বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৪ শহীদ পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তা

নবীনগর, 11 September 2024, 453 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত নবীনগর উপজেলার ৪ শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হয়।

banner

আজ ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর মহিলা ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময়সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নবীনগর পৌর জামায়াতে ইসলামীর আমির মু. মোখলেছুর রহমানের সভাপতিত্ব প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও কুমিল্লা জেলা মহানগরীর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ গোলাম ফারুক, জেলা নায়েবে আমির কাজী ইয়াকুব আলী, জেলা সেক্রেটারি মোবারক হোসেন আকন্দ, উপজেলা সেক্রেটারি আবদুল হাফেজ, পৌর সভার সেক্রেটারি সাইফুর রহমান বাসার, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত প্রমুখ।

মাওলানা আমির হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, শহীদ পরিবারের সদস্য মো: শফিকুল ইসলাম, মো. নানু মিয়া, সুফিয়া বেগম।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে একটা স্বৈরাচার সরকার দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে গুম, খুন, জুলুম, নির্যাতন চালিয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। রক্ত পিপাসু দল আওয়ামীলীগ, দেশ ও দেশের মানুষকে ভারতের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছিল। ছাত্র-জনতা সহ্যৃ করতে না পেরে এ জালিম সরকারকে বিদায় দেয়ার জন্য রাজপথে নেমে ছিলো। এ আন্দোলন যারা জীবন দিয়ে বাস্তবায়ন করেছেন তাঁরা শহীদ।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নবীনগরের যারা শহীদ হলেন নবীনগর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের বিটিবিশারা গ্রামের মো: সামুসুজ্জামানের ছেলে জাহেদুজ্জামান তানভীন (২৬) শহীদ হন রাজধানী ঢাকার উত্তরায়। বিটঘর গ্রামের মোঃ শফিকুল ইসলামের ছেলে তানজিল মাহমুদ সুজয় (১৯), শহীদ হওয়ার স্থান ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইল, গৌরনগরের মোঃ নানু মিয়ার ছেলে মো.কামরুল ইসলাম (২১) শহীদ হওয়ার স্থান মিরপুর ১০, থোল্লাকান্দি গ্রামের মৃত আব্দুল মোমিন মিয়ার ছেলে মো: রফিকুল ইসলাম(২৪), শহীদ হওয়ার স্থান চিটাগাং রোড, হিরাঝিল, ঢাকা। তাঁদের ৪ জনের লাশ নবীনগরে নিজ নিজ এলাকায় দাফন করা হয়েছে।

Leave a Reply

ইটালি প্রবাসী দিদারের মা আনোয়ারা বেগমের…

শফিকুল ইসলাম বাদল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর Read more

কসবায় মায়ের অভিযোগে ছেলের কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে Read more
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : পুকুরের পানিতে ডুবে ইসরাত জাহান নোভা (৯) Read more

ইরান কখনও আপোস করবে না: আয়াতুল্লাহ…

অনলাইন ডেস্ক : জায়নবাদীদের সাথে ইরান কখনও আপোস করবে না Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পাঁচ দিনের…

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানার পৃথক Read more
ফাইল ছবি

প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে…

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহতদের কল্যাণ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক…

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর Read more

কারাগারে হাজতির মৃত্যু

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে জুনায়েদ মিয়া (৩২) নামে Read more

আখাউড়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

চলারপথে রিপোর্ট : কৃষকদের সেচ দক্ষতা বাড়াতে পানি ব্যবহারকারী গ্রুপের Read more

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ১১তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য: রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের Read more

স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে…

অনলাইন ডেস্ক : স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে অনশন Read more

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো ২১…

অনলাইন ডেস্ক : ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিশরসহ ২১টি Read more

নবীনগরে ঢেঁড়স চাষ করে স্বাবলম্বী কৃষক

নবীনগর, 30 May 2023, 1463 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর ঢেঁড়স চাষ করে বেকারত্ব ঘুঁচিয়েছেন শিবপুর ইউনিয়নের কাজুলিয়া গ্রামের খাইরুল বাসার ও ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের (দ. পাড়া) জয়নাল মিয়া। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে তাঁরা এখন তাদের পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। স্বল্প সময় ও অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় আরও অনেকেই এখন ঢেঁড়স চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

