অনলাইন ডেস্ক :
হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার পর গতকাল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শোক জানিয়েছে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে দেশটি বলেছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে তাদের কোনো হাত নেই। যদিও হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত নিয়ে ইরান এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেনি।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে সোমবার সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার কোনো কারণ তার জানা নেই।
তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেন, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন, যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের ভুল কিংবা আরও কিছু ঘটতে পারে।
অস্টিন বলেন, ইরানের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে আমাদের কাছে গভীর কোনো তথ্য নেই। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের দীর্ঘদিনের বৈরিতা। বিভিন্ন নিরাপত্তা ইস্যুতে ইরান যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলকে দোষারোপ করে থাকে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি ওয়াশিংটন গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে। ওই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেশটির জনগণের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার পক্ষে লড়াইকারীদের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করছি।
রবিবার আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান ইব্রাহিম রাইসি। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের একটি বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন ইব্রাহিম রাইসি–আব্দোল্লাহিয়ানসহ তাদের সঙ্গে থাকা অন্য কর্মকর্তারা।
ফেরার পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়। পরের দিন বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় হেলিকপ্টারটির সব আরোহী মৃত্যুবরণ করেছেন। সূত্র : চ্যানেলস টেলিভিশন
হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে :
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউনের অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতে ঝটিকা অভিযান শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। নতুন প্রশাসনের নির্দেশে ২৬ জানুয়ারি রোববার থেকে শুরু হয় এ তৎপরতা। প্রথম দিনের অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৫৬ জনকে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়েছে ২ হাজার ৬৮১ জনকে। সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন গ্রেফতার করা হচ্ছে এক হাজার জন। শিকাগোয় ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে শহরটির অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এ তথ্য জানিয়েছে। রবিবার শুরু হওয়া এই অভিযানে আইসিইর পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন এফবিআই ও ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (ডিইএ) বিচার বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। এই অভিযান এক সপ্তাহ ধরে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের ইশারায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছেন টম হোম্যান। তিনি আইসিইর সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক। সিএনএনের সাথে সাক্ষাৎকারে হোম্যান ঝটিকা অভিযান শুরুর দিনকে ‘একটি ভালো দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই অভিযান ‘মোড় বদলে’ দেওয়ার মতো একটি ঘটনা।
ওই সাক্ষাৎকারের সময় ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে ছিলেন টম হোম্যান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে (অবৈধ অভিবাসন) পুরো প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছেন। শিকাগোর জননিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিগুলোর ওপর নজর রাখতে আজ আমরা সরকারের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে মাঠে নামিয়েছি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আইসিই লিখেছে, রবিবার দেশজুড়ে ৯৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে শিকাগোয় এই ‘বাড়তি অভিযান’ ছাড়াও আটলান্টা, পুয়ের্তো রিকো, কলোরাডো, লস অ্যাঞ্জেলেস, অস্টিন ও টেক্সাস শহরে অভিবাসনসংক্রান্ত কর্মকর্তাদের তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, আইসিইর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতিদিন ৭৫ জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতিদিন গড় গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়বে। গত অর্থবছরে আইসিইর অভিযানে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে প্রতিদিনি গ্রেপ্তারের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার তথ্য অস্বীকার করেছেন টম হোম্যান।
অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক : প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে বহু অভিবাসী প্রবেশ করেছিলেন। তাঁদের বড় অংশের ঠিকানা হয়েছিল টেক্সাস। তখন টেক্সাসের গভর্ণর গ্রেগ অ্যাবট এই অভিবাসীদের বাইডেনের দল ডেমোক্রেটিক পার্টি শাসিত শহরগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে শিকাগোর স্থানীয় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের নানা তৎপরতার মুখে আতঙ্কে রয়েছেন শহরটির অনেক অধিবাসী। তাঁদের অনেকে স্কুল বা কাজে যাচ্ছেন না। যেমন শহরটির উপকণ্ঠে বসবাস করা দুই বোন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্কুলে যাচ্ছে না। তাদের মা–বাবাও কাজে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত তাঁদের অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান চলছে।
ইউএস কমিটি ফর রিফিউজিস অ্যান্ড ইমিগ্র্যান্টস নামের আরেকটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এনা মারিয়া বেনা বলেন, ‘শিশুরা স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। তারা ভয় পাচ্ছে। তারা মা–বাবার কাছ থেকে এসব বিষয়ে শুনছে।
সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে শুনছে। আমার মনে হয়, যখন শিক্ষার্থীরা ভয়ের কারণে স্কুলে যেতে চায় না, তখন ওই সম্প্রদায়ের মনের অবস্থা কী, তা অনেকটাই বোঝা যায়?’
এদিকে শিকাগোতে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে শহরটির অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো। আদালতে দাখিল করা নথিপত্রে বলা হয়েছে, শিকাগোয় অভিবাসীদের জন্য ছাড় থাকার কারণে শহরটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযানের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এটা সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে যে বাক্স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেটি খর্ব করে। একই সঙ্গে চতুর্থ সংশোধনীতে অযৌক্তিক তল্লাশি ও আটকের বিরুদ্ধে যে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা লঙ্ঘন করে।
দেশজুড়ে অভিযানÑধরপাকড় : জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরের উপকণ্ঠ থেকে ওয়াল্টার ভালাদারেস নামের ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন আইসিইর সদস্যরা। তিনি হন্ডুরাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তবে তাঁর বৈধ কোনো নথিপত্র নেই। সিএনএনকে ওয়াল্টারের পরিবারের সদস্যরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ওয়াল্টারের ভাই এডউইন ভালদারেস বলেন, ওয়াল্টার নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আটলান্টার উপকণ্ঠে লিলবার্ন এলাকায় চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। ওয়াল্টারের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ নেই। একবার শুধু লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সে ঘটনায় জরিমানাও পরিশোধ করেছিলেন তিনি।
আটলান্টার উপকণ্ঠে টাকার এলাকা থেকে নথিপত্রহীন আরেক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি একটি গির্জায় ছিলেন। ওই গির্জার যাজক লুইস ওরতিজ সিএনএনকে বলেন, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা চলাকালে তিনি দেখতে পান গির্জার কয়েকজন সদস্য ওই ব্যক্তিকে বাইরে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। বাইরে যাওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করেন আইসিই সদস্যরা।
রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত তাঁদের অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান চলছে। এই দ্বীপপুঞ্জের হনুলুলু শহরের অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করেছেন ডিইএ ও আইসিই সদস্যরা। ডিইএ জানিয়েছে, রোববার সকালে কলোরাডোয় মাদক চোরাচালানিদের এবং ভেনেজুয়েলার অপরাধী চক্রগুলো লক্ষ্য করে চালানো অভিযানে প্রায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।
টার্গেটে স্টুডেন্ট ভিসাধারীরা : অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের পরই নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার অভিযানে স্টুডেন্ট ভিসায় আগতরাও টার্গেট হয়েছেন। ৩ বাংলাদেশি ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে। তারা ভার্সিটিতে না গিয়ে নিয়মিত কাজ করছিলেন।
এদিকে পিএইচডি কোর্স করতে ঢাকা থেকে জেএফকে অবতরণকারী আরেক স্টুডেন্টকে জেএফকে থেকেই ফেরৎ পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ইমিগ্রেশন বিভাগের অফিসার জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই স্টুডেন্টের কাছে থেকে সদুত্তর না পাওয়ায় তার ভিসা বাতিল করে ফিরতি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেয়া হয়।
আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক (সরকার বিষয়ক) এবং আমেরিকা সুপ্রিম কোর্টের লাইসেন্সপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী। ডেমক্র্যাটিক পার্টির লিডার এটর্নী মঈন চৌধুরী আরো জানান, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে ভিসা গ্রহণের সময় উল্লেখিত তথ্যের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন জেএফকে এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস অফিসার। সঠিক জবাব পাননি। অপরদিকে, স্টুডেন্ট ভিসা লংঘন করে নিয়মিতভাবে কাজ করার তথ্য উদঘাটিত হয় সংশ্লিষ্টদের সেলফোন ট্র্যাকিংয়ে। ভার্সিটি অথবা কলেজের পরিবর্তে ভিন্ন একটি স্থানে প্রতিদিনই দীর্ঘ সময় অবস্থানের তথ্য খতিয়ে দেখার সময় উদঘাটিত হয় ভিসা বাতিলের অপকর্ম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসায় আগত অনেক এশিয়ানই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, সুপার মার্কেট কিংবা ট্র্যাভেল এজেন্সি অথবা চিকিৎসকের প্রাইভেট ক্লিনিকে রিসিপশনিষ্টের কাজ করছেন। কেউ কেউ অনলাইনে ক্লাস করছেন। অবৈধ অভিবাসীদের ধর-পাকড়ের অভিযানে এহেন অপকর্মে লিপ্ত ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট’রাও ধরা পড়ছেন বলে নিউজার্সি, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসাচুসেট্্স, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, মিশিগান, আরিজোনা থেকে জানা গেছে।
এদিকে, আইসের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) উদ্ধৃতি দিয়ে ফক্স নিউজের এক বুলেটিন বলা হয়েছে, সোমবার টেক্সাসের বিভিন্ন স্থান থেকে ৮৪ জনসহ সারা আমেরিকা থেকে এক হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম ৭ দিনে গ্রেফতারস হলো ৩৩ অবৈধ অভিবাসী। এরা সকলেই নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল এবং সামাজিক শান্তি বিনষ্টের হুমকি বলেই অবৈধদের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিটে হেকসেথ জানান, সোমবার আরো ৪ শতাধিক সৈনিক টেক্সাসের সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে। এরফলে আগের সপ্তাহের তুলনায় বেআইনীভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারির সংখ্যা ৯০% কমেছে বলেও দাবি করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
আইসের গ্রেফতার-অভিযানে সন্ত্রস্ত গোটা কম্যুনিটি। জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ওজোনপার্ক, ব্রুকলীনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত পরিভ্রমণকারে সোমবার অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেট, গ্রোসারি স্টোরে গ্রহকের মত বিক্রেতার সংখ্যাও একেবারেই নগন্য মনে হয়েছে। একধরনের ভীতি তৈরী হয়েছে ইমিগ্র্যান্ট কম্যুনিটিতে। টাইমস স্কোয়ার, ডাউন টাউন, মিডটাউন, আপটাউনের ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জানা গেছে, নিউইয়র্কে নূন্যতম মজুরি হচ্ছে ঘন্টায় ১৭ ডলারের মত। অবৈধদের দিয়ে সে সব কাজ করিয়ে ঘন্টায় ৫/৬ ডলার করে দিতে পারায় ব্যবসায় মুনাফা বেশী বলে ব্যবসায়ীরা জানান। যদিও করোনা মহামারির পর অন্যসকল পন্যের মত খাদ্য-বস্ত্র-বিনোদনের সকল পন্যের দামও দ্বিগুণ করা হয়েছে। অর্থাৎ অবৈধদের দিয়ে ব্যবসা চালাতে না পারলে লাভের অংক অনেক কমবে বলে ব্যবসায়ীরা ট্রাম্পের ওপর নাখোশ।
উল্লেখ্য, গ্রেফতারের পরই নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার জন্যে সেনাবাহিনীর বিমান ব্যবহার করছে ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে ডিটেনশন সেন্টারের ৪১ হাজার বেডই পূরণ হয়ে আছে আগে থেতেই। এজন্য গ্রেফতারের পরই অবৈধ অভিবাসীদেরকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার এই কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আরো উল্লেখ্য, ১৭ লাখের অধিক অভিবাসীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারের আদেশ জারি রয়েছে অনেক আগে থেকেই। এর সাথে যোগ হয়েছে গত চার বছর বাইডেন-কমলার আমলে বেআইনীভাবে সীমানা অতিক্রমকারিরা। এ সংখ্যা ২০ লাখের বেশী বলে বিভিন্নভাবে জানা গেছে। এদের সকলকে গ্রেফতার এবং দ্রুত বহিষ্কার করা সম্ভব না হলে বিপুল অর্থ লাগবে থাকা-খাওয়া বাবদ। সে ইস্যুতেও দুশ্চিন্তায় রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেদিকে লক্ষ্য রেখে যারা সীমানা অতিক্রমের পর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করবেন-তাদেরকেও সরাসরি মেক্সিকো-তে পাঠিয়ে দেয়া হবে আবেদনের চ’ড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত। সবকিছু মিলিয়ে সারা আমেরিকায় অভিবাসী-সমাজে টেনশন আর অস্থিরতা বিরাজ করছে।
অনলাইন ডেস্ক :
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্ণামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আজ ৩ জুন সোমবার মিরপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে নেপালকে ৪৫-৩১ পয়েন্টে হারিয়ে টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ ট্রফি ঘরে তুলল চ্যাম্পিয়নরা।
বাংলাদেশ এই টুর্ণামেন্টে প্রতিটি ম্যাচই সহজে জিতেছে। ফাইনালও তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। নেপাল সেমিফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াই করে জিতলেও বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। আজ ম্যাচের কোনো মুহূর্তেই নেপাল বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি।
এদিন শুরুতে ১-০ পয়েন্টে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। নেপাল পরক্ষণে ১-১ স্কোর করে লড়াইয়ের আভাস দেয়। ধারাবাহিকতায় ২-১ স্কোরে এগিয়ে যায় হিমালয়ের দেশটি। তবে স্বাগতিকরা বেশিক্ষণ তাদের রাজত্ব করতে দেয়নি। ঘুরে দাঁড়িয়ে একের পর এক পয়েন্ট নিতে থাকে। একপর্যায়ে ১৬-২ স্কোরে এগিয়ে প্রতিপক্ষকে ব্যাকফুটে ফেলে দেয়।
প্রথমার্ধে ২৪-১০ পয়েন্টে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকে। এই সময়ে একবার অলআউট করে লোনাও পায় মিজান-আল আমিনরা। স্বাগতিকদের পয়েন্ট নেওয়ার অভিযানে নেপালও কম যায়নি। গ্রুপ পর্বের চেয়ে আজ পয়েন্ট বেশি পেলেও বড় ব্যবধানে হার এড়াতে পারেনি।
বিরতির পর এগিয়ে চলা অব্যাহত থাকে বাংলাদেশের। দ্বিতীয়বার প্রতিপক্ষকে অলআউট করার সময় স্কোর দাঁড়ায় ২৯-১১ তে। শেষ দিকে এসে বাংলাদেশ একবার অলআউট হয়। ৪৩-২৮ পয়েন্টে নেপাল পিছিয়ে থাকে। ম্যাচ শেষ হতেই দর্শকদের আনন্দ-উল্লাস বলে দিচ্ছিল, ট্রফি জেতা কতটা সার্থক হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেমকে (৭৩) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পারিবারিক সূত্র জানায়, আবুল হাশেম দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। গত শনিবার রাতে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। গতকাল রোববার দুপুরে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের মাঠে তাকে নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীনের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. ইসমত আলী, সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
অনলাইন ডেস্ক :
আইকন অব দ্য সিস। বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ। ফিনল্যান্ডের শিপইয়ার্ডে জাহাজটি নির্মাণ করা হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবরে সম্ভাব্য ডেলিভারির আগেই শেষবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে সাগরে ভাসবে জাহাজটি। যে টাইটানিক জাহাজ বিশ্বে বিস্ময় ও ইতিহাস হয়ে আছে নতুন নির্মিত জাহাজটি তার চেয়ে ১৩ গুণ বড়। সিএনএন।
২০২৪-এর জানুয়ারিতেই যাত্রা শুরু করবে বিশ্বের বৃহত্তম এ ক্রুজ জাহাজ। আইকন অব দ্য সিসের দৈর্ঘ্য ১,২০০ ফুট, ওজন ২ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টন।
এতদিন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রুজ শিপ ছিল ওয়ান্ডার অব দ্য সিস। এর চেয়ে আয়তনে ৬ শতাংশ বড় আইকন অব দ্য সিস। ৫,৬১০ জন যাত্রী ও ২,৩৫০ জন ক্রুসহ মোট ৭,৯৬০ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা করতে পারবে এই বিশাল জাহাজ। এই বিশালত্ব এবং যাত্রীধারণ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিনোদনমূলক ব্যবস্থা। ওয়াটার স্লাইড, সুইমিংপুল, হ্রোয়ালপুল-সব মিলিয়ে জাহাজটিতে বিনোদনের ৪০টিরও বেশি ব্যবস্থা রয়েছে।
২০২২-এর এপ্রিলে ফিনল্যান্ডের মেয়ার তুর্কু শিপইয়ার্ডে জাহাজটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। সম্প্রতি সেখান থেকেই এটির ট্রায়াল রান হয়। ট্রায়াল রানে আইকন অব দ্য সিস কয়েকশ মাইল পথ ভ্রমণ করেছে। সেই সময় প্রধান ইঞ্জিন, হল, ব্রেক সিস্টেম, স্টিয়ারিং, শব্দ এবং কম্পন ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। ৪৫০ জন বিশেষজ্ঞ চার দিন ধরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জাহাজটিকে সমুদ্রযাত্রার জন্য ছাড়পত্র দিয়েছেন।
চলতি বছরের শেষে আরেকটি ট্রায়াল হবে। তারপর জাহাজটি যাবে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে। ২০২৪ সালের ২৭ জানুয়ারি সেখান থেকেই শুরু হবে আইকন অব দ্য সিসের প্রথম সমুদ্র ভ্রমণ। প্রথম ভ্রমণের টিকিট ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। ক্যারিবিয়ান সাগরের পূর্ব এবং পশ্চিম পথ ধরে নিয়মিত এক সপ্তাহের একেকটি সফর করার কথা ক্রুজ শিপটির। বাহামায়, কোকোকে নামে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান সংস্থার নিজস্ব একটি দ্বীপ আছে। সাত রাতের এক রাতে অতিথিদের সেই স্থানেও নিয়ে যাওয়া হবে।
বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ অবশ্যই এর ওয়াটার পার্ক। এখানে থাকছে ছয়টি ওয়াটার স্লাইড। এর মধ্যে একটি ‘ওপেন ফ্রি-ফল স্লাইড’, একটি ‘ফ্যামিলি রাফ্ট স্লাইড’ এবং দুটি ‘ম্যাট-রেসিং স্লাইড’। জাহাজটিতে ২৮টি বিভিন্ন ধরনের কেবিন থাকছে। ৮২ শতাংশ কক্ষে তিন বা তার বেশি অতিথি থাকতে পারবেন।
অণলাইন ডেস্ক :
এক দশক পর ভারতের লোকসভায় ফিরেছে বিরোধী দলনেতার পদ। বাজেট অধিবেশনে আজ ২৯ জুলাই সোমবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারকে এক হাত নিলেন দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। পৌনে এক ঘণ্টা বক্তব্যে বিজেপি-শাসিত সরকারকে তুলোধুনো করেছেন রাহুল।
রাহুল বলেন, ‘হাজার হাজার বছর আগে কুরুক্ষেত্রে ছয় জন মিলে অভিমন্যুকে চক্রব্যূহে ফাঁসিয়ে হত্যা করেছিলেন। আমিও একটু পড়াশোনা করে দেখেছি, চক্রব্যূহকে পদ্মব্যূহও বলা হয়। পদ্মের মতো সামরিক গঠনের জন্য।”
এর পরই কেন্দ্রকে বিঁধে লোকসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে এক নতুন চক্রব্যূহ তৈরি হয়েছে। তাও আবার পদ্ম ফুলের আকারে। যার প্রতীক প্রধানমন্ত্রী বুকে পরে থাকেন। অভিমন্যুর সঙ্গে যা করা হয়েছিল, যেভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছিল চক্রব্যূহে, সেটাই দেশের সঙ্গে, দেশের যুব সমাজ, কৃষক, নারী এবং ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে করা হচ্ছে।’ রাহুলের যুক্তি, মহাভারতের চক্রব্যূহের রাশ ছিল ছয় জনের হাতে- দ্রোণাচার্য, কর্ণ, কৃপাচার্য, কৃতবর্মা, অশ্বত্থামা ও শকুনি। বর্তমান সময়ের যে চক্রব্যূহের কথা রাহুল বলছেন, সেখানেও ছয় জনের হাতে রাশ রয়েছে বলে দাবি বিরোধী দলনেতার। রাহুলের মতে সেই ছয় জন হলেন- নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, মোহন ভাগবত, অজিত ডোভাল, আম্বানি ও আদানি।
লোকসভায় রাহুল এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই আপত্তি জানান স্পিকার ওম বিড়লা। বিজেপি শিবির থেকেও হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। স্পিকার রাহুলকে জানান, যারা লোকসভার সদস্য নন, তাদের নাম ব্যবহার করা যাবে না। সাংবিধানিক পদে থেকে রাহুল যাতে সংসদীয় রীতি-রেওয়াজ মেনে চলেন, সেই বার্তা দেন স্পিকার। এর পর অবশ্য আম্বানী, আদানি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের নাম প্রত্যাহার করে নেন। তবে বাকি তিনটি নামের ক্ষেত্রে নিজের বক্তব্যে অবিচল থাকেন রাহুল।
লোকসভার বিরোধী দলনেতার মতে, বর্তমান কালের এই চক্রব্যূহের নেপথ্য তিনটি শক্তি কাজ করছে। রাহুলের কথায় প্রথম শক্তি হল, ‘পুঁজির উপর একচেটিয়া অধিকারের ভাবনা, যেখানে গোটা দেশের সম্পত্তির উপর দু’জনের অধিকার থাকে।’ সরাসরি কারও নাম না করলেও রাহুলের খোঁচা যে দুই শিল্পগোষ্ঠীর দিকেই ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া রাহুলের যুক্তিতে, দ্বিতীয় শক্তি হল সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতরের মতো বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা এবং তৃতীয় শক্তি হল রাজনৈতিক নেতারা। এই তিন শক্তিই চক্রব্যূহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বলে আক্রমণ শানান লোকসভার বিরোধী দলনেতা।
এই ‘চক্রব্যূহের’ কারণে দেশবাসীর কী সমস্যা হয়েছে, সে কথাও তুলে ধরেন রাহুল। রাহুলের দাবি, যাঁরা ছোট ছোট ব্যবসা করেন, তাদের উপর এই চক্রব্যূহের প্রথম কোপ পড়েছে। নোট বাতিল থেকে শুরু করে পণ্য ও পরিষেবা কর এবং ‘কর-সন্ত্রাস’-এর কথা উঠে আসে রাহুলের সোমবারের বক্তৃতায়। তিনি বলেন, “দেশে যারা ছোট ছোট ব্যবসা করেন, রাতে তাদের কাছে আয়কর দফতর, পণ্য ও পরিষেবা কর দফতর থেকে ফোন যায়। তারা কর-সন্ত্রাসের শিকার হন। এই কর-সন্ত্রাস বন্ধ করার জন্য বাজেটে কোনও উল্লেখ নেই।”