অনলাইন ডেস্ক :
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপির সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। আজ ২৪ মার্চ রবিবার সচিবালয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর অফিসকক্ষে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকালে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা, নির্মাণ খাতে সবুজায়ন, পরিবেশ সুরক্ষাসহ এসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত।
উল্লেখ্য, ৭ ও ৮ মার্চ ফ্রান্সের প্যারিসে ৭০টি দেশের ১৪০০ প্রতিনিধি ‘বিল্ডিং অ্যান্ড গ্লোবাল ফোরাম ২০২৪’-এ মিলিত হন। ফোরামে ফ্রান্স সরকারের আমন্ত্রণে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। ফোরামে কপ-২৮ সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ৯ দফা সিদ্ধান্ত সংবলিত Declaration de Chaillot গৃহীত হয়।
উক্ত ঘোষণার আলোকে ফ্রান্স ও বাংলাদেশ সরকারের পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে সাক্ষাতে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
চলারপথে ডেস্ক :
অন্তত তিন হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় খাতা পুনর্নিরীক্ষণে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩১৫ জন। অকৃতকার্য থেকে ৩৯৯ জন উত্তীর্ণ ও জিপিএ ৫ পেয়েছেন একজন। এ ছাড়া বিভিন্ন গ্রেডে ২ হাজার ৮৩৫ শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে।
খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হয় ১০ মার্চ শুক্রবার। দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ৯টির প্রকাশিত ফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফল এখনও বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনে উত্তরপত্রের চারটি বিষয় দেখা হয়। এগুলো হলো– উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে ওঠানো হয়েছে কিনা ও প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কিনা। কোনো প্রশ্নের উত্তরে পরীক্ষক যে নম্বর দিয়ে থাকেন, সেটি পরিবর্তনের সুযোগ নেই।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, করোনার পর এবার বেশি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। ফলে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন বেশি পড়েছে। এখানে অস্বাভাবিক কিছু দেখছি না।
এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ৩১ হাজার ৫৭৪ শিক্ষার্থী আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে ৯১৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১৩৪ জন। অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৪৫ পরীক্ষার্থী। চট্টগ্রাম বোর্ডে অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭৪ জন। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৫৫ পরীক্ষার্থী।
খাতা পুনর্নিরীক্ষণে সিলেট বোর্ডে অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৯ জন। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১১ পরীক্ষার্থী। রাজশাহী বোর্ডে নতুন করে উত্তীর্ণ ২৪ জন ও জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২৫ পরীক্ষার্থী। ফল পরিবর্তন হয়েছে ৮৬ জনের। দিনাজপুর বোর্ডে ১৬৬ জনের ফল পরিবর্তন ও নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪৯ জন। অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৪ জন।
যশোর বোর্ডে ৯৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২৫ জন। আর অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৩ জন। কুমিল্লা বোর্ডে অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৪ শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩২ জন । তাঁদের মধ্যে এক পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ময়মনসিংহ বোর্ডে অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭ শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১০ পরীক্ষার্থী।
এ ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ফল পরিবর্তন হয়েছে ৪৯ শিক্ষার্থীর। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১০ জন। আর অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৫ শিক্ষার্থী।
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাস ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মোট জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।
চলারপথে রিপোর্ট :
