কারা আল্লাহর পছন্দের বান্দা?

ধর্ম, 23 January 2025, 440 Views,

মো. আমিনুল ইসলাম :
আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আমরা এ ইবাদত কতটুকু ঠিকভাবে করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারছি তা ভেবে দেখার বিষয়। কিংবা কীভাবে ইবাদত করলে আমরা তাঁর প্রিয় বান্দা হয়ে পরকালে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারব তা আমাদের সবার জানা উচিত। সুরা মায়েদার ৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’সুরা হুজুরার ৫৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ সুতরাং যারা দুনিয়ার বুকে বিচার করেন তারা যেন অবশ্যই সুবিচার করেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন।

banner

সুরা বাকারার ৩ ও ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যারা গায়েবের ওপর ইমান আনে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং তিনি যা কিছু দান করেছেন তার থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করে এবং তাদের রবের কাছ থেকে পাওয়া হেদায়েতের ওপর রয়েছে এরাই হচ্ছেন সফলকাম।’ সুতরাং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নামাজ আদায়, জাকাত আদায়, গায়েবের ওপর ইমান আনা এবং সর্বোপরিভাবে আল্লাহ-প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালিত করা। ধৈর্যশীলরাও আল্লাহর প্রিয় বান্দা।

আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় সত্য কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা সবরকারী তাদের পুরস্কার প্রায় অগণিত।’ সুরা জুমার আয়াত ১০। যারা তওবাকারী ও গুনাহ করার পর আল্লাহর স্মরণে লজ্জিত হন এবং ক্ষমা চান তারাও আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দা। এদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘তারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে বসে কিংবা এর দ্বারা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে এবং সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আসলে আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে তাদের গুনাহ মাফ করে দিতে পারে?’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৩৫।

যারা আল্লাহর রসুল (সা.)-কে ভালোবাসে তারাও দুনিয়ার বুকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিচিত। সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তুমি বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমার (নবীর) কথা মেনে চল, আল্লাহতায়ালাও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ আয়াত ৩১। সুবহানাল্লাহ! এ আয়াতটি কত মর্যাদাপূর্ণ।

আল্লাহর রসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে যে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া ও গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যায় এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে। তাকওয়া অবলম্বনকারী ও মুত্তাকি হওয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি।

সুরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের মুখমন্ডলগুলো পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাও এতে কোনো নেকি নিহিত নেই, বরং বড় সত্য কাজ বা নেকির কাজ হচ্ছে ইমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং নবী-রসুলদের ওপর। আর সম্পদের ওপর তার ভালোবাসা থাকার পরও তা ব্যয় করবে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির ভিক্ষুক ও বন্দিদশা থেকে মুক্ত করার কাজে। আর যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং যারা প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করে এবং অভাবে রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করে। এরাই হচ্ছে প্রকৃত সত্যাশ্রয়ী ও তাকওয়া অবলম্ব^নকারী মানুষ।’ আয়াত ১৭৭।
– লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

Leave a Reply

ইটালি প্রবাসী দিদারের মা আনোয়ারা বেগমের…

শফিকুল ইসলাম বাদল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর Read more

কসবায় মায়ের অভিযোগে ছেলের কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে Read more
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : পুকুরের পানিতে ডুবে ইসরাত জাহান নোভা (৯) Read more

ইরান কখনও আপোস করবে না: আয়াতুল্লাহ…

অনলাইন ডেস্ক : জায়নবাদীদের সাথে ইরান কখনও আপোস করবে না Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পাঁচ দিনের…

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানার পৃথক Read more
ফাইল ছবি

প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে…

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহতদের কল্যাণ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক…

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর Read more

কারাগারে হাজতির মৃত্যু

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে জুনায়েদ মিয়া (৩২) নামে Read more

আখাউড়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

চলারপথে রিপোর্ট : কৃষকদের সেচ দক্ষতা বাড়াতে পানি ব্যবহারকারী গ্রুপের Read more

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ১১তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য: রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের Read more

স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে…

অনলাইন ডেস্ক : স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে অনশন Read more

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো ২১…

অনলাইন ডেস্ক : ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিশরসহ ২১টি Read more

সব মসজিদে একই পদ্ধতিতে তারাবি পড়ার আহ্বান

ধর্ম, 28 February 2025, 207 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
পবিত্র রমজান মাসে খতমে তারাবিহ পড়ার সময় সারা দেশের সব মসজিদে একই পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

banner

২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পবিত্র রমজান মাসে দেশের প্রায় সব মসজিদে খতমে তারাবিহ নামাজে পবিত্র কুরআনের নির্দিষ্ট পরিমাণ পারা তিলাওয়াত করার রেওয়াজ চালু আছে। তবে কোনো কোনো মসজিদে এর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এতে করে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী কর্মজীবী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে পবিত্র কুরআন খতমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। এতে আরো বলা হয়, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে একটি অতৃপ্তি ও মানসিক চাপ অনুভূত হয়।

পবিত্র কুরআন খতমের পূর্ণ সওয়াব থেকেও তারা বঞ্চিত হন। এ পরিস্থিতি নিরসনকল্পে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ৬ দিনে দেড় পারা করে ৯ পারা এবং বাকি ২১ দিনে ১ পারা করে ২১ পারা তিলাওয়াত করলে ২৭ রমজান রাতে অর্থাৎ পবিত্র শবে কদরে পবিত্র কুরআন খতম করা সম্ভব হবে।

দেশের সব মসজিদে খতমে তারাবিহ নামাজে প্রথম ৬ দিনে দেড় পারা করে ও পরবর্তী ২১ দিনে এক পারা করে তিলাওয়াতের মাধ্যমে পবিত্র শবে কদরে কুরআন খতমের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সারা দেশের সব মসজিদের সম্মানিত খতিব, ইমাম, মসজিদ কমিটি, মুসল্লি এবং সংশ্লিষ্ট সবার কাছে বিনীত অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, রবিবার ঈদ

জাতীয়, ধর্ম, 30 March 2025, 201 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের আকাশে আজ ৩০ মার্চ রবিবার ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ৩১ মার্চ সোমবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হবে।

banner

সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এ বৈঠক হয়।

এদিকে, সৌদি আরবে আজ পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। গতকাল শনিবার হিজরি ১৪৪৬ সালের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পবিত্র রমজান। দুই মসজিদভিত্তিক ওয়েবসাইট ইনসাইট দ্য হারামাইন ও ফেসবুক পেজ হারামাইন শরিফাইনে এ ঘোষণা আসে।

পবিত্র ঈদুল আযহা আজ

জাতীয়, ধর্ম, 7 June 2025, 92 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ৭ জুন শনিবার পবিত্র ঈদুল আযহা। বাঙালি সমাজে কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত মুসলমানদের এই অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর করে আসছে।

banner

ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আযহার সাথে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। গতকাল শুক্রবার মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করবে। স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী ৬ জুন শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজীরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্য কার্যাদি সম্পাদন করবেন।

ঈদুল আযহা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে।

সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব।

ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে সুরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল আযহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।’ গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল, দুম্বাসহ যে কোনো হালাল পশু দিয়ে কোরবানি দেয়া যায়।
শনিবার সকালে মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আযহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনি-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

পবিত্র শবে মেরাজ ২৭ জানুয়ারি

জাতীয়, ধর্ম, 1 January 2025, 735 Views,
ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। তাই আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে পবিত্র রজব মাস গণনা করা হবে। আর, শবে মেরাজ পালিত হবে আগামী ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে। আজ ১ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

banner

সভায় ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়সমূহ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।

এ সময় সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আব্দুর ছালাম খান, তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের প্রশাসক মো. ফখরুল ইসলাম, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান খান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. আবদুল মালেক, বাংলাদেশ টেলিভিশনের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রুহূল আমিন, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুহাম্মদ মিজানুর রহমান,সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার প্রধান মাওলানা অধ্যক্ষ মিঞা মো. নূরুল হক, লালবাগ শাহী জামে মসজিদের সানি খতিব মুফতি আফনান মুহাম্মাদ, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি শেখ নাঈম রেজওয়ান উপস্থিত ছিলেন।

নারীদের অজু-গোসল নামাজ-রোজার গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

ধর্ম, 11 February 2025, 322 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ইবাদত, পর্দা, পবিত্রতা, সাজ-সজ্জা ইত্যাদি বিষয়ে কিছু ভিন্নতা রয়েছে নারীদের। শরিয়তের বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে আলাদা এসব মাসয়ালা জানা নারীদের জন্য জরুরি। নিচে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসায়েল তুলে ধরা হলো।

banner

অজু-গোসলে নারীদের যেসব মাসয়ালা জানা জরুরি
* শিশুকে দুধ পান করানোর কারণে অজু ভঙ্গ হবে না। তবে নামাজ অবস্থায় কোনো শিশু দুধ পান করে নিলে নামাজ ভেঙে যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/৬২৫)

* দুগ্ধপায়ী ছোট বাচ্চা মুখ ভরে বমি করলে তা বড় মানুষের মতোই নাপাক এবং তা কাপড়ে পড়লে ধৌত করতে হবে। মুখ ভরে বমি না করলে তা নাপাক হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/১৩৭)

* অজু-গোসলের সময় মহিলাদের নাক-ফুলের ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল মুহিতুল বুরহানি: ১/৮০)

* ফরজ গোসলে মহিলাদের চুল খোলা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ। আর বাঁধা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ নয়। কেবল চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। (শরহু মুশকিলিল আসার, হা. : ৩৮৫৪)

* ফরজ গোসলে মহিলাদের লজ্জাস্থানের বহিরাংশে পানি পৌঁছালে ফরজ আদায় হয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ অংশে পানি পৌঁছানো জরুরি নয়। আর রোজা অবস্থায় মহিলাদের ভেতরাংশে যেন পানি না পৌঁছে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, কেননা ভেতরে যাওয়ার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৫২)

* গর্ভাবস্থায় সন্তান হওয়ার আগে শেষের দিনগুলোতে মাঝেমধ্যে ঘুমের মধ্যে পানি বের হয়ে মহিলাদের শরীর ও কাপড় নষ্ট হয়ে যায়, এতে মহিলার ওপর গোসল ফরজ হবে না, তবে অজু ভেঙে যাবে এবং নির্গত পানি থেকে শরীর ও কাপড় পবিত্র করে নামাজ পড়তে হবে। কেননা সেগুলো নাপাক। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/১৫৯, ইমদাদুল ফতোয়া: ১/১০৭)

* যেসব নারী ধাতুরোগে আক্রান্ত, তাদের অজু নষ্ট হওয়ার ভয়ে যদি কেউ টিস্যু বা তুলা ধাতু আসার রাস্তায় এমনভাবে রাখে, যাতে ধাতু বাইরে আসতে না পারে, তাহলে এমতাবস্থায় সব ইবাদত আদায় করতে কোনো অসুবিধা হবে না। বরং এটিই রোগীর জন্য উত্তম পন্থা। হ্যাঁ, তুলা বা টিস্যু পেপারের বহিরাংশ যদি ভিজে যায়, তাহলে অজু নষ্ট হয়ে যাবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১০)

* মহিলাদের ‘হায়েজ’ তথা মাসিক রক্তস্রাবের ওপর শরয়ি বিধানের ক্ষেত্রে সর্বনিম্নে তিন দিন আর ঊর্ধ্বে ১০ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লিখিত দুই সংখ্যার প্রথমটির কম হলে কিংবা দ্বিতীয়টির বেশি হলে তখন তা ‘ইস্তিহাজা’ বা রোগ হিসেবে ধর্তব্য হয়। আর দুই স্রাবের মাঝখানে ১৫ দিন পবিত্র থাকা আবশ্যক। কারো যদি স্রাবের নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকে, আর সে কোনো মাসে অভ্যাসের বিপরীত ১০ দিনের পরও রক্ত দেখতে পায়, তাহলে অভ্যাসের ভেতরে আসা রক্তগুলোকে হায়েজ ধরতে হবে এবং অতিরিক্তগুলোকে ইস্তিহাজা। অনুরূপ কারো যদি এক হায়েজ শেষ হওয়ার পর ১৫ দিনের আগেই আবার রক্ত দেখা দেয়, আর এভাবে কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে, তাহলে তার এই অনিয়ম চালু হওয়ার আগের হায়েজের অভ্যাস হিসাব করে ঠিক তার ১৫ দিন পরেই দ্বিতীয় হায়েজের সময় শুরু হবে, মাঝে আসা রক্তগুলোকে ইস্তিহাজা ধরতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/২৮৯)

* কোনো কারণে আগের মাসের অভ্যাস খেয়াল না থাকলে দশের বেশি হলে তার বিধান হচ্ছে, যেহেতু হায়েজের শেষ সীমা ১০ দিন, তাই ১০ দিনের পর নিয়মিত নামাজ-রোজা শুরু করবে। এক্ষেত্রে আগের মাসের পরিমাণ খেয়াল না থাকলে খুব চিন্তাভাবনার পর প্রবল ধারণা অনুযায়ী যত দিনের অভ্যাস খেয়াল হবে, ততদিনই হায়েজ হিসেবে গণ্য হবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৮৬)

* সন্তান প্রসবের পর জরায়ু থেকে যে রক্ত আসে, তাকে নিফাসের রক্ত বলা হয়। এর সর্বোচ্চ সীমা ৪০ দিন। এর সর্বনিম্ন সীমা নেই, অল্প কিছুক্ষণও হতে পারে। ‘নিফাস’ অবস্থার সব বিধান মাসিক স্রাবের অনুরূপ। নারীরা মাসিক ও প্রসবজনিত বিশেষ দিনগুলোতে নামাজ-রোজা পালন করতে পারবে না। পরে এসব নামাজের কাজাও নেই, তবে রোজা কাজা করে নিতে হবে। ইস্তিহাজা অবস্থায় শরিয়তের বিধিবিধান যথা—নামাজ, রোজা ইত্যাদি পূর্ণরূপে পালন করতে হবে এবং স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলনেও কোনো অসুবিধা নেই। (মাবসুতে সারাখসি: ৩/১৫৪-১৫৫)

* অনুরূপ হায়েজ-নিফাস অবস্থায় সহবাস থেকে বিরত থাকা একান্ত অপরিহার্য। তবে অপারগতাবশত গুনাহ থেকে বাঁচার মানসে হাঁটু থেকে নাভির মধ্যবর্তী অংশ বাদ দিয়ে অন্যান্য অঙ্গ দ্বারা যৌনস্পৃহা নিবারণ করার অবকাশ আছে। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/২৯২)

* তদ্রূপ বিশেষ দিনগুলোতে কোরআন শরিফ পড়া এবং স্পর্শ করা জায়েজ নেই। ওই সময় শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষা না দেওয়াই শরিয়তের প্রকৃত বিধান, তথাপি প্রয়োজনবশত একেক শব্দ ভিন্ন ভিন্ন করে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। তবে ওই অবস্থায় তাদের কোরআন পড়া শোনা যাবে। (ফাতহুল কাদির: ১/১৬৮)

* বই-পুস্তক বা দ্বীনি কিতাবাদি, যেখানে কোরআন শরিফের আয়াতও লিখা থাকে, এ অবস্থায় পড়া বা স্পর্শ করা জায়েজ। তবে কোরআনের আয়াত পড়া বা স্পর্শ করা যাবে না। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৭৬)

* তদ্রূপ ওই সময়ে দোয়ার অর্থবহ আয়াত বা সুরা দোয়ার নিয়তে পড়া জায়েজ। যেমন দোয়ার নিয়তে আয়াতুল কুরসি বা সুরায়ে নাস ও ফালাক ইত্যাদি পড়া জায়েজ হবে। (ফাতহুল কাদির: ১/১৬৮, রদ্দুল মুহতার: ১/১৭২, আহসানুল ফতোয়া: ২/৭১)

* ওষুধের মাধ্যমে স্রাবের সময় পিছিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞ ডাক্তার যদি বলেন, ‘এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে না’, তাহলে প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা যাবে। (ফতোয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/৪০৪)

নারীদের পোশাক ও সাজসজ্জার মাসয়ালা
* পোশাকের মধ্যে শরয়ি নীতিমালা হলো- এমন পোশাক পরবে, যা দ্বারা মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সারা শরীর ঢেকে যায় এবং কাপড় এতটুকু মোটা হওয়া চাই, যাতে ওপর দিয়ে শরীর দেখা না যায়। নারীরা পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) অভিশাপ করেছেন ওই সব পুরুষের ওপর, যারা মহিলাদের আকৃতি ধারণ করে এবং ওই সব মহিলাদের ওপর, যারা পুরুষের আকৃতি ধারণ করে।’ (বুখারি: ৫৮৮৫)

* ভ্রু প্লাক, দাঁত চিকন করে মাঝে ফাঁকা করা, শরীর খোদাই করে অঙ্কন করা জায়েজ নেই। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) অভিশাপ করেছেন ওই সব মহিলার ওপর, যারা নিজের শরীর খোদাই করে ও করায়, যারা ভ্রুর চুল উঠায় ও উঠিয়ে দেয় এবং দাঁত চিকন করে। কেননা তারা সৌন্দর্যের জন্য আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করে ফেলে।’ (বুখারি: ৪৮৮৬)

* কোনো মহিলার চেহারায় দাড়ি-মোচ উঠলে তা উপড়ে ফেলা উত্তম। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৭৩)

* অপ্রয়োজনে মহিলাদের মাথার চুল পুরুষের মতো ছোট করা নাজায়েজ। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৫৮)

* নারীরা হাতে, পায়ে ও গোটা শরীরে মেহেদি দিতে পারবে, বরং তা মোস্তাহাব। তবে এমন কোনো পলিস ব্যবহার করতে পারবে না, যার কারণে অজু-গোসলের পানি শরীরের চামড়ায় পৌঁছে না। নারীরা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে এমন পোশাক ও বোরকা পরে বের হবে, যা শালীনতা নির্দেশ করে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘পুরুষের সাজসজ্জা হলো সুগন্ধি লাগানো, যা আকর্ষণীয় রঙের হবে না। আর নারীদের সাজসজ্জা হলো রংবেরঙের, তবে তার সুগন্ধি যেন বাইরে না ছড়ায়।’ (তিরমিজি: ২৭৮৭)

নারীদের পর্দার মাসয়ালা
* নারীরা স্বামী, পিতা, দাদা, নানা ও এদের বরাবর ওপরের দিকের পূর্বপুরুষ, নিজের ছেলে, নাতি ও এর বরাবর নিচের দিকের সব পুরুষ, আপন ভাই, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই, এসব ভাইয়ের সন্তান, বোনের ছেলে, মামা, চাচা, স্বামীর বাবা, স্বামীর দাদা-নানা ও এদের বরাবর ওপরের পূর্বপুরুষ, স্বামীর আগের ঘরের সন্তান, মেয়ে ও নাতনি জামাই, দাদা-দাদি ও নানা-নানির ভাই এবং দুধ-সম্পর্কীয় এসব স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা জায়েজ। এর বাইরে অন্য পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা জায়েজ নেই। (সুরা নিসা: ২২, ২৩; বুখারি: ২৬৪৫)

* শরিয়তের বিধানমতে, স্বাভাবিক অবস্থায় মহিলারা উল্লিখিত মাহরাম পুরুষের সামনে তার মাথা, মুখমণ্ডল, গলা, পুরো হাত, পায়ের পাতা খুলতে পারবে। অনুরূপ বুক, পায়ের গোছা, বাহু খোলার অনুমতি থাকলেও বিনা প্রয়োজনে না খোলাটাই উত্তম, তবে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা হলে এগুলোও ঢাকা জরুরি। বর্তমান ফিতনার যুগে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৬৭)

* প্রয়োজনে মহিলারা মাহরাম পুরুষের সামনেও বাচ্চাদের দুধ দিতে পারবে, তবে ফিতনার আশঙ্কা হলে তা করবে না। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩২৮)

* অতি প্রয়োজনে অনন্যোপায় হলে মাহরাম ছাড়া পরপুরুষের সামনে—যেমন ডাক্তারের সামনে চেহারা ও অন্যান্য অঙ্গ প্রয়োজন অনুপাতে খোলা জায়েজ। (আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩৭০)

* এমন বৃদ্ধ নারী, যাদের প্রতি সাধারণত কামদৃষ্টি যায় না, তারা পরপুরুষের সামনে চেহারা খুলতে পারবেন। পুরুষদের জন্য তাদের দেখা বৈধ। (মাবসুতে সারাখসি: ১০/১৫৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম নারীদের তাদের আলাদা মাসয়ালাগুলো জানার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। নারী-পুরুষ সবাইকে ইসলামি শরিয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।