সরাইলে ৪৯টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন

সরাইল, 6 March 2024, 401 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৪৯টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ১৫৫০ ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন উত্তোলন এবং ১ জনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সরাইল উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নাছরিন সুলতানা আজ ৬ মার্চ বুধবার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের হালুয়াপাড়া ও দক্ষিণ আরিফাইল গ্রামে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। জরিমানাপ্রাপ্তের নাম নূর আলম। তিনি হালুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী সরাইল উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নাছরিন সুলতানা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে।

একটি চক্র বিভিন্ন বাসা বাড়িতে এই অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিচ্ছেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে হালুয়াপাড়া ও দক্ষিণ আরিফাইল গ্রাম থেকে ৪৯টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ১৫৫০ ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন উত্তোলন করা হয়। পাশাপাশি বাসাবাড়ির গ্যাস সংযোগ নিয়ে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক কাজে গ্যাস ব্যবহার করার দায়ে নূর আলম নামে একজনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

নবীনগরে অগ্নিকান্ডে ১২ দোকান ভস্মিভূত

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে একটি বিপণীবিতানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে Read more

মদসহ ভারতীয় নাগরিক আটক

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অভিযান চালিয়ে বিদেশি Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

চোর চক্রের ৬ সদস্য গ্রেফতার

সরাইল, 8 October 2023, 580 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে আন্তঃজেলা অটোরিকসা চোর চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের আঁখিতারা বাজার থেকে একটি অটোরিক্সা চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের সহায়তায় তিনজন ও পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শনিবার রাতে বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের মোঃ রুবেল মিয়া (২৩), একই এলাকার মোঃ পায়েল মিয়া (২৩) ও জসিম উদ্দিন (১৮), বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা গ্রামের মোঃ মিলন মিয়া (২৫), একই ইউনিয়নের কালিসীমা গ্রামের মোঃ সোহেল মিয়া (৩০) ও একই গ্রামের জোৎস্না বেগম (৩০)।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, শনিবার বিকেলে উপজেলার আঁখিতারা বাজারের রাজীব অটোরিক্সা গ্যারেজের সামনে থেকে একটি অটোরিকসা চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা চোর চক্রের তিন সদস্য রুবেল, পায়েল ও জসিমকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুসারে বিজয়নগরের চান্দুরা থেকে অপর তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা জেলা সদর,বিজয়নগর, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলায় থেকে পরস্পর যোগসাজসে অটোরিক্সা, ব্যাটারি, সিএনজি ইত্যাদি চুরি করে অন্যত্র নিয়ে ক্রয়-বিক্রয় করে।

এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার সকালে গ্রেফতারকৃতদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

সরাইলে দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত অর্ধশত

সরাইল, 18 April 2024, 292 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে আজ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। ধান শুকানোর ‘খলা’ দখল নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৪ রাউন্ড গুলি ও তিন রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থল থেকে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, পরমানন্দপুর গ্রামের সরকারি একটি জায়গায় অনেক দিন যাবৎ সাব্বির ও তার লোকজন দান শুকায়। বৃহস্পতিবার কাঞ্চন গ্রুপের লোকজন ওই জায়গার মাটি কেটে দখলে নিতে চায়। এরই জের ধরে দুই পক্ষের দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এ সময় ঝগড়ার নেতৃত্ব দেন সানাউল্লাহ গোষ্ঠীর কাঞ্চন মিয়া এবং বুইল্লার দলের পক্ষে জিয়াউল আমিন। পরে সোনাউল্লাহর পক্ষে যোগ দেয় খাঁ বাড়ি, কৈবর্তবাড়ির লোকজন। আর বুইল্লার বাড়ির সাথে যোগ দেয় বুদ্ধির গোষ্ঠী, বড়বাড়ি ও উজিবাড়ির লোকজন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৫০ জন আহত হয়।

সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বিকেল সোয়া ৪টার দিকে জানান, তিনি ঘটনাস্থলে আছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ লাঠিপেটার পাশাপাশি গুলি ও টিয়ার শেল ছোড়ে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিদায়ী সংবর্ধণা

