চলারপথে রিপোর্ট :
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি রাজনেতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তারা বহু চেষ্টা করেও নির্বাচন বন্ধ করতে পারে নাই। মঞ্চে উপবিষ্ট দু:জন বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীও বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে যে কোন মিছিল, মিটিং করলে কোন আপত্তি নাই। যদি অশান্ত হন, আগুন সন্ত্রাস করেন, জনগণের অশান্তি হয় এমন কোন কাজ করলে তা সহ্য করা হবে না। জনগনের শান্তি বিনষ্ট হয় এমন কোন কাজ করতে দেওয়া হবেনা।
তিনি আরো বলেন, রমজানুল মোবারককে সামনে রেখে যেসব লোকেরা কালো ধান্ধায় আছেন, তাদেরকে আমরা সতর্ক করতে চাই আমরা কোন রকমের মজুদদারীকে সহ্য করবো না। রমজানে যারা দ্রব্য মূল্য নিয়ে যেসকল বন্ধুরা খেলাধূলা করবেন তাদেরকে খেলাধূলা না করার অনুরোধ করবো। খেলাধূলা করলে কেউ রেহাই পাবেন না। আমি আজকে বলে দিয়েছি একজন মন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে, কোন জরিমানার ব্যাপার স্যাপার নাই, সরাসরি কারাগারে পাঠানোর জন্য আমি অনুরোধ করেছি। তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিন সচেষ্ট আছেন আমরাও তার সাথে আছি। সকলে মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
আজ ২৭ জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত গণসংবর্ধনায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে একটি দেশ দিয়ে গিয়েছেন। তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে। জননেত্রী শেখ হাসিন আমাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। আমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার প্রতিটা আমি পালন করবো ইনশাল্লাহ। আগেও আমিও চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, ভূমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ছিলাম আজও আছি। মাদক ব্যবসায়ীদের বলতে চাই, আপনাদের কারণে যুবসমাজ ধ্বংসের পথে যাচ্ছে, আমি তাদের ধ্বংসের পথে যেতে দিতে পারি না। তাই মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।
জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হেলাল উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সাংসদ সৈয়দ এ.কে. একরামুজ্জামান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া -২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সাংসদ মঈন উদ্দিন মঈন, মন্ত্রীর সহধর্মিণী মাউশির সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর সভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী হেলাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ভূঁইয়া প্রমুখ।
এদিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়। সংবর্ধনানুষ্ঠানশেষে ব্যান্ডদল নগর বাউলের জেমস সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে হাজারো দর্শককে মুগ্ধ করেন।
অনলাইন ডেস্ক :
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, আগে আন্দোলন ছিল ডাল-ভাতের জন্য, এখন দাবি মাছ-মাংসের দাম কমানোর।
আজ ৩১ মার্চ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক এম শাহ আলম চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত চার ইউনিয়নের তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশ এখন বদলে গেছে, মানুষের ভাগ্যও পরিবর্তন হয়েছে। গ্রাম এখন শহরে পরিণত হয়েছে। আগে মানুষ আন্দোলন করতো ডাল-ভাতের জন্য। আর এখন মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন হওয়ায় মাছ-মাংসের দাম কমানোর জন্য দাবি তোলে।’ খবর বাসসের
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেশের প্রতিটি গ্রাম-মহল্লায় পর্যন্ত যে উন্নয়ন হয়েছে তা সবার কাছে বলতে হবে। যারা শুধু ভোট আসলে লাফালাফি করে, লুকিয়ে লুকিয়ে শহরে গিয়ে খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দেয়, তারা যে সড়ক কিংবা ব্রিজের ওপর দিয়ে যায় সেটিও আওয়ামী লীগের করা। করোনাসহ কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তাদের পাওয়া যায়নি, তাদের বয়কট করে আগামীতেও সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে হবে।’
দলের সাংগঠনিক বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের নেতারাই আওয়ামী লীগের প্রাণ। গ্রামে-গঞ্জে-মহল্লায় আমাদের দলকে এই নেতারাই ধরে রেখেছেন। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-ঘাটে মাঠে সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাঙ্গুনিয়াসহ সারাদেশে সরকারের অভূতপূর্ব উন্নয়নের দাবিদার তৃণমূলের নেতারাও। দলের সুনাম বজায় রাখতে আমাদের দলের নাম বিক্রি করে কেউ যদি অপকর্ম করে তাদের ছাড় দেয়া হবে না, প্রকাশ্যে শায়েস্তা করতে হবে।’
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু জাফরের সভাপতিত্বে এবং এমরুল করিম রাশেদ ও মাহমুদুল হাসান বাদশার যৌথ সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগ নেতা স্বজন কুমার তালুকদার, আবুল কাশেম চিশতি প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি ‘কলাবতী শাড়ি’ ও হস্তশিল্পজাত পণ্য উপহার দিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন তিবরীজি।
আজ ১৭ জুলাই সোমবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুরে তার কার্যালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি কলাবতী শাড়ি ও হস্তশিল্পজাত পণ্য গ্রহণ করেন।
এ সময় বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন তিবরীজি কলাগাছের তন্তু থেকে প্রস্তুত ৩টি শাড়ি এবং দুটি জুয়েলারি বক্স প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কলাগাছের তন্তু থেকে মনিপুরী ডিজাইনের এই শাড়ি প্রস্তুত করেছেন মৌলভীবাজারের তাঁতশিল্পী রাধাবতী দেবী। প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া শাড়ি ৩টি তৈরি করেছেন অঞ্জলী দেবী ও দত্ত সিংহ।
এ ছাড়া পার্বত্য এলাকায় বাসোপযোগী আশ্রয়ণের একটি বিশেষ মাচাং ঘরের মডেল, জেলা ব্র্যান্ডের ক্যালেন্ডার এবং ব্র্যান্ড বুকও প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১৭ মার্চ, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন।
সেদিন ছিল মঙ্গলবার। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। রাত ৮ টার দিকে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা বাঙালি জাতির মুক্তির দূত হয়ে পৃথিবীতে আসেন একটি শিশু।
সেদিনের সেই শিশুই আজ অবিসংবাদিত নেতা বাঙালি ও বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ সেই মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী। শুভ জন্মদিন জাতির পিতা। আজ বাঙালি জাতির আনন্দে পুলকিত হওয়ার দিন। দিনটি পরবর্তীতে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির এ জন্মদিনে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা, সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
খোকা থেকে জাতির পিতা : পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে আসা শেখ মুজিবুর রহমান চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়।
