সরাইলে আইন-শৃঙ্খলা সভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

সরাইল, 29 January 2024, 466 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে মাদকের বিস্তৃতি বৃদ্ধি পাঁচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের এমন বক্তব্য স্বীকার করেছেন ওসি মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম। ওসি বলেন পুলিশের একার পক্ষে মাদক প্রতিরোধ অসম্ভব। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অভিভাবক ও সুশিল সমাজসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া মাদক প্রতিরোধ সম্ভব নয়।

আজ ২৯ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে নবনির্মিত সরাইল উপজেলা কমপ্লেক্সে ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা সভায় ওসি এমন ঘোষণা দিয়েছেন।

নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাহ উল আলম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর।

বক্তব্যে সরাইল সদরের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার, অরূয়াইলের মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, কালীকচ্ছের মো. ছায়েদ হোসেন, শাহবাজপুরের খায়রূল হুদা চৌধুরী বাদল, নোয়াগাঁও-এর মো. মনসুর আহমেদ চুন্টার মো. হুমায়ুন কবিরসহ অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান সম্প্রতি সরাইলে উল্লেখযোগ্য হারে মাদকের বিস্তৃতি নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেন।

সভায় উপস্থিত সুশিল সমাজের লোকজনও মাদক প্রতিরোধে পুলিশের সহায়তা কামনা করেন।

এ ছাড়া অনেকেই সরাইলের কৃষি জমির মাটি বিক্রি ও রাতের অন্ধকারে কেটে জেলা শহরে ও বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।

আলোচনায় আসে অরুয়াইল সদরে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমি খেকুদের সরকারী জায়গা, সালিসের নামে টুপাইস কামানো, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত নদীর ঘাটলা দখল ও দুই পাড়ে তিতাস নদী দখলের বিষয়টি।

সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম সম্প্রতি মাদকের বিস্তৃতি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে? বিদ্যালয়ে না গিয়ে অন্য কোথাও যাচ্ছে কিনা? কি করছে? পড়ালেখা ঠিকঠাক মত করছে কিনা? এসব খোঁজখবর রাখার দায়িত্ব আপনার। এসব না করে মাদক প্রতিরোধ বা আসক্ত ব্যক্তির বিচারের দায়িত্ব শুধু পুলিশের উপর ছেড়ে দিলে চলবে না। কারণ পুলিশের একার পক্ষে মাদক প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা আপনার এলাকায় মাদকাসক্ত ব্যবসায়ি, মাটি ও ভূমি খেঁকুদের চিহ্নিত করে গ্রাম আদালতের আওতায় আনুন। সহযোগিতার জন্য আমাদেরকে (পুলিশকে) ডাকুন। আপনাদেরকে এসব কাজে সহযোগিতা করতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া মাদকসহ অন্যান্য অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব না।

Leave a Reply

আশুগঞ্জে ইয়াবা ও প্রাইভেটকারসহ ৩জন গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জ উপজেলা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ২ হাজার Read more

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সফর

চলারপথে রিপোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সফর করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. Read more

গাঁজা ও পিকআপসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট: আশুগঞ্জে সাড়ে ১২ কেজি গাঁজা ও একটি পিকআপসহ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ক বিশেষ…

চলারপথে রিপোর্ট : কোন রাজনৈতিক সংগঠনে পদ-পদবী রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস Read more

কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে উঠান বৈঠক…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে তথ্য ও Read more

আখাউড়া স্থলবন্দরে স্ত্রীসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা…

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় স্ত্রীসহ Read more

নবীনগরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ চার ডাকাত…

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চার ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে Read more

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের মতবিনিময় সভা

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) উদ্যোগে মতবিনিময় Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির…

উৎসবমূখর পরিবেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা Read more

ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

কসবায় ১৫২ বোতল ফেনসিডিলসহ রাজু আহমেদ (২৬) নামে একজনকে গ্রেফতার Read more

নবীনগর প্রেসক্লাবের ৩৯ তম বর্ষে পদার্পণ…

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগর প্রেসক্লাবের ৩৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও Read more

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেস মিনিস্টার হিসেবে…

অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেস উইংয়ে মিনিস্টার Read more

সরাইলে অগ্নিকান্ডে বসতঘর ভস্মিভূত

সরাইল, 12 October 2023, 643 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে আগুনে পুড়ে একটি বসতঘর ও একটি রান্না ঘর ছাই হয়ে গেছে। এতে আনুমানিক প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা কর হচ্ছে।

