অনলাইন ডেস্ক :
বিএনপি সব সময় জনগণের ভোটের পরিবর্তে অন্য শক্তির সহায়তায় ক্ষমতায় যেতে চায় বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে নির্বাচন বর্জন করেছে।
আজ ২৮ জানুয়ারি রবিবার গণভবনে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় দলের (এপিপিজি) ভাইস চেয়ার ও ইন্দো-ব্রিটিশ বিষয়ক এপিপিজির চেয়ার বীরেন্দ্র শর্মা এমপির নেতৃত্বে যুক্তরাজ্যের ক্রস পার্টি একটি পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ কালে তিনি এ কথা বলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যখনই নির্বাচনের সময় আসে, তখনই তারা (বিএনপি) অন্য কোনো শক্তির সন্ধান করে যারা তাদের ক্ষমতায় বসাতে পারে। বিএনপি সব সময় যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চায়।
গত ৭ জানুয়ারির এবং ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি তারা কোনো নিশ্চয়তা না পায় যে কেউ তাদের ক্ষমতায় আনবে, তাহলে তারা নির্বাচন বয়কট করবে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য করেছিল, কিন্তু, ক্ষমতায় যাওয়ার নিশ্চয়তা না পাওয়ায় নির্বাচনের দিনে নির্বাচন বয়কট করেছিল।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তারা কখনো ক্ষমতায় আসেনি।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনটি ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক এবং এর সুষ্ঠুতা নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি। যেখানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট পেয়েছিল মাত্র ৩০টি আসন এবং আওয়ামী লীগ পায় একক ভাবে ২৩৩টি আসন।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা তাদের পছন্দ ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনানিবাসে সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে বিএনপি’র জন্ম।
তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি (জিয়াউর রহমান) হ্যাঁ/না ভোট এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছেন। দীর্ঘ ২৯ বছর অগণতান্ত্রিক শক্তি বাংলাদেশ শাসন করেছে। সেসময়ে দেশে কোনো গণতন্ত্র ছিল না। ফলে, দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি।
দলকে এগিয়ে নেওয়ার মতো কোনো নেতৃত্ব বিএনপির নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির লোকেরা শুধু লন্ডন থেকে নির্দেশ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, এর ফলে ২০০৮ সালের পর বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করার জন্য বিএনপি কর্তৃক অগ্নিসংযোগ ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো সত্ত্বেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় এবং তাদের ভোট দেয়।
তিনি বলেন, জনগণ বিএনপির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
পাঁচ সদস্যের সংসদীয় প্রতিনিধিদলে ছিলেন সাবেক টেক ও ডিজিটাল অর্থনীতির কনজারভেটিভ মন্ত্রী পল স্কুলি, এমপি, ইউকে হাউস অব কমন্স সিলেক্ট কমিটির মেম্বার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স নীল কোয়েল, এমপি, হাউস অব কমন্সের বিরোধীদলীয় হুইপ অ্যান্ড্রু ওয়েস্টার্ন, এমপি এবং হাউস অব কমন্সের সিনিয়র সংসদীয় সহকারী ডমিনিক মফিট।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মো. জিয়াউদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
প্রতিনিধিদলটি ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় আসে এবং আগামী ৩১ জানুয়ারি তাদের লন্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৭ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা-ফসলী জমি-গাছপালা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে ভাঙনকবলিতরা।
তাদের অভিযোগ, ভাঙনরোধে পাউবো যেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না তেমনি ভাঙনের শিকার মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করলেও কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। ভাঙনের শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষের। অন্যদিকে, পানি বাড়ায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
জানা যায়, গত এক সপ্তাহ যাবত যমুনা নদীর পানি পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে যমুনার অরক্ষিত তীরবর্তী বিস্তৃর্ন এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী, জালালপুর ইউনিয়ন, এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম, চৌহালীর খাসপুকুরিয়া ইউপির ভুতের মোড়, বাঘুটিয়া, ওমারপুর, বেলকুচি এবং কাজিপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর চরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ভাঙনে বসতবাড়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কে নদীর তীরবর্তী মানুষ নির্ঘুম রাত পার করছে।
আর গত দেড়মাসে এসব অঞ্চলের প্রায় ৩ সহস্রাধিক বসতভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে।
শাহজাদপুরের পাঁচিল গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, রহিমা খাতুন, শরিফুল ইসলাম ও শুকুর ফকির জানান, দুদিন আগেও বসতভিটা ছিল। হঠাৎ প্রবল ঘুর্নাবর্তের কারণে বসতভিটাসহ আসবাবপত্র সব কিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কোনরকম ছেলে-মেয়ে নিয়ে রক্ষা পেয়েছি। বর্তমানে যাবার কোনো জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বসতঘর তোলার জায়গা না থাকায় ঘরগুলো ওয়াপদা বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে স্তুপ করে রেখেছে। ঝড় বৃষ্টি ও রোদে পুড়ে খেয়ে না খেয়ে আমাদের জীবন পার করছি। এতো কস্টে থাকলেও কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি।
চৌহালীর বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, ভাঙনে ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। এক ইঞ্চি জায়গাও নেই। এখন একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় পড়ে গেছি। ভবিষ্যতে কিভাবে চলবে সে চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না। সরকার বা জনপ্রতি ও প্রশাসন কেউ আমাদের একটু সহযোগিতা করছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকার নদী তীর রক্ষায় সাড়ে ৬শ কোটি টাকা ও চৌহালী রক্ষায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও পাউবো ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ না করায় তাদের গাফিলতির কারণে নদী ভাঙছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, যমুনা পানি বাড়ায় ভাঙ্গনও বাড়ছে। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতো বড় এরিয়ায় ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের সামর্থ্য পাউবোর নেই। এরপরেও যেখানে বেশি ভাঙছে সেখানে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
এক উজ্জ্বল সূর্যের ব্যতিক্রমী কিরণে বিশেষভাবে মহিমান্বিত ২৫ শে বৈশাখের আজকের এই দিনটি। কেননা এদিন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন।
১৮৬১ সালের এদিন কলকাতার জোড়াসাঁকোয় সম্ভ্রান্ত জমিদার বংশে জন্ম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। আজ তার ১৬২তম জন্মবার্ষিকী।
বাঙালির আত্মিক মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের নায়ক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা বিপুল ও বৈচিত্র্যময়। তার মেধা-মনন-সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ হয়েছে কবিতা, সংগীত, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণ, শিশুতোষ রচনাসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখা। প্রায় একক প্রচেষ্টায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে তিনি আধুনিক করে তুলেছিলেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর-সারদা দেবী দম্পতির চতুর্দশ সন্তান রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার জয়ের মধ্য দিয়ে তার অতুলনীয় সাহিত্য সৃজনী প্রতিভায় বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদাপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত করেন।
বাঙালির নিত্যদিনের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপস্থিতি এখনো দীপ্যমান। তার জন্মদিনটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালির কাছেই এক আনন্দঘন উৎসবের দিন। রাজধানী ঢাকাসহ কবির স্মৃতিধন্য স্থানগুলোতে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কবিগুরুর জন্মদিনের উৎসব পালিত হয়। এ ছাড়া সারা দেশেই রবীন্দ্রজয়ন্তীর অজস্র অনুষ্ঠান আয়োজন করে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় প্রিয় কবির স্মৃতির প্রতি।
