চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ৬ এপ্রিল শনিবার পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যা থেকে সারাদেশে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রজনী পালন করবেন।
লাইলাতুল কদর একটি সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে।’ ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ ‘এ রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় এ রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত’। (সূরা কদর)।
আভিধানিকভাবে লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানের রাত। তাফসিরের কিতাবগুলোতে উল্লেখ রয়েছে, একদিন নবী করিম (সা.) এ ভেবে অস্থির হচ্ছিলেন যে, আগের নবীর উম্মতেরা দীর্ঘ হায়াত পেত। ফলে তারা অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ পেত। কিন্তু শেষ নবির উম্মতের হায়াত খুবই সীমিত। অতএব তাদের পক্ষে উচ্চমর্যাদা লাভের সুযোগ কম। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এ সূরা নিয়ে উপস্থিত হন হজরত জিবরাইল (আ.)। ফলে শান্ত হন মহানবি (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা।
আল্লাহতায়ালা এ রাতেই কুরআন মাজিদ নাজিল করেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তেমনি এ রাতটির মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি বলেও ঘোষণা করেছেন; কিন্তু রাত কোনটি তা বলে দেননি। হাদিস শরিফেও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোনটি কদরের রাত। নিঃসন্দেহে এতে অনেক রহস্য ও তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন। ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে রাতটি কাটাতে পারলে এ রাতের প্রকৃত সুফল পাওয়া যায়।
হয়তো আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল (সা.) চাননি মুসলমানরা একটি রাতের ভরসায় বসে থেকে সারা বছর বা সারা মাস অবহেলায় কাটিয়ে দিক। এজন্য এটিকে রহস্যময় করে রাখা হয়েছে। তা ছাড়া পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমেই মূল্যবান কিছু অর্জন করতে হয়। যে রাতের মূল্য হাজার মাসের চেয়ে বেশি, তা যদি সহজে পাওয়া যেত, তা হলে মানুষ হয়তো এটিকে বেশি গুরুত্ব দিত না। তাই তা অনির্দিষ্ট করে রেখে মানুষকে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে।
বেশিরভাগ বর্ণনা অনুসারে রমজানের শেষ দশকেই তা লুক্কায়িত রয়েছে। আবার কারও কারও মতে, এ রাতের তারিখ পরিবর্তনশীল। কোনো বছর একুশ, কোনো বছর তেইশ, কোনো বছর পঁচিশ, কোনো বছর সাতাইশ, আবার কোনো বছর ঊনত্রিশ তারিখের রাত লাইলাতুল কদর হয়।
কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে অনেক মনীষী রমজানের ২৭ তারিখের রাতকে লাইলাতুল কদর হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। সাহাবী হজরত উবাই ইবনে কাব (রা) জোর দিয়ে বলতেন, রমজানের সাতাশতম রাতই কদরের রাত। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন ২৭ রমজানের রাতটিই কদরের রাত? জবাবে তিনি বলেন, এ রাতের যেসব আলামত মহানবী (সা.) আমাদের বলেছেন, আমরা সেগুলো সাতাশ তারিখে পেয়েছি।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন, কদরের রাতের যে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য, তার মূল উপাদান কুরআন মজিদ। শেষ নবীর (সা.) উম্মতের জন্য জীবনব্যবস্থার চূড়ান্ত নির্দেশনা হিসাবে কুরআন মাজিদ নাজিলের সঙ্গে রাতটি সম্পর্কিত হওয়ায় এ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত হয়েছে। অতএব এ রাতের সুফল পুরো মাত্রায় পাওয়ার জন্য কুরআন মাজিদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করাই আসল উপায়। কুরআন পাঠ ও অধ্যয়ন এবং কুরআনি বিধান ও নির্দেশনা অনুসরণেই নিহিত রয়েছে মানুষের প্রকৃত সাফল্য। লাইলাতুল কদরে সালাত, তেলাওয়াত ও জিকির তাসবিহের সঙ্গে যেমন অতীত জীবনের পাপরাশি মোচনের জন্য মহান প্রভুর কাছে আকুল আবেদন জানাতে হবে, তেমনি তার তাওফিক প্রার্থনা করতে হবে কুরআনকে জীবনের দিশারি হিসাবে মেনে চলার।
মহান আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।
পবিত্র রমজান মাসের লাইলাতুল কদরে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। মুসলমানরা নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিলের মধ্যদিয়ে শবে কদরের রজনী কাটাবেন।
পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। শবে কদর উপলক্ষে আগামীকাল ৫ এপ্রিল রবিবার সরকারি ছুটি থাকবে।
অনলাইন ডেস্ক :
দেশের আকাশে ১৪৪৫ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় আগামীকাল ১২ ফেব্রুয়ারি সোমবার থেকে শাবান মাস গণনা শুরু হবে। সেই হিসেবে ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে শবে বরাত পালিত হবে।
আজ ১১ ফেব্রুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সভায় সভাপতিত্ব করেন।
শবে বরাতের পরদিন বাংলাদেশে নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি পালন করা হয়। তাই এবার ২৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) এ ছুটি পড়ছে।
শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরি শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে পালিত মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাতকে ভাগ্যরজনী বলা হয়ে থাকে। আল্লাহ তার বান্দাদের বিশেষভাবে এই রাতে ক্ষমা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানরা শবে বরাতে মহান আল্লাহ ও তার প্রিয় হাবিবের সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য নফল রোজা, দান সদকা ও এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন।
মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ লাভের আশায় বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকিরে মগ্ন থাকেন। অনেকে রোজা রাখেন, দান-খয়রাত করেন। অতীতের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
গাজীপুরের শিরিরচালা এলাকা থেকে অপহরণের ৬ দিন পর অপহৃত তিন মাস বয়সী শিশুকে উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশ। এসময় তিন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয়। আজ ৮ এপ্রিল শনিবার তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা-কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার বাউশি এলাকার মজলুর স্ত্রী আলপনা উরফে রুবিনা (২৫), রুবিনার বড়বোন একই জেলার দুর্গাপুর থানার হাবিআলী এলাকার আবুল কাশেমের স্ত্রী ফাতেমা (৩৫) ও ফাতেমার ছেলে রফিকুল ইসলাম (১৯)।
দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম জানান, গাজীপুরের জয়দেবপুর থানাধীন শিরিরচালা এলাকায় মো: ফিরোজ হোসেন তার স্ত্রী ও তিন মাসের শিশু ফাতেমা এবং শাশুড়িকে নিয়ে ওই এলাকায় জনৈক মাজহারুল ইসলামের বাড়িতে দুই মাস ধরে ভাড়া থাকেন। ফিরোজ হোসেন রাজমিস্ত্রির কাজ ও তার স্ত্রী একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর থানার বিশ্বনাথপুর গ্রামে। গত ২ এপ্রিল প্রতিদিনের মতো মেয়েকে শাশুড়ির কাছে রেখে স্বামী ও স্ত্রী কর্মস্থলে গেলে একই বাড়ির ভাড়াটিয়া আলপনা (রুবি) সুযোগ বুঝে শিশুটিকে অপহরন করে নিয়ে যায়। পরে শিশুটির পিতা (ফিরোজ হোসেন) বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করলে এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত ৭ এপ্রিল গভীর রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন মুলাইদ পশ্চিম পাড়া এলাকার সুবেদ আলীর ভাড়া বাসা থেকে কন্যা শিশুটিকে উদ্ধার ও বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরনকারীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নন্দিতা মালাকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রবিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: মিরাজুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ মো: দেলওয়ার হোসেন, জয়দেপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাতাব উদ্দিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি বেসরকারি অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২০ জন।
নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন-সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা ফরিদ (৩৫), সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার শামসুল আলম (৫০), নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার ছোট মনগড়া গ্রামের মিকি রেঙি লখরেটের ছেলে রতন লখরেট (৪৫) এবং নোয়াখালীর সুধারাম থানার অলিপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আবদুল কাদের (৫০)। বাকিদের পরিচয় শনাক্তে কাজ চলছে।
দুর্ঘটনার কারণও তাৎক্ষণিকভাবে সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। ৪ মার্চ শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার কদমরসুল ইউনিয়নের ছোট কুমিরা এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে। একটি সিলিন্ডারে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট রাত সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহতদের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহতরা হচ্ছেন-নূর হোসেন (৩০), মো. আরাফাত (২২), মোতালেব (৫২), ফেনসি (৩০), জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), ফোরকান (৩৫), শাহরিয়ার (২৬) এবং জাহিদ হাসান (২৬)। আহত ১৮ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের অনেকের হাত-পা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আহতদেরকে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আহত এবং নিহতদের নিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসতে শুরু করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। খবর পেয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে উৎসুক মানুষের ভিড় যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি উপস্থিত হয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। এ সময় আহত এবং নিহত স্বজনদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ক্ষত-বিক্ষত শরীরের লাশগুলো আনা হয় প্যাকেটে ভর্তি করে। এছাড়া গুরুতর আহতদের ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে। যাদের মধ্যে কারও চোখ, কারও মাথায়, কেউ আবার হাত-পায়ে গুরুতর আহত হয়।
এদিকে এই ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এবিএম ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে এই কমিটি গঠন করে দেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্লান্টটি অবস্থিত। এই প্লান্টে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে তা বিক্রি করা হয়। সেখানে অর্ধশত শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। শনিবার বিকাল সাড়ে চারটায় গ্যাস ভরার সময় এই প্লান্টে হঠাৎ বিকট শব্দে একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে লেগে যায় আগুন। কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা বিস্ফোরণের সময় প্লান্টের ভেতরে ছিলেন। বিস্ফোরণে কারও কারও দেহের বিভিন্ন অংশ উড়ে যায়।
এ সময় শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন থেকে বাঁচতে তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ, বায়েজিদ ও সীতাকুণ্ড থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। হাতহতদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতাল ও আশপাশের হাসপাতালে প্রেরণ করে উদ্ধারকর্মীরা।
চমেক হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী পরিবেশ: শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চমেক হাসপাতালে অবস্থান করে দেখা যায় নিহতদের বীভৎস চিত্র। আর আহতদের দুর্বিষহ অবস্থা। স্বজনদের কেউ কেউ পাগলের মতো ছুটে প্রবেশ করতে দেখা যায় জরুরি বিভাগে। আবার কেউ স্বজনের খোঁজ নিতে ছুটতে দেখা যায় এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে।
এরই মধ্যে সাইরেন বাজিয়ে আহতদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স এলে সবাইকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনেকেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে না গিয়ে সরাসরি চলে আসেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেখা যায়, একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে চল্লিশোর্ধ এক যুবককে হাসপাতালে আনা হয়। ওই যুবকের মাথার খুলির একাংশ বিচ্ছিন্ন। তার হাতের কব্জি ছিল না। পেট থেকে বেরিয়ে আসে নাড়ি-ভুঁড়ি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন পরিদর্শনে আসেন।
রাত ৯টায় চমেক হাসপাতালে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আহত ১৮ জনকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ১০ জন, ইএনটি ওয়ার্ডে ২ জন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন, অবজারবেশনে ১ জন চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন।’
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্বজনের খোঁজ নিতে আসা মো. আরাফাত বলেন, ‘বিস্ফোরণের খবর পেয়ে আমার বাবার খোঁজে হাসপাতালে এসেছি। বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। তিনি ওই প্লান্টে কর্মরত ছিলেন।’
খবর পেয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান পরিদর্শনে এসে আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহতদের জন্য আইসিইউ প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজন হলে আমরা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ কাজে লাগাব।’
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি: সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হোসেনকে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই সময় তিনি ৫ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেন। ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে ঘটনার কারণ উদঘাটন করে রিপোর্ট দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়। চমেক হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য একটি বুথ খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
২০২২ সালের ৪ জুন রাতে সীমা অক্সিজেন প্লান্ট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় ২০০ লোক। ওই ঘটনার পর একই এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্লান্টের দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা এই শিল্প এলাকার মানুষকে আবারও ভাবিয়ে তুলেছে।
চলারপথে রিপোট
নিজের জীবন দিয়ে বোনকে বাঁচালেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাবিহা আফিফা সৃজনী। বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় আহত সৃজনী আজ ৩ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মো. রনি হোসাইন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতাল থেকে আমাদের সৃজনীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়। আমরা এখন সেখানে যাচ্ছি।
সৃজনী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (৫০তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনি রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
সৃজনীর সহপাঠীরা জানান, শনিবার বিকালে সৃজনী তার ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে কুড়িল এলাকার ৩০০ ফিটে গিয়েছিলেন। সেখানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নামার পর লক্ষ্য করেন পেছন থেকে দ্রুতগামী একটি ট্রাক আসছে। ছোট বোনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেও নিজে সরে যেতে পারেননি। ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে সৃজনী মাথায় মারাত্মক আঘাত পান এবং তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান।
চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ব্রি) কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের মাসব্যাপী “আধুনিক ধান চাষাবাদ কৌশল এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা” শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপ্ত হয়েছে আজ ১২ জুন সোমবার।
এ উপলক্ষে গাজীপুরে ব্রি সদর দপ্তরের প্রশিক্ষণ ভবনের কনফারেন্স রুমে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রশিক্ষণ বিভাগ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর প্রধান অতিথি হিসেবে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রশিক্ষণ বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান ড. মো. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রির উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা সমন্বয়কারী ড. মুন্নুজান খানম।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষিতত্ত বিভাগের সিএসও এবং প্রধান ড. মো. শহিদুল ইসলাম, ফলিত গবেষণা বিভাগের সিএসও এবং প্রধান ড. মো. হুমায়ুন কবির, খামার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিএসও এবং প্রধান সিরাজুল ইসলাম। প্রশিক্ষণার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন জাকিব হোসেন, নুরনাহার, মো. মনিরুজ্জামান।
প্রশিক্ষণে প্রথম স্থান অধিকার করেন নারায়নগঞ্জের বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা মুহাইমিনুল ইসলাম, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন মানিকগঞ্জের কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষক শামসুন্নাহার এবং তৃতীয় হন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রতন মিয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সিনিয়র লিয়াজুঁ অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল মোমিন। অনুষ্ঠানে ব্রি’র সকল বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কৃষি বিজ্ঞানীদের হাত ধরেই বাস্তবায়ন হবে। আপনাদের হাত ধরেই দেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। সুতরাং, এই প্রশিক্ষণটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক ধান উৎপাদন প্রযুক্তি সম্পর্কে নতুন অনেক জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পেয়েছেন। প্রশিক্ষণে ৩০ জন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে ১৪ মে।