নাসিরনগরে জমিতে পড়েছিল গৃহবধূর রক্তাক্ত লাশ

নাসিরনগর, 20 January 2024, 730 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে জমি থেকে এক গৃহবধূর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিবারের দাবি, শান্তাকে তাঁর স্বামী হত্যা করেছে। ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাসিরপুর গ্রামের ফসলি জমি থেকে গৃহবধূ শান্তা আক্তারের (২৩) মরহেদ উদ্ধার করা হয়।

banner

শান্তা পূর্বভাগ ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের মিনহাজ মিয়ার স্ত্রী ও উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাতমণ্ডল গ্রামের শিরু মিয়ার মেয়ে। তাঁর স্বামী মিনহাজের দাবি, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে শান্তার পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেছেন মিনহাজ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় বছর আগে মিনহাজ ও শান্তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই মিনহাজ যৌতুকের জন্য শান্তাকে মারধর করতেন। বিভিন্ন সময় পরিবারের কাছে টাকা দাবি করতেন। টাকা না দিলে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। এ নিয়ে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিনহাজের বিরুদ্ধে মামলাও করেন শান্তা। সম্প্রতি আদালত শান্তার পক্ষে রায় দেন এবং ৭ লাখ টাকা জরিমানাও করেন মিনহাজকে। এ নিয়ে মিনহাজ ক্ষুব্ধ ছিলেন।

আরো জানা গেছে, গত বুধবার শান্তার চাচি মারা যান। এ সময় তাদের বাড়িতে আসেন মিনহাজ। তিনি শান্তাকে আদালতের মামলা তুলে নিতে বলেন এবং তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হন মিনহাজ ও শান্তা। পর দিনই শান্তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

শান্তার মা নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমার মাইয়াডারে যৌতুকের টাকার লাইগ্যা মাইরালাইছে। আমরা না করছিলাম হের জামাইরে (স্বামী) যেন বিশ্বাস না করে। আমি আমার মাইয়্যার (মেয়ে) খুনের বিচার চাই।’

নাসিরনগর থানার ওসি সোহাগ রানা বলেন, লাশের মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল। তার বুকের ওপর পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া গেছে। দেখে মনে হচ্ছে এটি হত্যা। তদন্তের প্রয়োজনে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হবে।

Leave a Reply

অবশেষে না ফেরার দেশে চলেই গেলো…

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন মাগুরায় Read more

শুক্রবার শপথ নিচ্ছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক…

অনলাইন ডেস্ক : কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগামীকাল ১৪ মার্চ শুক্রবার Read more

ঢাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করতে আগ্রহী…

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় খাল Read more

রাস্তায় চালাতে না পারলেও লাল রঙের…

অনলাইন ডেস্ক : ঘোষণা অনুযায়ী নতুন একটি ঝকঝকে লাল টেসলা Read more

‘অপারেশনাল হল্ট’ কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন নির্বাচন…

অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিজেদের অধীনে রাখতে এবার Read more

টাঙ্গাইলে আন্তর্জাতিক কিডনি দিবস পালিত

অনলাইন ডেস্ক : ‘কিডনি রোগ জীবননাশা- প্রতিরোধই বাঁচার আশা’ এই Read more

ভারতের দিল্লিতে ব্রিটিশ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে…

অনলাইন ডেস্ক : ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যুক্তরাজ্যের এক নারীকে গণধর্ষণের Read more

ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে ভাই নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে এক স্কুল শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে Read more

মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি যুবক মাজেদ…

আল আমিন, মালয়েশিয়া থেকে : মালয়েশিয়ায় রাস্তা পার হওয়ার সময় Read more

নবীনগরে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার তিতাস নদী থেকে Read more

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা উত্তোলন…

হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি যুক্তরাষ্ট্রের Read more

ইতালিতে বৃহত্তর নোয়াখালী বাংকার সমিতির ইফতার…

ফয়সাল, ইতালি থেকে : পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে প্রতি বছরের Read more

মায়ের অভিযোগে মাদকসেবীর কারাদণ্ড

নাসিরনগর, 13 June 2024, 449 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগর ইব্রাহিম মিয়া (২৫) নামে এক মাদকসেবীকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

banner

আজ ১৩ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেট মো: ইমরানুল হক ভূঁইয়া তাকে এই সাজা দেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, ইব্রাহিম মাদকাসক্ত হয়ে মারধর করে এবং অশ্লীলভাষার গালমন্দ করে। এ ঘটনায় মায়ের অভিযোগের আলোকে নাসিরনগর থানার এস আই মো: মাঈনুদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ নাসিরনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের দাতঁমন্ডল নিজ বাড়ি থেকে মাদক সেবনকারী ইব্রাহিমকে আটক করে। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর সংশ্লিষ্ট ধারায় আটককৃত দাতঁমন্ডল গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে ইব্রাহিমকে ১ বছরের বিনাশ্রমে কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে ১০০ টাকা অর্থদন্ড করা হয়। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ইব্রাহিমকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

নাসিরনগর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মো: ইমরানুল হক ভূইয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের মাদক বিরোধী মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে।

বিএনপি নেতা একরামুজ্জামানকে নাসিরনগরে অবাঞ্ছিত ঘোঘণা

নাসিরনগর, 29 November 2023, 783 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-(নাসিরনগর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করা বিএনপির চেয়ারপার্সনের পদ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত সৈয়দ এ কে একরামুজ্জানকে এবার অবাঞ্চিত ঘোষনা করেছে উপজেলা বিএনপি।

banner

আজ ২৯ নভেম্বর বুধবার দুপুরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম.এ. হান্নান ও সাধারণ সম্পাদক কে এম বশির উদ্দিন স্বাক্ষরিত ফেসবুকে দেয়া এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানা গেছে।

সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১- (নাসিরনগর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করতে গত সোমবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। এরপর গত মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানকে ‘দলীয় শৃংখলা পরিপন্থী কর্মকান্ডের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির দলীয় প্যাডে লেখা অবাঞ্ছিতের ঘোষণাটি নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেন এম.এ. হান্নান। নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিবৃতি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি কমিটি দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানকে বহিস্কার করেছে। বিএনপির নাসিরনগর উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে এই বহিস্কৃত নেতাকে নাসিরনগরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হান্নান বলেন, একরামুজ্জামানকে উপজেলার সকল জায়গায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

ইজারা নিয়ে মুখোমুখি দুই উপজেলার জেলে

নাসিরনগর, সরাইল, 13 May 2023, 2381 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বিল শাপলা জলমহাল ইজারা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলার জেলেরা। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। নাসিরনগরের জেলেরা বলছেন, বংশ পরম্পরায় ওই বিলে মাছ ধরে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করছেন। কয়েক দশক ধরে সরকারের কাছ থেকে ইজারাও নেন। সম্প্রতি এক রাজনৈতিক নেতার তদবিরে সরাইলের জেলেরা বিলটি ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁরা নাসিরনগরের জেলেদের মাছ ধরতে বাধা ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। অপরদিকে সরাইলের জেলেদের ভাষ্য, তাঁরা মিলেমিশে বিলে মাছ ধরতে চান।

banner

৩৯৬ দশমিক ৬৫ একরের বিল শাপলা জলমহালটির অবস্থান নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামের পূর্ব পাশে। কাছেই তিতাস নদী। জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতিতে নিবন্ধিত জেলে ৫৩৮ জন। এ ছাড়াও অনিবন্ধিত আরও প্রায় ৭০০ জেলে এখানে মাছ ধরেন। সব মিলিয়ে ১২০০ জেলে পরিবারের সদস্য প্রায় ১০ হাজার। তাঁরা সবাই বিলের ওপর নির্ভরশীল। বিলের দক্ষিণে সরাইল উপজেলার শাহাজাদাপুর গ্রাম। শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নিবন্ধিত সদস্য ৪৯।

জেঠাগ্রামের প্রবীণ জেলে মিলন দাস মঙ্গলবার বলেন, ‘আমার বাপের জন্ম এই বিলের পাড়ে। আমার জন্মও। ছেলেমেয়েও জন্ম নিছে এ বিলের পাড়েই। আমরার আগের পুরুষ বিলের পাড় থাইক্যা মাছ ধরত।’ নিজেদের কোনো জমিজমা না থাকায় বিলের মাছ আর পরের জমিতে শ্রম বিক্রি করেই জীবন পার করছেন মিলন। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা বিল না পাই, মাছ ধরতাম না পারি, তইলে বাল-বাচ্চা (ছেলেমেয়ে) লইয়া না খাইয়া মরণ লাগব।’

তাঁর মতো এমন হাজারো জেলের আশঙ্কা–এবার না বিলের ইজারা সরাইলের শাহজাদাপুরের জেলেরা নিয়ে যান! এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি জলমহালটি ছয় বছরের (১৪৩০-১৪৩৫ বঙ্গাব্দ) উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইজারা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ জন্য আবেদন করে শাহাজাদাপুর গ্রামের তিতাস মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে–এমন আশঙ্কায় জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি। তাই তিতাস সমিতির আবেদন বাতিলে সিদ্ধান্ত হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বরের সই করা চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়। পরে জলমহালটি তিন বছর মেয়াদে নতুন করে ইজারা দিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন। এতে আগ্রহী হয়ে তদবির শুরু করে শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি।

