বেগানা নারীর সঙ্গে নির্জনতা ও সফরের বিধান

ধর্ম, 18 February 2025, 252 Views,

উম্মে আহমাদ ফারজানা:
সমাজের পর্দাহীনতার সয়লাবের একটি উপমা হলো গায়র মাহরাম তথা বেগানা নারী-পুরুষ নির্জনে একত্র হওয়া। ইসলাম একে হারাম ঘোষণা করেছে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যাদের স্বামী উপস্থিত নেই, সেসব নারীর কাছে তোমরা যেয়ো না। কেননা তোমাদের সবার মধ্যেই শয়তান (প্রবাহিত) রক্তের শিরায় বিচরণ করে। আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার মধ্যেও। কিন্তু আমাকে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করেছেন, তাই আমি নিরাপদ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৭২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন কখনো কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ না করে, যতক্ষণ না ওই মেয়ের কোনো মাহরাম তার সঙ্গে থাকে। কারণ সে সময় তৃতীয় জন থাকে শয়তান। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৫)। বর্তমানে নারী-পুরুষের নির্জনতাকে অনেকে পাপই মনে করে না। দেবর-ভাবী, শালী-দুলাভাই, ড্রাইভার-মহিলা গৃহকর্তা, ডাক্তার-নার্স, অফিসের বস-মহিলা পিএ, শিক্ষক-ছাত্রী, পীর, মহিলা মুরিদ ইত্যাদি বেগানা নারী-পুরুষ প্রতিনিয়ত নির্জনে একত্র হয়ে কাজ করছে। ইসলামের দৃষ্টিতে তা হারাম। বেগানা নারী সঙ্গে নিয়ে সফর: ইসলাম নারীর মর্যাদা ও সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। তাই যেখানে তাদের সম্মান বা সুরক্ষা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেখানে বিশেষ বিধান দিয়ে সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই বিবেচনায় ইসলামের বিধান হলো, মাহরাম ছাড়া একাকী সফর করা নারীদের জন্য বৈধ নয়। যাদের সঙ্গে চিরতরের জন্য বিবাহ অবৈধ, তাদের মাহরাম বা এগানা বলা হয়। এ ছাড়া অন্যদের গায়র মাহরাম বা বেগানা বলা হয়। সাধারণ সফর ও হজের সফর সব ক্ষেত্রে একই বিধান: মাহরাম ছাড়া নারীর সফর বৈধ নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে নারী আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে কোনো মাহরাম পুরুষকে সঙ্গে না নিয়ে এক দিন ও এক রাত্রির পথ সফর করা জায়েজ নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৮৮)। কোনো কোনো হাদিসে এক দিন এক রাতের পরিবর্তে তিন দিন তিন রাতের কথা এসেছে। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো নারীর সঙ্গে কোনো মাহরাম পুরুষ না থাকলে সে যেন তিন দিনের সফর না করে।’ (বুখারি : ১০৮৭)। আসলে এখানে দিন-রাত মুখ্য নয়, ইসলামের দৃষ্টিতে মাহরাম ছাড়া নারীর যেকোনো সফর বৈধ নয়। এখানে মূল কথা হলো, যদি ৪৮ মাইল (৭৮ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে সফর হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষদের থেকে নিজের কোনো মাহরাম আত্মীয় বা স্বামী সঙ্গে না থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো নারীর জন্য সফর করা জায়েজ নেই। এটি হজের সফর হোক বা উচ্চশিক্ষার জন্য সফর হোক। তার মানে এই নয় যে নারীরা ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। প্রয়োজন হলে অবশ্যই ঘরের বাইরে যাবে। আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে উম্মাহাতুল মুমিনিন সাওদা বিনতে জামআ (রা.) কোনো কারণে বাইরে গেলেন। উমর (রা.) তাঁকে দেখে চিনে ফেললেন। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! হে সাওদা! তুমি নিজেকে আমাদের কাছ থেকে লুকাতে পারনি।
এতে তিনি নবী (সা.)-এর কাছে ফিরে গেলেন এবং উক্ত ঘটনা তাঁর কাছে বলেন। তিনি তখন আমার ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন এবং তাঁর হাতে গোশতওয়ালা একখানা হাড় ছিল। এমন সময় তাঁর কাছে ওহি অবতীর্ণ হলো। ওহি শেষ হলে নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫২৩৭)। যাই হোক, সফরকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইসলাম সফরে নারীর সঙ্গে মাহরাম থাকা অপরিহার্য করে দিয়েছে। যেন সফরে মাহরাম পুরুষ নারীকে দুশ্চরিত্র লোকদের থেকে নিরাপদ রাখতে পারে এবং নারীর প্রয়োজনে তাকে সহযোগিতা করতে পারে।
মাহরাম ছাড়া নারীর একাকী সফর বৈধ না হওয়ার কারণ হলো সফরে স্বামী ও মাহরাম নারীর যতটুকু সম্মান ও সুরক্ষা করতে পারে, অন্য কেউ তা রক্ষা করতে পারে না। আর আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.) যে বিধান দিয়েছেন, মুসলমানরা তা মানতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা আছে কী নেই, বদনাম হবে কী হবে না, তা বিবেচ্য নয়। আর হ্যাঁ, ইসলামের বিধান শুধু আত্মসমর্পণকারী মুসলিম নর-নারীর জন্য।

