স্পোটর্স ডেস্ক :
নকআউট ম্যাচে একদিকে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আরেক দিকে এ টুর্নামেন্টের অপরাজিত দল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে দুই দলের সামনে প্রায় বিস্মৃত সেমিফাইনালের হাতছানি। অ্যান্টিগার ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল রোমাঞ্চকর, শেষ পর্যন্ত হয়েছেও সেটি। তাতে ডিএলএস পদ্ধতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩ উইকেটে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনালে চলে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বৃষ্টির সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার শত্রুতা বেশ পুরনো। দুইটি (১৯৯২ ও ২০০৩) বিশ্বকাপে তাদের কপাল পুড়েছিল বৃষ্টির কারণে।
তবে এবার আর তা হলো না। যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুর্দান্ত পেস আক্রমণ ভয় পাইয়ে দিয়েছিল প্রোটিয়াদের। তবে শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিদায় করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে মার্করামবাহিনী।
অ্যান্টিগায় আজ গ্রুপ পর্বে ডু অর ডাই ম্যাচে ৩ উইকেটে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আগে ব্যাট করে তাদের সামনে (৮ উইকেট হারিয়ে) ১৩৬ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরে বৃষ্টি আইনে সেই লক্ষ্য নেমে আসে ১২৩ রানে। যা ৭ উইকেট হারিয়ে পেরিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশি (৭) ম্যাচ জেতার রেকর্ডও গড়েছে তারা। এর আগে ২০০৯ সালে ৬ ম্যাচ জিতেছিল শ্রীলঙ্কা।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিল প্রোটিয়ারা। দ্বিতীয় ওভারে তারা হারায় দুই ওপেনার রিজা হ্যানড্রিকস ও কুইন্টন ডি ককের উইকেট। দুজনকেই ফেরান ক্যারিবীয় পেস বোলিং অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল। এরপর নামে বৃষ্টি। পরে বৃষ্টি থামলে বৃষ্টি আইনে ইনিংসের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ১৭ ওভারে, লক্ষ্য দাঁড়ায় ১২৩ রানে।
বৃষ্টির পরে প্রতিরোধ গড়েন প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম ও ট্রিস্টান স্টাবস। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে মার্করাম (১৮) বিদায় নিলে ভাঙে এই জুটি। সপ্তম ওভারে গুদাকেশ মোতির বলে হেনরিখ ক্লাসেনের তিন চার ও এক ছক্কায় আসে ২০ রান। তবে পরের ওভারে আলজারি জোসেফের শিকার হন ১০ বলে ২২ রান করা ক্লাসেন।
প্রথম ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৮৯ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু পরের দুই ওভারেই ফের চাপে পড়ে যায় তারা। রাসেলের এক ওভারে আসে ৩ রান। পরের ওভারে রোস্টন চেজের বলে আউট হন ডেভিড মিলার (৪)। ওই ওভারে আসে মাত্র ২ রান। এরপর রাসেল ৬ রান খরচ করে ওভার শেষ করেন।
১৪তম ওভারে ফের ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। চেজের করা ওভারের প্রথম বলেই বিদায় নেন ভালো খেলতে থাকা স্টাবস (২৯)। শেষ ৩ ওভারে তখন ১৯ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ক্রিজে স্বীকৃত ব্যাটার বলতে মার্কো ইয়েনসেন। ১৫তম ওভারে আসে ৬ রান।
১৬তম ওভারের প্রথম বলেই কেশভ মহারাজকে বিদায় করেন চেজ। ওভারের শেষ বলে চার হাঁকিয়ে লক্ষ্যটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন। তাতে শেষ ওভারে মাত্র ৫ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়। ভয় কাটিয়ে ১৭তম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন ইয়েনসেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওপেনার কাইল মেয়ার্সের ৩৪ বলে ৩৫ রান ও চেজের ৪২ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ভর করেই লড়াই করার মতো পুঁজি পায় বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকরা। শেষদিকে ৯ বলে ১৫ রান করে কিছুটা ভূমিকা রাখেন রাসেল। কিন্তু তাদের এই পুঁজি যথেষ্ট প্রমাণিত হয়নি।
এই জয়ে গ্রুপ ‘টু’ থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হলো দক্ষিণ আফ্রিকার। ৩ ম্যাচের সবকটিতেই জিতে ৬ পয়েন্ট হয়েছে তাদের। দুই ম্যচ জিতে তদের সঙ্গী হয়েছে ইংল্যান্ডও। ফলে সহ-আয়োজক হয়েও সুপার এইট থেকেই বিদায় নিতে হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (চেজ ৫২, মায়ার্স ৩৫, রাসেল ১৫, জোসেফ ১১*; শামসি ৩/২৭, রাবাদা ১/১১, ইয়ানসেন ১/১৭, মহারাজ ১/২৪, মার্করাম ১/২৮)
দক্ষিণ আফ্রিকা: (লক্ষ্য-১৭ ওভারে ১২৩) ১৬.১ ওভারে ১২৪/৭ (স্টাবস ২৯, ক্লাসেন ২২, ইয়ানসেন ২১*, মার্করাম ১৮; চেজ ৩/১২, রাসেল ২/১৯, জোসেফ ২/২৫)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেটে জয়ী (ডিএলএস)
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তাব্রেইজ শামসি (দক্ষিণ আফ্রিকা)
অনলাইন ডেস্ক :
বিপিএলে রাজশাহীকে সাত উইকেটে হারাল ফরচুন বরিশাল। আজ ৬ জানুয়ারি সোমবার ১৬৮ রানের জবাবে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান করেছে তামিম ইকবালের দল।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ১৬৮ রান করে রাজশাহী। উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৩০ রান। চতুর্থ ওভারে মোহাম্মদ হারিসকে ২২ রানে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন তানভীর আহমেদ। দ্বিতীয় উইকেটে জিসান আলমের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দিতে থাকেন তারা। এই জুটি ভেঙ্গে দেন ফাহিম আশরাফ। পাকিস্তানি এই অলরাউন্ডারের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন জিসান। ২৭ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। পরে ইয়াসির আলীর সঙ্গে জুটি বেঁধে রানের চাকা সচল রাখেন বিজয়।
পরে ইয়াসিরকেও ফিরতে হয়। শাহিন আফ্রিদির এলবিডব্লিউর ফাঁদে পা দেওয়া এই ব্যাটার ২৩ বলে করেন ৩৭ রান। অন্যদিকে শাহিনের বলেই বোল্ড হন বিজয়। ৩৫ বলে ৩৯ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। শেষ দিকে রায়ান বার্ল ১১ বলে ১০ ও আকবর আলী ৯ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন।
শাহিন আফ্রিদি ৪ ওভারে ২০ রান খরচ করে ২ উইকেট নেন।
জবাবে খেলতে নেমে বেগ পেতে হয়নি বরিশালকে। তামিম ইকবাল ৪৮ বলে ৮৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। প্রীতম কুমার করেছেন ৩ রান। এ ছাড়া কাইল মায়ার্সের ব্যাট থেকে আসে ১১ বলে ২৪ ও তাওহিদ হৃদয় করেন ১৩ রান। ২৪ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক।
অনলাইন ডেস্ক :
আজ ২৩ জুন সেন্ট ভিনসেন্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগে ব্যাট করে আফগানিস্তান তুলেছিল ১৪৮ রান। ১১৮ রানের উদ্বোধনী জুটির পর আকস্মিক ধস না নামলে সেটা হতে পারত আরও বড়। কিন্তু যা হয়েছে বোলিং সহায়ক উইকেটে সেটাই ছিল যথেষ্ট। বল হাতে পাওয়ারপ্লে শেষের আগেই তিন উইকেট তুলে নেন আফগান বোলাররা। মাঝে কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়তে হলেও, শেষদিকে আরেকবার নিজেদের বোলিং কারিশমা দেখান এশিয়ান দেশটির বোলাররা।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট আবারও চোখ রাঙাচ্ছিল। আফগান সমর্থকদের কেউ কেউ হয়তো সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ম্যাক্সওয়েলের অমন ইনিংসের কথাই ভাবছিলেন। সেই ম্যাচে ৯১ রানে ৭ উইকেট তুলে নিয়েও ম্যাক্সওয়েলের ডাবল সেঞ্চুরিতে হারতে হয় আফগানিস্তানকে। তবে আজ আর তেমনটা হয়নি। ম্যাক্সওয়েলকে ৫৯ রানে থামিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছে আফগানিস্তান।