নাসিরনগরের জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির নেতারা জানান, ১৯৭৭ সালে সমিতি গঠনের পর থেকে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে তাঁরাই বিলটি ইজারা নিয়ে আসছেন। সম্প্রতি শাহাজাদাপুরের জেলেরা তা ইজারা নিতে চাইছেন। নাসিরনগর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ এর ৪(চ) অনুযায়ী স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবী সংগঠন, নিকটবর্তী বা তীরবর্তী মৎস্যজীবীদের জলমহাল বন্দোবস্ত প্রদান করতে হবে। এ হিসেবে জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির এ অধিকার বেশি।

জেঠাগ্রামের জেলে হিরামন দাস বলেন, ‘বিলে মাছ ধরনের লাইগ্যা নতুন জাল, নৌকা কিনা হয়ছে এনজিও থেইক্যা (ঋণ নিয়ে)। এই গেরামের কয়েক হাজার মানুষ কোটি টাকা ঋণ নিছে।’ এভাবে ঋণ নিয়ে মাছ ধরে তা শোধ করেন জানিয়ে হিরামন বলেন, ‘আমরার এলাকার বিল যদি সরাইলের মানুষরে দিয়া দেয় তাইলে ঋণ শোধ করতে বসতঘরটাও বেইচ্যা দিয়ন লাগব।’

জেলে নয়ন দাসের ভাষ্য, ‘আমরার লোকজন বিলে গেলেই সরাইলের লোকজন মাইরধর করে। এহন হুনতাছি সরাইলের লোকেরা নাকি বিল লইয়া যাইব। এই বিলের লগে আমরার রক্ত মিশ্যা আছে। জান থাকতে বিল কেউরে নিতে দিমু না।’

জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ইজারা বিষয়ে শুনানির জন্য গত ৭ মে জেলা প্রশাসন চিঠি দিয়েছে। সরাইলের জেলেদের সঙ্গে মিলেমিশে মাছ ধরারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের অভিযোগ, জলমহালের ইজারা সরাইলের জেলেদের পাইয়ে দিতে তদবির করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।

সরাইলের শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাস বলেন, ‘কাগজেপত্রে বিলের মৌজা নাসিরনগরের। মিলেমিশেই বিলের মাছ ধরতে চাই। আমরাও জেলে পরিবার। কিন্তু ওই এলাকার জেলেরা তাতে রাজি হচ্ছেন না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কারও পক্ষে কথা বলিনি। বিলটি নাসিরনগরের, এটা সবাই জানে। সরাইল ও নাসিরনগরের প্রকৃত জেলেরা যেন মিলেমিশে মাছ ধরতে পারে–সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলেছি।’ বিভিন্ন সময়ের কাগজপত্র ঘেঁটে বিলটি দীর্ঘদিন ধরে নাসিরনগরের জেলেরাই ইজারা নিয়ে মাছ ধরছেন বলে জানান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার। ইউএনও ফখরুল ইসলাম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী নিকটবর্তী ও তীরবর্তী হিসেবে নাসিরনগর উপজেলার জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামই আসে।

বিল ইজারা দিতে রাজনৈতিক চাপের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী যাঁরাই উপযুক্ত, তাঁরাই এ বিল (ইজারা) পাবেন।

নাসিরনগরে মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক এ্যাডভোকেসি সভা

নাসিরনগর, 15 January 2025, 161 Views,

মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর :
নাসিরনগরে মাতৃস্বাস্থ উন্নয়নে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও সামাজিক উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত প্রতিনিধিদের ভুমিকা বিষয়ক এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

banner

নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিরার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কার্যালয়ে ও ইন্সটিটিউট ফর হেলত কেয়ার ইমপ্রুভমেন্ট (IHI) আয়োজনে আজ ১৫ জানুয়ারি বুধবার নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সভাকক্ষে এ্যাডভোকেসী সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক মেডিকেল অফিস ডাঃ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ্যাডভোকেসী সভায় বক্তব্য রাখেন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ এএফএম রফিকুল ইসলাম, ডাঃ মোঃ সামছুল ইসলাম, গোকর্ণ ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন, কুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. নাসির উদ্দীন ভুইয়া, ভলাকুট ইউপি চেয়ারম্যান রুবেল মিয়া, চাতলপাড় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, নাসিরনগর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আছমত আলী, সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক সবুজ, মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, কুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, ইউপি সচিব রাজিব ঘোষ প্রমুখ।

এ্যাডভোকেসী সভায় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জন প্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব উপস্থিত ছিলেন।

নাসিরনগরে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ একরামুজ্জানের ইশতেহার ঘোষণা

নাসিরনগর, 31 December 2023, 864 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-(নাসিরনগর) আসনে বিএনপির চেয়ারপার্সনের বহিষ্কৃত উপদেষ্টা ও হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ একে একরামুজ্জামান (কলার ছড়ি) প্রতীক নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।

banner

আজ ৩১ ডিসেম্বর রবিবার দুপুরে নাসিরনগরে তার বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাঁর ১১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা করেন।

নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নাসিরনগর কলেজ মোড় থেকে গোকর্ণ-পূর্বভাগ-মাধবপুর সড়ক সম্প্রসারণ ও পুনঃনির্মান, নাসিরনগরে জল রাশিকে পর্যটন শিল্পে রূপান্তর, অসম্প্রদায়িক, প্রযুক্তি নির্ভর, বেকারমুক্ত, সুশিক্ষিত ও বৈষম্যহীন নাসিরনগর প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেন।

সৈয়দ একে একরামুজ্জামানের নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি মাধ্যমিক ও মাদরাসাসহ অন্যান্য শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিতকরন, নাসিরনগর কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালুর পাশাপাশি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন। জাতীয় নীতি মেনে সকল ইউনিয়নে নির্দিষ্ট দূরুত্বে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা।

নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরের পাশপাশি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও চিকিৎসার সরঞ্জাম নিশ্চিত করে গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

শিক্ষিত যুবসমাজ ও বেকারদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে একটি বেকারমুক্ত নাসিরনগর উপহা দেয়া। কৃষক, শ্রমিক ও জেলে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ও বাস্তবমুখী কর্মসূচী গ্রহন। কৃষিতে সরকারি ভর্তুকির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা ও অনগ্রসর ব্যক্তি ও পরিবারকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান।

জনগণকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা থেকে মুক্তি দেয়া, উপজেলা সদরের সাথে উপজেলার সকল ইউনিয়ন বিশেষ করে ভাটি অঞ্চলের সাথে উপজেলা সদরের সহজ যোগাযোগের ব্যবস্থা করা, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাজার, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় নতুন রাস্তা নির্মান, নদী ভাঙন রোধ ও নদীর গতি প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা, উপজেলার চাতলপাড় বাজারকে আধুনিকনদী বন্দরে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ।

উপজেলায় একটি আধুনিক ক্রিকেট ও ফুটবল ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি সকল ইউনিয়নে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা।

নাসিরনগরের সকল মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, মাদকের বিস্তাররোধ ও মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটি ও রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

নাসিরনগরের সকল নদী ও জলাশয় জেলে সম্প্রদায়ের জন্য উম্মুক্ত রেখে জেলে সমিতির মাধ্যমে মাছ ধরার ব্যবস্থা করা, মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও বরাদ্দ প্রদান, পরিবেশ ও জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করার জন্য ক্ষুদ্র, কারিগরি, মৎস্য ও কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা। নারী সমাজকে স্বাবলম্বী তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। নাসিরনগরে শিল্প কারখানা গড়ে ৫০ হাজার যুবক-যুবতীর চাকরির ব্যবস্থা করা।

স্থানীয় সরকারের সকল বিভাগের সাথে নেটওয়ার্ক স্থাপন করে নাসিরনগরকে একটি মডেল উপজেলায় রূপান্তর, শতভাগ স্যানিটেশন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, সকল ইউনিয়নে কবরস্থান ও শ্মশান নির্মাণ ও সংস্কারের ব্যবস্থা করা ও নাসিরনগরের জলরাশিকে পর্যটন শিল্পে রূপান্তরের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশী উদ্যোক্তাদেরকে আগ্রহী করতে উদ্যোগ গ্রহণ।

ইশতেহার ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ একে একরামুজ্জামান বলেন, বিগত সময়ে আওয়ামীলীগ বিএনপির বিরুদ্ধে আবার বিএনপি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। যারা ক্ষমতায় আছে তারা এসব মামলা করছে। এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা। এসব মামলা থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে চাই।

নির্বাচনী মাঠে পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধামকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় বলি জ্বালো, জ্বালো আগুন জ্বালো। আসলে এটা আগুন জ্বালানোর জন্য নয় নয়। তবে কেউ যদি প্যাসিফিক কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলেন সেটা অন্য বিষয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত তিন নেতা বাংলাদেশ কৃষকলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নাজির মিয়া, তাঁর স্ত্রী নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রোমা আক্তার, নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার রায়, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আদেশ চন্দ্র দেবসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানগণ।