অনলাইন ডেস্ক :
এক যুগেরও বেশি সময় আগে মালয়েশিয়ান তরুণী সিটি হাসনার সাথে নাটোরের যুবক আনিছ রহমানের পরিচয় হয়। এরপর দু’জনের মধ্য গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। দীর্ঘ ১৪ বছর পর প্রেমের টানে অবশেষে নাটোরের গুরুদাসপুরে এসেছেন মালয়েশিয়ান তরুণী সিটি হাসনা (৩২)।
৪ জানুয়ারি শনিবার সকালে গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর এলাকায় মায়ের সাথে প্রেমিকের বাড়িতে আসেন ওই তরুণী।
আনিছ রহমান (৪২) নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর এলাকার জলিল রহমানের ছেলে।
পরিবারেরর সদস্যরা জানান, ২০১০ সালে মালয়েশিয়ায় এক কর্মক্ষেত্রে আনিছের সাথে সিটি হাসনার পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্য গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। দীর্ঘদিন ১৪ বছর ধরে চলছে তাদের প্রেমের সম্পর্ক। পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে দু’জনের বাগদান সম্পন্ন হয়। তবে ভিসা জটিলতায় কারণে ওই তরুণী বাংলাদেশে আসতে পারেননি। তবে বাংলাদেশি যুবক আনিছ মাঝে মাঝে মালয়েশিয়ায় যেতেন। অবশেষে শনিবার সকালে ওই মালয়েশিয়ান তরুণী নাটোরের গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এলাকায় প্রেমিক যুবকের বাড়িতে আসেন। সাথে ছিলেন তার মা। আজ ৫ জানুয়ারি রবিবার নাটোর আদালতে তাদের বিয়ে হওয়ার কথা রয়েছে।
ছোট ভাই হক সাহেব বলেন, আমার ভাই মালয়েশিয়া থাকাকালীন তাদের মধ্য প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তুতি নিলেও নানা জটিলতায় তা হয়নি। আমার ভাই প্রেমের জন্য এত বছর অপেক্ষা করেছেন। দীর্ঘ ১৪ বছর পর রবিবার আদালতের মাধ্যমে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা অনেক আনন্দিত। দীর্ঘ দিন প্রেমের পর তারা একটি সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে। পারিবারিকভাবে বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। পরিবারের সবাই আনন্দিত। সবাই তাদের জন্য দোয়া করবেন- তারা যেন সুখে থাকে।
স্থানীয় খুবজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। মালয়েশিয়া থেকে একজন তরুণী খুবজিপুরে এসেছেন। তিনি যে উদ্দেশ্যে নাটোরে এসেছেন, তা যেন সফল হয়। তাদের দ ‘জনের জন্য শুভ কামনা ও দোয়া রইল।
প্রেমিক আনিছ রহমান বলেন, ১৪ বছরের প্রেমের সম্পর্ক আমাদের। আমাদের পারিবারিকভাবে দু’জনের বিয়ে হবে। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন। যেন আমরা সুখে জীবনযাবন করতে পারি।
অনলাইন ডেস্ক :
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পা (২১)। মাত্র ১৫ দিনের ছুটি পেয়েছেন তিনি। প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন নিজ বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামের নগর ইউনিয়নের দোগাছি গ্রামে। টুম্পা ঐ গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুর রাহিমের মেয়ে। বাড়িতে এসে মা-বাবা ও ছোট বোনের সাথে সময় কাটানোর কথা তার। কিংবা গ্রামের বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা, গল্প ও আড্ডা দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি তার দরিদ্র ভ্যান চালক বাবা ও পরিবারের আর্থিক অনটনের কথা চিন্তা করে বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে মেরিগাছা বাজারে বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সিদ্ধ ডিম বিক্রি করছেন। একই সঙ্গে বিক্রি করছেন কাঁচা ডিম। টুম্পার এই ডিম বিক্রির ঘটনা এলাকায় সাড়া ফেলেছে।
মঙ্গলবার মেরিগাছা বাজারে টুম্পার সিদ্ধ ডিমের দোকানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খোলা আকাশের নিচে খড়ির চুলা জ্বলছে এবং সেখানে বড় কড়াইয়ে শতাধিক ডিম সিদ্ধ হচ্ছে। পাশে প্লাস্টিকের টুলে বসে ডিমের খোসা ছাড়াচ্ছেন টুম্পা এবং খোসা ছাড়ানোর পর ডিমের ওপর লবণ-ঝাল ছিটিয়ে তা ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। টুম্পার ভ্রাম্যমাণ দোকানে একটি সিদ্ধ ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫টাকা এবং একসঙ্গে দুইটি নিলে ২৫ টাকা। পাশাপাশি কাঁচা ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৪২ টাকা দরে।
জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পা বলেন, খুবই কম লাভে আমি ডিম বিক্রি করছি। প্রতি হালি কাঁচা ডিমে লাভ হচ্ছে মাত্র ৩ টাকা এবং সিদ্ধ ডিমে লাভ হচ্ছে গড়ে হালি প্রতি ৪-৬ টাকা। সিদ্ধ ডিমের ক্ষেত্রে খড়ি, নষ্ট ডিম বা অনেক সময় খোসা ছাড়াতে গিয়ে ডিম নষ্ট হয়। যার ফলে এর লাভ মাঝে মধ্যে সামান্য ওঠানামা করে।
প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ ডিম বিক্রি করেন তিনি এবং গত দুইদিনে তার লাভ হয়েছে ১৪৭০ টাকা। ক্রেতাদের কাছে ডিম বিক্রির ফাঁকে টুম্পা আরও জানান, ‘বাবা ভ্যান চালিয়ে আমাদের দুই বোনকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। বর্তমানে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। গত সপ্তাহে আমি বাড়িতে এসেছি, ১৫ দিন ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাবো। ডিম বিক্রির মাধ্যমে আমার যাতায়াতের টাকাও জোগাড় হবে।
ডিম বিক্রি করার প্রসঙ্গে টুম্পা জানায়, বিভিন্ন মানুষ নানা কথা বলবে। তবে এতে আমার কিছু আসে-যায় না। কারণ আমি সৎ ভাবে আয় করছি। শহরে এই কাজ করলে কেউ কিছু বলে না। আমি নিজেকে অতি ক্ষুদ্র ও গরীব উদ্যোক্তা মনে করছি। এটাই আমার কাছে আনন্দের ও সুখের। আমি অল্প লাভে ডিম বিক্রি করে স্থানীয় অতিমাত্রায় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মেসেজ দিতে চাই; অতি মুনাফার সুযোগ থাকলেও তার সুযোগ গ্রহণ না করা।
টুম্পার বাবা ভ্যান চালক আব্দুর রাহিম জানান, আমার ভ্যানে করেই আমি আমার মেয়েকে এই বাজারে নিয়ে আসি ও নিয়ে যাই। টুম্পা অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ছুটিতে এসে আমাদের প্রতি মায়া করে সে ডিম বিক্রি করছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক খরচ হয়। তার বাবা হিসেবে এই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমার নাই। তাই সে নিজেই সৎ উপার্জন করে টাকা যুগিয়ে নিচ্ছে যেন আমার কাছে টাকা না চাইতে হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শামসুজ্জোহা জানান, টুম্পা স্কুল জীবন থেকেই সংগ্রাম করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সে অনেক মেধাবী। ছুটিতে বাড়িতে এসে ডিম বিক্রির এই ভালো কাজটি অনুপ্রেরণামূলক ও প্রশংসনীয়।
অনলাইন ডেস্ক :
ভারতে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব দুই বন্ধুর হাতে। তাঁরা হলেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী এবং অ্যাডমিরাল দিনেশ ত্রিপাঠি। এমন ঘটনা ভারতে এই প্রথম।
অ্যাডমিরাল ত্রিপাঠি গত ১ মে নৌবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন। আর আগামীকাল (১ জুলাই) সোমবার লেফটেন্যান্ট জেনারেল দ্বিবেদী সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।
দুজন ১৯৭০–এর দশকের প্রথম দিকে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সৈনিক স্কুল রেওয়ায় লেখাপড়া করতেন। ওই স্কুলে তাঁরা পঞ্চম শ্রেণি থেকে এ-লেভেল পর্যন্ত একসঙ্গে লেখাপড়া করেছেন। তাঁদের দুজনের রোল নম্বরও কাছাকাছি ছিল। লেফটেন্যান্ট জেনারেল দ্বিবেদীর রোল নম্বর ছিল ৯৩১ এবং অ্যাডমিরাল দিনেশ ত্রিপাঠির রোল নম্বর ছিল ৯৩৮।
স্কুলের প্রথম দিকে তাঁদের দুজনের মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল। স্কুলের পরেও দুই বন্ধু একে অন্যের খোঁজ নিতেন। যোগাযোগ রাখতেন। দুজনকেই চেনেন এমন একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সামরিক বাহিনীতে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব দুই বাহিনীর সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে বড় ভূমিকা রাখবে।
দুই বন্ধুর দুই বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সময়ও প্রায় কাছাকাছি। ব্যবধান মাত্র দুই মাসের।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল দ্বিবেদী দীর্ঘদিন ভারতের সেনাবাহিনীর নর্দান আর্মি কমান্ডার ছিলেন। এএনআই এর তথ্য মতে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল দ্বিবেদী ১৯৮৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলসে যোগ দেন।
অনলাইন ডেস্ক :
এ এক অভূতপূর্ব দৃশ। নিজের পাপের বোঝার কথা স্মরণ করে লাখ লাখ মুসল্লির অবিরল অশ্রুধারায় ভিজেছে ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দান। তাঁদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আরাফাত ময়দান প্রকম্পিত হয়েছে।
আজ ২৭ জুন মঙ্গলবার এ ময়দানে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র হজ পালন করেছেন হজযাত্রীরা। এসময় হাজিদের কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও পাপমুক্তির আকুল বাসনার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় মহান আল্লাহর কাছে অঝোরে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। নামাজ আদায় করার পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থেকেছেন।
মহান আল্লাহর অশেষ রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় সার্বক্ষণিক জিকির করেছেন। প্রায় সারাক্ষণ তালবিয়া পড়েছেন। আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য প্রকাশ করছেন।
এর আগে, পবিত্র হজ পালনের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিতে সৌদি আরবে আসা বিশ্বের ২৫ লাখ মুসল্লি হজের দ্বিতীয় রুকন আদায়ের জন্য সোমবার সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানেই অবস্থান করেন তাঁরা। আরাফাতের দিনকে মনে করা হয় বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। এদিন মহান আল্লাহ বান্দাদের পাপ মাফ করে দেন।
করোনা মহামারি পেছনে ফেলে এবার হজ আবার আগের রূপে ফিরে এসেছে। বলা হচ্ছে, এবারের হজে সবচেয়ে বেশি মুসল্লি এসেছেন। এই সংখ্যা ২৬ লাখেরও বেশি।
ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানের তিন দিকে জাবাল বা পাহাড়। এই পাহাড়ের নাম রহমতের পাহাড় (জাবালে রহমত)। দোয়া কবুলের স্থান হওয়ায় কোনো কোনো হজযাত্রী জাবালে রহমত পাহাড়ে উঠেও ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন। কোনো কোনো হজযাত্রী আরাফাত ময়দানে যাঁর যাঁর মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে ইবাদত বন্দেগী করেছেন। আরাফাত ময়দানে একটি উঁচু পিলার রয়েছে। এই পিলারটিও দোয়া কবুলের স্থান। আদি পিতা হজরত আদম (আ.) এবং আদি মা হাওয়া (আ.) আরাফাতের ময়দানে এসে পুনর্মিলনের সুযোগ পেয়েছিলেন। এ জন্য তাঁরা এই ময়দানেই মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছিলেন।
পাকিস্তানের ২৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী উসমান আরশাদ ৬ মাস হেঁটে এবার পবিত্র হজে এসেছেন। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে পেরে বাকরুদ্ধ তিনি। আর মিশরীয় ব্যবসায়ী ইয়াহিয়া আল ঘানামের আবেগ যেন হৃদয় ছোঁয়া। তিনি চোখের পানি সংবরণ করতে পারছেন না কিছুতেই। বললেন, পবিত্র হজে এসে গত ১৫ দিনে আমি দৈনিক এক ঘণ্টার বেশি ঘুমাইনি।
আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরা থেকে জোহরের নামাজের আগে মিম্বরে দাঁড়িয়ে আরবি ভাষায় হজের খুতবা পাঠ করা হয়। এবার খুতবা দিয়েছেন শায়খ ড. ইউসুফ বিন মোহাম্মদ। তিনি নামাজেও ইমামতি করেছেন। হজের খুতবা বাংলাসহ প্রায় ১৪টি ভাষায় অনুবাদ করে শুনানো হয়েছে।
খুতবার পর মসজিদে নামিরায় সমবেত মুসলমানরা এক আজান এবং দুই ইকামতে জোহর ও আছরের নামাজ এক সঙ্গে জামাতে আদায় করেন। মসজিদে নামিরা থেকে দূরে অবস্থান করা হজযাত্রীরা জোহর এবং আছরের নামাজ আলাদাভাবে আদায় করেন নিজেদের তাঁবুতে।
তাঁরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পর কিছু সময় পর্যন্ত অবস্থান করেন আরাফাতের ময়দানে। সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছু সময় পরে মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই আরাফাত ময়দান থেকে হজযাত্রীরা প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। মুজদালিফায় গিয়ে এশার নামাজের সময় এক সঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন। পরে সেখানেই খোলা আকাশের নীচে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে রাত যাপন করেন তাঁরা। রাতে প্রতীকী শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপের জন্য সংগ্রহ করেন ৭০টি পাথর।
আরাফাত ময়দানে আসার আগে হজযাত্রীরা গত ৮ জিলহজ পবিত্র হজ পালনের প্রথম আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে দু’দিকে পাহাড় পরিবেষ্টিত এলাকা মিনায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে অবস্থান করেন। হজযাত্রীদের মধ্যে পুরুষরা হজের প্রথম রুকন ইহরাম (শরীরের নিচের অংশে আড়াই হাত বহরের আড়াই গজের এক টুকরা কাপড় আর গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য একই বহরের তিন গজের এক টুকরা সাদা রংয়ের সেলাইবিহীন কাপড়) পরিধান অবস্থায় রয়েছেন। নারীরা আছেন পর্দায় আচ্ছাদিত। তাঁরা আগামী ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনা ও মক্কায় অবস্থান করবেন।
বুধবার ফজরের নামাজ আদায়ের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় অবশ্যই মুজদালিফায় অবস্থান করবেন হাজিরা। এরপর তাঁরা যাবেন মিনায়। সেখানে মিনার জামারায় (শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোঁড়ার স্থান) বড় শয়তানের উদ্দেশে প্রতীকী সাতটি পাথর নিক্ষেপ শেষে পশু কোরবানি এবং রাসুলুল্লাহর (সা.) আদর্শ অনুসরণে পুরুষরা মাথা মুণ্ডন করে গোসল করবেন। নারীরা চুলের অগ্রভাগ থেকে প্রায় এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল কাটবেন। এরপর হাজীরা সেলাইবিহীন ইহরাম খুলে ফেলবেন এবং পশু কোরবানি দেবেন। পরে তাঁরা হজের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ রুকন আদায়ের জন্য মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে সুবহে সাদিকের পর থেকে কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন।
কাবা শরীফের সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাতবার ‘সাঈ’ (দৌড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার ফিরে যাবেন মিনায়, নিজেদের তাঁবুতে। হজযাত্রীরা ১১ জিলহজ আবার মিনার জামারায় গিয়ে জোহরের নামাজের পর থেকে পর্যায়ক্রমে ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে সাতটি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। একইভাবে ১২ জিলহজ আবারও ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপের পর সন্ধ্যার আগে তাঁরা মিনা ত্যাগ করবেন। পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে সৌদি আরবের হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময়ে কাবা শরীফকে ফরজ তাওয়াফের মধ্য দিয়ে।
অনলাইন ডেস্ক :
রুপা, সুন্দরী, স্মার্ট, ভদ্র সুমিষ্ট কণ্ঠের অধিকারীনি। তার স্বপ্ন ছিল বিমানবালা হবার, হয়েছেনও তাই। তিনি নিজেকে মানুষের সেবাই নিয়োজিত করেন। সুনামের সঙ্গে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে তার ওপর অনেক খারাপ মানুষের নজর পড়ে। যারা একজন ছিলো সে যে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বসবাস করতো সেই ভবনের এক ঝাড়ুদার। যুবক বয়সের সে ঝাড়ুদারকে রূপা বিভিন্ন সময় নিজের কাজের জন্য ডাকতেন। কথামত কাজ করে দিতেন। আর এই সুযোগটা নিয়েছে সেই ঝাড়ুদার।
জানা যায়, ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ভারতীয় বিমানবালাকে গলাকেটে হত্যা করে তার অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে কাজ করা এক ঝাড়ুদার যুবক। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরপরই তাকে আটক করা হয়েছিল এবং পরে এ বিষয়ে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন তিনি।
আজ ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফ্রি প্রেস জার্নাল। এর আগে গত রোববার মুম্বাইয়ের শহরতলীর আন্ধেরিতে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাট থেকে রুপাল ওগ্রে নামের ওই বিমানবালার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সংবাদমাধ্যম বলছে, নিহত বিমানবালা রুপাল ওগ্রে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের বাসিন্দা এবং এয়ার ইন্ডিয়াতে চাকরি পাওয়ার পর চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি মুম্বাই চলে যান। সেখানে তার বোন ও তার প্রেমিকের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
সম্প্রতি তার বোন এবং প্রেমিক— দু’জনেই মুম্বাইয়ের বাইরে যান। আর এরপর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে এই ঘটনায় সন্দেভাজন হিসেবে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ওই ব্যক্তির নাম বিক্রম অটওয়াল এবং তিনি ওই অ্যাপার্টমেন্টে ঝাড়ুদার হিসাবে কাজ করতেন।
ফ্রি প্রেস জার্নাল বলছে, ২৪ বছর বয়সী এয়ার হোস্টেস রুপাল ওগ্রেকে গলা কেটে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ৪০ বছর বয়সী এই অভিযুক্তকে মঙ্গলবার আন্ধেরির স্থানীয় আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় পেশায় ঝাড়ুদার বিক্রম স্বীকার করেন, তিনি রুপাল ওগ্রেকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভুক্তভোগীর বাধায় তিনি ব্যর্থ হন এবং একপর্যায়ে গলাকেটে হত্যা করেন।
শুনানি শেষে আদালত আসামিকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, অনেকবার ফোন করেও রুপালের কোনও সাড়া পাচ্ছিলেন না পরিবারের সদস্যরা। তাই বাধ্য হয়ে বন্ধুদের খোঁজ নিতে বলেছিলেন তারা। বন্ধুরা এসে ফ্ল্যাটটি ভেতর থেকে তালাবন্ধ দেখতে পেয়ে খবর দেয় পুলিশে। পরে পুলিশ এসে গত রোববার রাত ১১টার দিকে ভেতরে প্রবেশ করলে ফ্ল্যাটের বাথরুমের কাছে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।
এরপরই সন্দেভাজন হিসেবে বিক্রমকে আটক করে পুলিশ। অভিযুক্ত এই ব্যক্তি একটি পরিচ্ছন্নতা সংস্থার হয়ে কাজ করেন এবং গ্রেপ্তারের পরপরই তার অপরাধের কথা স্বীকার করেন। যদিও অপরাধ স্বীকার করার আগেই গ্রেপ্তার করার সময় তার কাপড়ে রক্তের দাগ খুঁজে পায় পুলিশ।
বেশ কয়েক ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদের পর বিক্রম অটওয়াল স্বীকার করে, হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগে গত শুক্রবার রুপাল ওগ্রের সঙ্গে তার ‘ঝগড়া’ হয়েছিল। মূলত পরিচ্ছন্নতার কাজ সঠিকভাবে না করার জন্য তাকে ‘বকাঝকা’ করেছিলেন রুপাল। আর এটিই অভিযুক্তকে ক্ষুব্ধ করে।
ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তার ঊদ্ধৃতি দিয়ে ফ্রি প্রেস জার্নাল জানিয়েছে, ‘বিমানবালা রুপাল ওগ্রেকে ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে ধারালো বস্তু নিয়ে ওই নারীর ফ্ল্যাটে যায় বিক্রম। ভিকটিমকে ধর্ষণের জন্য সে প্রথমে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়, কিন্তু ওই নারী নিজেকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করায় ব্যর্থ হয় সে। নিজেকে বাঁচাতে ওই নারী অভিযুক্তকে ধাক্কা দেয়, হাত দিয়ে আঘাত করে এবং লাথিও মারে। অভিযুক্তের সারা শরীরে আঁচড়ের চিহ্ন রয়েছে, এতে সেখানে ধস্তাধস্তির প্রমাণ পাওয়া যায়।’
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘একপর্যায়ে ওই নারী ফ্ল্যাটের প্রধান দরজা দিয়ে বাইরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে অভিযুক্ত বিক্রম আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং ভুক্তভোগীকে গলাকেটে হত্যা করেন।’
অবশ্য পুলিশ আগেই জানিয়েছিল, বিক্রমের মাথায় আঘাত রয়েছে। তাদের ধারণা, রুপালকে আক্রমণ করার পর তিনি হয়তো প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। আর তাতেই মাথায় আঘাত পেয়েছেন বিক্রম।