হজরত ওমর (রা.) যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন

ধর্ম, 12 January 2025, 635 Views,

ওমর ফারুক ফেরদৌস
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) আল্লাহর রাসুলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান একজন সাহাবি। ইসলামের আবির্ভাবের কয়েক বছর পর ইসলাম গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে তিনি সাহাবিদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত হন। সাহাবিদের মধ্যে আবু বকরের (রা.) পরই ছিল তার অবস্থান। নবিজি (সা.) তাকে ও আবু বকরকে সাহাবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। ওহাব আস-সুয়ায়ী থেকে বর্ণিত আলী (রা.) একদিন খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনারা কি জানেন নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে ? সবাই বললেন আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি বললেন, না, নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আবু বকর, তারপর ওমর। (মুসনাদে আহমদ: ৮৩৪)

banner

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন, আমার পরে আপনারা আমার সাহাবিদের মধ্যে আবু বকর ও ওমরের অনুসরণ করুন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৬৩)
ইসলামের আবির্ভাবের পর প্রথম কয়েক বছর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। অন্যান্য মক্কাবাসীর মতো তিনিও ইসলামের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি কুরাইশদের একতায় বিশ্বাস করতেন এবং ইসলামের উত্থানকে কুরাইশদের মধ্য বিভাজন সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করতেন। এক পর্যায়ে তিনি নবিজিকে (সা.) হত্যার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন বলে কিছু কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে ইসলামের জন্য কবুল করেন।

তিনি কততম মুসলমান ছিলেন এ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। অনেকের মতে তিনি ৩৯ জন পুরুষ এবং ২৩ জন নারীর ইসলাম গ্রহণের পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। অন্য একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, তিনি ৪০ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারীর পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, তিনি ৪৫ জন পুরুষ এবং ২১ জন নারীর পরে ইসলাম গ্রহণ করেন।

নিজের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণের আগে একদিন আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুঁজতে বের হলাম। দেখলাম তিনি আমার আগেই মসজিদে হারামে পৌছেছেন, আমি তার পেছনে দাঁড়ালাম। তিনি সুরা আল-হাক্কাহ পড়া শুরু করলেন। কোরআন কীভাবে আমার হৃদয়কে আকৃষ্ট করছে, তা দেখে আমি অভিভূত হলাম। মনে মনে বললাম, কুরাইশরা যেমন বলেছে, ইনি নিশ্চয়ই কবি। পরক্ষণেই তিনি পড়লেন,

إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ. وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍ قَلِيلًا مَّا تُؤْمِنُونَ

নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রাসুলের আনীত বাণী। এটা কোনো কবির কথা নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর। (সুরা হাক্কাহ ৪০, ৪১)

এরপর আমি মনে মনে বললাম, ইনি একজন গণক বা জ্যোতিষী হতে পারেন। পরক্ষণেই তিনি পড়লেন,

وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ تَنزِيلٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ فَمَا مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِينَ

এবং কোনো গণকের কথাও নয়। তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ কর। এটি সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত। যদি সে আমার নামে কোন মিথ্যা রচনা করত, তবে আমি তার ডান হাত পাকড়াও করতাম। তারপর অবশ্যই আমি তার হৃদপিন্ডের শিরা কেটে ফেলতাম। তারপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, তাকে রক্ষা করতে পারবে। (সুরা হাক্কাহ: ৪২-৪৭)

এভাবে তিনি পুরো সুরাটি শেষ করলেন এবং ইসলাম আমার অন্তরে পরিপূর্ণভাবে বদ্ধমূল হলো। (মুসনাদে আহমদ: ১০৭)

অন্য একটি বর্ণনায় ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি হজরত ওমরকে (রা.) জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাকে কেন ফারুক নামে ডাকা হয়? ওমর (রা.) বললেন, হামজা (রা.) আমার তিন দিন আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু জাহল নবিজিকে (সা.) গালি দিয়েছিলেন। হামজা (রা.) এ খবর পেয়ে নিজের ধনুক নিয়ে মসজিদুল হারামে আসেন এবং কুরাইশের একটি মজলিসে আবু জাহলের সামনে দাঁড়িয়ে যান। হামজার চেহারায় ক্রোধ দেখে আবু জাহল বলেন, কী হয়েছে, আবু উমারাহ? তখন হামজা ধনুক দিয়ে আবু জাহলের কপালে আঘাত করেন, যার ফলে কপাল থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। কুরাইশের অন্যরা পরিস্থিতি শান্ত করতে সচেষ্ট হয়, যাতে বিশৃঙ্খলা আর না বাড়ে।