১১ অক্টোবর বুধবার বিকালে রাজাবাড়িয়া কান্দি গ্রামের মোঃ মজিবুর রহমানের বাড়িতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সরাইল ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে আগুনে বসতঘর ও রান্না ঘরে থাকা মালামাল ভস্মিভূত হয়ে যায়।

সরাইল ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার রিয়াজ বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেড় লাখ টাকার মত হবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে।

স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) আরো ১০টি পণ্যকে মান সনদের আওতায় এনেছে। বিএসটিআই’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কাউন্সিলের ৩৭তম সভায় বাধ্যতামূলক মান সনদের তালিকায় ১০টি নতুন পণ্যকে মান সনদের অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোববার রাজধানীর তেজগাঁওস্থ বিএসটিআই’র প্রাধন কার্যালয়ে এই প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কাউন্সিলের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পমন্ত্রী ও বিএসটিআই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। নতুন যে ১০টি পণ্য মান সনদের আওতায় আনা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ডিসপোজেবল ডায়াপারস, ফেসওয়াস, পেট্রোলয়িাম জেলি, রুটি (ফ্ল্যাটব্রেড/ টরটিলা), এ্যারোসলস, গিজার, শেভিং ফোম/জেল, আই কেয়ার, হেয়ার ডাইস লিকুইড ও শু-পলিশিং লিকুইড। বর্তমানে বিএসটিআই’র বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতাভুক্ত পণ্যের সংখ্যা ২২৯টি। বিএসটিআই কাউন্সিলের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, দ্বিতীয় ভাইস চেয়ারম্যান শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, এ সভায় শিল্প, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট, তথ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তথ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বিসিএসআইআর, আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক, ইপিবি এবং এমসিসিআই, ক্যাবসহ কাউন্সিলের সদস্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বিএসটিআই’র মহাপরিচালক ও কাউন্সিলের সদস্য সচিব মোঃ আবদুস সাত্তার এ সভা পরিচালনা করেন।
সভাপতির বক্তৃতায় শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিএসটিআই সকলের জন্য একটি আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইকে আরও সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। অভ্যন্তরীণ বাজার এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা এবং মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে হালাল পণ্যের সার্টিফিকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিএসটিআইকে পণ্যের হালাল সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে গুণগত মান ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
জনগণের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রয়োজনে বিএসটিআইকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়ে কাউন্সিলের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ব্যবসায়ীরা করোনা মহামারিকে পূঁজি করে অতিরিক্ত মুনাফা করেছে। তারা পণ্যে ভেজাল দিচ্ছে, সিন্ডিকেট করছে। তিনি বলেন, ১৭ কোটি মানুষকে রক্ষায় বিএসটিআইকে দায়িত্ব নিতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় রেখে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইকে কাজ করতে হবে।
কাউন্সিল সভার পরে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বিএসটিআই’র ৯১ জন নবনিযুক্ত কর্মকর্তার নিয়োগ, যোগদান এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, বিএসটিআই’র মহাপরিচালক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকারসহ শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিএসটিআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সরাইলে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালিত

সরাইল, 15 March 2024, 410 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস ২০২৪ পালন করা হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে আজ ১৫ মার্চ শুক্রবার সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি র‌্যালি বের হয়ে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মেজবাহ উল আলম ভূঁইয়া সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব শরীফ উদ্দিন, সরাইল প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ মিয়া, বাবুল হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা ইকবাল, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাবিববুর রহমান এ কে খান, আব্দুল জব্বার, আওয়ামীলীগ নেতা মাহফুজ আলী, বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বাবুল মিয়া, সাংবাদিক রিমন খান, জহিরুল ইসলাম রিপনসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক এবং স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ প্রমুখ।

