পুতিনের সাথে সংলাপে বসতে প্রস্তুত জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক, 6 February 2025, 249 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পিয়ার্স মরগানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে শান্তি সংলাপে বসতে তিনি প্রস্তুত।

banner

সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, যদি ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং প্রাণহানি ঠেকানোর এই একটি মাত্র পথই খোলা থাকে, সে ক্ষেত্রে আমি বলব, আমরা এই সেটআপে যেতে এবং শান্তি সংলাপে বসতে প্রস্তুত।

পুতিনের সাথে সংলাপে বসার আগ্রহ প্রকাশের মাধ্যমে নিজের পূর্ব অবস্থান থেকে কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছেন জেলেনস্কি। কারণ এর আগে তুরস্ক, বেলারুশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বেশ কয়েকবার রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি সংলাপের জন্য জেলেনস্কিকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। জেলেনস্কি সেসব আহ্বান ও আয়োজনে সাড়া দেননি। মঙ্গলবার জেলেনস্কি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত যুদ্ধে ৪৫ হাজার ১০০ সেনা নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৩ লাখ ৯০ হাজার। যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অপরিসীম– বলেন তিনি। এদিকে কিয়েভের জন্য শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে নতুনভাবে ৬ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা করবে লন্ডন। গতকাল বুধবার ইউক্রেন সফরকালে এ বিষয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ঘোষণা দেবেন।

ল্যামি বলেছেন, ইউক্রেনের প্রতি আমাদের সমর্থন অটুট রয়েছে। যে কোনো ক্ষেত্রে ইউক্রেনকে শক্তিশালী পর্যায়ে নিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

Leave a Reply

ইটালি প্রবাসী দিদারের মা আনোয়ারা বেগমের…

শফিকুল ইসলাম বাদল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর Read more

কসবায় মায়ের অভিযোগে ছেলের কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে Read more
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : পুকুরের পানিতে ডুবে ইসরাত জাহান নোভা (৯) Read more

ইরান কখনও আপোস করবে না: আয়াতুল্লাহ…

অনলাইন ডেস্ক : জায়নবাদীদের সাথে ইরান কখনও আপোস করবে না Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পাঁচ দিনের…

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানার পৃথক Read more
ফাইল ছবি

প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে…

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহতদের কল্যাণ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক…

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর Read more

কারাগারে হাজতির মৃত্যু

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে জুনায়েদ মিয়া (৩২) নামে Read more

আখাউড়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

চলারপথে রিপোর্ট : কৃষকদের সেচ দক্ষতা বাড়াতে পানি ব্যবহারকারী গ্রুপের Read more

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ১১তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য: রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের Read more

স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে…

অনলাইন ডেস্ক : স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে অনশন Read more

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো ২১…

অনলাইন ডেস্ক : ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিশরসহ ২১টি Read more

রাশিয়ার বিরোধী নেতা নাভালনির কারাগারে মৃত্যু

আন্তর্জাতিক, 16 February 2024, 751 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
গত এক দশকে রাশিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিরোধী নেতা আলেক্সাই নাভালনি আর্কটিক সার্কেলের ভেতরে কারাগারে মারা গেছেন। জেল পরিষেবার বরাত দিয়ে বিবিসি আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

banner

নাভালনিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে সোচ্চার সমালোচক হিসেবে দেখা হতো। রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিবেচিত অভিযোগে তিনি ১৯ বছরের জেলের সাজা খাটছিলেন।

তাঁকে গত বছরের শেষের দিকে আর্কটিক পেনাল কলোনিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, যাকে বলা হয় রাশিয়ার সবচেয়ে কঠিন জেলগুলোর মধ্যে একটি।

ইয়ামালো-নেনেটস জেলার জেল পরিষেবা এক বিবৃতিতে বলেছে, শুক্রবার হাঁটার পরে নাভালনি ‘অসুস্থ বোধ করেছিলেন’। তিনি ‘প্রায় অবিলম্বে জ্ঞান হারিয়েছিলেন’। জরুরি মেডিক্যাল টিমকে অবিলম্বে ডাকা হয়েছিল। তবে তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘জরুরি চিকিৎসকরা বন্দিকে মৃত ঘোষণা করেছেন। মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা হচ্ছে।’

নাভালনির আইনজীবী লিওনিড সলোভিভ রুশ গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি এখন কোনো মন্তব্য করবেন না।

তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী লিওনিড ভলকভ এক্সে লিখেছেন, ‘রুশ কর্তৃপক্ষ একটি স্বীকারোক্তি প্রকাশ করেছে তারা আলেক্সাই নাভালনিকে কারাগারে হত্যা করেছে। আমাদের কাছে এটি নিশ্চিত করার বা প্রমাণ করার কোনো উপায় নেই যে এটা সত্য নয়।’

এদিকে জেল পরিষেবা নাভালনির মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে বড় ঘরোয়া প্রতিপক্ষের সাহসকে স্বাগত জানায়। এ ছাড়া ফ্রান্স বলেছে, তিনি রুশ ‘নিপীড়ন’ প্রতিরোধে তাঁর জীবন দিয়েছেন। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর জন্য একটি বড় দায় বহন করেছে।

চেলিয়াবিনস্ক শহরে সফরে থাকা পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শুধু বলেছেন, নাভালনির মৃত্যুর কথা ‘প্রেসিডেন্টকে জানানো হয়েছে’।

ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, তিনি রাশিয়া থেকে আসা খবরে দুঃখিত ও বিরক্ত। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, নাভালনির মৃত্যু একটি ভয়ংকর সংবাদ। তাঁর মতে, রাশিয়ার এ বিরোধী নেতা আজীবন অবিশ্বাস্য সাহস দেখিয়েছেন।

লাটভিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিজানিস কারিনস এই খবরে ‘গভীরভাবে বিচলিত’ জানিয়ে বলেছেন, নাভালনির ‘মৃত্যু সম্পূর্ণরূপে পুতিনের অপরাধমূলক সরকারের বিবেকের ওপর নির্ভর করছে’।

বিবিসির তথ্য অনুসারে, রুশ প্রেসিডেন্টের অধিকাংশ সমালোচক রাশিয়া থেকে পালিয়ে গেছেন। তবে কয়েক মাস চিকিৎসার পর আলেক্সাই নাভালনি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ফিরে যান। ২০২০ সালের আগস্টে সাইবেরিয়া ভ্রমণের শেষে তাঁকে নোভিচক নার্ভ এজেন্ট দিয়ে বিষ দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁর দল তাঁকে বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিয়ে যেতে সফল হয়। পরে তিনি মস্কোতে ফিরলে তাঁকে অবিলম্বে হেফাজতে নেওয়া হয়। পরবর্তী ৩৭ মাসে তিনি আর কখনো জেল ত্যাগ করেননি।

নাভালনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যালট বাক্সে ভ্লাদিমির পুতিনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া যুদ্ধবিরোধী প্রার্থী বরিস নাদেজদিনকে তাঁর প্রার্থিতার সমর্থনে জমা দেওয়া হাজার হাজার স্বাক্ষরের মধ্যে অনুমিত অনিয়মের কারণে নির্বাচনে দাঁড়াতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে বিমান বিধ্বস্ত, ৫ কানাডিয়ান নিহত

আন্তর্জাতিক, 6 March 2024, 761 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ন্যাশভিলে মহাসড়কের কাছে একটি ছোট ব্যক্তিগত বিমান বিধ্বস্ত হয়ে স্থানীয় সময় ৪ মার্চ সোমবার পাঁচজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে গতকাল ৫ মার্চ মঙ্গলবার এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

banner

মেট্রোপলিটন ন্যাশভিল পুলিশ বিভাগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেছে, বিমানটিতে থাকা পাঁচজন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তারা একক ইঞ্জিনবিশিষ্ট বিমানটির ধ্বংসাবশেষের ছবিও পোস্ট করেছে।

এ ছাড়া ন্যাশভিল ফায়ার ডিপার্টমেন্ট এক্সে বলেছে, জরুরি কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বড় অগ্নিকাণ্ড দেখতে পান।

ন্যাশভিল পুলিশের মুখপাত্র ডন অ্যারনের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বিমানটি স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে ইঞ্জিন বিকল এবং বিদ্যুৎবিভ্রাটের খবর দিয়েছিল। ন্যাশভিলের জন সি টিউন বিমানবন্দরে বিমানটির জরুরি অবতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে এটি বিধ্বস্ত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (এফডিএ) এবং জাতীয় পরিবহন সুরক্ষা বোর্ড এ দুর্ঘটনার তদন্ত করবে বলেও মুখপাত্র জানিয়েছেন।

মেক্সিকোয় ভয়াবহ আগুন, নিহত ৩৯

আন্তর্জাতিক, 28 March 2023, 1467 Views,

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মেক্সিকোয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি বন্দিশিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরো অনেকে। স্থানীয় সময় ২৭ মার্চ সোমবার দেশটির যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তবর্তী সিউদাদ জুয়ারেজ শহরের একটি অভিবাসনকেন্দ্রে আগুন ছড়িয়ে পড়লে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

banner

মেক্সিকোর ইতিহাসে বন্দিশিবিরে আগুনের ক্ষেত্রে এটি অন্যতম প্রাণঘাতী ঘটনা। ঘটনাস্থলের ছবিতে ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত এলাকাজুড়ে অ্যাম্বুলেন্স, দমকলবাহিনী, মর্গের গাড়ি ও রূপালি চাদরে ঢাকা মরদেহের সারি দেখা গেছে।

মেক্সিকোর ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ইনস্টিটিউট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্থাপনাটিতে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে যাওয়া ৬৮ জন পুরুষ বন্দি ছিলেন। তাদের মধ্যে আগুনে অন্তত ৩৯ জন মারা গেছেন। এছাড়া আহত ২৯ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে মেক্সিকোর অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন তদন্তকারীরা।

হতাহতদের পরিচয় বা জাতীয়তা এখনো প্রকাশ করেনি মেক্সিকোর ন্যাশনাল মাইগ্রেশন ইনস্টিটিউট (আইএনএম)। আগুন কীভাবে লাগলো সে বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি।

সিউদাদ জুয়ারেজের ফেডারেল ডেপুটি আন্দ্রেয়া শ্যাভেজ আগুনের ঘটনায় গভীর দুঃখপ্রকাশ করে বলেছেন, আমরা অফিসিয়াল তথ্যের জন্য অপেক্ষা করবো। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

সিউদাদ জুয়ারেজ শহরটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অন্যতম প্রধান রুট। সেখানকার বন্দিশিবিরগুলোতেও এ ধরনের লোকজনই বেশি।

তবে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে মেক্সিকোর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছিল।

অধিকাংশ ভেনিজুয়েলানসহ একদল অভিবাসনপ্রত্যাশী গত অক্টোবরে টিজুয়ানার একটি অভিবাসনকেন্দ্রের ভেতর দাঙ্গা শুরু করেছিল। গত নভেম্বরে গুয়াতেমালার সীমান্তের কাছে তাপাচুলায় মেক্সিকোর বৃহত্তম বন্দিশিবিরে দাঙ্গা হয়েছিল। যদিও এ দুটি ঘটনায় কেউ মারা যাননি।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে যে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

আন্তর্জাতিক, জাতীয়, 22 September 2023, 1698 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরও বহুগুণ বাড়াতে বৈশ্বিক সম্প্রদায় বিশেষ করে আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

banner

রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে উদ্ভূত এই (রোহিঙ্গা) সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরও বহুগুণ বাড়াতে হবে, সব বিকল্পের মধ্যে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনই সবচেয়ে কার্যকর।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ‘তারা কি আমাদের ভুলে গেছে?’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের এক ইভেন্ট আয়োজন করে। ইভেন্টটি সঞ্চালনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।

শেখ হাসিনা তার প্রথম ও দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, আমি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন বিষয়টি সমাধান করে এবং এই দুর্দশাগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের জীবন ধারণের জন্য আমাদের মানবিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এ বিষয়টিকে তাদের এজেন্ডার শীর্ষে রাখে।

তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, এই জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত, নিয়মে পরিণত করা এবং ঘৃণ্য নৃশংসতাকারী অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য চলমান এবং প্রচলিত আইনি ও বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ছয় বছর ধরে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের মর্মান্তিক বিতাড়নের ঘটনা দেখে আসা বিশ্বকে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের স্থায়ী দুর্ভোগের কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে তারা আজ এখানে সমবেত হয়েছেন।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি নির্মম হত্যাকাণ্ডের কারণে কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর পর থেকে আমরা আমাদের মাটিতে তাদের আশ্রয় এবং তাদের মৌলিক ও মানবিক সেবা দিয়ে আসছি। আমি আমাদের সব অংশীজন এবং বন্ধুদের তাদের সংহতির পাশাপাশি মানবিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

