অসৎ সঙ্গ থেকে বাঁচার উপায়

ধর্ম, 18 February 2025, 387 Views,

মুফতি আবদুল্লাহ নুর:
সুপথ গ্রহণে অসৎ সঙ্গ একটি বাধা। অসৎ মানুষরা তাদের সঙ্গীকে সৎ হওয়ার সুযোগ দিতে চায় না। সঙ্গীদের কেউ সুপথে চলতে চাইলে অসৎ মানুষ নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। যেমন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, অতীত পাপের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া, আল্লাহর ক্ষমা লাভের ব্যাপারে হতাশ করা, পার্থিব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় দেখানো ইত্যাদি। যারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন তাঁদের প্রতি পরামর্শ হলো আপনি আপনার ইচ্ছার ওপর অটল থাকুন, ধৈর্য ধারণ করুন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন। অচিরেই আল্লাহ আপনার জন্য রাস্তা খুলে দেবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তুমি কোনো সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে। যারা নির্ভর করে আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার উদ্দেশে সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)। আর যারা আপনাকে অসৎ পথে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় তাদের এড়িয়ে চলুন। কেননা এসব মানুষ ও জিন শয়তান পরস্পরকে সাহায্য করে যেন আপনাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারে। এ জন্য আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন, ‘বলুন! আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রভুর কাছে, মানুষের মালিকের কাছে, মানুষের মাবুদের কাছে খান্নাস শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে। যারা মানুষের বক্ষে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষ ও জিনদের মধ্যে থেকে।’ (সুরা : নাস, আয়াত : ১-৬)। তাদের সান্নিধ্য ত্যাগ আপনার ভেতরও বিরহ জাগিয়ে তুলতে পারে, তবে তা সাময়িক। কিন্তু আপনি যখন ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত হবেন, তখন এই ব্যথা আপনার কাছে বিতৃষ্ণায় পরিণত হবে। কেননা তখন আপনি বুঝতে পারবেন অসৎ বন্ধুরা পরকালে আক্ষেপের কারণ হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘জালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আমি যদি রাসুলের সঙ্গে সৎপথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। আমাকে সে বিভ্রান্ত করেছিল আর কাছে উপদেশ আসার পর। শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ২৭-২৯)। যখন তারা আপনাকে বিরক্ত করবে অথবা নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হবে, তখন আপনি মনকে বোঝাবেন আল্লাহর আনুগত্য উত্তম, নাকি মন্দ মানুষের? আল্লাহর অনুগ্রহ বেশি, নাকি অসৎ বন্ধুদের? আল্লাহ বেশি হকদার নাকি তাঁর অবাধ্য সৃষ্টিরা? আপনি অবিরাম আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকুন, তাঁর সাহায্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করুন। ঈমান ও তার দাবি সম্পর্কে সচেতন হোন। আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। কেননা আল্লাহর অঙ্গীকার হলো, ‘আল্লাহ তাদের দৃঢ়পদে রাখবেন, যারা ঈমান এনেছে শাশ্বত বাণীর ওপর দুনিয়ার ও আখিরাতের জীবনে।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ২৭)। আপনাকে যদি তারা ত্যাগ করে, সুন্দর আচরণ ও সহযোগিতার দুয়ার বন্ধ করে দেয়, তবে আপনি বিখ্যাত সাহাবি কাআব বিন মালিক (রা.)-এর ঘটনা স্মরণ করুন। তিনি তাবুকের যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সাহাবিকে বলেছিলেন, তাঁরা যেন তাঁকে বয়কট করে চলে, যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ফায়সালা আসে। তখন তাঁর নিকট গাসসানের বাদশাহ এই মর্মে চিঠি লেখেন—‘আমি জানতে পেরেছি যে আপনার সাথি আপনার সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার করেছে। আল্লাহ আপনাকে অপমানিত করবেন না এবং শেষ করেও দেবেন না। সুতরাং আপনার উচিত আমাদের সঙ্গে মিলে যাওয়া।’ সে চেয়েছিল এই সাহাবিকে মদিনা থেকে বের করে নিয়ে নিজের দলে টেনে নিতে, যেন তিনি অমুসলিম দেশে গিয়ে ঈমানহারা হয়ে যান। কিন্তু কাআব (রা.)-এর দৃঢ়তা দেখুন! তিনি বলেন, আমি তা পাঠ করে বললাম, এটিও একটি পরীক্ষা। আমি চিঠিটি দলা পাকিয়ে চুলার মধ্যে ছুড়ে ফেললাম এবং তা পুড়িয়ে ফেললাম। আপনিও এমন দৃঢ়তা অবলম্বন করবেন, যেন শয়তান ও তাদের দোসরদের মন ভেঙে যায়, তারা হতাশ হয়ে ফিরে যায় অথবা আপনার দৃঢ়তা দেখে তারা ঈমান ও ইসলামের পথে ফিরে আসবে। আল্লাহ আপনাকে বলছেন, ‘অতএব, আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য, আর এই অবিশ্বাসীরা যেন আপনাকে বিপথগামী করতে না পারে।’ (সুরা : রোম, আয়াত : ৬০)। আল্লাহ সবাইকে দ্বিনের ওপর অটল থাকার তাওফিক দিন। আমিন।