বাবা-মায়ের আদরের খোকা নামের ছোট্ট শেখ মুজিব ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন শুরু করেন। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন।
পরবর্তীকালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
একই বছরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে এই কলেজ থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করেন।
বিয়ে করেন শেখ ফজিলাতুননেছাকে (রেনু)। তারা দুই কন্যা- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের জনক-জননী ছিলেন।
১৯৪৩ বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের (অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের শাখা) কাউন্সিলর নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের পাশাপাশি তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বতন্ত্র, স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন।
যদিও এই উদ্যোগ বাতিল হয় কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটিই একজন জাতির পিতার স্বপ্নের রাষ্ট্র গড়ার ভিত্তি হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থাতেই তাকে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
১৯৫২ সালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ আরও অনেকেই। জেল থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব শহিদদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানান।
একই বছর তিনি শান্তি সম্মেলন উপলক্ষ্যে চীন সফর করেন। শান্তি সম্মেলনে তিনি বাংলায় বক্তৃতা দেন, ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে যান বৈশ্বিক অঙ্গনে।
১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং একজন বাঙালি নেতা হিসেবে তার উত্থান হয়। ১৯৫৪ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে।
আওয়ামী লীগ একাই পায় ১৪৩টি। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন এবং ১৫ মে নতুন প্রাদেশিক সরকারের সমবায় ও কৃষিমন্ত্রী হন।
৩০ মে ভারত স্বাধীনতা আইন-১৯৪৭, প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। ১৯৫৬ সালে খান আতাউর রহমানের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকারে তিনি মন্ত্রী হন।
মাত্র নয় মাস তিনি মন্ত্রী পদের দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বাঙালির অধিকার আদায় আন্দোলনকে বেগবান করা এবং সংগঠনকে আরও সুসংহত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৫৭ সালের ১৩-১৪ জুন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিতিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে এক বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
এই অধিবেশনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে আলাদা হয়ে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়।
১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।
এই ছয় দফা মুক্তিকামী বাঙালি জাতির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বীজ বুনে দেয়। ১৮-২০ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি সারা বাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন। এ সময় তাকে আটবার গ্রেফতার করা হয় এবং সর্বশেষ ৮ মে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। প্রায় তিন বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন।
১৯৬৮ সালে ৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার মোট ৩৫ জন বাঙালির (রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সরকারি অফিসার) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
জেলে বন্দি থাকা অবস্থাতেই ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবের ওপর পুনরায় গ্রেফতার আদেশ জারি হয়। ভারতের সহায়তায় পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা দায়ের করা হয়।
বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং তার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র গণআন্দোলন শুরু হয়। টানা গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বিশাল ছাত্র সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এক জনসভায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ’।
১৯৭০ বঙ্গবন্ধু ছয় দফার আলোকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বা?ন জানান। আওয়ামী লীগের জন্য তিনি নৌকা প্রতীক বেছে নেন।
১২ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় উপকূল এলাকায় লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রেখে ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত অঞ্চলে ছুটে যান।
৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়। ১৯৭১ সালে ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।
এই ঘোষণার ফলে সর্বস্তরের বাঙালি জনতা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন মোড় নেয়। ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু কার্যত ছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধান।
একদিকে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশ যেত, অপরদিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে যেত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ। বাংলার মানুষ মেনে চলতেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ।
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এই ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
২৫ মার্চ রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক হানাদার বাহিনী শতাব্দীর অন্যতম ঘৃণ্য গণহত্যা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এরপরই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় এবং গণপরিষদ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসেন।
সেদিন বাঙালি জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা জানায়। লাখো মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্নাত হয়ে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে আসেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
১২ জানুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে নতুন বাংলাদেশকে শক্ত ভিত্তির ওপর স্থাপন করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
একশত পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ তিন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার গভীর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের বিজেশ্বর গ্রাম থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন বিজেশ্বর গ্রামের মোঃ আহাদ (২৮), একই গ্রামের নাঈম ওরফে কালু (২০) ও ইফতেখার মিয়া ওরফে রবিন-(২২)।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদেরকে কাছ থেকে ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ রবিবার দুপুরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান