চলারপথে রিপোর্ট :
নৈশকোচে ডাকাতির সাথে জড়িত ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ। সোমবার রাতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।
আজ ১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে পীরগঞ্জ থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে রংপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিয়া সুলতানা এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের আগাচতরা গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে ফিরোজ মিয়া (২৮), কাবিলপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান ওরফে খোকা মিয়ার ছেলে মেহেদি হাসান (২৫), বড়আলমপুর ইউনিয়নের বড়আলমপুর গ্রামের মিয়ামত আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩৮), টুকুরিয়া ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে শাহজাহান আলী (৩০), লুন্ঠিত স্বর্ণ ক্রয়কারী রুহুল আমিনের ছেলে মনোয়ার হোসেন ওরফে মজিদ (৩৮)।
পুলিশ জানায়, ঢাকা গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা কুড়িগ্রাম ভুরুঙ্গামারিগামী পরিবহনের নৈশকোচে ১৩ জানুয়ারি ভোর রাতে ডাকাতি হয়। ওই ঘটনায় বড়দরগাহ হাইওয়ে থানা পুলিশ গাড়িটি আটক করে ড্রাইভার, হেলপার ও গাড়ির মালিককে পলাশবাড়ি থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করেন। প্রাথমিক তদন্তের পর সীমানা নির্ধারণ বিষয়ক জটিলতার কারণে ১৫ জানুয়ারি পীরগঞ্জ থানায় মামলা রুজু হয়। এ সময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ৫টি চাকু ও মালামালের মধ্যে স্বর্ণ সাদৃশ্য কানের দুল, স্বর্ণের নাকফুলসহ ৮টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। যাত্রীদের নিকট থেকেঅর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত ফিরোজের বিরুদ্ধে আরও ৩টি ডাকাতির মামলা, গ্রেফতারকৃত মেহেদির বিরুদ্ধে ২টি ডাকাতির মামলাসহ ৩টি ওয়ারেন্ট, ব্যবসায়ী গ্রেফতারকৃত মনোয়ারের বিরুদ্ধে ১টি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
চলারপথে রিপোট
প্রেমের টানে এবার জয়পুরহাটে এসেছেন আনা মারিয়া ভেলাস্কো (৪১) নামে ফিলিপাইনের এক নারী। জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার আব্দুল্লাহ হেল আমানের (৪২) সঙ্গে ফেসবুকে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আজ ৩ সেপ্টেম্বর রবিবার তিনি আমানের ভাড়া বাসায় আসেন। এরপর দুপুরে তারা বিয়ে করেন।
আব্দুল্লাহ হেল আমানের গ্রামের বাড়ি ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মিনিগাড়িতে। তিনি ক্ষেতলাল পৌরসভার থানা বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সেখানে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। আনা মারিয়া ভেলাস্কো ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা শহরের বাসিন্দা। বিদেশি নববধূকে দেখতে এলাকার অনেকে আমানের বাড়িতে ভিড় করছেন।
আমানের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, ফিলিপাইনের নারী আনা মারিয়া ভেলাস্কোর সঙ্গে আমানের দুই বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আনা মারিয়া ভেলাস্কো চাকরির সুবাদে সৌদি আরবের জেদ্দায় বসবাস করেন। সেখান থেকে শনিবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর আব্দুল্লাহ হেল আমান গাড়ি যোগে রোববার সকালে আনা মারিয়া ভেলাস্কোকে নিয়ে ক্ষেতলাল পৌরসভার ভাড়া বাসায় পৌঁছান। পরে দুপুরে দুজনে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের সময় ওই নারীর নতুন নাম মরিয়ম আমান রাখা হয়।
ফিলিপাইনের নারী আনা মারিয়া ভেলাস্কো বলেন, প্রেমের টানে আব্দুল্লাহ হেল আমানকে বিয়ের জন্য স্বেচ্ছায় এখানে এসেছি। আমরা বিয়ে করেছি। তার পরিবার আমাকে মেনে নিয়েছে।
আব্দুল্লাহ হেল আমান বলেন, আমাদের দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে খ্রিস্টান ধর্মের। কিন্তু তিন বছর পূর্বে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। সে সৌদি আরবে চাকরি করতো। সেখান থেকে ভালোবাসার টানে আমাকে বিয়েহের উদ্দেশ্যে এখানে চলে আসে। আমরা শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করেছি।
ক্ষেতলাল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আনা মারিয়া ভেলাস্কো ফিলিপাইনের নাগরিক। তিনি চাকরির সুবাদে সৌদি আরবের জেদ্দায় বসবাস করেন। সেখান থেকে আব্দুল্লাহ হেল আমানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়। প্রেমের টানে তিনি এখানে স্বেচ্ছায় এসে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হয়েছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
আগামী বছর থেকে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে একটি জাতীয় মেধাতালিকা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
আজ ১৫ মার্চ বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর কলেজে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান মেলায় তিনি এ কথা জানান।
তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞান মেলা-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হয়, একই আদলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে আগামী বছর মাত্র একটি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটি ভর্তি পরীক্ষা হবে। শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে একটি জাতীয় মেধাতালিকা করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এর ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানি কমবে, ব্যয়ও কমবে।
নতুন কারিকুলাম সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা মুখস্ত নির্ভরতা কমিয়ে হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ফলে শিক্ষার্থীরা অর্জিত জ্ঞান বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং প্রসঙ্গে ডা. দীপু মনি বলেন, র্যাগিং অন্যান্য সামাজিক সমস্যার মতই একটি সমস্যা। আইন করে এটি বন্ধ করা যাবে না। র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান মেলা উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্।
বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণকারী কলেজগুলোর অধ্যক্ষ ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকদের অংশগ্রহণে ‘বিজ্ঞান শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. শরীফ এনামুল কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো প্রফেসর ড. হাসিনা খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার ও দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ সাদিকুজ্জামান সুমনসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী ও গবেষক বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান শেষে বিজ্ঞান প্রকল্প প্রদর্শনী ও কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। উপস্থিত ছিলেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. ফকির রফিকুল আলম, কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন দপ্তরের পরিচালক রফিকুল আকবর, আয়োজক কমিটির সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত খুলনা বিভাগের বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের ১৪টি কলেজ এই বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণ করে। কলেজগুলোর মধ্যে রয়েছে- কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, কুমারখালী সরকারি কলেজ, ভেড়ামারা সরকারি কলেজ, ড. ফজলুল হক গার্লস কলেজ, এস এম জোহা কলেজ, গাংনী কলেজ, শোমসপুর আবু তালেব ডিগ্রি কলেজ, মেহেরপুর সরকারি কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, পিপলস কলেজ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ, মুজিবনগর সরকারি কলেজ, দৌলতপুর কলেজ, আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজ।
বিজ্ঞান মেলায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মেলায় কলেজের শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং উদ্ভাবনী বিভিন্ন বিজ্ঞান-প্রকল্প নিজ নিজ স্টলে প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া মেলায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবনী প্রকল্প প্রদর্শনের জন্য একটি স্টল ছিল।
অনলাইন ডেস্ক :
বিশ্বব্যাপী টেকসই, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ খাদ্য সম্মেলনে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই সঙ্গে তিনি টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্য অর্জনে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানান।
আজ ২৪ জুলাই সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে জাতিসংঘের খাদ্য ব্যবস্থাপণা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।
টেকসই, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতে ৫ দফা প্রস্তাবে আর্থিক প্রণোদনা, খাদ্য ও সার রপ্তানির বিধি-নিষেধগুলো তুলে নেওয়া, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ফুড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, প্রযুক্তি বিনিময়, খাদ্য অপচয় রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সারা বিশ্বে ক্ষুধা-দারিদ্র্য-অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের কষ্টের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বৈশ্বিকভাবে ৬৯০ মিলিয়ন মানুষ এখনও অপুষ্টিতে ভুগছে, প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই এবং প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষ সুষম খাবার থেকে বঞ্ছিত।
তিনি বলেন, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট খাদ্য, সার, জ্বালানি ও আর্থিক সংকট বিশ্বজুড়ে ক্ষুধা ও অপুষ্টির সমস্যাকে ঘনীভূত করেছে।
সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহের অক্ষমতার জন্য কৃষি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যই একমাত্র প্রতিবন্ধকতা নয়।
তিনি বলেন, সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারলে আমরা বিশ্বব্যাপী টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে পারব।
জাতিসংঘের খাদ্য সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ দফা প্রস্তাব
প্রথমত, আধুনিক কৃষিতে বিনিয়োগের জন্য বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে ‘ব্ল্যাক সি গ্রেইন ডিল’-কে চালু রাখার পাশাপাশি খাদ্য ও সার রপ্তানির বিধি-নিষেধগুলো তুলে নেওয়াসহ যে কোন বাণিজ্য বাঁধা অপসারণের লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত দরকার।
তৃতীয়ত, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ‘ফুড ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার রূপান্তরের লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।
চতুর্থত, কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল রেখে ন্যানো-প্রযুক্তি, বায়ো-ইনফরমেটিক্স ও অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তিগুলো সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
পঞ্চমত, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের অপচয় রোধে তরুণ সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরের প্লেনারি হল রুমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, মন্ত্রী, রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্লেনারি হল ছাড়াও জাতিসংঘের সদরদপ্তরে গ্রিন রুম, রেড রুম, ইরান রুমসহ বেশ কয়েকটি হল রুমে বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হয়। এসব রুমে বিপুল সংখ্যক শ্রোতা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন এবং করতালির মাধ্যমে তার বক্তব্যকে সমর্থন জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কামাল দহল, সামাও এর প্রধানমন্ত্রী ফিয়ামি নাওমি মাতাফা, ইতালির উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যান্তেনিও তাজানি, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
২৪ থেকে ২৬ জুলাই রোমে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আয়োজিত জাতিসংঘ খাদ্য ব্যবস্থাপণা সম্মেলনে ২০টির বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ ১৬০টির বেশি দেশ থেকে প্রায় ২ হাজারের অধিক প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করছেন।
কৃষিতে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের সরকার যখন দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয় তখন আবার ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি দিয়ে শুরু করি।
তিনি বলেন, আমরা কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি প্রদান, ১০ টাকায় কৃষকের জন্য ব্যাংক হিসাব চালুকরণ, শৃঙ্খলাপূর্ণ সার বিতরণ ব্যবস্থাসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এরফলে, ২০১৩ সালের মধ্যে আমরা শুধু খাদ্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণতাই অর্জন করিনি, বরং খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হই।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন কতটা বেড়েছে তার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এফএও-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ খাদ্য উৎপাদনকারী ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০০৮-০৯ অর্থছরে দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ৩২.৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯.৪ মিলিয়ন মেট্রিক টনে।
তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ বছর পর্যন্ত প্রতিবছর দেশে সবজি উৎপাদন গড়ে ৫ শতাংশ এবং ফল উৎপাদন গড়ে ১১ শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশ ধান ও মাছ উৎপাদনে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, সবজি উৎপাদনে ৩য় এবং আলু উৎপাদনে ৬ষ্ঠ।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদানের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান জানান, বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ১১.৬৬%। তবে আমাদের কর্মশক্তির প্রায় ৪০.৬% কৃষিতে নিয়োজিত। আমাদের জিডিপিতে মৎস্যখাতের অবদান ২.৪৩% এবং প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১.৯০%।
বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষি গবেষণা ও উদ্ভাবনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। দেশে বর্তমানে ৮টি সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৪ বছরে ৬৯০টি উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল শস্যের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা লবণাক্ত-সহিষ্ণু ধান উদ্বাবন করেছেন এবং খরা ও জলমগ্ন-সহিষ্ণু ধান উদ্বাবনের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
কৃষিকে আধুনিক ও যান্ত্রিকীকরণে সরকারের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে ২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রায় ৮১ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছি। সার, বিদ্যুৎ ও সেচ ইত্যাদির জন্য ১ লাখ ২ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে ২৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কৃষি ও খাদ্যপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে উৎপাদন হতে শিপমেন্ট পর্যন্ত উত্তম কৃষি চর্চা, হাইজিন প্র্যাকটিসেস, গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস অনুসরণ করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব স্থাপন করে দেশি পণ্যের মান নিশ্চিত করার দিকে সরকার মনোনিবেশ করেছে বলে জানান তিনি।
আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের কৃষি উদ্ভাবন ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে আগ্রহ প্রকাশ করার কথা উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।
জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আয়োজিত ফুড সিস্টেম সামিটে যোগ দিতে রোববার (২৩ জুলাই) স্থানীয় সময় বিকেলে ইতালির রোম আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফর শেষে আগামী বুধবার দেশে ফিরবেন তিনি।
অনলাইন ডেস্ক :