রবীন্দ্রনাথের রচনায় কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে মানুষ, প্রকৃতি ও দেশপ্রেম।
কবির লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি আমাদের জাতীয় সংগীত। ভারত ও শ্রীলংকার জাতীয় সংগীতও কবির লেখা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, গল্পকার, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ ও চিত্রশিল্পী। তবে প্রধানত তিনি কবি। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। বাঙালি সমাজে তার রচিত সংগীতের জনপ্রিয়তা এত বছর পরেও তুলনাহীনভাবে বাড়ছে। তিনি প্রায় ২ হাজার গান রচনা করেন। অধিকাংশ গানেরই সুরারোপ করেন। তার সব গান ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে রয়েছে। জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ ৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্পের বই ৯৫, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬ এবং নাটকের বই ৩৮টি। কবির মৃতু্যর পর বিশ্বভারতী থেকে ৩৬ খন্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ১৯ খন্ডের রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র’। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ১৩৪৮ সালের বাইশে শ্রাবণ (ইংরেজি-৭ আগস্ট ১৯৪১) দীর্ঘ রোগ ভোগের পর কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনে মৃতু্যবরণ করেন। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবার রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসরে।
এ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহ্জাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান হবে ঢাকার ছায়ানটে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমিও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
অনলাইন ডেস্ক :
পবিত্র লাইলাতুল মেরাজ বা শবেমেরাজ আজ। লাইলাতুন বা শব অর্থ হলো-রাত আর মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। শবেমেরাজ বা লাইলাতুল মেরাজের অর্থ দাঁড়ায়-ঊর্ধ্বগমনের রাত। ব্যাপক অর্থে রাসূল সা:- এর বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে উপনীত হয়ে সেখান থেকে সপ্তাকাশ এবং আরশে আজিম পৌঁছে আল্লাহর সাথে কথা বলাকেই মেরাজ বলে। রাসূল সা:-এর ৫২ বছর বয়সে অর্থাৎ নবুয়তের ১২তম সনে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মেরাজের আশ্চর্যতম ঘটনাটি সংঘটিত হয়।
শবেমেরাজ আল্লাহর অসীম কুদরত। মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা বনি ইসরাইলের ১ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন-‘মহামহিম পরম পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতেরবেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যাতে আমি তাকে দেখিয়ে দেই, এর চারপাশের নিদর্শনগুলো, যা বরকতময়। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।’
হাদিস সূত্রে জানা যায়, রজব মাসের ২৬ তারিখ রাতে রাসূল সা: এশার নামাজ শেষে হজরত উম্মে হানি রা:-এর ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। এ সময় হজরত জিবরাইল আ: আল্লাহ তায়ালার হুকুমে জান্নাত থেকে বোরাক নামের একটি সাওয়ারি আর অসংখ্য ফেরেশতা নিয়ে রাসূল সা:-এর কাছে হাজির হয়ে সালাম দিয়ে বললেন, হুজুর! আপনার প্রতিপালক আপনাকে স্মরণ করেছেন, এ মুহূর্তেই আপনাকে সেখানে যেতে হবে। মুহাম্মদ সা: প্রস্তুত হলে জিবরাইল আ: রাসূল সা:-কে নিয়ে কাবা শরিফের হাতিমে যান। জমজমের পানিতে অজুর পর বোরাক নামক বাহনে জেরুসালেমের বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়ে নামাজ আদায় করেন। সেখান থেকে প্রথম আকাশে পৌঁছান মহানবী সা:। সেখানে হজরত আদম আ:-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এভাবে সাত আকাশ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সাক্ষাৎ করেন হজরত ঈসা আ:, হজরত ইয়াহইয়া আ:, হজরত ইদ্রিস আ:, হজরত হারুন আ:, হজরত মুসা আ: এবং হজরত ইবরাহিম আ:-এর সাথে। সপ্তম আকাশ থেকে হজরত মুহাম্মদ সা:-কে বায়তুল মামুর পরিদর্শনে নেয়া হয়, যেখানে প্রতিদিন (সকাল-সন্ধ্যায়) ৭০ হাজার ফেরেশতা তাওয়াফ করেন ও প্রস্থান করেন; তাঁরা দ্বিতীয়বার আর সেখানে আসার সুযোগ পান না। এরপর তিনি সিদরাতুল মুনতাহার কাছে যান। সেখান থেকে রফরফ নামক বিশেষ বাহনে আরশে আজিম যান। এক ধনুক দূরত্ব থেকে আল্লাহর সাথে কথোপকথন হয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন, তাদের মধ্যে ধনুকের দুই মাথার ব্যবধান রইল অথবা আরো নিকটে। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন যা করার ছিল।
হাদিসের বর্ণনা মতে, শবেমেরাজে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয় মহানবী সা:-এর উম্মতদের জন্য। এছাড়া দেখেছেন অনেক নিদর্শন। দেখেছেন জান্নাতের নেয়ামত ও জাহান্নামের শাস্তি। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় উঠে আসা কয়েকটি শাস্তির বিবরণ তুলে ধরা হলো- বেনামাজির শাস্তি: বড় পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হচ্ছে, আঘাতে মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, আবার ভালো হয়ে যাচ্ছে, আবার আঘাত করা হচ্ছে। জাকাত না দেয়ার শাস্তি : তাদের সামনে ও পেছনে পাওনাদারেরা থাকবে। তারা পশুর মতো চরবে আর নোংরা আবর্জনা ময়লা ও পুঁজ এবং কাঁটাযুক্ত আঠালো বিষাক্ত ফল খাবে, জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর ভক্ষণ করবে। চোগলখোরের শাস্তি : তাদের পার্শ্বদেশ হতে গোশত কেটে তাদের খাওয়ানো হচ্ছে; আর বলা হচ্ছে, যেভাবে তোমার ভাইয়ের গোশত খেতে, সেভাবে এটা ভক্ষণ করো।
গিবতকারীদের শাস্তি: তাদের অগ্নিময় লোহার নখর দিয়ে তারা তাদের চেহারা ও বক্ষ বিদীর্ণ করছে। এসব দেখে রাসূল সা: বললেন, হে জিবরাইল আলাইহিস সালাম! এরা কারা? তিনি (জিবরাইল) বললেন, এরা হলো সেসব লোক যারা পশ্চাতে মানুষের গোশত খেত (আড়ালে সমালোচনা করত)। সুদখোরের শাস্তি: সুদখোরদের বড় বড় পেট, যার কারণে তারা তাদের অবস্থান থেকে নড়াচড়া করতে পারছে না। তাদের সাথে রয়েছে ফেরাউন সম্প্রদায়, তাদেরকে অগ্নিতে প্রবিষ্ট করানো হচ্ছে। ব্যভিচারী নারী ও পুরুষের শাস্তি: জেনাকার বদকার নারী, যারা ব্যভিচার করেছে এবং ভ্রƒণ ও সন্তান হত্যা করেছে, তাদের পায়ে আংটা লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে; তারা আর্তচিৎকার করছে। এক সম্প্রদায় তাদের সামনে একটি উত্তম পাত্রে উপাদেয় তাজা ভুনা গোশত এবং অন্য নোংরা একটি পাত্রে পচা মাংস। তারা উত্তম পাত্রের উন্নত তাজা সুস্বাদু গোশত রেখে নোংরা পাত্রের পচা মাংস ভক্ষণ করছে। রাসূল সা: বললেন, হে জিবরাইল! আ: এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো ওই সব পুরুষ যারা স্বীয় বৈধ স্ত্রী রেখে অন্য নারীর কাছে গমন করেছে এবং ওই সব নারী যারা স্বীয় বৈধ স্বামী রেখে পরপুরুষগামিনী হয়েছে।
মেরাজ শেষে পৃথিবীতে ফিরে রাসূল সা: পুরো ঘটনা হজরত আবু বকর রা:-এর কাছে বর্ণনা করেন। তিনি নিঃসংশয়ে তা বিশ্বাস করেন। রাসূল সা: তাকে সিদ্দিক বা বিশ্বাসী খেতাব দেন। মক্কার কাফেররা রাসূলের মেরাজের ঘটনাকে অবিশ্বাস করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন : শবেমেরাজ উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আজ বাদ জোহর ‘পবিত্র শবেমেরাজ’র ‘গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা, দোয়া ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মহা: বশিরুল আলম। আলোচনা করবেন মিরপুরের জামিয়াহ মোহাম্মাদিয়া আরাবিয়ার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মুফতি খালেদ সাইফুল্লাহ। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
যত বেশি জ্বালানি ব্যবহার হয় পরিবেশের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। আবার ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আমদানিতে সংকট রয়েছে। এ রকম অবস্থায় একের বেশি গাড়ি নিরুৎসাহিত করতে আগামী ২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবেশ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একের অধিক প্রতিটি গাড়িতে সিসি অনুযায়ী ২৫ হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা বাড়তি কর দিতে হতে পারে ।
আজ ১ মে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেট পেশ শুরু করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, একের বেশি ১৫শ সিসি পর্যন্ত প্রতিটি গাড়ির জন্য দিতে হবে ২৫ হাজার টাকা। ১৫শ সিসির বেশি থেকে ২ হাজার সিসি পর্যন্ত ৫০ হাজার, আড়াই হাজার সিসি পর্যন্ত ৭৫ হাজার, তিন হাজার সিসি পর্যন্ত দেড় লাখ, ৩৫০০ সিসি পর্যন্ত ২ লাখ এবং সাড়ে তিন হাজার সিসির বেশি হলে সাড়ে তিন লাখ টাকা কর দিতে হবে। সূত্র : বাসস