চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী সাইম সরকার নামে পঞ্চম শ্রেণির স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শিশুটির বাবা সালাউদ্দদিন সরকার গুরুতর আহত হন।
আজ ৫ মার্চ মঙ্গলবার সকালে পৌরসভার নারায়ণপুর ফায়ার সার্ভিস অফিস সংলগ্ন নবীনগর-কোম্পানিগঞ্জ সড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত স্কুলছাত্রের বাড়ি উপজেলার সাতমোড়া ইউনিয়নের বাউচাইল গ্রামে। সে সালাউদ্দিন সরকারের ছোট ছেলে।
সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, সকালে উপজেলার নারায়নপুর ফায়ার সার্ভিস অফিস সংলগ্ন নবীনগর-কোম্পানিগঞ্জ সড়কে দু’দিক থেকে আসা দু’টি মোটরসাইকেল পাশ কাটতে যাচ্ছিল। ওই সময় একটি ট্রাক মোটর সাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেলের পিছনে বসে থাকা শিশু সাইম সরকার মারা যায়। এছাড়া গুরুতর আহত হন মোটরসাইকেল চালক সালাউদ্দিন সরকার। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠান।
নবীনগরের ওসি মোহাম্মদ মাহবুব আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শিশুটির লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করেছে। এখন মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে পাঠানো হবে। এছাড়া ট্রাকসহ চালক শাহ আলমকে আটক করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর ঢেঁড়স চাষ করে বেকারত্ব ঘুঁচিয়েছেন শিবপুর ইউনিয়নের কাজুলিয়া গ্রামের খাইরুল বাসার ও ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের (দ. পাড়া) জয়নাল মিয়া। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে তাঁরা এখন তাদের পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। স্বল্প সময় ও অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় আরও অনেকেই এখন ঢেঁড়স চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, খাইরুল বাশার এ বছর ৪০ শতক এবং জয়নাল মিয়া ২০ শতক জমিতে ঢেঁড়স চাষ করেন। তাঁরা নিজেরাই জমি থেকে ঢেঁড়স উত্তোলন করছেন। আলাপ কালে জয়নাল মিয়া জানান- তার বাবা অসুস্থ্য হওয়ায় ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। এরপর আর ভাল কোন চাকরি না পাওয়ায় বাড়ীর পাশের জমিতে শুরু করেন সবজি চাষ। তিনি এক বিঘা জমি নিয়ে শুরু করেন ঢেঁড়সের চাষ। স্বল্প সময়ে এই ঢেঁড়স চাষ করে বেশ লাভবানও হয়েছেন তিনি। তিনি বলেন- এখানকার মাটি বেশ উর্বর থাকায় তার উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়েছে। তার এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়স চাষ করতে ৬/৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার টাকার বিক্রি করেছেন। একদিন পরপর জমি থেকে ঢেঁড়স উত্তোলন করতে হয়। এতে তেমন কোন শ্রমিকের (লেবার) প্রয়োজন হয় না। জমি থেকেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন- “ আমি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে বারি উদ্ভাবিত ‘বারি ঢেঁড়স-১’ জাতের ঢেঁড়সের চাষ করেছি। বাজারে ঢেঁড়সের দাম ভাল থাকায় লাভবানও হচ্ছি। এ বছর ঢেঁড়সের পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় খরচও কম হয়েছে ”।
এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার জগলুল হায়দার বলেন- “এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ঢেঁড়সে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। আর ঢেঁড়সের বিভিন্ন জাতের মধ্যে ‘বারি ঢেঁড়স-১’ এর ফলন ভাল। এটা চাষ করা লাভ জনক। তবে তার মত শিক্ষিত অনেক যুবকরাই এগিয়ে আসছে। আমরা কৃষি অফিস তাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করব”।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি উদ্যোগে ‘দুর্নীতি বিরোধী বিতর্ক ও রচনা প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৩০ মে বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ বিতর্ক ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনটি পর্বে বিতর্কের প্রথম রাউন্ডের বিষয় ছিল ‘অভাব নয় সীমাহীন লোভই দুর্নীতির প্রধান কারণ’ এ পর্বে নবীনগর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়কে হারিয়ে সলিমগঞ্জ আব্দুর রউফ মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় বিজয় অর্জন করে।
দ্বিতীয় রাউন্ডে বিষয়বস্তু ছিল ‘দুর্নীতিই জাতীয় উন্নয়নের প্রধান কারণ’ এ পর্বে নবীনগর ইচ্ছাময়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে হারিয়ে শিবপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় বিজয় অর্জন করে।
ফাইনাল রাউন্ডের বিষয়বস্তু ছিল ‘দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব সৃষ্টিতে পরিবারের ভূমিকায়ই মূর্খ্য’ এ বিতর্কে সলিমগঞ্জ আব্দুর রউফ মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়কে হারিয়ে শিবপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়। শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় চ্যাম্পিয়ন দলের দলনেতা জারিন তাসমিন।
দুর্নীতি দমনের ছাত্রসমাজের ভূমিকা ‘বিষয়ের উপরে রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মাছুমা খন্দকার।
দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে নবীনগর ইচ্ছাময়ী পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার সারা।
তৃতীয় স্থান অর্জন করে নবীনগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র নওফেল আহাদ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কার্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন একাডেমিক সুপার ভাইজার হাসনাত জাহান, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরজু, প্রেসক্লাবের সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ চক্রবর্তী শামল, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি আমেনা বেগম।
সভাপতিত্ব করেন নবীনগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আবু কামাল খন্দকার। বক্তব্য রাখেন, কমিটির সদস্য মাওলানা আব্দুল মতিন, কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান কল্লোল, শিক্ষক মাদক চক্রবর্তী, শিক্ষক আবু হানিফ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: হোসেন শান্তি।
বিচারক প্যানেলে ছিলেন, প্রভাষক শিউলি পারভীন, আশীষ কুমার গুহ, সাম সাম উদ্দিন।
সঞ্চালনায় ছিলেন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য আব্বাস উদ্দিন হেলাল।
চলারপথে রিপোর্ট :
গ্রামবাংলায় গ্রীষ্মকালে যে বনফুলটি বেশি চোখে পড়ে, সেটি হল- বরুণ গাছের ফুল। গাছ ভরা অফুরন্ত প্রস্ফুটিত এ ফুল প্রকৃতিতে এক অনাবিল উচ্ছ্বাস এনে দেয়। বরুণকে নবীনগরের আঞ্চলিক ভাষায় বলে বন্না ফুল। গ্রামের শিশুরা বরুণ ফুল ও ফল খেলার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। এখন বরুণ ফুল ফোটার সময়, এ সময় গ্রামে গেলে নয়নাভিরাম বরুণ ফুলের নান্দনিক সৌন্দর্যে বিমোহিত না হয়ে উপায় নাই। বরুণের বৈজ্ঞানিক নাম-Crateva religiosa. ইংরেজি-sacred garlic pear এবং temple plant . এটি Crateva গণের একটি ফুল। এদের অন্য নাম হল- বালাই লামক, অবিয়ুচ, বন্না, এবং বিদাসি। এটি জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং কতিপয় প্রজাতি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের স্থানীয় গাছ। বাংলাদেশের মানুষ অতীতকালে ফল পাকাতে এই গাছের পাতা ব্যবহার করতেন। বর্তমানে ফল পাকাতে ক্ষতিকারক ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এই গাছের কদর এখন নেই। বর্ষায় বরুণের ফল ঝুলে থাকতে দেখা যায়, ফল দেখতে কদবেলের মত। গাছ মাঝারি ধরনের এবং প্রচুর ডালপালা যুক্ত। বাকল ছাই রঙের মধ্যে সাদা সাদা ফোঁটা যুক্ত। পাতা যৌগিক, তিনটি পত্রক একক বোঁটায় জন্মে। ফুল চৈত্র-বৈশাখ মাসে ফুটে। ফুলের পাপড়ি ঘিয়ে রঙের, পুংকেশর দেখতে অনেকটা বিড়ালের গোঁফের মতো। মাঘ ফাগুনে পাতা ঝরে যায়, পূর্ণ প্রস্ফুটিত বরুণ গাছ বড়ই দৃষ্টিনন্দন। হাজারো ফুলের মাঝে নিচু জলাভূমিতে বসন্তে স্নিগ্ধতা ছড়ায় বরুণ ফুল। বরুণ ভাটি এলাকায় বেশি জন্মায়, নবীনগরের যে গ্রাম গুলো পানিতে তলিয়ে যায় সে গ্রাম গুলিতে অনেকটা অনাদর অবহেলায় আজ ও টিকে আছে বরুণ গাছ।
বরুণের ভেষজ গুণ :- অর্শরোগীরা রোগে খুব কষ্ট পেলে তিলের তেলে মাখানো বরুণ পাতা জলে সিদ্ধ করে ওই জলে গোসল করলে অর্শ রোগের ব্যথা-বেদনা দূর হয়। এর পাতা চর্মরোগ, ব্যথা, বাত নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। শিকড়ের বাকলের নির্যাস গ্যাস্ট্রিক রোগে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা ফল রান্না করে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। শ্রীলঙ্কায় বাতের রোগে বরুণ পাতা ব্যবহৃত হয়। খাওয়ার আগে বরুণের মুকুল একটু লবণের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ক্ষুধা বাড়ে। পিত্তপাথরের রোগে ১০ গ্রাম বরুণের বাকল কেটে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে অর্ধেক অবস্থায় নামিয়ে সকাল-বিকাল সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মেয়েদের মুখের মেছতা দূর করতেও বরুণ বেশ উপকারী। এ ক্ষেত্রে বরুণ বাকল ছাগলের দুধে মিশিয়ে দৈনিক একবার করে মুখের কাল দাগে লাগালে দাগ ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়। যাদের শরীরের গাঁটে গাঁটে বাতের ব্যথা, এমনকি পায়ের তলাতেও ব্যথা ও ফোলা, তারা শুষ্ক বরুণ পাতা (৫-৭ গ্রাম) ৩ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে আনুমানিক ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে পানিটা আধা গ্রাম শুষ্ক আদাচূর্ণের সঙ্গে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে খেলে ব্যথা ও ফোলা দুটোই কমে যায়।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে গুঞ্জন পাঠাগার। মাত্র ৩টি বই নিয়ে যাত্রা করা গুঞ্জন পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা ১০ হাজার। গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা এই পাঠাগারের বই দিয়ে পড়াশুনা করে। ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ ছোট একটি টিনের একচালা ঘরে যাত্রা শুরু করা পাঠাগারটি এখন ১ তলা বিশিষ্ট ভবন।
গুঞ্জন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া (৩২)। তিনি নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের মরহুম স্বপন মিয়ার ছেলে। বর্তমানে স্বপন মিয়া জেলার কসবা উপজেলার একটি বেসরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক।
স্থানীয়রা জানান, ছোট বেলা থেকেই বইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিলো স্বপন মিয়ার। ২০০৪ সালে স্বপন মিয়া যখন ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই তিনি তার বাড়ির একটি টিনের ঘরে মাত্র তিনটি বই দিয়ে পাঠাগারটি চালু করেন। পাঠাগারের নামকরন করেন “গুঞ্জন পাঠাগার”। প্রায় ১৯ বছরে পাঠাগারটি এখন ১০ হাজার বইয়ে সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার। পাঠাগারে গ্রামের ছেলে মেয়েরা এক সাথে স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন লেখকের বই পড়তে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র দেড় বছর বয়সে পিতাকে হারান স্বপন মিয়া। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন মা রাজিয়া খাতুন। তিনি মাটি কাটার কাজ করে সন্তানদের খুবই কষ্টে লালন-পালন করেন। স্বপনের দুই ভাই রিকশা চালক।
স্বপন মিয়া যখন গ্রামের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই একটি পাঠাগার গড়ার চিন্তা মাথায় আসে তার। তখন তিনি পরিবারের সদস্যদের অমতে একটি এনজিও থেকে ৮ হাজার টাকা ঋন নিয়ে বাড়ির জায়গায় একটি ছোট একচালা টিনের ঘর তৈরী করে মাত্র তিনটি বই দিয়ে গুঞ্জন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠাগারটি নিয়ে স্বপনের পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। বড় দুই ভাই তাকে শর্ত দেন, পরিবারে থাকতে হলে পাঠাগার ছাড়তে হবে। কিন্তু স্বপন পরিবারকে ছেড়ে পাঠাগারকে আকড়ে ধরে রাখেন। পরবর্তীতে স্বপনের মা রাজিয়া খাতুন স্বপনকে সম্মতি দেন।
এক পর্যায়ে নিজের পড়াশুনা, সংসার আর পাঠাগার দেখাশুনা করতে স্বপন মিয়া দিন-মজুরি শুরু করেন। পথে ঘাটে ফেরি করে পান-সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন তিনি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ করেননি।
উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।
পরে তিনি মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সোয়া ২ শতাংশ জায়গা পাঠাগারের নামে দান করে সেখানে ঋণের টাকায় একতলা বিশিষ্ট পাকা ভবন করেন। পাঠাগারেই রাত্রিযাপন করেন তিনি। কলেজ থেকে যে টাকা বেতন পান, তার বেশির ভাগই ব্যয় করেন এই পাঠাগারে।
বর্তমানে প্রতি শুক্রবারে পাঠচক্র বসে পাঠাগারে। সেখানে শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজন করা হয় সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগীতার।
নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের রমজান জানান, তার পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় অষ্টম শ্রেনীতে পড়ার সময় তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বাধ্য হয়ে তিনি বাবার সাথে কৃষি কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে স্বপন তাকে গুঞ্জন পাঠাগারে নিয়ে আসেন। এই পাঠাগারে থাকা বই দিয়েই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। অনার্স শেষ করে বর্তমানে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাস্টার্স করছেন।
নবীনগর উপজেলার ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওহীদ জাহান চৌধুরী জানায়, সে নিয়মিত গুঞ্জন পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ে সে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সবধরনের বই আছে এখানে। এছাড়া তার কয়েকজন সহপাঠীও পাঠাগারে এসে বই পড়ে।
