চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরকীয়ার জেরে বাচ্চু মিয়া হত্যা মামলায় ভায়রা ভাইকে মৃত্যুদণ্ড ও স্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা দায়রা জজ শারমিন নিগার এই রায় প্রদান করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বাড়াইলচর গ্রামের তুজু মিয়া মোল্লার ছেলে রফিকুল ইসলাম। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগমকে। একই সাথে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ের ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রফিকুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেওয়া হয়। রিনা বেগমকে ফের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বড়াইলচর গ্রামের হারিছ মিয়ার ছেলে পেঁয়াজ, রসুন ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়ার লাশ খল্লা গ্রামের কলাবাগানে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বাচ্চু মিয়ার ভাই আলমগীর মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে বাঞ্ছারামপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলার তদন্ত করে।
তদন্ত শেষে আদালতে দায়ের করা অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) উল্লেখ করা হয়, রফিকুল ইসলাম এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। বাচ্চু মিয়াকে একটি মোটরসাইকেলে করে নির্জনস্থানে নিয়ে প্রথমে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ও পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাচ্চু মিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। মূলত বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগমের সঙ্গে রফিকুল ইসলামের পরকীয়ার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। রফিকুল ইসলাম রীনা বেগমের খালাতো বোনের জামাই।
পরকীয়া চলা অবস্থায় রিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন রফিকুল। তখন রিনা জানান বাচ্চুকে খুন করতে পারলে তাকে বিয়ে করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রফিকুল এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং ঘটনার পর অন্যদের মতো বাচ্চু মিয়াকে খুঁজতে থাকে। এলাকার লোকজন সন্দেহবশত ওই দুজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২১ মার্চ শুক্রবার বিকালে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন রাধানগর মাদ্রাসা মাঠে এ দোয়া ও ইফতার মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুইয়া।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম, হোমনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সাবেক ও সিনিয়র সহসভাপতি আহ্বায়ক লিয়াকত আলী ফরিদ বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু লাঈম, সহসভাপতি হাজী আব্দুল মতিন, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক একেএম মূসা, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান মাসুম, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএইচজেড শুকরী সেলিম, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সাংগঠনি সম্পাদক হারুন আকাশ, বাঞ্ছারামপুর পৌর বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক সাঈদ, পৌর বিএনপি সদস্য সচিব সালে মূসা, বাঞ্ছারামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন সরকার রাজিব, উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাঈদ, পৌর বিএনপির সহসভাপতি শামিম আহমেদ, বাঞ্ছারামপুর পৌর যুবদলের সদস্য সচিব ফয়সাল বিন ইউসূফ, উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক আবু কালাম, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বাঞ্ছারামপুর বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব লিটন সরকার, উপজেলা ছাত্রদল নেতা আশিকুর রহমান অন্তু, কলেজ ছাত্রদল নেতা সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন এবং ইফতি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরে মুক্তিপন না দেয়ায় ফাতেহা আক্তার (৭) নামের এক শিশুকে হত্যার পর লাশ ডোবার ফেলে রাখে অপহরণকারিরা।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের শুটকিকান্দি গ্রামের একটি ডোবা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশু ফাতেহা আক্তার ওই গ্রামের প্রবাস ফেরত বাছেদ মিয়ার মেয়ে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত নাজিম (১৯) ও আলাউদ্দিন (২১) কে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত নাজিম শিশু ফাতেহা আক্তারের ফুফাতো ভাই এবং দরিয়াদৌলত গ্রামের রাজ্জাক মিয়ার ছেলে ও গ্রেফতারকৃত আলাউদ্দিন শুটকি কান্দি গ্রামের মমিন মিয়ার ছেলে।
এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নূরে আলম জানান, শিশু ফাতেহা আক্তার গত ৩০ আগস্ট বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজ করেও তার সন্ধ্যান পায়নি। এরই মধ্যে শিশুর পরিবারে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারিরা। তবে কোন প্রকার মুক্তিপণ দেয়নি তার পরিবার। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ দুই যুবককে আটক করে। পরে তাদের মোবাইল ফোনে শিশুটিকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি সংক্রান্ত চ্যাটিং পাওয়া যায়। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা জানায়, শিশুটিকে হত্যার পর ডোবার পানিতে লুকিয়ে রাখা হয়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডোবা থেকে শিশু ফাতেহার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি বলেন, এ ঘটনায় শিশুর পরিবার থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় মেঘনা নদী থেকে অবাধে লুট হচ্ছে বালু। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার একটি চক্র অবৈধভাবে প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে। বালু লুটের ফলে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো যেমন ভাঙন ঝুঁকিতে, তেমনি বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এছাড়া চড়া মূল্যে বালুমহাল ইজারা নেওয়া বৈধ ইজারাদার প্রতিষ্ঠানও বিপাকে পড়েছে। গত ২২ ডিসেম্বর এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও নৌপুলিশকে ম্যানেজ করেই দিনের পর দিন চলছে বালু লুট। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙ্গা এলাকায়ও মেঘনা নদী থেকে বালু লুট করছে রায়পুরার আরেকটি চক্র।
আরও পড়ুন
শীগ্রই ‘কালনী এক্সপ্রেস’ ট্রেন যাত্রাবিরতি করবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি এলাকায় মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার একটি বালুখেকো চক্র। প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। যার বাজারমূল্য অন্তত প্রায় ৫০ লাখ টাকা। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অবাধে বালু লুট করে বিক্রি করছে ওই চক্রটি। রীতিমতো অস্ত্রে সজ্জিত ক্যাডার বাহিনীর পাহারায় দিনভর চলে বালু উত্তোলন। বালুখেকো চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন যুবদল নেতা কাইয়ূম মিয়া। তার সাথে আছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী। অবাধে বালু তোলার কারণে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি, কানাইগর ও শান্তিনগর গ্রাম।
অপরদিকে, নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙ্গা এলাকায় মেঘনা নদীতে ৫-৭টি ড্রেজার দিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে রায়পুরা উপজেলার অপর একটি চক্র। স্থানীয় বিএনপির কয়েকজনকে নিয়ে এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম। এই চক্রটি কয়েক মাস আগে নবীনগর উপজেলার চরলাপাং এলাকা থেকেও বালু উত্তোলন করে। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাঁচটি ড্রেজার জব্দ করে। সম্প্রতি ড্রেজারগুলো ছাড়ানোর পর আবারও ধরাভাঙ্গা এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। এসব গ্রামের বাসিন্দারা নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি বিলীন হওয়ার আতঙ্কে আছেন।
আরও পড়ুন
কসবায় ৫শ টাকার জন্য ফুফাতো ভাইয়ের হাতে মামাতো ভাই খুন
এদিকে, মেঘনা নদীর জাফরাবাদ বালু মহালটি প্রায় ৭৫ কোটি টাকায় ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়েছে মুন্সি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারার এক বছরের মধ্যে ইতোমধ্য ৯ মাস পেরিয়ে গেছে। মূলত এই মহালে বালুর জন্য আসা ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রায়পুরার বালুখেকো চক্রটি নিজেদের কাছ থেকে বালু কেনার জন্য বাধ্য করছে বলে অভিযোগ করছে মুন্সি এন্টারপ্রাইজ। এর প্রতিবাদ করায় বালুমহাল সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত মুন্সি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে ওই চক্রটি কয়েকবার এসে হামলাও চালিয়েছে।
মুন্সি এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নবীর হোসেন জানান, বৈধ ইজারাদার হয়েও আমরা নদী থেকে ঠিকমতো বালু উত্তোলন করতে পারছি না। সরকারি কোষাগারে যে টাকা দিয়ে মহাল ইজারা নিয়েছি, মেয়াদ ফুরিয়ে আসলেও সেই টাকা তুলতে পারছি না। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি রায়পুরার ওই চক্রটি ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে বালু কিনতে বাধ্য করে। যেহেতু তাদের ইজারা মূল্য দিতে হয়নি, সেহেতু তাদের পুরোটাই লাভ।
আরও পড়ুন
জমিতে সেচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত ১
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম এর জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। খুব দ্রুতই আমরা বড় রকমের অপারেশনে যাব। যেহেতু এটি বারবার হচ্ছে, সেজন্য শাস্তিও দ্বিগুণ হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
চলারপথে রিপোর্ট :
আকাশে মেঘ দেখলেই আঁতকে উঠছে শিশু শিক্ষার্থীরা। এই বুঝি ঝড় এলো, নামল বৃষ্টি। কালবৈশাখীতে উড়ে গেছে বিদ্যালয়ের একমাত্র টিনের ঘরের চালা। বিকল্প নেই বলে ভাঙা ঘরেই চলছে পাঠদান।
শনিবার রাতে কালবৈশাখীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র টিনের ঘরের চালা উড়ে গেছে। চালাবিহীন ঘরে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। রোদ ও বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করে ক্লাস করছে তারা। প্রখর রোদে ক্লাস বন্ধ, বৃষ্টি এলে তো কথাই নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের একমাত্র টিনের ঘরের চালা উড়ে সামনেই পড়ে রয়েছে। অফিস কক্ষের সব মালপত্র লন্ডভন্ড। বিধ্বস্ত টিনের ঘরেই চলছে পাঠদান। স্কুল ভবন বিধ্বস্ত হওয়ায় অনেকটাই কম শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। বিদ্যালয়ে একমাত্র শৌচাগারটিও বিধ্বস্ত। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পাশের বাড়িতে যেতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান মোল্লা বলেন, ‘স্কুলে আসলে ভয়ে থাকি কখন আবার ঝড় আসে। রোদের মধ্যেই আমরা ক্লাস করছি, বৃষ্টি আসলে আমাদের ছুটি। স্কুল ভবন ভেঙে যাওয়ায় অনেকে স্কুলে আসছে না।’
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিয়া সোমাইয়া বলেন, রোদের মধ্যে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়। আবার ভয়ে থাকতে হয় কখন আবার ঝড়-বৃষ্টি আসে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক রায়হানা ইয়াসমিন বলেন, ‘শনিবারের ঝড়ে আমাদের একমাত্র স্কুল ভবনটির চালা বিধ্বস্ত হয়েছে। আমাদের অন্য কোনো ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে রোদের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছি। বৃষ্টি হলে ছুটি হয়ে যাচ্ছে স্কুল।’
প্রধান শিক্ষক শাহাদাত হোসেন জানান, কালবৈশাখীতে স্কুলঘরের চালা উড়ে গেছে। বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। বিশেষ বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বরাদ্দ পেলে মেরামত করা হবে। এখন বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চালাবিহীন স্কুলঘরে পাঠদান করাতে হচ্ছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘স্কুল ভবনের চালা বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়টা শুনেছি। বিষয়টি ডিপিওকে জানানো হয়েছে। বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে ভবনটি সংস্কার করা হবে। আমরা বলেছি, প্রধান শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের বিকল্প কোনো জায়গায় পাঠদান করাতে।’
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল মনসুর জানান, বিষয়টি তাঁকে কেউ জানায়নি। তবে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বাঞ্ছারামপুরের ছলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইকারচর গ্রামে ইঞ্জিনিয়ার্স প্যালেসে বাঞ্ছরামপুর কল্যাণ সমিতির তত্ত্বাবধানে দিনব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দিনব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত হয়। পাইকারচর স্টুডেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আয়োজনে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। চট্টগ্রাম লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল মাহবুবুর রহমান মেমোরিয়াল হাসপাতলের একাধিক মেডিক্যাল টিম, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রায় দুই হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চক্ষু ও বিভিন্ন রোগের সেবা প্রদান করে।
শিবিরে বিশেষভাবে চোখের চিকিৎসার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীদের বিস্তারিত পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে বিনামুল্যে তাদের ওষুধ ও চশমা প্রদান করা হয়। সেই সাথে চোখে ছানিপড়া রোগীদের চিহ্নিত করে তাদের কে লায়ন্স হাসপাতাল চট্টগ্রামে নিয়ে বিনামূল্যে অপারেশন করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে মেডিসিন, গাইনি, শিশু রোগ, চর্ম, হৃদরোগ বিভাগে আসা রোগীদের পরীক্ষা করে প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয় ও বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকাস্থ বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) এসএম সাইদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও চক্ষু শিবির আয়োজন একটি মানবিক সময়োপযোগী উদ্যোগ। সমাজের দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য এ আয়োজন নিঃসন্দেহে আশীর্বাদস্বরূপ। আমি আশা করি, এ ধরনের উদ্যোগ নিয়মিত হলে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
প্রধান প্রকৌশলী (অব.) বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পাইকারচর স্টুডেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে দিনব্যাপী এই চিকিৎসা শিবিরে অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ উপস্থিত থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ঔষুধ প্রদান, চক্ষু রোগের চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় অপারেশনের
ব্যবস্থা করেন।
মকবুল ইঞ্জিনিয়ার মো. হোসেন বলেন, ‘গ্রামীণ দোরগোড়ায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এ শিবির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে চোখের চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ প্রদানের মাধ্যমে অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন। আমাদের লক্ষ্য হল্গেকেউ যেন অর্থাভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয়। এ ধরনের মানবিক উদ্যোগ নিয়মিত হলে সমাজের অসহায় মানুষরা আরও বেশি উপকৃত হবে। মুখ্য আলোচক ছিলেন পিএমজেএফ জেলা গভর্নর লায়ন মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ অপু।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকাস্থ বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শফিকুর রহমান, বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক ফারুক আলম, কনস্টেবল ইমন, জুয়েল প্রমুখ।
আয়োজকরা জানান, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে একত্রিত করে একটি মানবিক ও সচেতন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে তারা এলাকার সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে শিবিরে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জামাল আবু নাসের বলেন, গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এ শিবির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে চক্ষু চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ প্রদানের মাধ্যমে অনেকেই সরাসরি উপকৃত হবেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এ ধরনের মানবিক উদ্যোগকে সবসময় সহযোগিতা পাশে থাকবে। পাইকারচর স্টুডেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন বলেন, সমাজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে জনগণের কল্যাণে যে ধরনের ক্ষেত্রে আয়োজন হচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উদ্যোগ সমাজের দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা প্রাপ্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমি আশা করি, এই উদ্যোগে এলাকার মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন। পাইকারচর স্টুডেন্ট অ্যান্ড ইয়ুব ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্য সচিব মো. মহসিন বলেন, আমাদের এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমরা চাই, একটি বলেন, মানবিক সমাজ গড়ে উঠুক যেখানে অসহায় কেউ চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাবেন না। এই শিবিরে যারা আসবেন, তারা যেন সুস্থ হয়ে নতুনভাবে জীবনযাপন করতে পারেন সেটাই আমাদের প্রার্থনা। তিনি আরও পাইকারচর স্টুডেন্ট অ্যান্ড ইয়ুধ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি শুধু চিকিৎসা সেবা নয়। সংগঠনটি নিয়মিতভাবে খেলাধুলা, বৃক্ষরোপণ, শিক্ষামূলক কার্যক্রম সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে। এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করা এবং একটি মানবিক, সচেতন ও সুস্থ সমাজ গড়ে তোলাই সংগঠনটির মূল লক্ষ্য।