নবিজি (সা.) তখন দারুল আরকামে আত্মগোপনে ছিলেন। হামজা (রা.) সেখানেই গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।

তিন দিন পর আমি বাইরে বের হলে এক মুসলমান ব্যক্তিকে দেখে বলি, তুমি কীভাবে নিজের বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করে মুহাম্মাদের অনুসরণ করলে? সে বললো, আমি কী করেছি তা না ভেবে নিজের পরিবারের কথা ভাবো। তোমার বোন ও বোনজামাইও ইসলাম গ্রহণ করেছে।

এ তথ্য শুনে আমি ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের বাড়িতে যাই এবং কোরআন তিলাওয়াতের শব্দ শুনতে পাই। ঘরে ঢুকে আমি জিজ্ঞাসা করি তোমরা কী করছিলে? কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমি বোনজামাইয়ের মাথা চেপে ধরে আঘাত করি, তিনি রক্তাক্ত হয়ে যান। তখন আমার বোন আমাকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসেন এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি। আপনি যা খুশি করতে পারেন।

বোনজামাই রক্তাক্ত হয়ে গেছেন দেখে আমি লজ্জিত হই এবং বলি, আমাকে ওই পাণ্ডুলিপি দেখাও। কিন্তু আমার বোন বলেন, এটি শুধুমাত্র পবিত্র ব্যক্তিরাই স্পর্শ করতে পারেন। তখন আমি গোসল করি। তারা আমাকে পাণ্ডুলিপিটি দেন। আমি পড়া শুরু করি,

الۡعُلٰی اَلرَّحۡمٰنُ عَلَی الۡعَرۡشِ اسۡتَوٰی لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَهُمَا وَ مَا تَحۡتَ الثَّرٰی وَ اِنۡ تَجۡهَرۡ بِالۡقَوۡلِ فَاِنَّهٗ یَعۡلَمُ السِّرَّ وَ اَخۡفٰی اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ لَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی

ত্ব-হা। আমি তোমার প্রতি আল-কুরআন এজন্য নাযিল করিনি যে, তুমি দুর্ভোগ পোহাবে বরং যে ভয় করে তার জন্য উপদেশ স্বরূপ। যিনি সমিন ও সুউচ্চ আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিকট থেকে অবতীর্ণ। পরম করুণাময় আরশের ওপর সমুন্নত রয়েছেন। যা আছে আসমানসমূহ, জমিন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী স্থানে এবং যা আছে মাটির নিচে সব তাঁরই। আর যদি তুমি উচ্চস্বরে কথা বলো তবে তিনি গোপন ও অতি গোপন বিষয় জানেন। আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; সুন্দর নামসমূহ তাঁরই। (সুরা ত্বহা: ১-৮)

আয়াতগুলো পড়ে আমি বিস্মিত হয়ে ভাবলাম, এই বাণী থেকে কোরাইশ পালিয়ে বেড়াচ্ছে! তারপর আমি ইসলাম গ্রহন করলাম এবং বললাম আল্লাহর রাসুল (সা.) কোথায়? আমার বোন বললেন, তিনি দারুল আরকামে আছেন।

আমি সেখানে গিয়ে দরজায় আঘাত করলাম। আমাকে দেখে অন্য সাহাবিরা ভীত হয়ে যান। হামজা (রা.) বলেন, তোমাদের কী হলো? তারা বলেন, ওমর এসেছে। হামজা (রা.) বলেন, দরজা খুলে দিন, যদি তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তবে তাকে স্বাগত জানাব আর যদি তিনি কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এখানে এসে থাকেন, তবে তাকে হত্যা করব। এসব কথা শুনে নবিজি (সা.) বাইরে আসেন এবং আমি তার সামনে কালেমা পাঠ করি। আমাকে কালেমা পাঠ করতে শুনে ঘরের সবাই আনন্দে তাকবির দেন, যার আওয়াজ পুরো মক্কা শহর শুনতে পায়। (তারিখে ইবনে আসাকির)

ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর মক্কায় মুসলমানদের প্রভাব ও শক্তি বেড়ে যায়। বর্ণিত রয়েছে, নবিজি (সা.) ওমরের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করতে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আবু জাহল ও ওমার—এ দুই জনের মধ্যে আপনার কাছে যে প্রিয়, তার মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। আল্লাহর কাছে ওমর প্রিয় ছিলেন। তাই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। (মুসনাদে আহমদ: ৫৬৯৬, সুনানে তিরমিজি: ৩৬৮১)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওমরের জন্যই বিশেষভাবে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি ওমরের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১০৫)

ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামের প্রচার প্রসারে ওমরের (রা.) ত্যাগ-তিতিক্ষা, আল্লাহর ইবাদত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তার অগ্রগামিতা তাকে মুসলমানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত করে। নবিজির (সা.) ওফাতের পর আবু বকর মুসলমানদের খলিফা হন। তার ওফাতের পর খলিফা হন হজরত ওমর (রা.)।
-আলেম ও লেখক (সংগৃহীত)

Leave a Reply

প্রতিপক্ষের হামলায় নারী নিহত, দুইজন আটক

চলারপথে রিপোর্ট : তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় খাইরুন Read more

গাজীপুরে মামা হত্যার আসামি ভাগিনা গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : গাজীপুরে আনিসুর রহমান হত্যার মামলার আসামি ভাগিনা Read more

সদর মডেল থানায় যোগদান করেই কঠোর…

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য : আজহারুল ইসলাম সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : ফ্ল্যাট বাসা থেকে শরীর মীর (৪০) নামের Read more

নাসিরনগরে বাবাকে হত্যার ঘটনায় ছেলে আটক

চলারপথে রিপোর্ট : নাসিরনগরে আলম মিয়া (৬০) নামের এক ব্যবসায়ী Read more

আখাউড়ায় খেলাফত মজলিসের প্রার্থীর মতবিনিময়

মোঃ ইসমাইল: ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী Read more

৫০ কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ৫০ কেজি গাঁজা ও ১টি সিএনজি উদ্ধারসহ Read more

কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমায়, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের…

অনলাইন ডেস্ক : বর্ষার শেষপ্রহরে নেমে আসা অবিরাম বৃষ্টি ও Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার নতুন ওসি আজহারুল…

চলারপথে রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে Read more

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে…

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ঐতিহাসিক Read more

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : কুমিল্লার দাউদকান্দি বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) Read more

মেক্সিকোতে যাত্রীবাহী বাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১০জন…

অনলাইন ডেস্ক : মেক্সিকোর আটলাকোমুলকো শহরে একটি পণ্যবাহী ট্রেন ও Read more

সন্তানকে কত দিন মাতৃদুগ্ধ দেওয়া যায়

ধর্ম, 18 February 2025, 425 Views,

মাইমুনা আক্তার:
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো প্রত্যেক মায়ের কর্তব্য। কারণ মহান আল্লাহ মায়ের দুধে শিশুর বেড়ে ওঠার সব উপাদান দিয়েছেন। যেমন- আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পানি, সহজ পাচ্যকারী উপাদান ইত্যাদি সুষমভাবে থাকে মাতৃদুগ্ধে। ফলে মায়ের বুকের দুধ খাওয়া শিশু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে বেড়ে ওঠে। পাশাপাশি তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও অনেক বেশি থাকে। এর ফলে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অপুষ্টিজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পায়। শারীরির সুস্থতার পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশেও মায়ের দুধের ভূমিকা অনবদ্য। এ ছাড়া মায়ের সুস্থতা যেমন— স্তন ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধে সন্তানকে সঠিকভাবে মায়ের দুধ পান করানোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রত্যেক মায়ের উচিত সন্তান জন্মলাভের পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাকে নিয়মমাফিক দুধ পান করানো। অনেকে আবার না জেনে কোরআনের নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরও সন্তানকে বুকের দুধ পান করান। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর নির্দিষ্ট একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মাতাগণ নিজেদের বাচ্চাদেরকে পূর্ণ দুই বছর স্তন্যদান করবে, যদি দুধ খাওয়ার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৩) তাফসিরবিদরা বলেন, এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে সন্তানকে দুধ পান করানো ওয়াজিব এবং আরো বোঝা গেল যে বিশেষ ওজর ছাড়া স্তন্যদান থেকে বিরত থাকার অবকাশ নেই। (মাআরেফুল কুরআন, তাফসিরে মাযহারি, কুরতুবি, জামিউ আহকামিসসিগার : ১/১২৩) অনেক মা সন্তানকে তিন-চার বছরও দুধ খাওয়ান। আবার অনেকে আড়াই বছর খাওয়ানো যায় মনে করে এই মেয়াদ পূর্ণ করেন। এটা ভুল। সন্তান অনূর্ধ্ব দুই বছর মায়ের বুকের দুধ খেতে পারবে। দুই বছরের বেশি বয়সী সন্তানকে দুধ পান করানো নাজায়েজ। দুই বছর দুধ পান করানোর বিষয়টি উল্লিখিত আয়াতে রয়েছে। এ ছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘মায়ের দুধ পানের সময় দুই বছরই।’ (সুনানে দারাকুতনি : ৪/১৭৪, তাফসিরে মাযহারি : ১/৩২৩, মাজমাউল আনহুর : ১/৫৫২, আত্তাসহিহ ওয়াত্তারজিহ ৩৩৫, ফাতহুল কাদির : ৩/৩০৭-৩০৯) তাই প্রত্যেক মায়ের দায়িত্ব সন্তানের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তাকে অন্যান্য খাবারে অভ্যস্ত করা, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাকে মায়ের দুধ দেওয়া বন্ধ করা যায়।

banner

ইহুদিরা মুসলমানদের প্রধান শত্রু

ধর্ম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 7 April 2025, 454 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলা, নির্যাতন ও গণহত্যার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে হেফাজতে ইসলাম।

banner

প্রতিবাদ সমাবেশে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান দাবি করেন, ইহুদিরা মুসলমানদের প্রধান শত্রু এবং ইসলামের ইতিহাসে তাদের অবস্থান বরাবরই বিরোধপূর্ণ। চলমান গণহত্যার ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা জানাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব শায়েখ সাজিদুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, নেতানিয়াহু বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী।

আজ ৭ এপ্রিল সোমবার দুপুরে ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব চত্বরে সমাবেশে তিনি আহ্বান জানান।

এসময় তিনি বলেন, দ্রুত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা জানাতে হবে। ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে। ইসরায়েলের গণহত্যাকে মানবতাবিরোধী কাজ উল্লেখ করে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব বলেন, নেতানিয়াহু বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী। সব মানুষের জন্য এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানানো জরুরি। প্রয়োজনে জিহাদের ডাক দিয়ে ফিলিস্তিন গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়া আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।

২৫ ডিসেম্বর অষ্টগ্রাম সিরাজুল উলূম ইসলামিয়া মাদ্রাসার ইসলামী মহাসম্মেলন

ধর্ম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 22 December 2024, 1110 Views,

দুলাল মিয়া :
অষ্টগ্রাম সিরাজুল উলূম ইসলামিয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে ৫০ তম বার্ষিক সভা ও হাফেজ ছাত্রদের পাগড়ী প্রদান উপলক্ষে ২৫ ডিসেম্বর বুধবার বাদ আছর হতে মাদ্রাসা ময়দানে ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

banner

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া এর প্রিন্সিপাল উত্তাজুল আসাতিজা, পীরে কামেল আল্লামা মুফতী মুবারকুল্লাহ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান।

বিশেষ অতিথি থাকবেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা জুনায়েদ আল-হাবিব।

প্রধান বক্তা থাকবেন মাওলানা তাফহীমুল হক্ব, হবিগঞ্জ।

বিশেষ বক্তা থাকবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া সিরাজিরা দারুল উলুম জাদুঘর এর সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা কামাল উদ্দীন কাসেমী, মাওলানা কামাল উদ্দীন দায়েমী, নারায়ণগঞ্জ, চান্দিয়ারা দারুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সাইফুল্লাহ্ সাদী।

আমন্ত্রিত উলামায়ে কেরাম থাকবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া দারুল আরকাম আল-ইসলামিয়ার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আলী আজম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়াত এর সিনিয়র মুহাদ্দিস হাফেজ মাও: শফিকুল ইসলাম, অষ্টগ্রাম সিরাজুল ইসলাম মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা মুফতী হাবিবুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া এর সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল হান্নান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া সিরাজিয়া দারুল উলূম ভাদুঘর এর মুদাররিস হাফেজ মাও: ইসহাক্ব সিরাজী, অষ্টগ্রাম সিরাজুল ইসলাম মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা হাফিজুল ইসলাম।

উক্ত ইসলামী মহা সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে দ্বীন আখেরাতের অশেষ নেকী হাসিল এবং সকল মুর্দেগানের মাগফিরাত কামনায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঘরে প্রবেশের দোয়া

ধর্ম, 15 August 2025, 125 Views,

ধর্ম ডেস্ক:
ঘর থেকে বের হওয়ার যেমন দোয়া রয়েছে, তেমনি ঘরে প্রবেশকালেও বিশেষ দোয়া পাঠ করতে বলেছেন নবীজি। দোয়াতে আল্লাহর স্মরণ, তাঁর ওপর ভরসা ও কল্যাণ কামনা করা হয় এবং এতে করে শয়তানের অনিষ্ট থেকেও বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।

banner

দোয়াটি হলো— اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ، وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ، بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরা মাওলাজি, ওয়া খাইরাল মাখরাজি, বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি রব্বিনা তাওক্কালনা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উত্তম প্রবেশ ও উত্তম বের হওয়া প্রার্থনা করছি। আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি এবং আল্লাহর নামে বের হচ্ছি। এবং আমাদের রব আল্লাহর ওপর ভরসা করছি।’ এছাড়া সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতেও বলা হয়েছে হাদিসে। (সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯৬)মূলত আল্লাহ তাআলাকে সবসময় স্মরণ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। ঘরে প্রবেশ ও ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহকে স্মরণ করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করলে শয়তান তার সঙ্গীদের বলে, ‘তোমাদের রাত যাপন ও রাতের আহারের কোনো ব্যবস্থা হলো না।’ কিন্তু কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, ‘তোমরা রাত যাপনের জায়গা পেয়ে গেলে। সে আহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাতের আহারের ও শয্যা গ্রহণের ব্যবস্থা হয়ে গেল।’ (মুসলিম: ২০১৮)

৬ সেপ্টেম্বর পবিত্র মিলাদুন্নবী

জাতীয়, ধর্ম, 24 August 2025, 136 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
দেশের আকাশে আজ ২৪ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যায় রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। এজন্য আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। তাই আগামী ৬ সেপ্টেম্বর (১২ রবিউল আউয়াল) পালিত হবে পবিত্র মিলাদুন্নবী (স.)।

banner

২৪ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

আরবি ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’র শাব্দিক অর্থ- মহানবীর (স.) জন্মদিনের আনন্দোৎসব। মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী হয়রত মুহম্মদ (স.) এর জন্ম ও মৃত্যু (ওফাত) দিবস হিসেবে পালন করে। কারণ এ দিনেই রাসুলে করীম (স.) ইন্তেকালও করেন। সেই হিসেবে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ১২ রবিউল আউয়াল। বাংলাদেশে মিলাদুন্নবীর (স.) দিন সাধারণ ছুটি।

মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের হিজরি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে মক্কার কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। আরবের মরুপ্রান্তরে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার শুরু করেন তিনি। তার আবির্ভাব এবং ইসলাম ধর্মের প্রচার সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

দীর্ঘ ২৩ বছর ইসলাম ধর্ম প্রচার করে ৬৩ বছর বয়সে ১২ রবিউল আউয়ালই মহানবী (স.) মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি মিলাদুন্নবী (স.) হিসেবে সারা বিশ্বের মুসলমানরা পালন করে থাকেন।

মিলাদুন্নবীর (স.) দিনে মসজিদ ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।