নাসিরনগরে ছাত্রীকে উত্যক্তের সাক্ষী সাক্ষী হওয়ায় যুবক পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

নাসিরনগর, 22 April 2024, 341 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে ছাত্রীদের উত্যক্তের ঘটনায় সাক্ষী হওয়ায় এক যুবক পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল ২১ এপ্রিল রবিবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়।

নিহত হুসাইন মুন্না উপজেলার রতনপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক খুরশিদ আলমের ছেলে। গত বুধবার তাকে মারধর করে স্থানীয় ৫-৬ জন বখাটে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলো– একই এলাকার মো. আল-আমিন, সাব্বির মিয়া ও মাসুম মিয়া।

স্থানীয়রা জানান, চাতলপাড় ইউনিয়নের ইকরা দারুল কুরআন বালিকা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়ার সময় স্থানীয় কিছু যুবক তাদের উত্যক্ত করত। প্রতিবাদ করায় মাদ্রাসার শিক্ষকদের হুমকি-ধমকিও দিয়েছে তারা। মাসখানেক আগে উত্যক্ত করার ঘটনায় অভিভাবক সুমন মিয়া সংশ্লিষ্ট পুলিশ ফাঁড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। মুন্না ছিলেন ওই অভিযোগের দ্বিতীয় সাক্ষী।

ওই ঘটনার পর বুধবার মুন্নাকে স্থানীয় চকবাজারে মারধর করে ৫-৬ জন। এতে সে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়। পরে প্রথমে তাকে কিশোরগঞ্জের ভাগলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

ওই অভিযোগ তদন্ত করা পুলিশ কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেন অবশ্য জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। তার দাবি, তদন্তে উত্যক্তের ঘটনার সত্যতা পাননি। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করা হয়। মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ায় মুন্নাকে স্থানীয় আল-আমিন, মাসুম, সাব্বিরসহ কয়েক যুবক পিটিয়ে আহত করে বলে শুনেছেন।

তবে মুন্নার পরিবারের দাবি, হত্যার উদ্দেশেই মুন্নাকে মারধর করা হয়। পুলিশ অভিযুক্তদের পরিবারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তদন্ত ভিন্নখাতে নিয়েছে।

মাদ্রাসাটির শিক্ষক আরিফ বিল্লাহ উত্যক্তের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ মাদ্রাসার ছাত্রীদের প্রায় সময়ই বখাটেরা উত্যক্ত করে। এর আগে আল-আমিন ও মাসুম উত্যক্ত করলে তাদের পরিবার মুচলেখা দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। ফের উত্যক্ত করলে অভিভাবক সুমন লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি প্রথম ও মুন্না দ্বিতীয় সাক্ষী হন। সাক্ষী হওয়ায় মুন্নাকে হত্যার উদ্দেশে মারধর করা হয়।

অভিযোগকারী সুমন মিয়া বলেন, আমি লিখিত অভিযাগ দিলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আল-আমিনের বড় ভাই শফিক মিয়া জানান, উত্যক্ত করার বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে বুধবার মুন্নার সঙ্গে তার ভাইয়ের কথাকাটাকাটি হয়েছিল বলে শুনেছেন।

নাসিরনগর থানা ওসি সোহাগ রানা বলেন, ইউএনও অফিসে দেওয়া লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে থানা তদন্ত করে। তবে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে অভিযুক্তরা মুন্নাকে মারধর করতে পারে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

Leave a Reply

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের ৩৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে Read more

ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই পাচারকারী গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ১হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গোপাল রায় Read more

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে চুরি করতে গিয়ে আটক নাসিরনগরের ২ জনসহ ৩ নারী

জাতীয়, নাসিরনগর, 18 January 2023, 2176 Views,
স্টাফ রিপোর্টার :
শাঁখা-সিঁদুর পরে হিন্দু নারী সেজে পূজামণ্ডপে গিয়ে অভিনব সব কৌশলে সোনার চেইন ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনতাইকারী চক্রের ৩ মুসলিম নারী সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন আন্দিকোট ইউনিয়নের সিদ্বেস্বরী মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আটককৃত নারী ছিনতাইকারীরা হলো, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছিরনগর থানার ধরমন্ডল গ্রামের মোঃ বাসির মিয়ার স্ত্রী কাজলী (৩৩), একই গ্রামের ছোট্টু মিয়ার স্ত্রী বানু বেগম (৩৯) ও হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার গনিপুর গ্রামের গাজী মিয়ার স্ত্রী সোমা আক্তার (৩০)।
বাঙ্গরা বাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আন্দিকোট সিদ্বেস্বরী মন্দিরে পূজা চলাকালীন সময়ের ৫ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী দাবি করে তাদের গলায় থাকা সোনার চেইন চুরি হয়ে গেছে। তখন সেখানে দায়িত্বে থাকা কমিটির লোকজন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৩ জন নারীকে সন্দেহ হলে তারা থানায় খবর দেয়। সেখানে গিয়ে তাদেরকে আটক করে প্রাথমিক সিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা সবাই মুসলিম। অভিনব কায়দায় তারা মুসলিম হয়েও হাতে শাঁখা ও মাথায় সিঁদুর দিয়ে পূজামন্ডপে প্রবেশ করে।
অফিসার ইনচার্জ আরও বলেন- পরে নারী পুলিশ সদস্য দিয়ে তাদের তল্লাশি করে একটি ছেড়া সোনার চেইন ও কিছু নগদ টাকা পাওয়া যায়। একপর্যায় তারা চুরির বিষয়টি স্বীকার করে বলে পূজামণ্ডপে তাদেরকে ছাড়াও আরো দুই গ্রুপে ৭-৮ জন সদস্য সেখানে এসেছিলো বাকি সোনার চেইন তাদের কাছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামীদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

নাসিরনগরে ঐতিহ্যবাহি শুঁটকি মেলা অনুষ্ঠিত

নাসিরনগর, 17 April 2023, 1173 Views,

চলারপথে রিপোর্ট  :
নাসিরনগরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাংলা পঞ্জিকার নিয়ম অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ ঐতিহ্যবাহি শুঁটকি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মেলার বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে “বিনিময় প্রথা”। অর্থাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য।

উপজেলা সদরের কুলিকুন্ডা গ্রামের উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয় মাঠে বসে এই মেলা। মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা শুঁটকি নিয়ে আসেন মেলায়। জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশ জেলা থেকে ভোজন রসিকরা আসেন এই মেলায় শুঁটকি কিনতে। পছন্দের শুঁটকি কিনে ক্রেতারা তৃপ্ত হন। শুঁটকি মেলায় প্রায় দুই শতাধিক জাতের শুঁটকির পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। এসব শুঁটকির মধ্যে ছিলো বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুড়ি, লইট্টা, পুটি ও টেংরাসহ নানা জাতের দেশীয় মাছের শুঁটকি। এছাড়াও মেলায় ভারত থেকে আমদানি করা বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকিও উঠে।

মেলায় জেলার বিভিন্ন এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে শুঁটকি নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। মেলায় সামুদ্রিক অনেক বিরল জাতের মাছের শুঁটকি ছাড়াও ইলিশ ও কার্প জাতীয় মাছের ডিমের শুটকি উঠে।

স্থানীয়রা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাংলা পঞ্জিকার নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামে এই শুঁটকি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তারা বলেন, প্রায় দুইশ বছরেরও অধিক সময় ধরে পহেলা বৈশাখে এখানে শুটকি মেলা বসে। প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের শুঁটকি নিয়ে আসেন মেলায়। এই শুঁটকি মেলার বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে “বিনিময় প্রথা”। অর্থাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। ভোরে মেলা বসার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত বিনিময়ের মাধ্যমে চলে বেচা কেনা। এ কারণেই ধারণা করা হয় এই মেলার ইতিহাস অনেক পুরনো।

মেলায় শুঁটকি কিনতে আসা উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রুবেল মিয়া ও উপজেলার নুরপুর গ্রামের মতি মিয়া বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন বাপ-দাদার সাথে এই মেলা এসেছি। এবারো শুঁটকি কেনার জন্য মেলায় আসছি।

উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান সর্দার বলেন, এখানে শত বছরের বেশী সময় ধরে নিয়মিত ভাবে এই মেলা বসছে। এই মেলায় এখনো বিনিময় প্রথা চালু থাকায় আমরা ধারণা করছি, এ মেলা আদিম কালের। এই মেলা আমাদের কুলিকুন্ডা গ্রামের ঐতিহ্য বহন করে।

মেলায় শুঁটকি কিনতে আসা উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামের মহব্বত আলী বলেন, প্রাচীনকালে যখন কাগজের মুদ্রা প্রচলন হয়নি তখন থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের বিনিময়ে এখান থেকে শুঁটকি কিনতেন। কালের বির্বতনে এই মেলার জৌলুস অনেকটা কমেছে। হ্রাস পেয়েছে বিনিময় প্রথাও। তিনি বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে এই মেলায় শুঁটকি কেনার জন্যে এসেছি। ছোট বেলায় বাবার সাথে এই মেলায় আসতাম।

মেলায় শুঁটকি নিয়ে আসা ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে হ্রাস পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী পণ্য বিনিময় প্রথা। এখন নামে মাত্র এই প্রথা চালু আছে। তিনি বলেন, আমি প্রতি বছরই শুঁটকি নিয়ে মেলায় আসি।

স্থানীয়রা জানান, একদিনের মেলায় লাখ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা শুঁটকি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা নিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে যায়। এছাড়াও মেলায় গৃহস্থালী পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা বিক্রি হয়। তবে এবার শুঁটকির আমদানি বেশী হলেও দাম ছিল চড়া।

মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওহাব আলী জানান, বিনিময় প্রথার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্যে আজো অল্প পরিসরে সূর্যোদয়ের সাথে-সাথে কিছুক্ষনের জন্যে পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে শুঁটকি বেচা-কেনা শুরু হয়। পরে চলে টাকা দিয়ে বেচা-কেনা।

তিনি জানান, “বাংলা পুঞ্জিকা অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ সহ আশপাশের জমিতে বসে ঐহিত্যবাহী শুটকি মেলা। তিনি বলেন, পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি, মোগল আমল থেকেই এখানে শুঁটকি মেলা হয়ে আসছে।

ইজারা নিয়ে মুখোমুখি দুই উপজেলার জেলে

নাসিরনগর, সরাইল, 13 May 2023, 1969 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বিল শাপলা জলমহাল ইজারা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলার জেলেরা। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। নাসিরনগরের জেলেরা বলছেন, বংশ পরম্পরায় ওই বিলে মাছ ধরে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করছেন। কয়েক দশক ধরে সরকারের কাছ থেকে ইজারাও নেন। সম্প্রতি এক রাজনৈতিক নেতার তদবিরে সরাইলের জেলেরা বিলটি ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁরা নাসিরনগরের জেলেদের মাছ ধরতে বাধা ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। অপরদিকে সরাইলের জেলেদের ভাষ্য, তাঁরা মিলেমিশে বিলে মাছ ধরতে চান।

৩৯৬ দশমিক ৬৫ একরের বিল শাপলা জলমহালটির অবস্থান নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামের পূর্ব পাশে। কাছেই তিতাস নদী। জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতিতে নিবন্ধিত জেলে ৫৩৮ জন। এ ছাড়াও অনিবন্ধিত আরও প্রায় ৭০০ জেলে এখানে মাছ ধরেন। সব মিলিয়ে ১২০০ জেলে পরিবারের সদস্য প্রায় ১০ হাজার। তাঁরা সবাই বিলের ওপর নির্ভরশীল। বিলের দক্ষিণে সরাইল উপজেলার শাহাজাদাপুর গ্রাম। শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নিবন্ধিত সদস্য ৪৯।

জেঠাগ্রামের প্রবীণ জেলে মিলন দাস মঙ্গলবার বলেন, ‘আমার বাপের জন্ম এই বিলের পাড়ে। আমার জন্মও। ছেলেমেয়েও জন্ম নিছে এ বিলের পাড়েই। আমরার আগের পুরুষ বিলের পাড় থাইক্যা মাছ ধরত।’ নিজেদের কোনো জমিজমা না থাকায় বিলের মাছ আর পরের জমিতে শ্রম বিক্রি করেই জীবন পার করছেন মিলন। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা বিল না পাই, মাছ ধরতাম না পারি, তইলে বাল-বাচ্চা (ছেলেমেয়ে) লইয়া না খাইয়া মরণ লাগব।’

তাঁর মতো এমন হাজারো জেলের আশঙ্কা–এবার না বিলের ইজারা সরাইলের শাহজাদাপুরের জেলেরা নিয়ে যান! এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি জলমহালটি ছয় বছরের (১৪৩০-১৪৩৫ বঙ্গাব্দ) উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইজারা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ জন্য আবেদন করে শাহাজাদাপুর গ্রামের তিতাস মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে–এমন আশঙ্কায় জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি। তাই তিতাস সমিতির আবেদন বাতিলে সিদ্ধান্ত হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বরের সই করা চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়। পরে জলমহালটি তিন বছর মেয়াদে নতুন করে ইজারা দিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন। এতে আগ্রহী হয়ে তদবির শুরু করে শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি।

নাসিরনগরের জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির নেতারা জানান, ১৯৭৭ সালে সমিতি গঠনের পর থেকে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে তাঁরাই বিলটি ইজারা নিয়ে আসছেন। সম্প্রতি শাহাজাদাপুরের জেলেরা তা ইজারা নিতে চাইছেন। নাসিরনগর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ এর ৪(চ) অনুযায়ী স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবী সংগঠন, নিকটবর্তী বা তীরবর্তী মৎস্যজীবীদের জলমহাল বন্দোবস্ত প্রদান করতে হবে। এ হিসেবে জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির এ অধিকার বেশি।

জেঠাগ্রামের জেলে হিরামন দাস বলেন, ‘বিলে মাছ ধরনের লাইগ্যা নতুন জাল, নৌকা কিনা হয়ছে এনজিও থেইক্যা (ঋণ নিয়ে)। এই গেরামের কয়েক হাজার মানুষ কোটি টাকা ঋণ নিছে।’ এভাবে ঋণ নিয়ে মাছ ধরে তা শোধ করেন জানিয়ে হিরামন বলেন, ‘আমরার এলাকার বিল যদি সরাইলের মানুষরে দিয়া দেয় তাইলে ঋণ শোধ করতে বসতঘরটাও বেইচ্যা দিয়ন লাগব।’

জেলে নয়ন দাসের ভাষ্য, ‘আমরার লোকজন বিলে গেলেই সরাইলের লোকজন মাইরধর করে। এহন হুনতাছি সরাইলের লোকেরা নাকি বিল লইয়া যাইব। এই বিলের লগে আমরার রক্ত মিশ্যা আছে। জান থাকতে বিল কেউরে নিতে দিমু না।’

জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ইজারা বিষয়ে শুনানির জন্য গত ৭ মে জেলা প্রশাসন চিঠি দিয়েছে। সরাইলের জেলেদের সঙ্গে মিলেমিশে মাছ ধরারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের অভিযোগ, জলমহালের ইজারা সরাইলের জেলেদের পাইয়ে দিতে তদবির করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।

সরাইলের শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাস বলেন, ‘কাগজেপত্রে বিলের মৌজা নাসিরনগরের। মিলেমিশেই বিলের মাছ ধরতে চাই। আমরাও জেলে পরিবার। কিন্তু ওই এলাকার জেলেরা তাতে রাজি হচ্ছেন না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কারও পক্ষে কথা বলিনি। বিলটি নাসিরনগরের, এটা সবাই জানে। সরাইল ও নাসিরনগরের প্রকৃত জেলেরা যেন মিলেমিশে মাছ ধরতে পারে–সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলেছি।’ বিভিন্ন সময়ের কাগজপত্র ঘেঁটে বিলটি দীর্ঘদিন ধরে নাসিরনগরের জেলেরাই ইজারা নিয়ে মাছ ধরছেন বলে জানান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার। ইউএনও ফখরুল ইসলাম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী নিকটবর্তী ও তীরবর্তী হিসেবে নাসিরনগর উপজেলার জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামই আসে।

বিল ইজারা দিতে রাজনৈতিক চাপের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী যাঁরাই উপযুক্ত, তাঁরাই এ বিল (ইজারা) পাবেন।

নাসিরনগরে বর্ষবরণ উদযাপন

নাসিরনগর, 15 April 2024, 344 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ উদযাপন করা হয়েছে।

১৪ এপ্রিল রবিবার সকালে বৈশাখী শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বাঙালির নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুর হয়। নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রায় উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং জনপ্রতিনিধি গণ অংশ নেন।

শোভাযাত্রা শেষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীদের পরিবেশনায় পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১ (নাসিরনগর) সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান সুখন।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা বর্ষবরণ উপলক্ষে ঐকতান সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র আয়োজিত ভর্তা উৎসবে অংশ নেন।

নাসিরনগরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু

নাসিরনগর, 8 October 2024, 72 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে শাহিন মিয়া (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

আজ ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ৮ টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের লালুয়াটুক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা জানান, সকালে লালুয়াটুক গ্রামের মোঃ সাজু মিয়ার ছেলে মোঃ শাহিন মিয়া বাড়ির পাশে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরানুল হক ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।