সরাইল, 29 February 2024, 426 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে সদ্য সাবেক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদ খালিদ জামিলকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছেন শিল্পকলা একাডেমি ও সরকারি কলেজ।

এ উপলক্ষে গতকাল বুধবার বিকালে ইউএনও মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়ার দফতরে উনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধণা সভায় বক্তব্য রাখেন- সরাইল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল, শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদক সঞ্জীব কুমার দেবনাথ, উত্তর কালিকচ্ছ মর্ডাণ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব খান, সরাইল মহিলা কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ মাহবুব খান, সরাইল সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার ও শাহজাদাপুর ইউপি আ’লীগের সভাপতি মো. ছায়েফ উল্লাহ ঠাকুর।

এ ছাড়াও সরকারি কলেজের প্রভাষকবৃন্দ ও শিল্পকলা একাডেমির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা শিক্ষা কর্মকর্তা সহিদ খালিদ জামিল খানের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লোত হয়ে পড়েন। কর্ম ক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য সাফল্য ও কৃতিত্ব তুলে ধরে বলেন, নানাবিধ মেধা ও প্রজ্ঞার অধিকারী খালিদ জামিল সরাইলকে অনেক কিছু দিয়েছেন। কর্ম গুণেই তিনি সরাইলের মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন আজীবন। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে খালিদ জামিল বলেন, দীর্ঘদিনের কর্মক্ষেত্র সরাইলের জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, সাহিত্যিকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ গুলো খুবই আন্তরিক।

সর্বক্ষেত্রে তারা আমাকে সহায়তা করে কাজে সফল করেছেন। আমি সকলের পরিবার পরিজন সহ সকলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। সবশেষে খালিদ জামিল খানকে ফুলেল শুভেচ্ছার মাধ্যমে বিদায় জানানো হয়।

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জেতায় সরাইলে মিষ্টি বিতরণ

সরাইল, 20 November 2023, 576 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
অস্ট্রেলিয়া ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জেতায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে। ১৯ নভেম্বর রবিবার রাতে উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মিষ্টি বিতরণ করেন সমর্থকরা। এসময় আতশবাজি ফাটিয়ে আনন্দ-উল্লাস করেন তারা।

সুফল নামের এক যুবক জানান, খেলা আনন্দের বিষয়। ইন্ডিয়া নিজেদের দেশে খেলা বলে বেশিরভাগ খেলায় দুর্নীতি করেছে। এরমধ্যে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পিচ পাল্টানো অন্যতম। আশা ছিল অস্ট্রেলিয়া একটি শক্ত দল তাদের সঙ্গে ভারত হারবে। আর সেটাই হলো। ভারত হারার প্রত্যাশায় আমি আগে থেকেই মিষ্টি ও আতশবাজি কিনে রেখেছিলাম।

তিনি দাবি করেন, বেশিরভাগ মানুষ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে সাপোর্ট করেছে। ক্রিকেট একটি ভদ্র খেলা তাই ভদ্র দল কে সাপোর্ট করা প্রয়োজন।

এর আগে রবিবার ভারতের আহমেদাবাদে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালে ভারতকে উড়িয়ে দিয়েই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে জয় তুলে নেয়।

আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আখাউড়া, কসবা, জাতীয়, নাসিরনগর, বিজয়নগর, রাজনীতি, সরাইল, 9 January 2023, 6049 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু। দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লিখা হয়- ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।’
জনগণ নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছো, তোমরা রক্ত দিয়েছো, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘একটা কথা-আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি-ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যারা অন্য লোক আছে অন্য দেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক বাংলায় কথা বলে না, তাদের বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি তাদের উপর হাত তুলো না আমরা মানুষ, মানুষ ভালোবাসি। ‘তবে যারা দালালি করেছে যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে’ উল্লেখ করে জাতির পিতা বলেন, ‘তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, একজনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমায় আপনারা পেয়েছেন। আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিলো। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাবো। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার তাঁর নির্দেশিত যুদ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের যুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ বলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেয়া হয় এবং যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বাসস।