ইস্যুটি এখন স্থবিরতার পর্যায়ে পৌঁছেছে উল্লেখ তিনি বলেন, গত ছয় বছরে একজন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেনি। বাংলাদেশে তাদের দীর্ঘ উপস্থিতি কেবল তাদের আরও হতাশার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে না, এটি কক্সবাজারের পরিস্থিতিকেও অনিশ্চিত করে তুলছে। আশ্রয়দাতা সম্প্রদায় আজ তাদের উদারতার শিকারে পরিণত হয়েছে, বলেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের চাহিদার প্রতি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি মানবিক সহায়তা পরিকল্পনায় ক্রমবর্ধমান অর্থায়নের অভাব স্পষ্ট।

তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য অনেক কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা যে, রেকর্ড পরিমাণ উচ্চতায় পৌঁছেছে সে বিষয়ে তারা অবগত আছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব রোহিঙ্গাদের ভুলে যেতে পারে না। কেননা, ২০১৭ সালে তাদের দেশত্যাগ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না এবং তারা কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়েছে।

তিনি বলেন, তাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিকারে এগিয়ে আসতে সবারই দায়িত্ব রয়েছে। তাদের ভরণপোষণের জন্য মানবিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটিই সব কিছু নয়। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা মিয়ানমারে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে এবং মর্যাদার সঙ্গে নিশ্চিত জীবনযাপন করতে পারবে। এবং এর জন্য আমাদের সমস্যাটির মূলে গিয়ে সমাধান করতে হবে, যা মিয়ানমারেই রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার দেশ জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং আমরা আইসিজে, আইআইএমএম এবং আইসিসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। আমি অন্য সব সদস্য রাষ্ট্রকে এই বিষয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার সাথে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানাই।

চোখের পানিতে ভিজল আরাফাত ময়দান

আন্তর্জাতিক, 27 June 2023, 1166 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
এ এক অভূতপূর্ব দৃশ। নিজের পাপের বোঝার কথা স্মরণ করে লাখ লাখ মুসল্লির অবিরল অশ্রুধারায় ভিজেছে ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দান। তাঁদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আরাফাত ময়দান প্রকম্পিত হয়েছে।

banner

আজ ২৭ জুন মঙ্গলবার এ ময়দানে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র হজ পালন করেছেন হজযাত্রীরা। এসময় হাজিদের কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও পাপমুক্তির আকুল বাসনার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় মহান আল্লাহর কাছে অঝোরে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। নামাজ আদায় করার পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থেকেছেন।

মহান আল্লাহর অশেষ রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় সার্বক্ষণিক জিকির করেছেন। প্রায় সারাক্ষণ তালবিয়া পড়েছেন। আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য প্রকাশ করছেন।

এর আগে, পবিত্র হজ পালনের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিতে সৌদি আরবে আসা বিশ্বের ২৫ লাখ মুসল্লি হজের দ্বিতীয় রুকন আদায়ের জন্য সোমবার সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানেই অবস্থান করেন তাঁরা। আরাফাতের দিনকে মনে করা হয় বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। এদিন মহান আল্লাহ বান্দাদের পাপ মাফ করে দেন।

করোনা মহামারি পেছনে ফেলে এবার হজ আবার আগের রূপে ফিরে এসেছে। বলা হচ্ছে, এবারের হজে সবচেয়ে বেশি মুসল্লি এসেছেন। এই সংখ্যা ২৬ লাখেরও বেশি।

ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানের তিন দিকে জাবাল বা পাহাড়। এই পাহাড়ের নাম রহমতের পাহাড় (জাবালে রহমত)। দোয়া কবুলের স্থান হওয়ায় কোনো কোনো হজযাত্রী জাবালে রহমত পাহাড়ে উঠেও ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন। কোনো কোনো হজযাত্রী আরাফাত ময়দানে যাঁর যাঁর মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে ইবাদত বন্দেগী করেছেন। আরাফাত ময়দানে একটি উঁচু পিলার রয়েছে। এই পিলারটিও দোয়া কবুলের স্থান। আদি পিতা হজরত আদম (আ.) এবং আদি মা হাওয়া (আ.) আরাফাতের ময়দানে এসে পুনর্মিলনের সুযোগ পেয়েছিলেন। এ জন্য তাঁরা এই ময়দানেই মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছিলেন।

পাকিস্তানের ২৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী উসমান আরশাদ ৬ মাস হেঁটে এবার পবিত্র হজে এসেছেন। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে পেরে বাকরুদ্ধ তিনি। আর মিশরীয় ব্যবসায়ী ইয়াহিয়া আল ঘানামের আবেগ যেন হৃদয় ছোঁয়া। তিনি চোখের পানি সংবরণ করতে পারছেন না কিছুতেই। বললেন, পবিত্র হজে এসে গত ১৫ দিনে আমি দৈনিক এক ঘণ্টার বেশি ঘুমাইনি।

আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরা থেকে জোহরের নামাজের আগে মিম্বরে দাঁড়িয়ে আরবি ভাষায় হজের খুতবা পাঠ করা হয়। এবার খুতবা দিয়েছেন শায়খ ড. ইউসুফ বিন মোহাম্মদ। তিনি নামাজেও ইমামতি করেছেন। হজের খুতবা বাংলাসহ প্রায় ১৪টি ভাষায় অনুবাদ করে শুনানো হয়েছে।

খুতবার পর মসজিদে নামিরায় সমবেত মুসলমানরা এক আজান এবং দুই ইকামতে জোহর ও আছরের নামাজ এক সঙ্গে জামাতে আদায় করেন। মসজিদে নামিরা থেকে দূরে অবস্থান করা হজযাত্রীরা জোহর এবং আছরের নামাজ আলাদাভাবে আদায় করেন নিজেদের তাঁবুতে।

তাঁরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পর কিছু সময় পর্যন্ত অবস্থান করেন আরাফাতের ময়দানে। সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছু সময় পরে মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই আরাফাত ময়দান থেকে হজযাত্রীরা প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। মুজদালিফায় গিয়ে এশার নামাজের সময় এক সঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন। পরে সেখানেই খোলা আকাশের নীচে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে রাত যাপন করেন তাঁরা। রাতে প্রতীকী শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপের জন্য সংগ্রহ করেন ৭০টি পাথর।

আরাফাত ময়দানে আসার আগে হজযাত্রীরা গত ৮ জিলহজ পবিত্র হজ পালনের প্রথম আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে দু’দিকে পাহাড় পরিবেষ্টিত এলাকা মিনায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে অবস্থান করেন। হজযাত্রীদের মধ্যে পুরুষরা হজের প্রথম রুকন ইহরাম (শরীরের নিচের অংশে আড়াই হাত বহরের আড়াই গজের এক টুকরা কাপড় আর গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য একই বহরের তিন গজের এক টুকরা সাদা রংয়ের সেলাইবিহীন কাপড়) পরিধান অবস্থায় রয়েছেন। নারীরা আছেন পর্দায় আচ্ছাদিত। তাঁরা আগামী ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনা ও মক্কায় অবস্থান করবেন।

বুধবার ফজরের নামাজ আদায়ের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় অবশ্যই মুজদালিফায় অবস্থান করবেন হাজিরা। এরপর তাঁরা যাবেন মিনায়। সেখানে মিনার জামারায় (শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোঁড়ার স্থান) বড় শয়তানের উদ্দেশে প্রতীকী সাতটি পাথর নিক্ষেপ শেষে পশু কোরবানি এবং রাসুলুল্লাহর (সা.) আদর্শ অনুসরণে পুরুষরা মাথা মুণ্ডন করে গোসল করবেন। নারীরা চুলের অগ্রভাগ থেকে প্রায় এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল কাটবেন। এরপর হাজীরা সেলাইবিহীন ইহরাম খুলে ফেলবেন এবং পশু কোরবানি দেবেন। পরে তাঁরা হজের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ রুকন আদায়ের জন্য মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে সুবহে সাদিকের পর থেকে কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন।

কাবা শরীফের সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাতবার ‘সাঈ’ (দৌড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার ফিরে যাবেন মিনায়, নিজেদের তাঁবুতে। হজযাত্রীরা ১১ জিলহজ আবার মিনার জামারায় গিয়ে জোহরের নামাজের পর থেকে পর্যায়ক্রমে ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে সাতটি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। একইভাবে ১২ জিলহজ আবারও ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপের পর সন্ধ্যার আগে তাঁরা মিনা ত্যাগ করবেন। পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে সৌদি আরবের হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময়ে কাবা শরীফকে ফরজ তাওয়াফের মধ্য দিয়ে।