অনলাইন ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি সৈকত দিয়ে ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছিলো ফ্লোরিডার এক বাসিন্দা। তিনি পথে দুই ব্যক্তিকে দেখতে পান। তার কাছে মনে হয়েছিল, ওই দুইজন ফিলিস্তিনি। ট্রাক থামিয়ে নেমে এসে হত্যার উদ্দেশ্যে তিনি ওই দুই ব্যক্তিকে গুলি করেন। পরে জানা যায়, যে দু’জনকে গুলি করা হয়েছে, তারা আসলে ইসরায়েলি পর্যটক। ভুক্তভোগী দু’জন হলেন অ্যারি রাভে ও তার বাবা। ওই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যান তারা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও টাইমস অব ইসরায়েল তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায়।
খবরে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার এ ঘটনা ঘটে। ফ্লোরিডার এই বাসিন্দার নাম মর্দেচাই ব্রাফম্যান। বয়স ২৭ বছর। তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত রবিবার ব্রাফম্যানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। মিয়ামি বিচ পুলিশ বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন ব্রাফম্যান।
গ্রেফতারের নথি অনুসারে, শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় নজরদারি ভিডিওতে দেখা যায় যে ২৭ বছর বয়সী ব্রাফম্যান তার ট্রাক থেকে নেমে একটি গাড়ির দিকে আধা-স্বয়ংক্রিয় বন্দুক দিয়ে গুলি চালাচ্ছেন। ব্রাফম্যান ১৭ বার গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যার ফলে একজনের বাম কাঁধে এবং অন্যজনের বাম বাহুতে আঘাত লেগেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউপিএলজিকে দেয়া সাক্ষাতকারে গুলিতে আহত হওয়া আরি রেভে বলেন, তারা ট্রাকের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চালক তাদেরকে লক্ষ্য করে উন্মুক্ত গুলি চালায়।
ব্রাফম্যানের পক্ষের কোনো আইনজীবী বা প্রতিনিধিকে তাৎক্ষণিকভাবে খুঁজে পায়নি বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো বলছে, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমবিদ্বেষ, ফিলিস্তিনিবিদ্বেষ ও ইহুদিবিদ্বেষ বেড়ে গেছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, টাইমস অব ইসরায়েল
অনলাইন ডেস্ক :
সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা তিন মাসের জন্য পরিবারের সদস্যদের সৌদি আরবে নিতে পারবেন। ২৩ আগস্ট বুধবার সচিবালয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এ তথ্য জানান।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ’র নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এদিন বৈঠক করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, সৌদি আরবে কর্মরত আমাদের যারা রয়েছেন, তারা এখন থেকে সর্বোচ্চ তিন মাসের জন্য তাদের পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যকে সেদেশে নিয়ে যেতে পারবেন।
পরিবারের মানুষজন সৌদি আরবে গিয়ে অবস্থান এবং ঘোরাঘুরি করতে পারবেন।
হজ ব্যবস্থাপনা আরো সহজ ও গতিশীল করতে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ‘নসুক’ নামে একটি অ্যাপ আজ ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার ঢাকায় উদ্বোধন করবেন তৌফিক আল-রাবিয়াহ।
অ্যাপটি ইউরোপ-আমেরিকায় আগেই চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এজেন্সিকেন্দ্রিক হজ ব্যবস্থাপনা থেকে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনার যুগে ঢুকবে বাংলাদেশ।
ধীরে ধীরে কমে আসবে এজেন্সি-নির্ভরতা। আজ ঢাকায় বাংলাদেশি হজযাত্রী, ওমরাহ যাত্রী এবং অন্য পর্যটকদের জন্য নসুক প্ল্যাটফর্ম চালু হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ভারতে মেলা দেখতে গিয়ে আটকে পড়া ১০ জনসহ ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরেছেন।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে আজ ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে তারা দেশে ফিরেছেন।
ভারতের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশিরা হলেন-চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কদলপুর গ্রমের দুলাল নাথের ছেলে রুবেল কুমার নাথ, উত্তর গুজরা গ্রামের মিলন বিশ্বাসের ছেলে রাজিব বিশ্বাস, সুলতানপুর গ্রামের মিলন দের ছেলে শঙ্কর দে, একই গ্রামের বিষু দাসের ছেলে জয় দাস, কাজল দাসের ছেলে সঞ্জয় দাস, অনিল দাসের ছেলে উল্লাস দাস, সুকুমার চৌধুরী দাসের ছেলে দীপক দাস গুপ্তা, মন্টু রাম ঘোষের ছেলে রুমন ঘোষ, যোগেস ঘোষের ছেলে রুবেল ঘোষ, রনধীর দাসের ছেলে প্রান্ত দাস, একই জেলার হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম দেওয়ান নগরের মো. হোসেনের মেয়ে নাহিদা শেখ এবং তার দুই শিশু সন্তান ফয়েজ ইসলাম শেখ ও ফাইজা শেখ।
শূন্যরেখায় দেশে ফেরত আসা দীপক দাস গুপ্তা বলেন, আমরা ১০ জন খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে মেলায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। মেলা থেকে আগরতলার একটি মন্দির দেখে ফেরার পথে আমাদের বহনকারী ভারতীয় গাড়িটির চালক আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যের পরিবর্তে স্থানীয় একটি থানায় নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ আমাদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত আমাদের অনুপ্রবেশের দায়ে এক মাস করে সাজা দেন। কারাভোগ শেষে আমরা একটি সেইফ হোমে ছিলাম। সেখান থেকে চার মাস পর বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে আমরা আজ দেশে ফিরলাম।
ফিরে আসা নাহিদা শেখ বলেন, আমি, আমার স্বামী ও এক সন্তানসহ গত তিন বছর আগে স্বামীর চিকিৎসার জন্য অবৈধ পথে ভারতের মুম্বাই শহরে গিয়েছিলাম। চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পথে ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হয়ে এক বছর কারাভোগ করি। এরপর একটি হোমে ছিলাম। তখন আমার আরেকটি সন্তানের জন্ম হয়। গত ছয় মাস আগে ওখানে আমার স্বামীর মৃত্যু হলে সেখানেই দাফন করা হয়। দীর্ঘ তিন বছর পর আমি আমার দুই সন্তান নিয়ে দেশে ফিরেছি।
আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তা ওমর শরীফ বলেন, ১৩ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছি। তাদের মধ্যে এক নারী ও দুটি শিশু ছাড়া বাকি ১০ জন এসেছিলেন মেলা দেখতে। তারা দেশে ফেরার পথে ভারতীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়ে আদালতের মাধ্যমে সাজাভোগ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে কাগজপত্র যাচাই-বাচাই শেষে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হলো।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রাহাতুল ইসলাম, বিএসএফের ১২০ মোম্পানি কমান্ডার বিবেক ধীমান, আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ইনচার্জ মো. খাইরুল আলম, ৬০ বিজিবির আইসিপি ক্যাম্প কমান্ডার শাহ আলমসহ অনেকে।
অনলাইন ডেস্ক :
পাকিস্তানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দেশটির অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারের নাম প্রস্তাব করেছে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের বৃহত্তম শরিক পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন)। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও অন্যান্য বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার তাগিদ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএমএলএন।
আজ ২৪ জুলাই সোমবার পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা মনে করছি, আইএমএফ পাকিস্তানের অর্থনীতি সংস্কারে যেসব শর্ত দিয়েছে – সেই অনুযায়ী একটি অন্তর্বর্তী সরকারকে পরিচালনার জন্য ইসহাক দার সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। এছাড়া আইএমএফ ও অন্যান্য ঋণদাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আসলে এই মুহূর্তে ইসহাক দারের বিকল্প কেউ নেই।’
দুর্নীতি, অপব্যয় এবং করোনা মহামারিজনিত কারণে ডলারের রিজার্ভ তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তানকে গত মাসে ৩০০ কোটি ডলার জরুরি (বেইল আউট) ঋণ দিয়েছে আইএমএফ। তবে এই ঋণ প্রাপ্তির জন্য আক্ষরিক অর্থেই ঘাম ছুটে গেছে দেশটিতে ক্ষমতাসীন সরকারের।
২০১৯ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সময় থেকেই শুরু হয়েছিল আইএমএফের ঋণের কিস্তি। কিন্তু ইমরানের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার ঋণচুক্তির শর্ত অনুসারে, জ্বালানির ওপর ভর্তুকি প্রত্যাহার না করায় আইএমএফ ঋণের কিস্তি স্থগিত করে।
আইএমএফের কিস্তি স্থগিতের পদক্ষেপে অন্যান্য বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থার ঋণও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পাকিস্তানের। ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল পার্লামেন্টে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। তার বিদায়ের পর দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হন পিএমএলএনের চেয়ারম্যান শেহবাজ শরিফ।
নতুন সরকার গঠন করার পর থেকেই স্থগিত ঋণের কিস্তি ফের চালুর জন্য দেন-দরবার শুরু করে ইসলাবাদ। আর এক্ষেত্রে নেতৃত্বের পুরোভাগে ছিলেন অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার।
অবশেষে গত ১২ জুলাই পাকিস্তানকে ৩০০ কোটি ডলার জরুরি ঋণ প্রদানে সম্মত হয় আইএমএফ। আইএমএফের অনুমোদনের ২ দিন পর, ১৪ জুলাই রাজধানী ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, আগামী ১৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেবে তার নেতৃত্বাধীন সরকার।
চলারপথে রিপোর্ট :
ভারত থেকে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে ফেরার পথে আখাউড়া সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক সবুজ দাস (২২) কে আটক করেছে ২৫ বিজিবি সরাইল ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
আজ ১৬ অক্টোবর বুধবার দুপুরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া আব্দুল্লাহপুর নামক স্থান থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটককৃত সবুজ দাস জেলার নাসিরনগর উপজেলা কুন্ডা ইউনিয়নের ইন্দ্রজিত দাসের ছেলে।
বিজিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তির জানায়, আখাউড়া ফকিরমোড়া বিওপির টহল দল সীমান্ত পিলার ২০২২/১০-এস হতে আনুমানিক ৩০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আব্দুল্লাহপুর নামক স্থান হতে বাংলাদেশী নাগরিক সবুজ দাসকে আটক করা হয়। আটককৃত বাংলাদেশী নাগরিক সবুজ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, প্রায় ৪ মাস পূর্বে রাজ মিস্ত্রির কাজের সন্ধানে ভারতের আগরতলায় যায়। পরে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশী মানব পাচারকারী মোঃ নাঈম চৌধুরীর সহায়তায় আখাউড়া আবদুল্লাহপুর এলাকায় অবৈধভাবে ভারত হতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় বিজিবি কর্তৃক আটক হয়।
আটককৃত বাংলাদেশী নাগরিককে আখাউড়া থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং মানব পাচারে সহায়তাকারী মোঃ নাঈম চৌধুরী বিরুদ্ধে আখাউড়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
এ এক অভূতপূর্ব দৃশ। নিজের পাপের বোঝার কথা স্মরণ করে লাখ লাখ মুসল্লির অবিরল অশ্রুধারায় ভিজেছে ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দান। তাঁদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আরাফাত ময়দান প্রকম্পিত হয়েছে।
আজ ২৭ জুন মঙ্গলবার এ ময়দানে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র হজ পালন করেছেন হজযাত্রীরা। এসময় হাজিদের কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও পাপমুক্তির আকুল বাসনার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় মহান আল্লাহর কাছে অঝোরে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। নামাজ আদায় করার পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থেকেছেন।
মহান আল্লাহর অশেষ রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় সার্বক্ষণিক জিকির করেছেন। প্রায় সারাক্ষণ তালবিয়া পড়েছেন। আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য প্রকাশ করছেন।
এর আগে, পবিত্র হজ পালনের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিতে সৌদি আরবে আসা বিশ্বের ২৫ লাখ মুসল্লি হজের দ্বিতীয় রুকন আদায়ের জন্য সোমবার সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানেই অবস্থান করেন তাঁরা। আরাফাতের দিনকে মনে করা হয় বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। এদিন মহান আল্লাহ বান্দাদের পাপ মাফ করে দেন।
করোনা মহামারি পেছনে ফেলে এবার হজ আবার আগের রূপে ফিরে এসেছে। বলা হচ্ছে, এবারের হজে সবচেয়ে বেশি মুসল্লি এসেছেন। এই সংখ্যা ২৬ লাখেরও বেশি।
ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানের তিন দিকে জাবাল বা পাহাড়। এই পাহাড়ের নাম রহমতের পাহাড় (জাবালে রহমত)। দোয়া কবুলের স্থান হওয়ায় কোনো কোনো হজযাত্রী জাবালে রহমত পাহাড়ে উঠেও ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন। কোনো কোনো হজযাত্রী আরাফাত ময়দানে যাঁর যাঁর মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে ইবাদত বন্দেগী করেছেন। আরাফাত ময়দানে একটি উঁচু পিলার রয়েছে। এই পিলারটিও দোয়া কবুলের স্থান। আদি পিতা হজরত আদম (আ.) এবং আদি মা হাওয়া (আ.) আরাফাতের ময়দানে এসে পুনর্মিলনের সুযোগ পেয়েছিলেন। এ জন্য তাঁরা এই ময়দানেই মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছিলেন।
পাকিস্তানের ২৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী উসমান আরশাদ ৬ মাস হেঁটে এবার পবিত্র হজে এসেছেন। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে পেরে বাকরুদ্ধ তিনি। আর মিশরীয় ব্যবসায়ী ইয়াহিয়া আল ঘানামের আবেগ যেন হৃদয় ছোঁয়া। তিনি চোখের পানি সংবরণ করতে পারছেন না কিছুতেই। বললেন, পবিত্র হজে এসে গত ১৫ দিনে আমি দৈনিক এক ঘণ্টার বেশি ঘুমাইনি।
আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরা থেকে জোহরের নামাজের আগে মিম্বরে দাঁড়িয়ে আরবি ভাষায় হজের খুতবা পাঠ করা হয়। এবার খুতবা দিয়েছেন শায়খ ড. ইউসুফ বিন মোহাম্মদ। তিনি নামাজেও ইমামতি করেছেন। হজের খুতবা বাংলাসহ প্রায় ১৪টি ভাষায় অনুবাদ করে শুনানো হয়েছে।
খুতবার পর মসজিদে নামিরায় সমবেত মুসলমানরা এক আজান এবং দুই ইকামতে জোহর ও আছরের নামাজ এক সঙ্গে জামাতে আদায় করেন। মসজিদে নামিরা থেকে দূরে অবস্থান করা হজযাত্রীরা জোহর এবং আছরের নামাজ আলাদাভাবে আদায় করেন নিজেদের তাঁবুতে।
তাঁরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পর কিছু সময় পর্যন্ত অবস্থান করেন আরাফাতের ময়দানে। সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছু সময় পরে মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই আরাফাত ময়দান থেকে হজযাত্রীরা প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। মুজদালিফায় গিয়ে এশার নামাজের সময় এক সঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন। পরে সেখানেই খোলা আকাশের নীচে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে রাত যাপন করেন তাঁরা। রাতে প্রতীকী শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপের জন্য সংগ্রহ করেন ৭০টি পাথর।
আরাফাত ময়দানে আসার আগে হজযাত্রীরা গত ৮ জিলহজ পবিত্র হজ পালনের প্রথম আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে দু’দিকে পাহাড় পরিবেষ্টিত এলাকা মিনায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে অবস্থান করেন। হজযাত্রীদের মধ্যে পুরুষরা হজের প্রথম রুকন ইহরাম (শরীরের নিচের অংশে আড়াই হাত বহরের আড়াই গজের এক টুকরা কাপড় আর গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য একই বহরের তিন গজের এক টুকরা সাদা রংয়ের সেলাইবিহীন কাপড়) পরিধান অবস্থায় রয়েছেন। নারীরা আছেন পর্দায় আচ্ছাদিত। তাঁরা আগামী ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনা ও মক্কায় অবস্থান করবেন।
বুধবার ফজরের নামাজ আদায়ের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় অবশ্যই মুজদালিফায় অবস্থান করবেন হাজিরা। এরপর তাঁরা যাবেন মিনায়। সেখানে মিনার জামারায় (শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোঁড়ার স্থান) বড় শয়তানের উদ্দেশে প্রতীকী সাতটি পাথর নিক্ষেপ শেষে পশু কোরবানি এবং রাসুলুল্লাহর (সা.) আদর্শ অনুসরণে পুরুষরা মাথা মুণ্ডন করে গোসল করবেন। নারীরা চুলের অগ্রভাগ থেকে প্রায় এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল কাটবেন। এরপর হাজীরা সেলাইবিহীন ইহরাম খুলে ফেলবেন এবং পশু কোরবানি দেবেন। পরে তাঁরা হজের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ রুকন আদায়ের জন্য মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে সুবহে সাদিকের পর থেকে কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন।
কাবা শরীফের সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাতবার ‘সাঈ’ (দৌড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার ফিরে যাবেন মিনায়, নিজেদের তাঁবুতে। হজযাত্রীরা ১১ জিলহজ আবার মিনার জামারায় গিয়ে জোহরের নামাজের পর থেকে পর্যায়ক্রমে ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে সাতটি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। একইভাবে ১২ জিলহজ আবারও ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপের পর সন্ধ্যার আগে তাঁরা মিনা ত্যাগ করবেন। পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে সৌদি আরবের হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময়ে কাবা শরীফকে ফরজ তাওয়াফের মধ্য দিয়ে।