আখাউড়ায় বাসের ধাক্কায় অটোচালক নিহত

আখাউড়া, সারাদেশ, 28 December 2024, 636 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় আজ ২৮ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে বাসচাপায় এক অটোরিকশা চালক নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তি হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার কাশিনগর লিচুবাগান গ্রামের মো. আবদুল হোসেনের ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন (৩২)।

banner

আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দিগন্ত পরিবহনের একটি বাস যাত্রী নামাতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক মারা যান। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ না থাকায় লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

Leave a Reply

ইটালি প্রবাসী দিদারের মা আনোয়ারা বেগমের…

শফিকুল ইসলাম বাদল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর Read more

কসবায় মায়ের অভিযোগে ছেলের কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে Read more
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : পুকুরের পানিতে ডুবে ইসরাত জাহান নোভা (৯) Read more

ইরান কখনও আপোস করবে না: আয়াতুল্লাহ…

অনলাইন ডেস্ক : জায়নবাদীদের সাথে ইরান কখনও আপোস করবে না Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পাঁচ দিনের…

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানার পৃথক Read more
ফাইল ছবি

প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে…

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহতদের কল্যাণ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক…

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর Read more

কারাগারে হাজতির মৃত্যু

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে জুনায়েদ মিয়া (৩২) নামে Read more

আখাউড়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

চলারপথে রিপোর্ট : কৃষকদের সেচ দক্ষতা বাড়াতে পানি ব্যবহারকারী গ্রুপের Read more

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ১১তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য: রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের Read more

স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে…

অনলাইন ডেস্ক : স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে অনশন Read more

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো ২১…

অনলাইন ডেস্ক : ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিশরসহ ২১টি Read more

হেডফোন লাগিয়ে কথা বলার সময় ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু

সারাদেশ, 4 April 2025, 122 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মেহেদী হাসান (২৭) নামের এক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পড়ুয়া যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ৩এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌরসভার বাউসি পপুলার রেলওয়ে ব্রিজ এলাকার রেল লাইনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মেহেদি পৌর এলাকার শিমলাপল্লী গ্রামের ইতালি প্রবাসী লাঞ্জু মিয়ার ছেলে। তিনি জামালপুর জসিম উদ্দিন টেকনিক্যাল কলেজে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং (ইলেকট্রিক্যাল) পড়ছিলেন।

banner

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে পপুলার রেলওয়ে ব্রিজপাড় এলাকায় বেড়াতে যান মেহেদী। এসময় কানে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইনের পাশ দিয়ে হাটছিলেন তিনি। এদিকে জামালপুর থেকে ছেড়ে আসা ভূয়াপুর গামী আন্তঃনগর জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন বাউশি ব্রীজ এলাকায় আসলে কয়েকবার হর্ন দিলেও মেহেদী শুনতে পাননি। একপর্যায়ে ট্রেনটি খুব কাছাকাছি চলে আসলে ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে মাথায় ধাক্কা লাগে। এসময় তিনি ছিটকে নিচে খাদে পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কতর্ব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পরে পথিমধ্যে বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আশীষ চন্দ্র দে বলেন, কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে বসে গান শোনার কারণে মেহেদির মাথায় ট্রেনের ধাক্কা লাগে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করলে পথেই তার মৃত্যু হয়।

আখাউড়ায় যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

আখাউড়া, 6 November 2024, 357 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় মোহন মিয়া (২৬) নামে এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ ৬ নভেম্বর বুধবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া পৌরশহরের তারাগন এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত মোহন মিয়া ওই এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে।

banner

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মোহন মিয়ার স্ত্রী প্রবাসে যান। প্রতিদিনই তাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে কথা হতো। গত রাতে খাবার খেয়ে নিজ ঘরে ঘুমাতে যান মোহন মিয়া। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় পরিবারের লোকজন তাকে ডাকাডাকি করে। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে জানালা দিয়ে দেখে টিনের ঘরের তীরের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় মোহন মিয়া ঝুলে আছেন। স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিলে দ্রুত এসে সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহতের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে মোহনের স্ত্রী সৌদি আরব গেছে। সন্ধ্যার দিকে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে শুনেছি। তাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা ছিল কিনা বলতে পারছি না। তার একটা সন্তান রয়েছে। এভাবে সে মরে যাবে, তা কল্পনাও করতে পারছি না।

আখাউড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল হাসিম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধ নিহত

সারাদেশ, 23 March 2025, 145 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
সড়ক দুর্ঘটনায় মোজাম্মেল হোসেন (৭০) নামে এক বৃদ্ধ পথচারী নিহত হয়েছেন। নিহত মোজাম্মেল হোসেন হচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের চাঁইপাড়া গ্রামের মৃত জয়নালের ছেলে। আজ ২৩ মার্চ রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের ধোপপুকুর এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

banner

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে সাইকেলযোগে নিজ জমিতে কাজ করতে যাওয়ার পথে সোনামসজিদ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের ধোপপুকুর এলাকায় পৌঁছালে পিছন দিক থেকে একটি ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে তিনি মারা যান। শিবগঞ্জ থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আখাউড়ায় মাদক রাখার দায়ে নারী আটক

আখাউড়া, 10 July 2023, 1092 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় বিপুল পরিমাণ ভারতীয় স্কাফ সিরাপসহ আঁখি আক্তার নামে এক নারীকে আটক করেছে আখাউড়া থানা পুলিশ। তবে আঁখি আক্তার মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও মাদক ব্যবসায়ীর গচ্ছিত রাখা স্কাফ সিরাপ তার গোসলখানায় পাওয়ায় আঁখি আক্তারকে আটক করা হয়। এসময় তার গোসলখানায় থাকা ১০০ বোতল ভারতীয় স্কাফ সিরাপ উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত সংলগ্ন আনোয়ারপুর গ্রামের আঁখি আক্তারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আঁখি আক্তার ওই গ্রামের ওমান প্রবাসী সুমনের স্ত্রী।

banner

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের পুলিশ প্রবাসী সুমনের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় বাড়ির গোসলঘর থেকে ১০০ বোতল ভারতীয় স্কাফ সিরাপ পাওয়া যায়। পরে স্কাফ সিরাপসহ আঁখি আক্তারকে আটক করা হয়।

আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসাদুল ইসলাম জানায়, আটককৃত আঁখি আক্তার মূলত মাদক ব্যবসায়ী না। তার বাড়িটি সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় ওপার থেকে আসা মাদকের চালান তার বাড়িতে রেখে সুযোগমত অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হত। বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আঁখি আক্তার টাকা নিতেন। কিছুদিন থেকে এমন একটি খবর আমাদের কাছে ছিল। রবিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে স্কাফ সিরাপসহ তাকে আটক করি। তার বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে সোমবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়।

আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আখাউড়া, কসবা, জাতীয়, নাসিরনগর, বিজয়নগর, রাজনীতি, সরাইল, 9 January 2023, 7618 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু। দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লিখা হয়- ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।’
জনগণ নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছো, তোমরা রক্ত দিয়েছো, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘একটা কথা-আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি-ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যারা অন্য লোক আছে অন্য দেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক বাংলায় কথা বলে না, তাদের বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি তাদের উপর হাত তুলো না আমরা মানুষ, মানুষ ভালোবাসি। ‘তবে যারা দালালি করেছে যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে’ উল্লেখ করে জাতির পিতা বলেন, ‘তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, একজনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমায় আপনারা পেয়েছেন। আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিলো। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাবো। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার তাঁর নির্দেশিত যুদ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের যুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ বলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেয়া হয় এবং যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বাসস।