রমজানে বেশি বেশি যে চার আমল করবেন

ধর্ম, 6 March 2025, 305 Views,

ইসলাম ডেস্ক :
বছরের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় রমজান মাসে মুসলমানরা বেশি ইবাদত করেন। যারা অন্য মাসে নামাজ পড়েন না তাদেরকেও এই মাসে নামাজ পড়তে দেখা যায়। তাই বলা যায় আমল ইবাদতের মাস রমজান।

banner

রমজানের শুরুর দিনগুলোতে মসজিদগুলোতে থাকে উপচেপড়া ভিড়। ধীরে ধীরে মসজিদে আনাগোনা কমে গেলেও প্রাথমিক চিত্রগুলোই রমজান মাসের প্রতিনিধিত্ব করে। এটাই মূলত মুলমানদের রমজানের চিত্র। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবি, পূর্ববর্তী ও বর্তমান অনুসরণীয় আলেম, দ্বীনদ্বার ব্যক্তিরাও আমল ইবাদতে অতিবাহিত করেন রমজান মাস।

কোরআন তিলাওয়াত
আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির হেদায়েতের জন্য পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। এতে মানুষের জীবনযাপনের সব ধরনের বিধি-নিষেধ জানিয়ে দিয়েছেন। রাসূল সা. সাহাবিদের কোরআনের বিধান জানিয়েছেন এবং তিলাওয়াত করেছেন। তিলাওয়াত করতে উৎসাহিত করেছেন।

কোরআন নাজিলের মাসে তিনি কোরআন তিলাওয়াত করতেন বেশি বেশি। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা। অন্তত প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা বা কিছু সময় হলেও কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত।

প্রতি রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও জিবরাইল (আ.) পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। ফাতেমা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তার পিতা তাকে বলেছে, প্রতি রমজানে জিবরাইল (আ.)-কে একবার কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। কিন্তু মৃত্যুর বছর তিনি তাকে দু’বার কোরআন শোনান।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৮৫)

দান-সদকা
কোরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি রমজানে যে আমলটি আরও বেশি বেশি করবেন সেটি হলো, দান ও সদকা। এই আমলগুলো পুরো বছরের আমল হলেও রমজানে বেশি বেশি করা উচিত ফজিলত লাভের আশায়। কারণ, রমজানে যেকোনো আমলের ফজিলত বেড়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা আমলের অনেক বেশি প্রতিদান দেন।

রমজানে রাসূল সা.-এর দানের বিবরণ দিতে গিয়ে হজরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। তিনি রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি দান করতেন যখন জিবরিল আ.-এর সাথে দেখা হত। জিবরিল আ.-এর সাথে দেখা হলে তিনি হয়ে উঠতেন মুক্ত বাতাসের চেয়েও দানশীল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮০৩)

ইস্তেগফার পাঠ
ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা গুনাহ মাফ করে দেন এবং মযার্দা বৃদ্ধি করেন। রমজানে বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা উচিত।

মানুষ শয়তানের ধোঁকা, নফসের প্ররোচনা ও পরিবেশের কারণে গুনাহের কাজে জড়িয়ে থাকে, আর এই গুনাহ থেকে নিজেকে পবিত্র করার বড় মাধ্যম হলো, ইস্তেগফার।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘আমি তাদেরকে বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল।’ (সূরা নুহ, আয়াত :১০)

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করে আল্লাহ তায়ালা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করে দেন, তার সব পেরেশানী দূর করে দেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস, ১৫১৮)

জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া
রমজানে মানুষ নেক আমল বেশি বেশি করে এবং করার চেষ্টা করেন। নেক আমলে লিপ্ত থাকার ফলে আল্লাহ তায়ালা সহজেই দোয়া কবুল করেন। মানুষ নিজের প্রয়োজন অনুপাতে আল্লাহর কাছে দোয়া চায়। দোয়া করার সময় আল্লাহ তায়ালার কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রার্থনা করা উচিত।