banner

Leave a Reply

ইটালি প্রবাসী দিদারের মা আনোয়ারা বেগমের…

শফিকুল ইসলাম বাদল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর Read more

কসবায় মায়ের অভিযোগে ছেলের কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে Read more
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : পুকুরের পানিতে ডুবে ইসরাত জাহান নোভা (৯) Read more

ইরান কখনও আপোস করবে না: আয়াতুল্লাহ…

অনলাইন ডেস্ক : জায়নবাদীদের সাথে ইরান কখনও আপোস করবে না Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পাঁচ দিনের…

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানার পৃথক Read more
ফাইল ছবি

প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে…

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহতদের কল্যাণ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক…

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর Read more

কারাগারে হাজতির মৃত্যু

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে জুনায়েদ মিয়া (৩২) নামে Read more

আখাউড়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

চলারপথে রিপোর্ট : কৃষকদের সেচ দক্ষতা বাড়াতে পানি ব্যবহারকারী গ্রুপের Read more

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ১১তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য: রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের Read more

স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে…

অনলাইন ডেস্ক : স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে অনশন Read more

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো ২১…

অনলাইন ডেস্ক : ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিশরসহ ২১টি Read more

কোরআন অবমাননায় ডেনমার্কে প্রথম মামলা

আন্তর্জাতিক, ধর্ম, 25 January 2025, 651 Views,

অনলাইন ডেস্ক
পবিত্র কোরআন অবমাননার দায়ে প্রথমবারের মতো মামলা হয়েছে ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের দেশ ডেনমার্কে। গতকাল শুক্রবার রাজধানী কোপেনহেগেনের একটি আদালতে দুই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে মামলাটি হয়।

banner

মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা গত জুনে কোপেনহেগেনে একটি জনসমাগমপূর্ণ স্থানে পবিত্র কোরআনের অবমাননার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। যেখানে তারা এ কাজটি করেছিলেন, সেখানে বিশ্বের নানা দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকজন ছিলেন। অভিযুক্তদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তাদের ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।

ডেনমার্কের জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে এই সংবাদ। তবে কোপেনহেগেনের কোন আদালতে মামলা হয়েছে তা জানানো হয়নি। সেই সঙ্গে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয়ও গোপন রেখেছে সংবাদমাধ্যমগুলো।

কোপেনহেগেনের শীর্ষ প্রসিকিউটর লাইস-লোটে নিলাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এ ঘটনা ঘটেছিল একদম প্রকাশ্যে এবং বহুসংখ্যক মানুষের সামনে। পাশাপাশি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ ঘটনার লাইভ সম্প্রচারও হয়েছিল। মামলার মূল কারণ এটিই।”

তবে কোন আদালতে এ মামলা হয়েছে, তা তিনিও নিশ্চিত করেননি।

২০২৩ সালের জুন-জুলাই মাসে ডেনমার্কে একাধিক কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। তবে দেশটির প্রচলিত আইনে এ ধরনের তৎপরতা অপরাধের তালিকাভুক্ত না হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা সে সময় সম্ভব হয়নি।

কিন্তু এ ঘটনায় মুসলিম বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা শুরুর করার পর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয় ডেনমার্ক সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর একটি আইন পাস ডেনমার্কের পার্লামেন্ট। সেই আইনে প্রকাশ্যে ও জনসমক্ষে কোরআন পোড়ানো, ছেঁড়া বা কোনও ধরনের অবমাননা করা এবং তার ভিডিওধারণকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, ব্যারন’স, দ্য ট্রুথ ইন্টারন্যাশনাল, এএফপি, ডন

সবার আগে জান্নাতের দরজা খুলবেন যিনি

ধর্ম, 23 December 2024, 530 Views,

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
রাসুলুল্লাহ (সা.) সবার আগে জান্নাতের দরজা খুলবেন। আনাস (রা.) বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন নবীদের মধ্যে আমার উম্মতের সংখ্যা হবে সর্বাধিক এবং আমিই প্রথম জান্নাতের দরজা খুলব।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৬)।

banner

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় পৌঁছে দরজা খোলার জন্য বলব। তখন দ্বাররক্ষী বলবে, আপনি কে? আমি বলব, মুহাম্মাদ। তখন সে বলবে, আপনার সম্পর্কে আমাকে বলা হয়েছে যে আপনার আগে আমি যেন অন্য কারো জন্য এ দরজা না খুলি।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৭)

জান্নাতের আটটি দরজা হবে। সেগুলো হলো-
এক. বাবুস আস-সালাহ (নামাজের দরজা), যারা আন্তরিকভাবে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে, তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নাম করা হয়েছে বাবুস সালাহ বা নামাজের দরজা।

দুই. বাবুল জিহাদ (জিহাদের দরজা), যারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর পথে তার জীবন ও সম্পদ দিয়ে জিহাদ করবে, তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুল জিহাদ বা জিহাদের দরজা।

তিন. বাবুর-রাইয়ান। যারা মহান আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে রোজা রাখবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুর রাইয়ান।

চার. বাবুস-সদকা (দানের দরজা), মানুষের প্রয়োজনে যারা তাদের অর্থ-সম্পদ দিয়ে মানুষকে সহযোগিতা করবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুস সদকা।

পাঁচ. বাবুল আইমান, কেউ কেউ এই দরজাকে বাবুস শাফাআতও বলেছেন। কিয়ামতের দিন যারা নবীজির সুপারিশে বিনা হিসাবে জান্নাতে স্থান পাবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৬৮)।

ছয়. বাবুল কাজিমিনাল গইজা ওয়াল আফিনা আনিন্নাস (রাগ দমনকারী ও লোকের ভুলকে ক্ষমাকারী ব্যক্তিদের দরজা), যারা লোকদের ভুলকে ক্ষমা করে এবং নিজের রাগকে দমন করে, এই দরজার নামকরণ তাদের সম্মানে। (উমদাতুল কারি : ১৬/২৫৪)।

সাত. বাবুর-রাদ্বিন (সন্তুষ্টদের দরজা), এই দরজাকে কেউ কেউ বাবুল জিকির, বাবুল হজ, বাবুল ইলম ও বাবু লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহও বলা হয়। যারা আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট এবং আল্লাহও যাদের ওপর সন্তুষ্ট, তাদের সম্মানে এ দরজার নামকরণ হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৮১)।

আট. বাবুত তাওবা (ক্ষমা প্রার্থনার দরজা), নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তার সম্মানার্থে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ হয়েছে। এটি তাওবাকারীদের জন্য সব সময় খোলা থাকে। (জামিউস সগির, হাদিস : ৭৩২০)।

সন্তানকে কত দিন মাতৃদুগ্ধ দেওয়া যায়

ধর্ম, 18 February 2025, 263 Views,

মাইমুনা আক্তার:
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো প্রত্যেক মায়ের কর্তব্য। কারণ মহান আল্লাহ মায়ের দুধে শিশুর বেড়ে ওঠার সব উপাদান দিয়েছেন। যেমন- আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পানি, সহজ পাচ্যকারী উপাদান ইত্যাদি সুষমভাবে থাকে মাতৃদুগ্ধে। ফলে মায়ের বুকের দুধ খাওয়া শিশু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে বেড়ে ওঠে। পাশাপাশি তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও অনেক বেশি থাকে। এর ফলে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অপুষ্টিজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পায়। শারীরির সুস্থতার পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশেও মায়ের দুধের ভূমিকা অনবদ্য। এ ছাড়া মায়ের সুস্থতা যেমন— স্তন ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধে সন্তানকে সঠিকভাবে মায়ের দুধ পান করানোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রত্যেক মায়ের উচিত সন্তান জন্মলাভের পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাকে নিয়মমাফিক দুধ পান করানো। অনেকে আবার না জেনে কোরআনের নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরও সন্তানকে বুকের দুধ পান করান। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর নির্দিষ্ট একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মাতাগণ নিজেদের বাচ্চাদেরকে পূর্ণ দুই বছর স্তন্যদান করবে, যদি দুধ খাওয়ার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৩) তাফসিরবিদরা বলেন, এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে সন্তানকে দুধ পান করানো ওয়াজিব এবং আরো বোঝা গেল যে বিশেষ ওজর ছাড়া স্তন্যদান থেকে বিরত থাকার অবকাশ নেই। (মাআরেফুল কুরআন, তাফসিরে মাযহারি, কুরতুবি, জামিউ আহকামিসসিগার : ১/১২৩) অনেক মা সন্তানকে তিন-চার বছরও দুধ খাওয়ান। আবার অনেকে আড়াই বছর খাওয়ানো যায় মনে করে এই মেয়াদ পূর্ণ করেন। এটা ভুল। সন্তান অনূর্ধ্ব দুই বছর মায়ের বুকের দুধ খেতে পারবে। দুই বছরের বেশি বয়সী সন্তানকে দুধ পান করানো নাজায়েজ। দুই বছর দুধ পান করানোর বিষয়টি উল্লিখিত আয়াতে রয়েছে। এ ছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘মায়ের দুধ পানের সময় দুই বছরই।’ (সুনানে দারাকুতনি : ৪/১৭৪, তাফসিরে মাযহারি : ১/৩২৩, মাজমাউল আনহুর : ১/৫৫২, আত্তাসহিহ ওয়াত্তারজিহ ৩৩৫, ফাতহুল কাদির : ৩/৩০৭-৩০৯) তাই প্রত্যেক মায়ের দায়িত্ব সন্তানের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তাকে অন্যান্য খাবারে অভ্যস্ত করা, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাকে মায়ের দুধ দেওয়া বন্ধ করা যায়।

banner

রমজানের রাতে স্ত্রীর সঙ্গে শয্যাযাপন কী জায়েজ?

ধর্ম, 10 March 2025, 149 Views,

ইসলাম ডেস্ক :
আল্লাহ ইরশাদ করেন,

banner

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ

অর্থ : রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সহবাস হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পোশাকের মতো এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাকের মতো। আল্লাহ জানেন তোমরা তোমাদের নিজেদের সঙ্গে অবিচার করছিলে। তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করেছেন।

এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পারবে এবং অনুসন্ধান কোরো মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন। (বাকারাহ, আয়াত : ১৮৭)

উল্লিখিত আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, বারা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী (সা.)-এর যুগে সাহাবীদের আমল ছিল, রোজা রাখার পর ইফতারের সময় হলে যদি ইফতার করার আগেই ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে এই রাত ও পরের দিন সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছুই আহার করা যাবে না।