উপজেলার কৃষ্ণনগর আবদুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক রোকসানা জেবিন মলি জানান, গুঞ্জন পাঠাগারের মনোরম পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। পাঠাগারটি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।
পাঠাগারে নিয়মিত আসা পাঠক ও কসবা উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তুহিন কান্তি দাস বলেন, নবীনগর তথা পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য আলোর দিশারী হয়ে দাঁড়িয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারটি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি ও বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছে পাঠাগারটি।
পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া বলেন, পাঠাগারটি সমৃদ্ধ করতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও অনেক ব্যক্তি তাকে সহায়তা করেছেন। যার জন্য তিনি পাঠাগারটিকে একচালা টিনের ঘর থেকে পাকা ভবন তৈরি করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ‘সমাজে আমার মতো অনেকেই আছে- যারা বই কিনে পড়তে পারে না। অর্থের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের কথা চিন্তা করেই পাঠাগারটি করা হয়েছে। এই পাঠাগারের জন্য আমাকে পরিবার থেকে আলাদা হতে হয়েছিল। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আমি রাস্তায় ফেরী করে পান-সিগারেট বিক্রি করেছি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ হতে দেইনি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই পাঠাগারের বই পড়ে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। সুহাতা গ্রাম আলোকিত হয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারের আলোতে। আমি চাই জ্ঞানের এই আলো ছড়িয়ে পড়–ক সবখানে।
এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, পাঠাগারের জন্য স্বপন তার নিজের ব্যক্তি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছে। গুঞ্জন পাঠাগার শুধু জ্ঞানের আলোই ছড়াচ্ছে না, ছেলে-মেয়েদের মাদক থেকেও দূরে রাখতে সহায়তা করছে। বই পড়ার কারণে মেধার বিকাশ হচ্ছে, জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ৫ জন বালু মহলের ইজারাদার ও শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ১ সেপ্টেম্বর রবিবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের সোনাবালুয়া ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রায় শতাধিক গুলির আওয়াজে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত চারজনকে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে।
অন্য ১জনকে উপজেলার সলিমগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন কবির মিয়া (৪৫), সফিদ মিয়া (৪০), খলিল মিয়া (৪২), ফারুক মিয়া ও আলকাছ মিয়া (৩৬)। তারা সবাই উপজেলার ধরাভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা।
এলাকাবাসী ও বালুমহল ইজারাদার সূত্রে জানা যায়, নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের জাফরাবাদ মৌজায় অবস্থিত মেঘনা নদী থেকে সম্প্রতি প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বালু উত্তোলনের ইজারা পায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুন্সি এন্টারপ্রাইজ।
ইজারা পাওয়ার পর থেকে মেঘনা নদীর জাফরাবাদ ও নতুন চর বালু মহালের বালু উত্তোলন শুরু করে। তবে মেঘনা নদীর ওপর প্রান্ত অবস্থিত নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার কিছু লোক এই এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করতে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে বারবার দাবি করে আসছিলেন। ইজারাদার থেকে চাঁদার টাকা না পেয়ে গত দুদিন থেকে অবৈধভাবে ৬টি ড্রেজার দিয়ে চুরি করে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছিল দুর্বৃত্তরা। তখন স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে শরণাপন্ন হন ইজারাদার কর্তৃপক্ষ।
তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুর্বৃত্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রবিবার সন্ধ্যায় ২/৩টি স্পিডবোটযোগে এসে বালু মহালের ক্যাশ কাউন্টারে হামলা চালায়। এ সময় শ্রমিকদের ওপর অতর্কিতভাবে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়ে ৫ জনকে গুরুতর আহত করে।
নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আফজাল হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা শুনেছি, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’