ট্রেনের টিকিট কাটার ক্ষেত্রে নানা কড়াকড়ি ও তদারকির পরও থেমে নেই কালোবাজারি। এই কালোবাজারির কারণে সাধারণ ক্রেতারা সহজে টিকিট পান না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
আদতে টিকিট কাটার পুরো প্রক্রিয়া রক্ষণাবেক্ষণে যারা দায়িত্বরত, তারাই জড়িত এই কালোবাজারির সিন্ডিকেটে।
এই চক্রটি বিভিন্ন কারসাজি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে স্বাভাবিক সময়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে থাকে। আর ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে টিকিটপ্রতি দাম বেড়ে যায় ৩-৪ গুণ পর্যন্ত।
বাড়তি এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ পায় সরাসরি সিন্ডিকেটে জড়িত সদস্যরা। আর বাকি ৫০ শতাংশ চলে যায় কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের হাতে। যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় শুধু দুটি সিন্ডিকেটের হাতেই প্রতিদিন চলে যাচ্ছে প্রায় ৫০০ টিকিট।
দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের ১৪ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব। আজ ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে এক হাজার ২৪৪টি আসনের টিকিট, ১৪টি মোবাইল ফোন এবং টিকিট বিক্রির নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সেলিম (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম (৬২), অবনী সরকার সুমন (৩৫), হারুন মিয়া (৬০), মান্নান (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে ডাবলু (৫০), ফারুক (৬২), শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), জুয়েল (২৩), আব্দুর রহিম (৩২), উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), মোর্শিদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২) ও জোবায়ের (২৫)।
এদের মধ্যে সেলিম ও উত্তম চন্দ্র দাস ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির দুই হোতা, যাদের নিজেদের নামে ‘সেলিম সিন্ডিকেট’ ও ‘উত্তম সিন্ডিকেট’ পরিচিত।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে সেলিম এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনে উত্তমের নেতৃত্বে এই চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে মহানগর প্রভাতী, তূর্ণা নিশিথা, চট্টলা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল।
সেলিম ও উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা উপযুক্ত সময় বুঝে সংগ্রহকৃত টিকিট নিয়ে রেলস্টেশনের ভেতরে অবস্থান করতেন। রেলস্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া সাধারণ যাত্রীদের কাছে তারা টিকিট বিক্রির জন্য ঘোরাঘুরি করতেন এবং অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রি করতেন।
এছাড়া ট্রেন ছাড়ার সময় যতো ঘনিয়ে আসতো তাদের মজুদকৃত কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বাড়তো। সুযোগ বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকিটের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দিতেন তারা।
ঈদসহ বিভিন্ন উপলক্ষে ছুটিকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তাররা প্রতিটি টিকিট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করতেন। সাধারণত প্রতিটি টিকিট তারা দেড় গুণ থেকে দুই গুণ বেশি দামে বিক্রি করতেন। এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ গ্রেপ্তাররা নিতেন এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হতো।
গ্রেফতার উত্তম ও সেলিম সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
যেভাবে টিকিট যেতো সিন্ডিকেটের হাতে
র্যাব জানায়, গ্রেফতার সেলিম এবং উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা প্রথমত ট্রেনের কাউন্টারে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ যাত্রী, রেলস্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশেপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাচালক ও দিনমজুরদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতেন। যেহেতু প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে চারটি টিকিট দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে চারটি করে টিকিট সংগ্রহ করার বিনিময়ে ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো।
এছাড়া, কাউন্টারে থাকা কিছু অসাধু টিকিট বুকিং কর্মচারীর যোগসাজশে তারা বিভিন্ন সাধারণ যাত্রীর টিকিট কাটার সময় দেওয়া এনআইডি সংগ্রহ করে রাখতেন। পরে সেগুলো ব্যবহার করে সংরক্ষণকৃত প্রতিটি এনআইডি দিয়ে চারটি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতেন। এভাবে তারা প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক টিকিট সংগ্রহ করতেন।
অনেক ক্ষেত্রে টিকিট কাউন্টারে নিজেরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতেন চক্রের সদস্যরা। আবার অনেক সময় কৌশলে লাইনে অপেক্ষমাণ টিকিটপ্রত্যাশী সাধারণ যাত্রীদের এনআইডি ব্যবহার করে চারটি টিকিট ক্রয় করিয়ে তিনটি টিকিট নিজেরা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নিতেন।
এছাড়া, ঈদ, পুজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে গ্রেফতারকৃতরা রেলস্টেশনে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারী এবং অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভার রুম বা আইটির সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের কাছে সংরক্ষিত জনসাধারণের এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে তারা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতেন।
