অনলাইন ডেস্ক :
বিরোধী দলের নেতাদের মামলায় বিচার দ্রুত করতে নতুন ট্রাইব্যুনাল করা হচ্ছে বলে বিএনপি মহাসচিব যে অভিযোগ করেছেন, তা অস্বীকার করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আইনমন্ত্রী আজ ১২ মে রবিবার গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠনের কোনো চিন্তা বা পরিকল্পনা সরকারের নেই।
ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পুরোনো সব মামলায় বিচার দ্রুত শেষ করে সাজা দেওয়া হয়। সেই প্রক্রিয়া এখনো চলছে। সে জন্য এখন নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করছে সরকার।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠনের কোনো পরিকল্পনা এ মুহূর্তে তাঁদের নেই। আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা চিহ্নিত করে বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার যে অভিযোগ তারা (বিএনপি) করছে, তা সঠিক নয়।
অনলাইন ডেস্ক :
শিরায় রক্ত জমাট বাড়াচ্ছে মৃত্যু ঝুঁকি। এক্ষেত্রে একটানা দীর্ঘ সময় শুয়ে বসে থাকা, অস্ত্রোপচার, শিরায় আঘাত, ক্যানসার, স্থূলতা, ধূমপান ও বেশকিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (ডিভিটি) হয়ে এই ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আজ ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত ‘শিরা ব্লক’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান।
সেমিনারে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টি ছিলেন- আমেরিকান ভাসকুলার সার্জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এম. আবিদুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন ইবনে সিনা ট্রাস্টের মেম্বার এডমিন অধ্যাপক ড. একেএম সদরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) সিতারা বেগম বীর প্রতীক, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
সেমিনারে শিরা ব্লকজনিত পা ফোলা রোগের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলেজের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জিএম মকবুল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম মহিবুল আজিজ। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. একেএম জিয়াউল হক ও সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নাজমুল হাসান।
এ সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, নানা কারণে শরীরে এক বা একাধিক গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। যেমন- দীর্ঘ ফ্লাইট বা বিছানায় বিশ্রামের সময় এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। জেনেটিক এবং পারিবারিক ইতিহাস থাকলে রোগটিতে আক্রান্তের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা না করলে ওই জমাট বাঁধা রক্ত ফুসফুসে জমা হয়ে প্রাণঘাতী পালমোনারি এমবোলিজম হতে পারে। পালমোনারি এমবোলিজম হল ফুসফুসে রক্তের জমাট বাঁধা, যা শরীরের অন্য অংশে যেমন- বাহু বা পায়ে জমাট বেঁধে রক্তপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যায় এবং ফুসফুসের রক্তনালীতে জমা হয়। যা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ডিভিটি অথবা শিরা ব্লক প্রতিরোধে প্রাথমিক পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলা, নিয়মিত কিছু সময় হাটাহাটি করা বা সক্রিয় থাকা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা দাঁড়ানো এড়ানো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে এই রোগের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
চলারপথে রিপোর্ট :
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের প্রতিনিধি দল। পৃথকভাবে আসা পরিদর্শন দলে ইইউর চার সদস্য এবং অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের তিন সদস্য ছিলেন। সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পরিদর্শন টিম ক্যাম্পে ছিলেন।
আজ ১৩ নভেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পে আসা ইইউর প্রতিনিধি দলে চার সদস্যর নেতৃত্ব দেন ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি ও অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের তিন সদস্যরের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ফার্স্ট সেক্রেটারি ঢাকার অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার এমিলি ম্যাকডোনাল্ড।
ইইউর প্রতিনিধি দলটি প্রথমে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-৪ এ পৌঁছে। সেখানে ইউএনএইচসিআর পরিচালিত রেজিস্ট্রেশন সেন্টার ও পরে এক্সটেনশন-৪ এর ডাটা এন্ট্রি সেন্টার পরিদর্শন করেন।
এরপর ক্যাম্প-৪ এ ইউনিসেফ পরিচালিত লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করেছেন তারা। পরে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ১৮ ও ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে দুপুর ২টায় ক্যাম্প থেকে কক্সবাজারের দিকে রওনা দেন। প্রতিনিধি দল বিকাল ৪টার দিকে কক্সবাজারের শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
অপরদিকে, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার এমিলি ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি সকাল ১০টার দিকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৩, ১৫ ও ১৯ পরিদর্শন শেষে শরণার্থী কমিশনার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তবে প্রতিনিধি দলটি সাধারণ কোনো রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেনি।
১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উপঅধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান বলেন, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন ইইউর চার এবং অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। এদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান ফার্স্ট সেক্রেটারিও ছিলেন। প্রতিনিধি দলটি এনজিও সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তারা বিকালে ক্যাম্প ছেড়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিপুল পরিমাণ চেতনানাশক ওষুধ ও হালুয়াসহ আন্তঃজেলা অজ্ঞান ও মলমপার্টি দলের এক দম্পতিসহ ৪ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। আজ ১ জুন বৃহস্পতিবার তাদেরকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসাড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড়ে ফ্লাইওভার ব্রীজের নীচ থেকে আটক করা হয়। বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন।
আটককৃতরা হলো- জামালপুরের ইসলামপুর থানার চিনারচর নামাপাড়া এলাকার মৃত জাবেদ আলীর ছেলে শহর আলী (৪৩), শহর আলীর স্ত্রী ও নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও থানার বাইটেঙ্গী বরাব বাজার এলাকার মৃত সুরুজ মিয়ার মেয়ে মানছুরা আক্তার জিমি (৩০), নোয়াখালীর সেনবাগ থানার জামালপুর এলাকার মৃত ছায়েদ আলীর ছেলে নূর ইসলাম (৪৫) ও জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থানার গোপালগঞ্জহাটের সোনামিয়ার ছেলে মুকুল মিয়া (৪২)। তারা সবাই কালিয়াকৈরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতো।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, বৃহষ্পতিবার ভোরে আন্ত:জেলা অজ্ঞান পার্টি ও মলমপার্টি দলের কয়েক সদস্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ফ্লাইওভার ব্রীজের নীচে অবস্থান নিয়ে চেতনানাশক বিভিন্ন দ্রব্য ব্যবহারের মাধ্যমে পথচারী ও বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। এ গোপন সংবাদ পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে এক দম্পতিসহ চারজনকে আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে কথিত চেতনানাশক হালুয়ার ১৮টি পোটলা এবং রিভোট্রিল, মাইলাম, ইপিক্লোন ও ডাইজোপান সহ চেতনানাশক ঘুমের বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় নানা অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, বংশ পরম্পরায় এ পেশাটি চালিয়ে আসছিল গ্রেফতারকৃত শহর আলীও তার পূর্ব পুরুষেরা। তার দাদা, বাবা ও চাচারাসহ পূর্ব পুরুষেরাও এ পেশায় নিয়োজিত ছিল। বংশ পরম্পরার ঐতিহ্য এ পেশাটিকে টিকিয়ে রাখতে পূর্ব পুরুষদের পর উত্তরসূরী হিসেবে শহর আলী তার স্ত্রীকে নিয়ে ধরে রেখেছিল। শহর আলী এ পর্যন্ত অর্ধ সহস্রাধিক লুটের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে। এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও নিরীহ কারাবন্দী বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যদের মুক্তির দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানববন্ধন হয়েছে। আজ ২৭ নভেম্বর বুধবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদ’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া – এর ব্যানারে এই মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা এ দেশের সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার নীলনকশা করেন। সেনা কর্মকর্তাদের খুন ও গুমের পর এ দেশের হাজার হাজার নিরীহ বিডিআর সদস্যকে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়। যাদের মধ্যে এখনো অনেক বিডিআর জওয়ান বিনা বিচারে জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলায় যারা জড়িত, তাদের খুঁজে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। আর যারা নিরীহ ও নিরপরাধ বিডিআর সদস্য চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। আর যারা এখনো কারাবন্দী আছেন, তাদেরও জেল থেকে মুক্তি দিয়ে চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হাবিলদার ইকবাল, হাবিলদার শামসুল আলম, হাবিলদার ফয়েজ, সৈনিক মোহাম্মদ আলী খান, প্রয়াত সৈনিক বদিউল আলম এর স্ত্রী রুবিনা আলম প্রমুখ।
অনলাইন ডেস্ক :
বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস ১৭ এপ্রিল। হিমোফিলিয়া রক্তক্ষরণজনিত জন্মগত রোগ, যা বংশানুক্রমে ছেলেদের হয়ে থাকে। শরীরের কোনো জায়গায় আঘাত পেলে বা সামান্য কেটে গেলে স্বাভাবিকভাবে ওই স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে, যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হিমোফিলিয়া রোগীর ক্ষেত্রে সহজে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না অথবা বিলম্বিত হয়।
১৯৮৯ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হলো রক্ত সংক্রান্ত রোগ হিমোফিলিয়া সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা। এছাড়াও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ হিমোফিলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাঙ্ক শ্নাবেলকে স্মরণ করার জন্য তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই দিনটি পালিত হয়। তাই হিমোফিলিয়া কী ও কেন এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
হিমোফিলিয়া কী?
দুটি গ্রিক শব্দ হাইমা এবং ফিলিয়া থেকে হিমোফিলিয়া শব্দটি এসেছে। হাইমা অর্থ রক্ত ও ফিলিয়া অর্থ আকর্ষণ। দেহের কোনো অংশে রক্তপাত শুরু হলে সাধারণত সেখানে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকে। মেডিকেলের ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে ক্লটিং বলে।
ক্লটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত জমাট বেঁধে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দেহে কোথাও কোনো ক্ষত তৈরি হলে সেই ক্ষতস্থান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে যাওয়াকেই ক্লটিং বলে। যে পদার্থ রক্তক্ষরণে বাঁধা দেয় তাকে ক্লট বলে। কিন্তু কোনো কারণে ক্ষতস্থানে এই ক্লট তৈরি না হলে সেখান থেকে একাধারে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। একজন হিমোফিলিয়া আক্রান্ত রোগীর দেহে এই ক্লট সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক নয়।
ব্যাপারটি আসলে এমন নয় যে, রোগীর দেহ থেকে অঝোরে এবং খুব দ্রুত রক্তক্ষরণ হতে থাকবে। মূলত একজন হিমোফিলিয়াক (যারা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত) ব্যক্তির দেহ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
অনেকে হয়তো এখন মনে করছেন যে, এই রোগ হলে হাত, পা, হাঁটু ইত্যাদির কোথাও কেটে গেলেই তা থেকে অনবরত রক্ত ঝরতে থাকবে। ব্যাপারটি তা নয়। দেহের বাইরের কোনো ছোটখাটো আঘাত এখানে খুব একটা চিন্তার বিষয় নয়। আসল চিন্তার বিষয় হলো ইন্টারনাল ব্লিডিং বা দেহের অভ্যন্তরীণ কোনো অংশে রক্তক্ষরণ। এই ধরণের রক্তক্ষরণকে হ্যামোরেজ বলে। এটি মূলত দেখা যায় দেহের ভেতরে কোনো সন্ধি যেমন হাঁটু ও গোড়ালিতে। এছাড়া দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন টিস্যু ও পেশীর মিলনস্থলেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। দেহের ভেতরে এমন রক্তক্ষরণ অনেক যন্ত্রণাদায়ক হয় এবং আক্রান্ত অংশ বেশ ফুলতে শুরু করে।
হিমোফিলিয়া কেন হয়
মানবদেহে একটি X ও অন্যটি Y ক্রোমোজম থাকলে সে হয় ছেলে (46,XY) আর যদি দুটিই X ক্রোমোজম থাকে তাহলে সে হয় মেয়ে (46,XX)। X ক্রোমোজমে F8 ও F9 নামক জিন থাকে, যা F-VIII ও F-IX নামক ক্লোটিং প্রোটিন তৈরি করে। এই ক্লোটিং প্রোটিন রক্তের সাদা অংশে পরিমাণমতো থাকে। ফলে আপনাআপনি রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। যাদের রক্তে এই ক্লোটিং প্রোটিন কম থাকে, তাদের রক্ত পড়া বন্ধ হয় না অথবা বিলম্বিত হয়। তারাই হিমোফিলিয়ার রোগী।
ছেলেদের দেহে যেহেতু একটামাত্র X ক্রোমোজম থাকে এবং এই একমাত্র X ক্রোমোজম যদি অসুস্থ/defect থাকে, তাহলে F-VIII/F-IX তৈরি হয় না। ফলে ছেলেরাই হিমোফিলিয়ার রোগী হয়। আর মেয়েদের দেহে যেহেতু দুটি X ক্রোমোজম থাকে, তাই একটি X অসুস্থ/defect হলেও অন্য X সুস্থ থাকায় পর্যাপ্ত F-VIII/F-IX তৈরি হয়। তাই সাধারণত মেয়েরা হিমোফিলিয়ার রোগী হয় না, রোগের বাহক হয়।
তবে ১. Lyonisation/inactivation of healthy X chromosome হলে, ২. বাবা রোগী ও মা বাহক হলে অথবা ৩. Turner syndrome (45,XO) হলে মেয়েরাও রোগী হতে পারে। তাই হিমোফিলিয়ার রোগীর সঙ্গে মামাতো, খালাতো প্রভৃতি বোনের বিয়ে হলে ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই রোগী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি তিনজন হিমোফিলিয়ার রোগীর মধ্যে অন্তত একজন বংশানুক্রমে সঞ্চারিত না হয়ে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়।
হিমোফিলিয়া কত প্রকার?
হিমোফিলিয়া এ এবং বি দুই ধরনের। হিমোফিলিয়া-এ-তে, ফ্যাকফোর-৮ মাত্রা কম বা অনুপস্থিত। হিমোফিলিয়া-বি ফ্যাকফোর-৯ এর ঘাটতি রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষেরই হিমোফিলিয়া-এ আছে। এটি শরীরের ক্রোমোজোম সিস্টেমের অবনতির কারণেও হয়। আর চিকিৎসকদের ধারণা, বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। আর বিশ্বব্যাপী প্রায় চার লাখ মানুষ হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত।
হিমোফিলিয়ার লক্ষণ :
যদি কোনো সাধারণ আঘাত বা ক্ষত থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ বন্ধ না হয় তাহলে বুঝবেন এটি হিমোফিলিয়ার কারণে হয়েছে। এই রোগের ক্ষেত্রে রক্তে প্লেটলেট কাউন্ট, প্রোথ্রোমবিন, প্লেটলেটের অসুস্থতা ইত্যাদি কমে যেতে পারে। এছাড়াও ক্ষতস্থানে বিলম্বিত রক্তপাত হয়। আর অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বা কেটে গেলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়াটাই হিমোফিলিয়ার মূল লক্ষণ। শিশু বয়সেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে রক্তক্ষরণ, শরীরের আঘাত লাগলে সেই জায়গাটি নীলচে হয়ে ফুলে যায় অর্থাৎ চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ; মাংসপেশিতে এবং অস্থিসন্ধিতে রক্তক্ষরণ; হাঁটু, কনুই ও অন্যান্য অস্থি সন্ধি ফুলে যাওয়া; শরীরের কোথাও কেটে গেলে দীর্ঘক্ষণ রক্ত ঝরা; দাঁত তোলার পর বা সুন্নতে খাতনা করার পর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া, শিশু হামাগুড়ি দেওয়ার সময় হাঁটুতে কালচে দাগ হওয়া, নবজাতকের নাভি কাটার সময় দীর্ঘক্ষণ রক্তক্ষরণ হওয়া ইত্যাদি।
হিমোফিলিয়ার বংশগতি :
বাবা সুস্থ ও মা বাহক হয় তবে ছেলে সন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% আর মেয়ে সন্তানের বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%। বাবা রোগী এবং মা সুস্থ হয় তবে সব ছেলে সন্তানই সুস্থ হবে এবং সব মেয়ে সন্তানই বাহক হবে। বাবা রোগী এবং মা বাহক হয় তবে ছেলে সন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%। আর মেয়ে সন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ২৫% ও বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%। সুতরাং প্রত্যেক হিমোফিলিয়া পুরুষ রোগী বিয়ে করতে পারবে, তবে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাধারণত শুধু পুরুষরাই এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং নারীরা এই রোগের বাহক। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নারীরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বাবা রোগী ও মা বাহক হলে মেয়েরাও রোগী হতে পারে। হিমোফিলিয়া রোগীর সঙ্গে আত্মীয় যেমন খালাতো, মামাতো বা ফুপাতো বোনের বিয়ে হলে দুজনেই রোগী হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ-গুরুতর হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত কিছু লোকের মাথায় সামান্য আঘাতের পরে মস্তিষ্কে রক্তপাত হতে পারে। যদিও এটি প্রায়শই ঘটে না, এটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলির মধ্যে একটি যা উঠতে পারে।
কিছু সতর্কতা চিহ্ন এবং উপসর্গ হলো :
* একটি গুরুতর
* চলমান মাথা ব্যাথা
* বারবার বমি হওয়া
* অলসতা বা তন্দ্রা
* দ্বৈত উপলব্ধি
* হঠাৎ আনাড়ি বা দুর্বলতা
* হৃদরোগের আক্রমণ বা কম্পন
পরীক্ষা ও প্রতিরোধ
রক্তের ফ্যাক্টর দুটির পরীক্ষা। রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা পরীক্ষা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের genetic testing, genetic counseling I prenatal test (amniocentesis) করে অনাগত সন্তান রোগী না বাহক তা নিশ্চিত হয়ে হিমোফিলিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা কমানো যায়। দেশেই এসব পরীক্ষা করা হচ্ছে।
হিমোফিলিয়া রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করানোর কোনো চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে যেমন নিয়মমাফিক, সঠিক ব্যায়াম করে মোটামুটিভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা গেলেও চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তাই সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করাই উত্তম।