ভারত নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে

জাতীয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 11 January 2025, 448 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের চারপাশে ভারতের পঞ্চাশটির মতো ড্যাম, ব্যারেজসহ হাইড্রোলিক অবকাঠামো রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে। মূলত ভারত নদীকে ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। নদীর ব্যাপারে ভারত অবিশ্বস্ত বন্ধু। ভারতকে নদীর ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায় না। তাই বাংলাদেশকে পানির বিষয়ে ভারতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্বনির্ভরশীল হতে হবে। তিনি বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের পঞ্চাশটিরও বেশি আন্ত:সীমান্ত নদী রয়েছে। তবে এসব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে দুই দেশের চুক্তি নিয়ে ভারতের আগ্রহ খুবই কম। যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই ভারতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখতে ডেল্টা প্রকল্প প্রহণ করতে হবে।

banner

আজ ১১ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা বিষয়ক সংগঠন ‘তরী’ আয়োজিত নদী সম্মিলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর পূর্বপাড় কাশিনগর এলাকায় নদী রক্ষায় একসাথে শ্লোগানে এই সম্মিলনের আয়োজন করা হয়। এতে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী আরো বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি ভারত তার পশ্চিমাঞ্চলের ট্রান্সফার করতে চায়, যেটি বাংলাদেশের জন্য সমূহ বিপদ। ভারত থেকে যেসব নদীর শাখা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তাদের মধ্যে ব্যাপক পরিমাণ পানি বঙ্গোপসাগরে জমে। বর্ষাকালে ১ লক্ষ ৪০ হাজার কিউবিট মিটার পানি এসব নদী দিয়ে বহমান হয়। তবে সেসব নদী থেকে গ্রীষ্মকালে ৫% পানি বাংলাদেশে আসে। গ্রীষ্মকালে ভারতে পানি তো দেয়ই না, উল্টো গঙ্গারে পানি তারা ব্যাপক ভাবে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পানি যখন বেশি দরকার তখন কম দেয়, যখন কম দরকার তখন বেশি পানি দিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে। সিলেট এবং ফেনীর বন্যার সেগুলোর প্রমাণ। আর এগুলো নিয়ে ভারত ভৌগলিক পলিটিক্সের অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করে। এ সময় তিনি বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশব্যাপী নদীর দখল দূষণ বন্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা বাস্তবায়নের দাবি জানান।

নদী সম্মিলনে তরীর আহবায়ক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ও লেখক আমিন আল রশীদ, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট এ.কিউ.এম সোহেল রানা।

নদী সম্মিলনে তরীর আহবায়ক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ও লেখক আমিন আল রশীদ, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকে এ.কিউ.এম সোহেল রানা।

Leave a Reply

ইটালি প্রবাসী দিদারের মা আনোয়ারা বেগমের…

শফিকুল ইসলাম বাদল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর Read more

কসবায় মায়ের অভিযোগে ছেলের কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে Read more
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : পুকুরের পানিতে ডুবে ইসরাত জাহান নোভা (৯) Read more

ইরান কখনও আপোস করবে না: আয়াতুল্লাহ…

অনলাইন ডেস্ক : জায়নবাদীদের সাথে ইরান কখনও আপোস করবে না Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পাঁচ দিনের…

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানার পৃথক Read more
ফাইল ছবি

প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে…

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহতদের কল্যাণ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক…

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর Read more

কারাগারে হাজতির মৃত্যু

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে জুনায়েদ মিয়া (৩২) নামে Read more

আখাউড়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

চলারপথে রিপোর্ট : কৃষকদের সেচ দক্ষতা বাড়াতে পানি ব্যবহারকারী গ্রুপের Read more

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ১১তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য: রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের Read more

স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে…

অনলাইন ডেস্ক : স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে অনশন Read more

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো ২১…

অনলাইন ডেস্ক : ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিশরসহ ২১টি Read more

ডেঙ্গু মশা কামড়ায়, বিএনপি আগুন জ্বালায়: তথ্যমন্ত্রী

জাতীয়, রাজনীতি, 4 August 2023, 1386 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ডেঙ্গুর চেয়ে বিএনপিকে বেশি মারাত্মক বললেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু (এডিস) মশা কামড়ায়, আর বিএনপি আগুন জ্বালায়।

banner

আজ ৪ আগস্ট শুক্রবার সকালে রাজধানীর খামারবাড়ি গোল চত্বর এলাকায় কৃষক লীগ আয়োজিত এডিস মশা নিধন ও সচেতনতা তৈরি কর্মসূচি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু মারাত্মক, বিএনপি আরো বেশি মারাত্মক। ডেঙ্গুর চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে আরও বেশি মারাত্মক। ডেঙ্গু মশা কামড়ায়, বিএনপি আগুন জ্বালায়। বিএনপি গাড়ি পোড়ায়, মানুষ পোড়ায়, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারে। অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গু মশার চেয়েও বিএনপি মারাত্মক।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য সামাজিক আন্দোলন দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য সামাজিক আন্দোলন দরকার, রাজনৈতিক কর্মসূচি দরকার। কোনো দল আজ পর্যন্ত ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণ বা নিধনের জন্য কর্মসূচি দেয় নাই।

তিনি বলেন, করোনার মহামারিতে আমাদের নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতা করোনায় মারা গেছেন। আমাদের দলীয় ১২ জন সংসদ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আজকে দেশে হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে মারা গেছেন। অনেক দেশে আমাদের তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি। মৃত্যুর হারও সেখানে বেশি।

বিএনপির সমালোচনা করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, করোনার সময় মাঝেমধ্যে ফটোসেশন ছাড়া তাদের (বিএনপি) আর কোথাও দেখা যায়নি। এখন আছেন তারেক-জোবায়দার কেন শাস্তি হলো সেটা নিয়ে। তারা রাজনীতিটা জনগণের জন্য করে না। বিএনপি রাজনীতি করে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং তাদের পরিবারের জন্য।

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কৃষিবিদ সুব্রত কুমার দাস।

কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি আকবর আলী চৌধুরী, হোসনে আরা এমপি, আব্দুল লতিফ তারিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু, শামীমা আক্তার খানম প্রমুখ।

৫৮ কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেফতার

কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 26 January 2025, 462 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
র‌্যাব-৯ এর পৃথক অভিযানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৮ কেজি গাঁজাসহ ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব-৯, সিপিসি-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৯, সিপিসি-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আভিযানিক দল গতকাল ২৫ জানুয়ারি আনুমানিক ৬টা ২০ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর শহরের পুনিয়াউট রেলক্রসিং এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ৩০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে।

banner

এছাড়াও অপর এক অভিযানে র‌্যাব-৯, সিপিসি-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আভিযানিক দল গত ২৫ জানুয়ারি আনুমানিক ৯টা ৪০ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার রানিয়ারা বিষ্ণপুর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ২৮.১ কেজি গাঁজাসহ ১ জনকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত মো. রুহুল আমীন (২৮), কসবা উপজেলার বায়েক গ্রামের (সর্দার বাড়ি) মো. সহিদ মিয়ার ছেলে।

পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয় এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি ও জব্দকৃত আলামত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এছাড়াও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন র‌্যাব-৯, সিলেট এর গোয়েন্দা তৎপরতা এবং চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আখাউড়া, কসবা, জাতীয়, নাসিরনগর, বিজয়নগর, রাজনীতি, সরাইল, 9 January 2023, 7623 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু। দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লিখা হয়- ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।’
জনগণ নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছো, তোমরা রক্ত দিয়েছো, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘একটা কথা-আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি-ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যারা অন্য লোক আছে অন্য দেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক বাংলায় কথা বলে না, তাদের বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি তাদের উপর হাত তুলো না আমরা মানুষ, মানুষ ভালোবাসি। ‘তবে যারা দালালি করেছে যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে’ উল্লেখ করে জাতির পিতা বলেন, ‘তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, একজনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমায় আপনারা পেয়েছেন। আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিলো। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাবো। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার তাঁর নির্দেশিত যুদ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের যুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ বলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেয়া হয় এবং যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বাসস।

মানুষ পুড়িয়ে নির্বাচন বন্ধের চেষ্টা মেনে নেয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 24 December 2023, 730 Views,
ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ পুড়িয়ে নির্বাচন বন্ধের চেষ্টা মেনে নেয়া হবে না। কিছু মানুষ রাজনেতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। তাদের মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা বাংলার মাটিতে চলবে না।

banner

আজ ২৪ ডিসেম্বর রবিবার দুপুরে গণভবনে বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।

দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। সারাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না।

তিনি বলেন, সবার সমান অধিকার যেন নিশ্চিত হয়- এমন একটা সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ মানবতার কথা বলে।

আওয়ামী লীগ কোনো ধর্মীয় সংঘাত চায় না মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান বলেন, দেশের মাটি সবার। এখানে যে যার ধর্ম পালন করবে। আর সব ধর্মের মূলকথা মানুষের কল্যাণ।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়েছে। আর আসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে অনন্য নজির গড়েছে।

দেশের ভাবমূর্তি জোরদারে কাজ করুন: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 29 September 2023, 907 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরকে দেশের ভাবমূর্তি আরও জোরদারে আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে কাজ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের ভাবমূর্তি আরো উন্নত করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব, সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন।’

banner

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শনকালে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি শহিদ মিনার ও বঙ্গবন্ধু কর্নারসহ দূতাবাসের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। শেখ হাসিনা দূতাবাসে পৌঁছালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ফুলের তোড়া দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রী প্রথমে দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্নারে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে তিনি সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭ সালে এই চ্যান্সারি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ২০০০ সালে নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সালাউদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
সূত্র : বাসস