পাশাপাশি চক্রটি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকিট কেটে সেগুলো তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতো। এমনকি স্টেশনে থাকা তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিটও সংগ্রহ করতো। সেসব টিকিটের মূল্য কাউন্টারের বুকিং কর্মচারীদের সঙ্গে তারা ভাগ করে নিতো।
এভাবে গ্রেফতারকৃতরা অবৈধভাবে বিভিন্ন পন্থায় বিপুল সংখ্যক ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতেন। যার ফলে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি রেলওয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
র্যাব বলছে, গ্রেফতার সেলিম দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় টিকিট কালোবাজারির দায়ে ৭টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন। তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত হন।
গ্রেফতার আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম প্রায় ১৫ বছর ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তিনি সেলিমের অন্যতম প্রধান সহযোগী। মূলত তার দায়িত্ব ছিল কাউন্টার থেকে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা।
গ্রেফতার উত্তম প্রায় ১৫ বছর ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তার সহযোগী গ্রেফতার আলী ও ফারুকসহ রাজধানীর আশকোনা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং এই বিষয়টি কাজে লাগিয়ে রেলস্টেশন এলাকায় সব সময় অবস্থান করে টিকিট কালোবাজারি চক্র গড়ে তোলেন।
গ্রেফতার বাকিরা দেশের বিভিন্ন রুট সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন, যার ফলে তারা সেসব রুটের যাত্রীদের ম্যানেজ করে টিকিট বিক্রি করতেন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা এই কালোবাজারির বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি, যারা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত এমন কিছু নামও পেয়েছি। তাদের বিষয়ে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবো। প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাউন্টারম্যান, সহজ ডটকমের কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। এমনকি স্টেশনে যারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এমন কয়েকজনেরও এই সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
অনলাইন ডেস্ক :
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল আজ ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী।
আজ সকালে রাজধানীর বকশি বাজারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার এ ফলাফল প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ শিক্ষার্থী। আলিম পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে নয় হাজার ৬১৩ পরীক্ষার্থী। ভোকেশনাল/বিএম/ডিপ্লোমা ইন কমার্সে পাসের হার ৯৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৯২২ শিক্ষার্থী।
গত বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সেবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯২ হাজার ৩৬৫ শিক্ষার্থী।
পরীক্ষায় বিঘ্ন, ফল নির্ধারণেও ভিন্নতা
গত ৩০ জুন থেকে সারা দেশে একযোগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। এবার পরীক্ষা দেয় ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার কারণে গত ১৮, ২১, ২৩ ও ২৫, ২৮ জুলাই ও ১ ও ৪ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সবশেষে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন সূচিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে যেগুলো হয়েছে সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের দাবি নিয়ে শত শত পরীক্ষার্থী নজিরবিহীনভাবে ২০ আগস্ট দুপুরে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে। পরে তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবশিষ্ট পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
কীভাবে ফলাফল প্রকাশ হবে, তা নিয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠিত বিষয়গুলো পূর্ণ মানে এবং বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর ক্ষেত্রে শুধু পরীক্ষার্থীদের এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুসারেই প্রকাশিত হলো ফলাফল।
যেভাবে মিলবে ফলাফল
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আবুল বাশার জানান, দুই পদ্ধতিতে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট www.dhakaeducationboard.gov.bd, www.educationboardresults.gov.bd, www.eduboardresults.gov.bd-এ রেজাল্ট (Result) কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন (EIIN) এন্ট্রি করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক এবং রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের মাধ্যমে রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে।
এসএমএসের মাধ্যমেও ফলাফল সংগ্রহ করা যাবে। এজন্য HSC Board name (first 3 letters) Roll Year টাইপ করে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে। উদাহরণ: HSC Dha 123456 2024 লিখে 16222-তে পাঠাতে হবে। প্রি-রেজিস্ট্রেশন করেও ফল জানতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা।