতীক), সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসানাত আমিনী ও বিএনপির দলছুট সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে তৃণমূল বিএনপির মাইনুল হাসান, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের ছৈয়দ জাফরুল কদ্দুছ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রাজ্জাক হোসেন। সমঝোতার কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহজাহান আলমকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, রেজাউল ইসলাম ভূঞা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার কোড্ডা গ্রামের বাসিন্দা। একই আসনে তাঁর শ্বশুর সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জামাই-শ্বশুরের দ্বন্দ্ব ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তখন তাঁরা একে অপরের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ান। রেজাউল তখন মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন। সে সময় ভোটের দুই দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হন রেজাউল। তবে শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা সিংহ প্রতীক নিয়ে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন। গত ৫ নভেম্বরের উপনির্বাচনেও জিয়াউল হক অংশ নিয়েছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সঙ্গে বর্তমানে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। নির্বাচনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির প্রার্থী হয়ে ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিন পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট। ওই নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে ৩৯ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। কোনো কোনো নেতা-কর্মীর ভাষ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ও জনপ্রিয়তার কারণে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন মঈন উদ্দিন।
রেজাউল ইসলাম ভূঞা বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দল সারা দেশে ২৬টি আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে, যার একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন। আশা করি, আওয়ামী লীগের সভাপতির আদেশ এখানে পালিত হবে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে হতাশ করবেন না।’
জাপার সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘কে নির্বাচন করল, সেটা দেখার বিষয় নয়। আমি এ জনপদে দুবার সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে নির্বাচন করব।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন থেকে সরে যেতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর কোনো চাপ নেই।’
চলারপথে রিপোর্ট :
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১১ জন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের শাহজাহান আলম, জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম (জুয়েল), ইসলামী ঐক্যজোটের আবুল হাসানাত, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) রাজ্জাক হোসেন, তৃণমূল বিএনপির মাইনুল হাসান, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পাটির কাজী মাসুদ আহমেদ, স্বতন্ত্র মঈন উদ্দিন ও জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় পার্টির রেজাউল ইসলাম ভূঞা ও আবদুল হামিদ এবং তরিকত ফেডারেশনের ছৈয়দ জাফরুল কদ্দুছ।
এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক দুইবারের এমপি জিয়াউল হক মৃধা ও জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব দলীয় প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঞা সম্পর্কে আপন শ্বশুর-জামাতা।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে জিয়াউল হক মৃধার মেয়ে জামাই রেজাউল ইসলাম ভূঁঞা মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এ কারণে তার শ্বশুর ও তৎকালীন জাপার ভাইস প্রেসিডেন্ট সাংসদ জিয়াউল হক মৃধার কর্মী-সমর্থকরা ঢাকা-কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। জিয়াউল হক এ আসনে পরপর দুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে রেজাউল মনোনয়ন পাওয়ায় এ আসনে জাপার প্রার্থিতা নিয়ে জামাই-শ্বশুর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। চলে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়।
তবে শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা রওশন এরশাদপন্থি এবং দলের বহিষ্কৃত নেতা। রওশনপন্থি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক তিনি। তাই দলীয় মনোনয়ন পাননি জিয়াউল হক মৃধা। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মৃধার মেয়ে জামাই রেজাউল মনোনয়ন জমা দিলেও একই দল থেকে মনোনয়ন জমা দেন আব্দুল হামিদ ভাসানী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঞা বলেন, ‘এ আসনে আব্দুল হামিদও আমাদের দল থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। যেমন গত নির্বাচনে বিএনপি একাধিক প্রার্থী জমা দিয়েছিলেন। যদি এরমধ্যে কেউ বাদ যায়! মূলত ওই আসনে আব্দুল হামিদ নির্বাচন করবেন।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক দুইবারের এমপি জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘সবশেষ উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমি রওশনপন্থি, (নির্বাচনে) রওশনপন্থিরা সবাই আছেন। জাতীয় পার্টি থেকে কে নির্বাচন করলো বা মনোনয়ন পেলো তা আমার দেখার দরকার নেই।’
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে অটোরিকশা চালকের পানির জগের আঘাতে মোশারফ হোসেন (৫৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
২৫ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের খোলাপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
মোশারফ হোসেন খোলাপাড়া দুল্লা গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাহিদ আহমেদ জানান, সন্ধ্যায় খোলাপাড়া বাজারে খোলাপাড়া মোল্লা বাড়ির সাইদুর রহমানের ছেলে অটোরিকশা চালক ইমরান (৪০) তার গাড়ি তুলে দেন মোশারফ হোসেনের পায়ে। এ ঘটনায় দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ইমরান পাশের চায়ের দোকানের পানির জগ দিয়ে মোশারফের মাথায় আঘাত করেন। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মোশারফ মারা যান।
ওসি আরো জানান, মোশারফের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর ঘাতক ইমরানকে আটক করা হয়েছে।