চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা সদরের সাথে সরাইল-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের সংযোগ রক্ষাকারী দু‘টি পুরাতন আরসিসি ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ব্রিজগুলো হলো-নাসিরনগর-সরাইল সড়কের দাতঁমন্ডল নামক স্থানে ব্রিজ ও নাসিরনগর-লাখাই সড়কে আশুরাইল (বেনীপাড়া) মহাখাল নামক ব্রিজ। সরেজমিনে দেখা গেছে, আশুরাইল (বেনীপাড়া) মহাখাল নামক ব্রিজ মধ্যবর্তী স্থানে সংযোগ থেকে সরে গেছে। ফলে স্থানচ্যুত হয়ে যাওয়ায় মূল ব্রিজটি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কে আশুরাইল (বেনীপাড়া) মহাখাল ব্রিজটি অনেক বছরের পুরনো। ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে হঠাৎ করেই সংযোগ থেকে সরে গেছে। পাশের রেলিংও ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঝুকিঁপূর্ণ ব্রিজটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও হঠাৎ করে ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে সংযোগ সরে যাওয়ায় মনে আতঙ্ক নিয়েই চলাচল করছে হাজারো মানুষসহ ভারী যানবাহন। অন্যদিকে নাসিরনগর-সরাইল সড়কের দাতঁমন্ডল নামক স্থানে ব্রিজটি গতবছর বর্যার স্রোতে একদিকে হেলে পড়েছে। দীর্ঘ এক বছর যাবৎ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও আজো মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান। তাই ব্রিজ দুইটি অপসারণ করে এখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করলে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূঁইয়া জানান, তিনি ডিসি অফিসে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঝুঁকিপর্ণ দুইটি ব্রিজের বিষয়ে অবহিত করেছেন।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের পুন:নির্মাণের বিষয়ে এখনো সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন পাননি। তবে অনুমোদন পেলে টেন্ডারে যাবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নাসিরনগর উপজেলা সদরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফিল্ড অফিসার হিসেবে চাকরি করেন। জেলা শহরের মধ্যপাড়ায় বসবাস করেন পরিবার নিয়ে। গত ৫ বছর ধরে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নিজের মোটর সাইকেল দিয়ে কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু এখনো নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারেননি তিনি। গত তিন বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিসে কাগজপত্রসহ ফি জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু অফিস থেকে নানা জটিলতা দেখিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মোটর সাইকেল নিয়ে চলার পথে অসংখ্যবার জরিমানা দিতে হয়েছে তাকে।
সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিআরটিএ অফিসে গিয়ে শরিফ উদ্দিনের মতো আরো বেশ কয়েকজনকে নানা সমস্যা নিয়ে আশপাশে পায়চারি করতে দেখা যায়। কথা হয় তৌফিক আহমেদ নামের এক ভুক্তভোগীর।
তিনি বলেন, আমি একটি বেসরকারি সংস্থায় (আশা) লোন অফিসার হিসেবে নবীনগর উপজেলায় কর্মরত। ২০২০ সালে মোটর সাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করি। সব প্রক্রিয়া শেষ করার পর ভাইভাতে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আমি কার লোক বা কারও মাধ্যমে লাইসেন্স করতে এসেছি কি না? আমি না সূচক উত্তর দেওয়ায় আমাকে বের করে দেওয়া হয়। পরে সরকারি লাইসেন্স ফি আড়াই হাজার টাকার স্থলে বিআরটিএ’র স্টাফ আবু বক্করের সঙ্গে নয় হাজার টাকায় চুক্তি করি। তারপরও গত তিন বছর ধরে ঘুরতে হচ্ছে। আজ আমাকে আবার নতুন করে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সার্কেল অফিস দালালদের জন্য উন্মুক্ত। এখানে চিহ্নিত কয়েকজন দালালের আধিপত্য রয়েছে। এর মধ্যে আজাদ, শাহ আলম, মোস্তাকিম, আবুল, মেড্ডার খোকন, শরীফ, কসবার শাহ আলম, সামীর ও আহসানের নাম উল্লেখযোগ্য। তারা অফিসের ফটকের সামনেই বেঞ্চ পেতে বসে থাকেন। অফিসের মূল স্টাফদের সঙ্গে তাদের সখ্যতা রয়েছে। সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতেও কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা উপস্থিত থাকেন। এছাড়া মফিজ ও আবু বক্কর নামে দুজন নিজেদের স্টাফ পরিচয় দিয়ে কাজ করেন। অথচ তাদের কোনো নিয়োগপত্র নেই। তারা দালালদের সহায়কের ভূমিকায় কাজ করেন।
