অনলাইন ডেস্ক :
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের রাজধানীর লালমাটিয়ায় দুই হাজার ৫২৩ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, জমি ও তিনটি গাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসাথে তার ১২টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশও দেওয়া হয়েছে। আজ ২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত।
এ দিন দুর্জয়ের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক তাপস ভট্টাচার্য। শুনানি শেষে এ আবেদন আদালত মঞ্জুর করেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক তাপস ভট্টাচার্য বলেন, এমপি থাকাকালে নাঈমুর রহমান দুর্জয় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মোট ১১ কোটি ২১ লাখ ৮১ হাজার ৭৯০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড থেকে মোট চার কোটি ২২ লাখ টাকা গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, দুর্জয়ের নিজের নামে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৪৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৯০ টাকা জমা এবং ৪৬ কোটি ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৯৬০ টাকা তুলেছেন, যা সন্দেহজনক। তার বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় বর্ণিত সম্পদসমূহ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রচেষ্টা করছেন। তার স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
চলারপথে রিপোর্ট:
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে গ্রাম্য সালিশবৈঠকের মাধ্যমে স্ত্রী নয়ন বেগমকে তালাক দিয়ে মাত্র ৯ মাসের শিশুসন্তান ইসরাত জাহান ইভাকে অন্যত্র বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে বাবা ইকবাল মুন্সীর বিরুদ্ধে।
এদিকে সন্তানকে ফিরে পেতে থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও দুই সপ্তাহেও সুরাহা পাননি শিশুটির মা।
থানায় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাসারা গ্রামের আব্বাস মুন্সির ছেলে ইকবাল মুন্সির সঙ্গে একই উপজেলার পূর্ব দায়চারা গ্রামের মৃত শাহ আলম মোল্লার মেয়ে নয়ন বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে ইকবাল মুন্সি তার স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন অজুহাতে একাধিকবার মারধর করে। এরই মধ্যে ইসরাত জাহান ইভা নামে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।
পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে গত ১৬ ডিসেম্বর গ্রাম্য সালিশবৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নয়ন বেগমের কাছ থেকে তালাক নিয়ে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখার অভিযোগ রয়েছে। পরে জোরপূর্বক ৯ মাসের শিশু ইসরাত জাহান ইভাকে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ইকবাল মুন্সির পরিবারের লোকজন।
নয়ন বেগম বলেন, আমার স্বামী আমাকে যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময়ে মারধর করত। সুখের আশায় সালিশের কাছে বিচার দিলেও উল্টো আমাকে তালাক দিতে বাধ্য করে। এমনকি তারা আমার সন্তানকেই কোল থেকে ছিনিয়ে নেয়। পরে আমি জেনেছি, আমার সন্তানকে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুক গ্রামে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় আমার স্বামী ইকবাল মুন্সি। আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই।
নয়ন বেগমের স্বামী ইকবাল মুন্সি জানান, নয়ন বেগমের সঙ্গে তার সালিশবৈঠকের মাধ্যমে তালাক হয়ে গেছে। আমাদের ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সুমন, আশু, জামাল, আবু তাহের, ফারুক হোসেন ও বাবুল নামে ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তালাকের পর শিশুসন্তানকে আমার জিম্মায় দেওয়া হয়। সন্তান বিক্রির যে অভিযোগ থানায় করেছে, সেটি সঠিক নয়। আমি আমার এক সম্পর্কের খালাতো বোনের কাছে সন্তানকে লালন-পালন করার জন্য দিয়েছি।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সুমন সোমবার দুপুরে জানান, শুনেছি শিশুটিকে পালক দেওয়া হয়েছে, বিক্রির বিষয় আমি জানি না।
সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন আজ সোমবার দুপুরে বলেন, প্রথম সালিশে আমি থাকলেও পরের বৈঠকে ছিলাম না। শিশুটির মা শিশুটিকে নেবে না বলায় তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জেনেছি। পরে কি হয়েছে সেই বিষয়ে আমি জানি না।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই মো. মাহফুজ সোমবার দুপুরে জানান, শিশুটির বাবাকে সংবাদ দিয়েছি আসার জন্য। সে আসলে শিশুটিকে উদ্ধার করা হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