শিক্ষার মান উন্নয়নে ভোলা সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজে শিক্ষার মান উন্নয়ন বিষয়ে এক বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। “শিক্ষাক্ষেত্রে ইমোডিটা’র (ইমোশনাল ডিটাচম্যান্ট) প্রভাব: মনোসামাজিক অনুধ্যান”- শির্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথ ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক ই-লাহী চৌধুরী।
আজ ২০ জুন মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সেমিনারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান।
ভোলা সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ এবং ওই কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ মো. ইসরাফিল।
অনলাইন ডেস্ক :
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সলিড কোকেনের চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। আফ্রিকান দেশে মালাউইর এক নারী ৮ কেজি ৩০০ গ্রামের এই কোকেনের চালানটি বাংলাদেশে নিয়ে আসনে। বুধবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালাউইর নাগরিক নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকোকে (৩৫) কোকেনের এই চালানসহ গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা কোকেনের মূল্য ১০০ কোটি টাকা।
ডিএনসি জানায়, কোকেনের এই চালানটি আফ্রিকার দেশ মালাউই অথবা ইথোপিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল চালানটি পাচার করার জন্য। কারণ এই পরিমাণ কোকেন চাহিদা বাংলাদেশে নেই।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) তানভীর মমতাজ।
তিনি বলেন, কোকেন চোরাচালানের আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের দেশি ও বিদেশি সক্রিয় কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে কোকেনের একটি বৃহৎ চালান আফ্রিকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আফ্রিকান একজন নাগরিকের মাধ্যমে ঢাকায় আসবে এমন তথ্য পাই আমরা।
‘এর পর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারি বাড়ানো হয়। এপিবিএনকে সঙ্গে নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম গঠন করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নেওয়া হয়। ফ্লাইটি থেকে নামা সব বিদেশি যাত্রীকে আমরা ফলো করি।’
তানভীর মমতাজ বলেন, এ সময় দেখা যায়, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো (৩৫) নামে এক বিদেশি নারী বিমানবন্দরের নিচতলায় ভিসা অন এ্যারাইভাল ডেক্সে দীর্ঘক্ষণ ধরে অবস্থান করছেন। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন লাগেজে কোকেন আছে। পরবর্তী সময়ে লাগেজের ভেতরে বিশেষভাবে রাখা ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো আফ্রিকান দেশ মালাউইর নাগরিক। তিনি প্রথমে মালাউই থেকে ইথোপিয়া যান। পরে তিনি ইথোপিয়া থেকে যান দোহাতে। পরে তিনি দোহা থেকে কাতারের এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি তার বাংলাদেশ থেকে আবারও মালাইউতে যাওয়ার কথা ছিল। কোকেনের এই চালানটি বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করার কথা ছিল। পরে বাংলাদেশ থেকে কোকেনের চালানটি অন্য কোনো দেশে চলে যেত। আমাদের ধারণা তাওয়েরা সোকো কোকেনের এই চালানটি মালাইউ থেকে নয়তো ইথোপিয়া থেকে সংগ্রহ করেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সোকো জানান, ২০২৩ সালে তিনি বাংলাদেশে একবার এসেছিলেন। গার্মেন্টস ব্যবসার কথা বলে তিনি ওই বছর বাংলাদেশে আসেন। এবারও তিনি বাংলাদেশের একটি গার্মেন্টসের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসেন। অন এ্যারাইভাল ভিসা নেওয়ার জন্য তিনি তার পরিচয় লুকিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে বাংলাদেশে ঢুকার চেষ্টা করছিলেন। সোকো মালাইউতে পেশায় একজন নার্স। তিনি মূলত কোকেনের এই চালানের বহনকারী। বাংলাদেশে তিনি আরেক জন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই চালান পৌঁছে দিয়ে নিজ দেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল।
বাংলাদেশে সোকো কার কাছে কোকেন হস্তান্তর করতেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি। তবে বাংলাদেশ অবস্থারত কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই কোকেন যাওয়ার কথা ছিল। আমরা একজন বিদেশিকে সন্দেহ করছি। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমরা আশা করি চক্রটিকে ধরতে পারব।
২০২৩ সালে সোকো বাংলাদেশে কোকেনের চালান নিয়ে এসেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তানভীর মমতাজ বলেন, তখনো তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে এসেছিলেন। তিনি আসলে কিসের জন্য এসেছিল সেই বিষয়ে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি।
কোকেনের এই আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোকেনের চালানের সঙ্গে দেশি ও বিদেশি চক্র জড়িত আছে। এই চক্রটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।
কোকেনের চালানটি বাংলাদেশে কোনো দেশে যাওয়ার কথা ছিল, এমন প্রশ্নে মাদকের এই কর্মকর্তা বলেন, এগুলো আমরা আমাদের তদন্ত শেষে বলতে পারব। তবে এটা বলতে চাই- কোকেনের চালানটি বাংলাদেশের জন্য ছিল না। কারণ বাংলাদেশে এই পরিমাণ কোকেন কনজিউম করার মার্কেট নেই।
এই কোকেনের আনুমানিক বাজার দর ১০০ কোটির ওপরে। দেশের ইতিহাসে সলিড কোকেনের এইটিই বড় চালান বলে জানান ডিএনসির এই কর্মকর্তা।
চলারপথে রিপোর্ট :
দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত আব্দুর রশিদ নামে এক দিনমজুরের চিকিৎসা করানোর জন্য নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করেন তার স্ত্রী রোকেয়া। পরে বিষয়টি জানার পর প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিক্রি করে দেওয়া সেই কন্যাশিশুকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বাবা-মায়ের কাছে। এসময় তৈরি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় কন্যাশিশুকে তার বাবা আব্দুর রশিদ ও মা রোকেয়া বেগমের হাতে তুলে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। দিনাজপুর সদর উপজেলার রাজবাড়ী কাটাপাড়া এলাকায় থাকেন তারা।
রাতেই শিশুটিকে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিলে ছুটে আসেন আশপাশের মানুষ। তৈরি হয় আবেগঘন মুহূর্ত। শিশুটিকে কোলে নিয়ে কথা বলতে পারছিলেন না মমতাময়ী মা রোকেয়া বেগম। তার চোখ ছিল আনন্দ অশ্রূতে ছলছল। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন আব্দুর রশিদ। জন্মের পর নিজ কন্যার মুখও দেখা হয়নি তার। সেই কন্যা শিশুকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত সেও।
এসময় দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহাগ চন্দ্র সাহা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. জিন্নাহ আল মামুন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একরামুল হক আবির ও অন্তু খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গুলিবিদ্ধ দিনমজুরের চিকিৎসাসহ পরিবারটিকে পুনর্বাসনের সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানায় প্রশাসন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান বলেন, মায়ের কাছে সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে পেরে ভালো লাগছে। এর চেয়ে মধুর স্মৃতি আর নেই। সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করার। বিশেষ করে তাদের থাকার বিষয়টি নীতিমালার আওতায় এনে তাদের পুনর্বাসন করবো। তাদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত সামাজিক সুরক্ষার বেষ্টনীর আওতায় পরিবারটিকে নিয়ে আসা হবে।
দিনাজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জিন্নাহ আল মামুন বলেন, সংবাদটি জানার পর আমরা সবাই সংযুক্ত হয়ে মায়ের কাছে যেন সন্তান ফিরে আসে সেই পদক্ষেপ নেয়। সেখানে হৃদয়বিদারক ঘটনা থেকে আনন্দদায়ক ঘটনায় রূপান্তরিত হয়। এতে সবাই খুশি, এটা সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল।
দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, বাবা-মায়ের ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে এই শিশুটিকে তাদের আত্মীয়ের কাছে তুলে দিয়েছিলেন মর্মে জানতে পারি। ছাত্রসমাজ, পুলিশ বিভাগ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের চেষ্টায় আবারও শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। ওই দম্পতিও অনেক আনন্দিত। এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল, সেই দায়িত্বটুকুই পালন করেছি। শিশুটিকে বিক্রির টাকা ফেরতের ব্যাপারে তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য যে অংশটুকু দিয়েছিল সেটি ফেরত দেওয়া হয়েছে।
আব্দুর রশিদ বলেন, আগে ভালো ছিলাম না, এখন অনেক ভালো লাগছে। জন্ম হওয়ার পর আজকে প্রথম শিশুটিকে দেখতে পাচ্ছি। যারা শিশুটিকে ফিরিয়ে এনে দিল তাদের ধন্যবাদ। সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগছে, ওর মা, বাবা হয়ে ওর জন্য কিছু করতে পারিনি। কারণ আমি নিজেই এক বিপদের মধ্যে। শিশুটি আমাদের কোলে এসেছে, যতই কষ্ট হোক তাকে মানুষ করবো।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ৪ আগস্ট দুপুরে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আব্দুর রশিদ যান দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। স্ত্রীকে রেখে নিচে নামলে চলমান সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তার শরীরে গুলি লাগে। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় চলে যান। পরে পেটের গুলিবিদ্ধ স্থানে পচন ধরলে পেশায় দিনমজুর রশিদ ৮ আগস্ট দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতেই হয় অস্ত্রোপচার, এরপর আইসিইউতে। পরদিন বাড়িতে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম।
এদিকে হাসপাতালে রশিদের চিকিৎসার সামগ্রিক খরচ আসে ৩৬ হাজার টাকা। এই অর্থ তার পরিবারের জন্য যে বোঝা! মাথা গোঁজার ঠাঁইও নেই। থাকেন অন্যের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। উপায় না পেয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ পরিশোধ করতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুর রশিদের স্ত্রী বাধ্য হয়ে কুড়িগ্রামে তাদের এক আত্মীয়ের কাছে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনদিন বয়সী কন্যা সন্তানকে তুলে দেন।
চলারপথে ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্পে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তাকে পিডি হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে কোনো দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন হয় না। তিনি বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে যাতে শুধু দালান তৈরি না হয়। সেদিকে নজর রাখতে হবে। কেননা বিল্ডিং তৈরির পর দেখা যায় লোকবল নেই, যন্ত্রপাতি নেই ফলে বিল্ডিং কোনো কাজে লাগে না। ভবিষ্যতে এসব কাজ করা যাবে না।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গ্রাম আদালত সক্রিয়করণসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে । এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৩০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ১ হাজার ৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
আজ ২১ মার্চ মঙ্গলবার অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনার কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
এর আগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার, আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ইমদাদউল্লাহ মিয়ান এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈঠকে দেশীয় মাছ চাষে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুরের মতো মাছ চাষ বাদ দিয়ে দেশীয় পুঁটি, খলিসা, টেংরা ও চিংড়ি চাষ বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে চিংড়ি ঘেরে যদি বালু পড়ে যায় তাহলে বালু অপসারণ বা অন্য কোনো ফসল চাষ করা যায় কিনা- সে বিষয়ে চাষীদের পরামর্শ দিতে হবে। পাশাপাশি জমি পতিত ফেলে না রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।
‘এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি গাড়ি না কিনে প্রগতির গাড়ি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, প্রগতির জিপ ব্যবহার করলে দেশীয় কোম্পানি লাভবান হবে। এখন থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণ না বলে বলতে হবে মানবসম্পদ উন্নয়ন। নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার বাদ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ডাল চাষ বাড়ানোরও নির্দেশ দিয়েছেন।’
ব্রিফিং এ পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারিতে একটু বেড়েছে। মার্চেও বাড়বে। তবে তারপরে কমে যাবে। রোজার আগে অনেকে তেল, ডাল, পেঁয়াজ ও চিনি মজুত করে রাখে। যার কারণে দাম বাড়ে। এর প্রভাব পরে মূল্যস্ফীতিতে।
তিনি বলেন, কার্তিক ও চৈত্র মাসে আমাদের দেশে খাবারের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে একটু সংকট থাকে। তবে বোরো ধান যদি ভালোভাবে ঘরে তোলা যায় তাহলে সমস্যা থাকবে না। এ ছাড়া রেমিট্যান্স এবং রিজার্ভ ভালো থাকলে আমাদের আর কোনো চিন্তা নেই। এ সবই এখন ভালোর পথে।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্প গুলো হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প। এ ছাড়া ঢাকাস্থ আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ১১২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের সমীক্ষা, দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্প, ঢাকা কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন, প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন এবং গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প।