banner

Leave a Reply

গাজীপুরে মামা হত্যার আসামি ভাগিনা গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : গাজীপুরে আনিসুর রহমান হত্যার মামলার আসামি ভাগিনা Read more

সদর মডেল থানায় যোগদান করেই কঠোর…

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য : আজহারুল ইসলাম সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : ফ্ল্যাট বাসা থেকে শরীর মীর (৪০) নামের Read more

নাসিরনগরে বাবাকে হত্যার ঘটনায় ছেলে আটক

চলারপথে রিপোর্ট : নাসিরনগরে আলম মিয়া (৬০) নামের এক ব্যবসায়ী Read more

আখাউড়ায় খেলাফত মজলিসের প্রার্থীর মতবিনিময়

মোঃ ইসমাইল: ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী Read more

৫০ কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ৫০ কেজি গাঁজা ও ১টি সিএনজি উদ্ধারসহ Read more

কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমায়, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের…

অনলাইন ডেস্ক : বর্ষার শেষপ্রহরে নেমে আসা অবিরাম বৃষ্টি ও Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার নতুন ওসি আজহারুল…

চলারপথে রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে Read more

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে…

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ঐতিহাসিক Read more

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : কুমিল্লার দাউদকান্দি বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) Read more

মেক্সিকোতে যাত্রীবাহী বাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১০জন…

অনলাইন ডেস্ক : মেক্সিকোর আটলাকোমুলকো শহরে একটি পণ্যবাহী ট্রেন ও Read more

কানাডায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

মুমিনুল হক : কানাডার টরেন্টোতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। Read more

দস্তারবন্দী ও আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনে মাওলানা মামুনুল হক

জাতীয়, ধর্ম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 9 January 2025, 1241 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ১৯৭২ সাল বাংলাদেশের জন্য কলঙ্কের বছর। ৭২ সালে এমন এক চেতনা ও সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল যা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছিনতাই করা হয়েছে।

banner

আরও পড়ুন
লন্ডন পৌঁছেছেন বেগম খালেদা জিয়া

৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে অবস্থিত হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া মাদরাসায় অনুষ্ঠিত দস্তারবন্দী ও আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন
ডিবিতে আয়নাঘর থাকবে না, থাকবে না ভাতের হোটেলও: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আল্লামা সাজিদুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি খলিল আহমদ কাসেমীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ-ইসলাম এক সূত্রে গাথা। বাংলাদেশে ইসলাম বিপন্ন হলে স্বাধীনতা টিকবে না। যারা ইসলামবিদ্বেষী তারাই বাংলাদেশের শত্রু। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গৌরবময় বছর এবং ১৯৭২ সাল বাংলাদেশের জন্য কলঙ্কের বছর। ৭২ সাল কলঙ্কের কারণ, এ বছরের শেখ মুজিবুর রহমান নতুন চেতনা তৈরি করেছিলেন যা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছিনতাই করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ৯ মাস পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশে না এসে, চলে গেলেন লন্ডনে। সেখান থেকে বাংলাদেশে না এসে চলে গেলে ভারতের নয়াদিল্লি। দেখা করলেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। তখন ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিবুর রহমান এর মুজিব কোটে কিছু নীতিকথা লিখে একটি চিরকুট ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সেই চিরকুটের কথা ছিল বাংলাদেশের গোলামির জিঞ্জির, স্বাধীনতা যুদ্ধের কৃতিত্ব ও চেতনাকে ছিনতাই করার মন্ত্র। তাই ৭২ সালের সংবিধান চার নীতি ভারতের সংবিধান থেকে পাচারকৃত।

আরও পড়ুন
ডালিম খেলে কী কী উপকার হয়?

মামুনুল হক বলেন, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতির সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান অঙ্গীকার করেছিলেন কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন তৈরি করবেন না। ৭২-এর সংবিধান করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান অঙ্গীকার ভুলে গেছেন। তাই বলি ৭২ এর সংবিধান গাদ্দারের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সংবিধান, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার সংবিধান। সংবিধানে চার মূলনীতির এক নীতি ধর্ম নিরপেক্ষতা মতবাদ বাংলাদেশে ছিল না। এই নীতি ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সুনাম করে মামুনুল হক বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। সকল রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সেখানে ভারত আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বকালের নজিরবিহীন ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছে। আমরাও ঘোষণা করতে চাই ভারতীয় আধিপত্যবাদ রুখতে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি দিল্লিতে পাঠিয়ে দিতে হবে।

এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও খতিবে বাঙাল আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব, মুফতি শাখাওয়াত হোসেন রাজি প্রমুখ।

সন্তানকে কত দিন মাতৃদুগ্ধ দেওয়া যায়

ধর্ম, 18 February 2025, 420 Views,

মাইমুনা আক্তার:
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো প্রত্যেক মায়ের কর্তব্য। কারণ মহান আল্লাহ মায়ের দুধে শিশুর বেড়ে ওঠার সব উপাদান দিয়েছেন। যেমন- আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পানি, সহজ পাচ্যকারী উপাদান ইত্যাদি সুষমভাবে থাকে মাতৃদুগ্ধে। ফলে মায়ের বুকের দুধ খাওয়া শিশু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে বেড়ে ওঠে। পাশাপাশি তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও অনেক বেশি থাকে। এর ফলে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অপুষ্টিজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পায়। শারীরির সুস্থতার পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশেও মায়ের দুধের ভূমিকা অনবদ্য। এ ছাড়া মায়ের সুস্থতা যেমন— স্তন ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধে সন্তানকে সঠিকভাবে মায়ের দুধ পান করানোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রত্যেক মায়ের উচিত সন্তান জন্মলাভের পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাকে নিয়মমাফিক দুধ পান করানো। অনেকে আবার না জেনে কোরআনের নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরও সন্তানকে বুকের দুধ পান করান। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর নির্দিষ্ট একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মাতাগণ নিজেদের বাচ্চাদেরকে পূর্ণ দুই বছর স্তন্যদান করবে, যদি দুধ খাওয়ার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৩) তাফসিরবিদরা বলেন, এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে সন্তানকে দুধ পান করানো ওয়াজিব এবং আরো বোঝা গেল যে বিশেষ ওজর ছাড়া স্তন্যদান থেকে বিরত থাকার অবকাশ নেই। (মাআরেফুল কুরআন, তাফসিরে মাযহারি, কুরতুবি, জামিউ আহকামিসসিগার : ১/১২৩) অনেক মা সন্তানকে তিন-চার বছরও দুধ খাওয়ান। আবার অনেকে আড়াই বছর খাওয়ানো যায় মনে করে এই মেয়াদ পূর্ণ করেন। এটা ভুল। সন্তান অনূর্ধ্ব দুই বছর মায়ের বুকের দুধ খেতে পারবে। দুই বছরের বেশি বয়সী সন্তানকে দুধ পান করানো নাজায়েজ। দুই বছর দুধ পান করানোর বিষয়টি উল্লিখিত আয়াতে রয়েছে। এ ছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘মায়ের দুধ পানের সময় দুই বছরই।’ (সুনানে দারাকুতনি : ৪/১৭৪, তাফসিরে মাযহারি : ১/৩২৩, মাজমাউল আনহুর : ১/৫৫২, আত্তাসহিহ ওয়াত্তারজিহ ৩৩৫, ফাতহুল কাদির : ৩/৩০৭-৩০৯) তাই প্রত্যেক মায়ের দায়িত্ব সন্তানের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তাকে অন্যান্য খাবারে অভ্যস্ত করা, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাকে মায়ের দুধ দেওয়া বন্ধ করা যায়।

banner

বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, রবিবার ঈদ

জাতীয়, ধর্ম, 30 March 2025, 484 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের আকাশে আজ ৩০ মার্চ রবিবার ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ৩১ মার্চ সোমবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হবে।

banner

সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এ বৈঠক হয়।

এদিকে, সৌদি আরবে আজ পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। গতকাল শনিবার হিজরি ১৪৪৬ সালের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পবিত্র রমজান। দুই মসজিদভিত্তিক ওয়েবসাইট ইনসাইট দ্য হারামাইন ও ফেসবুক পেজ হারামাইন শরিফাইনে এ ঘোষণা আসে।

আমাদের বুকের ভেতরে বাস করে ফিলিস্তিন

জাতীয়, ধর্ম, 12 April 2025, 444 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের মানুষের বুকে একেকটা ফিলিস্তিন বাস করে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামিক স্কলার ও আলোচক ড. মিজানুর রহমান আজহারী। আজ ১২ এপ্রিল শনিবার বিকেলে ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদে রাজধানীর ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসমাবেশে এ কথা বলেন আজহারী।

banner

কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়েছেন- জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অনেকে।

মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, জনতার এই মহাসমুদ্রে উপস্থিত হয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি, আজকের এই জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল-আকসার প্রতি বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ভৌগলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হতে পারি, কিন্তু আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের একেক জনের হৃদয়ে, বুকের ভেতরে বাস করে একেকটা ফিলিস্তিন। আজহারী আরও বলেন, আমাদের হৃদয়ে বাস করছে একেকটা গাজা, আমাদের হৃদয়ে বাস করছে একেকটা আল-কুদস।

বক্তব্যের সময় জনসমুদ্রে স্লোগান তুলেছেন মিজানুর রহমান আজহারী। গাজায় মুসলিম ভাইয়েরা কেন শহীদ হচ্ছে, এ ব্যাপারে জাতিসংঘের কাছে জবাব চেয়েছেন তিনি। ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ, আমার ভাই শহীদ কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’, ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘আল কুদুস, আল কুদুস, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’— এসব স্লোগানে মুখরিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে আজ সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে স্রোতের মতো জনতার মিছিল আসতে থাকে। এতে করে জনসমুদ্রে পরিণত হয় ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ শিরোনামে এই জমায়েতের ডাক দেয় ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’।

সবার আগে জান্নাতের দরজা খুলবেন যিনি

ধর্ম, 23 December 2024, 689 Views,

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
রাসুলুল্লাহ (সা.) সবার আগে জান্নাতের দরজা খুলবেন। আনাস (রা.) বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন নবীদের মধ্যে আমার উম্মতের সংখ্যা হবে সর্বাধিক এবং আমিই প্রথম জান্নাতের দরজা খুলব।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৬)।

banner

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় পৌঁছে দরজা খোলার জন্য বলব। তখন দ্বাররক্ষী বলবে, আপনি কে? আমি বলব, মুহাম্মাদ। তখন সে বলবে, আপনার সম্পর্কে আমাকে বলা হয়েছে যে আপনার আগে আমি যেন অন্য কারো জন্য এ দরজা না খুলি।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৭)

জান্নাতের আটটি দরজা হবে। সেগুলো হলো-
এক. বাবুস আস-সালাহ (নামাজের দরজা), যারা আন্তরিকভাবে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে, তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নাম করা হয়েছে বাবুস সালাহ বা নামাজের দরজা।

দুই. বাবুল জিহাদ (জিহাদের দরজা), যারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর পথে তার জীবন ও সম্পদ দিয়ে জিহাদ করবে, তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুল জিহাদ বা জিহাদের দরজা।

তিন. বাবুর-রাইয়ান। যারা মহান আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে রোজা রাখবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুর রাইয়ান।

চার. বাবুস-সদকা (দানের দরজা), মানুষের প্রয়োজনে যারা তাদের অর্থ-সম্পদ দিয়ে মানুষকে সহযোগিতা করবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুস সদকা।

পাঁচ. বাবুল আইমান, কেউ কেউ এই দরজাকে বাবুস শাফাআতও বলেছেন। কিয়ামতের দিন যারা নবীজির সুপারিশে বিনা হিসাবে জান্নাতে স্থান পাবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৬৮)।

ছয়. বাবুল কাজিমিনাল গইজা ওয়াল আফিনা আনিন্নাস (রাগ দমনকারী ও লোকের ভুলকে ক্ষমাকারী ব্যক্তিদের দরজা), যারা লোকদের ভুলকে ক্ষমা করে এবং নিজের রাগকে দমন করে, এই দরজার নামকরণ তাদের সম্মানে। (উমদাতুল কারি : ১৬/২৫৪)।

সাত. বাবুর-রাদ্বিন (সন্তুষ্টদের দরজা), এই দরজাকে কেউ কেউ বাবুল জিকির, বাবুল হজ, বাবুল ইলম ও বাবু লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহও বলা হয়। যারা আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট এবং আল্লাহও যাদের ওপর সন্তুষ্ট, তাদের সম্মানে এ দরজার নামকরণ হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৮১)।

আট. বাবুত তাওবা (ক্ষমা প্রার্থনার দরজা), নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তার সম্মানার্থে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ হয়েছে। এটি তাওবাকারীদের জন্য সব সময় খোলা থাকে। (জামিউস সগির, হাদিস : ৭৩২০)।