চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরের উৎপাদিত আখের রসের লালি দেশজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে। কৃষি নির্ভর বিজয়নগর উপজেলায় গত কয়েকযুগ ধরে উৎপাদিত হচ্ছে আখের রসের লালি। মূলত শীতকালেই এই লালি উৎপাদিত হয়। এই লালি পিঠা-পুলির সাথে খেতে পছন্দ করেন ভোজন রসিকরা। আবার অনেকে মুড়ির সাথেও খান এই লালি।
চলতি বছর প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার লালি বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টতা।
কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলা, বিজয়নগর উপজেলা, কসবা উপজেলা ও আখাউড়া উপজেলার কিছু এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে আখ চাষ করা হয়। এসব আখের রস থেকে লালি উৎপাদন করেন চাষীরা।
চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার ২৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়। এই আখ থেকে অন্তত ১শ টনেরও বেশি লালি উৎপাদন হবে আশা করছেন কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর, দুলালপুর ও বক্তারমুড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার বংশ পরস্পরায় বাণিজিক্যভাবে লালি উৎপাদন করে আসছে। প্রতিবছর শীতের শুরুতে শুরু হয় লালি তৈরির কাজ। মূলত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে লালি তৈরি ও কেনা-বেচা। প্রতি কেজি লালি বা তরল গুড় খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশ এলাকা থেকে মানুষ লালি তৈরী দেখতে যায় বিজয়নগরে। অনেকে ফিরে যাওয়ার সময় লালি নিয়ে যাওয়া সহ আখের রস খেয়ে যান। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পযন্ত চলে লালি তৈরির কাজ।
প্রথমেই চলে আখ মাড়াই। পরে মহিষের ঘানি দিয়ে আখ মাড়াই করে আখের রস সংগ্রহ করা হয়। পরে রস ছাকনি দিয়ে ছেকে রাখা হয় বড় কড়াইয়ে। পরবর্তীতে এই রস দুই থেকে তিন ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয়। জ্বাল দিয়ে রস লাল রং ধারণ করলে নামানো হয় কড়াই থেকে। এভাবেই তৈরি হয় মুখরোচক লালি বা তরল গুড়।
লালি নিতে আসা বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের শারমিন আক্তার জানান, প্রতি বছরই শীত মৌসুমে তিনি দুলালপুর থেকে লালি কিনে নিয়ে যান। তার শ্বশুরবাড়ির সবাই এই লালি খুবই পছন্দ করেন। তিনি জানান, পিঠার সাথে লালি খেতে খুবই ভালো লাগে।
দুলালপুর গ্রামের বাসিন্দা ও লালি উৎপাদনকারী মোহাম্মদ আলী ও রাকিব মিয়া জানান, কয়েক বছর আগেও তাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আখ চাষ করতো। বর্তমানে কমে যাচ্ছে আখ চাষীর সংখ্যা। আবার আখ কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। ঘানি টানানোর জন্য লাখ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দিয়ে মহিষ কিনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে লালি তৈরিতে যে খরচ পড়ছে, সে অনুযায়ি দাম পাওয়া যায় না।
একই গ্রামের আরেকজন লালি চাষী সহিদ মিয়া জানান, বংশ পরস্পরায় তিনি লালি তৈরি করে আসছেন। তবে ভালো লাভ না হওয়ায় বিগত সময়ের চেয়ে এবার কম জমিতে আখ চাষ করেছেন।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাব্বির আহমেদ জানান, লালিগুড় তৈরিতে কোন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয় না। ক্ষতিকর কোন উপাদান ব্যবহার না করায় সারাদেশেই লালির জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, লালি গুড় উৎপাদনের সংশ্লিষ্টদের উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিজয়নগরে বিলের পানিতে গোসল করতে নেমে জুঁই আক্তার (৮) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ ১৪ জুলাই শুক্রবার দুপুরে উপজেলার সিংগারবীল ইউনিয়নের আলিনগর বিজিবি ক্যাম্প-সংলগ্ন নরিন্দা বিলে এ ঘটনা ঘটে। জুঁই আক্তার পশ্চিম মিরাশানী এলাকার বাদল মিয়ার মেয়ে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাড়ির পাশের নরিন্দা বিলের পানিতে ডুবে যায় শিশু জুঁই আক্তার। পরে পরিবারের লোকজন ঘটনাটি টের পেয়ে মৃত অবস্থায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রাজু আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
চলমান বন্যায় ৪ উপজেলার ৮৬০টি পুকুরের অন্তত ৭৫৬ টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে সাড়ে ১৮ থেকে ১৯ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আখাউড়া উপজেলার খামারিসহ মাছ ব্যবসায়ীরা। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় পুকুর, দিঘি ও খামারের সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৮। এগুলোর মোট আয়তন ৬২১ হেক্টর। এসব জলাশয়ে প্রায় ৫০০ ব্যবসায়ী মাছ চাষ করেন। আর চাষির সংখ্যা ২ হাজার ১০৭। বন্যায় ১২১ দশমিক ৮৬ হেক্টর আয়তনের ৪৩০টি দিঘি, খামার ও পুকুরের সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা মূল্যের মোট ৪৫৬ টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আর ১ কোটি ১৫ লাখ পোনা পানিতে ভেসে গেছে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীর ১০ লাখ টাকার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়নের নিলাখাদ গ্রামের খামারি বলেন, ‘বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা সামলে ওঠা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। বন্যার পানিতে পাঁচ কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ করব, বুঝতে পারছি না।’
বন্যার পানিতে প্রায় দেড় কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ার দাবি করেছেন কর্ণেল বাজারের বাসিন্দা বাছির মিয়া। তিনি বলেন, পুকুরে মাছ মাত্র বড় হয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু বন্যার পানিতে সব মাছ ভেসে দেড় কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
মোগড়া গ্রামের বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, ‘পানি কমলেও আমার পুকুরে আর মাছ নেই। যা মাছ ছিল সব পানিতে ভেসে গেছে। প্রায় এক কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।’
এ বিষয়ে ক্ষয়ক্ষতি-সংক্রান্ত প্রাথমিক একটি তালিকা করেছে আখাউড়া উপজেলার মৎস্য কার্যালয়।
আখাউড়া উপজেলার মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে খামারিদের ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
এদিকে কসবা উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বন্যার পানিতে ২০০ পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। এগুলোর আয়তন ৩৮ হেক্টর। ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বড় মাছ ও ১০ লাখ টাকার পোনা পানিতে ভেসে গেছে। বন্যার পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামো ভেঙে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আখাউড়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয় জানিয়েছে, সদর উপজেলায় ৬০ হেক্টর আয়তনের ১৪৫টি পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ১২ লাখ পোনা ও ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার বড় মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অবকাঠামো ভেঙে যাওয়াসহ বন্যার পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ায় মোট ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বিজয়নগর উপজেলায় ১১ হেক্টর আয়তনের ৮৫টি পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ১৩ লাখ টাকা মূল্যের ১ লাখ পোনা ও ৪০ লাখ টাকার বড় মাছ পানিতে ভেসে গেছে। বন্যার পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামো ভেঙে যাওয়ায় মোট ৫৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির বলেন, বন্যার পানিতে ৮৬০টি পুকুর প্লাবিত হয়ে সাড়ে ১৮ থেকে ১৯ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। খামারি ও ব্যবসায়ী মিলিয়ে ৮৬০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
২০ আগস্ট রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া ইমিগ্রেশন-সংলগ্ন খাল দিয়ে ভারতে থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসতে শুরু করে। এরপর আখাউড়া উপজেলাসহ পর্যায়ক্রমে কসবা উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে পোস্টারে প্লাস্টিক ও ডিজিটাল ব্যানার লাগিয়ে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ১০ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আজ ২৮ মে মঙ্গলবার বিকেলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এই জরিমানা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন নিশ্চিত করণে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক।
জরিমানাকৃত সমর্থকদের প্রার্থীরা হলেন- নাছিমা মূকাই আলী (ঘোড়া), জাবের আহমেদ জয় (আনারস) ও কাজী রফিকুল ইসলাম (কাপ-পিরিচ) প্রতীক।
বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহবুবুল হক জানান, বিজয়নগর উপজেলায় তিন জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে ‘উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬’ এর সংশ্লিষ্ট বিধি লঙ্ঘনের অপরাধে ১০ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের নির্বাচনি বিধিমালা যথাযথভাবে পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
চলারপথে রিপোর্ট :
বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাজু আহমেদ এর নির্দেশনায় চম্পকনগর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এস আই আবুল কালাম এর নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্সসহ আজ ৬ মে সকাল সাড়ে ১০ টায় ২৮ কেজি গাঁজা, ১টি সিএনজিসহ ১ জন গ্রেফতার করেছে বিজয়নগর থানা পুলিশের একটি দল।
গ্রেফতারকৃত মাদক কারবারি হলো উপজেলার মিরাশানী গ্রামের আব্দুল মতিন ভূইয়ার ছেলে মোঃ বশির মিয়া (৩১)।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজয়নগর উপজেলার আউলিয়া বাজার থেকে চম্পকনগর বাজার যাওয়ার পথে সন্দেহজনক সিএনজিতে তল্লাশী চালিয়ে ২৮ কেজি গাঁজা, ১টি সিএনজিসহ ১ জন গ্রেফতার করা হয়।
বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাজু আহমেদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ২৮ কেজি গাঁজা, গাঁজা পাচারের কাজে ব্যবহারিত একটি সিএনজিসহ ১জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে বিজয়নগর থানায় সংশ্লিষ্ট মাদকদ্রব্য আইনে মামলা রুজু করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিজয়নগরে দেড় মণ গাঁজাসহ একজনকে গ্রেফতার করেছে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
গতকাল ১০ জুলাই বুধবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার পাইকপাড়া হাটখোলা গ্রাম থেকে গাঁজাসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার মো. ইউসুফ আলী (৬০) জেলার বিজয়নগর উপজেলার পাইকপাড়া (পশ্চিমপাড়া হাটখোলা) গ্রামের মুসকত আলীর ছেলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার পাইকপাড়া (পশ্চিমপাড়া হাটখোলা) গ্রামের ইউসুফ আলীর বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার বসতঘর তল্লাশি করে দেড় মণ (৬০ কেজি) গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো জানান, অভিযানের সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে নূর ইসলাম ও লোকমান খাঁ নামে দুই মাদক কারবারি পালিয়ে যায়। তাদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিজয়নগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।