সেন্ট ভিনসেন্টে আজ অস্ট্রেলিয়াকে ১৪৯ রানের লক্ষ্য দিয়ে ২১ রানে হারিয়েছে আফগানরা। আফগানিস্তানের বোলারদের দাপটে অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে গেছে ১২৭ রানে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটি আফগানিস্তানের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে একা হাতে লড়াই করে আফগানদের জেতা ম্যাচ হারিয়ে দিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। টি-টোয়েন্টিতেও সেই শঙ্কা জাগিয়ে তুলছিলেন ম্যাক্সি। আফগান বোলিংয়ের বিপক্ষে বাকি অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটাররা যেখানে অসহায় আত্মসমর্পণ করছেন; সেখানে দলকে জয়ের পথ দেখাচ্ছিলেন তিনি। তবে এদিন গল্পের শেষটা দেখে আসতে পারেননি ম্যাক্সি। ইনিংসের ১৫ তম ওভারে দলীয় ১০৬ রানে ব্যক্তিগত ৪১ বলে ৫৯ রানের অনবদ্য এক ইনিংসের শেষ হয় ম্যাক্সির। সেই সঙ্গে শেষ হয় অজিদের জয়ের স্বপ্ন। ম্যাক্সিকে ফিরিয়ে ম্যাচে ফেরা আফগানরা শেষমেশ বিশ্বমঞ্চে অজিদের বিপক্ষে পেয়ে যায় প্রথম জয়টা। তাও ২১ রানের ব্যবধানে। আর তাতেই সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা টিকে আছে তাদের। ঝুঁকিতে পড়ে গেছে অজিদের সেমিতে খেলা।
অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে দিয়েছেন মূলত গুলবদিন। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। তিনি আউট করেছেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, টিম ডেভিড ও প্যাট কামিন্সকে। বোলিংয়ে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন আফগানিস্তানের অন্য বোলাররা। ট্রাভিস হেডকে শূন্য রানে ফেরানো নাভিন উল হকও ২০ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
প্রথম ওভারে হেডকে ফেরানো নাভিন তৃতীয় ওভারে ফেরান অধিনায়ক মিচেল মার্শকে। এরপর ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে ডেভিড ওয়ার্নাকে আউট করেন মোহাম্মদ নবী। ৩২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ৩৯ রানের জুটি গড়েন ম্যাক্সওয়েল ও স্টয়নিস। এরপরই মুলত গুলবদিন ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেন। তাঁর বাউন্সারে ইনিংসের ১১তম ওভারে আউট হন স্টয়নিস। টিম ডেভিডও উইকেটে থিতু হতে পারেননি। তাঁকেও আউট করেছেন গুলবদিন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ টানা ৮ ম্যাচ জেতার পর হার দেখল অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে শুরুটা দারুণ করে আফগানিস্তান। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান ওপেনিংয়ে গড়েন ১১৮ রানের জুটি। যদিও তুলনামূলক কঠিন উইকেটে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের সামনে খুব একটা দ্রুত গতিতে রান তুলতে পারেননি তাঁরা। দুজনে ১১৮ রানের জুটি গড়েছেন ৯৫ বলে। ৪৮ বলে ৫১ রান করেছেন ইব্রাহিম। গুরবাজ করেছেন ৪৯ বলে ৬০।
এমন জুটির পর বড় একটা সংগ্রহই হওয়ার কথা ছিল আফগানিস্তানের। তবে শেষ ৫ ওভারে মাত্র ২৯ রান করতে পারে তারা। এর কারণ প্যাট কামিন্সের হ্যাটট্রিক। বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে আবারও হ্যাটট্রিক করেছেন এই পেসার। এবারও দুই ওভার মিলিয়ে তাঁর হ্যাটট্রিক। উইকেট নিয়েছেন ১৮তম ওভারের শেষ বল এবং ২০তম ওভারের প্রথম দুই বলে।
আজ কামিন্সের হ্যাটট্রিকের শুরুটা হয় ১৮ ওভারের শেষ বলে রশিদ খানকে আউট করে। এরপর ২০তম ওভারের প্রথম দুই বলে আউট করেন করিম জানাত ও গুলবদিন নাইবকে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টানা দুই ম্যাচে কোনো বোলারের হ্যাটট্রিকের ঘটনা এই প্রথম। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্বিতীয়। এর আগে ১৯৯৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে হ্যাটট্রিক করেছিলেন পাকিস্তান কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
আফগানিস্তান : ২০ ওভার ১৪৮/৬
অস্ট্রেলিয়া : ১৯.২ ওভার ১২৭/১০
ফল : আফগানিস্তান ২১ রানে জয়ী।
অনলাইন ডেস্ক :
টানা দুই ম্যাচ হারের পর টানা দুটি জিতে ফাইনালের টিকিট কেটেছিল রংপুর রাইডার্স। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের জন্য সৌম্য-রিশাদদের জাতীয় দলে ডাক পড়ায় বিপাকে পড়েছিল রংপুর। ফাইনালে অংশগ্রহণ করা নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। সেই অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠে ফাইনালেও বাজিমাত করেছে বিপিএলের এই ফ্রাঞ্চাইজি। আজ ৭ ডিসেম্বর শনিবার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার দল ভিক্টোরিয়াকে ৫৬ রানে হারিয়ে গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন হল রংপুর রাইডার্স।
রংপুরের জয়ের নায়ক সৌম্য সরকার। তার বিধ্বংসী এক ইনিংসে ভর করেই ৩ উইকেটে ১৭৮ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করায় রংপুর। ওই রান তাড়া করতে নেমে ১২২ রানে অলআউট হয় ভিক্টোরিয়া। ২০১৭ সালে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আবার শিরোপার স্বাদ পেল বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। ম্যাচসেরার পাশাপাশি মোট ১৮৮ রান করে টুর্নামেন্টসেরাও হয়েছেন সৌম্য।
প্রথম গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম শিরোপা জয়ের গৌরবের পাশাপাশি রংপুরের অর্থযোগও কম নয়। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ৫ লাখ ডলার প্রাইজমানি পেয়েছে তারা। প্রাথমিক পর্বের দুটি জয়ের জন্য আরও ৫০ হাজার ডলার তো আছেই।
গায়ানা ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের আয়োজনে প্রথমবারের মতো আয়োজিত গ্লোবাল সুপার লিগে অংশই নেয়ার কথা ছিল না রংপুরের। বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে ফরচুন বরিশালকে টুর্নামেন্টের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল গায়ানা। তবে বরিশাল সদিচ্ছা না দেখানোয় রংপুর রাইডার্স সুযোগ পায় টুর্নামেন্টটিতে। আর সেই সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে রংপুর। বিশ্বের পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের পাঁচ দলকে নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টের প্রথম শিরোপা জিতে নিয়েছে দলটি।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন রংপুরের অধিনায়ক সোহান। সৌম্য ৫৪ বলে ৭ চার আর ৫ ছক্কায় খেলেন হার না মানা ৮৬ রানের ইনিংস। আরেক ওপেনার স্টিভেন টেইলর ৪৯ বলে ৪টি করে চার-ছক্কায় করেন ৬৮ রান। সাইফ হাসান আউট হন ৪ বলে ৬ করে, ২ রানে অপরাজিত থাকেন নুরুল হাসান সোহান। ভিক্টোরিরার তিন বোলার নেন একটি করে উইকেট।
জবাবে শেখ মেহেদি-রিশাদ হোসেনদের তোপে দাঁড়াতেই পারেনি ভিক্টোরিয়া। ওপেনার জো ক্লার্কের ২২ বলে ৪০ ছাড়া বলার মতো স্কোর করতে পারেননি আর কেউ। বাকি ব্যাটাররা কেউ বিশের ঘরও ছুঁতে পারেননি। রংপুর রাইডার্সের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন হারমীত সিং। শেখ মেহেদী এবং সাইফ হাসান শিকার করেন দুটি করে উইকেট। এ ছাড়াও কামরুল হাসান এবং রিশাদ হোসেন নেন এক উইকেট।
দিন শেষে হেসেছেন সৌম্যই। তাঁর ইনিংসই গড়ে দিয়েছে রংপুরের জয়ের ভিত্তি। যে জয় রংপুরকে এনে দিয়েছে গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম আসরের ট্রফি আর রংপুরের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ট্রফি। এর আগে ২০১৭ সালে বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রংপুর।
৫ দলের গ্লোবাল সুপার লিগে লিগ পর্বে চার ম্যাচের প্রথম দুটিতেই হেরেছিল রংপুর রাইডার্স। নুরুল হাসানের নেতৃত্বাধীন দলটিকে ভিক্টোরিয়াও হারিয়ে দিয়েছিল ১০ রানে। তবে শেষ দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স ও পাকিস্তানের লাহোর কালান্দার্সকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে শেষ পর্যন্ত ট্রফিতেই হাত রেখেছে রংপুর। ম্যাচসেরার পাশাপাশি মোট ১৮৮ রান করে সৌম্য হয়েছেন টুর্ণামেন্টসেরাও।
অনলাইন ডেস্ক :
লিওনেল মেসি, লাউতারো মার্তিনেজের মতো তারকারা খেলোয়ার ছাড়াই আর্জেন্টিনাকে জয় উপহার দিলেন থিয়াগো আলমাদা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে গতিময় শটে খুঁজে নিলেন জালের ঠিকানা। তাতে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিতের পথে এক পা দিয়ে রাখল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। আজ ২২ মার্চ শনিবার লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে উরুগুয়ের মাঠে ১-০ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা। নিয়মানুযায়ী, কনমেবল থেকে আসন্ন ফিফা বিশ্বকাপে সরাসরি সুযোগ পাবে ৬ দল। পয়েন্ট টেবিলের সাত নম্বর দলের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট এগিয়ে থাকায় পরের পাঁচ ম্যাচ থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট পেলেই আর্জেন্টিনা নিশ্চিত করবে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট।
এদিন ৫৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ছয়টি শট নেয় উরুগুয়ে, এর দুটি ছিল লক্ষ্যে। অন্য দিকে আর্জেন্টিনার ১২ শটের চারটি ছিল লক্ষ্যে। তবে দলকে সাফল্যের মুখ দেখতে অপেক্ষা করতে হয় ৬৮তম মিনিট পর্যন্ত। জুলিয়ান আলভারেজের কাছ থেকে বল পেয়ে জাল খুঁজে নেন আলমাদা। জাতীয় দলের হয়ে সাত ম্যাচ খেলে নিজের তৃতীয় গোল করলেন লিঁওর এ মিডফিল্ডার।
অবশ্য ঘরের মাঠ সেন্টেনারিও স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনাকে শুরু থেকে চেপে ধরে উরুগুয়ে। তবে গোলের জন্য প্রথম শট নেয় আর্জেন্টিনাই। ১৯তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে চেষ্টা করলেও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি লিয়ান্দ্রো পারেদেস। আট মিনিট পর এনজো ফার্নান্দেজের দুর্বল বাঁকানো শট গ্লাভসে নেন উরুগুয়ে গোলরক্ষক সার্জিও রোচেত। দুই দল মিলিয়ে লক্ষ্যে এটাই প্রথম শট।
সফরকারীদের জমাটরক্ষণে একের পর এক আক্রমণ ব্যর্থ হয় উরুগুয়ে। ৩৩তম মিনিটে দূরপাল্লার শটে চেষ্টা করেন উরুগুয়ে মিডফিল্ডার জর্জিয়ান দে আরাকায়েস্তা। সতর্ক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ ঝাঁপিয়ে গ্লাভসে নেন বল। ছয় মিনিট পর দুরূহ কোণ থেকে জুলিয়ানো সিমেওনের দারুণ শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন রোচেত।
ম্যাচের প্রথম কর্নারে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মেসির অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচে আর্জেন্টিনা দলকে নেতৃত্ব দেওয়া নিকোলাস ওতামেন্দি। ৪৩তম মিনিটে আলমাদার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক রোচেত। ফিরতি বলে ফার্নান্দেজের শট স্লাইড করে ব্যর্থ করে দেন হোসে মারিয়ে হিমেনেস। নষ্ট হয় প্রথমার্ধের সবচেয়ে ভালো সুযোগ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আক্রমণে সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। ৪৮তম মিনিটে আলমাদার চমৎকার শট কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন রোচেত। তিন মিনিট পর ৩৫ গজ দূর থেকে ফেদে ভালভের্দের শট যায় মার্তিনেজের গ্লাভসে। ৬২তম মিনিটে জিয়ালিয়ানো সিমিওনের শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনার গোলের অপেক্ষা বাড়ান রোচেত।
পরের মিনিটে জুলিয়ান আলভারেজের দুর্দান্ত রক্ষণ চেরা পাসে আলমাদা একটু বাড়তি সময় নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেরিয়ে এসে ক্লিয়ার করেন উরুগুয়ে গোলরক্ষক। কিন্তু ছয় মিনিট পর আর দলকে রক্ষা করতে পারেননি রোচেত। আলভারেজের কাটব্যাকে বল পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে তীব্র গতির শটে জাল খুঁজে নেন আলমাদা। ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি উরুগুয়ে গোলরক্ষক।
বাকি সময়ে গোলের পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কেউই। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে অহেতুক ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন আর্জেন্টিনা ফরোয়ার্ড নিকো গঞ্জালেস। শেষ মুহূর্তে ১০ জনের দল নিয়ে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা। অথচ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগের দেখায় মেসিদের নিয়েই ঘরের মাঠে উরুগুয়ের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। সে দিক থেকে এটা প্রতিশোধেরও ম্যাচও ছিল। যেটা খুব ভালোভাবেই আদায় করলেন স্ক্যালোনির শিষ্যরা।
এ জয়ে শীর্ষে থাকা আর্জেন্টিনা দুইয়ে থাকা ইকুয়েডরের সঙ্গে ৬ আর সাতে থাকা বলিভিয়ার সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ালো ১৫। আগামী বুধবার ঘরের মাঠে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। সে ম্যাচে ১ পয়েন্ট পেলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে বিশ্বকাপের পরের আসরে তাদের খেলা। অথবা বলিভিয়া পয়েন্ট খোয়ালেই নিশ্চিত হয়ে যাবে আলবিসেলেস্তেদের টিকিট।
লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ১৩ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে ১০ দলের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে আলবিসেলেস্তেরা। ২২ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে উঠে এসেছে একুয়েডর। ২১ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে ব্রাজিল। ২০ পয়েন্ট নিয়ে পরের দুটি স্থানে যথাক্রমে উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে। এদিকে টানা তিন হারে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে নেমে গেছে কলম্বিয়া। সাতে থাকা বলিভিয়ার ১৩ পয়েন্ট।
নারী অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর মালয়েশিয়ায় শুরু হচ্ছে। আগামীকাল শনিবার টুর্ণামেন্টের উদ্বোধনী দিন মাঠে নামছে বাংলাদেশ। নেপালের মুখোমুখি হবে ইয়াং টাইগ্রেসরা। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টায়।
২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ১৬ দলকে নিয়ে প্রথমবারের মত নারী অনূর্ধ্ব-১৯-টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবারও চার গ্রুপে ১৬টি দল অংশ নেবে। ‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, নেপাল ও স্কটল্যান্ড।
গত ডিসেম্বরে নারী অনূর্ধ্ব-১৯-টি টোয়েন্টি এশিয়া কাপে বাংলাদেশ রানার্স-আপ হয়েছিল। ভারতের কাছে ফাইনালে হেরেছিল তারা।
এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরে ভালো করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। দেশ ছাড়ার আগে দলের অধিনায়ক সুমাইয়া আক্তার বলেছিলেন, ‘আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ সামনে এগোতে চাই। আমাদের দলটা অনেক ভালো। দলের শক্তির জায়গা কোনটি আমরা তা জানি। সুতরাং নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে ভাল কিছু হবে আশা করছি।’
নেপালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের পর ২০ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া ও ২২ জানুয়ারি স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। গ্রুপ ম্যাচে বাংলাদেশের বড় প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। এই টুর্ণামেন্টের প্রথম আসরে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ।
তাই এবার অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয় বাংলাদেশ। সুমাইয়া বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া বা অন্য যে দলই হোক আমরা আমাদের খেলা খেলবো। আমরা মনে করি বরং অস্ট্রেলিয়াই আমাদের ভয় পাবে।’ বিশ্বকাপের আগে দু’টি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে সুপার ওভারে হারায় তারা।
এবার চার গ্রুপের প্রতিটি থেকে সেরা তিনটি করে দল সুপার সিক্স পর্বে খেলার সুযোগ পাবে। সেখানে দুই গ্রুপের শীর্ষ দু’টি করে দল সেমিফাইনালের টিকিট পাবে। ৩১ জানুয়ারি সেমিফাইনাল এবং ২ ফেব্রুয়ারি ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ স্কোয়াড : সুমাইয়া আক্তার (অধিনায়ক), আফিয়া আসিমা ইরা (সহ-অধিনায়ক), মোসাম্মৎ ইভা, ফাহমিদা ছোঁয়া, হাবিবা ইসলাম পিংকি, জুয়াইরিয়া ফেরদৌস, ফারিয়া আক্তার, ফারজানা ইয়াসমিন, আনিসা আক্তার সুবহা, সুমাইয়া আক্তার সুবর্ণা, নিশিতা আক্তার নিশি, লাকি খাতুন, জান্নাতুল মাওয়া, সাদিয়া আক্তার ও সাদিয়া ইসলাম।
স্ট্যান্ড বাই : আশরাফি ইয়াসমিন অর্থি, লেকি চাকমা, অরভিন তানি, মেহেরুন নেসা।