সাত্তার ডাব ॥ জিয়াউল পেলেন সিংহ

আশুগঞ্জ, রাজনীতি, সরাইল, 17 January 2023, 2172 Views,

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ

স্টাফ রিপোর্টার :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনে সোমবার প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি থেকে পদত্যাগ-পরবর্তী বহিস্কার হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার পেয়েছেন ডাব প্রতীক। তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকা জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা পেয়েছেন সিংহ প্রতীক। দু’জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া দলীয় প্রতীক হিসেবে জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ ভাসানী পেয়েছেন লাঙ্গল ও জাকের জহিরুল ইসলাম জুয়েল পেয়েছেন গোলাপ ফুল প্রতীক। এছাড়া আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ পেয়েছেন মটর গাড়ি (কার) প্রতীক।
উপনির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান জানান, পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে উপনির্বাচন। আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে আসনটি খালি হয়। এ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। উপরন্তু আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী মনোনয়পত্র জমা দিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করেন।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্তে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের পর ফের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মনোনয়ন ফরম কিনে বহিস্কৃত বিএনপি’র পাঁচবারের সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে ‘মীরজাফর’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। পদত্যাগ-পরবর্তী বহিস্কৃত ওই নেতা এখন আওয়ামী লীগের ‘দাবার গুটি’।
রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে ঘায়েল করতে আবদুস সাত্তারকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ-নির্বাচনে সরকার ‘পাস করিয়ে নিবে’ এমন আলোচনা সর্বত্র। বিএনপি’র পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, দলের প্রার্থীদেরকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের এমন কৌশলও এখন স্পষ্ট।
১৯৭৩ সালের পর এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেনি। এ অবস্থায় শুরুতে আসন পুনরুদ্ধারে এবার সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে ধরে নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে কৌশলগত আঘাত করতে এ আসনের উপ-নির্বাচনকে বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য যিনি এখন দলটির কাছে মিরজাফর হিসেবে পরিচিতে সেই আব্দুস সাত্তার এখন ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের দাবার গুটি।
এ অবস্থায় সাত্তারের পক্ষে কাজ করলে দল থেকে বহিস্কারের কথা জানিয়েছেন বিএনপি’র সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, ‘বিএনপি অনেক বড় দল, যে দলে দু’একটা মীরজাফর থাকলে কিছু আসে যায় না। যদি কেউ আব্দুস সাত্তারের পক্ষে কাজ করে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। তারেক (বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) স্যারের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কথা হয়েছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেন, ‘এখানে যেহেতু দল কোনো প্রার্থী দেয়নি সেক্ষেত্রে দলের কথা বলে কেউ প্রার্থী হতে পারেন না। তারা স্বেচ্ছায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। মূলত নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে অনেকটা অসময়ে। দলের প্রার্থীরা সময় নিয়ে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
উপনির্বাচনে অংশ নিতে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। ৮ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছায়ের পর পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। বৈধ ঘোষিত আট প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তে তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলম।

এখনো সাত্তারের দেখা মেলেনি ॥ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমা দেওয়া, যাচাই–বাছাই প্রক্রিয়া এবং প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়ায় বহুল আলোচিত বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া অংশ নেননি। তাঁর ছেলে মাঈনুল হাসান ভূঁইয়া এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। মাঈনুল হাসান বলেন, ‘আব্বু ঢাকায় আছেন, সুস্থ আছেন। প্রতীক পেয়েছি। আগামী বুধবার থেকে প্রচারণায় নামবেন।’ এর আগে তিনি একাধিকবার বলেছিলেন, ‘৫ জানুয়ারির পর, ৮ জানুয়ারির পর আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া মাঠে নামবেন।’ তবে এখন পর্যন্ত তাঁকে মাঠে দেখা যায়নি। তিনি অসুস্থ বলেই প্রচার রয়েছে।

আবদুস সাত্তারের সঙ্গে নেই বিএনপির সাবেক নেতারা ॥ ৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সরাইল উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক কমিটির (বর্তমানে পদবঞ্চিত) অনেক নেতা-কর্মী মাঈনুল হাসানের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সাত্তারের সঙ্গে থাকার প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন। দল ত্যাগের পর তাঁদের অনেকেই ঢাকার বাসায় গিয়ে সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এখন তাঁরা কেউ সাত্তারের সঙ্গে নেই।
তবে মাঈনুল হাসান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সাবেক কমিটির সব নেতা-কর্মী সাত্তার সাহেবের সঙ্গে আছেন। কারণ, তাঁদের পদ হারানোর ভয় নেই। এমনকি পদে আছে এমন অনেক নেতা-কর্মীও আমাদের সঙ্গে আছেন। তাঁরা গোপনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁরা কাজও করবেন।’

উপজেলা বিএনপির ৩০ বছরের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আইনজীবী আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (সাত্তার) এখন দলের কেউ না। তাঁর নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না। আমরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না।’

সরাইলে ১০ বছর পর সরকারী ঘাটলা উদ্ধার

সরাইল, 15 February 2024, 451 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে ভূমি দস্যুদের কবল থেকে সরকারি ঘাটলা উদ্ধার করেছেন উপজেলা প্রশাসন। গত ১০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ঘাটলাটিতে মাটিচাপা দিয়ে দখলে রেখে বাণিজ্য করছিল স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। ঘাটলাটি উদ্ধারের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ি ও সাধারণ মানুষ একাধিকবার আন্দোলন সংগ্রাম মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। গণমাধ্যমে বিষয় গুলো ফলাও করে প্রচার হয়েছে। ৮ বছরেরও অধিক সময় ধরে এ বিষয়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা চলছে। অবশেষে গত বুধবার অরুয়াইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সরজমিনে দিনভর অভিযান চালিয়ে ওই ঘাটলা উদ্ধার করা হয়েছে। স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলেছে বাজারের ব্যবসায়ি ও সাধারণ লোকজন।

সরাইল উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নদী ও সরকারি জায়গা দখলে অরুয়াইলে ভূমি খেঁকো প্রভাবশালী একাধিক চক্র রয়েছে। জায়গার দখল ধরে রাখতে এরা ইউএনও’র বিরুদ্ধেও মামলা করার রেকর্ড করেছে। অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের সীমানার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিতাস নদীর শাখা। নদীটির অরুয়াইল পাকশিমুল বাজার এলাকার অগণিত অংশে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি ভূমি দস্যু চক্রের। তারা বিভিন্ন কৌশলে মাটি বা ময়লা ফেলে আস্তে আস্তে নদী ভরাট ও পরে দখল করে ফেলে। সেখানে ধীরগতিতে দিনে রাতে স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করে মার্কেট ও দোকানঘর করে দখল পাকাপুক্ত করেন। অনেক সময় স্থানীয় ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করেই নির্মাণ কাজ করেন। আর উপজেলা প্রশাসন নড়চড়া করলেই সাময়িক ভাবে থেমে যায় সেখানকার ভূমি খেঁকোরা। সেখানকার ভূমি খেঁকোদের সরকারী জায়গায় নির্মিত দোকানে লাল কালির দাগ দিয়ে উচ্ছেদ পক্রিয়ায় এগুতে থাকলে ভূমি দস্যুরা সাবেক ইউএনও মো. এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে দিয়েছিলেন। আজ থেকে ১০ বছর আগে মেঘনা তিতাস দিয়ে বয়ে আসা নৌকার মালামাল সহজে উঠা নামার করার লক্ষে অরুয়াইল বাজারে বিশ্ব ব্যাংকের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল একটি পাকা ঘাটলা। ঘাটলাটি নির্মাণের কিছুদিন পরই ভূমি দস্যু চক্রের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সেখানে। ওই চক্রটি স্থানীয় সর্দার ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাগে আনেন। একসময় ওই ঘাটলাটির উপর মাটি ফেলে ভরাটের কাজ শুরু করে। বাজারের ব্যবসায়ি ও স্থানীয় লোকজন বাঁধা দেন। উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। সংঘর্ষ সংঘাত নিরসনে পুলিশ প্রশাসন সেখানে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে ঘাটলা মাটি চাপা দিয়ে উপরে দোকানপাট করে ফেলে। একসময় ওই চক্রটি তোহা বাজার ও সরকারী জায়গা দখল করে আরো এক দেড়শত দোকান নির্মাণ করে। অতিসম্প্রতি অরুয়াইল বাজারের ওই সকল অবৈধ দখল নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়। আমলে নেন উপজেলা প্রশাসন। তাই সকালে অরুয়াইল বাজারে মসজিদ সংলগ্ন ওই ঘাটলাটি উদ্ধারে প্রথম অভিযান শুরু করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া। অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাহফুজ আলী, সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ইউপি আ.লীগের সভাপতি আবু তালেব, স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি, পুলিশ সদস্য ও বাজারের ব্যবসায়িরা। মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, উদ্ধার অভিযানটি যেন কারো ইশারায় বন্ধ না হয়। এ ছাড়া আমরা দায় সারা অভিযানও আশা করি না। পুরো ঘাটলাটি উদ্ধার চাই। সরকারি একটি খালের মুখ ভরাটের মাধ্যমে পানি নিস্কাশন বন্ধ করে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন ডেসার এক সাবেক কর্তা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই অরুয়াইলবাসী। নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, সরকারী স্থাপনা উদ্ধার একটি চলমান পক্রিয়া। এরই অংশ হিসাবে মাটি ও আবর্জনার নীচে পড়ে থাকা ঘাটলাটি উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, সরকারী জায়গা এখানকার সাধারণ মানুষ দখল করেন না। দখল বাণিজ্যের সাথে যুক্ত স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। এরাই ঘুরে ফিরে সাধারণ মানুষদের শোষণ করছে। আমার কল্পনাতেও ছিল না এই ঘাটলাটি উদ্ধার হবে। বর্তমান ইউএনও মহোদয়ের সহযোগিতায় সরকারি খরচে নির্মিত মাটিচাপায় থাকা ঘাটলাটি উদ্ধার হলো।