banner

সরেজমিনে দেখা যায়, খাইরুল বাশার এ বছর ৪০ শতক এবং জয়নাল মিয়া ২০ শতক জমিতে ঢেঁড়স চাষ করেন। তাঁরা নিজেরাই জমি থেকে ঢেঁড়স উত্তোলন করছেন। আলাপ কালে জয়নাল মিয়া জানান- তার বাবা অসুস্থ্য হওয়ায় ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। এরপর আর ভাল কোন চাকরি না পাওয়ায় বাড়ীর পাশের জমিতে শুরু করেন সবজি চাষ। তিনি এক বিঘা জমি নিয়ে শুরু করেন ঢেঁড়সের চাষ। স্বল্প সময়ে এই ঢেঁড়স চাষ করে বেশ লাভবানও হয়েছেন তিনি। তিনি বলেন- এখানকার মাটি বেশ উর্বর থাকায় তার উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়েছে। তার এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়স চাষ করতে ৬/৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার টাকার বিক্রি করেছেন। একদিন পরপর জমি থেকে ঢেঁড়স উত্তোলন করতে হয়। এতে তেমন কোন শ্রমিকের (লেবার) প্রয়োজন হয় না। জমি থেকেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন- “ আমি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে বারি উদ্ভাবিত ‘বারি ঢেঁড়স-১’ জাতের ঢেঁড়সের চাষ করেছি। বাজারে ঢেঁড়সের দাম ভাল থাকায় লাভবানও হচ্ছি। এ বছর ঢেঁড়সের পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় খরচও কম হয়েছে ”।

এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার জগলুল হায়দার বলেন- “এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ঢেঁড়সে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। আর ঢেঁড়সের বিভিন্ন জাতের মধ্যে ‘বারি ঢেঁড়স-১’ এর ফলন ভাল। এটা চাষ করা লাভ জনক। তবে তার মত শিক্ষিত অনেক যুবকরাই এগিয়ে আসছে। আমরা কৃষি অফিস তাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করব”।

নবীনগরে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত

নবীনগর, 29 October 2023, 952 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার লাহোর ফতেপুর গ্রামে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি বনাম ব্যারিস্টার জাকির হোসেন একাদশের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৮ অক্টোবর শনিবার বিকেলে এই খেলা উপভোগ করেন উপজেলার লাউরফতেহপুর গ্রামে কয়েক হাজার দর্শক।

banner

খেলা শুরুর আগে পুরো মাঠ ঘুরে বেড়ান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। দূর-দূরান্ত থেকে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের হাত নাড়িয়ে অভিবাদন জানান।

খেলা দেখতে আসা শিহাব মাহমুদ (৩১) নামে এক যুবক বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যারিস্টার সুমনের অনেক কার্যক্রম দেখেছি। আজ মূলত সরাসরি তাকে দেখার জন্যই মাঠে এসেছি।

থানাকান্দি গ্রাম থেকে আসা তরুণ শিতাব (১৯) বলেন, ছোটবেলায় আমাদের মাঠে এই বর্ষার সময়ে অনেক বড় বড় ফুটবল খেলার আয়োজন হতো। এখন আর তেমনটা হয় না। সরাসরি এতবড় আয়োজনে ফুটবল খেলা অনেক বছর পর দেখলাম।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম বলেন, এতো দর্শক উপস্থিতিই প্রমাণ করে ফুটবল খেলা এদেশে এখনো কত জনপ্রিয়। মাদক থেকে তরুণ ও যুব সমাজকে দূরে রাখতে এসব আয়োজন ভূমিকা রাখে। এজন্য এসব আয়োজন করতে আমাদের সমাজের কর্তাদের ভাবতে হবে।

খেলা শুরু হয় বিকেল ৪টায়। ম্যাচে প্রথমার্ধে কারো পক্ষে কোনো গোল হয়নি। এতে টান টান উত্তেজনা ছিল খেলাটিতে। রেফারির বাঁশি বাজার ১ মিনিট পূর্বে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমির জালে বল ঢুকিয়ে দেয় ব্যারিস্টার জাকির হোসেন একাদশ। এই গোলে দর্শকদের উল্লাসে পুরো মাঠ কেঁপে ওঠে। দীর্ঘ সময় গোল না হওয়ায় শেষ মুহূর্তের গোলটি যেন দর্শকদের মনে আনন্দ এনে দিয়েছে। খেলার সমাপ্তি ঘটে ১-০ গোলে। পরাজিত হয় ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি।

খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, বিলের মাইর শেষ রাতে। শেষ মিনিটে গোল দিয়ে নবীনগরের জাকির হোসেন জয় লাভ করেছে। গোলটি যে দিয়েছে সাইজে তেমন বড় না, কিন্তু যে গোল রক্ষক ছিল সে বিশাল দেহের অধিকারী। নবীনগরের ছোট ছেলেটি কিন্তু হবিগঞ্জের বিশাল দেহের খেলোয়াড়কে দেখে ভয় পায়নি। নির্ভয়ে জালে বল ঢুকিয়ে দিয়েছে। এর মানে বড় দেখেই ভয় পেতে হবে বিষয়টি এমন না। নবীনগরের ছেলেদের দেখলেই পুরো বাংলাদেশ সস্মান করবে।

তিনি আরও বলেন, ভক্ত ও ফুটবল প্রেমীদের দোয়া থাকলে এক দিন ফুটবল ফেডারেশনের দুর্নীতির দূর করতে সক্ষম হবো। এ সময় যুব সমাজকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও মাদক থেকে দূরে এসে সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়তে সহযোগিতার আহ্বান জানান ব্যারিস্টার সুমন।

সৌদি আরব প্রবাসী নজরুল ইসলাম নজুর সভাপতিত্বে খেলাটি উদ্বোধন করেন গণপূর্ত বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহমেদ ভূঁইয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পীরজাদা শহিদুল হারুন, পায়রা সমুদ্র বন্দরের উপসচিব আতিকুল ইসলাম, নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম, ওসি মাহাবুব আলম, অধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন, অধ্যাপক মিয়া মো. শিপন, সিনিয়র সাংবাদিক এম কে জসিম উদ্দিন, গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু প্রমুখ।

নবীনগরে ২২ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা

নবীনগর, 9 May 2024, 683 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায় আসন্ন ৬ষ্ঠ পর্যায়ে আগামী ৫ জুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আজ ৯ মে বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ৯জন, ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে ৪ জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।

banner

প্রার্থীরা হলেন চেয়ারম্যান পদে-সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস (আওয়ামীলীগ), কাজী জহির উদ্দিন সিদ্দিক টিটু (আওয়ামীলীগ), মোহাম্মদ শাহ আলম (আওয়ামীলীগ), মোঃ ফারুক আহমেদ (বিএনপি সমর্থক), এইচ এম আল আমিন আহমেদ (আওয়ামীলীগ), আবদুল মতিন (দলীয় পরিচয় জানা যায়নি), মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান (আওয়ামীলীগ), মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির (আওয়ামীলীগ), মোছাম্মৎ নুরুন্নাহার বেগম (আওয়ামীলীগ)।

২১ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩২ হাজার ৩১০জন। মনোনয়ন পত্র জমা শেষে বিকেলে রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুল্লা আল মামুন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

নবীনগরে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মানববন্ধন

নবীনগর, 20 October 2024, 388 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কার্যক্রম বহাল রাখার দাবিতে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২০ অক্টোবর রবিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা পরিষদ রোডে মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর তারা স্মারক লিপি প্রদান করেন।

banner

এসময় উপস্থিত ছিলেন নবীনগর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন, নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর আজ্জম, রসুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মনির হোসেন, নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আক্তারুজ্জামান, বিদ্যাকুট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাকারুল হক, ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মুসা, লাউর ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, বড়িকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লাল মিয়া, বিটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী জাফর দস্তগীর, বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনসহ উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত মেম্বারগণ।

কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুফতী আমজাদ হোসাইন আশরাফী বলেন, যদি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অপসারণ করা হয়, তাহলে বিগত সরকারের আমলের ১৬ বছরে যত সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে তাদের সবাইকে অপসারণ করতে হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে আমাদের দাবি একটাই আমাদেরকে অপসারণ না করে আমাদের মেয়াদ পর্যন্ত বহাল রেখে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিতে হবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই।

নবীনগরে বর্ষাকালে ভাটি অঞ্চলে থৈথৈ জলে দাঁড়িয়ে থাকে হিজল গাছের সারি

নবীনগর, 26 May 2023, 1497 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
সুবিন্যস্থ বেণি জুড়ে গাছে দুলছে আশ্চর্য সুন্দর হিজল ফুল। দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। প্রতি বছর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরের হাওড় বেষ্টিত ভাটির অঞ্চলে এ ফুলের দেখা মিলে, এখন সেই সময়। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরে ফিরেই এসেছে হিজলের কথা। কবির ভাষায়- “চোখে তার হিজল কাঠের রক্তিম/চিতা জ্বলে”। একই ভাবে হিজল বনে ঘুঘু দেখে উচ্ছ্বসিত কবি লিখেছেন- “পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে”। অবশ্য কবিতার বাইরে বাস্তবে হিজল গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গণসংগীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস সুরে সুরে বলেছেন- “হাওড়ের পানি নাই রে হেথায়, নাই রে তাজা মাছ/বিলের বুকে ডালা মেলা, নাই রে হিজল গাছ”। অর্থাৎ দিন দিন হিজল গাছের সংখ্যা কমছে। বর্তমানে গাছটি প্রায় দুর্লভ। এ গাছটি সংস্কৃত নাম নিচুল, এ ছাড়াও জলন্ত ও নন্দীক্রান্ত নামেও পরিচিত। হিজল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম- Barringtonia acutangula। এটি Lecythidaceae পরিবারের সদস্য। এটি বাংলাদেশের ভাটির অঞ্চলে বহুকাল ধরে টিকে থাকলেও এর আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং ভারত। গাছ মাঝারি আকারের, উচ্চতা ৫-১০ মিটার পর্যন্ত, এর ডালপালা থাকে ছড়ানো, বাকল যথেষ্ট পুরো, ঘনছাই রঙের হয়ে থাকে, বীজ থেকে গাছ হয়। খাল, বিল, নদী, ডোবা, হাওর ইত্যাদি জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। এটি পানির নিচে কয়েক মাস জীবিত থাকতে পারে। এ গাছের মূল আকর্ষণ লাল ও গোলাপি রঙের ছোট ছোট ফুল, ফুলের আছে মিষ্টি ঘ্রাণ। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে- “ফুলের মঞ্জুরী ৬-১৫ ইঞ্চি লম্বা। বহুপুষ্পিক ফুলের বৈশিষ্ট্যে হিজল অনন্য”।

banner

হিজল বীজের অনেক ঔষুধি গুনাগুন আছে- মাথা ও কপাল ব্যথা হলে হিজল বীজ শুকিয়ে গুড়া করে দুই চামচ পরিমাণ এক কাপ দুধসহ সকালে এবং বিকেলে খেলে মাথা ব্যাথা কমে যায়। পেটে গ্যাস হলে, ঢেকুর উঠলে, পেট ফাঁপা হলে হিজল বীজ চূর্ণ করে গরম মসলা সহ খেলে কিছুক্ষনের মধ্যে সেই সমস্যা চলে যায়। চোখ উঠলে, চোখ লাল হলে, চুলকায়, পানি পড়ে। সেই সময় বীজ নিয়ে পাথরে ঘসে চন্দনের মত চোখের চারি পাশে লাগিয়ে দিলে কিছুক্ষণ রাখার পর ছোট নেকড়া ভিজিয়ে মুছে দিলে যন্ত্রণা কমে যায়। হিজল ফুল গভীর রাতে ফুটে, সকাল হতে না হতেই ঝড়ে যায়। হিজল সাধারণত জলমগ্ন বা জলসংলগ্ন অঞ্চলে ভাল হয়। তাই নবীনগরের ভাটির অঞ্চলের গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে টিকে আছে হিজল গাছ। নদী সংলগ্ন গ্রাম গুলোতে নৌকা দিয়ে গেলে চোখে পড়ে অপূর্ব হিজল গাছের সারি কারন- হিজলের আবাস নিচু এলাকা/ হাওড় অঞ্চল।

নবীনগরের মত দেশের হাওড় বেষ্টিত সাত জেলার ৪০টি উপজেলায় কম বেশি প্রায় প্রতি গ্রামেই দেখা যায় হিজল। নিচু জলাঅঞ্চলে মাছের অভয়রাণ্য তৈরিতে এই গাছের ডাল ব্যবহৃত হয়। ভরা বর্ষায় নবীনগরের ভাটি অঞ্চলে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সময় নৌকা থেকে চারপাশে তাকালে থৈ থৈ জলের মধ্যে দেখা যায় হিজল গাছ। যেন ঘাটে নৌকা লাগতেই স্বাগত জানাচ্ছে হিজলের ফুল। স্থানীয়দের খুব চেনা এ গাছটি শুকনো মৌসুমেও দিব্যি থাকে। এমনকি রাজধানী শহরের একাধিক উদ্যানেও দেখা যায় হিজল গাছ। বর্তমানে কিছু সরকারি বেসরকারি প্র্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এ গাছ লাগানো হচ্ছে। হিজলের প্রাণশক্তি অনেক বেশি, দীর্ঘজীবী গাছ, বিধ্বংসী বন্যা কিংবা তীব্র খরাও একে কুপোকাত করতে পারে না। জল এবং স্থল দুই জায়গাতেই এরা সাবলীল, এদের এই আলাদা বৈশিষ্ট্য ও অভিযোজনের কারনে হিজল সবার দৃষ্টি কাড়ে।