এইচএসসি পরীক্ষার শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সময় বাড়ানো হয়েছে। আজ ২১ এপ্রিল রবিবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এইচএসসি পরীক্ষার অনলাইনের ফরম পূরণের চলমান কার্যক্রমের সময় আগামী ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হলো। ‘সোনালী সেবার’ মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যাবে ৬ মে পর্যন্ত। বিলম্ব ফিসহ ফরম পূরণের সময় ৭ মে থেকে শুরু হয়ে চলবে ১২ মে পর্যন্ত। ‘সোনালী সেবার’ মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যাবে ১৩ মে পর্যন্ত।
চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৩০ জুন। এই পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হয়েছে ১৬ এপ্রিল থেকে। ফরম পূরণ চলার কথা ছিল ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এখন বর্ধিত সময় অনুযায়ী আগামী ৫ মে পর্যন্ত ফরম পূরণ করা যাবে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, এবার পুনর্বিন্যাসকৃত (সংক্ষিপ্ত) পাঠ্যসূচিতে অনুষ্ঠিত হবে এইচএসসি পরীক্ষা।
কোনো বিভাগের জন্য কত ফি
পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি বাবদ পত্রপ্রতি ১১০ টাকা, ব্যবহারিকের ফি বাবদ পত্রপ্রতি ২৫ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের ফি বাবদ পরীক্ষার্থীপ্রতি ৫০ টাকা, মূল সনদ বাবদ ১০০ টাকা, বয়েজ স্কাউট ও গার্লস গাইড ফি বাবদ ১৫ টাকা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি বাবদ পরীক্ষার্থীপ্রতি ৫ টাকা নেওয়া হবে।
অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীপ্রতি ১০০ টাকা অনিয়মিত ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। জিপিএ উন্নয়ন ও প্রাইভেট পরীক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা তালিকাভুক্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫০ টাকা। বিলম্ব ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা।
কেন্দ্র ফি বাবদ প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে ৪৫০ টাকা ও ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি বাবদ পরীক্ষার্থীদের পত্রপ্রতি ২৫ টাকা দিতে হবে। আর ব্যবহারিক উত্তরপত্র মূল্যায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা।
শিক্ষা বোর্ডগুলো বলছে, বিজ্ঞান শাখার পরীক্ষার্থীদের মোট ২ হাজার ৬৮০ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার জন্য ২ হাজার ১২০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কোনো পরীক্ষার্থীর চতুর্থ বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকলে এ ফির সঙ্গে অতিরিক্ত ১৪০ টাকা যুক্ত হবে। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কোনো শিক্ষার্থীর নৈর্বাচনিক বিষয়ে ব্যবহারিক থাকলে বিষয়প্রতি আরও ১৪০ টাকা যোগ হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে শিশুদের জীবন গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক গবেষণা পরিষদ কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনাসভা ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। তিনি একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন।
তিনি শিশুদের অত্যাধিক ভালবাসতেন বলে তার জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তার আদর্শ ধারণ করে প্রত্যেকটি শিশুকে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার মনোভাব নিয়ে বড় হতে হবে। তার আদর্শ উজ্জীবিত হয়ে বড় হয়ে শিশুদের একটি উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুজনেই আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।
তাই শেরে বাংলা গবেষণা পরিষদ জাতির পিতার জন্মদিন সাড়ম্বরে উদযাপনের জন্য শেরে বাংলা একে ফজলুল হক গবেষণা পরিষদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ এবং তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্যোগের প্রশংসানীয়। এ ধরনের মহতী উদ্যোগের সাথে আমরা সব সময় আছি।
অনুষ্ঠানে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ নিজামুল হক নাসিম প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা ১০ আসনের সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস হাসান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. সাজ্জাদ হায়দার, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের দৌহিত্র ও সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ, চিত্রনায়িকা মেহজাবিনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনাসভার শেষে মন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক গবেষণা পরিষদের পক্ষে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদ উপহার তুলে দেন।
অনলাইন ডেস্ক :
সরকার পতনের একদফা আন্দোলন এবং শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বিভিন্ন থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে থানাসহ বিভিন্ন ইউনিট এবং ডিউটিস্থল থেকে অস্ত্র লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসব অস্ত্র উদ্ধারে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে যৌথ অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আজ ১ সেপ্টেম্বর রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল আহমেদ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ ইতোমধ্যে কিছু উদ্ধার করা হয়েছে। লুণ্ঠিত অবশিষ্ট অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পর লুট হওয়া অস্ত্র ফেরত দিতে আহ্বান জানিয়ে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এসব লুট হওয়া অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফেরত না দিলে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানায় পুলিশ সদর দপ্তর।
এছাড়া এর আগে বেসামরিক জনগণকে গত ১৫ বছরে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। সূত্র : যুগান্তর
চলারপথে রিপোর্ট :
জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলনার দাকোপ উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানি অতি লবণাক্ত। এই এলাকায় নিরাপদ ও সুপেয় পানির জন্য হাহাকার দেখা যায়। সুপেয় পানির অভাবে দাকোপ উপজেলার অনেক মানুষই বাধ্য হয়ে ডোবা নালার পানি পান করেন। ফলে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হন তারা। এলাকাবাসীর সুপেয় পানির অভাব মেটাতে গত সেপ্টেম্বর মাসে চালু করা হয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। ইউএনডিপি ও ইউএনসিডিএফ এর সহায়তায় লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগ বাস্তবায়ন করছে পানির ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ।
দাকোপের বানিশান্তা ইউনিয়নের আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি স্থাপন করা হয়েছে। বানিশান্তা যৌনপল্লীর ৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীসহ ২টি স্কুলের প্রায় ৩৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী প্ল্যান্ট থেকে বিনামূল্যে পানি পাচ্ছেন। এছাড়া ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে দৈনিক ১০ হাজার লিটার সুপেয় পানি উৎপাদন করে এটিএম কার্ড ও ভ্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় মাত্র প্রতি লিটারে ৫০ পয়সা দামে যৌনপল্লির ১০০ টি পরিবার সহ প্রায় ২ হাজার ৫০০ জনের জন্য পানি সরবরাহ করা হয়। এই প্ল্যান্টটি দেখাশোনার জন্য পতিতালয়ের এক মা’কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্ল্যান্টের আয় দিয়ে প্ল্যান্টটির খরচসহ আবাসিকে থাকা পতিতালয়ের স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। যাতে করে পতিতালয়ের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা শিখে পতিতালয়ের জীবন থেকে বের হয়ে সরকারের উন্নয়নের মূল স্রোতোধারায় ভূমিকা রাখতে পারেন।
লজিক প্রকল্প থেকে বলা হয়, প্রতি লিটার পানি ৫০ পয়সা করে বিক্রি করা হলে মাসে মোট ৫০,০০০-৭০,০০০ টাকা আসতে পারে। এ টাকার পুরোটাই শিশুদের লেখাপড়ার জন্য ব্যয় করা হবে। এতে একদিকে যেমন এলাকাবাসীর বিশুদ্ধ পানির অভাব মিটছে তেমনি শিশুদের পড়াশোনার খরচও আসছে।
পতিতালয়ের একজন নারী বলেন, ‘আমাগে ভালো খাবার পানির ব্যবস্থা কেবলমাত্র পোকুরের (পুকুরের) পানি। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে সব শুকিয়ে যায় তখন আমরা খাবার পানির জন্যি খুব কষ্ট পাই। এহন (এখন) এই পেলান (প্ল্যান্ট) হয়ে আমাগে পানির জন্যি কষ্ট করতে হয় না। আমরা ছেলে পুলেদের লেহাপড়ার খরচ জোগাতে পারতাম না। পানি বিক্রির টাকা দিয়ে এহন আমগে ছেলে পিলেদের লেহাপড়ার খরচ দিতে পারি।’
আরেকজন নারী বলেন, ‘আমাগে এহানে খাবার পানির কষ্ট খুব। লবন পানির জন্তি (জন্য) আমরা হনক পথ হেঁটে পুকুরের পানি নিয়ে এসে খাতাম। এহন লজিক প্রকল্পের প্ল্যানের পানি খাচ্ছি। শরিল খারাপ করে না আর ।’
লজিক প্রকল্পটি মূলত ইউএনডিপি বাংলাদেশ, ইউএনসিডিএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন এবং ডেনমার্ক সরকার দ্বারা সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগ। এটির লক্ষ্য হল নির্বাচিত জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সমাধানের পরিকল্পনা ও অর্থায়নের জন্য দুর্বল সম্প্রদায়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজ সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এই বিশেষ প্ল্যান্টটি ইউএনসিডিএফের সহায়তায় পিবিসিআরজি (PBCRG) বা পারফরমেন্স বেসড ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট গ্রান্ট দ্বারা অর্থায়ন করা হয়।
দাকোপের শুধু বানিশান্তাতেই নয় স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত ইউএনডিপি ও ইউএনসিডিএফের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় লজিক প্রকল্পের মাধ্যমে দাকোপ এলাকায় বাস্তবায়িত জলবায়ু সহনশীল মোট ৬৪টি প্রকল্পের মধ্যে ৪৬টি প্রকল্পই খাবার পানির জন্য স্থাপন করা হয়েছে এবং কৃষি কাজের পানির জন্য ২টি খাল খনন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রায় ৮ হাজার মানুষ বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পাচ্ছে এবং প্রায় ১ হাজার মানুষ ৫শ বিঘা জমিতে দুটি করে ফসল ফলাতে পারছে।