চলারপথে রিপোর্ট :
ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প বন্ধ করে দিয়ে শহর ও গ্রামে পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উচ্চতর আসনে পৌঁছেছে।
আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. সৈয়দ শামসুদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, সারা দেশেই বহুতল বিশিষ্ট অ্যাপার্টম্যান্ট নির্মাণ করা হবে। ওইসব অ্যাপার্টম্যান্টে প্রবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট সংরক্ষিত থাকবে।
তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর পূর্বপাড়ে একটি উপ-শহর গড়ে তোলা হবে। যার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। শহরের পূর্বপ্রান্তে তিতাস নদীর পাড় দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হবে। যার নকশার কাজ শেষ হয়েছে। প্রকৌশলীরা এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি মাল্টিপারপাস মিলনায়তন নির্মাণ করা হবে। শিশুদের বিনোদনের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি শিশুপার্ক গড়ে তোলা হবে।
সম্প্রতি শহরে বেশ কয়েকটি ছিনতাই সংগঠিত হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিনতাই-চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ছিনতাই হয়েছে। অবশ্যই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিনতাই-চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, এসব অপকর্মের সঙ্গে যদি আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কেউ জড়িত থাকে অবশ্যই তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তিনি বলেন, সামনে পবিত্র রমজান মাস। এ মাসে যাতে কেউ কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে সেদিকে পুলিশকে নজরদারি বাড়াতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার সীমানা বর্ধিত করার কাজ চলছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে একটি নান্দনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
বাচিক শিল্পী মো. মনির হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রেজারার প্রফেসর ফাহিমা খাতুন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রাস্টি বোর্ড ও পিএসসির সদস্য প্রফেসর ড. দেলোয়ার হোসেন।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রাস্টি, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভার দুটি দোকান থেকে ১৪ বস্তা ভিজিএফ’র চাল উদ্ধার করা হয়েছে। আজ ২১ জুন বুধবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা অভিযান চালিয়ে এসব চাল উদ্ধার করেন।
জানা যায়, ঈদুল আযহা উপলক্ষে উপজেলার সান্তাহার পৌরসভায় সুবিধাভোগীদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। এসময় বিতরণ করা চালগুলো পৌরসভা কার্যালয়ের পাশে নতুন বাজারে দোকানগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন। চাল ব্যবসায়ী ইউসুফ আলীর দোকান থেকে নয় বস্তা এবং অপু মন্ডলের দোকান থেকে পাঁচ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরা সুলতানা জানান, বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী সুবিধাভোগীদের ভিজিএফের চালগুলো কিনছিলেন। আমরা সেখানে পৌঁছানোর কিছু আগেই তারা কৌশলে পালিয়ে যায়। এরপর দু’টি দোকানে অভিযান চালিয়ে ১৪ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত চালগুলো জব্দ দেখানো হয়েছে। তাছাড়া এসব চাল ‘ভিজিএফ’র বুঝতে না পেরে কেনার কারণে ওই ব্যবসায়ীদের কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। এসব চাল কেনাবেচা থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করা হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। এ নৌকাই পারবে মানুষকে উন্নত জীবন দিতে, শান্তি-সমৃদ্ধি দিতে। এই নৌকায় আপনারা ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ।
আজ ২ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকায় ভোট দেবেন। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যই আজকের নির্বাচন। কাজেই এই নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন। আপনার ভোট আপনি রক্ষা করবেন আর অগ্নিসন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী বিএনপি-জামায়াতকে উপযুক্ত জবাব দেবেন। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।
আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কেবল নিজে নয়, পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ফরিদপুর, মাগুরা ও রাজবাড়ী জেলার নির্বাচনী আসনের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা মার্কার প্রার্থীদের আপনাদের দিয়ে গেলাম। তারা আপনাদের সেবা করবে, আসনবাসীর সেবা করবে। আপনারা তাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীদের নির্বাচিত করবেন। এসময় টাকা দিয়ে ভোট কেনা যায় না, টাকা দিয়ে মানুষকে কেনা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘তরুণ সমাজ বা তারুণ্যই হচ্ছে উন্নয়নের অগ্রদূত’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাদের ভোট প্রত্যাশা করেন এবং অন্যান্য নির্বাচনী জনসভার মতো প্রথমবারের মতো ভোটারদের নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফরিদপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী শামীম হকের সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-২ আসনের প্রার্থী শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরী, মাগুরা-১ আসনের প্রার্থী সাকিব আল হাসান, রাজবাড়ী-১ আসনের প্রার্থী কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী-২ আসনের প্রার্থী ঝিল্লুল হাকিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আরিফ, পৌর মেয়র অমিতাভ বোস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় সম্পূর্ণ জাতীয় সঙ্গীত বলতে না পারায় এক শিক্ষকের বেতন স্থগিত এবং শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নিদের্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
আজ ২৮ মার্চ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি উপজেলার মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে এ নির্দেশ দেন। ওই শিক্ষক হলো শরীর চর্চা শিক্ষক মোঃ সোহরাব হোসন। এসময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেনকে কারণ দর্শানোর জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম মঙ্গলবার সকাল বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে তিনি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খোঁজ খবর নেন।
এক পর্যায়ে শরীর চর্চা শিক্ষক মোঃ সোহরাব হোসেনকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলেন। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ সঙ্গীত গাইতে না পারায় জেলা প্রশাসক রাগান্বিত হয়ে শরীর চর্চা শিক্ষকের বেতন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।
যতোদিন পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা শুদ্ধভাবে সম্পূর্ণ জাতীয় সঙ্গীত গাইতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত বেতন স্থগিত থাকবে। এসময় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বলেন জেলা প্রশাসক।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবুল হোসেন বলেন, ডিসি স্যার যে বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসেছেন বিষয়টি আমি জানি না। স্যার তো শোকজ করতেই পারেন।
জানতে চাইলে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ডিসি স্যার মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন খোঁজ খবর নেন সম্পূর্ণ জাতীয় সঙ্গীত বলতে না পারায় ওই বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক মোঃ সোহরাব হোসন জাতীয় সঙ্গীত গাইতে না পারায় তার বেতন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেনকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন।
চলারপথে রিপোট
পরশুরাম উত্তর বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে দুটি বেকারিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। একই সময় একটি মুদি দোকানে আরো ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আজ ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার এসব জরিমানা আদায় করেন উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা হাবিব শাপলা।
অপরদিকে একই সময়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পৃথক অভিযান পরিচালনা করে তিনটি মোটরসাইকেল মালিককে ও একটি সবজি দোকানে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে ৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার প্রস্তুত, খাদ্যে ক্ষতিকর দ্রব্যের মিশ্রণ, পণ্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিএসটিআইএর অনুমোদন না থাকায় উত্তর বাজারের কাউতলী সড়কের আলিফ বেকারীর মালিক খায়রুল ইসলামের ২০ হাজার, শাহজালাল বেকারীর মালিক আমির হোসেনের ২০ হাজার টাকা এবং বাবুল মিয়ার মুদি দোকানে ৫ হাজার জরিমানা করা হয়েছে।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপল বলেন, প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে সর্তকতামূলক জরিমানা করা হয়েছে। তারা সংশোধিত না হলে পরবর্তীতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
‘শবে কদর’ কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত। আজ লাইলাতুল কদর। এটি একটি সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে।’ ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ ‘এ রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। শান্তিময় এ রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত’। (সুরা কদর)।
এ রাত কোরআন নাজিলের রাত। মহত্ব ও গুরুত্বসহকারে মহান আল্লাহর ইবাদতের রাত। এ রাত হলো হাজার মাস তথা তিরাশি বছর চার মাসের চেয়ে উত্তম। ওই ব্যক্তির চেয়েও ভাগ্যবান আর কে হতে পারে, যে এ রাতে নির্ঘুম থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সুযোগ পেয়েছে। এ পবিত্র রাতে ফেরেশতারা পৃথিবীতে আসে মানবজাতির জন্য বরকত, রহমত ও কল্যাণ নিয়ে।
সূর্যাস্তের পরপরই এ রাতে মহান আল্লাহ তার আরশ থেকে প্রথম আকাশে নেমে আসেন। মায়া আর দয়া নিয়ে, প্রেম ও ভালোবাসা দিয়ে মানবজাতিকে ডাকেন আর বলেন, ‘কে আছ পাপী! তুমি ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। কে আছ দুঃখী! আমি তোমার দুঃখ মোচন করব। কে আছ রোগী! আমি তোমাকে সুস্থ করে দেব। কে আছ দায়গ্রস্ত! আমি তোমাকে দায়মুক্ত করে দেব। তোমাদের কার রিজিকের প্রয়োজন! আমার কাছে চাও, আমি তার রিজিক বৃদ্ধি করব।’ মহান আল্লাহ এভাবে ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। যারা তার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রার্থনায় লিপ্ত হয়, তারা কল্যাণকামী হয়। সৌভাগ্যবান হয়।
শবে কদরের রাতে কুরআন নাজিল সম্পর্কে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি রূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন, ‘উজ্জ্বল কিতাবের শপথ! নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী, যাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন ও সব জানেন। তিনি নভোমণ্ডল-ভূমণ্ডল ও এ উভয়ের মাঝে যা আছে সে সবের রব। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস করো; তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, তিনিই তোমাদের পরওয়ারদিগার আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও। তবু তারা সংশয়ে রঙ্গ করে। তবে অপেক্ষা করো সে দিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূম্রাচ্ছন্ন হবে। (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ১-১০)।
শবে কদর ও কোরআন অবতরণ এবং এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে দয়াময় আল্লাহ কোরআনে ‘সুরা কদর’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করেছেন। তাতে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে ঊষার উদয় পর্যন্ত। (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)।
শবে কদরের রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ রাত গুনাহ মাফের রাত। হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। এ রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)।
কিয়ামুল লাইল: ‘কিয়ামুল লাইল’ অর্থ হলো রাত্রি জাগরণ। মহান আল্লাহর জন্য আরামের ঘুম স্বেচ্ছায় হারাম করে রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের একটি গুণ। মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- ‘তারা রাত্রি যাপন করে রবের উদ্দেশে সিজদাবনত হয়েও দাঁড়িয়ে থেকে’ (সুরা ফুরকান : ৬৪)।
‘তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক থাকে (অর্থাৎ তারা শয্যা গ্রহণ করে না; বরং এবাদতে মশগুল থাকে)। তারা গজবের ভয়ে এবং রহমতের আশায় তাদের রবকে ডাকতে থাকে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করে থাকে। কেউ জানে না। তাদের আমালের পুরস্কারস্বরূপ (আখিরাতে) তাদের জন্য কী জিনিস গোপনে রাখা হয়েছে’ (সুরা সিজদা : ১৬-১৭)। নবীজি (সা.) একদিন সাহাবায়ে কেরামদের (রা.) সামনে বনি ইসরাইলের এক উপাসকের কথা বলছিলেন। সে ব্যক্তি এক হাজার মাস ধরে আল্লাহর ধ্যান ও সাধনায় লিপ্ত ছিল। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আফসোস করতে লাগলেন আর বললেন, আমরা এত বছর ইবাদত করব কীভাবে? তাছাড়া আমাদের অনেকে তো এত বছর বেঁচেও থাকি না। ঠিক তখনই জিবরাইল (আ.) এ রাতের সুসংবাদসহ সুরা কদর নিয়ে নবীজির (সা.) কাছে হাজির হলেন এবং এ উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে প্রমাণ করে দিলেন। (তাফসিরে মাজহারি)।
নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা মাহে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি)। এ রাত হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার রাত। হজরত আয়েশা (রা.) একবার রাসুল (সা.)কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে কী দোয়া করব? তখন নবীজি (সা.) বললেন, তুমি এ দোয়াটি করবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন; তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তো ক্ষমাশীল! ক্ষমাকে তুমি ভালোবাস। অতএব, আমাকে তুমি ক্ষমা কর।
নবীজির (সা.) সময় অনেক সাহাবী (রা.) রমজানের ২৭ তারিখকে লাইলাতুল কদর হিসেবে স্বপ্ন দেখেছেন। সাহাবীরা (রা.) নবীজিকে (সা.) স্বপ্নের কথা জানালে নবীজি (সা.) বলেন, আমিও এমনটা স্বপ্নে দেখেছি। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর শপথ করে বলছি-নবীজি (সা.) ২৭ রমজানের রাতকে লাইলাতুল কদরের রাত বলেছেন।’ অন্য হাদিসে রয়েছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি দুর্বল অথবা কোনো কারণে অক্ষম হয়ে থাকে, সে যেন রমজানের ২৭ তারিখ রাতে ইবাদত করে।’ (মুসলিম)। আরেক হাদিসে এসেছে-নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেতে চায়, সে যেন তা রমজানের সাতাশতম রাতে অনুসন্ধান করে। (মুসনাদে আহমদ)।