দুনিয়াবী অনেক প্রয়োজন থাকে আমাদের তবে সব থেকে বড় প্রয়োজন হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি। যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে তার আর কোনো টেনশন থাকবে না। সাবর উচিত রমজানে আল্লাহ তায়ালা কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রার্থনা করা।

Leave a Reply

গাজীপুরে মামা হত্যার আসামি ভাগিনা গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : গাজীপুরে আনিসুর রহমান হত্যার মামলার আসামি ভাগিনা Read more

সদর মডেল থানায় যোগদান করেই কঠোর…

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য : আজহারুল ইসলাম সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : ফ্ল্যাট বাসা থেকে শরীর মীর (৪০) নামের Read more

নাসিরনগরে বাবাকে হত্যার ঘটনায় ছেলে আটক

চলারপথে রিপোর্ট : নাসিরনগরে আলম মিয়া (৬০) নামের এক ব্যবসায়ী Read more

আখাউড়ায় খেলাফত মজলিসের প্রার্থীর মতবিনিময়

মোঃ ইসমাইল: ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী Read more

৫০ কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ৫০ কেজি গাঁজা ও ১টি সিএনজি উদ্ধারসহ Read more

কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমায়, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের…

অনলাইন ডেস্ক : বর্ষার শেষপ্রহরে নেমে আসা অবিরাম বৃষ্টি ও Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার নতুন ওসি আজহারুল…

চলারপথে রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে Read more

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে…

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ঐতিহাসিক Read more

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : কুমিল্লার দাউদকান্দি বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) Read more

মেক্সিকোতে যাত্রীবাহী বাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১০জন…

অনলাইন ডেস্ক : মেক্সিকোর আটলাকোমুলকো শহরে একটি পণ্যবাহী ট্রেন ও Read more

কানাডায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

মুমিনুল হক : কানাডার টরেন্টোতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। Read more

৪১ দিন জামাতে নামাজ আদায় করে পুরস্কার পেলো ৫৪ জন

কসবা, ধর্ম, সারাদেশ, 7 July 2025, 331 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার আকছিনা গ্রামে টানা ৪১ দিন জামাতে নামাজ আদায় করায় ৫৪ জন কিশোরকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন পেয়েছেন বাই সাইকেল। বাকিদের দেওয়া হয়েছে স্কুল ব্যাগ। আকছিনা সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে শনিবার বিকালে আকছিনা পূর্বপাড়া ঈদগাহ মাঠে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওই ৫৪ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

banner

কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সমাজসেবক আলী আজগর ডিলার। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ব্রাহ্মাণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) থেকে মনোনীত প্রার্থী মো. আতাউর রহমান সরকার।

পুরস্কার দেওয়ার উদ্যোক্তা আবদুস ছাত্তার বলেন, কিশোরদের মসজিদমুখী করতেই এ উদ্যোগ। আমি বিশ্বাস করি, তারা নিয়মিত নামাজে অভ্যস্ত হলে ভবিষতেও এ আমল ধরে রাখবে। এতে আমিও সাওয়াবের অংশীদার হতে পারবো। সকলের উচিত ভালো কাজে এগিয়ে আসা। আলোচনা শেষে ১৭ জনকে বাই সাইকেল ও ৩৫ জনকে স্কুল ব্যাগ উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।

অলৌকিক ও ফযিলত পূর্ণ অনন্য রাত শবে মিরাজ

ধর্ম, 28 January 2025, 521 Views,

মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান :
মি’রাজ আরবি শব্দ। আভিধানিক অর্থ হল উর্ধবালোকেগমন বা আহরণ। নবুওয়তের একাদশ মতান্তর দ্বাদশ বছরে রজব মাসের ২৬ তারিখে দিবাগত রাতে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা:) এর পবিত্র শ’বে মি’রাজ সংঘটিত হয়।

banner

পবিত্র মি’রাজ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আলকোরআনে এরশাদ করেন,’ সুবহানাল্লাজি আসরা বি আবদিহী লাইলাম মিনাল মাসজিদিল হারামে ইলাল মাসজিদিল আকসা’।

অর্থাৎ পবিত্র সেই মহান স্রষ্টা যিনি নিজ প্রিয় বান্দাহকে বোরাকে আরোহণ করিয়ে কাবা ঘর থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত নৈশ ভ্রমণ করিয়েছিলেন।
এই মি’রাজ সম্পর্কে আল্লাহর মূল উদ্দেশ্য ছিল তার প্রিয় বান্দাহকে সৃষ্টিজগৎ আরশে মুয়াল্লাহর কিছু নিদর্শন দেখানো।
এবং তার সান্নিধ্য লাভ করানো।
এমন এক সময় রাসুল (সা:)কে মি’রাজ করানো হয়েছিল যখন মক্কা জুড়ে ইসলামের নবজাগরণ কে স্তব্দ করার জন্য পুরোপুরি ষড়যন্ত্র চলছিল।
মক্কার কাফের সম্প্রদায় রাসুল(সা:)এর সংস্পর্শে এসে দলেদলে ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে ছিল ঠিক তখনি কাফেরদের সরদারগণ চিন্তা করতে লাগলেন যে এভাবে চলতে থাকলে মক্কার সকল মানুষ তাদের বাপদাদার পৌত্তলিক ধর্ম মক্কার জমিন থেকে চিরবিদায় নিতে বাধ্য হবে।তাই তারা ইসলামের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করে।
সকল ষড়যন্ত্রে ব্যার্থ হয়ে মুসলমানদের সাথে বয়কট করা ছাড়া আর কোন পথ না দেখে সম্মিলিতভাবে তারা মুসলমানদেরকে শিয়াবে আবু তালিব( আবু তালিবের সত্যাধিকারী পাহাড়ের পাদদেশে)আবদ্ধ করে ফেলে।
মুসলমানদের সাথে মক্কার সকল গোত্র সর্বপ্রকার যোগাযোগ, লেনদেন, বিয়ে শাদী এমনকি দেখাসাক্ষাৎ ও বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ আড়াই বা তিন বৎসর মুসলমানরা তথায় বন্দি অবস্থায় দিনযাপন করেছিলেন।
কাফেরদের এই দুর্ব্যবহারের শিকার হয়ে মুসলমানরা একমাত্র ইসলাম ও মোহাম্মদ (সা:)এর খাতিরে এমন কোন কষ্ট নেই যা তারা সহ্য করেনি। খাদ্যাভাবে মুসলমানদের বৃক্ষলতা খেতে হত।এসব নিঃশেষ হয়ে গেলে মুসলমানরা তৃন খড় পর্যন্ত খেতে হয়ে ছিল।
চারদিক থেকে যখন মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবরোধ চলছিল তখনি রাসুল(সা:)এর পিতৃব্য আবুতালিব ইন্তেকাল করেন।বয়কট পরিসমাপ্তির কাছাকাছি সময়ে হুজুর(সা:)এর সকল বিপদআপদের সাথী এবং সাহায্যকারী উম্মাহাতুল মুমিনীন হজরত খাদিজা(রা:)ও ইহজগৎ ত্যাগ করেন।
হুজুর(সা:)এর অতি আপনজন এই দুই ব্যক্তির ইন্তেকালে হুজুর(সা:)মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন তখন ই রাসুল(সা:)কে আল্লাহতায়ালা শান্তনা দেওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা রাসুল(সা:)কে তার সান্নিধ্য লাভ করিয়েছেন।

রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মহানবী (সা:)এশার নামাজ সম্পন্ন করে চাচাতো বোন উম্মেহানীর ঘরে নিদ্রায় নিমগ্ন ছিলেন।এমন সময় জিব্রাইল(আ:)উপস্থিত হয়ে প্রিয় নবী (সা:)কে বললেন,হে আল্লাহর নবী, আপনি জাগ্রত হোন।আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য দ্রুতগামী বাহন ‘বোরাক ‘নিয়ে এসেছি।পূর্ববর্তী সকল নবী
রাসুলগণ ও সকল ফেরেশতাগণ আপনাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
মোহাম্মদ (সা:)জাগ্রত হয়ে প্রথমে অজু করত:দুরাকাত নফল নামাজ আদায়করে আল্লাহর নির্দেশক্রমে পবিত্র বোরাকে আরোহণ করে প্রথমে বায়তুল মুকাদ্দাস এসে পূর্ববর্তী সকল নবীগনের উপস্থিতিতে দু রাকাত নামাজের ইমামতি করেন।

পুনরায় বোরাকে আরোহণ করে উর্ধবলোকে গমন করেন।প্রথম আকাশে হজরত আদম(আ:) বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা:)কে অভ্যর্থনা জানান। তারপর দ্বিতীয় আকাশে ঈসা(আ:)ও ইয়াহিয়া (আ:),তৃতীয় আকাশে ইউসুফ (আ:),চতুর্থ আকাশে ইদ্রিস (আ:),পঞ্চম আকাশে হারুন(আ:),ষষ্ঠ আকাশে মুসা(আ:) এবং সপ্তম আকাশে হজরত ইব্রাহীম (আ:)এর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন।

তারপর বায়তুল মামুর নামক স্থানে ফেরেশতাদের নিয়ে পুনরায় দু রাকাত নামাজ আদায় করেন।এখানে এসে বোরাক থেমে যায়,এবং জিব্রাইল(আ:) বললেন,হে আল্লাহর রাসুল, এ পর্যন্ত ই আমার সীমানা। এরপর এক কদম অগ্রসর হওয়ার শক্তি আমার নেই।
এখান থেকে রফরফ নামক আরেকটি কুদরতি বাহন রাসুল (সা:)কে আল্লাহতায়ালার আরশে মুয়াল্লাহয় নিয়ে যান।সেথায় আল্লাহতায়ালার সাথে সালাম বিনিময়ের পর কথোপকথন হয়।
আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সেখানে প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত ও পরবর্তীতে পাচ ওয়াক্ত নামাজ উম্মতের জন্য হাদিয়া স্বরুপ দেওয়া হয়।তারপর হুজুর(সা:) জান্নাত জাহান্নাম অবলোকন করেন।
আল্লাহতায়ালা দুনিয়াতে অসংখ্য নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন।কিন্তু অসংখ্য নবী রাসুলের মধ্যে কেবলমাত্র আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সা:)ই সকল মাখলুকাতের মধ্যে স্ব-শরীরে মহান আল্লাহতায়ালার দিদার লাভে সক্ষম হয়েছেন।

পবিত্র শ’বে মি’রাজ আশ্চর্য ও অলৌকিক ঘটনা অবশ্য ই। শ’বে মি’রাজ রাতটি সকল উম্মতে মোহাম্মদীর নিকট অত্যন্ত মহিমান্বিত ও ফযিলতপুর্ন। এরাতে প্রত্যেক মুসলমানদের নফল নামাজ আদায় করা,পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা, দান খয়রাত করা,অধিক পরিমানে তাসবিহ তাহলিল, যিকির আযকার করার পাশাপাশি তাওবা ইস্তেগফার ও কান্নাকাটি করে ইসলাম বহির্ভূত কাজে লিপ্ত না হয়ে ফযিলতপুর্ন এই রাতকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে অতিবাহিত করা ই বাঞ্ছনীয়।

লেখক
মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান
পরিচালক
ফখরে বাঙ্গাল ইসলামিয়া মাদরাসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া

জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

ধর্ম, 7 February 2025, 642 Views,

ইসলাম ডেস্ক :
জুমার নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ নামাজ ছেড়ে দিলে হাদিসে ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই জুমার নামাজ গুরুত্বের সাথে পড়া উচিত। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দিবস। পবিত্র কোরআনে সূরা আল জুমায় ইরশাদ করা হয়েছে,

banner

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

‘মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।’ (সূরা: আল জুমা, আয়াত: ৯)

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনেই হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন এবং এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়।

মালেক ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনে সাব্বাক থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো এক জুমার দিনে বললেন, ‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! আল্লাহ তায়ালা এই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।’ আরবি শব্দ জুমুআ- এর অর্থ একত্র হওয়া। শুক্রবারকে বলা হয় ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন।

শুক্রবারের দিন যোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমার খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দেবেন তার খুতবায়।

যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, সে একটি উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা দান করার সওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। (মুসনাদে শাফী : ৬২, জামে লি ইবনে ওহাব : ২২৯, মুসনাদে হুমাইদি : ৯৬৩)।

হজরত সালমান (রা.) হতে একটি হাদিস বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তার পর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসনাদে আবু দাউদ : ৪৭৯)।

জুমার নামাজ প্রত্যেক বালেগ পুরুষের জন্যই ওয়াজিব। হাদিসে এসেছে, হজরত হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক (প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ) মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব- অপরিহার্য কর্তব্য। (সুনানে নাসায়ী)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অবহেলা অলসতা করে পর পর তিন জুমা নামাজ ছেড়ে দিল, মহান আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। (আবু দাউদ)।

আরেক হাদিসে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো ওজর এবং অনিষ্টের ভয় ছাড়া জুমার নামাজে অংশ গ্রহণ করে না, মুনাফিকের এমন দপ্তরে তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়, যা কখনো মোছা বা রদবদল করা হয় না।

কারোর জুমার নামাজ এক রাকআত ছুটে গেলে বাকি আর এক রাকআত ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে পড়ে নিলে তার জুমা হয়ে যাবে। অনুরূপ কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকুর আগে থেকে পেলেও ওই রাকআত এবং তার সঙ্গে আর এক রাকআত পড়লে তারও জুমার নামাজ হয়ে যাবে।

কিন্তু যদি কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ শেষ হওয়ার পর জামাআতে শামিল হয়, তাহলে সে জুমার নামাজ পাবে না। এই অবস্থায় তাকে যোহরের ৪ রাকআত আদায়ের নিয়তে জামাআতে শামিল হয়ে ইমামের সালাম ফিরার পর ৪ রাকআত ফরজ পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, সৌদি উলামা-কমিটি ১/৪১৮, ৪২১)।

আর কেউ যদি জুমার নামাজ না পায় বা মসজিদে গিয়ে দেখে জুমা শেষ হয়ে গেছে তবে তাকে যোহরের নামাজ পড়তে হবে। কারণ জামাআত ছাড়া জুমার নামাজ হয় না।

হাদিসে এসেছে, ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার এক রাকআত পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি যেন আর এক রাকআত পড়ে নেয়। কিন্তু যে (দ্বিতীয় রাকআতের) রুকূ না পায়, সে যেন জোহরের ৪ রাকআত পড়ে নেয়।’ (ইবনে আবী শাইবা, ত্বাবারানী, বায়হাকী, আলবানী : ৬২১)।

কোনো ইমাম সাহেব যদি বিনা ওজুতে জুমার নামাজ পড়িয়ে নামাজের শেষে মনে হয়, তাহলে মুক্তাদির নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। আর ইমাম ওই নামাজ কাজা করতে ৪ রাকআত জোহর পড়বেন। (আল-মুন্তাকা মিন ফাতাওয়াল ফাওয়া : ৩/৬৮)।

জুমার খুতবা অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। জুমার খুতবা হলো ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন কোনো প্রকার কথা বলা যাবে না। এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখে ‘চুপ কর’ এ কথাও বলা যাবে না। কারণ, হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ এসেছে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমামের খুতবা দেওয়া অবস্থায় তুমি যদি তোমার সাথীকে বল, তুমি চুপ কর, তাহলে তুমি অনর্থক কথা বললে’।

ইমাম আহমদ তার বর্ণনায় হাদিসে আরো বর্ধিত করেন, অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো অনর্থক কর্ম করল, তার জন্য ওই জুমায় আর কিছু রইল না।

হজরত ওমর (রা.) যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন

ধর্ম, 12 January 2025, 632 Views,

ওমর ফারুক ফেরদৌস
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) আল্লাহর রাসুলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান একজন সাহাবি। ইসলামের আবির্ভাবের কয়েক বছর পর ইসলাম গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে তিনি সাহাবিদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত হন। সাহাবিদের মধ্যে আবু বকরের (রা.) পরই ছিল তার অবস্থান। নবিজি (সা.) তাকে ও আবু বকরকে সাহাবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। ওহাব আস-সুয়ায়ী থেকে বর্ণিত আলী (রা.) একদিন খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনারা কি জানেন নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে ? সবাই বললেন আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি বললেন, না, নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আবু বকর, তারপর ওমর। (মুসনাদে আহমদ: ৮৩৪)

banner

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন, আমার পরে আপনারা আমার সাহাবিদের মধ্যে আবু বকর ও ওমরের অনুসরণ করুন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৬৩)
ইসলামের আবির্ভাবের পর প্রথম কয়েক বছর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। অন্যান্য মক্কাবাসীর মতো তিনিও ইসলামের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি কুরাইশদের একতায় বিশ্বাস করতেন এবং ইসলামের উত্থানকে কুরাইশদের মধ্য বিভাজন সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করতেন। এক পর্যায়ে তিনি নবিজিকে (সা.) হত্যার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন বলে কিছু কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে ইসলামের জন্য কবুল করেন।

তিনি কততম মুসলমান ছিলেন এ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। অনেকের মতে তিনি ৩৯ জন পুরুষ এবং ২৩ জন নারীর ইসলাম গ্রহণের পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। অন্য একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, তিনি ৪০ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারীর পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, তিনি ৪৫ জন পুরুষ এবং ২১ জন নারীর পরে ইসলাম গ্রহণ করেন।

নিজের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণের আগে একদিন আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুঁজতে বের হলাম। দেখলাম তিনি আমার আগেই মসজিদে হারামে পৌছেছেন, আমি তার পেছনে দাঁড়ালাম। তিনি সুরা আল-হাক্কাহ পড়া শুরু করলেন। কোরআন কীভাবে আমার হৃদয়কে আকৃষ্ট করছে, তা দেখে আমি অভিভূত হলাম। মনে মনে বললাম, কুরাইশরা যেমন বলেছে, ইনি নিশ্চয়ই কবি। পরক্ষণেই তিনি পড়লেন,

إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ. وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍ قَلِيلًا مَّا تُؤْمِنُونَ

নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রাসুলের আনীত বাণী। এটা কোনো কবির কথা নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর। (সুরা হাক্কাহ ৪০, ৪১)

এরপর আমি মনে মনে বললাম, ইনি একজন গণক বা জ্যোতিষী হতে পারেন। পরক্ষণেই তিনি পড়লেন,

وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ تَنزِيلٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ فَمَا مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِينَ

এবং কোনো গণকের কথাও নয়। তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ কর। এটি সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত। যদি সে আমার নামে কোন মিথ্যা রচনা করত, তবে আমি তার ডান হাত পাকড়াও করতাম। তারপর অবশ্যই আমি তার হৃদপিন্ডের শিরা কেটে ফেলতাম। তারপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, তাকে রক্ষা করতে পারবে। (সুরা হাক্কাহ: ৪২-৪৭)

এভাবে তিনি পুরো সুরাটি শেষ করলেন এবং ইসলাম আমার অন্তরে পরিপূর্ণভাবে বদ্ধমূল হলো। (মুসনাদে আহমদ: ১০৭)

অন্য একটি বর্ণনায় ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি হজরত ওমরকে (রা.) জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাকে কেন ফারুক নামে ডাকা হয়? ওমর (রা.) বললেন, হামজা (রা.) আমার তিন দিন আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু জাহল নবিজিকে (সা.) গালি দিয়েছিলেন। হামজা (রা.) এ খবর পেয়ে নিজের ধনুক নিয়ে মসজিদুল হারামে আসেন এবং কুরাইশের একটি মজলিসে আবু জাহলের সামনে দাঁড়িয়ে যান। হামজার চেহারায় ক্রোধ দেখে আবু জাহল বলেন, কী হয়েছে, আবু উমারাহ? তখন হামজা ধনুক দিয়ে আবু জাহলের কপালে আঘাত করেন, যার ফলে কপাল থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। কুরাইশের অন্যরা পরিস্থিতি শান্ত করতে সচেষ্ট হয়, যাতে বিশৃঙ্খলা আর না বাড়ে।

নবিজি (সা.) তখন দারুল আরকামে আত্মগোপনে ছিলেন। হামজা (রা.) সেখানেই গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।

তিন দিন পর আমি বাইরে বের হলে এক মুসলমান ব্যক্তিকে দেখে বলি, তুমি কীভাবে নিজের বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করে মুহাম্মাদের অনুসরণ করলে? সে বললো, আমি কী করেছি তা না ভেবে নিজের পরিবারের কথা ভাবো। তোমার বোন ও বোনজামাইও ইসলাম গ্রহণ করেছে।

এ তথ্য শুনে আমি ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের বাড়িতে যাই এবং কোরআন তিলাওয়াতের শব্দ শুনতে পাই। ঘরে ঢুকে আমি জিজ্ঞাসা করি তোমরা কী করছিলে? কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমি বোনজামাইয়ের মাথা চেপে ধরে আঘাত করি, তিনি রক্তাক্ত হয়ে যান। তখন আমার বোন আমাকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসেন এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি। আপনি যা খুশি করতে পারেন।

বোনজামাই রক্তাক্ত হয়ে গেছেন দেখে আমি লজ্জিত হই এবং বলি, আমাকে ওই পাণ্ডুলিপি দেখাও। কিন্তু আমার বোন বলেন, এটি শুধুমাত্র পবিত্র ব্যক্তিরাই স্পর্শ করতে পারেন। তখন আমি গোসল করি। তারা আমাকে পাণ্ডুলিপিটি দেন। আমি পড়া শুরু করি,

الۡعُلٰی اَلرَّحۡمٰنُ عَلَی الۡعَرۡشِ اسۡتَوٰی لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَهُمَا وَ مَا تَحۡتَ الثَّرٰی وَ اِنۡ تَجۡهَرۡ بِالۡقَوۡلِ فَاِنَّهٗ یَعۡلَمُ السِّرَّ وَ اَخۡفٰی اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ لَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی

ত্ব-হা। আমি তোমার প্রতি আল-কুরআন এজন্য নাযিল করিনি যে, তুমি দুর্ভোগ পোহাবে বরং যে ভয় করে তার জন্য উপদেশ স্বরূপ। যিনি সমিন ও সুউচ্চ আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিকট থেকে অবতীর্ণ। পরম করুণাময় আরশের ওপর সমুন্নত রয়েছেন। যা আছে আসমানসমূহ, জমিন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী স্থানে এবং যা আছে মাটির নিচে সব তাঁরই। আর যদি তুমি উচ্চস্বরে কথা বলো তবে তিনি গোপন ও অতি গোপন বিষয় জানেন। আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; সুন্দর নামসমূহ তাঁরই। (সুরা ত্বহা: ১-৮)

আয়াতগুলো পড়ে আমি বিস্মিত হয়ে ভাবলাম, এই বাণী থেকে কোরাইশ পালিয়ে বেড়াচ্ছে! তারপর আমি ইসলাম গ্রহন করলাম এবং বললাম আল্লাহর রাসুল (সা.) কোথায়? আমার বোন বললেন, তিনি দারুল আরকামে আছেন।

আমি সেখানে গিয়ে দরজায় আঘাত করলাম। আমাকে দেখে অন্য সাহাবিরা ভীত হয়ে যান। হামজা (রা.) বলেন, তোমাদের কী হলো? তারা বলেন, ওমর এসেছে। হামজা (রা.) বলেন, দরজা খুলে দিন, যদি তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তবে তাকে স্বাগত জানাব আর যদি তিনি কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এখানে এসে থাকেন, তবে তাকে হত্যা করব। এসব কথা শুনে নবিজি (সা.) বাইরে আসেন এবং আমি তার সামনে কালেমা পাঠ করি। আমাকে কালেমা পাঠ করতে শুনে ঘরের সবাই আনন্দে তাকবির দেন, যার আওয়াজ পুরো মক্কা শহর শুনতে পায়। (তারিখে ইবনে আসাকির)

ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর মক্কায় মুসলমানদের প্রভাব ও শক্তি বেড়ে যায়। বর্ণিত রয়েছে, নবিজি (সা.) ওমরের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করতে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আবু জাহল ও ওমার—এ দুই জনের মধ্যে আপনার কাছে যে প্রিয়, তার মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। আল্লাহর কাছে ওমর প্রিয় ছিলেন। তাই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। (মুসনাদে আহমদ: ৫৬৯৬, সুনানে তিরমিজি: ৩৬৮১)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওমরের জন্যই বিশেষভাবে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি ওমরের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১০৫)

ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামের প্রচার প্রসারে ওমরের (রা.) ত্যাগ-তিতিক্ষা, আল্লাহর ইবাদত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তার অগ্রগামিতা তাকে মুসলমানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত করে। নবিজির (সা.) ওফাতের পর আবু বকর মুসলমানদের খলিফা হন। তার ওফাতের পর খলিফা হন হজরত ওমর (রা.)।
-আলেম ও লেখক (সংগৃহীত)

কারা আল্লাহর পছন্দের বান্দা?

ধর্ম, 23 January 2025, 616 Views,

মো. আমিনুল ইসলাম :
আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আমরা এ ইবাদত কতটুকু ঠিকভাবে করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারছি তা ভেবে দেখার বিষয়। কিংবা কীভাবে ইবাদত করলে আমরা তাঁর প্রিয় বান্দা হয়ে পরকালে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারব তা আমাদের সবার জানা উচিত। সুরা মায়েদার ৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’সুরা হুজুরার ৫৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ সুতরাং যারা দুনিয়ার বুকে বিচার করেন তারা যেন অবশ্যই সুবিচার করেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন।

banner

সুরা বাকারার ৩ ও ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যারা গায়েবের ওপর ইমান আনে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং তিনি যা কিছু দান করেছেন তার থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করে এবং তাদের রবের কাছ থেকে পাওয়া হেদায়েতের ওপর রয়েছে এরাই হচ্ছেন সফলকাম।’ সুতরাং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নামাজ আদায়, জাকাত আদায়, গায়েবের ওপর ইমান আনা এবং সর্বোপরিভাবে আল্লাহ-প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালিত করা। ধৈর্যশীলরাও আল্লাহর প্রিয় বান্দা।

আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় সত্য কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা সবরকারী তাদের পুরস্কার প্রায় অগণিত।’ সুরা জুমার আয়াত ১০। যারা তওবাকারী ও গুনাহ করার পর আল্লাহর স্মরণে লজ্জিত হন এবং ক্ষমা চান তারাও আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দা। এদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘তারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে বসে কিংবা এর দ্বারা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে এবং সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আসলে আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে তাদের গুনাহ মাফ করে দিতে পারে?’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৩৫।

যারা আল্লাহর রসুল (সা.)-কে ভালোবাসে তারাও দুনিয়ার বুকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিচিত। সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তুমি বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমার (নবীর) কথা মেনে চল, আল্লাহতায়ালাও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ আয়াত ৩১। সুবহানাল্লাহ! এ আয়াতটি কত মর্যাদাপূর্ণ।

আল্লাহর রসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে যে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া ও গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যায় এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে। তাকওয়া অবলম্বনকারী ও মুত্তাকি হওয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি।

সুরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের মুখমন্ডলগুলো পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাও এতে কোনো নেকি নিহিত নেই, বরং বড় সত্য কাজ বা নেকির কাজ হচ্ছে ইমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং নবী-রসুলদের ওপর। আর সম্পদের ওপর তার ভালোবাসা থাকার পরও তা ব্যয় করবে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির ভিক্ষুক ও বন্দিদশা থেকে মুক্ত করার কাজে। আর যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং যারা প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করে এবং অভাবে রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করে। এরাই হচ্ছে প্রকৃত সত্যাশ্রয়ী ও তাকওয়া অবলম্ব^নকারী মানুষ।’ আয়াত ১৭৭।
– লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার