জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

ধর্ম, 7 February 2025, 457 Views,

ইসলাম ডেস্ক :
জুমার নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ নামাজ ছেড়ে দিলে হাদিসে ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই জুমার নামাজ গুরুত্বের সাথে পড়া উচিত। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দিবস। পবিত্র কোরআনে সূরা আল জুমায় ইরশাদ করা হয়েছে,

banner

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

‘মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।’ (সূরা: আল জুমা, আয়াত: ৯)

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনেই হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন এবং এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়।

মালেক ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনে সাব্বাক থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো এক জুমার দিনে বললেন, ‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! আল্লাহ তায়ালা এই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।’ আরবি শব্দ জুমুআ- এর অর্থ একত্র হওয়া। শুক্রবারকে বলা হয় ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন।

শুক্রবারের দিন যোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমার খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দেবেন তার খুতবায়।

যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, সে একটি উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা দান করার সওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। (মুসনাদে শাফী : ৬২, জামে লি ইবনে ওহাব : ২২৯, মুসনাদে হুমাইদি : ৯৬৩)।

হজরত সালমান (রা.) হতে একটি হাদিস বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তার পর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসনাদে আবু দাউদ : ৪৭৯)।

জুমার নামাজ প্রত্যেক বালেগ পুরুষের জন্যই ওয়াজিব। হাদিসে এসেছে, হজরত হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক (প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ) মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব- অপরিহার্য কর্তব্য। (সুনানে নাসায়ী)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অবহেলা অলসতা করে পর পর তিন জুমা নামাজ ছেড়ে দিল, মহান আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। (আবু দাউদ)।

আরেক হাদিসে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো ওজর এবং অনিষ্টের ভয় ছাড়া জুমার নামাজে অংশ গ্রহণ করে না, মুনাফিকের এমন দপ্তরে তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়, যা কখনো মোছা বা রদবদল করা হয় না।

কারোর জুমার নামাজ এক রাকআত ছুটে গেলে বাকি আর এক রাকআত ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে পড়ে নিলে তার জুমা হয়ে যাবে। অনুরূপ কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকুর আগে থেকে পেলেও ওই রাকআত এবং তার সঙ্গে আর এক রাকআত পড়লে তারও জুমার নামাজ হয়ে যাবে।

কিন্তু যদি কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ শেষ হওয়ার পর জামাআতে শামিল হয়, তাহলে সে জুমার নামাজ পাবে না। এই অবস্থায় তাকে যোহরের ৪ রাকআত আদায়ের নিয়তে জামাআতে শামিল হয়ে ইমামের সালাম ফিরার পর ৪ রাকআত ফরজ পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, সৌদি উলামা-কমিটি ১/৪১৮, ৪২১)।

আর কেউ যদি জুমার নামাজ না পায় বা মসজিদে গিয়ে দেখে জুমা শেষ হয়ে গেছে তবে তাকে যোহরের নামাজ পড়তে হবে। কারণ জামাআত ছাড়া জুমার নামাজ হয় না।

হাদিসে এসেছে, ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার এক রাকআত পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি যেন আর এক রাকআত পড়ে নেয়। কিন্তু যে (দ্বিতীয় রাকআতের) রুকূ না পায়, সে যেন জোহরের ৪ রাকআত পড়ে নেয়।’ (ইবনে আবী শাইবা, ত্বাবারানী, বায়হাকী, আলবানী : ৬২১)।

কোনো ইমাম সাহেব যদি বিনা ওজুতে জুমার নামাজ পড়িয়ে নামাজের শেষে মনে হয়, তাহলে মুক্তাদির নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। আর ইমাম ওই নামাজ কাজা করতে ৪ রাকআত জোহর পড়বেন। (আল-মুন্তাকা মিন ফাতাওয়াল ফাওয়া : ৩/৬৮)।

জুমার খুতবা অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। জুমার খুতবা হলো ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন কোনো প্রকার কথা বলা যাবে না। এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখে ‘চুপ কর’ এ কথাও বলা যাবে না। কারণ, হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ এসেছে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমামের খুতবা দেওয়া অবস্থায় তুমি যদি তোমার সাথীকে বল, তুমি চুপ কর, তাহলে তুমি অনর্থক কথা বললে’।

ইমাম আহমদ তার বর্ণনায় হাদিসে আরো বর্ধিত করেন, অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো অনর্থক কর্ম করল, তার জন্য ওই জুমায় আর কিছু রইল না।

Leave a Reply

ইটালি প্রবাসী দিদারের মা আনোয়ারা বেগমের…

শফিকুল ইসলাম বাদল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর Read more

কসবায় মায়ের অভিযোগে ছেলের কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে Read more
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : পুকুরের পানিতে ডুবে ইসরাত জাহান নোভা (৯) Read more

ইরান কখনও আপোস করবে না: আয়াতুল্লাহ…

অনলাইন ডেস্ক : জায়নবাদীদের সাথে ইরান কখনও আপোস করবে না Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পাঁচ দিনের…

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানার পৃথক Read more
ফাইল ছবি

প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে…

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহতদের কল্যাণ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক…

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর Read more

কারাগারে হাজতির মৃত্যু

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে জুনায়েদ মিয়া (৩২) নামে Read more

আখাউড়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

চলারপথে রিপোর্ট : কৃষকদের সেচ দক্ষতা বাড়াতে পানি ব্যবহারকারী গ্রুপের Read more

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ১১তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য: রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের Read more

স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে…

অনলাইন ডেস্ক : স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে অনশন Read more

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো ২১…

অনলাইন ডেস্ক : ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিশরসহ ২১টি Read more

বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেছে, কাল রোজা শুরু

জাতীয়, ধর্ম, 1 March 2025, 291 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের আকাশে আজ ১ মার্চ শনিবার রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ২ মার্চ রবিবার রোজা শুরু হবে।

banner

১ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদ দেখা কমিটি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। কমিটি জানায়, চাঁদ দেখা যাওয়ায় শনিবার ২৯ তম দিনে শেষ হচ্ছে শাবান মাস। আর আগামীকাল রবিবার শুরু হবে রমজান মাস। ফলে আজ দিবাগত রাতে সাহরি খেয়ে রবিবার থেকে রোজা রাখবেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

রমজান মাসের চাঁদ দেখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ১ মার্চ শনিবার বাদ মাগরিব জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি বৈঠকে বসে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

এদিকে, গতকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সৌদি আরবে হিজরি ১৪৪৬ সনের রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়। ফলে আজ ১ মার্চ শনিবার দেশটিতে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে রোজা।

আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর

জাতীয়, ধর্ম, 27 March 2025, 227 Views,
ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :
আজ ২৭ মার্চ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। এই রাত মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই রাত ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটান। ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাত শবে কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই শবে কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত। শবে কদর উপলক্ষে ২৭ রমজান সরকারি ছুটি থাকে। এবার দিনটি শুক্রবার পড়েছে।

banner

শবে কদরের রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়। এই রাতকে কেন্দ্র করে পবিত্র কোরআনে ‘আল-কদর’ নামে একটি সুরাও আছে। ‘শবে কদর’ কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত।

পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর আজ ২৭ মার্চ বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে শবে কদরের রজনী। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে সারা দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদতের মাধ্যমে পালন করবেন পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাত।

শবে কদর বা লাইলাতুল কদর মহান আল্লাহর এক অফুরন্ত দান। তার নৈকট্য অর্জনের এক পবিত্র রজনী। পাপ মোচন এবং কল্যাণ লাভের এক অনন্য রাত। ভাগ্য নির্ধারণের মাহেন্দ্রক্ষণ।

এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে ইবাদত করবেন। মুসলমানরা নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, দোয়া, মিলাদ মাহফিলের মধ্য দিয়ে শবে কদরের রাত কাটাবেন।

পবিত্র কোরআন ও একাধিক হাদিসের ভাবার্থ থেকে প্রতীয়মান হয়, লাইলাতুল কদর রাতে কোরআনে কারিম নাজিল হয়েছিল। তাই এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়।

মুমিন বান্দার সাথে ফেরেশতাদের সাক্ষাৎ লাভের এক পবিত্র মুহূর্ত। নেকি হাসিলের এক পরম সুযোগ। এক রাতেই অর্জিত হয় হাজার মাসের ইবাদতের সওয়াব। এ রাতকে ঘিরেই সৃষ্টি হয় আসমানবাসীদের মাঝে আনন্দের আবহ।

এ ধরায় অবতীর্ণ হন জিবরাঈল আ. তার কাফেলাসহ। মুসাফাহা করেন ইবাদতগুজার প্রত্যেক বান্দার সঙ্গে। সৃষ্টি হয় দয়ার সাগরে ঢেউয়ের। বর্ষিত হয় রহমতের বারি সুবহে সাদিক পর্যন্ত।

কদর রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রজনীতে ফেরেশতাগণ ও রুহ (জিবরাইল আ.) অবতরণ করেন (এই পৃথিবীতে)। তাদের রবের হুকুমে প্রত্যেক ভালো এবং কল্যাণকর বিষয় নিয়ে। শান্তিই- শান্তি সেই রজনী সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত। (সুরা কদর ৩-৫)

নবীজি সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস এবং সওয়াব প্রাপ্তির প্রত্যাশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের গুনাহ সমুহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে পূর্ণ বিশ্বাস ও সওয়াব প্রাপ্তির আশায় কিয়াম (ইবাদত-বন্দেগি) করবে, তার পূর্বের গুনাহ সমুহ মাফ করে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারি ২০১৪)

পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। শবে কদর উপলক্ষে আগামীকাল ২৮ মার্চ শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকবে।

অসৎ সঙ্গ থেকে বাঁচার উপায়

ধর্ম, 18 February 2025, 250 Views,

মুফতি আবদুল্লাহ নুর:
সুপথ গ্রহণে অসৎ সঙ্গ একটি বাধা। অসৎ মানুষরা তাদের সঙ্গীকে সৎ হওয়ার সুযোগ দিতে চায় না। সঙ্গীদের কেউ সুপথে চলতে চাইলে অসৎ মানুষ নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। যেমন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, অতীত পাপের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া, আল্লাহর ক্ষমা লাভের ব্যাপারে হতাশ করা, পার্থিব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় দেখানো ইত্যাদি। যারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন তাঁদের প্রতি পরামর্শ হলো আপনি আপনার ইচ্ছার ওপর অটল থাকুন, ধৈর্য ধারণ করুন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন। অচিরেই আল্লাহ আপনার জন্য রাস্তা খুলে দেবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তুমি কোনো সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে। যারা নির্ভর করে আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার উদ্দেশে সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)। আর যারা আপনাকে অসৎ পথে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় তাদের এড়িয়ে চলুন। কেননা এসব মানুষ ও জিন শয়তান পরস্পরকে সাহায্য করে যেন আপনাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারে। এ জন্য আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন, ‘বলুন! আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রভুর কাছে, মানুষের মালিকের কাছে, মানুষের মাবুদের কাছে খান্নাস শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে। যারা মানুষের বক্ষে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষ ও জিনদের মধ্যে থেকে।’ (সুরা : নাস, আয়াত : ১-৬)। তাদের সান্নিধ্য ত্যাগ আপনার ভেতরও বিরহ জাগিয়ে তুলতে পারে, তবে তা সাময়িক। কিন্তু আপনি যখন ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত হবেন, তখন এই ব্যথা আপনার কাছে বিতৃষ্ণায় পরিণত হবে। কেননা তখন আপনি বুঝতে পারবেন অসৎ বন্ধুরা পরকালে আক্ষেপের কারণ হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘জালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আমি যদি রাসুলের সঙ্গে সৎপথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। আমাকে সে বিভ্রান্ত করেছিল আর কাছে উপদেশ আসার পর। শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ২৭-২৯)। যখন তারা আপনাকে বিরক্ত করবে অথবা নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হবে, তখন আপনি মনকে বোঝাবেন আল্লাহর আনুগত্য উত্তম, নাকি মন্দ মানুষের? আল্লাহর অনুগ্রহ বেশি, নাকি অসৎ বন্ধুদের? আল্লাহ বেশি হকদার নাকি তাঁর অবাধ্য সৃষ্টিরা? আপনি অবিরাম আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকুন, তাঁর সাহায্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করুন। ঈমান ও তার দাবি সম্পর্কে সচেতন হোন। আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। কেননা আল্লাহর অঙ্গীকার হলো, ‘আল্লাহ তাদের দৃঢ়পদে রাখবেন, যারা ঈমান এনেছে শাশ্বত বাণীর ওপর দুনিয়ার ও আখিরাতের জীবনে।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ২৭)। আপনাকে যদি তারা ত্যাগ করে, সুন্দর আচরণ ও সহযোগিতার দুয়ার বন্ধ করে দেয়, তবে আপনি বিখ্যাত সাহাবি কাআব বিন মালিক (রা.)-এর ঘটনা স্মরণ করুন। তিনি তাবুকের যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সাহাবিকে বলেছিলেন, তাঁরা যেন তাঁকে বয়কট করে চলে, যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ফায়সালা আসে। তখন তাঁর নিকট গাসসানের বাদশাহ এই মর্মে চিঠি লেখেন—‘আমি জানতে পেরেছি যে আপনার সাথি আপনার সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার করেছে। আল্লাহ আপনাকে অপমানিত করবেন না এবং শেষ করেও দেবেন না। সুতরাং আপনার উচিত আমাদের সঙ্গে মিলে যাওয়া।’ সে চেয়েছিল এই সাহাবিকে মদিনা থেকে বের করে নিয়ে নিজের দলে টেনে নিতে, যেন তিনি অমুসলিম দেশে গিয়ে ঈমানহারা হয়ে যান। কিন্তু কাআব (রা.)-এর দৃঢ়তা দেখুন! তিনি বলেন, আমি তা পাঠ করে বললাম, এটিও একটি পরীক্ষা। আমি চিঠিটি দলা পাকিয়ে চুলার মধ্যে ছুড়ে ফেললাম এবং তা পুড়িয়ে ফেললাম। আপনিও এমন দৃঢ়তা অবলম্বন করবেন, যেন শয়তান ও তাদের দোসরদের মন ভেঙে যায়, তারা হতাশ হয়ে ফিরে যায় অথবা আপনার দৃঢ়তা দেখে তারা ঈমান ও ইসলামের পথে ফিরে আসবে। আল্লাহ আপনাকে বলছেন, ‘অতএব, আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য, আর এই অবিশ্বাসীরা যেন আপনাকে বিপথগামী করতে না পারে।’ (সুরা : রোম, আয়াত : ৬০)। আল্লাহ সবাইকে দ্বিনের ওপর অটল থাকার তাওফিক দিন। আমিন।

banner

রমজানের রাতে স্ত্রীর সঙ্গে শয্যাযাপন কী জায়েজ?

ধর্ম, 10 March 2025, 150 Views,

ইসলাম ডেস্ক :
আল্লাহ ইরশাদ করেন,

banner

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ

অর্থ : রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সহবাস হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পোশাকের মতো এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাকের মতো। আল্লাহ জানেন তোমরা তোমাদের নিজেদের সঙ্গে অবিচার করছিলে। তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করেছেন।

এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পারবে এবং অনুসন্ধান কোরো মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন। (বাকারাহ, আয়াত : ১৮৭)

উল্লিখিত আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, বারা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী (সা.)-এর যুগে সাহাবীদের আমল ছিল, রোজা রাখার পর ইফতারের সময় হলে যদি ইফতার করার আগেই ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে এই রাত ও পরের দিন সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছুই আহার করা যাবে না।

কায়স ইবন সিরমা আনসারি (রা.) একবার রোজা পালন করছিলেন। ইফতারের সময় তিনি স্ত্রীর কাছে এসে বললেন, কোন খাবার আছে? স্ত্রী বলল, নেই।

তবে আপনার জন্য কিছু খুঁজে আনছি।

এদিকে ওই সাহাবি সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত থাকায় তার দুই চোখে ঘুম চলে আসে। তার স্ত্রী এসে তাকে ঘুমন্ত দেখে বলল, হায়, আপনিত বঞ্চিত। পরদিন দুপুরে ওই সাহাবি বেঁহুশ হয়ে পড়েন।

নবী (সা.)-এর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তখন এই আয়াত নাজিল হয়-

(أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ)

অর্থ : ‘রোহার রাত্রে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে।’

তখন এই খবরে সাহাবিরা খুবই আনন্দিত হন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৩৪)

নারীদের অজু-গোসল নামাজ-রোজার গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

ধর্ম, 11 February 2025, 324 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ইবাদত, পর্দা, পবিত্রতা, সাজ-সজ্জা ইত্যাদি বিষয়ে কিছু ভিন্নতা রয়েছে নারীদের। শরিয়তের বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে আলাদা এসব মাসয়ালা জানা নারীদের জন্য জরুরি। নিচে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসায়েল তুলে ধরা হলো।

banner

অজু-গোসলে নারীদের যেসব মাসয়ালা জানা জরুরি
* শিশুকে দুধ পান করানোর কারণে অজু ভঙ্গ হবে না। তবে নামাজ অবস্থায় কোনো শিশু দুধ পান করে নিলে নামাজ ভেঙে যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/৬২৫)

* দুগ্ধপায়ী ছোট বাচ্চা মুখ ভরে বমি করলে তা বড় মানুষের মতোই নাপাক এবং তা কাপড়ে পড়লে ধৌত করতে হবে। মুখ ভরে বমি না করলে তা নাপাক হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/১৩৭)

* অজু-গোসলের সময় মহিলাদের নাক-ফুলের ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল মুহিতুল বুরহানি: ১/৮০)

* ফরজ গোসলে মহিলাদের চুল খোলা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ। আর বাঁধা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ নয়। কেবল চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। (শরহু মুশকিলিল আসার, হা. : ৩৮৫৪)

* ফরজ গোসলে মহিলাদের লজ্জাস্থানের বহিরাংশে পানি পৌঁছালে ফরজ আদায় হয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ অংশে পানি পৌঁছানো জরুরি নয়। আর রোজা অবস্থায় মহিলাদের ভেতরাংশে যেন পানি না পৌঁছে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, কেননা ভেতরে যাওয়ার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৫২)

* গর্ভাবস্থায় সন্তান হওয়ার আগে শেষের দিনগুলোতে মাঝেমধ্যে ঘুমের মধ্যে পানি বের হয়ে মহিলাদের শরীর ও কাপড় নষ্ট হয়ে যায়, এতে মহিলার ওপর গোসল ফরজ হবে না, তবে অজু ভেঙে যাবে এবং নির্গত পানি থেকে শরীর ও কাপড় পবিত্র করে নামাজ পড়তে হবে। কেননা সেগুলো নাপাক। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/১৫৯, ইমদাদুল ফতোয়া: ১/১০৭)

* যেসব নারী ধাতুরোগে আক্রান্ত, তাদের অজু নষ্ট হওয়ার ভয়ে যদি কেউ টিস্যু বা তুলা ধাতু আসার রাস্তায় এমনভাবে রাখে, যাতে ধাতু বাইরে আসতে না পারে, তাহলে এমতাবস্থায় সব ইবাদত আদায় করতে কোনো অসুবিধা হবে না। বরং এটিই রোগীর জন্য উত্তম পন্থা। হ্যাঁ, তুলা বা টিস্যু পেপারের বহিরাংশ যদি ভিজে যায়, তাহলে অজু নষ্ট হয়ে যাবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১০)

* মহিলাদের ‘হায়েজ’ তথা মাসিক রক্তস্রাবের ওপর শরয়ি বিধানের ক্ষেত্রে সর্বনিম্নে তিন দিন আর ঊর্ধ্বে ১০ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লিখিত দুই সংখ্যার প্রথমটির কম হলে কিংবা দ্বিতীয়টির বেশি হলে তখন তা ‘ইস্তিহাজা’ বা রোগ হিসেবে ধর্তব্য হয়। আর দুই স্রাবের মাঝখানে ১৫ দিন পবিত্র থাকা আবশ্যক। কারো যদি স্রাবের নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকে, আর সে কোনো মাসে অভ্যাসের বিপরীত ১০ দিনের পরও রক্ত দেখতে পায়, তাহলে অভ্যাসের ভেতরে আসা রক্তগুলোকে হায়েজ ধরতে হবে এবং অতিরিক্তগুলোকে ইস্তিহাজা। অনুরূপ কারো যদি এক হায়েজ শেষ হওয়ার পর ১৫ দিনের আগেই আবার রক্ত দেখা দেয়, আর এভাবে কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে, তাহলে তার এই অনিয়ম চালু হওয়ার আগের হায়েজের অভ্যাস হিসাব করে ঠিক তার ১৫ দিন পরেই দ্বিতীয় হায়েজের সময় শুরু হবে, মাঝে আসা রক্তগুলোকে ইস্তিহাজা ধরতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/২৮৯)

* কোনো কারণে আগের মাসের অভ্যাস খেয়াল না থাকলে দশের বেশি হলে তার বিধান হচ্ছে, যেহেতু হায়েজের শেষ সীমা ১০ দিন, তাই ১০ দিনের পর নিয়মিত নামাজ-রোজা শুরু করবে। এক্ষেত্রে আগের মাসের পরিমাণ খেয়াল না থাকলে খুব চিন্তাভাবনার পর প্রবল ধারণা অনুযায়ী যত দিনের অভ্যাস খেয়াল হবে, ততদিনই হায়েজ হিসেবে গণ্য হবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৮৬)

* সন্তান প্রসবের পর জরায়ু থেকে যে রক্ত আসে, তাকে নিফাসের রক্ত বলা হয়। এর সর্বোচ্চ সীমা ৪০ দিন। এর সর্বনিম্ন সীমা নেই, অল্প কিছুক্ষণও হতে পারে। ‘নিফাস’ অবস্থার সব বিধান মাসিক স্রাবের অনুরূপ। নারীরা মাসিক ও প্রসবজনিত বিশেষ দিনগুলোতে নামাজ-রোজা পালন করতে পারবে না। পরে এসব নামাজের কাজাও নেই, তবে রোজা কাজা করে নিতে হবে। ইস্তিহাজা অবস্থায় শরিয়তের বিধিবিধান যথা—নামাজ, রোজা ইত্যাদি পূর্ণরূপে পালন করতে হবে এবং স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলনেও কোনো অসুবিধা নেই। (মাবসুতে সারাখসি: ৩/১৫৪-১৫৫)

* অনুরূপ হায়েজ-নিফাস অবস্থায় সহবাস থেকে বিরত থাকা একান্ত অপরিহার্য। তবে অপারগতাবশত গুনাহ থেকে বাঁচার মানসে হাঁটু থেকে নাভির মধ্যবর্তী অংশ বাদ দিয়ে অন্যান্য অঙ্গ দ্বারা যৌনস্পৃহা নিবারণ করার অবকাশ আছে। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/২৯২)

* তদ্রূপ বিশেষ দিনগুলোতে কোরআন শরিফ পড়া এবং স্পর্শ করা জায়েজ নেই। ওই সময় শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষা না দেওয়াই শরিয়তের প্রকৃত বিধান, তথাপি প্রয়োজনবশত একেক শব্দ ভিন্ন ভিন্ন করে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। তবে ওই অবস্থায় তাদের কোরআন পড়া শোনা যাবে। (ফাতহুল কাদির: ১/১৬৮)

* বই-পুস্তক বা দ্বীনি কিতাবাদি, যেখানে কোরআন শরিফের আয়াতও লিখা থাকে, এ অবস্থায় পড়া বা স্পর্শ করা জায়েজ। তবে কোরআনের আয়াত পড়া বা স্পর্শ করা যাবে না। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৭৬)

* তদ্রূপ ওই সময়ে দোয়ার অর্থবহ আয়াত বা সুরা দোয়ার নিয়তে পড়া জায়েজ। যেমন দোয়ার নিয়তে আয়াতুল কুরসি বা সুরায়ে নাস ও ফালাক ইত্যাদি পড়া জায়েজ হবে। (ফাতহুল কাদির: ১/১৬৮, রদ্দুল মুহতার: ১/১৭২, আহসানুল ফতোয়া: ২/৭১)

* ওষুধের মাধ্যমে স্রাবের সময় পিছিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞ ডাক্তার যদি বলেন, ‘এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে না’, তাহলে প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা যাবে। (ফতোয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/৪০৪)

নারীদের পোশাক ও সাজসজ্জার মাসয়ালা
* পোশাকের মধ্যে শরয়ি নীতিমালা হলো- এমন পোশাক পরবে, যা দ্বারা মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সারা শরীর ঢেকে যায় এবং কাপড় এতটুকু মোটা হওয়া চাই, যাতে ওপর দিয়ে শরীর দেখা না যায়। নারীরা পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) অভিশাপ করেছেন ওই সব পুরুষের ওপর, যারা মহিলাদের আকৃতি ধারণ করে এবং ওই সব মহিলাদের ওপর, যারা পুরুষের আকৃতি ধারণ করে।’ (বুখারি: ৫৮৮৫)

* ভ্রু প্লাক, দাঁত চিকন করে মাঝে ফাঁকা করা, শরীর খোদাই করে অঙ্কন করা জায়েজ নেই। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) অভিশাপ করেছেন ওই সব মহিলার ওপর, যারা নিজের শরীর খোদাই করে ও করায়, যারা ভ্রুর চুল উঠায় ও উঠিয়ে দেয় এবং দাঁত চিকন করে। কেননা তারা সৌন্দর্যের জন্য আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করে ফেলে।’ (বুখারি: ৪৮৮৬)

* কোনো মহিলার চেহারায় দাড়ি-মোচ উঠলে তা উপড়ে ফেলা উত্তম। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৭৩)

* অপ্রয়োজনে মহিলাদের মাথার চুল পুরুষের মতো ছোট করা নাজায়েজ। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৫৮)

* নারীরা হাতে, পায়ে ও গোটা শরীরে মেহেদি দিতে পারবে, বরং তা মোস্তাহাব। তবে এমন কোনো পলিস ব্যবহার করতে পারবে না, যার কারণে অজু-গোসলের পানি শরীরের চামড়ায় পৌঁছে না। নারীরা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে এমন পোশাক ও বোরকা পরে বের হবে, যা শালীনতা নির্দেশ করে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘পুরুষের সাজসজ্জা হলো সুগন্ধি লাগানো, যা আকর্ষণীয় রঙের হবে না। আর নারীদের সাজসজ্জা হলো রংবেরঙের, তবে তার সুগন্ধি যেন বাইরে না ছড়ায়।’ (তিরমিজি: ২৭৮৭)

নারীদের পর্দার মাসয়ালা
* নারীরা স্বামী, পিতা, দাদা, নানা ও এদের বরাবর ওপরের দিকের পূর্বপুরুষ, নিজের ছেলে, নাতি ও এর বরাবর নিচের দিকের সব পুরুষ, আপন ভাই, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই, এসব ভাইয়ের সন্তান, বোনের ছেলে, মামা, চাচা, স্বামীর বাবা, স্বামীর দাদা-নানা ও এদের বরাবর ওপরের পূর্বপুরুষ, স্বামীর আগের ঘরের সন্তান, মেয়ে ও নাতনি জামাই, দাদা-দাদি ও নানা-নানির ভাই এবং দুধ-সম্পর্কীয় এসব স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা জায়েজ। এর বাইরে অন্য পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা জায়েজ নেই। (সুরা নিসা: ২২, ২৩; বুখারি: ২৬৪৫)

* শরিয়তের বিধানমতে, স্বাভাবিক অবস্থায় মহিলারা উল্লিখিত মাহরাম পুরুষের সামনে তার মাথা, মুখমণ্ডল, গলা, পুরো হাত, পায়ের পাতা খুলতে পারবে। অনুরূপ বুক, পায়ের গোছা, বাহু খোলার অনুমতি থাকলেও বিনা প্রয়োজনে না খোলাটাই উত্তম, তবে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা হলে এগুলোও ঢাকা জরুরি। বর্তমান ফিতনার যুগে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৬৭)

* প্রয়োজনে মহিলারা মাহরাম পুরুষের সামনেও বাচ্চাদের দুধ দিতে পারবে, তবে ফিতনার আশঙ্কা হলে তা করবে না। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩২৮)

* অতি প্রয়োজনে অনন্যোপায় হলে মাহরাম ছাড়া পরপুরুষের সামনে—যেমন ডাক্তারের সামনে চেহারা ও অন্যান্য অঙ্গ প্রয়োজন অনুপাতে খোলা জায়েজ। (আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩৭০)

* এমন বৃদ্ধ নারী, যাদের প্রতি সাধারণত কামদৃষ্টি যায় না, তারা পরপুরুষের সামনে চেহারা খুলতে পারবেন। পুরুষদের জন্য তাদের দেখা বৈধ। (মাবসুতে সারাখসি: ১০/১৫৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম নারীদের তাদের আলাদা মাসয়ালাগুলো জানার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। নারী-পুরুষ সবাইকে ইসলামি শরিয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।