কায়স ইবন সিরমা আনসারি (রা.) একবার রোজা পালন করছিলেন। ইফতারের সময় তিনি স্ত্রীর কাছে এসে বললেন, কোন খাবার আছে? স্ত্রী বলল, নেই।

তবে আপনার জন্য কিছু খুঁজে আনছি।

এদিকে ওই সাহাবি সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত থাকায় তার দুই চোখে ঘুম চলে আসে। তার স্ত্রী এসে তাকে ঘুমন্ত দেখে বলল, হায়, আপনিত বঞ্চিত। পরদিন দুপুরে ওই সাহাবি বেঁহুশ হয়ে পড়েন।

নবী (সা.)-এর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তখন এই আয়াত নাজিল হয়-

(أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ)

অর্থ : ‘রোহার রাত্রে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে।’

তখন এই খবরে সাহাবিরা খুবই আনন্দিত হন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৩৪)

কারা আল্লাহর পছন্দের বান্দা?

ধর্ম, 23 January 2025, 441 Views,

মো. আমিনুল ইসলাম :
আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আমরা এ ইবাদত কতটুকু ঠিকভাবে করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারছি তা ভেবে দেখার বিষয়। কিংবা কীভাবে ইবাদত করলে আমরা তাঁর প্রিয় বান্দা হয়ে পরকালে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারব তা আমাদের সবার জানা উচিত। সুরা মায়েদার ৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’সুরা হুজুরার ৫৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ সুতরাং যারা দুনিয়ার বুকে বিচার করেন তারা যেন অবশ্যই সুবিচার করেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন।

banner

সুরা বাকারার ৩ ও ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যারা গায়েবের ওপর ইমান আনে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং তিনি যা কিছু দান করেছেন তার থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করে এবং তাদের রবের কাছ থেকে পাওয়া হেদায়েতের ওপর রয়েছে এরাই হচ্ছেন সফলকাম।’ সুতরাং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নামাজ আদায়, জাকাত আদায়, গায়েবের ওপর ইমান আনা এবং সর্বোপরিভাবে আল্লাহ-প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালিত করা। ধৈর্যশীলরাও আল্লাহর প্রিয় বান্দা।

আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় সত্য কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা সবরকারী তাদের পুরস্কার প্রায় অগণিত।’ সুরা জুমার আয়াত ১০। যারা তওবাকারী ও গুনাহ করার পর আল্লাহর স্মরণে লজ্জিত হন এবং ক্ষমা চান তারাও আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দা। এদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘তারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে বসে কিংবা এর দ্বারা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে এবং সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আসলে আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে তাদের গুনাহ মাফ করে দিতে পারে?’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৩৫।

যারা আল্লাহর রসুল (সা.)-কে ভালোবাসে তারাও দুনিয়ার বুকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিচিত। সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তুমি বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমার (নবীর) কথা মেনে চল, আল্লাহতায়ালাও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ আয়াত ৩১। সুবহানাল্লাহ! এ আয়াতটি কত মর্যাদাপূর্ণ।

আল্লাহর রসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে যে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া ও গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যায় এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে। তাকওয়া অবলম্বনকারী ও মুত্তাকি হওয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি।

সুরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের মুখমন্ডলগুলো পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাও এতে কোনো নেকি নিহিত নেই, বরং বড় সত্য কাজ বা নেকির কাজ হচ্ছে ইমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং নবী-রসুলদের ওপর। আর সম্পদের ওপর তার ভালোবাসা থাকার পরও তা ব্যয় করবে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির ভিক্ষুক ও বন্দিদশা থেকে মুক্ত করার কাজে। আর যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং যারা প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করে এবং অভাবে রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করে। এরাই হচ্ছে প্রকৃত সত্যাশ্রয়ী ও তাকওয়া অবলম্ব^নকারী মানুষ।’ আয়াত ১৭৭।
– লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার