চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ওবায়দুল্লাহ সড়কের পাশে আমিনপাড়া গ্রামে দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে কয়েকজন প্রভাবশালী মিলে শাহবাজপুর আমিনপাড়া এলাকায় পানি নিস্কাশনের ড্রেইনসহ বিশাল এরিয়া নিয়ে কৃষিজমিতে মাঠি ভরাট করে হাউজিং প্রজেক্ট তৈরী করেছে। এই প্রজেক্টের পাশের সড়কের নীচে পানি নিস্কাশনের ড্রেন রয়েছে। এই ড্রেনের সামনেও মাটি ভরাট করা হয়েছে। তাই কোন কাজে আসছেনা ড্রেন। বৃষ্টির পানি জমে এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সহ কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। অত্যন্ত দুর্দশায় ভুগছেন আমিনপাড়ার লোকজন।
স্থানীয় ভুক্তভোগী হাজি শরিফ চৌধুরী, আলমগীর চৌধুরী ও শহিদ মিয়া চৌধুরী বলেন, পানি নিস্কাশনের ড্রেইনসহ জমিগুলোতে মাঠি ভরাট করার কারণে আমিনপাড়া ও যাদবপুর এলাকার বাড়িঘরসহ রাস্তায় পানি উঠে গেছে। এই পানি গুলো সরানোর ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলে কয়েক ধরে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। এছাড়াও প্রায় শতবিঘা জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আমরা কোন ফসল করতে পারছিনা। এ সমস্যায় তিনবছর ধরে ভুগছি। বিশেষ করে শিশুরা পানিতে ডুবে যাওয়ার আতংক রয়েছে।এছাড়া স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজের যাইতে পারছে না।
ভুক্তভোগীরা বলেন, হাজি কুদ্দুছ, সিরাজ মিয়া, মামুন মিয়া ও গরু ফার্মের মালিক সিরাজ মিয়া এই প্রজেক্ট করে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল বলেন, আমিনপাড়া ও যাদবপুর এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন। আগে কখনো এখানে জলাবদ্ধতা ছিল না। কয়েক বছর আগে কয়েকজন মিলে জমিগুলোতে প্লট আকারে বিক্রি করার জন্য মাটি ভরাট করে। এজন্য এই সমস্য হয়েছে। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে মাটি ভরাট করার জন্যই এ সমস্যায় কয়েক বছর ধরে ভুগছেন এলাকাবাসি। এছাড়াও পানি নিস্কাসনের নালাটি বন্দ হওয়ার জন্য এই সমস্য হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরনাপন্ন হয়েছি।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেজবা উল আলম ভূঁইয়া জানান, আমি বিষয়টি জেনেছি এর সমাধানের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জন্য বলা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল সদরের উচালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের পাশেই এর অবস্থান। সড়ক ও জনপদের (সওজ) গাছে বন্দি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। বারবার বিধিতে আটকে যাচ্ছে গাছ কাঁটার অনুমতি। ফিরে যাচ্ছে নিরাপত্তা দেওয়াল নির্মাণের বরাদ্ধ। গাছে বাঁধাগ্রস্ত হয়ে আহত হচ্ছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও আগত অতিথিরা। ওই ৮টি কাঠের গাছ এখন ৩ শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের গলার কাটা। বছরের পর বছর ঘুরে এই কাটা খুলতে পারছেন না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গাছ গুলি আকস্মিক বড় ধরণের দূর্ঘটনার কারণ হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন অভিভাবকরা।
সরজমিন অনুসন্ধান ও বিদ্যালয় সূত্র জানায়, সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়ক সংলগ্ন পশ্চিম পাশে বিদ্যালয়টির অবস্থান। তাই আজ থেকে ১৪-১৫ বছর আগে বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেষে কয়েকটি কাঠের গাছের চারা রোপন করেছিলেন সওজের লোকজন। দেখতে দেখতে গাছ গুলি বড় হয়ে গেছে। প্রধান ফটকের দুই পাশে ৬টি আর ফটকের প্রবেশদ্বারে দুটি গাছ চলাচলের পথ প্রায় বন্দি করে ফেলেছেন। গাছ গুলোর গুল যত বড় হচ্ছে ততই ছোট হয়ে আসছে প্রবেশের রাস্তা। বর্তমানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা গাছ ঘেষে ফটকের বক্স গেইটে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এর চেয়েও বেশী দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক অভিভাবক ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে আসা অতিথিদের। দ্রুত গতিতে প্রবেশ করতে গিয়ে নিয়মিত আহত হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। মাঝে মধ্যে মনের অজান্তে মাথায় আর শরীরে আঘাত পাঁচ্ছেন শিক্ষক ও অতিথিরা।
নিরাপত্তা দেওয়াল নির্মাণের বরাদ্ধ আসলেও ওই গাছের জন্য কাজ করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গাছ গুলি কাঁটার অনুমতির জন্য গত কয়েক বছর ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে দৌঁড়ঝাঁপ করছেন। কিন্তু বারবার বিধিতে আটকে যাচ্ছে কাঁটার অনুমতি।
মৌখিক পরামর্শ পেলেও মিলছে না লিখিত অনুমতি। তাই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না শিক্ষক ও এসএমসি। এখন তারা অনেকটাই নিরূপায় ও হতাশ।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল ও তামিম বলেন, শিশু শ্রেণি থেকেই গাছের জন্য বাঁকা তেড়া হয়ে প্রবেশ করছি। গাছ গুলি কেটে ফেললে শান্তি পাব। অভিভাবক মো. ইফতেহারূল ইসলাম, নুরজাহান বেগম, মো. আনোয়ার হোসেন ও জহুরা বেগম বলেন, শিশুদের নিয়ে প্রবেশ করতে খুবই কষ্ট হয়। বাচ্চারা অনেক সময় ব্যাথাও পায়। প্রবেশ পথের মাঝখানের গাছ দুটি কাটতে স্যারদের অনেক অনুরোধ করছি। কেন কাটছেন না উনারাই জানেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. নোমান মিয়া বলেন, টিকার কাজ পরিদর্শনে গেলে গাছ আমাকে আটকে দেয়। গাছের জন্য গেইট কোন দিকে? ঠিক বুঝে ওঠতে পারছিলাম না। পরে আকাঁ বাঁকা হয়ে ব্যায়াম করে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। মানুষের জন্যই তো আইন। তাহলে সামান্য কারণে কেন শিশু ও অভিভাবকরা এত কষ্ট করবেন? দ্রুত এর একটা সমাধান দরকার। সমন্বয় সভায় আমি গুরূত্ব সহকারে বিষয়টি তুলে ধরেছি। বিদ্যালয়ের এসএমসি’র সভাপতি মো. রূহুল আমীন রুবেল বলেন, গত ১৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে এই সমস্যা।
গত ২/৩ বছর আগে তখনকার এসএমসি গাছ কাঁটার ব্যবস্থা করতে সভার রেজুলেশন দিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছিলেন। গাছের জন্য নিরাপত্তা দেওয়ালটিও করতে পারছি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নৌসাদ মাহমুদ বলেন, সওজের কাছ গুলো প্রধান ফটক থেকে অপসারণ করা খুবই জরুরী। গাছ গুলো কাটতে বিদ্যালয়ের আবেদনটি আগের ইউএনও মহোদয়ের কাছে দিয়েছিলাম। তিনি সওজের বরাবরে এ বিষয়ে লেখার কথা। দেখি বর্তমান ইউএনও মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করব। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, গাছে ফটক বন্দি হলে তো বড় সমস্যা। আমি বিষয়টি ভালভাবে জানি না। দেখে জরূরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিব।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল বাজারের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক দোকানপাট উচ্ছেদে অভিযান আজ ৪ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে পরিচালনা করা হয়।
অভিযান পরিচালনা করেন সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট মোহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন ও সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট নাজরিন সুলতানা।
অভিযানে মার্কেটের অভ্যন্তরে হাঁটাচলার রাস্তা, বিদ্যমান বৈধ দোকানের সামনে অবৈধভাবে নির্মিত দোকানপাট এবং কমন স্পেসে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক দোকান উচ্ছেদ করা হয়।
অভিযান প্রসঙ্গে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মোহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, মার্কেটে আগত ক্রেতা সাধারণ যেন নির্বিন্নে চলাফেরা ও কেনাকাটা করতে পারেন সে লক্ষ্যে সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিক উদ্দিন ঠাকুরের নির্দেশে সরাইল উপজেলার একমাত্র বাজারের অভ্যন্তরে বিদ্যমান ফুটপাত, বারান্দা, কমন স্পেসে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়।
এছাড়া নতুন করে অবৈধ আর কোনো দোকানপাট নির্মাণ ও প্রতিষ্ঠা না করতে সর্তক করা হয়েছে এবং নতুন করে দোকান স্থাপন করা হলে উচ্ছেদসহ প্রয়োজনীয় জরিমানা করার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ একরামুল ইসলাম, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বর, বাজার কমিটির সেক্রেটারী প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির কারণে সরাইল উপজেলায় শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিদ্যুতের প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর টানা ২৩ ঘণ্টা পর রবিবার রাত ১১টার দিকে পুরো উপজেলায় একযোগে বিদ্যুৎ আসে। এরপরও চলতে থাকে লোডশেডিং। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎবিহীন থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলাবাসী।
বিদ্যুৎ না থাকার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কর্তৃপক্ষের ‘খামখেয়ালি’কে দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যদিকে বিউবোর কর্মকর্তারা সঞ্চালন লাইনে ‘সমস্যা’ হওয়ার কথা জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা সদরের বড় দেওয়ানপাড়া বাসিন্দা কলেজশিক্ষক মাহবুব খান বলেন, ‘এখানে বৃষ্টির দু-চারটি ফোঁটা পড়লেই টানা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। এখন চলছে রোজার মাস। এ সময়ে আমরা চরম ভোগান্তিতে আছি।’
সরাইল শতভাগ বিদ্যুৎ–সুবিধার আওতায় আসা একটি উপজেলা। এর নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে সদরসহ সাতটি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের আওতাধীন। এখানে গ্রাহকসংখ্যা ৪৪ হাজার ৫০০। বিউবোর এ বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের অধিকাংশই শনিবার রাত ১২টার পর থেকে টানা ২৩ ঘণ্টার বিদ্যুৎবিহীন ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামান্য হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টি আর বজ্রপাতের কারণে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলা সদরসহ পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ চলে যায়। শাহবাজপুর ও কালীকচ্ছ ইউনিয়নে বিকেল চারটার দিকে বিদ্যুৎ আসে। এ দুটি ইউনিয়নে আবার বিদ্যুৎ চলে যায় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। এরপর সরাইল সদর, পানিশ্বর, চুন্টা, শাহজাদাপুর ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নে রোববার রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে উপজেলাবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েন। অনেকের বাসাবাড়ি কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ফ্রিজে রাখা খাদ্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়।
শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খাইরুল হুদা চৌধুরী বলেন, শনিবার দিবাগত রাতে বিদ্যুৎ চলে যায়। রবিবার বিকেল চারটার দিকে আসে। কিছুক্ষণ পর আবার চলে যায়। এখানে আকাশে মেঘ দেখা দিলেই এমনটি হয়ে থাকে, দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ থাকে না।
ছোট দেওয়ানপাড়ার বাসিন্দা সমাজকর্মী রওশন আলী বলেন, ‘সরাইল বিদ্যুৎ কার্যালয়ে কর্মচারীদের মধ্যে গ্রুপিং আছে। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে সহ্য করতে পারে না। কেউ কাউকে সহায়তা করে না। এ কারণে এখানে আমাদের ভোগান্তি হচ্ছে আরও বেশি।’
স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ–সংযোগ দিতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করেন বিউবোর সরাইল উপজেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) আবদুর রউফ। তিনি বলেন, ‘শনিবার দিবাগত রাতের প্রচণ্ড বজ্রপাতের প্রভাবে সঞ্চালন লাইনে সমস্যা হয়। এ সমস্যা চিহ্নিত করতে সময় লেগেছে। এ জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে অনেক দেরি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের সমস্যার দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে ২৩ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যার পর বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। সরাইল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল মাহমুদ আলী ও উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নুর আলমের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
স্থানীয়রা জানায়, শনিবার বিকেলে সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী তরুণ দল সরাইল উপজেলা শাখার কর্মী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সভায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও স্থানীয় বিএনপি যুবদল ছাত্রদলসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল মাহমুদ আলীর ভাই আজির উদ্দিন আহমেদ পান্নার সঙ্গে তরুণ দলের নেতা আরাফাত রহমান হৃদয়ের বিতণ্ডা হয়। এ সময় সরাইল উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নুর আলম আরাফাতের পক্ষ নিয়ে কথা বলে। এ নিয়ে দুলাল ও নুর আলমের মধ্যে বিতণ্ডা হয়।
এরই জের ধরে দুই নেতার সমর্থকরা উপজেলা সদরের সড়কের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। এতে সরাইল-অরুয়াইল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল হাসান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিতাস নদীতে ড্রেজারে কাটছে মাটি। সেই মাটি যাচ্ছে এক কিলোমিটার দূরে এশিয়া নামক ইটভাটায়। ভাটায় ব্যবহারের পরও ওই মাটি চড়া দামে অন্যত্র বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। ওদিকে স্বল্প প্রস্থের নদীর গভীরতা বাড়তে থাকায় দু’পাড়ের শতশত একর ফসলি জমি এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের চানপুর এলাকার নদী সংলগ্ন ফসলি মাঠে এমন হরিলুট করছে মাটি খেকোঁ চক্র। নদী ও মাটি খেকোঁ প্রভাশালী সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় সেখানকার কৃষকরা। ভয়ে মুখ খোলার সাহসও করছেন না তারা।
সরজমিন অনুসন্ধান ও ভুক্তভোগী কৃষকরা জানায়, ধর্মতীর্থ এলাকার কৃষকরা বারবার নদী, ফসলি জমি ও মাটি খেঁকো একটি চক্রের শিকার হচ্ছেন। ওই চক্রটির কাজ হচ্ছে ইটভাটায় মাটি বিক্রির বাণিজ্য করা। এই লক্ষে তারা ধর্মতীর্থ চানপুর সহ অত্র এলাকার হাওরের ফসলি জমির মালিকদের টার্গেট করে। সহজ সরল কৃষকদের ফুসলিয়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফসলি জমি ও গোচারণ ভূমির মাটি ক্রয় করে আসছে।
একটি জমি ক্রয় করে আশপাশের জমির মালিকদের বেকায়দায় ফেলে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করে ওই চক্রটি। হাওরের শতশত একর ফসলি জমি এখন চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। ফসলি জমির পর এখন তারা নদীর দিকে নজর দিয়েছেন। চানপুর মৌজায় তিতাস নদীতে গত ১৫ দিন ধরে ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে এক কিলোমিটার দূরে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের পাশে এশিয়া নামক ইটভাটায় নিচ্ছেন। সেখান থেকে ট্রাকে করে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছেন। ওদিকে ড্রেজারে লাগাতার মাটি উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এতে করে নদীর দু’পাড়ে শতশত একর ফসলি জমি এখন ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। কৃষকদের আর্তনাদ ও প্রতিবাদ কোন আমলে নিচ্ছেন না প্রভাবশালী মাটি খেঁকোরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেখা যায় নদীর মাঝখানে বিকট শব্দে চলছে ড্রেজার। প্রায় ৮-১২ ইঞ্চি প্রস্থের পাইপ দিয়ে এক কিলোমিটার দূরে মাটি যাচ্ছে। ড্রেজারের পরিদর্শক নুর নবী দাঁড়িয়ে আছেন। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়েই ড্রেজারের কাছ থেকে দ্রুত সটকে পড়ার চেষ্টা করেন নুরনবী।
ড্রেজার চালক লাখাই থানার মো. ইসমাঈল মিয়া (৪০) নদীর মাটি ইটভাটায় যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ঠিকাদার মফিজ মিয়া, হযরত আলী ও সাইজ উদ্দিন। আমরা শ্রমিক। ৪ জনের মধ্যে আমিসহ দু’জনের মাসিক বেতন ৪০ হাজার টাকা। অপর দু’জনের মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকা। অনুমতি বা বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা আমরা জানি না।
ড্রেজার চালিয়ে নদীতে মাটি কাটাই আমাদের কাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার একাধিক কৃষক সামনে পেছনে তাকিয়ে বলেন, তারা হাওরের ফসলি জমি খাইছে। এখন মাটি কেটে যেভাবে গভীর করছে নদীর পাড়ের ফসলি জমি গুলো ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যাবে। আমরা শেষ। স্যার পারলে জমি গুলো রক্ষা করে আমাদের বাঁচান। আমাদের নাম লিখলে তারা মেরে ফেলবে। ঠিকাদার মফিজ মিয়া নদীর মাটি ইটভাটায় বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, এশিয়া ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছি। অনুমতির কথা দূর্গাচরণ দাদা বলতে পারবে। তিনিই কাজটি করছেন। আমরা শুধু দেখা শুনা করি।
দূর্গাচরণ দাস ও মাটি বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে নদী খননের অনুমতি এনেছি। সেখানে মাটি কাটার কথা বলা আছে। তবে ইটভাটায় বিক্রির কথা বলা নেই। এটি উন্নয়ন প্রকল্প। মাটি বিক্রি না করলে রাখব কোথায়? ফসলি জমির ক্ষতির জন্য আমি দায়বদ্ধ।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, দূর্গাচরণ দাস অনুমতির কোন কাগজ আমাকে দেখাতে পারেননি। অনুমতি ছাড়া উনি যা করছেন, তা করতে পারেন না। আমি উনাকে ড্রেজারে নদীতে মাটি কাটা বন্ধ রাখতে বলেছি। কথা না শুনলে আইনগত ব্যবস্থা নিব।