কাছে আবু বক্কর নিজেকে এই অফিসের সিল মেকানিক হিসেবে দাবি করেন। এছাড়া কোনো দালালের সঙ্গেও তার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানান।
জানা যায়, নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার পর প্রাথমিক অবস্থায় লার্নার লাইসেন্স প্রদান করা হয়। পরে ধাপে ধাপে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা, ভাইভা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হয়। কিন্তু দালাল ছাড়া এই প্রক্রিয়া করা প্রায় অসম্ভব। পদে পদে বিভিন্ন অজুহাতে অফিস থেকে লাইসেন্স আবেদনকারীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে বাধ্য হয়ে দালালের দারস্থ হতে হয় আবেদনকারীদের। তারা লাইসেন্সপ্রতি ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে ডোপ টেস্ট থেকে শুরু করে ভাইভা, ফিঙ্গার প্রিন্ট সবকিছু দালালরাই ম্যানেজ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চলাচল করছে। এর মধ্যে মাত্র পাঁচ হাজার ২৫০টি সিএনজিচালিত অটোরিক্সার লাইসেন্স আছে।
বিজয়নগর উপজেলার কালাছড়া গ্রামের সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালক রোমান মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ২০১৮ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে এক দালালকে ১২ হাজার টাকা দেন। কয়েক দিন ঘোরানোর পর তাকে আর পাওয়া যায়নি। পরে কসবার কামালপুরের দালাল শাহ আলমের সঙ্গে ১৮ হাজার টাকায় চুক্তি করি। এরপরও প্রায় তিন বছর কেটে গেল। লাইসেন্স পাওয়া হলো না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন সিদ্দিক বলেন, আমি এই কার্যালয়ে সম্প্রতি যোগ দিয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। প্রয়োজনে দালালদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হবে।
নিজেকে সিল মেকানিক হিসেবে দাবি করা আবু বক্করের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার তো সরকারি কোনো নিয়োগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এভাবে এখানে কাজ করছেন বলে জানতে পেরেছি।
চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে উপজেলা বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। বিএনপির একাংশ উপজেলা কেন্দ্রীয় অফিস দখল করে মহড়া দিচ্ছে।
আজ ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটার দিকে নাসিরনগর কলেজমোড়ে এ ঘটনা ঘটে। বিকেলে গুরুতর আহত অবস্থায় নাসির উদ্দিন ও রায়হানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা বিএনপির কমিটিকে কেন্দ্র করে সৈয়দ একরামুজ্জামান সুখন ও মামুনের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। কমিটি গঠনের পর গত ২৬ এপ্রিল খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সৈয়দ একরামুজ্জামান সুখন দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে নাসিরনগরে আসেন। তার আগমন উপলক্ষে মামুনের পক্ষের লোকজন একরামকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ওই দিনই বিকেলে দলীয় অফিস দখল করে মহড়া চালায়। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে মহড়া। পরের দিন দুপুরে একরামুজ্জামান সদর ইউনিয়নের দাতমন্ডল গ্রামের একটি অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে হামলার শিকার হয়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়।
আহতরা হলেন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন, সদর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো রায়হান, সদর ইউনিয়ন যুবদল সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ইসমাইল, যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জামাল মিয়া ও উপজেলা জাসাসের সদস্য সচিব মো. সাদেক।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কামরুজ্জামান মামুন বলেন, নাসিরনগর বিএনপিতে আমার কোনো গ্রুপ নেই। বরং কিছু পোষা লোকের সঙ্গে দলীয় কর্মকাণ্ড করছেন একরামুজ্জামান সাহেব। এসবের বিরোধীতা করছে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তিনি ঢাকায় বসে কমিটি করে রাজনীতি করতে চায়। মূলত কমিটি নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ থাকতে পারে।
আহত ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. রায়হান দাবি করে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে একরামুজ্জামান সুখন ভাইকে প্রতিহত করতে চেয়েছে বিএনপির কিছু বিপদগামী কর্মী। আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
তবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ হান্নান বলেন, উপজেলা বিএনপির কোনো নেতাকর্মী আ.লীগের সঙ্গে আঁতাত করেনি। আমাদের বিএনপির মধ্যে কোনো ফাটল নেই। উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাসিরের সঙ্গে ছাত্রদলের পূর্বশত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
চলারপথে রিপোর্ট :
পাবলিক লাইব্রেরিতে এসে বই পড়ায় পুরস্কৃত করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় ১২ শিক্ষার্থীকে। এপ্রিল মাসে লাইব্রেরিতে সর্বাধিক উপস্থিত হয়ে বই পড়ায় পুরস্কৃত করা হয় তাদের।
আজ ১৫ মে বুধবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া শিক্ষার্থীদের হাতে এ পুরষ্কার তুলে দেন। পুরস্কার পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বালিকা ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে প্রথম হয়েছেন ছাত্রী সাদিয়া বুশরা, হাফসা বেগম, সুমাইয়া আফরিন, ২য় হয়েছেন ইসরাত জাহান ও সৃষ্টি রায় এবং ৩য় হয়েছে সানিয়া আক্তার ও মহিমা রায়। বালক ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন পৃথিবী দাস সূর্য্য, ২য় স্নেহাল গোপ পান্না, সৌমক রায়, গগনদীপ কুন্ডু, ৩য় হয়েছেন শয়ন গোপ। জানা যায়, আগে উপজেলার লাইব্রেরিতে আগে তেমন পাঠক ছিলো না। জরাজীর্ণ ভবনে নানান রকমের বই থাকলেও গড়ে এক বা দুইজন শিক্ষার্থী এখানে আসতেন। পাঠক ফেরাতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সপ্তাহব্যাপী বই মেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘোষণা দিয়েছিলেন লাইব্রেরিতে সর্বাধিক উপস্থিত ব্যক্তি পাবেন পুরস্কার। সেই ঘোষণায় বেড়েছে নাসিরনগর পাবলিক লাইব্রেরিতে পাঠক উপস্থিতি।
এ উপলক্ষে পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাতলপাড় ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মানিরুল হোসাইন, নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম, নাসিরনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিত কুমার দাস, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শুভ সিদ্দীক, গণমাধ্যমকর্মী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, সুজিত কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ।
এ সময় মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের অনেক উপজেলায় পাবলিক লাইব্রেরি নেই। এটি নাসিরনগরের সৌভাগ্য যে উপজেলায় একটি পাবলিক লাইব্রেরি আছে। আমি উপজেলায় যোগদানের পর লাইব্রেরি ভিজিট করতে গিয়ে দেখতে পাই প্রতিদিন পাঠক সংখ্যা খুবই কম। পরে ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম পাবলিক লাইব্রেরিতে যারা সর্বাধিক দিন উপস্থিত থেকে সর্বোচ্চ বই পড়বেন, তারা আমার পক্ষ থেকে পুরস্কার পাবেন। পাশাপাশি লাইব্রেরিটি সংস্কার করা হচ্ছে। ঘোষণা অনুযায়ী এপ্রিল মাসে সর্বাধিক দিন উপস্থিত থেকে সর্বোচ্চ বইয়ের পাঠকদেরকে আমরা পুরস্কৃত করেছি।
মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর :
আজ ১৪ জানুয়ারি যথাযোগ্য উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগণ তাদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব মকর সংক্রান্তি উদযাপন করেছে ।
এ এলাকার শত বছরের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী পৌষের শেষ রাতে কিশোর ও যুবকরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে খোলা যায়গায় তৈরি করে ছোট ছোট কুড়ে ঘর, সেখানে ভালো খাবার খেয়ে নেচে গেয়ে আনন্দ করে সারা রাত। মাঘের ১ম ভোরে স্নান করে এই ঘর আগুনে পুড়ে এর তাপ দিয়ে আগুন পোহানোর মাধ্যমে সুচনা করে নতুন মাসের। রীতি অনুযায়ী প্রতিটি বাড়িতে সকালে তৈরি করা হয় নানান জাতের পিঠা, এরপর পর শুরু হয় দান/ লোট উৎসব। গ্রামের বিভিন্ন সমাজের লোকজন নিজ নিজ এলাকায় ঢোল, করতাল, হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দল বেধে ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করতে করতে বাড়ি বাড়ি যায় আর সবাই বিভিন্ন ধরনের ফল, বাতাসা তিল্লাই ইত্যাদি সামগ্রী দান/লোট দিলে শিশু, কিশোর ও যুব সমাজের মাঝে ব্যাপক আবেগ-আনন্দের সৃষ্টি হয়। এখানকার কোন কোন এলাকায় হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমান জনগনও ভাগাভাগি করে এই আনন্দ।
হিন্দু ধর্মালম্বীরা বিশ্বাস করে মকর সংক্রান্তিতে স্নান ও দান অত্যন্ত শুভ ও ফলদায়ক। দেশের বিভিন্ন স্থানে অঞ্চল ভেদে পৌষ সংক্রান্তি, পোঙ্গল, উত্তরায়ন ইত্যাদি আলাদা আলাদা নামে উদযাপিত হয় এই অনুষ্ঠানটি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে ২৫ গ্রামে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এসময় রামদা, বল্লম, এককাইট্টা, টেঁটা, ফলা, চল, সড়কিসহ প্রায় তিন হাজার দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে আজ ৬ মে শনিবার ভোর পর্যন্ত পুলিশ উপজেলার নূরপুর, হরিপুর, নরহা, চিতনা, ধরমন্ডল,শংকরাদহ, গোকর্ণ, কুন্ডা, কুন্ডা জেলে পাড়া, শ্রীঘর, চাপরতলা, ভোলাউক, উরিয়াইন, আতুকুড়া, মুকবুলপুর ও পূর্বভাগসহ ২৫টি গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমান এই দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।
এদিকে শনিবার বেলা ১১টায় পুলিশের পক্ষ থেকে কৃষি কাজ ও নিত্যদিনের ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র ছাড়া ঝগড়া-বিবাদে ব্যবহার করা হয় এমন ধরনের দেশীয় অস্ত্র যাতে তৈরী না করেন সে জন্য উপজেলার ৩৮জন কামার (কর্মকার) এবং ১৬জন বাঁশ ব্যবসায়ীর সাথে সভা করেছেন।
সভায় কামারদের বলা হয়েছে, ঝগড়া বিবাদে ব্যবহার করা হয় এমন ধরনের অস্ত্র রামদা, বল্লম, এককাইট্টা, ফলা, যেন তৈরী করা না হয়। এছাড়াও বাঁশ ব্যবসায়িরা যেন টেঁটা তৈরী না করেন সেজন্য তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়।
নাসিরনগর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে নাসিরনগরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশ কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় হাজার খানেক লোক কম বেশী আহত হন। এছাড়া ঈদ-উল ফিতরের দিন উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের খাগালিয়া গ্রামে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে জামাল নামে একজন কৃষক নিহত ও প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়।
এরপরই দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারে নাসিরনগর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। পুলিশকে নিদের্শ দেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশ পেয়ে গত ১০ দিনে পুলিশ উপজেলার ২৫টি গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেন। এসব অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনে তিনটি মামলায় ৮ জনকে আসামি করা হয়।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ হাবিবুল্লাহ সরকারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কামার ও বাঁশ ব্যবসায়ীরা যাতে ঝগড়া ফ্যাসাদে ব্যবহৃত হয় সে ধরনের দেশীয় অস্ত্র তৈরী না করেন সেজন্য তাদেরকে নিয়ে শনিবার সভা করেছি। বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলার ৩৮ জন কাঁমার ও ১৬জন বাঁশ ব্যাবসায়ি অংশ নেন।
ওসি আরো বলেন, দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।